প্রবন্ধ
করোনা ও আমাদের ‘আক্বীদাহ্
তানযীল আহমাদ
করোনা ভাইরাস সম্পর্কে একজন মুসলিমের ‘আক্বীদাহ্ কেমন হবে? এ নিয়ে আমাদের সমাজের ‘আলেম কিংবা সাধারণের মাঝে ভিন্ন ভিন্ন চিন্তার বহিঃপ্রকাশ পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেউ কেউ এটাকে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মহাবিপদ বলে উল্লেখ করছেন, কেউ আবার মহামারি সম্পর্কে হাদীসের অপব্যাখ্যা করে সাধারণ জনতাকে বিভ্রান্ত করেছে। কেউ বা এটাকে চীনা ভাইরাস বলে মনে করছেন (যেমনটি বলেছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প)। কেউ বলছেন, এটা কাফির, মুশরিক ও মুনাফিক্বদের জন্য, মু’মিন বা সালাত আদায়কারীদেরকে করোনা আক্রমণ করতে পারবে না। এছাড়াও এই করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রকার শরঈ ব্যাখ্যা-অপব্যাখ্যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এ সবের অধিকাংশই ছিল প্রকৃতি ইসলামী ‘আক্বীদার পরিপন্থী। সামাজিক মাধ্যমে এ সব বক্তব্য শুনে বিদগ্ধ ইসলামী স্কলারগণ, যেমন বিস্মিত হয়েছেন তেমনি জনসাধারণও বিভ্রান্ত হয়েছে। এমনকি সাধারণ জনতাও এ নিয়ে এমন সব কথাবার্তা বলছে যা রীতিমত সত্যের অপলাপও বটে।
সর্বসাধারণের মাঝে করোনা তথা মহামারি সম্পর্কিত যে ভ্রান্ত বিশ্বাসের জন্ম হয়েছে তা দূরীকরণের জন্য ড. আকরাম কাস্সাব-এর একটি লেখার অনুবাদ করে সাপ্তাহিক আরাফাতে প্রকাশ করা হলো। আমাদের বিশ্বাস, যা কুরআন-সুন্নাহ’র মানদ-ে এবং বিশুদ্ধতার নিকটবর্তী। মহান আল্লাহ-ই অধিক অবগত। -অনুবাদক
করোনা ও আমাদের ‘আক্বীদাহ্ :
১. মহাবিশ্বের সকল কিছুর স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা। আমরা মনে করি করোনাও মহান আল্লাহর সৃষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اَللهُ خٰلِقُ كُلِّ شَىْءٍ ۖ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ وَكِيْلٌ﴾
“আল্লাহ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনিই সবকিছুর রক্ষক।”[১]
২. সকল কিছুর স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা হলেও খারাপ বস্তুকে তাঁর প্রতি সম্পৃক্ত করা আদবের খেলাপ। করোনা মহান আল্লাহর সৃষ্ট। তবে তা “মহান আল্লাহর করোনা”, “মহান আল্লাহর মহামারী” বলা অনুচিত। কুরআন সুন্নাহ’র নির্দেশনাও তেমনটি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَنَّا لَا نَدْرِىٓ أَشَرٌّ أُرِيْدَ بِمَن فِىْ الْأَرْضِ أَمْ أَرَادَ بِهِمْ رَبُّهُمْ رَشَدًا﴾
“আর আমাদের বোধগম্য হচ্ছিল না যে, পৃথিবীবাসীদের সাথে কোনো খারাপ আচরণ করার সংকল্প করা হয়েছে, নাকি তাদের প্রভু তাদেরকে সঠিক পথ দেখাতে চান?”[২]
উল্লিখিত আয়াতে সঠিক পথ দেখানোর বিষয়টি মহান আল্লাহর প্রতি সম্পৃক্ত করা হয়েছে, কিন্তু খারাপ আচরণের বিষয়টি কর্মবাচ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। অথচ ভালো-মন্দ সবকিছুর স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা। এ রকম প্রমাণ হাদীসে অনেকবার বর্ণিত হয়েছে।
৩. আল্লাহ তা‘আলা বিশেষ উদ্দেশ্য ব্যতিত কোনো কিছুই সৃষ্টি করেন না। তিনি অহেতুক কোনো কিছুই করেন না। তাঁর সকল কর্মই হিকমতে পরিপূর্ণ। তা আমরা বুঝতে পারি বা না পারি। করোনাও এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿إِنَّا كُلَّ شَىْءٍ خَلَقْنٰهُ بِقَدَرٍ﴾
“আমি প্রত্যেকটি জিনিসকে একটি পরিমাপ অনুযায়ী সৃষ্টি করেছি।”[৩]
করোনার অন্যতম একটি হিকমত হলো মানুষকে তার দুর্বলতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া যে, দেখো তুমি কত দুর্বল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ۚوَخُلِقَ الْإِنسٰنُ ضَعِيْفًا﴾
“মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে।”[৪]
৪. মহামারী যেমন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে গযব তেমনি তা মু’মিনদের জন্য রহমতস্বরূপ হয়ে থাকে। ১৭/১৮ হিজরিতে সংঘটিত আমওয়াসের মহামারীতে প্রায় ২৫/৩০ হাজার মুসলিম মারা যান। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাহাবায়ে কিরামও ছিলেন। যেমন- আবূ ‘উবাইদাহ্ ইবনু জাররাহ, মু‘আয ইবনু জাবাল, ফজল ইবনু ‘আব্বাস প্রমুখ বিখ্যাত সাহাবায়ে কিরাম।
৫. মহান আল্লাহর সৃষ্ট সকল বস্তুর মূল হলো, তা কল্যাণকর, অল্যাণকর নয়। প্রত্যেক বস্তুতে রয়েছে শেফা, রোগ নয়। কিন্তু রোগ, ক্ষতি, বিপদাপদ এগুলো আপতিত বিষয়। স্থায়ী নয়। বস্তুতঃ মহান আল্লাহর সৃষ্ট প্রত্যেকটি বস্তুর মূল হলো তা উপকারী, অপকারী নয়। তবে অহংকারী, সীমালংঘনকারীদেরকে আল্লাহ তা‘আলা শাস্তিস্বরূপ বিপদাপদ দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَالَّذِيْنَ سَعَوْ فِىْٓ ءَايٰتِنَا مُعٰجِزِيْنَ أُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مِّن رِّجْزٍ أَلِيْمٌ﴾
“আর যারা আমার আয়াতকে ব্যর্থ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”[৫]
৬. মহামারী যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত তেমনি তাত্থেকে পলায়ন করাও আল্লাহর নির্দেশ। আমরা বিশ্বাস করি “সতর্কতার মাইর নেই, মাইর থাকলে সতর্কতার কাম নেই।” সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে ‘উমার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) এক প্রশ্নের জবাবে বলেন :
نَعَمْ نَفِرُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ إِلَى قَدَرِ اللهِ.
“হ্যা, আমরা মহান আল্লাহর তাক্বদীর থেকে পলায়ন করে মহান আল্লাহর তাকদীরের দিকেই পলায়ন করছি।”[৬]
৭. উপকার ও ক্ষতি করার প্রকৃত মালিক আল্লাহ, অন্য কেউ নয়। তিনি যেমন রোগ-বালাই দেন তেমনি রোগমুক্তিও দেন। করোনা তিনিই দিয়েছেন এত্থেকে মুক্তির একমাত্র মালিক কেবল তিনিই। আল্লাহ না চাইলে পৃথিবীর সকল ডাক্তার, বিজ্ঞানী আর তাদের আবিষ্কৃত ঔষধ, পদ্ধতি ও প্রযুক্তি সবকিছুই বিফল হয়ে যাবে। ইব্রা-হীম (‘আলাইহিস্ সালাম) বলেছিলেন (কুরআনের ভাষায়) :
﴿وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِيْنِ﴾
“এবং রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন।”[৭]
নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইবনু ‘আব্বাসকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন :
واعلم أن الناس لو اجتمعوا على أن ينفعوك لاينفعوك إلا ما قد كتب الله عليك.
“জেনে রেখ! পৃথিবীর সমস্ত মানুষ যদি একসাথে হয়ে তোমার উপকার করতে চায়, তাহলে তারা ততটুকুই তোমার উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তা‘আলা তোমার তাক্বদীরে লিখে রেখেছেন।”
৮. করোনায় মৃত্যুবরণকারী মুসলিম ব্যক্তি শহীদ বলে গণ্য হবেন। করোনা যেহেতু pendamic তথা বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করেছে সেহেতু নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাদীস অনুযায়ী এতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ বলে গণ্য হবেন। মুসনাদ আহমাদে বর্ণিত হাদীসে নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
"يَقُوْلُ أَصْحَابُ الطَّاعُوْنِ : نَحْنُ شُهَدَاءُ، فَيُقَالُ : انْظُرُوْا، فَإِنْ كَانَتْ جِرَاحُهُمْ كَجِرَاحِ الشُّهَدَاءِ تَسِيْلُ دَمًا رِيْحَ الْمِسْكِ، فَهُمْ شُهَدَاءُ فَيَجِدُونَهُمْ كَذٰلِكَ".
“মহামারীতে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ ক্বিয়ামতের দিন বলবে, আমরা শহীদ। তখন তাদের ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হবে যে দেখো, তাদের ক্ষতের সাথে যদি শহীদদের ক্ষতের মিল থাকে তাহলে তারা তাদের অন্তর্ভূক্ত। দেখা যাবে যে হ্যাঁ, শহীদদের মতোই তাদের অবস্থা।”[৮]
৯. যে ব্যক্তি এই করোনায় সবর করে নিজ এলাকাতেই অবস্থান করবে এবং এই বিশ্বাস পোষণ করবে যে তার ভাগ্যে যদি লেখা থাকে তবেই কেবল সে আক্রান্ত হতে পারে অন্যথায় নয়, এই ব্যক্তিও শহীদের মর্যাদা প্রাপ্ত হবে। শাহাদাতের মর্যাদা কেবল মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির জন্যই নয়; বরং এতে যিনি সবর ইখতিয়ার করে উক্ত বিশ্বাস পোষণ করবেন তিনিও শাহাদাতের মর্যাদা ভোগ করবেন। বুখারীতে এসেছে- নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
্রلَيْسَ مِنْ أَحَدٍ يَقَعُ الطَّاعُوْنُ، فَيَمْكُثُ فِيْ بَلَدِهِ صَابِرًا مُحْتَسِبًا، يَعْلَمُ أَنَّهُ لَا يُصِيْبُهُ إِلَّا مَا كَتَبَ اللهُ لَهُ، إِلَّا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ شَهِيْدٍগ্ধ.
“মহামারী পতিত হলে যে ব্যক্তি তার শহরেই সওয়াবের আশায় ও সবর ইখতিয়ার করে অবস্থান করে সে শহীদের মর্যাদা প্রাপ্ত হবে।”[৯]
১০. আমরা বিশ্বাস করি, দুনিয়া হলো পরীক্ষাগার। করোনা ভাইরাসও এমনই একটি পরীক্ষা। আল্লাহ তা'আলা বলেন :
﴿وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَىْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوٰلِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرٰتِ ۗ وَبَشِّرِ الصّٰبِرِيْنَ﴾
“আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করব। এ অবস্থায় যারা সবর করে তাদেরকে সুসংবাদ দিন।”[১০]
(মূল : প্রফেসর ড. আকরাম কাস্সাব)
সর্বসাধারণের মাঝে করোনা তথা মহামারি সম্পর্কিত যে ভ্রান্ত বিশ্বাসের জন্ম হয়েছে তা দূরীকরণের জন্য ড. আকরাম কাস্সাব-এর একটি লেখার অনুবাদ করে সাপ্তাহিক আরাফাতে প্রকাশ করা হলো। আমাদের বিশ্বাস, যা কুরআন-সুন্নাহ’র মানদ-ে এবং বিশুদ্ধতার নিকটবর্তী। মহান আল্লাহ-ই অধিক অবগত। -অনুবাদক
করোনা ও আমাদের ‘আক্বীদাহ্ :
১. মহাবিশ্বের সকল কিছুর স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা। আমরা মনে করি করোনাও মহান আল্লাহর সৃষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اَللهُ خٰلِقُ كُلِّ شَىْءٍ ۖ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ وَكِيْلٌ﴾
“আল্লাহ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনিই সবকিছুর রক্ষক।”[১]
২. সকল কিছুর স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা হলেও খারাপ বস্তুকে তাঁর প্রতি সম্পৃক্ত করা আদবের খেলাপ। করোনা মহান আল্লাহর সৃষ্ট। তবে তা “মহান আল্লাহর করোনা”, “মহান আল্লাহর মহামারী” বলা অনুচিত। কুরআন সুন্নাহ’র নির্দেশনাও তেমনটি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَنَّا لَا نَدْرِىٓ أَشَرٌّ أُرِيْدَ بِمَن فِىْ الْأَرْضِ أَمْ أَرَادَ بِهِمْ رَبُّهُمْ رَشَدًا﴾
“আর আমাদের বোধগম্য হচ্ছিল না যে, পৃথিবীবাসীদের সাথে কোনো খারাপ আচরণ করার সংকল্প করা হয়েছে, নাকি তাদের প্রভু তাদেরকে সঠিক পথ দেখাতে চান?”[২]
উল্লিখিত আয়াতে সঠিক পথ দেখানোর বিষয়টি মহান আল্লাহর প্রতি সম্পৃক্ত করা হয়েছে, কিন্তু খারাপ আচরণের বিষয়টি কর্মবাচ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। অথচ ভালো-মন্দ সবকিছুর স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা। এ রকম প্রমাণ হাদীসে অনেকবার বর্ণিত হয়েছে।
৩. আল্লাহ তা‘আলা বিশেষ উদ্দেশ্য ব্যতিত কোনো কিছুই সৃষ্টি করেন না। তিনি অহেতুক কোনো কিছুই করেন না। তাঁর সকল কর্মই হিকমতে পরিপূর্ণ। তা আমরা বুঝতে পারি বা না পারি। করোনাও এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿إِنَّا كُلَّ شَىْءٍ خَلَقْنٰهُ بِقَدَرٍ﴾
“আমি প্রত্যেকটি জিনিসকে একটি পরিমাপ অনুযায়ী সৃষ্টি করেছি।”[৩]
করোনার অন্যতম একটি হিকমত হলো মানুষকে তার দুর্বলতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া যে, দেখো তুমি কত দুর্বল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ۚوَخُلِقَ الْإِنسٰنُ ضَعِيْفًا﴾
“মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে।”[৪]
৪. মহামারী যেমন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে গযব তেমনি তা মু’মিনদের জন্য রহমতস্বরূপ হয়ে থাকে। ১৭/১৮ হিজরিতে সংঘটিত আমওয়াসের মহামারীতে প্রায় ২৫/৩০ হাজার মুসলিম মারা যান। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাহাবায়ে কিরামও ছিলেন। যেমন- আবূ ‘উবাইদাহ্ ইবনু জাররাহ, মু‘আয ইবনু জাবাল, ফজল ইবনু ‘আব্বাস প্রমুখ বিখ্যাত সাহাবায়ে কিরাম।
৫. মহান আল্লাহর সৃষ্ট সকল বস্তুর মূল হলো, তা কল্যাণকর, অল্যাণকর নয়। প্রত্যেক বস্তুতে রয়েছে শেফা, রোগ নয়। কিন্তু রোগ, ক্ষতি, বিপদাপদ এগুলো আপতিত বিষয়। স্থায়ী নয়। বস্তুতঃ মহান আল্লাহর সৃষ্ট প্রত্যেকটি বস্তুর মূল হলো তা উপকারী, অপকারী নয়। তবে অহংকারী, সীমালংঘনকারীদেরকে আল্লাহ তা‘আলা শাস্তিস্বরূপ বিপদাপদ দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَالَّذِيْنَ سَعَوْ فِىْٓ ءَايٰتِنَا مُعٰجِزِيْنَ أُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مِّن رِّجْزٍ أَلِيْمٌ﴾
“আর যারা আমার আয়াতকে ব্যর্থ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”[৫]
৬. মহামারী যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত তেমনি তাত্থেকে পলায়ন করাও আল্লাহর নির্দেশ। আমরা বিশ্বাস করি “সতর্কতার মাইর নেই, মাইর থাকলে সতর্কতার কাম নেই।” সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে ‘উমার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) এক প্রশ্নের জবাবে বলেন :
نَعَمْ نَفِرُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ إِلَى قَدَرِ اللهِ.
“হ্যা, আমরা মহান আল্লাহর তাক্বদীর থেকে পলায়ন করে মহান আল্লাহর তাকদীরের দিকেই পলায়ন করছি।”[৬]
৭. উপকার ও ক্ষতি করার প্রকৃত মালিক আল্লাহ, অন্য কেউ নয়। তিনি যেমন রোগ-বালাই দেন তেমনি রোগমুক্তিও দেন। করোনা তিনিই দিয়েছেন এত্থেকে মুক্তির একমাত্র মালিক কেবল তিনিই। আল্লাহ না চাইলে পৃথিবীর সকল ডাক্তার, বিজ্ঞানী আর তাদের আবিষ্কৃত ঔষধ, পদ্ধতি ও প্রযুক্তি সবকিছুই বিফল হয়ে যাবে। ইব্রা-হীম (‘আলাইহিস্ সালাম) বলেছিলেন (কুরআনের ভাষায়) :
﴿وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِيْنِ﴾
“এবং রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন।”[৭]
নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইবনু ‘আব্বাসকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন :
واعلم أن الناس لو اجتمعوا على أن ينفعوك لاينفعوك إلا ما قد كتب الله عليك.
“জেনে রেখ! পৃথিবীর সমস্ত মানুষ যদি একসাথে হয়ে তোমার উপকার করতে চায়, তাহলে তারা ততটুকুই তোমার উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তা‘আলা তোমার তাক্বদীরে লিখে রেখেছেন।”
৮. করোনায় মৃত্যুবরণকারী মুসলিম ব্যক্তি শহীদ বলে গণ্য হবেন। করোনা যেহেতু pendamic তথা বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করেছে সেহেতু নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাদীস অনুযায়ী এতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ বলে গণ্য হবেন। মুসনাদ আহমাদে বর্ণিত হাদীসে নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
"يَقُوْلُ أَصْحَابُ الطَّاعُوْنِ : نَحْنُ شُهَدَاءُ، فَيُقَالُ : انْظُرُوْا، فَإِنْ كَانَتْ جِرَاحُهُمْ كَجِرَاحِ الشُّهَدَاءِ تَسِيْلُ دَمًا رِيْحَ الْمِسْكِ، فَهُمْ شُهَدَاءُ فَيَجِدُونَهُمْ كَذٰلِكَ".
“মহামারীতে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ ক্বিয়ামতের দিন বলবে, আমরা শহীদ। তখন তাদের ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হবে যে দেখো, তাদের ক্ষতের সাথে যদি শহীদদের ক্ষতের মিল থাকে তাহলে তারা তাদের অন্তর্ভূক্ত। দেখা যাবে যে হ্যাঁ, শহীদদের মতোই তাদের অবস্থা।”[৮]
৯. যে ব্যক্তি এই করোনায় সবর করে নিজ এলাকাতেই অবস্থান করবে এবং এই বিশ্বাস পোষণ করবে যে তার ভাগ্যে যদি লেখা থাকে তবেই কেবল সে আক্রান্ত হতে পারে অন্যথায় নয়, এই ব্যক্তিও শহীদের মর্যাদা প্রাপ্ত হবে। শাহাদাতের মর্যাদা কেবল মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির জন্যই নয়; বরং এতে যিনি সবর ইখতিয়ার করে উক্ত বিশ্বাস পোষণ করবেন তিনিও শাহাদাতের মর্যাদা ভোগ করবেন। বুখারীতে এসেছে- নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
্রلَيْسَ مِنْ أَحَدٍ يَقَعُ الطَّاعُوْنُ، فَيَمْكُثُ فِيْ بَلَدِهِ صَابِرًا مُحْتَسِبًا، يَعْلَمُ أَنَّهُ لَا يُصِيْبُهُ إِلَّا مَا كَتَبَ اللهُ لَهُ، إِلَّا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ شَهِيْدٍগ্ধ.
“মহামারী পতিত হলে যে ব্যক্তি তার শহরেই সওয়াবের আশায় ও সবর ইখতিয়ার করে অবস্থান করে সে শহীদের মর্যাদা প্রাপ্ত হবে।”[৯]
১০. আমরা বিশ্বাস করি, দুনিয়া হলো পরীক্ষাগার। করোনা ভাইরাসও এমনই একটি পরীক্ষা। আল্লাহ তা'আলা বলেন :
﴿وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَىْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوٰلِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرٰتِ ۗ وَبَشِّرِ الصّٰبِرِيْنَ﴾
“আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করব। এ অবস্থায় যারা সবর করে তাদেরকে সুসংবাদ দিন।”[১০]
(মূল : প্রফেসর ড. আকরাম কাস্সাব)
[১] সূরা আয্ যুমার : ৩৯/৬২।
[২] সূরা আল জিন্ : ৭২/১০।
[৩] সূরা আল ক্বমার : ৫৪/৪৯।
[৪] সূরা আন্ নিসা : ৪/২৮।
[৫] সূরা আস সাবা : ৩৪/৫।
[৬] সহীহুল বুখারী- হাঃ ৫৭২৯ ও মুসলিম- হাঃ ৯৮/২২১৯।
[৭] সূরা আশ্ শু‘আরা- : ২৬/৮০।
[৮] মুসনাদে আহমাদ- হাঃ ১৭৬৫১।
[৯] সহীহুল বুখারী- হাঃ ৩৪৭৪।
[১০] সূরা আল বাক্বারাহ্ : ২/১৫৫।
[২] সূরা আল জিন্ : ৭২/১০।
[৩] সূরা আল ক্বমার : ৫৪/৪৯।
[৪] সূরা আন্ নিসা : ৪/২৮।
[৫] সূরা আস সাবা : ৩৪/৫।
[৬] সহীহুল বুখারী- হাঃ ৫৭২৯ ও মুসলিম- হাঃ ৯৮/২২১৯।
[৭] সূরা আশ্ শু‘আরা- : ২৬/৮০।
[৮] মুসনাদে আহমাদ- হাঃ ১৭৬৫১।
[৯] সহীহুল বুখারী- হাঃ ৩৪৭৪।
[১০] সূরা আল বাক্বারাহ্ : ২/১৫৫।
ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45
সূর্যাস্ত : 5:11:51
আপনার মন্তব্য