প্রবন্ধ
ইস্তিখারার বিধি-বিধান
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
ইস্তিখারা শব্দটি আরবী। আভিধানিক অর্থ, কোনো বিষয়ে কল্যাণ চাওয়া। ইসলামী পরিভাষায় দু’রাক‘আত সালাত ও বিশেষ দু‘আর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নিকট পছন্দনীয় বিষয়ে মন ধাবিত হওয়ার জন্য আশা করা। অর্থাৎ- দু’টি বিষয়ের মধ্যে কোন্টি অধিক কল্যাণকর হবে এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর নিকট দু‘রাক‘আত সালাত ও ইস্তিখারার দু‘আর মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার নামই ইস্তেখারা।[১]
ইস্তেখারা করার হুকুম : এটি সুন্নাত। যা সহীহুল বুখারী’র হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
ইস্তিখারা কখন করতে হয়?
মানুষ বিভিন্ন সময় একাধিক বিষয়ের মধ্যে কোন্টিকে গ্রহণ করবে সে ব্যাপারে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। কারণ কোথায় তার কল্যাণ নিহীত আছে সে ব্যাপারে কারো জ্ঞান নেই। তাই সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য আসমান যমীনের সৃষ্টিকর্তা, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত সকল বিষয়ে যার সম্যক জ্ঞান আছে, যার হাতে সকল ভাল-মন্দের চাবি-কাঠি সেই আল্লাহ তা‘আলার নিকট উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়। যেন তিনি তার মনের সিদ্ধান্তকে এমন জিনিসের উপর স্থীর করে দেন যা তার জন্য উপকারী। যার ফলে তাকে পরবর্তীতে যেনো আফসোস করতে না হয়। যেমন, বিয়ে, চাকরি, সফর ইত্যাদি বিষয়ে ইস্তেখারা করতে হয়। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন :
“সে ব্যক্তি অনুতপ্ত হবে না যে স্রষ্টার নিকট ইস্তিখারা করে এবং মানুষের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার উপর অটল থাকে।” আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَشَاوِرْهُمْ فِيْ الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلٰى اللهِ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ﴾
“আর তুমি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মানুষের সাথে পরামর্শ করো। অতঃপর আল্লাহর উপর ভরসা করে (সিদ্ধান্তে অটল থাকো)। আল্লাহ ভরসাকারীদেরকে পছন্দ করেন।”[২]
ক্বাতাদাহ্ (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন : “মানুষ যখন আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর পরামর্শ করে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সব চেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার তাওফীক্ব দেন।”
ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন : আল্লাহ তা‘আলার নিকট ইস্তিখারা করার পাশাপাশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ভাল লোকদের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার। কারণ মানুষের জ্ঞান-গরীমা অপূর্ণ। সৃষ্টিগতভাবে সে দুর্বল। তাই যখন তার সামনে একাধিক বিষয় উপস্থিত হয় তখন কি করবে না করবে, বা কি সিদ্ধান্ত নিবে তাতে দ্বিধায় পড়ে যায়।
ইস্তিখারা করার নিয়ম :
১) নামাযের ওযূর মতো ওযূ করতে হয়।
২) ইস্তিখারার উদ্দেশ্যে দু রাক‘আত নামায পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো, প্রথম রাক‘আতে সূরা আল ফাতিহার পর সূরা আল কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা আল ফাতিহার পর সূরা আল ইখলা-স পড়া।
৩) নামাযের সালাম ফিরিয়ে আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব ও মর্যাদার কথা মনে জাগ্রত করে একান্ত বিনয় ও নম্রতা সহকারে মহান আল্লাহর প্রশংসা ও নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর দুরূদ পেশ করার পর নিচের দু‘আটি পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ إنِّيْ أَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ اَللّٰهُمَّ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ (...) خَيْرٌ لِيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ (أَوْ قَالَ : عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ) فَاقْدُرْهُ لِيْ وَيَسِّرْهُ لِيْ ثُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْهِ، اَللّٰهُمَّ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ (...) شَرٌّ لِيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ (أَوْ قَالَ : عَاجِلِ أَمْرِيْ وَآجِلِهِ) فَاصْرِفْهُ عَنِّيْ وَاصْرِفْنِيْ عَنْهُ وَاقْدُرْ لِيْ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ ارْضِنِيْ بِهِ (...).
জাবির (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক কাজে আমাদের ইস্তিখারা করা সম্পর্কে এমনভাবে শিক্ষা দিতেন, যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কেউ যখন কোন কাজ করবে তখন সে দু’রাক‘আত নফল নামায আদায় করবে, এরপর সে পাঠ করবে-
আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্তাখিরুকা বি ইলমিকা, ওয়া আস্তাকদিরুকা বি কুদরাতিকা, ওয়া আসআলুকা মিন ফাদ্বলিকাল আযীম, ফা ইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তালামু ওয়ালা আলামু, ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ূব। আল্লাহুম্মা ইন কুন্তা তালামু, আন্না হাযাল আমরা (এখানে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবে), খাইরুল্লি ফি দীনী ওয়া মাশায়ী, ওয়া আকিবাতি আমরী।
(অথবা বলবে- আ’ জিলি আমরি ওয়া আজিলিহি), ফাকদিরহু লি ওয়া ইয়াসসিরহু লী, সুম্মা বারিকলী ফিহি, ওয়া ইন কুনতা তালামু, আন্না হাযাল আমরা (এখানে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবে), শাররুল্লী ফী দীনী ওয়া মাশায়ী, ওয়া আকিবাতি আমরী, (অথবা বলবে- আজিলি আমরী ওয়া আজিলীহি), ফাসরিফহু আন্নি ওয়াসরীফনি আনহু, ওয়াকদির লিয়াল খাইরা হাইসু কানা, সুম্মা আরদ্বিনী বিহি।
(এরপর নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবে)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কল্যাণ চাই আপনার ‘ইল্মের সাহায্যে। আপনার কাছে শক্তি কামনা করি আপনার কুদরতের সাহায্যে। আপনার কাছে অনুগ্রহ চাই আপনার মহা অনুগ্রহ থেকে। আপনি সর্বোময় ক্ষমতার অধিকারী-আমার কোন ক্ষমতা নেই। আপনি সর্বজ্ঞ আমি কিছুই জানি না। আপনি সকল গোপন বিষয় পূর্ণ অবগত।
“হে আল্লাহ! আপনার ‘ইল্মে এ কাজ (এখানে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবে) আমার দ্বীন আমার জীবন-জিবীকা ও কর্মফলের দিক থেকে (বা তিনি নিম্নোক্ত শব্দগুলো বলেছিলেন একাজ দুনিয়া ও আখিরাতের দিক থেকে ভাল হয়) তবে তা আমাকে করার শক্তি দান করুন।
পক্ষান্তরে আপনার ‘ইল্মে এ কাজ (এখানে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবে) যদি আমার দীন আমার জীবন-জিবীকা ও কর্মফলের দিক থেকে (অথবা বলেছিলেন, দুনিয়া ও পরকালের দিক থেকে মন্দ হয়) তবে আমার ধ্যান-কল্পনা এ কাজ থেকে ফিরিয়ে নিন। তার খেয়াল আমার অন্তর থেকে দূরীভূত করে দিন।
আর আমার জন্যে যেখানেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে এর ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে এরই উপর সন্তুষ্ট করে দিন। (এরপর নিজের প্রয়োজনের কথা ব্যক্ত করবে।)[৩]
যে কোন কাজে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার দু’টি উপায় :
প্রথমতঃ আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের নিকট ইস্তিখারার সালাতের মাধ্যমে কল্যাণ প্রার্থনা করা। কারণ তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে সব চেয়ে ভাল জানেন। তিনি সব চেয়ে বেশী জ্ঞান রাখেন মানুষের কল্যাণ কোথায় এবং কোন পথে নিহিত আছে।
দ্বিতীয়তঃ অভিজ্ঞ, বিশ্বস্ত এবং জ্ঞানী লোকের পরামর্শ গ্রহণ করা। আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে বলেন :
﴿وَشَاوِرْهُمْ فِيْ الْأَمْرْ﴾
“সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের সাথে পরামর্শ করুন।”[৪]
পরামর্শ আগে না ইস্তিখারার নামায আগে?
এ ব্যাপারে ‘আলেমগণের মাঝে মতোবিরোধ রয়েছে। তবে সবচেয়ে সঠিক হলো, আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমীন (রাহিমাহুল্লা-হ)-এর মতে যা তিনি রিয়াদুস্ সালিহীনের ব্যাখ্যা গ্রন্থে প্রাধান্য দিয়েছেন। তা হলো, আগে ইস্তেখারার সালাত আদায় করতে হবে। কারণ নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন :
إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالْأَمْرِ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ....
“তোমাদের কেউ কোন কাজের মনস্থ করলে সে যেনো, (সালাতুল ইস্তিখারার) দু’রাকা‘আত সালাত আদায় করে...।”
এখানে নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সর্বপ্রথম সালাতুল ইস্তিখারা আদায় করার কথা বলেছেন।
ইস্তিখারা প্রসঙ্গে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন :
১) ছোট-বড় সকল বিষয়ে ইস্তিখারা করার অভ্যাস গড়ে তোলা ভাল।
২) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করুন, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যে কাজ করার তাওফীক্ব দিয়েছেন তাতেই আপনার কল্যাণ নিহীত রয়েছে। তাই একান্ত মনোযোগ সহকারে স্থীরচিত্তে এবং মহান আল্লাহর মহত্ব ও বড়ত্বের কথা স্মরণ করে তার নিকট দু‘আ করুন।
৩) খুব তাড়াহুড়া বা একান্ত জরুরী প্রয়োজন না হলে যে সকল সময়ে সাধারণ নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ সে সকল সময়ে সালাতুল ইস্তিখারা আদায় করা থেকে বিরত থাকুন। তবে তাড়াহুড়া থাকলে নিষিদ্ধ সময়গুলোতেও তা পড়া যাবে।
৪) মহিলাদের ঋতুস্রাব বা সন্তান প্রসবজনিত রক্ত প্রবাহের সময় সালাতুল ইস্তিখারা আদায় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমতাবস্থায় নামায না পড়ে শুধু ইস্তিখারার দু‘আটি পড়া যাবে।
৫) ইস্তিখারার দু‘আ মুখস্ত না থাকলে দেখে দেখে তা পড়তে অসুবিধা নেই। তবে মুখস্ত করার চেষ্টা করা ভাল।
৬) ইস্তিখারা করার পর তার উদ্দিষ্ট বিষয়ে স্বপ্ন দেখা আবশ্যক নয়। স্বপ্নের মাধ্যমেও সঠিক জিনিসটি জানতে পারে আবার স্বপ্ন ছাড়াও মনের মধ্যে সে কাজটির প্রতি আগ্রহ বা অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে।
৭) উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হলে মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে দৃঢ়ভাবে কাজে এগিয়ে যান। পিছুপা হবেন না বা হীনমন্যতায় ভুগবেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلٰى اللهِ﴾
“আর যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেল তখন আল্লাহর উপর ভরসা করো।”[৫]
৮) সালাতুল ইস্তিখারা পড়ার পরও সঠিক সিদ্ধান্তে উপনিত না হতে পারলে একধিকবার তা পড়া জায়িয আছে।
৯) ইস্তিখারার দু‘আতে যেনো অতিরিক্ত কোন শব্দ যোগ না হয় বা সেখান থেকে কোন শব্দ বাদ না যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখুন; বরং হাদীসে বর্ণিত শব্দাবলী যথাযথভাবে পড়ার চেষ্টা করুন।
১০) যে বিষয়ে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে চান সে বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তির পরামর্শ গ্রহণ করুন। সেই সাথে সালাতুল ইস্তিখারাও আদায় করুন।
১১) একজনের পক্ষ থেকে আরেকজন সালাতুল ইস্তিখারা আদায় করতে পারবে না। তবে সাধারণভাবে তার কল্যাণের জন্য দু‘আ করতে পারে। যেমন- বাবা-মা তাদের সন্তানের কল্যাণের জন্য নামাযের বাইরে কিংবা নফল নামাযে সাজদাহরত অবস্থায় এবং তাশাহুদের দুরুদ পাঠের পরে দু‘আ করতে পারে।
১২) একাধিক বিষয়ের জন্য কি একবার ইস্তিখারা করাই যথেষ্ট না প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য পৃথকভাবে করতে হবে?
প্রতিটি কাজের জন্য পৃথকভাবে ইস্তিখারা করা উত্তম। তবে একবার ইস্তিখারা করে দু‘আয় সকল বিষয়ের নিয়ত করলেও যথেষ্ট হবে।
১৩) অন্যায় বা হারাম কাজে এমন কি মাকরূহ কাজে ইস্তিখারা করা জায়েয নেই।
ইস্তিখারার ব্যাপারে তিনজন মনিষীর বক্তব্য :
সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) বলেন : “মহান আল্লাহর নিকট ইস্তিখারা করা আদম সন্তানদের সৌভাগ্যের বিষয়। অনুরূপভাবে মহান আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকাও তাদের সৌভাগ্যের বিষয়। পক্ষান্তরে মহান আল্লাহর নিকট ইস্তিখারা না করা আদম সন্তানদের দুর্ভাগ্যের বিষয় অনুরূপভাবে মহান আল্লাহর ফয়সালায় অসন্তুষ্ট হওয়াও তাদের দুর্ভাগ্যের বিষয়।”
‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) বলেন : “আমার সকালটা আমার কাঙ্খিত অবস্থায় না-কি অনাকাঙ্খিত অবস্থায় হলো তা নিয়ে আমি ভাবি না। কারণ আমি জানি না কল্যাণ কোথায় নিহীত আছে; যা আমি আশা করি তাতে না কি যা আমি আশা করি না তাতে।”
সুতরাং সুপ্রিয় মুসলিম ভাই ও বোন, বিপদাপদ বা দুর্ঘটনা ঘটলেই তাতে হাহুতাশ করার কারণ নেই। কারণ আমাদের জীবনে এমন ঘটনা ঘটে যা আমরা চাই না কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার মধ্যেই আমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আবার অনেক সময় এমন কিছু আশা করি যার মধ্যে হয়ত কোন অকল্যাণ ও ক্ষতি অপেক্ষা করছে। আমরা কেউই ভবিষ্যত সম্পর্কে জানি না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَعَسَى أَن تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوْا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ وَاللهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ﴾
“তোমাদের কাছে হয়তবা কোন একটা বিষয় পছন্দনীয় নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জানো না।”[৬]
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন : “সে ব্যক্তিকে অনুতপ্ত হতে হবে না, যে স্রষ্টার নিকট ইস্তিখারা করে এবং মানুষের নিকট পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার উপর অটল থাকে।”
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে তার সন্তোষমূলক কাজ করার তাওফীক্ব দান করুন -আমীন।
ইস্তেখারা করার হুকুম : এটি সুন্নাত। যা সহীহুল বুখারী’র হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
ইস্তিখারা কখন করতে হয়?
মানুষ বিভিন্ন সময় একাধিক বিষয়ের মধ্যে কোন্টিকে গ্রহণ করবে সে ব্যাপারে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। কারণ কোথায় তার কল্যাণ নিহীত আছে সে ব্যাপারে কারো জ্ঞান নেই। তাই সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য আসমান যমীনের সৃষ্টিকর্তা, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত সকল বিষয়ে যার সম্যক জ্ঞান আছে, যার হাতে সকল ভাল-মন্দের চাবি-কাঠি সেই আল্লাহ তা‘আলার নিকট উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়। যেন তিনি তার মনের সিদ্ধান্তকে এমন জিনিসের উপর স্থীর করে দেন যা তার জন্য উপকারী। যার ফলে তাকে পরবর্তীতে যেনো আফসোস করতে না হয়। যেমন, বিয়ে, চাকরি, সফর ইত্যাদি বিষয়ে ইস্তেখারা করতে হয়। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন :
“সে ব্যক্তি অনুতপ্ত হবে না যে স্রষ্টার নিকট ইস্তিখারা করে এবং মানুষের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার উপর অটল থাকে।” আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَشَاوِرْهُمْ فِيْ الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلٰى اللهِ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ﴾
“আর তুমি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মানুষের সাথে পরামর্শ করো। অতঃপর আল্লাহর উপর ভরসা করে (সিদ্ধান্তে অটল থাকো)। আল্লাহ ভরসাকারীদেরকে পছন্দ করেন।”[২]
ক্বাতাদাহ্ (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন : “মানুষ যখন আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর পরামর্শ করে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সব চেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার তাওফীক্ব দেন।”
ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন : আল্লাহ তা‘আলার নিকট ইস্তিখারা করার পাশাপাশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ভাল লোকদের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার। কারণ মানুষের জ্ঞান-গরীমা অপূর্ণ। সৃষ্টিগতভাবে সে দুর্বল। তাই যখন তার সামনে একাধিক বিষয় উপস্থিত হয় তখন কি করবে না করবে, বা কি সিদ্ধান্ত নিবে তাতে দ্বিধায় পড়ে যায়।
ইস্তিখারা করার নিয়ম :
১) নামাযের ওযূর মতো ওযূ করতে হয়।
২) ইস্তিখারার উদ্দেশ্যে দু রাক‘আত নামায পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো, প্রথম রাক‘আতে সূরা আল ফাতিহার পর সূরা আল কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা আল ফাতিহার পর সূরা আল ইখলা-স পড়া।
৩) নামাযের সালাম ফিরিয়ে আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব ও মর্যাদার কথা মনে জাগ্রত করে একান্ত বিনয় ও নম্রতা সহকারে মহান আল্লাহর প্রশংসা ও নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর দুরূদ পেশ করার পর নিচের দু‘আটি পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ إنِّيْ أَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ اَللّٰهُمَّ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ (...) خَيْرٌ لِيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ (أَوْ قَالَ : عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ) فَاقْدُرْهُ لِيْ وَيَسِّرْهُ لِيْ ثُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْهِ، اَللّٰهُمَّ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ (...) شَرٌّ لِيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ (أَوْ قَالَ : عَاجِلِ أَمْرِيْ وَآجِلِهِ) فَاصْرِفْهُ عَنِّيْ وَاصْرِفْنِيْ عَنْهُ وَاقْدُرْ لِيْ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ ارْضِنِيْ بِهِ (...).
জাবির (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক কাজে আমাদের ইস্তিখারা করা সম্পর্কে এমনভাবে শিক্ষা দিতেন, যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কেউ যখন কোন কাজ করবে তখন সে দু’রাক‘আত নফল নামায আদায় করবে, এরপর সে পাঠ করবে-
আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্তাখিরুকা বি ইলমিকা, ওয়া আস্তাকদিরুকা বি কুদরাতিকা, ওয়া আসআলুকা মিন ফাদ্বলিকাল আযীম, ফা ইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তালামু ওয়ালা আলামু, ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ূব। আল্লাহুম্মা ইন কুন্তা তালামু, আন্না হাযাল আমরা (এখানে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবে), খাইরুল্লি ফি দীনী ওয়া মাশায়ী, ওয়া আকিবাতি আমরী।
(অথবা বলবে- আ’ জিলি আমরি ওয়া আজিলিহি), ফাকদিরহু লি ওয়া ইয়াসসিরহু লী, সুম্মা বারিকলী ফিহি, ওয়া ইন কুনতা তালামু, আন্না হাযাল আমরা (এখানে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবে), শাররুল্লী ফী দীনী ওয়া মাশায়ী, ওয়া আকিবাতি আমরী, (অথবা বলবে- আজিলি আমরী ওয়া আজিলীহি), ফাসরিফহু আন্নি ওয়াসরীফনি আনহু, ওয়াকদির লিয়াল খাইরা হাইসু কানা, সুম্মা আরদ্বিনী বিহি।
(এরপর নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবে)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কল্যাণ চাই আপনার ‘ইল্মের সাহায্যে। আপনার কাছে শক্তি কামনা করি আপনার কুদরতের সাহায্যে। আপনার কাছে অনুগ্রহ চাই আপনার মহা অনুগ্রহ থেকে। আপনি সর্বোময় ক্ষমতার অধিকারী-আমার কোন ক্ষমতা নেই। আপনি সর্বজ্ঞ আমি কিছুই জানি না। আপনি সকল গোপন বিষয় পূর্ণ অবগত।
“হে আল্লাহ! আপনার ‘ইল্মে এ কাজ (এখানে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবে) আমার দ্বীন আমার জীবন-জিবীকা ও কর্মফলের দিক থেকে (বা তিনি নিম্নোক্ত শব্দগুলো বলেছিলেন একাজ দুনিয়া ও আখিরাতের দিক থেকে ভাল হয়) তবে তা আমাকে করার শক্তি দান করুন।
পক্ষান্তরে আপনার ‘ইল্মে এ কাজ (এখানে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবে) যদি আমার দীন আমার জীবন-জিবীকা ও কর্মফলের দিক থেকে (অথবা বলেছিলেন, দুনিয়া ও পরকালের দিক থেকে মন্দ হয়) তবে আমার ধ্যান-কল্পনা এ কাজ থেকে ফিরিয়ে নিন। তার খেয়াল আমার অন্তর থেকে দূরীভূত করে দিন।
আর আমার জন্যে যেখানেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে এর ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে এরই উপর সন্তুষ্ট করে দিন। (এরপর নিজের প্রয়োজনের কথা ব্যক্ত করবে।)[৩]
যে কোন কাজে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার দু’টি উপায় :
প্রথমতঃ আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের নিকট ইস্তিখারার সালাতের মাধ্যমে কল্যাণ প্রার্থনা করা। কারণ তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে সব চেয়ে ভাল জানেন। তিনি সব চেয়ে বেশী জ্ঞান রাখেন মানুষের কল্যাণ কোথায় এবং কোন পথে নিহিত আছে।
দ্বিতীয়তঃ অভিজ্ঞ, বিশ্বস্ত এবং জ্ঞানী লোকের পরামর্শ গ্রহণ করা। আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে বলেন :
﴿وَشَاوِرْهُمْ فِيْ الْأَمْرْ﴾
“সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের সাথে পরামর্শ করুন।”[৪]
পরামর্শ আগে না ইস্তিখারার নামায আগে?
এ ব্যাপারে ‘আলেমগণের মাঝে মতোবিরোধ রয়েছে। তবে সবচেয়ে সঠিক হলো, আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমীন (রাহিমাহুল্লা-হ)-এর মতে যা তিনি রিয়াদুস্ সালিহীনের ব্যাখ্যা গ্রন্থে প্রাধান্য দিয়েছেন। তা হলো, আগে ইস্তেখারার সালাত আদায় করতে হবে। কারণ নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন :
إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالْأَمْرِ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ....
“তোমাদের কেউ কোন কাজের মনস্থ করলে সে যেনো, (সালাতুল ইস্তিখারার) দু’রাকা‘আত সালাত আদায় করে...।”
এখানে নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সর্বপ্রথম সালাতুল ইস্তিখারা আদায় করার কথা বলেছেন।
ইস্তিখারা প্রসঙ্গে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন :
১) ছোট-বড় সকল বিষয়ে ইস্তিখারা করার অভ্যাস গড়ে তোলা ভাল।
২) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করুন, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যে কাজ করার তাওফীক্ব দিয়েছেন তাতেই আপনার কল্যাণ নিহীত রয়েছে। তাই একান্ত মনোযোগ সহকারে স্থীরচিত্তে এবং মহান আল্লাহর মহত্ব ও বড়ত্বের কথা স্মরণ করে তার নিকট দু‘আ করুন।
৩) খুব তাড়াহুড়া বা একান্ত জরুরী প্রয়োজন না হলে যে সকল সময়ে সাধারণ নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ সে সকল সময়ে সালাতুল ইস্তিখারা আদায় করা থেকে বিরত থাকুন। তবে তাড়াহুড়া থাকলে নিষিদ্ধ সময়গুলোতেও তা পড়া যাবে।
৪) মহিলাদের ঋতুস্রাব বা সন্তান প্রসবজনিত রক্ত প্রবাহের সময় সালাতুল ইস্তিখারা আদায় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমতাবস্থায় নামায না পড়ে শুধু ইস্তিখারার দু‘আটি পড়া যাবে।
৫) ইস্তিখারার দু‘আ মুখস্ত না থাকলে দেখে দেখে তা পড়তে অসুবিধা নেই। তবে মুখস্ত করার চেষ্টা করা ভাল।
৬) ইস্তিখারা করার পর তার উদ্দিষ্ট বিষয়ে স্বপ্ন দেখা আবশ্যক নয়। স্বপ্নের মাধ্যমেও সঠিক জিনিসটি জানতে পারে আবার স্বপ্ন ছাড়াও মনের মধ্যে সে কাজটির প্রতি আগ্রহ বা অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে।
৭) উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হলে মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে দৃঢ়ভাবে কাজে এগিয়ে যান। পিছুপা হবেন না বা হীনমন্যতায় ভুগবেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلٰى اللهِ﴾
“আর যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেল তখন আল্লাহর উপর ভরসা করো।”[৫]
৮) সালাতুল ইস্তিখারা পড়ার পরও সঠিক সিদ্ধান্তে উপনিত না হতে পারলে একধিকবার তা পড়া জায়িয আছে।
৯) ইস্তিখারার দু‘আতে যেনো অতিরিক্ত কোন শব্দ যোগ না হয় বা সেখান থেকে কোন শব্দ বাদ না যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখুন; বরং হাদীসে বর্ণিত শব্দাবলী যথাযথভাবে পড়ার চেষ্টা করুন।
১০) যে বিষয়ে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে চান সে বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তির পরামর্শ গ্রহণ করুন। সেই সাথে সালাতুল ইস্তিখারাও আদায় করুন।
১১) একজনের পক্ষ থেকে আরেকজন সালাতুল ইস্তিখারা আদায় করতে পারবে না। তবে সাধারণভাবে তার কল্যাণের জন্য দু‘আ করতে পারে। যেমন- বাবা-মা তাদের সন্তানের কল্যাণের জন্য নামাযের বাইরে কিংবা নফল নামাযে সাজদাহরত অবস্থায় এবং তাশাহুদের দুরুদ পাঠের পরে দু‘আ করতে পারে।
১২) একাধিক বিষয়ের জন্য কি একবার ইস্তিখারা করাই যথেষ্ট না প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য পৃথকভাবে করতে হবে?
প্রতিটি কাজের জন্য পৃথকভাবে ইস্তিখারা করা উত্তম। তবে একবার ইস্তিখারা করে দু‘আয় সকল বিষয়ের নিয়ত করলেও যথেষ্ট হবে।
১৩) অন্যায় বা হারাম কাজে এমন কি মাকরূহ কাজে ইস্তিখারা করা জায়েয নেই।
ইস্তিখারার ব্যাপারে তিনজন মনিষীর বক্তব্য :
সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) বলেন : “মহান আল্লাহর নিকট ইস্তিখারা করা আদম সন্তানদের সৌভাগ্যের বিষয়। অনুরূপভাবে মহান আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকাও তাদের সৌভাগ্যের বিষয়। পক্ষান্তরে মহান আল্লাহর নিকট ইস্তিখারা না করা আদম সন্তানদের দুর্ভাগ্যের বিষয় অনুরূপভাবে মহান আল্লাহর ফয়সালায় অসন্তুষ্ট হওয়াও তাদের দুর্ভাগ্যের বিষয়।”
‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) বলেন : “আমার সকালটা আমার কাঙ্খিত অবস্থায় না-কি অনাকাঙ্খিত অবস্থায় হলো তা নিয়ে আমি ভাবি না। কারণ আমি জানি না কল্যাণ কোথায় নিহীত আছে; যা আমি আশা করি তাতে না কি যা আমি আশা করি না তাতে।”
সুতরাং সুপ্রিয় মুসলিম ভাই ও বোন, বিপদাপদ বা দুর্ঘটনা ঘটলেই তাতে হাহুতাশ করার কারণ নেই। কারণ আমাদের জীবনে এমন ঘটনা ঘটে যা আমরা চাই না কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার মধ্যেই আমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আবার অনেক সময় এমন কিছু আশা করি যার মধ্যে হয়ত কোন অকল্যাণ ও ক্ষতি অপেক্ষা করছে। আমরা কেউই ভবিষ্যত সম্পর্কে জানি না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَعَسَى أَن تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوْا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ وَاللهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ﴾
“তোমাদের কাছে হয়তবা কোন একটা বিষয় পছন্দনীয় নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জানো না।”[৬]
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন : “সে ব্যক্তিকে অনুতপ্ত হতে হবে না, যে স্রষ্টার নিকট ইস্তিখারা করে এবং মানুষের নিকট পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার উপর অটল থাকে।”
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে তার সন্তোষমূলক কাজ করার তাওফীক্ব দান করুন -আমীন।
[১] ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী।
[২] সূরা আ-লি ‘ইমরান : ১৫৯।
[৩] সহীহুল বুখারী।
[৪] সূরা আ-লি ‘ইমরান : ১৫৯।
[৫] সূরা আ-লি ‘ইমরান : ১৫৯।
[৬] সূরা আল বাক্বারাহ্ : ২১৬।
ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45
সূর্যাস্ত : 5:11:51
আপনার মন্তব্য