সম্পাদকীয়
সাপ্তাহিক আরাফাত অবিরাম প্রকাশনার ৬৫তম বর্ষে পদার্পণ
শাইখ মুহাম্মাদ হারুন হুসাইন
আল-হামদুলিল্লাহ! সাপ্তাহিক আরাফাত ৬৫তম বর্ষে পদার্পণ করল। আজ প্রথম সংখ্যা প্রকাশের মধ্য দিয়ে নতুন বর্ষের শুভ সূচনা হলো। এটি বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ইসলামী সাময়িকীর অনুপমএক দৃষ্টান্ত। ধারাবাহিক প্রকাশনার ৬৪তম বর্ষ শেষ করে ‘বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস’ যে ইতিহাস সৃষ্টি করল, তা কেবল এ দেশের আহলে হাদীস নয়, বরং সমগ্র উম্মাহকে গৌরবান্বিত করেছে। এ সাময়িকীর গোড়াপত্তন করেন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, বিদগ্ধ গবেষক ও সাহিত্যিক আল্লামা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহেল কাফী আল কোরায়শী (রহিমাহুল্লা-হ)। বহুদর্শী প্রতিভার অধিকারী এই জ্ঞান তাপস ১৯৬০ সালে স্বীয় গবেষণাকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রথম প্রবর্তিত সম্মাননা পদক জয় করেন। এমন একজন মহান ব্যক্তিত্বের হাতে ১৯৫৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ‘মুসলিম সংহতির আহ্বায়ক’ হিসেবে ‘সাপ্তাহিক আরাফাত’ আত্মপ্রকাশ লাভ করে এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাপি এ গবেষণা পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত নিয়মিত ইসলামী পত্রিকার জগতে এটি একটি বিরল ঘটনা। এর সাফল্যের সবটুকুই মহান আল্লাহর অফুরন্ত রহমতের জলন্ত নিদর্শন। অতঃপর কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর অতন্দ্রপ্রহরী বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর সাফল্যের অনবদ্য স্মারক।
৬৫ বর্ষের সূচনালগ্নে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি নক্ষত্রসদৃশ বহুজ্ঞ ব্যক্তিত্ব প্রফেসর আল্লামা ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী (রহিমাহুল্লা-হ)-কে; যিনি শত-সহস্র প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতাকে জয় করে ৪৩ বছরব্যাপী এ সাময়িকীটির ধারাবাহিক প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছেন। মহান আল্লাহর কাছে আজ আমাদের প্রাণোৎসারিত প্রার্থনা হে আল্লাহ! এই পথিকৃৎ ব্যক্তিত্বদ্বয়কে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন আমীন।
সাপ্তাহিক আরাফাত বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের প্রাচীন মুখপত্র। এ সংগঠনটি প্রচলিত রাজনীতিমুক্ত খালেস দ্বীন প্রচারের এক তাওহীদী প্লাটফর্ম। কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস নেই; সহীহ দ্বীন প্রচার-ই এর মূল উদ্দেশ্য। সর্বপ্রকার ডামাঢোলের মাঝেও এ সংগঠন তার অভীষ্ট লক্ষ্যে অবিচল। কার্যক্রম পরিচালনায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন, এ সংগঠনের আদর্শিক বৈশিষ্ট্য। এখানে আবেগের চেয়ে বিবেক ও বুদ্ধিমত্তাকে বিবেচ্য বলে গণ্য করা হয়। আর এই সংগঠনেরই হৃদস্পন্দন ‘সাপ্তাহিক আরাফাত’ ১৯৫৭ সাল থেকে অবিরত প্রকাশিত হয়ে আসছে। কোনো সময়-ই এটির প্রকাশনা বন্ধ হয়নি।
কেবল ইসলামী সাহিত্য-সংস্কৃতি নয়; বরং বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে এ পত্রিকার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ইসলামী তাহযিব-তামাদ্দুন বজায় রেখে সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিপালনে এ সাময়িকীটি যে অবদান রাখছে তা আজ বোদ্ধামহলে স্বীকার্য। দীর্ঘ ৬৪ বছরব্যাপী সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাগরে আবগাহন করে নিখাঁদ ইসলামী সভ্যতা বিনির্মাণে যেঁ বা যাঁরা অবদান রেখেছেন তাঁদের নামও আজ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে মুদ্রিত।
আল্লামা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহেল কাফী আল-কোরায়শী (রহিমাহুল্লা-হ) থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যে সকল বিদগ্ধ কলমসৈনিক এ পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন এবং লেখনীর মাধ্যমে সঞ্জীবনী সুধা বিলিয়েছেন তাঁদের ত্যাগ ও তিতীক্ষার ফসল এই সাপ্তাহিক আরাফাত। এটিকে সময়োপযোগী সমৃদ্ধ করে সর্বমহলে পৌঁছে দেওয়া এখন সময়ের দাবি। দেশের সর্বত্র এর বহুল প্রচার হলে জাতি বহুলাংশে উপকৃত হবে।
আবারো দৃঢ়তার সাথে প্রত্যয় ব্যক্ত করছি যে, ৬৫ বর্ষের সূচনালগ্নে আমরাও নব-উদ্যোমে পথ চলতে প্রস্তুত। ইতোমধ্যে লেখক ফোরাম গঠিত হয়েছে। পত্রিকার মানোন্নয়ন, পাঠক সৃষ্টি, পাঠচক্র, পাঠক ফোরাম গঠন, পাঠ প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, গণসচেতনতা সৃষ্টি ইত্যাদি কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে অচিরেই এ সাময়িকীটি ইসলামের একটি আলোকবর্তিকা হিসেবে উদ্ভাসিত হবে ইনশা-আল্লাহ।
উল্লেখ্য যে, সাপ্তাহিক আরাফাত নিছক আহলে হাদীসদের সম্পদ নয়; আমরা মনে করি, এটি বাংলা ভাষাবাসী মানুষের জাতীয় সম্পদ। তাই এর রক্ষণাবেক্ষণ ও মানোন্নয়নে সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টা প্রয়োজন। আমি পড়বো, অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করব, এর বহুলপ্রচারে সকলেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীলের ভূমিকা পালন করব; আর এ কাজটি করব আপন ঈমানী চেতনা থেকে। এটি সম্পাদনা পরিষদের একার কাজ নয়; বরং বিগত দিনের ন্যায় সম্মিলিত উদ্যোগে সম্প্রসার আবশ্যক। মানুষ এ পত্রিকার মাধ্যমে যেমন সঠিক ইসলামের দীক্ষা পাবে; ঠিক তেমনি পাবে আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের দীপ্ত অনুপ্রেরণা। তাই আজি এ শুভক্ষণে ‘সাপ্তাহি আরাফাত’—এর সম্পাদনা পরিষদ, প্রকাশনা কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, পাঠক-পাঠিকা ও শুভানুধ্যায়ীদের জন্য আমাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা প্রকাশ করছি। আল্লাহ তা‘আলা আরাফাতকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত সুপ্রতিষ্ঠিত রাখুন আমীন।
ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45
সূর্যাস্ত : 5:11:51
আপনার মন্তব্য1