রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহচর্য পেয়ে ঈমান নিয়ে যাঁরা ইহধাম ত্যাগ করেছেন, তাঁদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নাম ‘সাহাবী (রা.)’। অনুরূপ বৈশিষ্ট্যগত নাম ‘তাবেয়ী’। অতএব ‘আহলে হাদীস’ নামকরণ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উত্থাপন করা অর্বাচীনদের ফিতনা বৈ অন্য কিছু নয়। যারা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে জীবন পরিচালনা করেন তাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নাম ‘আহলুল হাদীস’ বা ‘আহলে হাদীস’। এছাড়াও সাহাবায়ে কিরাম, আইম্মায়ে কিরাম এবং কালোত্তীর্ণ মুহাদ্দিসগণের স্বীকৃত পরিভাষা ‘আহলুল হাদীস’ বা ‘আহলে হাদীস’।
আহলে হাদীসদের ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু ‘জমঈয়তে আহলে হাদীস’। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ বিশ্বের অন্যান্য ভূখণ্ডের আহলে হাদীসগণ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ। কোথাও কোনো বিভক্তি থাকলে সেগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত যে, নিখিল-বঙ্গ-আসামের আহলে হাদীসগণ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল কুরায়শী (রহিমাহুল্লাহ)-এর নেতৃত্বে। তিনি ছিলেন ঊনিশ শতকের প্রতিভাসিত সংস্কারক, দক্ষ-নিপুণ সংগঠক, খ্যাতিমান বাগ্মী, অপ্রতিদ্বন্দ্বী বহুভাষাবিদ, মননশীল লেখক ও শীর্ষস্থানীয় গবেষক এবং অনপনেয় প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। বাংলার মুসলিমদের জন্য তিনি ছিলেন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামতস্বারূপÑ এক উৎসর্গিতপ্রাণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর বর্ণাঢ্য সংগ্রামী জীবনে তিনি এ উপমহাদেশের কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ’র অনুসারী বাঙলাভাষীদেরকে অভিন্ন প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করে অখণ্ড আহলে হাদীস জামা‘আত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ইলাহী লিখন মোতাবেক ১৯৬০ সালের ৪ জুন মহান আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি ইহজগত ত্যাগ করে পরজগতে পাড়ি জমিয়েছেনÑ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতি রহম করুন এবং জান্নাতের সম্মানিত মেহমান হিসেবে কবুল করুন।
আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল কুরায়শী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মৃত্যুর পর ঐক্যবদ্ধ আহলে হাদীসদের নেতৃত্ব অর্পিত হয় আল্লামা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী (রহিমাহুল্লাহ)-এর স্কন্ধে। বয়সে তরুণ হলেও জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা ও তাক্বওয়ায় তিনি সমকালীন জ্যেষ্ঠদেরও অতিক্রম করেছিলেন। সে সময় উপমহাদেশের প্রথমসারির যুগশ্রেষ্ঠ শাইখুল হাদীস উলামা-ই কিরাম- আল্লামা কবীরুদ্দীন রহমানী, শাইখ মুনতাসির আহমাদ রহমানী, শাইখ মতিউর রহমান সালাফী, মাওলানা আবূল কাসেম রহমানী, মাওলানা হাবীবুল্লাহ খান রহমানী, শাইখ সা’দ আবূল ওয়াক্কাস রহমানী, শাইখ সুজাউদ্দীন রহমানী, শাইখ মুহাম্মদ হোসেন মাওড়ী, শাইখ মাওলা বক্স নাদভী, শাইখ আব্দুুল্লাহ নদভী, ইলমুল বাহরাইন প্রফেসর ড. আফতাব আহমাদ রহমানী, দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ রেজালশাস্ত্রবিদ আল্লামা আবূ মুহাম্মদ আলীমুদ্দীন প্রমুখ ‘ইল্ম বা ‘আমল ও তাক্বওয়ার মূর্তপ্রতীক বিদগ্ধ মুহাদ্দিস-মুফাস্সিরগণ তাঁর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থেকে আহলে হাদীসদের অখণ্ডতা অক্ষুণ্ণ রেখেছেন এবং “ওয়া‘তাসিমু বিহাবলিল্লা-হি জামিআঁওলা তাফার্রাকূ”র বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনিও দক্ষ নাবিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আল্লাহ তা‘আলার ফযল ও করমে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জমঈয়তকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে অনুপম উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন।
আপনার মন্তব্য