সাময়িক প্রসঙ্গ
যুলহাজ্জ মাসের ১ম ১০ দিনের ফযীলত
শাইখ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : ্রمَا مِنْ أَيَّامٍ العَمَلُ الصَّالِحُ فِيْهِنَّ أَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ العَشْرِগ্ধ، فَقَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ، وَلَا الجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ؟ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : ্রوَلَا الجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذٰلِكَ بِشَيْءٍগ্ধ.
সরল অনুবাদ : ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা) হতে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের নেক ‘আমলের মতো আর কোনো সময়ের ‘আমল মহান আল্লাহর নিকট প্রিয় নয়। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল! মহান আল্লাহর পথে জিহাদও কি এত প্রিয় নয়; তিনি বলেন, মহান আল্লাহর পথে জিহাদও নয়- তবে ঐ ব্যক্তি ছাড়া, যে ব্যক্তি নিজের জীবন ও সম্পদ নিয়ে জিহাদে বের হয়ে কোনো কিছু নিয়েই আর ফিরে আসেনি।[১]
হাদীসের শব্দার্থসমূহ- مَا مِنْ أَيَّامٍ-দিনগুলো, اَلْعَمَلُ الصَّالِحُ-নেক ‘আমল, فِيْهِنَّ-সেসবের মধ্যে, أَحَبُّ-অধিক প্রিয়, إِلَى اللهِ-মহান আল্লাহর নিকট, مِنْ هَذِهِ اَلْأَيَّامِ العَشْرِ-এই দশদিন থেকে, رَجُلٌ-কোনো ব্যক্তি, خَرَجَ-বের হলো, بِنَفْسِهِ-নিজের প্রাণসহ, وَمَالِهِ-এবং তার সম্পদসহ, فَلَمْ يَرْجِعْ-সে ফিরে এলো না, مِنْ ذٰلِكَ بِشَيْءٍ-তা থেকে কোনো কিছুসহ।
ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা)’র সংক্ষিপ্ত জীবনী : ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস ইবনে আব্দিল মুত্তালিব আল হাশিমী (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা) প্রখ্যাত মুফাস্সির, মুহাদ্দিস, ফাকীহ তথা শ্রেষ্ঠতম বিদ্যান সাহাবী ছিলেন। তাঁর জন্ম হিজরাতের ৩ বছর পূর্বে। হিবরুল উম্মাহ (‘উম্মাহর পণ্ডিত) ও তারজুমানুল কুরআন (কুরআনের মুখপাত্র) উপাধিতে তিনি বিভূষিত। তিনি মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর চাচা ‘আব্বাস ইবনু আব্দিল মুত্তালিবের পুত্র। সেই হিসেবে তিনি বিশ্বনাবীর চাচাত ভাই। শিবে আবি ত্বালিবে তার জন্ম। তিনি হুনায়ন এবং গাযওয়ায়ে তায়িফে উপস্থিত ছিলেন। মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জন্য দু‘আ করেছেন,
اَللّٰهُمَّ فَقِّهْهُ فِيْ الدِّيْنِ وَعَلِّمْهُ التَّأْوِيْلَ.
“হে আল্লাহ! তাকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দিন এবং তাকে দ্বীনের তাৎপর্য ও মর্ম শিক্ষা দিন।”[২]
আরো দু‘আ করেছেন।
‘উমার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা)’র খিলাফতকালে তিনি তাঁর উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি অধিক হাদীস বর্ণনাকারীগণের একজন। তার বর্ণিত হাদীস সংখ্যা ১৬৬০টি। ৬৪ হিজরীতে তিনি তায়েফে মৃত্যু বরণ করেন।
হাদীসের মূল বিষয়বস্তু : মহান আল্লাহর গণনার ১২ মাসের মাঝে যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের মর্তবা ও মর্যাদা সর্বাধিক। এ দিনগুলোর পুণ্য ‘আমল মহান আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়। অসীম উৎসাহ আর অফুরন্ত প্রনোদনার ভরপুর এ হাদীসটি। সর্বস্ব বিলিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে নিজেকে নিঃশেষ করে দেয়ার মতো পুণ্যময় এ দশদিনের ‘আমল। এর চেয়ে বড় উদ্দীপনার কথা আর কী হতে পারে?
হাদীসের ব্যাখ্যা :
্রمَا مِنْ أَيَّامٍ العَمَلُ الصَّالِحُ فِيْهِنَّ أَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ العَشْرِগ্ধ.
“যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের নেক ‘আমলের মতো এত প্রিয় ‘আমল মহান আল্লাহর কাছে আর নেই।”
হাদীসে নববীর আলোচ্য অংশে যুলহাজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের পুণ্য ‘আমলের চরম উৎসাহ দেয়া হয়েছে।
যুলহাজ্জ মাস বছরের ৪টি হারাম বা পবিত্র ও সম্মানিত মাসের শ্রেষ্ঠ মাস। হারাম মাসগুলো সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِيْ كِتَابِ اللهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ﴾
“নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট গণনার মাস বারোটি, তার মধ্যে চারটি হারাম বা পবিত্র মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।”[৩]
যুলক্বাদা, যুলহাজ্জ, মুর্হারম ও রজব এ চারটি মাস হলো মাসগুলোর মধ্যে অধিক পবিত্র ও সম্মানিত।
যুলহাজ্জ মাসের এই দশটি দিনের এতই মর্তবা যে, আল্লাহ তা‘আলা এ দিনগুলোর নাম ধরে শপথ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَالْفَجْرِ ۝ وَلَيَالٍ عَشْرٍ﴾
“শপথ প্রভাতকালের এবং শপথ দশ রজনীর।”[৪]
ইমাম আল হাফিয ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন, দশ রজনীর উদ্দেশ্য হলো- যুলহাজ্জ মাসের ১ম দশদিন। ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা) এবং ইবনু যুবাইর, মুজাহিদ ও আরো পূর্ববর্তী-পরবর্তী মনীষীগণ এমনটি বলেছেন।[৫]
উল্লেখিত দিনগুলোতে নেক ‘আমলসমূহ বলতে বুঝায়- সলাত, সিয়াম, সাদাক্বাহ্, কুরআন তিলাওয়াত, যিক্র, তাকবীর বলা, পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা, আত্মীয় সম্পর্ক রক্ষা করা, সৃষ্টজীবের প্রতি সদয় হওয়া, প্রতিবেশীর সাথে ভাল আচরণ করা এবং অন্যবিধ নেক ‘আমল।[৬]
প্রতিপালিত হওয়ার মহান সুযোগ ঘটে, যা অন্য কোনো সময়ে ঘটে না। মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই দশ দিনের মর্তবার সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন এইভাবে-
أفضلُ أَيَّام الدُّنْيَا الْعشْر يَعْنِيْ عشر ذِي الْحِجَّةِ.
দুনিয়ার সবচেয়ে বেশী ফযীলতময় দিন হলো যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশদিন।[৭]
এই দশ দিনের নেক বা পুন্য ‘আমলের বিশেষ বর্ণনা নিম্নোক্ত হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে।
مَا من أَيَّام أعظم عِنْد الله وَلَا أحب إِلَى الله الْعَمَل فِيْهِنَّ من أَيَّام الْعشْر فَأَكْثرُوْا فِيْهِنَّ من التَّسْبِيْح والتحميد والتهليل وَالتَّكْبِير.
যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের চেয়ে মহান আল্লাহর নিকট এত বেশী মর্যাদাপূর্ণ কোনো দিন নেই এবং নেক ‘আমলের জন্য এদের চেয়ে অধিক প্রিয় দিন আর নেই। তাই এই দিনগুলোতে তোমরা বেশী বেশী তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ), তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ), তাহলীল (লা- ইলাহা ইল্লাল্লা-হ) ও তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পড়বে।[৮]
এই দশদিনের মধ্যে ৯ যুলহাজ্জ আরাফার দিনের মর্তবা আল্লাহ তা‘আলার নিকট অসীম। মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন,
"إنَّ اللهَ يُبَاهِيْ بِأَهْلِ عَرَفَات أهْلَ السَّمَاءِ".
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আরাফা ময়দানে অবস্থানকারীদের নিয়ে আসমানবাসী (ফেরেশ্তাগণের) সাথে গৌরব করেন।”[৯]
সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে- আরাফার দিনের চেয়ে অন্য কোনো দিনে আল্লাহ তা‘আলা এত বেশী জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন না। আরাফার দিনে আরাফাহ ময়দানে অবস্থানকারীগণ ব্যতীত অন্যরা সিয়াম পালন করবেন। মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، أَحْتَسِبُ عَلٰى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِيْ قَبْلَهُ، وَالسَّنَةَ الَّتِيْ بَعْدَهُ.
“আরাফার দিনের সিয়ামের বিষয়ে আমি আশা করি আল্লাহ তা‘আলা (এর দ্বারা) বিগত বছর ও আগামী বছরের গুনাহের কাফ্ফারা করে দিবেন।”[১০]
মহান আল্লাহর দিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান যুলহাজ্জ মাসের প্রথম ১০টি দিনকে সীমাহীন গুরুত্ব দেয়া একান্তই প্রয়োজন। র্ফয পালনের সাথে সাথে নফল ‘আমলেও অধিক মনোযোগী হতে হবে। একই সাথে দু‘আ, তাওবাহ্ ও ইস্তাগফারে লেগে পড়তে হবে, দান, সাদাক্বাহ্ ও পরোপকারে অগ্রগামী হতে হবে।
فَقَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ، وَلَا الجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ؟ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : ্রوَلَا الجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِগ্ধ.
“সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদও কি এর মতো প্রিয় ‘আমল নয়? তিনি বললেন, মহান আল্লাহর পথে জিহাদও নয়।”
হাদীসে বিধৃত আলোচ্য অংশ থেকে যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের অমূল্য গুরুত্ব যেমন প্রতিভাত হয় তেমনি জিহাদের মর্যাদার অনস্বীকার্যতাও প্রতীয়মান হয়। সাহাবীগণ জিহাদকে কত বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন এবং ফযীলতপূর্ণ বুঝেছেন হাদীসে উত্থাপিত প্রশ্ন থেকে তা ফুটে উঠে। কতক হঠকারী নির্বোধ লোকের ন্যক্কারজনক এবং চূড়ান্ত অর্বাচীন সুলভ অনাসৃষ্টির কারণে ইসলামের মহান জিহাদ কখনো শ্রেষ্ঠত্ব থেকে পিছনে পড়বে না। জিহাদের শ্রেষ্ঠত্ব ক্বিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। জিহাদকে যথার্থ প্রয়োজনে আল্লাহ তা‘আলা ফরযে আইন পর্যন্ত করেছেন এবং মুজাহিদদের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন। মুজাহিদের চূড়ান্ত প্রাপ্তি শাহাদাতকে আল্লাহ তা‘আলা অমরত্ব এবং নি‘আমত সমৃদ্ধ করেছেন।
জিহাদের এত এত মর্যাদা আছে বলেই সাহাবীগণ সর্বোচ্চ ফযীলতের তুলনা করতে গিয়ে জিহাদের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দ্বিধা সংকোচ বিহীনভাবেই যুলহাজ্জের প্রথম দশ দিনের ‘আমলকে জিহাদের উপরেই স্থান দান করার কথা বলেছেন।
্রإِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذٰلِكَ بِشَيْءٍগ্ধ.
“তবে সেই ব্যক্তি ব্যতীত যে নিজের প্রাণ এবং সম্পদ নিয়ে জিহাদে বের হয়ে তা হতে কোনো কিছু নিয়েই ফিরে আসলো না।”
কোনো মুজাহিদ যখন তার অস্ত্র, বাহন এবং সঞ্চিত পূঁজিপত্র তথা সর্বস্ব নিয়ে মহান আল্লাহর রাহে বেরিয়ে পড়ে আর তিলে তিলে সব বিলিয়ে দেয় কেবলই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি আর কৃপা লাভের জন্য এর তুলনা আর কি বা হতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা এমন আত্মোৎসর্গের আওয়াজ দিয়েই তো মু’মিনদের ডেকেছেন-
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلٰى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيْمٍ ۝ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ۝ يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ﴾
“হে বিশ্বাসীগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসার সন্ধান দেবো, যা তোমাদেরকে রক্ষা করবে যাতনাময় শাস্তি থেকে। তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে মহান আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দিবেন, তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী-নালা প্রবাহিত এবং চিরস্থায়ী জান্নাতের উৎকৃষ্ট বাসগৃহে, এটাই মহাসাফল্য।”[১১]
হাদীস থেকে প্রাপ্ত কয়েকটি উপকারী বিষয় : বক্ষমান হাদীসটিতে যুলহাজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের প্রতিটি দিন অশেষ ফযীলতের এবং মহান আল্লাহর প্রিয় ভাজন ও সান্নিধ্য লাভের অফুরন্ত সুযোগের -এ কথাই ফুটে উঠেছে। দিনগুলোর প্রতিটি ‘আমল অন্য মাসের ১ম দশকের বা অন্য কোনো দিনের চেয়ে সেরা। দিনগুলো র্ফয, নফল বা সুন্নাহ যাই ‘আমল করা হোক না কেনো তা অন্য মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। দিনগুলোর অতি মর্যাদার কারণে দিনগুলোকে সম্মান ও সমীহ দেখাতে মহান আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপাচার থেকে বেঁচে থাকা একান্তই কর্তব্য। হাদীসটি থেকে এটিও প্রমাণিত হয় যে, কোন্ ‘আমলের মর্যাদা ও ফযীলত কত উত্তম তা মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রদত্ত ফায়সালা থেকে জেনে নিতে হবে, এ ক্ষেত্রে কারো মনগড়া চিন্তার কোনোরূপ স্থান নেই।
হাদীসের শিক্ষা :
(১) মহান আল্লাহর দিনগুলোর মধ্যে যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন শ্রেষ্ঠতম।
(২) যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে নেক ‘আমলে যারপরনেই অগ্রগামী হতে হবে।
(৩) মহান আল্লাহর প্রিয়পাত্র ও নৈকট্য লাভের অবারিত সুযোগ এ ১০টি দিন, তাই একে কাজে লাগাতেই হবে।
(৪) হাজ্জের মহান আয়োজন, কুরবানীর অসীম ত্যাগের স্বাক্ষর আর যিক্র ও তাকবীরের উচ্চধ্বনীতে ভরে দেয়ার বিরাট সুযোগ এ কয়টি দিনে।
(৫) সঠিকভাবে ফরয আদায়, মহান রবের যিক্র, সলাতুত্ তাহাজ্জুদ, দান-খয়রাত আর সুন্দর আচরণ এসব দিয়ে পুণ্যের বাগান সাজানোর মোক্ষম ফুরসত এ দিন কয়টিতে।
পরিশেষে মহান আল্লাহর কাছে হৃদয় নিংড়ানো কাকুতি তিনি যেনো আমাদেরকে যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশদিন এবং তারপরে আইয়্যামে তাশরীকের আরো তিনটি দিনে ‘ইবাদত আর তাঁর যিক্র এবং তাকবীর দিয়ে ভরে দেয়ার সুযোগ দান করেন। মহান আল্লাহর ভয়ে সকল পাপ থেকে আমরা যেনো বাঁচতে পারি এবং তাঁর সন্তুষ্টিভাজন হতে পারি -আমীন।

[১] আত্ তিরমিযী- হাঃ ৭৫৭, আবূ দাঊদ- ২৪৩৮, সহীহ।
[২] মুসনাদ আহমাদ- হাঃ ২৩৯৭।
[৩] সূরা আত্ তাওবাহ্ : ৩৬।
[৪] সূরা আল ফাজ্র : ১-২।
[৫] তাফসীর কুরআনিল আযীম- ৫/৮৯।
[৬] শারহি রিয়াদিস্ সলিহীন- মুহাম্মদ।
[৭] সহীহুত তারগীব- আলবানী, ২/১৫, সহীহ, মাঃ শাঃ ১৭৮৫।
[৮] সহীহুত তারগীব- আলবানী, ২/১৫, সহীহ, মাঃ শাঃ, ২/১২৭।
[৯] মুসনাদ আহমাদ- আলবান এর সনদকে সহীহ বলেছেন, সহীহুত তারগীব- মাঃ শাঃ, হাঃ ৬২৪।
[১০] সহীহ মুসলিম- হাঃ ১৯৬/১১৬২।
[১১] সূরা সাফ্ : ১০-১২।


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত