সাধারণত: কথায় বলে আলোর নিচে অন্ধকার থাকে। সাহাবিদের মধ্যে সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবি ছিলেন আবূ হুরাইরাহ্ (রা.)। অথচ তাঁরই পরম শ্রদ্ধেয়া মা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি। যার কারণে আবূ হুরাইরাহ্ (রা.)’র মনে দারুণ কষ্ট।
আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) রাসূল (ﷺ)-এর মক্কা হতে মদীনায় হিজরতের পরে জন্ম গ্রহণ করেন। তার নামের ব্যাপারে অনেক মতামত পাওয়া যায়। তবে প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তাঁর নাম রাখা হয় আব্দুর রহমান। তিনি দক্ষিণ আরবের আযদ গোত্রের সুলায়ম ইবনু ফাহাম বংশোদ্ভূত ছিলেন। তাঁর পিতার নাম সাখর এবং মাতার নাম উম্মিয়া বিনতু সফীহ মতান্তরে মায়মুনাহ্।
আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) জন্মগতভাবেই সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। এ জন্য তিনি ইসলামের দাওয়াত পাওয়ার সাথে সাথেই গ্রহণ করে প্রিয় নবীর সান্নিধ্যে সারাক্ষণ পড়ে থাকতেন। সংসারে একমাত্র বৃদ্ধ মা ছাড়া আর কেউ ছিল না। তাই তার কোনো পিছু টানও ছিল না। শুধুমাত্র সময়মতো বাসায় যেয়ে মায়ের পরিচর্যা করে আসতেন। কিন্তু সারাক্ষণ তাঁর মাথায় একটি মাত্র চিন্তা কি করে মাকে সত্য ও সুন্দরের পথে আনা যায়। ইসলামের অমৃত সুধা কিভাবে পান করানো যায়। প্রতিদিন তিনি মাকে ইসলামের পথে আসার জন্য অনুরোধ ও আহ্বান জানাতে থাকেন। এদিকে মা-ও অনড়। কিছুতেই সে তার বাপ—দাদার পুরোনো ধর্ম থেকে ফিরে আসবে না। আবূ হুরাইরাহ্ (ﷺ)ও নাছোড় বান্দা। যে করেই হোক তিনি তাঁর মাকে সত্য পথের পথিক বানাবেনই। তাই একদিন মাকে এমনভাবে ধরলেন যে, আজ তার থেকে পাকা কথা আদায় করবেনই তাই মা রাগের অতিশয্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে কটু কথা বলে ফেললেন, ফলে তিনি এক মহাসংকটে পড়ে গেলেন একদিকে পরম শ্রদ্ধেয় মা অপরদিকে প্রাণ প্রিয় নেতা রাসূল (ﷺ)। অবশেষে উভয় সংকট নিয়ে মায়ের কটুক্তি শুনে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন রাসূল (ﷺ)-এর দরবারে।
বিনয়ের সাথে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমার মায়ের হিদায়েতের জন্য আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন।”
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তৎক্ষণাৎ দু’হাত উঠিয়ে পরম করুণাময়ের দরবারে দু‘আ করলেন : হে আল্লাহ! তুমি আবূ হুরাইরাহ্’র মাকে হিদায়েত দান করো।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দু‘আ শুনে খুশি মনে আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলেন। বাড়িতে এসে দরজার নিকটে দেখেন দরজা বন্ধ। ভিতরে পানি পড়ার বারবার শব্দ শুনা যাচ্ছে। ভিতর থেকে মা ছেলের উপস্থিতি বুঝতে পেরে ছেলেকে দরজায় অপেক্ষা করতে বললেন। কিছুক্ষণ পর তিনি গোসল সেরে তাড়াহুড়োর সাথে মাথায় উড়না জড়িয়ে দরজা খুলে দিলেন। তারপর হেসে বললেন, হে আবূ হুরাইরাহ্! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই, নবী মুহাম্মদ (রা.) আল্লাহর রাসূল। এ কথা শুনা মাত্র আনন্দের অতিশয্যে তিনি আবার কেঁদে ফেললেন এবং রাসূল (রা.)-কে এ সুসংবাদ অবহিত করলেন। রাসূল (রা.) আল্লাহর প্রশংসা ও তাদের কল্যাণ কামনা করলেন।
সম্মানীত পাঠকমণ্ডলী! উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে একটি বিষয় সম্পর্কে আমরা জানতে পারি যে, শুধু নিজে সত্য ও সুন্দর পথে থাকলে হবে না সাথে সাথে নিজের আহাল পরিবারকেও সত্য ও সুন্দরের পথে আসার চেষ্টা ও সাধনা করতে হবে। সর্বদা মনে রাখতে হবে যে, দাওয়াতী কাজে ধৈর্যহারা হলে চলবে না। আর নবী রাসূলদের দু‘আ যে, আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই কবুল করেন এটাও সত্য প্রমাণিত হলো। সে জন্য সেই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার বারগাহে দু‘আ করি তিনি যেন আমাদের এবং আমাদের আহল পরিবারদেরকে সঠিক ও সুন্দরের পথে আসার এবং থাকার তাওফীক্ব দান করেন আমীন।
৮৫.সহীহ মুসলিম-আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) কর্তৃক বর্ণিত। তরজুমানুস্ সুন্নাহ- ৪র্থ খণ্ড।
আপনার মন্তব্য1