সাময়িক প্রসঙ্গ
কতিপয় জলজ প্রাণি... হালাল-হারামের সীমারেখা
আরাফাত ডেস্ক
কুমির, তিমি, ব্যাঙ, কাঁকড়া, কচ্ছপ, অক্টোপাস, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি সামুদ্রিক প্রাণী খাওয়ার বিধান কি? তা হালাল না হারাম অনেকের মনেই এ প্রশ্ন জাগে।
ইসলামী শরী‘আতের দৃষ্টিতে ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত এবং হারাম ঘোষিত প্রাণী ব্যতীত সমস্ত সকল প্রকার সামুদ্রিক প্রাণী খাওয়া হালাল। সুতরাং এ দৃষ্টিতে তিমি মাছ, কাঁকড়া, কচ্ছপ, অক্টোপাস, শামকু, ঝিকুন ইত্যাদি সবই হালাল প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। আর ব্যাঙ খাওয়া সর্বসম্মতভাবে হারাম। কারণ ব্যাঙ হত্যার ব্যাপারে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। কুমিরের ব্যাপারটি দ্বিমত পূর্ণ। তবে জুমহুর বা অধিকাংশ বিদ্বানের মতে তা হারাম। নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হলো-
সর্বপ্রকার সামুদ্রিক প্রাণী খাওয়া হালাল হওয়ার ব্যাপারে কুরআন-হাদীসের বক্তব্য, আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿.....أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُهُ﴾
“তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও সমুদ্রের খাদ্য হালাল করা হয়েছে তোমাদের উপকারার্থে।”[১]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন :
﴿قُلْ لَا أَجِدُ فِيْ مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا إِلَّا أَنْ يَكُوْنَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَسْفُوْحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيْرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ﴾
“আপনি বলে দিন, যা কিছু বিধান ওয়াহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ।”[২]
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন :
্রهُوَ الطَّهُوْرُ مَاؤُهُ، الحِلُّ مَيْتَتُهُগ্ধ.
নদী বা সাগরের পানি পবিত্র এবং পানিতে বসবাসকারী মৃত প্রাণীও খাওয়া বৈধ।[৩]
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাহাবী শুরাইহ্ বলেন, পানিতে বসবাসকারী সমস্ত প্রাণী খাওয়া বৈধ।[৪]
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরও বলেছেন :
مَا أَحَلِّ اللهُ فِىْ كِتَابِهِ فَهُوَ حَلَالٌ وَمَا حَرَّمَ فَهُوَ حَرَامٌ وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ عَافِيَةٌ فَاقْبَلُوْا مِنَ اللهِ الْعَافِيَةَ، فَإِنِّ اللهَ لَمْ يَكُنْ نَسِيًّا. ثُمِّ تَلَا هَذِهِ الآيَةَ ﴿وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا﴾.
‘আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাবে যা হালাল করেছেন তা হালাল, যা হারাম করেছেন তা হারাম, আর যে বিষয়ে তিনি নীরব থেকেছেন তা ক্ষমারযোগ্য। সুতরাং তোমরা আল্লাহপ্রদত্ত ক্ষমাকে গ্রহণ করো। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বিস্মৃত হন না। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন, “তোমার প্রতিপালক বিস্মৃত হন না”[৫]।[৬]
তাছাড়া ইসলামের একটি অন্যতম মূলনীতি হলো, দুনিয়াবী সকল বস্তুই বৈধ যতক্ষণ না ইসলামে সে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায়। আর কাঁকড়া, কচ্ছপ, অক্টোপাস, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি খাওয়ার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ’য় নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায় না।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা প্রতীয়মান হলো যে, উল্লেখিত সামুদ্রিক প্রাণী বৈধতার ব্যাপারে কোনো বাধা নেই। এগুলোকে মাকরূহ বলাও প্রমাণ সাপেক্ষ নয়। তবে কারও যদি তা খেতে রুচি না হয় সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এগুলোকে হারাম বা মাকরূহ বলার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কিন্তু প্রজাতি ভেদে কাঁকড়া, কচ্ছপ, অক্টোপাস, শামুক যা উভয়চর তা খাওয়া হারাম।
ব্যাঙ খাওয়া হারাম : যে সকল ব্যাঙ পানি ছাড়া বাঁচে না সেগুলোও খাওয়া হারাম, কেননা হাদীসে ব্যাঙ হত্যার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ ব্যাপারে হাদীস হলো- আব্দুর রহমান ইবনু ‘উসমান (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) থেকে বর্ণিত;
أَنَّ طَبِيْبًا سَأَلَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَنِ الضِّفْدَعِ يَجْعَلُهَا فِيْ دَوَاءٍ، فَنَهَى عَنْ قَتْلِهَا. أَخْرَجَهُ أَحْمَدُ، وَصَحَّحَهُ الْحَاكِمُ في صحيح الجامع.
“একজন চিকিৎসক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে ব্যাঙ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন এটা ঔষধে প্রয়োগ করবেন কি না? তিনি ওটা হত্যা করতে নিষেধ করলেন।”[৭]
আর শরী‘আতের একটি মূলনীতি হলো- যে প্রাণী হত্যা করা হারাম তা খাওয়াও হারাম। সেটা খাওয়া হালাল হলে তা হত্যা করা বৈধ হত।
কুমির : কুমিরের ব্যাপারে ‘আলেমদের মাঝে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। তবে ইমাম মালিক ছাড়া অন্যান্য ইমামগণ যেমন- ইমাম আবূ হানীফাহ্, শাফে‘য়ী, আহমদ বিন হাম্বল তথা অধিকাংশ ইমামের মতে কুমির খাওয়া হারাম। কারণ এটি উভচর প্রাণী। অর্থাৎ- কুমির যেমন পানিতে বসবাস করে স্থল ও বন-জঙ্গলেও বসবাস করে। সেই সাথে এটি বড় বড় দাঁত বিশিষ্ট হিংস্র প্রাণী। আর হাদীসে বড় নড় নখ বিশিষ্ট হিংস্র প্রাণী খাওয়াকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) থেকে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন :
্রكُلُّ ذِيْ نَابٍ مِنَ السِّبَاعِ، فَأَكْلُهُ حَرَامٌগ্ধ. (رَوَاهُ مُسْلِمٌ)
“লম্বা দন্ত বিশিষ্ট সকল হিংস্র পশুর গোশ্ত খাওয়া হারাম।”[৮] -আল্লাহু আলাম।
যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা কোন প্রাণীর গোশ্ত খাওয়া ক্ষতিকর প্রমাণিত হয় তাহলে তা খাওয়া হারাম। চাই তা সামুদ্রিক হোক অথবা স্থলচর হোক। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَلَا تَقْتُلُوْا أَنفُسَكُمْ ۚ إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا﴾
“আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু।”[৯]
তিনি আরও বলেন :
﴿وَلَا تُلْقُوْا بِأَيْدِيْكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ﴾
“তোমরা নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না।”[১০]

[১] সূরা আল মায়িদাহ্- ৯৬।
[২] সূরা আল আন‘আম- ৫।
[৩] আত্ তিরমিযী- হাঃ ৬৯, আবূ দাঊদ- হাঃ ৮৩; ইরওয়াউল গালীল- আলবানী (রাহিমাহুল্লা-হ) সহীহ বলেছেন, ১/২১।
[৪] সহীহুল বুখারী- ৫/২০৯১।
[৫] সূরা মারইয়াম ১৯ : ৬৪।
[৬] হাকীম, দারাকুৎনী; সিলসিলা সহীহাহ্- হা/২২৫৬।
[৭] আহমাদ- ১৫৩৩০, আন্ নাসায়ী- ৪৩৫৫, আবূ দাঊদ- ৩৮৭১, আদ্ দারেমী- ১৯৯৮, হাকিম- ৪র্থ খণ্ড, ৪১১ পৃঃ। সহীহুল জামে‘- হা/৬৯৭।
[৮] সহীহ মুসলিম- হাঃ ১৯৩৩।
[৯] সূরা আন্ নিসা- ২৯।
[১০] সূরা আল বাক্বারাহ্- ১৯৫।


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 5:59:35 সূর্যাস্ত : 5:27:01

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত