সাময়িক প্রসঙ্গ
লোহিত সাগরে ভাসমান মাসজিদ মাসজিদ র্আ রাহমাহ্ : জেদ্দা
এম. জি. রহমান
জেদ্দা সৌদী আরবের পশ্চিমাঞ্চলে লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত তিহামাহ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। জেদ্দা মক্কা প্রদেশের সর্ববৃহৎ ও সৌদি আরবের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। লোহিত সাগরের উপর অবস্থিত সর্ববৃহৎ সমুদ্রবন্দর এই শহরেই অবস্থিত। জনসংখ্যা প্রায় ৪৩ লক্ষ। এ শহরটি সৌদি আরবের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
মুসলিম উম্মাহর জন্য পবিত্রতম নগরী মক্কা ও মদীনার প্রধান ও অন্যতম প্রবেশদ্বার জেদ্দা। অর্থনৈতিকভাবেও জেদ্দা সৌদী আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সবচেয়ে বেশি অর্থ বিনিয়োগের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ শহরের অন্যতম আকর্ষণ লোতিত সাগরে ভাসমান মাসজিদ র্আ রাহমাহ্।
জেদ্দার কর্নিচ প্রান্তে সমুদ্রতটে অবস্থিত আল-রাহমাহ্ মাসজিদ ১৯৮৫ সালে নির্মিত হয়। মাসজিদটি একই সাথে ফাতিমা আল-যাহরা মাসজিদ নামেও পরিচিত এবং জেদ্দার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন মাসজিদ এটি। বিশেষত পূর্ব এশিয়ার মুসলিমরা এ মাসজিদে বেশি এসে থাকেন।

২ হাজার ৪ শত বর্গকিলোমিটার জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই মাসজিদটি প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে নির্মিত। আটটি স্তম্ভের উপর দণ্ডায়মান মাসজিদটির ছাদে মোট ৫২টি গম্বুজ রয়েছে, তন্মধ্যে একটি গম্বুজ বৃহত্তর। রয়েছে ইসলামী শৈলীতে ৫৬টি জানালা। একই সাথে মাসজিদটির একটি মিনার রয়েছে। নারীদের সালাত আদায়ের জন্যও আলাদা স্থান রয়েছে। মাসজিদটি আধুনিক ও পুরানো স্থাপত্য এবং ইসলামী শিল্পের সমন্বয়ে নির্মিত। এটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, সরঞ্জাম এবং শব্দ এবং আলোর সিস্টেমের সাথে নির্মিত হয়।
লোহিত সাগরের উপর মাসজিদটির প্রায় সম্পূর্ণ অংশ অবস্থিত হওয়ায় জোয়ারের সময় মাসজিদটিকে পানির উপর ভাসমান বলে মনে হয়। এ কারণে মাসজিদটি জেদ্দার ভাসমান মাসজিদ হিসেবেও পরিচিত।

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় লোহিত সাগরের পটভূমিতে মাসজিদটির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সৌদী আরব এবং অন্যান্য দেশের পর্যটক এবং মুসল্লীরা ভীড় জমান এই মাসজিদে।
লোহিত সাগর পরিচিতি : লোহিত সাগর (ইংরেজি : Red Sea) ভারত মহাসাগরের একটি অংশ, যা আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশকে পৃথক করেছে। লোহিত সাগরের দুই পাড়ে ৬টি দেশের অবস্থান। সাগরটির পূর্ব পাড়ে রয়েছে সৌদী আরব ও ইয়েমেন। পশ্চিম পাড়ে মিশর, সুদান ইরিত্রিয়া ও জিবুতির অবস্থান। সাগরটির দক্ষিণে বাব আল মান্দাব প্রণালী ও এডেন উপসাগরের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরের সাথে যুক্ত এবং উত্তরাংশে সিনাই উপদ্বীপ, আকাবা উপসাগর এবং সুয়েজ উপসাগর অবস্থিত।

লোহিত সাগরের পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল প্রায় ১,৭৪,০০০ বর্গকিলোমিটার। সাগরটি প্রায় ১৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সর্বাধিক ৩০০ কিলোমিটার প্রশস্ত এটি মধ্যভাগে সর্বোচ্চ ২,৫০০ মিটার গভীর; এর গড় গভীরতা প্রায় ৫০০ মিটার। তবে সাগরটিতে প্রশস্ত মহীসোপান আছে, যাতে বসবাসকারী জলজ জীব ও প্রবালগুলো বিখ্যাত। এই সাগরে প্রায় ১০০০ প্রজাতির অমেরুদণ্ডী প্রাণী ও ২০০ রকমের নরম ও শক্ত প্রবালের বাস।

লোহিত সাগরের আশপাশের মরুভূমিতে যখন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় তখন মরুভূমির উত্তপ্ত বালু এই সাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। প্রচণ্ড উত্তাপের কারণে এবং বৃষ্টিপাতের অভাবে সাগরের পানি বাষ্পীভূত হয়ে যায় বলে এই সাগরের লবনাক্ততাও বেড়ে একে পৃথিবীর সবচেয়ে লবণাক্ত সাগরগুলোর মধ্যে একটিতে পরিণত করেছে। এই সাগরের লবণাক্ততা ৩.৬% থেকে ৩.৮%। রোদের উপস্থিতি, সাদা বালির তট, বৈচিত্রময় প্রবাল আর বিক্ষিপ্তভাবে ডুবে যাওয়া জাহাজগুলোর কারণে এই সাগর একটি বড় পর্যটন স্থানে পরিণত হয়েছে।[১]

[১] সূত্র : উইকিপিডিয়া, আরব নিউজ- পরিবর্তন, Champs21.com। 


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত