বর্তমানে বাংলাদেশে পৌষ মাস চলছে। ইতোমধ্যে গ্রামাঞ্চল ও উত্তর জনপদে ঠাণ্ডা জেঁকে বসেছে। নগরজীবনে তীব্র শীত অনুভূত না হলেও ফুটপাত ও বস্তিবাসী সহায়-সম্বলহীন মানুষেরা শীত সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। মানুষের বিপদের সময় তার পাশে থেকে সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা করাই মানুষের মূল ব্রত হওয়া উচিত। একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে যদি একটি প্রাণ বাঁচে, একজন মানুষ বাঁচার স্বপ্ন দেখে তাতেই হয়তো জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া সম্ভব। বিভিন্ন সময় আমাদের সমাজ-রাষ্ট্রে শীত, বন্যা ও খরাসহ নানা ধরনের দুর্যোগ নেমে আসে। তখন সমাজের কিছু মানুষ অর্থাভাবে কিংবা সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে চরম অসহায় হয়ে পড়ে। ঠিক তখনই তাদের প্রয়োজন হয় সাহায্য-সহযোগিতার। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে শীত। কোনো কোনো জায়গায় হাড়কাঁপানো শীত পড়েছে, সামনের দিনগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই এর তীব্রতা বাড়ার কথা। তাই এখনই দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও সৎ চেষ্টা। আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তি শীত নিবারণে শীতবস্ত্র ক্রয় করতে পারলেও তারা একবারও কি ভেবে দেখেছেন, এ শীতে অনাথ পথশিশু, ফুটপাথে রাত কাটানো মানুষগুলো, ভিক্ষুক, অসহায় বয়োঃবৃদ্ধ, বস্ত্রহীন মানুষ ও তাদের অসহায় সন্তানেরা কতটা কষ্টে আছে? অনেকে শীত সহ্য করতে না পেরে মারাও যাচ্ছে। এদের প্রতি আমরা কি দায়িত্ব পালন করেছি বা করছি? সমাজের বিত্তবান ও মানবিক বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা যদি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষগুলোর পাশে এসে না দাঁড়ায় তাহলে তারা কী জবাব দেবে মহান আল্লাহর কাছে? অসহায় মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে নাবী (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা বিচারের দিন বলবেন- হে আদম সন্তান! আমি পীড়িত ছিলাম; তুমি আমার সেবা করোনি; আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম তুমি আমাকে আহার্য দাওনি; আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। তখন বান্দা বলবে- ইয়া রব! আপনি সব কিছুর মালিক। আপনি কিভাবে পীড়িত হয়েছিলেন, কিভাবে ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত হয়েছিলেন? আর আমি আপনার বান্দা কিভাবে আপনার খিদমত করব, সেবা করব, খাদ্যপানীয় দেবো? আপনিই তো সমগ্র সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেন, আমার অমুক বান্দা পীড়িত হয়েছিল। তুমি তার সেবা করোনি, আমার অমুক বান্দা ক্ষুধায় কাতর হয়ে তোমার কাছে আহার্য চেয়েছিল, তুমি তাকে খেতে দাওনি। আমার অমুক বান্দা তৃষ্ণার্ত ছিল, তুমি তাকে পানি দাওনি। যদি তুমি সেই পীড়িতের সেবা করতে, ক্ষুধার্তকে আহার দিতে ও তৃষ্ণার্তকে পানি দিয়ে সাহায্য করতে তাহলেই আমাকে সেবা করা, আহার্য দেয়া ও পানি পান করানো হত।[1]
ঋতুর পালাবদলে শীত আসে, শীত যায়। হাড়কাঁপানো শীতে অসহায় মানুষের অসহায়ত্ব আরো প্রকট হয়ে ওঠে। এ মুহূর্তে প্রয়োজন একজন মানুষ হিসেবে অপরের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে মহান আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করা। মহান আল্লাহর ভালোবাসা লাভের এ সুবর্ণ সুযোগ প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করে মহানাবী (সাঃ) অনেক বাণী প্রদান করেছেন। কাজেই এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।
নিঃস্বার্থভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্য ও সেবা করা মহৎ ও পুণ্যময় কাজ। অসহায় মানুষের দুর্দিনে সাহায্য-সহযোগিতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মন-মানসিকতা যাদের নেই, তাদের ‘ইবাদত মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কাজেই সালাত, সাওম, হাজ্জ ও যাকাত আদায়ের সাথে সাথে কল্যাণের তথা মানবিকতা ও নৈতিকতার গুণ অর্জন করাও জরুরি। কেননা মানবিক গুণ অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তি মুত্তাকি হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে পারে। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “যারা আল্লাহ প্রেমে আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, পথিক, সাহায্যপ্রার্থীকে ও দাসমুক্তির জন্য অর্থ দান করে, সালাত কায়েম করে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করে, অর্থসঙ্কটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সঙ্কট সংগ্রামে ধৈর্য ধারণ করে- তারাই সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাকি।”[2]
শীতার্ত বস্ত্রহীন মানুষের উপকারে পরকালীন পুরস্কার প্রাপ্তির কথা ঘোষণা করে মহানাবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তা'আলা তাকে জান্নাতে পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করলে আল্লাহ তা'আলা তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল খাওয়াবেন। কোনো মুসলমানকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি পান করালে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানি পান করাবেন।[3]
কাজেই শীতার্তদের শীত নিবারণসহ অসহায় মানুষের দুর্দশা লাঘব মানুষের নৈতিক ও ঈমানী দায়িত্ব। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মু’মিনের পার্থিব একটি মুসীবত দূর করবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার মুসীবতগুলো দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দেবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ইহকাল ও পরকালে সচ্ছল করে দেবেন এবং আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সাহায্য করবেন যদি বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে।[4]
বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস নির্ভেজাল তাওহীদের ঝাণ্ডাবাহী দ্বীনি ও কল্যাণকামী সংগঠন। তাই শীতার্ত মানুষের সেবায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তাদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সুতরাং আসুন! আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জমঈয়তের ত্রাণ ভাণ্ডারে অর্থ-সম্পদ প্রেরণ করে শীতার্ত মানুষের সেবায় এগিয়ে আসি। তাদেরকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করি। সর্বোপরি আর্তমানবতার সেবায় অগ্রগামী হই। কেননা এর মধ্যেই দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোক -আমীন। #
[1] সহীহ মুসলিম- হাঃ ৪৩/২৫৬৯।
[2] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৭৭।
[3] সুনান আবূ দাঊদ- হাঃ ১৬৮২।
[4] সহীহ মুসলিম- হাঃ ৫৮/২৫৮০।
আপনার মন্তব্য1