সাময়িক প্রসঙ্গ
*** সাপ্তাহিক আরাফাত অবিরাম প্রকাশনার ৬৫তম বর্ষ ৩৫-৩৬ সংখ্যা প্রকাশিত
আরাফাত ডেস্ক

সুমহান প্রভু আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভ একজন মু’মিনের জন্য কতই কাঙ্খিত। দাসত্বের সর্বোচ্চ পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে স্বীয় রবের নৈকট্য অর্জন করতে হয়। এজন্য সালাত, যাকাত-সাদাক্বাহ্, সওম, হজ্জ প্রভৃতি ‘ইবাদত যথাযথ পালন করা যেমন আবশ্যক, অধিকন্তু আপন আমিত্বকে স্রষ্ট্রার সমীপে সঁপে দেওয়াও অপরিহার্য। নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কুরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ সবই রব্বুল ‘আলামীনের জন্য উৎসর্গিত। প্রতিটি ‘ইবাদতের সাথে ত্যাগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। অর্থাৎ- ‘ইবাদত সম্পাদনের সাথে সময়, শ্রম অথবা অর্থ ত্যাগের বিষয়টি জড়িত। আর এই ত্যাগই পারিভাষিক অর্থে কুরবানী। যদিও আমরা কুরবানী বলতে কেবল পশু যবেহ করাকেই বুঝে থাকি।

কুরবানীর শাব্দিক অর্থ নিকটবর্তী হওয়া, নৈকট্য লাভ করা, উৎসর্গ করা প্রভৃতি। আর পারিভাষিক অর্থে মহান প্রভুর সমীপে নির্ধারিত দিবসসমূহে নির্বাচিত পশু যবেহ্ করার বিশেষ বিধান পালনের মাধ্যমে স্রষ্ট্রার নৈকট্য লাভ করা। মূলত কুরবানীর মূল শিক্ষা ধৈর্য ও ত্যাগের দীক্ষা। মহামহিম রাব্বুল আলামিনের সমীপে আত্মসমর্পণের শিক্ষা। তাক্বওয়া ও ইখলাস তথা একনিষ্ঠ আত্মনিবেনের শিক্ষা। পশু কুরবানী একটি প্রতীক মাত্র। কুরবানীর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো- মহান রবের উদ্দেশ্যে সবকিছু বিসর্জন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা।

পশু যবেহ করার আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে মনের মধ্যে যে পশুপ্রবৃত্তি বিদ্যমান, তাকে পরাভূত ও পরাজিত করাই কুরবানীর মুখ্য উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে মনের সব কালিমা ও চরিত্রের কুস্বভাবকে চিরতরে দূরীভূত করা এবং চিত্তের কুপ্রবৃত্তিকে পরিত্যাগ করা। কেননা, কুরবানীর গোশত বা রক্ত রবের কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে কেবল আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া।

তাক্বওয়াবিহীন কুরবানী আল্লাহ তা‘আলা গ্রহণ করেন না। স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা বলেন, (হে নবী!) তুমি তাদেরকে আদমের পুত্রদ্বয়ের বৃত্তান্ত শোনাও। যখন তারা উভয়ে কুরবানী করেছিল, তখন তাদের একজনের (হাবিল) কুরবানী কবুল হলো এবং অন্যজনের (কাবিল) কুরবানী কবুল হলো না। আর আল্লাহ তা‘আলা কেবল মুত্তাকী বা আল্লাহভীরুদের কুরবানী কবূল করে থাকেন।

আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দার প্রতি অত্যন্ত দয়াপরবশ। তাই তিনি সুযোগ দেন, বান্দা যেন কুরবানীর দিনসমূহে পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মধ্য দিয়ে ভালো হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করে, নিজের মধ্যে লালিত পশুপ্রবৃত্তিকে হত্যা করার মাধ্যমে।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মানুষ এখন তাক্বওয়াকে এমনভাবে বিসর্জন দিয়েছে যে, প্রকৃত পশু কুরবানী করলেও নিজের মধ্যে লালিত-প্রতিপালিত পশুটি আরো তরতাজা হচ্ছে। এখন তো অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাক্বওয়ার পরিবর্তে লৌকিকতাই প্রাধান্য পাচ্ছে। সমাজকে দেখানোর জন্য বড়োসড়ো পশুটি ক্রয় করলেও সমাজের দুস্থ-দরিদ্ররা তাদের প্রকৃত প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পশু কুরবানীর আনন্দ তো এখানেই যে, আজকের দিনে কেউই মাংস ভক্ষণ থেকে বঞ্চিত হবে না, এবং পরিতৃপ্ত হবে। অথচ হীন মানসিকতার কিছু ধনীক শ্রেণি নামেমাত্র মাংস বিতরণ করে ফ্রিজ ভর্তি করে রাখছেন, যা কুরবানীর মূল্য শিক্ষার পরিপন্থী।

অতএব আসুন! আমারে মনের মাঝে যে পাপ-পঙ্কিলতার আবরণ পড়েছে তা ধুয়েমুছে সাফ করতেই কুরবানীর পশুর রক্ত প্রবাহিত করি এবং তাক্বওয়া মিশ্রিত ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান হয়ে কবির ভাষায় আওয়াজ তুলি- “ওরে হত্যা নয় আজ সত্যাগ্রহ, শক্তির উদ্বোধন।”

পরিশেষে সাপ্তাহিক আরাফাত-এর লেখক-গবেষক, প্রবন্ধকার, পাঠক-পাঠিকা এবং শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই পবিত্র ঈদুল আযহার মোবারকবাদ- তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম স-লিহাল আ‘মাল। 


weeklyarafat


আপনার মন্তব্য

ঢাকায় সূর্যোদয় : 5:43:02 সূর্যাস্ত : 6:09:54

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত