আলহামদুলিল্লাহ, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর ১১তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল গত ৪ অক্টোবর এক উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। এই কাউন্সিল ছিল ঐক্যের, আস্থার ও নব উদ্দীপনার এক অনুপম পর্ব। দেশের সকল জেলা থেকে আগত সম্মানিত কাউন্সিলরবৃন্দ, প্রজ্ঞাবান উপদেষ্টামণ্ডলী এবং বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি এ কাউন্সিলকে দিয়েছে এক ঐতিহাসিক মর্যাদা।
জমঈয়তের উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার সর্বজন শ্রদ্ধেয় জনাব এম. এ. সবুর-এর নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন প্রথমে প্রথা অনুসারে পরামর্শের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায়, গঠনতান্ত্রিক বিধি মোতাবেক কাউন্সিলরদের ন্যায়সঙ্গত ও বহুকাঙ্ক্ষিত ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে সরাসরি কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ নির্বাচনে মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক সালাফী দ্বিতীয়বারের মতো জমঈয়তের সভাপতি নির্বাচিত হন। সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন শুব্বানের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় জমঈয়তের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুল ইসলাম।
কিছু ভুল বোঝাবুঝি থেকে কেউ কেউ হয়তো এই নির্বাচনকে প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে তুলনা করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রচলিত গণতন্ত্রে থাকে প্রার্থী, থাকে প্রচারণা, থাকে জনসমর্থনের প্রতিযোগিতা। অথচ জমঈয়তের এই নির্বাচনে ছিল না কোনো প্রার্থী, ছিল না কোনো প্রচারণা- ছিল কেবল আল্লাহভীতি, দায়িত্ববোধ ও আমানতের চেতনা। ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাছাইকৃত ৩৪৭ জন কাউন্সিলর- যাঁরা জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও ধর্মীয় সচেতনতার প্রতীক।
এরপর ১৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় নবগঠিত নির্বাহী পরিষদের প্রথম সভা। এ সভায় সাপ্তাহিক আরাফাত ও মাসিক তর্জুমানুল হাদীস-এর সম্পাদনা পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। সাপ্তাহিক আরাফাত ও মাসিক তর্জুমানুল হাদীস-এর সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হন যথাক্রমে অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুল ইসলাম ও শাইখ মুহাম্মদ হারুন হুসাইন।
সাপ্তাহিক আরাফাত শুধু একটি পত্রিকা নয়, এটি এক ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠান; তাওহীদী আদর্শচর্চার ধারাবাহিক প্রকাশনা। টানা ৬৭ বছর ধরে সালাফী ‘আক্বীদাহ্ মানহায প্রচারের এক অবিরাম সংগ্রাম। এই পত্রিকার সূচনা হয়েছিল উপমহাদেশের আহলে হাদীসদের শ্রেষ্ঠ রাহবার, প্রাজ্ঞ আলেম, কলমযোদ্ধা ও দূরদর্শী সংগঠক আল্লামা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল-কুরাইশী (রহিমাহুল্লাহ)-এর হাত ধরে। পরবর্তীকালে বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা লেখক ও বিজ্ঞ কলামিষ্ট, যেমন মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহমান বিএবিটি (রহিমাহুল্লাহ), মাওলানা আবু তাহের বর্ধমানী (রহিমাহুল্লাহ), প্রফেসর মোহাম্মদ হাসানুযযামান, অধ্যাপক মীর আব্দুল ওয়াহ্হাব লাবীব (রহিমাহুল্লাহ)’র মতো মহৎ ব্যক্তিত্ব তাঁদের জ্ঞানের দীপ্তি ও ত্যাগের নির্যাসে সাপ্তাহিক আরাফাতকে জীবন্ত রেখেছেন।
বিশেষভাবে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি আমাদের প্রিয় অভিভাবক, খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, বিশ্ববরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদ প্রফেসর আল্লামা ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী (রহিমাহুল্লাহ)-কে, যিনি দীর্ঘ ৪৩ বছর জমঈয়ত ও সাপ্তাহিক আরাফাত-এর সেবায় নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তাঁর অবিরাম পরিশ্রম, দূরদৃষ্টি ও আদর্শিক দৃঢ়তা আজও আমাদের পথচলার প্রেরণা। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন, আমীন।
আজ পৃথিবী প্রযুক্তির শীর্ষে পৌঁছে গেছে। মানুষ বদলে গেছে, বদলে গেছে চিন্তা, রুচি, সংস্কৃতি ও জীবনধারা। কিন্তু পরিবর্তনের এই স্রোতে দাঁড়িয়ে আমাদের স্মরণ রাখতে হবে- যুগ বদলালেও সত্যের আদর্শ বদলায় না। সাপ্তাহিক আরাফাত তার মৌলিকত্ব অক্ষুণ্ণ রেখে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা চাই, এই পত্রিকা আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে সত্য ও তাওহীদের আলোকে পথ দেখাক নতুন প্রজন্মকে।
এই দায়িত্ব শুধুই আমাদের নয়, এটি গোটা জমঈয়তের, প্রতিটি আহলে হাদীসপ্রেমী হৃদয়ের, প্রতিজন সচেতন মুসলিমের। তাই আসুন- আমরা ক্ষুদ্র স্বার্থের গণ্ডি পেরিয়ে, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা ও সহযোগিতার মন্ত্রে ঐক্যবদ্ধ হই। যদি আমরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যাই, সাফল্য আমাদের আসবেই ইন্শাআল্লাহ।

আপনার মন্তব্য