সাময়িক প্রসঙ্গ
*** সাপ্তাহিক আরাফাত অবিরাম প্রকাশনার ৬৫তম বর্ষ ৩১-৩২ সংখ্যা প্রকাশিত
শাইখ মুহাম্মাদ হারুন হুসাইন

প্রকৃতিতে বিপর্যয় : পরিত্রাণ কীভাবে

গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত শীত ও বসন্ত। এই ছয়টি ঋতু আমাদের প্রকৃতিকে করেছে বৈচিত্র্যময়, করেছে অপরূপ সাজে সুসজ্জিত। যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য অপরিমেয় নিয়ামত। কিন্তু সময়ের পালাবদলে সেই ঋতুবৈচিত্র্যতা যেন হারিয়ে যাচ্ছে! ফলশ্রম্নতিতে প্রকৃতিতে ঘটছে নানা বিপর্যয়। বন্যা-জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়-ভূমিকম্প নানা ধরনের বিভ্রাট। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, কেন প্রকৃতিতে বিপর্যয় ঘটছে? এজন্য কে দায়ী? এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, জলে ও স্থলে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়, তা মানুষের নিজহস্তের অর্জন। অর্থাৎ- মানুষ নিজেই আপন পায়ে কুড়াল মারছে!

পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে, প্রকৃতিতে বিপর্যয়ের মূল কারণ হলো জলবায়ুর অনভিপ্রেত পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবেশের বৈরিতা। তারা পরিবেশের এই বৈরী ভাবের জন্য দায়ী করেন গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাবকে। প্রশ্ন হলো- পৃথিবীর উষ্ণায়ন কেন হচ্ছে? -এই উষ্ণতা বাড়ার মূল কারণ গ্রিনহাউস গ্যাসের ইফেক্ট ও ঊর্ধ বাকাশে ওজোনস্তরের ঘনত্ব কমে যাওয়া। এ জন্য বিজ্ঞান দায়ী করছে, আঠারো শতকের শিল্পবিপ্লবের পর থেকে মানুষের ব্যবহার্য নানা যন্ত্রপাতি ও কলকারখানাগুলোকে।

শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত জীবাশ্ম-জ্বালানি থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেনসহ নানা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়ে বাতাসে মিশছে। বায়ুমণ্ডলে এসব গ্যাস, কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের বার্ষিক গড় দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৪১০ পিপিএম, ১৮৬৬ পিপিবি ও ৩৩২ পিপিবি। ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর ঠিক এই কারণেই প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পতিত হচ্ছে, যা পবিত্র কুরআনের ভাষ্যমতে মানুষের স্বহস্তের কামাই। এক কথায় বলা যায়, মানুষের তৈরি করা প্রযুক্তির প্রত্যক্ষ কারণেই প্রকৃতিতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ জন্য মানুষ নিজেই দায়ী।

উপর্যুক্ত বৈষয়িক কারণ ছাড়াও প্রকৃতিতে বিপর্যয়ের কিছু আধ্যাত্মিক কারণও রয়েছে, যা আমাদেরকে কুরআন ও হাদীস অবগত করেছে। আর তাহলো আমাদের পাপের প্রতিফল! যেন আমরা তাওবাহ্ করে প্রভুর পানে প্রত্যাবর্তন করতে পারি। মানুষ যখন অতিমাত্রায় পাপে নিমজ্জিত হবে এবং আল্লাহ তা‘আলার নাফরমানি করবে, তখন মানুষ নানা ধরনের আজাবের মধ্যে নিপতিত হবে। অর্থাৎ-মানুষ যখন অনৈতিকতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, দুর্নীতি-রাহাজানি, নাচ-গান, বাদ্য-বাজনা প্রভৃতি নিয়ে মত্ত থাকবে, তখনই আল্লাহ তা‘আলা আসমানী বালা- ভূমিকম্প, ভূমিধস, সুনামি, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বজ্রপাত, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রেরণ করে স্বীয় বান্দাকে সতর্ক করবেন। তবে এই আসমানী বালা থেকে উত্তরণের উপায়ও আল্লাহ তা‘আলা বলে দিয়েছেন। তা হলো- প্রথমত আল্লাহ তা‘আলার উপর তাওয়াক্কুল করা। যারা আল্লাহ’র উপর তাওয়াক্কুল করে, তাদের জন্য মহান আল্লাহই যথেষ্ট। দ্বিতীয়ত বেশি বেশি তাওবাহ্ ও ইস্তিগফার করা। কেননা তাওবাহ্ ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে একদিকে যেমন পাপ মোচন হয়, অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলা ইস্তিগফারকারীকে সন্তান-সন্তুতি, ফল-ফসল, ধন-সম্পদও খাল-বিল, নদীনালা ও ঝরণাদি প্রবাহিত করে ভারসাম্যময় জীবন ধারায় মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীজগতকে সজীব, সতেজ ও জীবন্ত করেন। আর এসব নিয়ামতের মাধ্যমে প্রকৃতি ফিরে পায় তার সৌন্দর্য। ফলে আমরা ভোগ করতে পারি ষড়ঋতুর বৈচিত্রময় আমেজ।

তৃতীয়ত বেশি বেশি দান-সাদাক্বাহ্ করা। দান-সাদাক্বাহ্ একদিকে মানব জীবনকে সুরক্ষিত করে, অপরদিকে সমৃদ্ধিও দান করে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মুখনিঃসৃত বাণী দ্বারা এ কথা সাব্যস্ত হয়েছে যে, মানুষ যখন যাকাত দেওয়া বন্ধ করে দেয়, তখন তারা মহান আল্লাহর অন্যতম নিয়ামত বৃষ্টি হতে বঞ্চিত হয়। তবে বিভিন্ন প্রাণীকূলের আর্তনাদের কারণে কখনো বৃষ্টি দেন। এ জন্য পরিবেশ ও প্রকৃতি বেঁচে থাকে। অতএব চূড়ান্ত বিপর্যয় আসার আগেই সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। আসুন! আমরা আমাদের পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে বৈষয়িকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করি! পাশাপাশি সকল পাপ-পঙ্কিলতা থেকে বিরত থেকে আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর আনুগত্যে নিজেকে সমর্পণ করি! তবেই আমরা মহান আল্লাহর অনুগ্রহে দুনিয়া ও আখিরাতের প্রভূত কল্যাণ লাভে ধন্য হবো ইন্শা-আল্লাহ। 



weeklyarafat


আপনার মন্তব্য

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:31:55 সূর্যাস্ত : 5:13:27

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত