সাময়িক প্রসঙ্গ
জিজ্ঞাসা ও জবাব
ফাতাওয়া বোর্ড, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস

প্রশ্ন (০১) : নারীগণ কি পর্দার আড়াল থেকে গাইর-মাহরাম বা পরপুরুষের সাথে কথা বলতে পারবে। না-কি তাদের কন্ঠস্বর বা ধ্বনীও পর্দার পর্যায়ভুক্ত। দলীলসহ জানতে চাই?
মুহাম্মদ এহসান
উত্তরা, ঢাকা।
উত্তর : মহিলাদের কণ্ঠস্বর বা তাদের ধ্বনী পর্দার পর্যায়ভুক্ত। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন :
﴿وَإِذَا سَأَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوْهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَقُلُوْبِهِنَّ﴾
“তোমাদের যদি নারী-পত্নীদের কাছ থেকে কোন জিনিসপত্র চাইতে হয় তাহলে পর্দার আড়াল থেকে চেয়ে নিয়ো। এটা তোমাদের ও তাদের অন্তরকে পাক-সাফ রাখার জন্য অধিকতর উপযোগী।”[১]
কোনো কোনো তাফসীরকার وَرَاءِ দ্বারা পর্দার অন্যান্য বিষয়ের সাথে মহিলাদের কণ্ঠস্বর ও ধ্বনীকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِيْنَ مِنْ زِيْنَتِهِنَّ﴾
“আর মহিলাগণ যেনো নিজেদের গোপন শোভা-সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে।”[২]
উপর্যুক্ত দলীলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, মহিলাদের কণ্ঠস্বর বা তাদের ধ্বনী পর্দার অন্তর্ভুক্ত। তবে বিশেষ প্রয়োজনে।
কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিমুক্ত হলে নারীদের কন্ঠস্বরে কোনো আপত্তি নেই। কেননা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মীনীগণ বা উম্মাহাতুল মু’মিনীন এবং অন্যান্য মহিলা সাহাবীগণ হাদীস বর্ণনা করতেন এবং পর্দার আড়াল হতে তাঁরা হাদীসের র্দাস প্রদান করতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ ۚ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِىْ فِىْ قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوْفًا﴾
“হে নাবী-পত্নীরা! তোমরা অন্য নারীদের মতো নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো তবে (পর-পুরুষের সাথে) মিষ্টি কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না যাতে অন্তরে যার ব্যধি আছে, সে খারাপ ইচ্ছাপোষণ করে এবং তোমরা উপযোগী কথা বলবে।”[৩]
তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا جَاءَكُمُ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوْهُنَّ﴾
“হে মু’মিনগণ! তোমাদের নিকট মু‘মিন নারীরা হিজরাত করে আসলে তোমরা তাদেরকে পরীক্ষা করো।”[৪]
আর এ কথা সুস্পষ্ট যে, তাদের পরীক্ষা নেয়ার কথা যেটা বলা হয়েছে সেটা নিশ্চয় লিখিত নয়; বরং মৌখিক। সুতরাং সাধারণত মহিলাদের কণ্ঠস্বর বা ধ্বনী পর্দার পর্যায়ভুক্ত। তবে বিশেষ প্রয়োজনে তাদের কণ্ঠস্বর বা ধ্বনী কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিমুক্ত হলে তাতে কোন আপত্তি নেই। আল্লাহ তা‘আলা ভাল জানেন।
প্রশ্ন (০২) : মুত্যুর পরও যাতে সাওয়াব অব্যাহত থাকে এজন্য আমি কিছু সাদাক্বাহ্ করতে চাই। এখন আমার প্রশ্ন হলো, সাদাক্বাহ্কৃত জিনিষ শেষ হয়ে গেলে বা ধ্বংস হয়ে গেলে এর সওয়াব বন্ধ হয়ে যায় কি?
সাদিকুর রহমান
কবুরহাট, কুষ্টিয়া।
জবাব :  টেকসই প্রবহমান কল্যাণকর যে কোন দান হলো “সাদাক্বায়ে জারিয়া”। সাদাক্বাহকৃত বস্তুটি বিনষ্ট হওয়া পর্যন্ত এর সওয়াব অর্জিত হতে থাকে। তবে বস্তু পরিবর্তিত হয়ে অন্য কোন পুণ্য ও কল্যাণকর কাজের ধারায় রূপ নিলে তার সওয়াবও অব্যাহত থাকবে। “সাদাক্বায়ে জারিয়া” মর্মে বর্ণিত প্রসিদ্ধ হাদীসটি হলো-
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ، قَالَ : "إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ : إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ".
আবূ হুরাইরাহ্ (রযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : মানুষ যখন মারা যায় তখন তার তিনটি ‘আমল ব্যতীত সকল ‘আমল বন্ধ হয়ে যায়। আর সেই তিনটি ‘আমল হলো : “সাদাক্বায়ে জারিয়া”, উপকারী জ্ঞান অথবা সৎ সন্তান যে তার জন্য দু‘আ করবে।[৫]
“সাদাক্বায়ে জারিয়া” বৈশিষ্ট্যগতভাবে দানকারীর জন্য পুণ্যের প্রবাহ সৃষ্টি করে। দানকারী জীবিতাবস্থায় “সাদাক্বায়ে জারিয়া” করুক অথবা মৃত্যুর পরে তার পক্ষ থেকে করা হোক উভয়াবস্থাতেই ব্যক্তির জন্য তা সওয়াব বয়ে নিয়ে আসতে থাকে সদাকাটি টিকে থাকা পর্যন্ত। তবে আল্লাহ তা‘আলা তা ডান হাতে গ্রহণ করে নেন এবং সেই দানটিকে প্রতিপালন ও প্রবৃদ্ধি দান করেন। সাদাক্বায়ে জারিয়া পরিবর্তিত হয়ে আরও দীর্ঘকাল সওয়াবের ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। যেমন- কোন ব্যক্তি কোন একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে কিছু ফলবান বা ছায়াদার গাছ সাদাক্বায়ে জারিয়া করল। এক সময় গাছগুলো কাটতে হলো আর অধিক কল্যাণ বিবেচনায় গাছগুলোর বিক্রয়লব্ধ অর্থ দিয়ে উপকারী কিতাব ক্রয় করা হলো। এমতাবস্থায় এ কিতাবগুলোর পাঠ ও পঠন এবং এসবের উপর ‘আমল চলতে থাকা অবধি এর সওয়াব সাদাক্বাহ্দাতা লাভ করবে -ইন্শা-আল্লাহ।
প্রশ্ন (০৩) : আমি বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয়েছি। আমার দুই কন্যা এবং এক ভাই রয়েছে। এমতাবস্থায় আমার সমস্ত সম্পদ আমার কন্যাদের নামে  লিখে দিতে পারি কি?
আব্দুর রহীম মোল্লা
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা।
জবাব : আপনি জীবিতাবস্থায় আপনার সম্পদ কাউকে লিখে দিতে পারেন না। আল্লাহ তা‘আলা আপনার সম্পদে যাদেরকে ওয়ারিশ করেছেন আপনার মৃত্যুর পর তারা শরী‘আতের নির্ধারণ অনুযায়ী নিজ নিজ হক্ব লাভ করবে। স্বাভাবিকভাবে আপনার মৃত্যুর পর আপনার দুই কন্যা বেঁচে থাকলে তারা আপনার পরিত্যক্ত সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ লাভ করবে। বাকী এক তৃতীয়াংশ সম্পদ আপনার ভাই পাবে, যদি তিনি জীবিত থাকেন। এমতাবস্থায় মীরাস থেকে আপনার ভাইয়ের হক্বকে আপনি বিনষ্ট করতে পারেন না; যদি আপনি পথভ্রষ্ট না হন এবং সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস আপনার থাকে। মীরাসি সম্পদ বণ্টনের ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন ইরশাদ করেছেন :
﴿تِلْكَ حُدُوْدُ اللهِ وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِىْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ۞ وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِيْنٌ﴾
“এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করল আল্লাহ তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। আর এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সফলতা। আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হলো এবং তার সীমালঙ্ঘন করল আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। আর তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।”[৬]
আপনি আপনার কন্যাদের লিখে দিলে তা হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করা এবং আপনার নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করা। আর প্রকৃত হক্বদারের হক্ব বঞ্চিত করার কারণে আপনি হবেন জাহান্নামী।
প্রশ্ন (০৪) : আমাদের সমাজে দেখা যায়- কোনো মহিলার স্বামী মারা গেলে দ্রুত মহিলাকে স্বামীর কাছ থেকে সরিয়ে নেয়া হয় এবং তাকে তার স্বামীর চেহারা দেখতে দেয়া হয় না। এ বিধান কতখানি সহীহ?
মোঃ হায়দার আলী
পীরগঞ্জ, রংপুর।
জবাব : এ কাজটি খুবই অমানবিক। ইসলাম এ ধরনের নিষ্ঠুর কাজকে কখনই সমর্থন করে না। যে ভুল ফাতাওয়ার বশবর্তী হয়ে এ কাজটি করা হয়, তা হলো- স্বামী মারা গেলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে যায়। আর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে গেলে ঐ স্বামী স্ত্রীর জন্য গায়র মাহরাম হয়ে পড়ে। ফলে দেখা জায়িয নয়। এটি বানোয়াট ফাতাওয়া। যারা এ ফাতাওয়া দেন- স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়ী-ঘর সহায়-সম্পত্তি হতে স্ত্রীকে পৃথক করেন না; বরং ঠিকই এগুলোর ওয়ারিস হিসেবে স্ত্রীর অধিকার আদায় করেন। তাহলে কেমন করে ঐ স্বামী গায়র মাহরাম হলো এবং তাকে কি করে দেখা যাবে না?
শুধু দেখাতো দূরের কথা- স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে গোসল দেয়াতে এবং কফিন পরাতে পারবে। মা ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা) বলেন :
্রلَوْ اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِىْ مَا اسْتَدْبَرْتُ، مَا غَسَلَهُ إِلَّا نِسَاؤُهُগ্ধ.
“আমি যা পরে বুঝেছি, তা যদি আগে বুঝতাম, তাহলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে তার স্ত্রীগণ ছাড়া কেউ গোসল দিত না।”[৭]
কাজেই দলীল থাকতে কারো কোন অভিমত বা প্রথার প্রতি লক্ষ্য দেয়া মোটেও ঠিক হবে না।
প্রশ্ন (০৫) : মহিলারা মাসিক অবস্থায় মোবাইলের সাহায্যে কুরআন তিলাওয়াত কিংবা আরবী কোনো দু‘আ পড়তে পারবে কি?
খাদিজা আক্তার
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : মাসিক অবস্থায় মহিলাদের কুরআন স্পর্শ করা হারাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ যেনো কুরআন স্পর্শ না করে।[৮]
তবে হাতমোজা, পরিচ্ছন্ন কাপড় কিংবা অন্যান্য বস্তুর মাধ্যমে আড়াল করে কুরআন স্পর্শ করা বৈধ।[৯]
বর্তমানে মোবাইলের মাধ্যমে কুরআন তিলাওয়াত কিংবা আরবী যে কোনো দু‘আ পড়া বৈধ। কারণ মোবাইলের মনিটর কুরআনের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়। তা কেবলমাত্র ভাসমান প্রতিচ্ছবি। আর উভয়ের মাঝে তো প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান।[১০] -ওয়াল্লাহু ‘আলাম।
প্রশ্ন (০৬) : আমরা শহরে-বন্দরে  ও গ্রাম-গঞ্জে প্রায়ই দেখি অনেকে ওযূ করার সময় মাথা মাসেহ এরপর ঘাড় মাসেহ করেন। ঘাড় মাসেহ করার কোনো বিশুদ্ধ দলীল আছে কি-না? মেহেরবানী করে জানালে উপকৃত হব।
মাসুম শেখ, পতেঙ্গা, চিটাগাং।
জবাব : ওযূতে ঘাড় মাসেহ সংক্রান্ত কোনো বিশুদ্ধ হাদীস নেই। উপরন্তু আবূ দাঊদে যে আসারটি বর্ণিত আছে, তা য‘ঈফ।[১১]
ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন : বিশুদ্ধ হাদীসের বিপরীতে অসমর্থিত ও বানোয়াট বর্ণনাকে কেন্দ্র করে কোন ‘আমল জায়িয নয়।[১২] এ প্রসঙ্গে সৌদী স্থায়ী ফাতওয়া বোর্ড-এর সু-চিন্তিত অভিমত হলো-
لم يثبت فى كتاب الله تعالى ولا سنة الرسول ﷺ ان مسح الرقبة من سنن الوضوء ، فلا يشرع مسحها.
“আল্লাহ তা‘আলার কিতাব আল-কুরআন ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাতে ঘাড় মাসেহ ওযূর সুন্নাতসমূহের একটি সুন্নাত বলে কোনো প্রমাণ বিদ্যমান নেই। কাজেই ঘাড় মাসেহ করা শরী‘আত সম্মত নয়।”[১৩]
কাজেই ওযূর মতো গুরুত্বপূর্ণ ‘আমল- যার উপর সালাত ও তাওয়াফের ন্যায় মৌলিক ‘ইবাদতের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভরশীলতা ভিত্তিহীন বর্ণনার আলোকে চলতে পারে না।
প্রশ্ন (০৭) : কোন মহিলা যদি মহিলাদের জামা‘আতে ইমামতি করেন, তাহলে যাহরী সালাত যথা মাগরিব, ‘ইশা ও ফজর-এ ক্বিরআত কিভাবে পড়বেন এবং আমীন কিভাবে বলবেন? মেহেরবানী করে সঠিক উত্তর দেবেন।
ফাতিমা, আড়াইহাজার, নারায়নগঞ্জ।
জবাব : কোনো মহিলা যদি কেবল মহিলাদের জামা‘আতে ইমামতি করেন, তাহলে তিনি যাহরী সালাতে উঁচু আওয়াজে তাকবীর, ক্বিরাআত ও তাসলিম বলবেন- যাতে পিছনের মহিলা মুক্তাদীরা শব্দ শুনতে পায় এবং ইমামকে অনুসরণ করতে পারে। এটাই সালাতের নিয়ম। তবে বেগানা কোনো পুরুষের শুনার সম্ভাবনা থাকলে কিছুটা কম আওয়াজে পড়বেন। এভাবে সালাত শুদ্ধ হবে এবং ফিতনা থেকেও বাঁচা যাবে। মনে রাখতে হবে- সালাত একটি ‘ইবাদত, দলীল ছাড়া নারী-পুরুষের মাঝে কোনো পার্থক্য নির্ধারণ করা যাবে না।[১৪]
প্রশ্ন (০৮) : আমরা সাধারণতঃ জানি যে, পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম। কেউ কেউ বলেন, সিকি আনা পরিমাণ স্বর্ণ পরা না কি জায়িয? এ ব্যাপারে কোনো বিশুদ্ধ দলীল আছে কি, যা ব্যবহার হালাল বা বৈধ সাব্যস্ত করবে? অনুগ্রহপূর্বক প্রমাণসহ উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।
হা. শাকির আহমাদ
রায়পুরা, নরসিংদী।
জবাব : পুরুষের জন্য কম-বেশী স্বর্ণ পরিধান করা হারাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
্রأُحِلَّ الذَّهَبُ وَالْحَرِيرُ لِإِنَاثِ أُمَّتِي، وَحُرِّمَ عَلٰى ذُكُوْرِهَاগ্ধ.
“আমার উম্মাতের নারীদের জন্য স্বর্ণ ও রেশম ব্যবহার হালাল করা হয়েছে। আর উম্মাতের পুরুষদের উপর তা হারাম করা হয়েছে।”[১৫] সাহাবী ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) হতে বর্ণিত যে, একদা রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একজন পুরুষের হাতে স্বর্ণের আংটি দেখতে পেয়ে তা খুলে ফেলে দিলেন এবং বললেন :
্রيَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا فِىْ يَدِهِগ্ধ.
“তোমাদের কেউ জাহান্নামের আগুনের কয়লায় পুড়তে ইচ্ছে করলে সে যেনো এটা (স্বর্ণের আংটি) তার হাতে পরে।”[১৬]
এসব বলিষ্ট প্রমাণ থাকার পর যদি কেউ বলে যে, সিকি পরিমাণ স্বর্ণ পুরুষের জন্য জায়িয, তাহলে সে তাঁর নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর বিরুদ্ধাচরণ করল। আর নাবী’র বিরুদ্ধাচরণ-এর পরিণাম জাহান্নাম।[১৭]


[১] সূরা আল আহ্যা-ব ৩৩ : ৫৩।
[২] সূরা আন্ নূর ২৪ : ৩১।
[৩] সূরা আল আহ্যা-ব ৩৩ : ৩২।
[৪] সূরা আল মুমতাহিনাহ্ ৬০ : ১০।
[৫] সহীহ মুসলিম- হাঃ ১৬৩১।
[৬] সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৩-১৪।
[৭] সুনান আবূ দাঊদ- হাঃ ৩১৪১, হাসান।
[৮] মু‘আত্তা- ১/১৯১ পৃঃ, আন্ নাসায়ী- ৪/৫৭ পৃঃ, আলবানী সহীহ, ইরওয়া- ১/৩৬০ পৃঃ।
[৯] মাজমূ‘ ফাতাওয়া বিন বায- ৬/৩৬০ পৃঃ।
[১০] সৌদী ফাতাওয়া বোর্ড- ১/২০২ পৃঃ, ফাতাওয়া নং- ২৩৬০০।
[১১] আল য‘ঈফাহ্- হাঃ ৬৯, ও য‘ঈফ আবূ দাঊদ- হাঃ ১৫।
[১২] ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ ‘মাওযূ‘আ ফাতওয়া’- ২১/১২৭।
[১৩] সৌদী স্থায়ী ফাতওয়া- ৫/২৩৫।
[১৪] সহীহুল বুখারী- হাঃ ৬৩১।
[১৫] মুসনাদে আহমাদ, সুনান আত্ তিরমিযী- হাঃ ৫১৪৮।
[১৬] সহীহ মুসলিম- হাঃ ২০৯০।
[১৭] আল-কুরআন : সূরা আন্ নিসা ৪ : ১১৫।


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত