সাময়িক প্রসঙ্গ
পীর-ফকিররা বলে কী?
শাইখ মুহাম্মাদ হারুন হুসাইন

 অনেক মানুষ আছে, যারা ধারণা করে যে, সূফীবাদ ইসলামের একটি শাখা। তাদের মাঝে ওলী-আওলিয়া রয়েছেন। সে কারণে আমি চাই প্রত্যেক মুসলিম ভাই তাদের কথাগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখুন, তাতে অবশ্যই দেখতে পাবেন যে, তারা ইসলাম ও কুরআনী শিক্ষা হতে বহু দূরে।

১- দামেস্কে সমাহিত একজন বড়ো সূফী শাইখ মহিউদ্দিন ইবনু আরাবী তার ‘ফতুহাত আল-মাক্কী’ গ্রন্থে বলেন : বর্ণনাসূত্রে কোনো হাদীস সহীহ হতে পারে। তবে কাশফওয়ালা ব্যক্তি স্বচক্ষে দেখতে পান। অতঃপর তিনি নাবী (সা.)-কে এই হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তখন নাবী (সা.) তা অস্বীকার করেন। আর তাকে লক্ষ করে বলেন : আমি এই হাদীস বলিনি এবং আমি কোনো আদেশ দেইনি। কাজেই তিনি জেনে নেন যে, হাদীসটি য‘ঈফ। সে কারণে রবের স্পষ্ট নির্দেশনার আলোকে এই হাদীসটির উপর ‘আমল পরিত্যাজ্য। যদিও বর্ণনা সূত্রের বিশুদ্ধাতার কারণে হাদীসবেত্তাগণ এটার উপর ‘আমল করে থাকেন। অথচ বিষয়টি অনুরূপ নয়।
উপরোক্ত কথাগুলো “আল আহাদীস আল-মুশতাহারা লিল‘আলূনী” নামক কিতাবের ভূমিকায় রয়েছে। এটা জঘন্য কথা। নাবীর হাদীসের উপর আঘাত এবং ইমাম বুখারী ও মুসলিম-এর ন্যায় হাদীস বিশারদ বিদ্বানদের উপর অপবাদ দেয়া।
২- ইবনু আরাবী ইয়াহূদী, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক ও ইসলাম ধর্মসহ সকল ধর্মের সমন্বয়ে এক ধর্ম গণ্য করা প্রসঙ্গে বলেন :
وقد كنت قبل اليوم أنكر صاحبي،
إذا لم يكن ديني إلى دينه دان.
فأصبح قلبي قابلا كل حالة،
فمرعي لغزلان ودير لرهبان.
وبيت لأوثان وكعبة طائف،
وألواح توارة ومصحف قران.
‘যখন ছিন না তার ধর্মে ধর্মাধীন ধর্ম আমার,
ঘৃণিতাম তখন সাথীরে আমি দিনপূর্ব আজিকার।
আজি হৃদয় আমার প্রসন্ন স্বাগতের তরে সব হালত,
কি হরিণের চারণ ভূমি কি পাদরীর গৃহ ‘ইবাদত।
মূর্তিগৃহ হৌক আর কা‘বা কিছু লোকের,
তাওরাতের খণ্ড হোক পাণ্ডুলিপি কুরআনের।’
আল-কুরআন ইবনু আরাবীর উক্ত কথার খণ্ডন করতঃ ইরশাদ হচ্ছে-
﴿وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِيْ الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾
“আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন তালাশ করে, কষ্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্থ।”[১]
৩- ইবনু আরাবী এই ধারণা করে যে, মহান আল্লাহই মাখলুক, আর মাখলুকই আল্লাহ তা‘আলা। তারা উভয়ে একে অন্যের ‘ইবাদত করে। সে তার নিম্নোক্ত বাণী দ্বারা তা উদ্দেশ্য করে (সে বলে)-
فيحمدني وأحمده ويعبدني وأبعده.
“তিনি আামার প্রশাংসা করেন এবং আমিও তার প্র্যশাংসা করি। আর তিনি আমার ‘ইবাদত করেন এবং আমিও তার ‘ইবাদত করি।”
৪- ইবনু আরাবী স্বীয় ‘ফুসুস’ গ্রন্থে বলে-
إن الرجل حينما يضاجع زوجته إنما يضاجع الحق.
“নিশ্চয়ই কোনো ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীর সাথে আলিঙ্গন করে সে হক্ব তা‘আলাকেই আলিঙ্গন করে।” -নাঊযুবিল্লাহ
৫- সূফী নাবলুসী উক্ত কথার ব্যাখ্যায় বলে-
إنما ينكح الحق.
অর্থাৎ- “সে অবশ্যই হক্ব তা‘আলার সাথে সহবাস করে।” -নাঊযুবিল্লাহ
৬- সূফী আবূ ইয়াজীদ আল-বুস্তামী মহান আল্লাহকে সম্বাধন করে বলেন : “(হে আল্লাহ!) আমাকে তোমার ওয়াহদানিয়্যাত বা একাত্ববাদে ম-িত করো! আমাকে তোমার রব্বানিয়্যাতের বসন পরিধান করিয়ে দাও!
আর আমাকে তোমার একত্ববাদের মঞ্জিলে উঠিয়ে নাও, যাতে তোমার সৃষ্টি যখন আমাকে দেখে, তখন তারা যেন বলে- আমরা তোমাকেই দেখলাম।”
আর সে তার সম্বন্ধে বলে-
سبحاني سبحاني، ما أعظم شأني، الجنة لعبة صبيان.
“আমি পবিত্রময় সত্ত্বা, আমি পবিত্রময় সত্ত্বা, কতই না বড়ো আমার শান। জান্নাত বালকের খেলনা।”
৭- জালালুদ্দিন বলেন, আমি মুসলিম তবে আমি খ্রিস্টান ও যরাযাশতী। আমার একক কোনো ‘ইবাদত গৃহ নেই; বরং মাসজিদ গির্জা অথবা মৃত গৃহ সবই সমান।
৮- ইবনুল ফারিজ স্বীয়, আত-তায়িবা কাব্যে বলেন : কায়েসের জন্য লায়লার আকৃতিতে, কুসায়েরের জন্য আযযার আকৃতিতে এবং জামিল এর জন্য বুসায়নার আকৃতিতে মহান আল্লাহই নূরের ঝলক রূপে প্রকাশ পেয়েছেন। সে স্বীকার করে যে, এটা এক তালার তজল্লির অংশ বিশেষ।
৯- সূফী রাবেআহ আদভিয়াহকে জিজ্ঞাসা করা হলো- তুমি কি শয়ত্বানকে অপছন্দ করো জবাবে সে বলল : “মহান আল্লাহর জন্য আমার ভালোবাসা আমার অন্তরে কাউকে অপছন্দ করা অবশিষ্ট রাখে না। আর সে মহান আল্লাহকে সম্বোধন করতঃ বলে- (হে আল্লাহ!) আমি যদি তোমার জাহান্নামের ভয়ে তোমার ‘ইবাদত করে থাকি, তাহলে সে জাহান্নামের অগ্নি দ্বারা আমাকে পুড়িয়ে মারো!” অথচ আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে জাহান্নামের থেকে সতর্ক করেন। ইরশাদ হচ্ছে-
﴿قُوْا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ نَارًا﴾
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নাম হতে বাঁচাও!”[২]
উক্ত সূফী নারী রাবে‘আহ প্রসঙ্গে তারা বলেন, সে ছিল একজন গায়িকা ও বাদক বাজানেওয়ালী মেয়ে। তাই কি করে কুরআনের বিপরীতে তার কথা গ্রহণ করা যায়?
১০- সুদানের নব্য সূফী শাইখ ‘উসমান আল-বুরহানী[৩] একটি কিতাব রচনা করেন- যার নামকরণ করেন “ইনতেসারু আউলিয়া-ইর রাহমান আল আউলিয়া- ইশ শায়ত্বান”। আর এখানে ‘আউলিয়া-উশ শাইত্বান’ দ্বারা ওয়াহ্হাবী ও ইখওয়ানুল মুসলিমদেরকে উদ্দেশ্য করেন।

 টীকা :

[১] সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ৮৫।
[২] সূরা আত্ তাহ্রীম ৬৬ : ৬।
[৩] সুদানের আদালত তাকে হত্যার আদেশ দেয়। অতঃপর তাকে হত্যা করা হয়।

আপনার মন্তব্য

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত