সাময়িক প্রসঙ্গ
শান্তি, শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা
শাইখ মুহাম্মাদ হারুন হুসাইন

আমারা প্রত্যেকেই শান্তি চাই। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ সব ক্ষেত্রে শান্তি চাই এটা সকলের কাম্য। কোথায় শান্তির খোঁজ পাওয়া যাবে? এ জন্য মানুষ পাগলপারা। প্রত্যেক ধর্মের অনুসারী নিজ নিজ ধর্মীয় রীতিনীতি ও আচার অনুষ্ঠান মেনে শান্তি পাওয়ার চেষ্টায় রত। ধর্মহীনতার প্রবক্তা ও প্রকৃতিবাদীরাও প্রবৃত্তির অনুসরণের মাধ্যমে শান্তির অন্বেষায় ব্যাকুল। কিন্তু শান্তি কি সমাজে বিরাজমান? এ প্রশ্নের সদুত্তর হয়তো অনেকের কাছে নেই। কারণ শান্তির ছোঁয়া থেকে এ সমাজের অবস্থান বহুদূরে। অথচ ইসলাম আমাদেরকে জানিয়েছে শান্তির উৎস সুমহান আল্লাহ তা‘আলা। তিনিই শান্তি এবং তাঁর পক্ষ হতে শান্তি আসে। অতএব শান্তি পেতে হলে তাঁরই দিকে ধাবিত হতে হবে। অরণ্যে রোদন করলে যেমন কোনো ফল পাওয়া যায় না; ঠিক তেমনি সৃষ্টি হয়ে সৃষ্টির কাছে শান্তির জন্য দৌড়ালে কোনো লাভ হবে না। অবশেষে ষোলআনা ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরতে হবে। বর্তমান সমাজের বাস্তবতায় যা প্রতীয়মান, মানুষ আজ শান্তির নেশায় অশান্তির পথে ধাবমান। অথচ এ ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ মানুষের উত্তম প্রতিষেদক যা বিক্ষুব্ধ আরব সমাজকে শান্ত করেছিল আর তা হলো, ওহীর বিধানের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চলিয়ে যাওয়া। আর তা হতে হবে প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) কর্তৃক আনীত ইসলামী শরিয়ত যথাযথভাবে প্রতিপালন করার মাধ্যমে; অন্য কোনো পথ ও পদ্ধতির দ্বারা এ জাতির কল্যাণ আদৌ সাধন সম্ভব না।

শৃংখলা সফলতার আবশ্যকীয় শর্ত। তাই শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির জন্য সু-শৃংখল বিধান দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা চাইলেই একটি নির্দেশের মাধ্যমে মানব সৃষ্টির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারতেন। কেননা তিনি যা চান তা-ই করেন এবং করতে সক্ষম। এতদ্সত্ত্বেও তিনি মানুষ সৃষ্টিতে চারটি ধাপ রেখেছেন। আর তা হচ্ছে শুক্রবিন্দু, জমাটবাঁধা রক্ত, মাংসপিণ্ড অতঃপর পরিপূর্ণ আকৃতি প্রদান। এ ধাপসমূহের মাধ্যমে মানুষ সৃষ্টি করে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন যে, জগতসংসারে মানুষকে শৃংখলা মেনে চলতে হবে। তবেই মানুষ তার লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে। শুধু তাই নয়; বেড়ে ওঠা, জীবন-সংসার এবং ‘ইবাদত-বন্দেগীসহ সর্বক্ষেত্রে এ শৃংখলার বিধি বিদ্যমান। এ সব থেকে যারা শিক্ষা নিয়ে জীবন পরিচালনা করেছেন বা করছেন, তারাই প্রকৃত সফল মানুষ। অথচ আমরা দেখতে পাই যে, বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ম ও বিশৃংখলা। দ্বিধাহীনচিত্তে আমরা বলতে পারবো না আমাদের দেশের সর্বত্র সু-শৃংখল পরিবেশ বিরাজমান। তাইতো যতসব বিড়ম্বনা।

নৈতিকতা যেন আজ জাদুঘরে। বিবেক-বুদ্ধি যেন বিকারগ্রস্ত। জাগতিক স্বার্থের কাছে আজ সব কিছুই যেন শিকলবন্দি। মহান আল্লাহর দোহাই দিয়ে কিছু মানুষ পাপাচারে লিপ্ত। কসম করে মানুষ মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। প্রতারণার জালে ফেলে অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ছে। মানুষ গড়ার কারিগরদের কাছেও আজ মানুষ নিরাপদ নয়। সর্বত্র অরাজকতা ও অনৈতিক কার্যকলাপ দৃশ্যমান। যাদের কাছে সান্ত্বনা পাওয়ার আশায় ধর্না দিচ্ছে, নেপথ্যে যেন তারাই অশান্তি সৃষ্টির কারিগর। আদর্শের দীক্ষাগুরুগণও যেন খেই হারিয়ে ফেলছে। বিচার প্রার্থী হয়ে বিচারকের কাছে গেলে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। নীতি ও আদর্শের ফেরিওয়ালাগণ উপদেশ ফেরি করে অর্থবিত্ত কামিয়ে নিচ্ছে। আর এ দিকে জাতির ভাগ্যাকাশে দেখাদিয়েছে দুর্যোগের ঘনঘটা। খুন-খারাবি ইসলামপূর্ব জাহিলিয়াতকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে। নৈতিক অবক্ষয় থেকে সমাজকে বাঁচাতে হলে আমাদেরকে আল্লাহমুখী হতে হবে। পরকালে জবাবদিহিতার চিন্তা মনে সদা জাগ্রত রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, মরণ একদিন আসবেই। শান্তি যদি কাম্য হয়, সফলতা যদি লক্ষ্য হয়, তাহলে ন্যাকামি বাদ দিয়ে সত্যসেবী হতে বাধা কোথায়? বিপত্তিতো এখানেই। আমরা উপদেশ ফেরি করতে জানি; কিন্তু উপদেশ মেনে নিজ জীবনকে ধন্য করতে রাজি নই। ফলে আমাদের মাঝে মানুষ আছে, মনুষ্যত্ব নেই। নীতি আছে, সফল প্রয়োগ নেই। সমাজ আছে, সামাজিকতা নেই। শিক্ষাঙ্গন আছে, প্রকৃত শিক্ষা নেই। ‘ইবাদত আছে, কিন্তু ‘ইবাদতকারীর মধ্যে সেটির প্রভাব নেই। আদর্শ ও নৈতিকতার মুক্তামালা পুঁথিতে আছে; বাস্তব জীবনে তার প্রতিফলন নেই। তাইতো সাত নকলে আসল খাস্তা।

আসুন! আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাই। সঠিক দ্বীনী ‘ইল্ম অর্জন ও পরিচর্যা করি। নিয়মিত আত্মজিজ্ঞাসা করে শুদ্ধি লাভ করি। মনুষ্যত্ব চর্চার মাধ্যমে সর্বপ্রকার অনৈতিকতা, অরাজকতা, অপকর্ম ও জিগাংসাকে না বলি! দেখবেন একদিন আমার ও আমার দ্বারা পরিচালিত সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও সমাজ আদর্শ এবং শান্তিময় হয়ে উঠেবে। জীবন-যুদ্ধে আমরা হারমানা জাতি নই। সফলতা ও বিজয়ের সোনালি স্বপ্ন বাস্তবরূপ লাভ করবে। সেদিন আমরা উচ্চৈঃস্বরে বলব “সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসারিত”। মহান আল্লাহই তাওফিক্ব দাতা। 


সম্পাদকীয়


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত