সাময়িক প্রসঙ্গ
জিজ্ঞাসা ও জবাব
ফাতাওয়া বোর্ড, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস

জিজ্ঞাসা (০১) : মক্কাবাসী কোনো ব্যক্তি ‘উমরাহ্ করতে চাইলে কোথা থেকে ইহরাম বাধবে? আসলে কী মক্কাবাসীর জন্য ‘উমরাহ্ করা আবশ্যক? জানিয়ে বাধিত করবেন।
জবাব : মক্কাবাসীগণ নিজ নিজ অবস্থান স্থল হতে হজ্জের ইহরাম বাধবেন- (সহীহুল বুখারী- হা. ১৫২৬ ও সহীহ মুসলিম- হা. ১১৮১)। আর ইচ্ছা করলে ‘উমরাও পালন করতে পারেন। যদি কোনো মক্কাবাসী ‘উমরাহ্ করতে চান, তাহলে তাকে হারাম সীমানার বাইরে তথা হিল্লে গিয়ে ইহরাম পরে ‘উমরাহ্ পালন করতে হবে। আর হিল্ল হলো মীক্বাত অভ্যন্তরে হারাম সীমানার বাইরের জায়গা- (সহীহুল বুখারী- হা. ১৫৬০ ও সহীহ মুসলিম- হা. ১২১১)।


জিজ্ঞাসা (০২) : যে হাজীর উপর কুরবানী করা ওয়াজিব; অথচ অর্থাভাবে করতে পারেননি, তার জন্য কী বিধান রয়েছে?
জবাব : ক্বিারান ও তামাত্তু হজ্জকারী ব্যক্তি- চায় পুরুষ কিংবা মহিলা হোন- তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। এটি সম্পাদন ব্যতীত হজ্জ আদায় হবে না। তাই ইসলামী শরিয়ত এর জন্য সুস্পষ্ট বিধান দিয়েছে। কোনো হাজী কুরবানীর সামর্থ্য হারিয়ে ফেললে তিনি হজ্জ সফরে তিনটি সিয়াম পালন করবেন এবং দেশে ফিরে এসে আরো ৭টি সিয়াম রাখবেন। অর্থাৎ- তাকে কুরবানীর বদলে ১০টি সিয়াম রাখতে হবে। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর ৭টি সিয়াম ধারাবাহিকভাবে কিংবা ভেঙ্গে ভেঙ্গে রাখতে পারবেন। (সূরা আল বাক্বারাহ্ : ১৯৬)


জিজ্ঞাসা (০৩) : হাজীগণ মীনাতে কুরবানী না করতে পারলে কোথায় কুরবানী করবেন? দয়া করে জানিয়ে উপকৃত করবেন।
জবাব : মীনা হলো কুরবানীর নির্ধারিত স্থান। কোনো কারণে সেখানে কুরবানী না করতে পারলে মক্কার যে কোনো স্থানে কুরবানী করলেই চলবে। মক্কার বাইরে কিংবা নিজ দেশে কুরবানী করলে চলবে না। (ফাতওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ- ফা. ৯৮১৮)


জিজ্ঞাসা (০৪) : কুরবানীর পশুর চামড়ার বিধান জানতে চাই। এটি মূলত কাদের হক্ব? দয়া করে জানাবেন।
জবাব : কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করা বা হাদিয়া দেওয়া যাবে না।
عَنْ عَلِيٍّ (ঃ) قَالَ : أَمَرَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ (ﷺ) أَنْ أَقُوْمَ عَلى بُدْنِهِ وَأَنْ أَتَصَدَّقَ بِلَحْمِهَا وَجُلُوْدِهَا وَأَجِلَّتِهَا وَأَنْ لَا أُعْطِيَ الْجَزَّارَ مِنْهَا.
“আলী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন : আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার (কুরবানীর) উটের কাছে দাঁড়াতে বললেন। আর এ কথাও বললেন, যেন আমি এর মাংস ও চামড়া দান করে দেই এবং তা থেকে যেন শ্রমিককে বিনিময়স্বরূপ কিছু না দেই”- (বুখারী- হা. ১৭১৭ ও মুসলিম- হা. ১৩১৭)। কুরবানীদাতা প্রয়োজন মনে করলে তা নিজে ব্যবহার করতে পারেন। আর তা নাহলে তিনি এটি কোনো গরীব-মিসকীনকে সাদাক্বাহ্ করে দেবেন। যদি তিনি বিক্রি করেন, তাহলে তার সমুদয় মূল্য গরীদের মাঝে বন্টন করে দেবেন- (‘যাদুল মুস্তাক্বনি‘আ’- ইবনু ‘উসাইমীন, ৭/৫১৫)।


জিজ্ঞাসা (০৫) : কতটুকু সামর্থ্য থাকলে কুরবানী দিতে হবে? কুরবানী দেওয়া কি আবশ্যক? কুরআন-হাদীস দিয়ে উত্তর দেবেন।
জবাব : কুরবানী করার জন্য কী পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে- এ মর্মে কোনো বর্ণনা নেই। সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের পর একটি ভেড়-বকরী বা এক সপ্তমাংশ গরু বা উটে শরীক হওয়ার মতো অর্থ থাকলেই কুরবানীর জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে বলেন,
﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ﴾
“অতএব তুমি তোমার রবের জন্য সালাত আদায় করো এবং কুরবানী দাও!”- (সূরা আল কাউসার : ২)। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন :
مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا.
“যার কুরবানী করার মতো সামর্থ্য আছে; অথচ কুরবানী করেনি, সে যেন আমাদের ঈদের সালাত আদায়ের স্থানের নিকটবর্তী না হয়”- (আহমাদ- ৮২৭৩; ইবনু মাজাহ্- হা. ৩১২৩)। উপরোক্ত দলিল দ্বারা একদল আলেম কুরবানী করা ওয়াজিব মনে করেন। আবার অপর শ্রেণি তা সুন্নাতে মুয়াক্বাদাহ বলেন। এ পুণ্যময় কাজটি আল্লাহর বিশেষ নির্দশন। তাই সামর্থ্যবানদের উচিৎ কোনো অজুহাতে অবহেলা না করে সাধ্যমতো কুরবানী করে যাওয়া। -ওয়াল্লা-হু আ‘লাম।


জিজ্ঞাসা (০৬) : গরু না খাসী কোন্টি কুরবানী উত্তম? এ ব্যাপারে কি কোনো দলিল আছে? দয়া করে উল্লেখ করলে বাধিত হবো।
জবাব : হজ্জে রাসূলুল্লাহ (সা.) উট কুরবানী করেছিলেন। তাছাড়া বাকি সময়ে খাসী-দুম্বা কুরবানী করেছেন। এ জন্য কোন্ পশু কুরবানীর জন্য উত্তম, তা নিয়ে কিছুটা মতভেদ আছে। অধিকাংশ আলেমের মতে সর্বোত্তম হলো উট। তার পর যথাক্রমে গরু, খাসী ও দুম্বা। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ফযীলতের ধারাবাহিকতায় এরূপ বিন্যাস করেছেন- (সহীহুল বুখারী- হা. ৮৮১ ও সহীহ মুসলিম- হা. ৮৫০)। উম্মাতের জন্য সহজলভ্য মনে করে খাসী কুরবানী দিয়েছেন। এর দ্বারা খাসী উত্তম তা বুঝায় না। -ওয়াল্লা-হু আ‘লাম।


জিজ্ঞাসা (০৭) : শরীকে তথা ভাগে কুরবানী দেওয়া যাবে কী? আমাদের দেশের কেউ কেউ এ ব্যাপারে আপত্তি করেন। তাই বিষয়টি স্পষ্ট করলে ভালো হয়।
জবাব : উত্তম হলো একটি কুরবানী দেওয়া। রাসূলুল্লাহ (উবংপৎরঢ়ঃরড়হ: ঝষ%২০খ) একটি বকরি কুরবানী দিয়েছেন- (সহীহ মুসলিম- হা. ১৯৬৭; সুনান আবূ দাঊদ- হা. ২৭৯২ ও সুনান ইবনু মাজাহ্- হা. ৩১২২)। আর কেউ চাইলে উট বা গরুতে শরীকে কুরবানী করতে পারেন। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। অতএব এ ব্যাপারে আপত্তি করা জ্ঞানের স্বল্পতার নামান্তর।


জিজ্ঞাসা (০৮) : কোনো ব্যক্তি কুরবানীর নিয়ত করে ভুলক্রমে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকে কুরবানীর আগে নখ-চুল কেটে ফেলে, তাহলে তার করণীয় কী?
জবাব : ১০ যিলহজ্জ বা ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে কুরবানী করার পর নখ-চুল কাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। কোনো কারণে কেউ ভুলক্রমে কুরবানীর আগে নখ-চুল কেটে ফেললে তার উপর কোনো শাস্তি বর্তাবে না। তার এ ভুল মার্জনীয় বলে বিবেচ্য।
﴿رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَّسِيْنَا أَوْ أَخْطَأْنَا﴾
“হে আমাদের রব! যদি আমরা ভুলে যাই বা ভুল করে ফেলি, তাহলে তুমি আমাদেরকে পাকড়াও করো না।” (সূরা আল বাক্বারাহ্ : ২৮৬)


জিজ্ঞাসা (০৯) : ঈদের সালাতের আগে কেউ কুরবানী করে ফেললে তার করণীয় কী? তার কুরবানী কি আদায় হয়ে যাবে, না পুনরায় কুরবানী করতে হবে?
জবাব : ঈদের সালাতের পর কুরবানী করা বিধিবদ্ধ। কোনো ব্যক্তি সালাতের আগে কুরবানীর পশু যবেহ করে ফেললে তার কুরবানী আদায় হবে না; বরং তাকে যথা নিয়মে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। এরূপ করতে দেখে রাসূল (সা.) বলেন :
্রمَنْ كَانَ ذَبَحَ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ، فَلْيُعِدْ مَكَانَهَا أُخْرَى.
“সালাত আদায়ের পূর্বে যে ব্যক্তি কুরবানীর পশু যবেহ করে ফেলে, সে যেন এটির পরিবর্তে আরেকটি পশু কুরবানী করে”- (সহীহু বুখারী- হা. ৫৫৬২; সহীহ মুসলিম- হা. ১৯৬০ ও সুনান ইবনু মাজাহ্- হা. ৩১৫২)। -ওয়াল্লা-হু আ‘লাম।


জিজ্ঞাসা (১০) : কোন্ দিন কুরবানী করা উত্তম? ১০ যিলহজ্জ, না আইয়্যামে তাশরীক্বের যে কোনো একদিন হলেই হলো?
জবাব : ১০ যিলহজ্জ হচ্ছে কুরবানীর দিন। এ দিন কুরবানী করা উত্তম। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এ দিনকে বড়ো হজ্জ বলে অভিহিত করেছেন- (সূরা আল হাজ্জ : ৩)। রাসূলুল্লাহ (সা.) বড়ো হজ্জের দিন বলতে ১০ যিলহজ্জের দিনকে বুঝিয়েছেন- (সহীহ আবূ দাঊদ- আলবানী, হা. ১৭০০)। কোনো কারণে সে দিন কেউ কুরবানী করতে না পারলে আইয়্যামে তাশরীক্বের যে কোনো একদিন করলেই চলবে- (সুনান আবূ দাঊদ- হা. ২৪১৯; জামে‘ আত্ তিরমিযী- হা. ৭৭৩ ও সুনান আন্ নাসায়ী- হা. ৩০০৪)। -ওয়াল্লা-হু আ‘লাম।


জিজ্ঞাসা (১১) : ঈদের তাকবীর দেওয়ার সময় اَللهُ أَكْبَرُ كَبِيْرًا وَالْحَمْدُ لِلّهِِ كَثِيْرًا وَسُبْحَانَ اللهِ بُكْرَةً وَأَصِيْلًا “আল্লা-হু আকবার কাবীরা, ওয়াল হামদু লিল্লা-হি কাসীরা ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাঁও ওয়া আসীলা” এ তাকবীর বলা যাবে কী?
জবাব : আল্লাহ ও তদ্বীয় রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) কুরবানীর দিনগুলোতে বেশি বেশি তাকবীর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর তাকবীরের বাক্য হিসেবে-
اَلله أكبر الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله، الله أكبر الله أكبر الله أكبر ولله الحمد.
“আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, লা- ইলাহা ইল্লাল্লা-হু আল্লা-হু আকবার” বাক্যটি সাহাবীগণ বলতেন- (ইরওয়া- মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ্, ৩/১২৫)। আর প্রশ্নে উল্লেখিত বাক্যটি মূলত সালাতে সানার পরিবর্তে পড়ার নির্দেশনা রয়েছে। তবে এটিতে তাকবীরের বাক্য থাকায় তা ঈদের তাকবীর হিসেবে বলার মধ্যে কোনো দোষ নেই- (আস-সান‘আনী ‘সুবুলুস সালাম’- ২/৭২)। -ওয়াল্লা-হু আ‘লাম।


জিজ্ঞাসা (১২) : কুরবানীর একটি গরুর একাংশ সন্তানের ‘আক্বীক্বাহ্ হিসেবে দেওয়া যাবে কি? এ মাসআলায় কুরআন-সুন্নাহ‘র আলোকে আহলে হাদীসের অবস্থান জনতে চাই।
জবাব : ‘আক্বীক্বাহ্ ও কুরবানী দু’টি দু‘ধরনের ‘ইবাদত। সন্তানের ‘আক্বীক্বাহ্ ছেলে হলে দু’টি ছাগল এবং মেয়ে হলে একটি ছাগল দ্বারা আদায় করতে হয়- (আহমাদ- হা. ৬৭১৩; আবূ দাঊদ- হা. ২৮৪২; আন্ নাসায়ী- হা. ৪২২৩)। ছাগল ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী দ্বারা ‘আক্বীক্বাহ্ রাসূল (সা.) দেননি। অনেকে কুরবানীর উপর ক্বিয়াস করে গরু দ্বারা ‘আক্বীক্বাহ্ জায়িয বলেন। তবে এটা হাদীসের যথাযথ অনুকূলে নয়। আর কুরবানীর গরুতে শরীক হয়ে ‘আক্বীক্বাহ্ দেয়া কোনো সালাফে সালেহীন থেকেও প্রমাণিত হয়নি। কাজেই কুরবানীর সাথে ‘আক্বীক্বাহ্ দেয়া সঠিক হবে না।


জিজ্ঞাসা (১৩) : মসজিদ মহান আল্লাহর ঘর। এ ঘরের পবিত্রতা রক্ষা করা ঈমানী দায়িত্ব। আমার জিজ্ঞাসাÑ মসজিদে কোনো অন্যায় হলে বাইরের অন্য জায়গার তুলনায় পাপ কি বেশি হবে? আশা করি সঠিক উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।
জবাব : মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা এবং এর আদবের ব্যাপারে সকলকে সচেতন থাকতে হবে। কা‘বা ঘরে কোনো অন্যায় করলে আল্লাহ তা‘আলা মর্মন্তুদ শাস্তির কথা বলেছেন। ইরশাদ হচ্ছে-
﴿وَمَنْ يُرِدْ فِيْهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيْمٍ﴾
“আর যে ব্যক্তি তাতে (কা‘বায়) যুল্ম তথা র্শিক-এর দিকে ঝুঁকবে, আমি তাকে মর্মন্তুদ শাস্তি দেবো।” (সূরা আল হাজ্জ : ২৫)
মসজিদে কোনো অন্যায় করা হারাম। একদা দু’জন আগন্তুক মসজিদে নাববীতে উচুঁ আওয়াজে কথা বললে খলীফা ‘উমার (রাযি.) খুব রাগান্বিত হলেন এবং বললেন : তোমরা মেহমান না হলে তোমাদেরকে আমি প্রহার করে ব্যাথা দিতাম। (সহীহুল বুখারী- হা. ৪৭০)
যদিও উপরোক্ত ধমকী ক্বা‘বা ও মসজিদে নববীর বেলায় বলা হয়েছে, তবুও পৃথিবীর সকল মসজিদ মহান আল্লাহর ঘর হওয়ায় সেগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করাও অপরিহার্য। এসব পবিত্র স্থানে ‘আমল করলে যেমন বেশি সাওয়াব রয়েছে; ঠিক তেমনি কোনো অন্যায় করলেও এর পরিণাম হবে ভয়াবহ। শরিয়তে অপরাধের ভয়াবহতার কথা বলা হলেও কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করেনি। তাই অপরাধের পরিমাণ ও শাস্তি মহান আল্লাহই ভালো জানেন। আমাদেরকে সকলপ্রকার অন্যায় থেকে দূরে অবস্থান করতঃ মহান আল্লাহর ঘরগুলোর যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করা উচিৎ।


জিজ্ঞাসা (১৪) : সফরে সালাত ক্বসর করার বিধান রয়েছে। যদি কেউ ক্বসর না করে পুরা সালাত আদায় করে, তাহলে কোনো অসুবিধা হবে কী? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
জবাব : সফর অবস্থায় ক্বসর করা মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীর অন্যতম। ইসলাম যে সর্বজনীন এবং সহজ দ্বীন, এটাই তার প্রমাণ। সফরের ক্লান্তির মাঝে আল্লাহ তা‘আলা সালাতকে ক্বসর করার সুযোগ দিয়েছেন। এই সুযোগ গ্রহণ করে ক্বসর করাই উত্তম। তবে কেউ চাইলে পুরো সালাত আদায় করাতে কোনো অসুবিধা নেই। ক্বসর করার বিধানের দলিলেই এটার প্রমাণ বিদ্যমান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِىْ الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوْا مِنَ الصَّلَاةِ إِنْ خِفْتُمْ أَنْ يَفْتِنَكُمُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا إِنَّ الْكَافِرِيْنَ كَانُوْا لَكُمْ عَدُوًّا مُبِيْنًا﴾
“আর যখন তোমরা যমীনে চলো, তখন সালাত ক্বসর করাতে কোনো দোষ নেই। যদি তোমরা কাফিরদের ফিতনার আশংকা করো। নিশ্চায়ই কাফিররা তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন”- (সূরা আন্ নিসা : ১০১)। নাবী (সা.)-কে ভয়-ভীতি ছাড়া ক্বসর করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি (সা.) বলেন : “এটি একটি সাদাক্বাহ্। আল্লাহ তদ্বারা তোমাদেরকে সাদাক্বাহ্ করেছেন। কাজেই তোমরা তার সাদাক্বাকে গ্রহণ করো”- (মুসলিম- ৬৮৬)।
সাহাবীগণ (রাযি-মা) মিনায় সফর অবস্থায় ‘উসমান (রাযি.)-এর পিছনে ৪ রাকআত সালাত আদায় করেছেন- (সহীহুল বুখারী- হা. ১০৮৪ ও সহীহ মুসলিম- হা. ৬৯৫)। অনুরূপভাবে ‘আয়িশাহ্ ও সা‘দ (রাযি-মা) হতে সফরে ৪ রাকআত সালাত আদায় করেছেন মর্মে প্রমাণ রয়েছে- (ইবনুল মুনযির- ৪/৩৩৫)।
উপরোক্ত দলিলসমূহ পর্যালোচনা করলে একথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে, চাইলে কোনো মুসাফির মুক্বিমের ন্যায় পুরো সালাত আদায় করতে পারেন। আর যদি মহান আল্লাহর হাদিয়া গ্রহণ করে ক্বসর করেন, তাহলে সেটি উত্তম বলে বিবেচিত হবে।


জিজ্ঞাসা (১৫) : আমাদের সমাজের কোথাও কোথাও দেখা যায় ঈদের সালাত সর্বদা মসজিদে আদায় করেন। আবার বেশিরভাগ খোলা মাঠে আদায় করে থাকেন। বিশুদ্ধতার দিক থেকে মূলতঃ কোন্টি ঠিক?
জবাব : ঈদের সালাত খোলা মাঠে আদায় করা সুন্নাত- (সহীহুল বুখারী- হা. ৯৫৬ ও সহীহ মুসলিম- হা. ৮৮৯)। আমরা সামান্য খেয়াল করলে দেখতে পাবো- মসজিদে নববীর মতো কেন্দ্রীয় মসজিদ থাকা সত্ত্বেও প্রিয় নাবী (সা.) উন্মুক্ত ময়দানে ঈদের সালাত আদায় করেছেন। শরঈ কারণ ছাড়া মসজিদে ঈদের সালাত আদায় করা সুন্নাত বিরোধী। -ওয়াল্লা-হু আ‘লাম।


জিজ্ঞাসা (১৬) : আমার জমিতে যে ফসল উৎপন্ন হয়, তা দিয়ে আমার পরিবারের বাৎসরিক খরচ নির্বাহ করি; কোনো কোনো বছর হয়তো কিছু উৎবৃত্ত হয়। এখন প্রশ্ন হলো- আমার ওপর কি হজ্জ র্ফয হয়েছে?
জবাব : একজন মুসলিমের ওপর হজ্জ র্ফয হওয়ার জন্য যে দু’টি বিশেষ শর্তারোপ করা হয়েছে, তা হলো- শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য। আর আর্থিক সামর্থ্যরে সঠিক কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করে দেননি; বরং আমাদের ঈমানের সত্যতার প্রমাণের ওপর রেখে দিয়েছেন। সহজ অর্থে এখানে সামর্থ্য বলতে হজ্জ সফরে যাওয়ার, সেখানে অবস্থানের ব্যয়ভার বহন করার এবং সফরকালীন সময় পরিবারবর্গকে প্রয়োজনীয় খাবার ব্যবস্থা করে যাওয়াকে বুঝায়। এতটুকু আর্থিক সামর্থ্য হলে হজ্জ র্ফয হয়ে যাবে। প্রশ্নে উল্লেখিত বর্ণনানুসারে বুঝা যায়- তিনি পর্যাপ্ত সম্পদের অধিকারী নন। এমতাবস্থায় উদ্বৃত্ত অর্থ সঞ্চয় করার পর যখন দেখা যাবে যে, তার পক্ষে হজ্জের ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব, তখনই তার উপর হজ্জ র্ফয হবে, অন্যথায় নয়। (সূরা আ-লি ‘ইমরান : ৯৭; সূরা আল বাক্বারাহ্ : ২৮৬; আল উদ্দা শারহুল উমদাহ- ১/১৭৮ পৃ.)


জিজ্ঞাসা (১৭) : আমরা সালাতের মধ্যে সাব্বি হিসমা রব্বিকাল আ‘লা শুনে বলি- সুবহানা রব্বিয়াল আ‘লা। অন্য কিছু সূরাতেও এভাবে জবাব দিয়ে থাকি। এ সম্পর্কে জানিয়ে বাধিত করবেন।
জবাব : সালাতে সূরা আল ‘আলা’র প্রথম আয়াত “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা” পড়ার পর “সুবহানা রাব্বিয়ালা ‘আলা” বলার ব্যাপারে কোনো মারফূ‘ হাদীস নেই। ইবনু ‘আব্বাস থেকে বর্ণিত হাদীসটি মাওকুফ যা সাহাবীদের ‘আমল। আর ক্বাতাদাহ্ হতে বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল। আবার কোনো কোনো বর্ণনায় তাদলীস রয়েছে। কাজেই সার্বিক বিবেচনায় এরূপ না বলাই ভালো। তবে ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.)-এর বর্ণনাটির ধারাবাহিকসূত্র সহীহ হওয়ায় মাওকুফ হওয়া সত্ত্বেও কেউ চাইলে ‘আমল করতে পারেন। (সুনান আবূ দাঊদ- হা. ৪/৩৯; ইবনু হাজার ‘আত্ তাকরীব- ১; আদ্ দুররুল মানসুর- ৬/৩২৬ পৃ.)
আর সূরা র্আ রহ্মা-ন-এর ﴿فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ﴾ আয়াতখানা পড়ার পর তার জবাবে বর্ণিত বাক্যটি একাধিক সূত্রে ‘আমলযোগ্য প্রমাণিত হয়। তাছাড়া অন্যান্য আয়াতের জবাবে কোনো কিছু বলার সঠিক কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। -ওয়াল্লা-হু আ‘লাম।


জিজ্ঞাসা (১৮) : স্বামীর সম্পদ আছে কিন্তু স্ত্রীর তেমন কোনো সম্পদ নেই। এমতাবস্থায় স্ত্রীকে হজ্জ করানো স্বামীর ওপর র্ফয হবে কি?
জবাব : হজ্জ র্ফয হওয়ার জন্য নিজের মাল থাকা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَلِلّٰهِ عَلٰى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيْلًا﴾
“আর আল্লাহর ওয়াস্তে মানুষের ওপর বায়তুল্লাহর হজ্জ করা র্ফয, যে সেথায় পৌঁছার সামর্থ্য রাখে”- (সূরা আ-লি ‘ইমরান : ৯৭; সহীহ মুসলিম- হা. ৮)। যেহেতু স্ত্রীর নিজের হজ্জ সফর আঞ্জাম দেয়ার আর্থিক সামর্থ্য নেই, তাই তার ওপর হজ্জ র্ফয হবে না। আর স্বামী তার স্ত্রীর হজ্জ করিয়ে দিতে বাধ্য নয়। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা একের দায়িত্ব অন্যের ওপর চাপিয়ে দেন না। যদি স্বামী নিজ অর্থ ব্যয় করে স্ত্রীর হজ্জ করিয়ে দেয়, তাহলে তা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ইহসান বলে বিবেচিত হবে।


জিজ্ঞাসা (১৯) : বর্তমান সময়ে বেশ কিছু এম. এল. এম. কোম্পানির তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। তাদের প্রধান কাজ হলো পণ্য বিক্রি করা এবং বিক্রিত পণ্য থেকে  “ওয়ান স্টার” থেকে “টেন স্টার” পর্যন্ত প্রায় ৬০% কমিশন গ্রহণ করা হয়। এ গ্রুপে কাজ করে অর্থ উপর্জন বৈধ হবে কি?
জবাব : এম. এল. এম কোম্পানির ব্যবসানীতি অস্পষ্ট। তাতে প্রতারণার সম্ভাবনা রয়েছে এবং অন্যের হক্ব সুকৌশলে আত্মসাৎ করার প্রবণতা বিদ্যমান। কাজেই এটা জায়িয নয়- (সহীহ মুসলিম- হা. ১০২; জামে‘ আত্ তিরমিযী- হা. ১৩১৫)। এ ধরনের ব্যবসাকে গারার বা অজ্ঞাত ক্রয়-বিক্রয় বলা হয়। আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন :
্রنَهَى رَسُوْلُ اللهِ ﷺ عَنْ بَيْعِ الْغَرَرِ.
রাসূলুল্লাহ (সা.) গারার (অজ্ঞাত ক্রয়-বিক্রয়) হতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ মুসলিম- হা. ৪/১৫১৩; সুনান আবূ দাঊদ- হা. ৩৩৭৬, সহীহ; জামে‘ আত্ তিরমিযী- হা. ১২৩০, সহীহ; সুনান আন্ নাসায়ী- হা. ৪৫১৮, সহীহ; সুনান ইবনু মাজাহ্- হা. ২১৯৫)


জিজ্ঞাসা (২০) : আমরা সহীহ হাদীসের অনুসারীদের কাছ থেকে জেনেছি যে, নিয়্যাত মনের সংকল্পের নাম। মুখে উচ্চারণ করা বিদআত। তাহলে হাজীদেরকে কেন উচ্চারণ করে لبيك حجا   বলতে শিখানো হয়? এটা কি মুখে নিয়্যাত পাঠ নয়? এ সংক্রান্ত সন্দেহ দূর করার স্বার্থে দলিলসহ ব্যাখ্যা করলে ভালো হয়।
জবাব : হজ্জে প্রবেশের সময় প্রিয় নাবী (সা.) এভাবে উচ্চারণ করে لبيك حجا বলেছেন- (মুসলিম- হা. ১২৩২)। এটি হজ্জের নিয়্যাত নয়; বরং হজ্জের প্রবেশের ঘোষণা মাত্র। ইমাম ত্বাবারী, কুরতুবী ও ইবনু কাসীর (রহ্.) এই ‘লাব্বাইক’ বলাকে মহান আল্লাহর ডাক- وأذن في الناس بالحج-এর জবাব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কাজেই এটিকে কোনোভাবে তথাকথিত নিয়ত বলা যাবে না- (আল-বাস্সাম “তাওযীহুল আহকাম”- ৩/৩৩৮)। -ওয়াল্লা-হু আ‘লাম।


জিজ্ঞাসা ও জবাবঃ ফাতাওয়া বোর্ড, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস

সাপ্তাহিক আরাফাতঃ বর্ষ : ৬৪, সংখ্যা : ৩৭-৩৮


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত