সাময়িক প্রসঙ্গ
মাসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত ও জুমু‘আর সালাত সাময়িকভাবে স্থগিত : সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ-এর ফাতাওয়া
আরাফাত ডেস্ক
الحمد لله رب العالمين. والصلاة والسلام على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين. أما بعد :
গত ২২/৭/১৪৪১ হিজরি (মোতাবেক ১৭/৩/২০২০ খ্রিস্টাব্দ) মঙ্গলবার রিয়াদে সৌদি কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারস (সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ)-এর ২৫তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে তারা করোনা ভাইরাস-এর দ্রুতি বিস্তার এবং ব্যাপক প্রাণহানির বিষয়টি পর্যালোচনা করেন। পাশাপাশি তারা এই মহামারী সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য মেডিকেল রিপোর্টও খতিয়ে দেখেন।
সৌদি আরবের স্বাস্থ্যমন্ত্রী উক্ত অধিবেশনে উপস্থিত হয়ে মহামারীর দ্রুত সংক্রমণ ও ভয়াবহতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, এটি মানুষের জীবনের জন্য বিরাট হুমকি। সুতরাং এ বিষয়ে ব্যাপক সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে, এই ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও স্পষ্ট করেন যে, গণ জামা‘আত সংক্রমণের প্রধান কারণ।
অধিবেশনে সিনিয়র স্কলারগণ মানুষের জীবন রক্ষার অপরিহার্যতা সংক্রান্ত কুরআন-সুন্নাহর বক্তব্যগুলো পর্যালোচনা করেন। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَلَا تُلْقُوْا بِأَيْدِيْكُمْ إِلَى التَّهْلُكَة﴾
“এবং তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।”[১]
তিনি আরও বলেন :
﴿وَلَا تَقْتُلُوْا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا﴾
“এবং নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল।”[২]
এ দু’টি আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জীবননাশের কারণগুলো থেকে বেঁচে থাকা ওয়াজিব (অবশ্য কর্তব্য)।
এছাড়াও নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিম্নোক্ত হাদীসগুলো দ্বারা মহামারি বিস্তৃতি লাভের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের অপরিহার্যতা প্রমাণিত হয়। যেমন- নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন :
্রلَا يُوْرِدُ مُمْرِضٌ عَلٰى مُصِحٍّগ্ধ.
“কোনো ব্যক্তি যেনো তার অসুস্থ উটকে সুস্থ উটের কাছে না নিয়ে যায়।”[৩]
তিনি (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরও বলেছেন,
্রفِرَّ مِنَ المَجْذُوْمِ كَمَا تَفِرُّ مِنَ الْأَسَدِগ্ধ.
“কুষ্ঠরোগী থেকে সেভাবে পালাও যেভাবে সিংহ থেকে পলায়ন করো।”[৪]
তিনি আরও বলেন :
্রإِذَا سَمِعْتُمْ بِالطَّاعُوْنِ بِأَرْضٍ فَلَا تَدْخُلُوْهَا، وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلَا تَخْرُجُوْا مِنْهَاগ্ধ.
“যদি কোনো এলাকায় মহামারীর কথা শুনো তবে সেখানে যেও না। আর যদি কোনো এলাকায় তোমাদের থাকা অবস্থায় মহামারী সৃষ্টি হয় তাহলে সেখান থেকে বের হয়ো না।”[৫]
আর শরী‘আতের একটি সুসাব্যস্ত মূলনীতি হলো,
্রلَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَগ্ধ.
“নিজের অথবা অন্যের কোনও ক্ষতি করা যাবে না।”[৬]
শরী‘আতের আরেকটি মূলনীতি হলো,
أن الضرر يدفع قدر الإمكان.
যতটা সম্ভব ক্ষয়-ক্ষতি প্রতিহত করতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনার উপর ভিত্তি করে বলা যায়, (বিশেষ প্রয়োজনে) মাসজিদে সকল র্ফয এবং জুমু‘আর সালাত বন্ধ করা শরী‘আতের দৃষ্টিতে বৈধ। কেবল আযান দেয়াই যথেষ্ট। তবে হারামাইন তথা মক্কা ও মদীনার দু’মাসজিদের আওতামুক্ত থাকবে। মাসজিদের দরজা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। এ সময় মাসজিদগুলোতে আযান চালু থাকবে আর আযানে বলা হবে :
্রصَلُّوْا فِيْ بُيُوْتِكُمْগ্ধ.
উচ্চারণ : “সাললূ ফী বুয়ূতিকুম।”
অর্থ : “বাড়িতেই সালাত আদায় করুন।”[৭]
ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে মারফূ‘সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার মুয়াজ্জিনকে আযানে এ কথা বলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।[৮]
জুমু‘আর দিন বাড়িতেই যোহরের চার রাকা‘আত সালাত আদায় করতে হবে।
মহান আল্লাহর একটি অনুগ্রহ যে, ওজরের কারণে কেউ যদি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও জুমু‘আর সালাত জামা‘আতে আদায় করতে সক্ষম না হয় তবুও তাঁকে তার পূর্ণ সওয়াব দান করা হবে। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
্রإِذَا مَرِضَ العَبْدُ، أَوْ سَافَرَ، كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيْمًا صَحِيْحًاগ্ধ.
“বান্দা যদি অসুস্থ হয় অথবা সফরে যায় তাহলে সে সুস্থ ও আবাস অবস্থায় যে ‘আমল করত আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার সমপরিমাণ সওয়াব দান করেন।”[৯]
উলামা পরিষদ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জারি করা প্রতিরোধ ও সতর্কতামূলক নির্দেশনাগুলো পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার এবং তাদেরকে সহযোগিতার করার জন্য সকলকে উপদেশ দিচ্ছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَتَعَاوَنُوْا عَلٰى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلٰى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ﴾
“এবং তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতির কাজে সহযোগিতা করো এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতা করো না।”[১০]
এ সকল পদক্ষেপ ও নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে মেনে চলা মূলতঃ ‘সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতির কাজে সহযোগিতার অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপভাবে আমাদের সুমহান দ্বীন আমাদেরকে মহান আল্লাহর উপর ভরসা করার পর ‘পার্থিব উপায়-উপকরণ অবলম্বন’ করার যে নির্দেশ দিয়েছে এটি তা বাস্তবায়নের শামিল।
পাশাপাশি আমরা সবাইকে মহান আল্লাহকে ভয় করা, অধিকহারে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা এবং বিনীতভাবে দু‘আ করার জন্য উপদেশ দিচ্ছি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوْبُوْا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ﴾
“[হূদ (‘আলাইহিস্ সালাম) বললেন,] হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তাঁর কাছে তাওবাহ্ করো। তিনি তোমাদেরকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি দিবেন এবং তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন।”[১১]
এখানে ‘শক্তি’ কথাটির মধ্যে জীবন-জীবিকার প্রাচুর্যতা, সার্বিক নিরাপত্তা এবং সর্ব প্রকার সুস্থতা ও বিপদাপদ থেকে মুক্তির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত।
আমরা মহান আল্লাহর নিকট দু‘আ করি, তিনি যেনো তাঁর বান্দাদের থেকে এ মহাবিপদ উঠিয়ে নেন এবং খাদেমুল হারামাইন শরীফাইন, ক্রাউন প্রিন্স এবং আমাদের বিচক্ষণ সরকারকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারীর প্রতিরোধে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ ও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় উত্তম বিনিময় দান করেন। আরও দু‘আ করি, তিনি যেনো সকলকে হিফাজত করেন।
﴿فَاللهُ خَيْرٌ حَافِظًا وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ﴾
“কারণ আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ হিফাজতকারী ও সর্বাধিক দয়াশীল।”[১২]

[১] সূরা আল বাক্বারাহ্- ১৯৫।
[২] সূরা আন্ নিসা- ২৯।
[৩] সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম- হাঃ ১০৪/২২২১।
[৪] সহীহুল বুখারী- হাঃ ৫৭০৭।
[৫] সহীহুল বুখারী- হাঃ ৫৭২৮ ও সহীহ মুসলিম।
[৬] সুনান ইবনু মাজাহ্- হাঃ ২৩৪০, সহীহ।
[৭] সহীহুল বুখারী- হাঃ ৯০১, সহীহ মুসলিম- হাঃ ২৬/৬৯৯।
[৮] সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
[৯] সহীহুল বুখারী- হাঃ ২৯৯৬।
[১০] সূরা আল মায়িদাহ্ : ২।
[১১] সূরা হূদ : ৫২।
[১২] সূরা ইউসুফ : ৫৪।

আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত