সাময়িক প্রসঙ্গ
রেওয়াজি উপহার প্রসঙ্গ
আরাফাত ডেস্ক

বিয়ে-শাদীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপহার-উপঢৌকন প্রদান করা একটি সামাজিক রেওয়াজ। নিঃসন্দেহে এটি ভালো কাজও বটে। কেননা এর মাধ্যমে পারস্পরিক হৃদ্যতা বৃদ্ধিপায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-ও উপহার-উপঢৌকন প্রদানের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করেছেন। ‘আল আদাবুল মুফরাদ’ নামক গ্রন্থে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লা-হ) উল্লেখ করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা একে অন্যকে উপহার দাও, এতে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছেÑ তোমরা একে অন্যকে হাদিয়া-উপহার প্রদান করো। এ উপহার অন্তরের শত্রুতা ও বিদ্বেষ দূর করে দেয়।

উল্লিখিত হাদীসদ্বয় উপহার-উপঢৌকন আদান-প্রদানের ব্যাপারে আমাদেরকে উৎসাহিত করে। উপহারের আদান-প্রদানে সামাজিক বন্ধন যে কতটা বৃদ্ধি পায় তা তো আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা আমাদের দেখা বাস্তবতা। তবে পারস্পরিক এই লেন-দেনটা যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয় তখন দূর-বহুদূরের কারও সঙ্গেও গড়ে ওঠে আত্মার সম্পর্ক। কোন কোন সময় এ সম্পর্ক ছাড়িয়ে যায় রক্ত ও আত্মীয়তার বাঁধনকেও। আর এভাবেই গড়ে ওঠে পারস্পরিক হৃদ্যতা ও ভালোবাসা। কিন্তু এ উপহার-উপঢৌকন প্রদানে যখন বাধ্যবাধকতা চলে আসে, তখন তা যুল্মের পর্যায়ে চলে যায়। ফুটে ওঠে রেওয়াজি উপহার প্রদানের নির্মম সামাজিকতার প্রতিচ্ছবি।

বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় বিয়ে-শাদী কিংবা এ জাতীয় কোন আমন্ত্রণে উপহার-উপঢৌকনসহ উপস্থিত হওয়া একপ্রকার সামাজিক বাধ্যবাধকতা। যিনি আমন্ত্রিত হন তিনি ভাবেন, মানসম্মত উপহার ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলে, তা হবে সম্মান হানিকর! অপরদিকে আমন্ত্রণদাতাও অতিথিকে সম্মানজনক বরণের পরিবর্তে উপহার-উপঢৌকন গ্রহণের প্রতিই বেশি মনোযোগী। আর উপহার গ্রহণের জন্যও থাকে এমন নির্লজ্জ ব্যবস্থাপনা। প্রবেশমুখে খাতা-কলম নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে আমন্ত্রিত অতিথির হাতের দিকেÑ চক্ষুলজ্জার কারণে হলেও কেউ যেন উপহার ছাড়া অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে না পারে। তারপর অনুষ্ঠান শেষে নির্লজ্জের মতো হিসাব-নিকাশ! কত টাকা খরচ হলো, নগদ কত টাকা পেলাম আর কত টাকার উপহারসামগ্রী? হিসাব-নিকাশ শেষে যখন দেখা গেলো বাহ! এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা উদ্বৃত্ত তখন অনুষ্ঠান আয়োজনের নতুন বাহানা খুঁজে বের করা। এর ব্যতিক্রমও যে নেই, তাও বলা যায় না, তবে এ সংখ্যা দিনে দিনে কমে আসছে প্রায়।

উল্লেখ্য যে, নিকট অতীতেও উপহার-উপঢৌকন প্রদানের রেওয়াজ কেবল বিয়ে-শাদীতেই ছিল। কিন্তু লোভাতুর শ্রেণি যখন দেখলো, এটা বেশ লাভজনক, তখন নতুন নতুন বাহানায় আমন্ত্রণ জানানো শুরু হলো। যেমন- ‘আক্বীক্বাহ্, মুসলমানী, বিবাহ বার্ষিকী, জন্মবার্ষিকী ইত্যাদি ইত্যাদি।

এদের অনেকেই আবার উপহার-সামগ্রী লিস্ট করা খাতাটি সযতেœ সংরক্ষণ করে এ জন্য যে, পরবর্তী অনুষ্ঠানে যেন বাছাইকৃতরাই কেবল আমন্ত্রণ পায়। অর্থাৎ- যাদের উপহার-সামগ্রী বা টাকার অংকটা বড় তাদেরকেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অথচ সহীহুল বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ওলিমায় কেবল ধনীদেরকেই আমন্ত্রণ জানানো হয় আর গরীবদেরকে বর্জন করা হয়, সে ওলিমার খাবার নিকৃষ্ট। আর যে আমন্ত্রণ রক্ষা করে না, সে তো আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অবাধ্য হলো।

উল্লিখিত হাদীস থেকে দু’টি বিষয় প্রতীয়মান হয়Ñ প্রথমতঃ গরীব আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশিদেরকে দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে, উপহার-সামগ্রীর আশায় বা স্ট্যাটাসের অজুহাতে কেবল ধনীদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হলে তা হবে নিকৃষ্ট খাদ্যÑ যা আমন্ত্রণদাতার নিকৃষ্ট মানসিকতার পরিচয় বহন করে। দ্বিতীয়তঃ যাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে সে যেন অবশ্যই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে। তাই আমন্ত্রণ রক্ষা করা কেবল সামাজিকতা নয়; বরং এ দাবি মু’মিনের কাছে ঈমানেরও দাবি। তবে আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে গিয়ে গুনাহে জড়িয়ে পড়ার শংকা থাকলে সে আমন্ত্রণ বর্জন করাই শ্রেয়।

অতএব আসুন! আবার আমরা নিকট অতীতে ফিরে যাই, আমাদের পূর্বপুরুষদের মতো কৃত্রিমতা ও লোভ-লালসাকে বর্জন করে পারস্পরিক হৃদ্যতা ও ভালোবাসার আবহ সৃষ্টি করি এবং মেকি সমাজ ব্যবস্থাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সহায় হোন Ñআমীন। ###


0


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 5:43:02 সূর্যাস্ত : 6:09:54

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত