সাময়িক প্রসঙ্গ
*** সাপ্তাহিক আরাফাত অবিরাম প্রকাশনার ৬৫তম বর্ষ ২৩-২৪ সংখ্যা প্রকাশিত
শাইখ মুহাম্মাদ হারুন হুসাইন

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান-এর চিরবিদায়

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মোতাবেক ১৭ শা‘বান, বুধবার। রমাযানের আগমনি মু’মিনের শ্রবণেন্দ্রিয়ে অনুরণিত হচ্ছে। মাহে রমাযানকে স্বাগত জানাতে সকলেই প্রতীক্ষমাণ। কীভাবে রমাযানকে বরণ করবে, এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা। এমনই এক সন্ধিক্ষণে দ্বিপ্রহরের শেষপ্রান্তে খবর এল! প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান আর নেই। বার্তা কর্ণকুহরে প্রবেশমাত্র মধ্যাহ্নসূর্যে্যর ক্ষিপ্রতার মাঝেও যেন নিকষকালো অন্ধকারে ছেয়ে গেল হৃদয় আকাশ। আমাদের মানসজগৎ শোকাহত হলো হৃদয় বিদীর্ণ করা এ সংবাদে। মুহূর্তেই তাঁর মতো এক নিষ্ঠাবান অভিভাবক হারানোর মর্মপীড়ায় নেত্রপল্লব প্লাবিত হলো। মনের অগোচরেই হৃদয়গহিন থেকে বেরিয়ে এলো- “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”। হে প্রভু! আপনার এই বান্দাকে ক্ষমা করুন, তাঁর প্রতি দয়া করুন, তাঁকে পূর্ণ নিরাপত্তায় আশ্রিত করুন, তাঁর আতিথেয়তাকে মর্যাদাপূর্ণ করুন, তাঁর প্রবেশস্থান কবরকে সুপ্রশস্ত করুন। আর তাঁকে ধৌত করুন বরফশীতল জলপ্রবাহে, আপনি তাঁকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পবিত্র করুন, যেভাবে সফেদ-শুভ্র বস্ত্রের অপরিচ্ছন্নতা দূর করা হয়। আর তাঁকে তাঁর ইহজাগতিক গৃহ অপেক্ষা উত্তম গৃহ, পরিবার অপেক্ষা উত্তম পরিবার এবং সঙ্গিনী অপেক্ষা উত্তম সঙ্গিনী প্রদান করুন। আর আপনি তাকে জান্নাতের নন্দনকাননে প্রবেশ করান এবং তাকে কবরের আযাব ও জাহান্নামের অগ্নিশিখা থেকে সুরক্ষিত রাখুন। ইয়া রব্বে কারীম! তাঁর শোকাহত পরিবারকে সবরে জামিল দান করুন এবং আমাদেরকে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে কবুল গ্রহণ করুন -আমীন।

মাইয়্যিতের অন্তিম অসীয়ত অনুযায়ী তার মরদেহ আহলে হাদীসদের প্রাণকেন্দ্র ঐতিহ্যবাহী বংশাল বড়ো জামে মসজিদে আনা হয়। বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের সেক্রেটারি জেনারেল শাইখ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানীর ইমামতিতে জানাযার সালাত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাঁকে দাফন করা হয় বংশাল—মালিবাগ পেয়ালাওয়ালা জামে মসজিদ সংলগ্ন ঐতিহাসিক সাতবাড়ি কবরস্থানে, যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মুসলিম সংবাদিকতার পথিকৃত মাওলানা আকরাম খাঁ, শাইখুল হাদীস আল্লামা আবু মুহাম্মদ আলীমুদ্দীন (রহিমাহুল্লাহ)-সহ যুগশ্রেষ্ঠ কিবারুল ওলামা (রাহিমাহুমুল্লাহু)।

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ) ছিলেন প্রচারবিমুখ ব্যক্তিত্ব। ইসলামী শিক্ষার সম্প্রসারণ ছিল তাঁর জীবনের মহান ব্রত। বিশ্বখ্যাত ‘তাফসীর ইবনে কাসীর’-এর অনুবাদসহ মহামূল্যবান গ্রন্থ প্রণয়ন করে শিক্ষিত মহলে তিনি সমাদৃত হয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, মার্কিন মুলুকে ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালনা এবং বহুমুখী উচ্চতর গবেষণা কর্মে জীবন অতিবাহিত করেছেন তিনি। চিত্তে উদারতা, আচরণে সরলতা ও ব্যবহারে নিরহংকার ছিল তাঁর চরিত্রের ভূষণ। দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্ব তাঁকে মর্যাদার সম্ভ্রান্ত আসনে সমাসীন করেছে। তাক্বওয়া ও পরহেযগারিতার অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তিনি আজ সর্বমহলে অনুকরণীয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর খিদমত কবুল করে উত্তম প্রতিদানে পুরস্কৃত করুন। আমরা আশাকরি মহান এই ব্যক্তিত্বের জীবন-কর্ম নিয়ে গবেষণা করলে এমন অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে, যা বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য আলোকবর্তিকা হবে। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম নিয়ে বহুমুখী গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। আগামীতে সাপ্তাহিক আরাফাত-এর পৃষ্ঠায় তাঁর জীবনচিরত প্রকাশের আশাবাদ ব্যক্ত করে সম্মানিত সুবিজ্ঞ লেখকদের নিকট থেকে গবেষণাধর্মী লেখা প্রত্যাশা করছি। তাওফীক্ব কামনা করছি মহান আল্লাহর কাছে।

ক্ষণজন্মা এই মহান ব্যক্তিটি ১৯৩৬ সালে সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা ও কর্মজীবনে অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে, আমাদেরকে শোকসাগরে ভাসিয়ে তিনি আজ পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের একজন প্রাজ্ঞ উপদেষ্টা। তাঁর মৃত্যুতে সংগঠনের পক্ষ থেকে গভীর শোকপ্রকাশ করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।

রমাযান আমাদের দুয়ারে এসে কড়া নাড়ছে। রমাযানের অগণিত কল্যাণ আমাদেরকে হাতছানি দিচ্ছে। যারা ভাগ্যবান, তারা বরকতময় এ মাসে প্রভূত কল্যাণ লাভ করবে, আর যারা হতভাগা, তারা কতইনা নিন্দনীয়-নিকৃষ্ট। স্মর্তব্য যে, আমরাও আজ অথবা কাল প্রফেসর ড. মুজীবুর রহমান (রহিমাহুল্লাহ)-এর সাথে মিলিত হব। তাই শেষ বিদায়ের পূর্বে নিজেকে প্রস্তুত করি। যেন পরিকল্পিতভাবে রমাযানের দিনগুলো অতিবাহিত করে নাযাতের মোহনায় মিলিত হতে পরি- মহিয়ান রবের কাছে এটাই আমাদের আকুতি। 


weeklyarafat


আপনার মন্তব্য

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত