ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব অঞ্চলের ৭টি নদনদীর পানি বইছে বিপদ-সীমার উপর দিয়ে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমি লঘুচাপ এবং ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, ধলাই, মনু, খোয়াই, পূর্বাঞ্চলের গোমতী, মুহুরি এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেনী ও হালদা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। আকস্মিক ও দ্রুত পানি বাড়ায় হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, সিলেট, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালীসহ কয়েকটি জেলার শহর ও নিম্নাঞ্চল ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে কৃষি ক্ষেত, মৎস খামার। ভেসে গিয়েছে গবাদি পশুসহ হাস-মুরগির খামার। বসতবাটি এবং এর অভ্যন্তরীণ ক্ষয়ক্ষতির কথা বলাই বহুল্য। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার লাখ লাখ মানুষ। দিশেহারা মানুষ ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে। বন্যাকবলিত মানুষকে উদ্ধার ও নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে কাজ করছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড। সরকারি-বেসরকারী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে ত্রাণকার্যক্রম শুরু করেছে। বন্যা কবলিত এলাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। খাবার নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই এমনকি থাকার জায়গাটাও নেই। চোখে না দেখলে মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা বুঝা মুশকিল। পানিবাহিত রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের দুর্ভোগ চরমে পোঁছেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রথমত মুসলিম হিসেবে, অতঃপর মানুষ হিসেবে আমাদের উপর অনেক দায়িত্ব বর্তায়। এখন দল-মত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অপরিহার্য দায়িত্ব বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এটা আমাদের মানবিক দায়িত্ব, পাশাপাশি এ দায়িত্ব পালন আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জনেরও বড়ো একটি উপায়। বান্দা যখন তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে, আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সাহায্যে থাকেন- এটা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মুখ নিঃসৃত বাণী।
যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দায়িত্বশীলগণ সর্বপ্রথম এগিয়ে যান। দেশের যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ঐতিহ্যগতভাবে প্রশংসনীয়। পাশাপাশি ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক অনেকেই সহযোগিতার হাত স¤প্রসারণ করেছেন। এদেশের মানুষ এতোটাই স¤প্রীতি প্রিয় যে, যে কোনো প্রতিকূলতায় ধর্ম-বর্ণ নির্বেশেষে নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন। এদেশের আহলে হাদীসদের সর্ববৃহৎ প্লাটফর্ম বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস এবং যুব সংগঠন জমঈয়ত শুব্বানে আহলে হাদীস বাংলাদেশও সর্বদা দুর্দশা-পীড়িত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যায়। ইতোমধ্যে সংগঠন দু’টির পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আসুন! আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ী ত্রাণ কার্যক্রমে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করি।
একটি বিষয় ভুলে গেলে চলবে নাÑ বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো যেমন মানবিক দায়িত্ব, পরবর্তী পুনর্বাসনে সহযোগিতা করাও অপরিহার্য কর্তব্য। কেননা, বন্যার ফলে ফসলের জমি, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি এমনকি সংসারের প্রয়োজনীয় আসবাব-সরঞ্জাম সবই প্লাবিত হয়েছে। কাজেই বন্যা পরবর্তী ন্যূনতম ৩ মাস খাদ্য ও পথ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে। পাশপাশি হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে, তাদের গৃহ নির্মাণেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সর্বসাধারণকে এগিয়ে আসতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের অব্যবহিত পরেই আকস্মিক বড়ো ধরনের দুর্যোগ সামাল দেওয়া বৃহৎ একটি চ্যালেঞ্জ। তার উপর হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংসপ্রায়। এমতাবস্থায় আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ এ সমস্যা সমাধানে মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে একান্ত আশাবাদি। অন্যথায় সংকট আরো ঘনিভূত হওয়ারর সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।
পরিশেষে একটি কথা স্মরণ রাখতে হবে, যে কোনো বিপদ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে গযব অথবা মু’মিনদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। অতএব বিপদে ধৈর্যহারা না হয়ে আল্লাহ তা‘আলার কাছে সাহায্য চাইতে হবে এবং বেশি বেশি ইস্তিগফার করতে হবে। মূলত মহান আল্লাহর সাহায্য ব্যতিরেকে কোনোভাবেই পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়। আর তিনিই উত্তম সাহায্যকারী।
আপনার মন্তব্য1