সাময়িক প্রসঙ্গ
কবরের ফিতনা
গিয়াসুদ্দীন বিন আব্দুল মালেক
আসমা বিনতু আবূ বক্র (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : আমি ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা)-এর কাছে গেলাম। মানুষেরা তখন নামায পড়ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার কি? তখন তিনি মাথার সাহায্যে আকাশের দিকে ইঙ্গিত দিলেন। আমি প্রশ্ন করলাম : ‘আলামতের কথা বলছো কি? তিনি মাথা দিয়ে ইশারা করলেন, অর্থাৎ- ‘হ্যাঁ, বললেন। (তখন আমিও তাদের দেখাদেখি নামাযে যোগ দিলাম)। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (নামায) এত দীর্ঘায়িত করলেন যে, আমি প্রায় অজ্ঞান হতে যাচ্ছিলাম। আমার পাশেই একটি চামড়ার মশকে পানি রাখা ছিল। আমি সেটি খুলে আমার মাথায় পানি ঢালতে আরম্ভ করলাম। তারপর যখন সূর্য উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামায শেষ করে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং লোকদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। প্রথমে তিনি মহান আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন। তারপর বললেন, ‘আম্মা বা‘দ। আসমাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা) বলেন, তখন আনসারদের কিছুসংখ্যক নারী যেনো কিসের একটা গুঞ্জন তুললেন। তাই আমি তাদেরকে চুপ করাবার উদ্দেশ্যে তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়লাম। তারপর ‘আয়িশাহ্কে প্রশ্ন করলাম : নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি বললেন? ‘আয়িশাহ্! বললেন, তিনি বলেছেন, এমন কোন জিনিস যা আমাকে পূর্বে দেখানো হয়নি, আমি আজ এ জায়গাতে থেকেই সেসব কিছুই দেখে নিলাম। এমনকি জান্নাত এবং জাহান্নামও দেখলাম। আমার নিকট ওয়াহী পাঠানো হয়েছে যে, কবরে তোমাদেরকে মাসীহ দাজ্জালের ফিত্নার ন্যায় বা প্রায় অনুরূপ ফিত্নায় ফেলা হবে, তোমাদের প্রত্যেককে ওঠানো হবে এবং জিজ্ঞেস করা হবে : এ মানুষটি সম্পর্কে। তুমি কী জানো? তখন মু’মিন অথবা মুকীন- নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দু’টোর মধ্যে কোন্ শব্দটি বলেছিলেন সে ব্যাপারে বর্ণনাকারী হিশামের মনে সন্দেহ রয়েছে- বলবে, তিনি হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম), তিনি আমাদের কাছে সুস্পষ্ট দলীল ও হিদায়াত নিয়ে এসেছিলেন। অতঃপর আমরা ঈমান এনেছি, তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছি, তাঁর আনুগত্য করেছি এবং তাঁকে সত্য বলে গ্রহণ করেছি। তখন তাকে বলা হবে, পুণ্যবান হিসেবে ঘুমিয়ে থাকো। তুমি যে তাঁর প্রতি ঈমান এনেছ তা আমরা অবশ্যই জানতাম। আর যে মুনাফিক্ব বা মুরতাব রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দু’টির মধ্যে কোন্ শব্দটি বলেছিলেন সে ব্যাপারে হিশামের মনে সন্দেহ রয়েছে-তাকেও জিজ্ঞেস করা হবে যে, এ মানুষটি সম্পর্কে তুমি কী জান? উত্তরে সে বলবে, আমি (কিছুই) জানি না; অবশ্য লোককে তার ব্যাপারে কিছু একটা বলতে শুনেছি, আমিও তাই বলতাম। হিশাম বলেন, ফাতিমাহ্ আমার কাছে বলেছেন, তিনি (আমার কাছে মুনাফিক্বের ওপর কঠিন শাস্তির ব্যাপারে যা উল্লেখ করেছেন তা ব্যতীত সবটুকু আমি উত্তমরূপে স্মরণ রেখেছি।[১]
আসমাহ্ বিনতু আবূ বক্র (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : সূর্যগ্রহণের সময় আমি নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা)’র কাছে গেলাম। তখন মানুষেরা দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিল। তখন ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা)-ও নামাযে দাঁড়িয়েছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মানুষদের কী হয়েছে? তখন তিনি হাত দিয়ে আকাশের দিকে ইঙ্গিত দিলেন এবং ‘সুবহানাল্লা-হ’ বললেন। আমি বললাম, এ কি কোনো নিদর্শন? তখন তিনি ইশারায় বললেন, হ্যাঁ। আসমাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা) বলেন, আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। এমনকি (দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে) আমি প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়লাম এবং মাথায় পানি ঢালতে লাগলাম। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন নামায শেষ করলেন, তখন মহান আল্লাহর হাম্দ ও সানা বর্ণনা করলেন।
অতঃপর বললেন : আমি এ জায়গা থেকে তা দেখতে পেলাম, যা এর আগে দেখিনি, এমনকি জান্নাত এবং জাহান্নামও। আর আমার কাছে ওয়াহী পাঠানো হয়েছে যে, নিশ্চয়ই তোমাদেরকে কবরের মধ্যে দাজ্জালের ফিত্নার মতো অথবা বলেছেন তার কাছাকাছি ফিত্নায় ফেলা হবে। বর্ণনাকারী বলেন, (‘মিস্লা’ ও ‘কারীবান’) দু’টির মাঝে কোন্টি আসমাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা) বলেছিলেন, তা আমার মনে নেই। তোমাদের এক একজনকে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, এ ব্যক্তির ব্যাপারে কী জানো? তখন মু’মিন (ঈমানদার) অথবা ‘মুকিন’ (বিশ্বাসী) বলবেন- বর্ণনাকারী বলেন যে, আসমাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা) ‘মু’মিন’ শব্দ বলেছিলেন, না ‘মুকীন’ তা আমার মনে নেই, তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। যিনি সুস্পষ্ট প্রমাণ ও হিদায়াত নিয়ে আমাদের কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং আমরা এতে সাড়া দিয়ে ঈমান আনয়ন করেছি ও তাঁর অনুসরণ করেছি। অতঃপর তাঁকে বলা হবে, তুমি পুণ্যবান বান্দা হিসেবে ঘুমিয়ে থাক। আমরা অবশ্যই জানতাম যে, নিশ্চিতই তুমি দৃঢ়বিশ্বাস স্থাপনকারী ছিলে। আর মুনাফিক্ব কিংবা সন্দেহকারী বর্ণনাকারী বলেন, আসমাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা) ‘মুনাফিক্ব’ না ‘সন্দেহকারী’ বলেছিলেন তা আমার মনে নেই, সে শুধু বলবে, আমি কিছুই জানি না। আমি লোককে কিছু বলতে শুনেছি এবং আমিও তাই বলেছি।[২]
হাদীসের শিক্ষা :
১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী মানুষ সঠিক ও সুন্দর উত্তর দিবে। ফলে তার কবর শান্তিময় হবে।
২. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অবিশ্বাসী ব্যক্তি উত্তর দিতে পারবে না। ফলে তার কবর ভয়াবহ শাস্তির স্থলে পরিণত হবে।
৩. এভাবে উভয় শ্রেণীর মানুষই ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত কবরে অবস্থান করবে।

[১] সহীহুল বুখারী- হাঃ ৯২২।
[২] সহীহুল বুখারী- হাঃ ১০৫৩।


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 5:43:02 সূর্যাস্ত : 6:09:54

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত