কাসাসুল কুরআন-হাদীস
রাসূল (ﷺ)-কে কটুক্তিকারীর পরিণতি
গিয়াসুদ্দীন বিন আব্দুল মালেক
জাবির (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কে (ইয়াহুদী সর্দার) কা‘ব ইবনু আশরাফকে হত্যা করতে পারবে? সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অনেক অনেক কষ্ট দিয়েছে। তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) উঠে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি চান, আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ! মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) তখন বললেন, তাহলে এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাইলে আমাকে তা বলার অনুমতি প্রদান করবেন? নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, বলতে পারো। এরপর মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) কা‘ব ইবনু আশরাফ ইয়াহুদীর কাছে গিয়ে বললেন, এ লোকটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে শুধু সাদাক্বাহ্ চায়। আর আমাদেরকে সে জ্বালাতন করছে, আজ আমি তোমার নিকট কিছু ঋণের জন্য এসেছি। তখন কা‘ব ইবনু আশরাফ তাকে বলল, আরে, এখনি জ্বালাতনের কি দেখেছ, পরে সে তোমাদেরকে অত্যাচারে আরো অতিষ্ঠ করে তুলবে! মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) তখন বললেন, সে যাই হোক, আমরা তো তাঁকে মেনে নিয়েছি। শেষ পরিণাম কি দাঁড়ায় তা না দেখে এখনই তাঁকে পরিত্যাগ করা ভাল মনে করি না। আমি এখন তোমার নিকটে এক ওয়াসাক বা দু’ওয়াসাক পরিমাণ খাদ্য ধার চাই। বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান বলেন, ‘আম্ র ইবনু দীনার আমার কাছে হাদীসটি কয়েকবার বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তিনি এক ওয়াসাক বা দু’ওয়াসাক শর্ত উল্লেখ করেননি। তাই তাঁকে আমি মনে করিয়ে দিলাম, এ হাদীসে তো এক ওয়াসাক বা দু’ওয়াসাক কথাটি আছে। তিনি বললেন, আমি মনে করি তাতে এক ওয়াসাক বা দু’ ওয়াসাক কথাটি উল্লেখ আছে। যা হোক, কা‘ব ইবনু আশরাফ তখন বলল, ঋণ তো পেয়ে যাবে, তবে কিছু বন্ধক রাখ। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) তখন বললেন, আচ্ছা! তুমি কি জিনিস বন্ধক চাও? সে বলল, তোমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখো। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বললেন, তুমি আরবের সবচেয়ে সুদর্শন ব্যক্তি, তোমার কাছে আমাদের স্ত্রীদের কিভাবে বন্ধক রাখা যেতে পারে? সে তখন বলল, তাহলে তোমাদের ছেলে সন্তানদেরকে বন্ধক রাখো। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বললেন, আমাদের ছেলে-সন্তানদেরকেই বা কিভাবে বন্ধক রাখা যেতে পারে? তাহলে পরবর্তী সময়ে লোকেরা সুযোগ পেয়ে তাদেরকে খোঁটা দিয়ে বলবে, “তোমাদেরকে মাত্র এক বা দু’ওয়াসাকের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছিল।” এটা আমাদের জন্য লাঞ্ছনাকর অপমানজনক; বরং আমরা আমাদের তলোয়ার (লামা) বন্ধক রাখতে পারি। সুফ্ইয়ান বলেন, (লামা) শব্দের অর্থ তলোয়ার।
সুতরাং মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ পুনরায় যাওয়ার অঙ্গীকার করে চলে আসেন। দ্বিতীয়বার মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) আবূ নায়িলাকে (কা‘ব ইবনু আশরাফের দুধ ভাই) সাথে নিয়ে রাতের বেলা তার কাছে যান। কা‘ব তাদেরকে দুর্গের মধ্যে ডেকে নেয়। রাতের বেলা তাদের কাছে আসার সময় কা‘বের স্ত্রী তাকে বলল, এখন তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, ভয়ের কোন কারণ নেই। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ ও আমার দুধ ভাই আবূ নায়িলাহ্ এসেছে, তাদের কাছে যাচ্ছি। বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান বলেন, ‘আম্ র ইবনু দীনার ব্যতীত এ হাদীসের অন্য বর্ণনাকারীগণ এতটুকু কথা বেশি সংযোগ করে বর্ণনা করেছেন, কা‘ব ইবনু আশরাফের স্ত্রী বলল, এ ডাকে যেনো রক্তের গন্ধ আছে বলে মনে হচ্ছে। কা‘ব ইবনু আশরাফ বলল, আরে কিছু না। আমার ভাই মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ এবং দুধ ভাই আবূ নায়িলাহ্ ডাকছে। আর বংশগত অভিজাত ব্যক্তিকে রাতের বেলায় বর্শাবিদ্ধ করার জন্য ডাকলেও তার যাওয়া উচিত। বর্ণনাকারী ‘আম্ র ইবনু দীনার বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) তার সঙ্গে আরো দু’ব্যক্তিকে নিয়ে এসেছিলেন। বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘আম্ র ইবনু দীনার কি তাদের দু’জনের নাম বলেছিলেন? উত্তরে সুফ্ইয়ান বললেন, একজনের নাম বলেছেন।
‘আমর বলেছেন : তিনি তার সাথে দু’জন লোক নিয়ে আসেন। অন্যরা বলেছেন, তিনি আবূ ‘আবস ইবনু জাবর, হারিস ইবনু আউস ও ‘আব্বাদ ইবনু বিশরকে সাথে করে নিয়ে আসেন। ‘আম্ র ইবনু দীনার বর্ণনা করেন, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) তাঁর সঙ্গী দু’জনকে বলে রেখেছিলেন, যখনই কা‘ব ইবনু আশরাফ আসবে, তার মাথার চুল ধরে আমি শুঁকতে থাকব। যে সময় তোমরা দেখতে পাবে, আমি খুব শক্ত করে তার মাথার চুল মুষ্টিবদ্ধ করেছি, অমনি তোমরা তলোয়ার দিয়ে তাকে আঘাত করবে। তিনি আরো বললেন, একবার আমি তোমাদেরকেও শুঁকাব। অতঃপর কা‘ব ইবনু আশরাফ শরীরে চাদর জড়িয়ে যখন তাঁদের কাছে আসে, তার শরীর থেকে তখন সুগন্ধ বের হচ্ছিল। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) তাকে দেখে বললেন, এত উত্তম সুগন্ধ এর আগে আমি কোনদিন দেখিনি। এ স্থলে ‘আম্র ব্যতীত অন্য বর্ণনাকারীগণ এতটুকু বেশি বর্ণনা করেছেন, “তখন কা‘ব তাকে বলল, বর্তমানে আমার কাছে ‘আরবের সবচেয়ে সুন্দরী ও সর্বাপেক্ষা উত্তম এবং অধিক সুগন্ধি ব্যবহারকারিণী নারী আছে।” ‘আম্ র বর্ণনা করেন, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) তখন কা‘বকে বললেন, আমাকে তোমার মাথা শুঁকতে অনুমতি দিবে কি? সে বলল, হ্যাঁ! অবশ্যই দেব।
তারপর তিনি (মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্) তার মাথার ঘ্রাণ শুঁকলেন এবং সাথীদেরকেও শুঁকালেন। তারপর আবার বললেন, আমাকে আরেকবার শুঁকার অনুমতি প্রদান করবে কি? সে বলল, হ্যাঁ! এবার মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) তার মাথার চুল দৃঢ় মুষ্টিতে ধরে সঙ্গীদেরকে বললেন, এবার নাও। আর তখনি তাঁরা তাকে হত্যা করেন এবং নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে ফিরে এসে এ সংবাদ জানান।[১]
হাদীসের শিক্ষা : যারা রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে কটুক্তি করে তাদের দুনিয়ায় বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।
সুতরাং মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ পুনরায় যাওয়ার অঙ্গীকার করে চলে আসেন। দ্বিতীয়বার মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) আবূ নায়িলাকে (কা‘ব ইবনু আশরাফের দুধ ভাই) সাথে নিয়ে রাতের বেলা তার কাছে যান। কা‘ব তাদেরকে দুর্গের মধ্যে ডেকে নেয়। রাতের বেলা তাদের কাছে আসার সময় কা‘বের স্ত্রী তাকে বলল, এখন তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, ভয়ের কোন কারণ নেই। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ ও আমার দুধ ভাই আবূ নায়িলাহ্ এসেছে, তাদের কাছে যাচ্ছি। বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান বলেন, ‘আম্ র ইবনু দীনার ব্যতীত এ হাদীসের অন্য বর্ণনাকারীগণ এতটুকু কথা বেশি সংযোগ করে বর্ণনা করেছেন, কা‘ব ইবনু আশরাফের স্ত্রী বলল, এ ডাকে যেনো রক্তের গন্ধ আছে বলে মনে হচ্ছে। কা‘ব ইবনু আশরাফ বলল, আরে কিছু না। আমার ভাই মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ এবং দুধ ভাই আবূ নায়িলাহ্ ডাকছে। আর বংশগত অভিজাত ব্যক্তিকে রাতের বেলায় বর্শাবিদ্ধ করার জন্য ডাকলেও তার যাওয়া উচিত। বর্ণনাকারী ‘আম্ র ইবনু দীনার বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) তার সঙ্গে আরো দু’ব্যক্তিকে নিয়ে এসেছিলেন। বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘আম্ র ইবনু দীনার কি তাদের দু’জনের নাম বলেছিলেন? উত্তরে সুফ্ইয়ান বললেন, একজনের নাম বলেছেন।
‘আমর বলেছেন : তিনি তার সাথে দু’জন লোক নিয়ে আসেন। অন্যরা বলেছেন, তিনি আবূ ‘আবস ইবনু জাবর, হারিস ইবনু আউস ও ‘আব্বাদ ইবনু বিশরকে সাথে করে নিয়ে আসেন। ‘আম্ র ইবনু দীনার বর্ণনা করেন, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) তাঁর সঙ্গী দু’জনকে বলে রেখেছিলেন, যখনই কা‘ব ইবনু আশরাফ আসবে, তার মাথার চুল ধরে আমি শুঁকতে থাকব। যে সময় তোমরা দেখতে পাবে, আমি খুব শক্ত করে তার মাথার চুল মুষ্টিবদ্ধ করেছি, অমনি তোমরা তলোয়ার দিয়ে তাকে আঘাত করবে। তিনি আরো বললেন, একবার আমি তোমাদেরকেও শুঁকাব। অতঃপর কা‘ব ইবনু আশরাফ শরীরে চাদর জড়িয়ে যখন তাঁদের কাছে আসে, তার শরীর থেকে তখন সুগন্ধ বের হচ্ছিল। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) তাকে দেখে বললেন, এত উত্তম সুগন্ধ এর আগে আমি কোনদিন দেখিনি। এ স্থলে ‘আম্র ব্যতীত অন্য বর্ণনাকারীগণ এতটুকু বেশি বর্ণনা করেছেন, “তখন কা‘ব তাকে বলল, বর্তমানে আমার কাছে ‘আরবের সবচেয়ে সুন্দরী ও সর্বাপেক্ষা উত্তম এবং অধিক সুগন্ধি ব্যবহারকারিণী নারী আছে।” ‘আম্ র বর্ণনা করেন, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) তখন কা‘বকে বললেন, আমাকে তোমার মাথা শুঁকতে অনুমতি দিবে কি? সে বলল, হ্যাঁ! অবশ্যই দেব।
তারপর তিনি (মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্) তার মাথার ঘ্রাণ শুঁকলেন এবং সাথীদেরকেও শুঁকালেন। তারপর আবার বললেন, আমাকে আরেকবার শুঁকার অনুমতি প্রদান করবে কি? সে বলল, হ্যাঁ! এবার মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) তার মাথার চুল দৃঢ় মুষ্টিতে ধরে সঙ্গীদেরকে বললেন, এবার নাও। আর তখনি তাঁরা তাকে হত্যা করেন এবং নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে ফিরে এসে এ সংবাদ জানান।[১]
হাদীসের শিক্ষা : যারা রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে কটুক্তি করে তাদের দুনিয়ায় বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।
[১] সহীহুল বুখারী- হাঃ ৪০৩৭।
ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45
সূর্যাস্ত : 5:11:51
আপনার মন্তব্য1