সাময়িক প্রসঙ্গ
জিজ্ঞাসা ও জবাব
ফাতাওয়া বোর্ড, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস

জিজ্ঞাসা (০১) : আমরা অনেক পূর্ব থেকেই ‘ফিতরা’ টাকার মাধ্যমে আদায় করে আসছি। বর্তমানে অনেকে এই বিষয়ে ‘প্রধান খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে ‘ফিত্রা’ আদায়ের ব্যবস্থা’ করার জন্য অভিমত পোষণ করছেন। এ বিষয়ে ভবিষ্যতে আমরা ‘ফিত্রা’ কি টাকার অংকে; না প্রধান খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে আদায় করবো’, তা শরিয়তসম্মত বিধানসহ সবিস্তারে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

হাজী মোহাম্মদ আলী, গাইবান্ধা সদর উপজেলা, গাইবান্ধা।

জবাব : বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, মানুষের সাধারণ খাদ্য থেকে ফিতরা আদায় করা বৈধ। কেননা সহীহুল বুখারীতে আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
“আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে এক ‘সা’ পরিমাণ খাদ্য ফিতরা হিসেবে বের করতাম। খেজুর, যব, কিশমিশ ও পনির।” (সহীহুল বুখারী- অধ্যায় : যাকাত, অনুচ্ছেদ : ফিতরা হচ্ছে এক সা’ পরিমাণ খাদ্য, হা. ১৫০৬)
এ হাদীসে গমের কথা উল্লেখ নেই। তাছাড়া যাকাতুল ফিতরে গম দেয়া যাবে এরকম সুস্পষ্ট ও বিশুদ্ধ কোনো হাদীস আমাদের জানা নেই। তবে গমও খাদ্যদ্রব্য হওয়ায় তা দ্বারা ফিতরা আদায় বৈধ। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :

فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ (ﷺ) زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِيْنِ.

“রোযাদারকে অনর্থক কথা ও অশ্লীলতা থেকে পবিত্র করার জন্য ও মিসকীনদের জন্য খাদ্যস্বরূপ রাসূলুল্লাহ (সা.) যাকাতুল ফিত্র র্ফয করেছেন।” (সুনান আবূ দাঊদ- অধ্যায় : যাকাত, হা. ১৬০৯, হাসান)
টাকা দিয়ে ফিত্রা আদায় সম্পর্কিত হাসান বাসরীর বর্ণনাটি মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বায় এসেছে। এতে উল্লেখ আছে যে, ‘উমার ইবনু আব্দুল আযীয (রহ.) অর্ধ সা’-এর মূল্য দিয়ে ফিত্রা আদায় করার রাষ্ট্রীয় নির্দেশ জারি করেছিলেন। এটা সহীহ হলেও রাসূল (সা.) থেকে সহীহ মারফু হিসেবে বর্ণিত হাদীসের বিপরীত হওয়ার কারণে তা ‘আমলযোগ্য নয়। ইমাম আহমাদ বিন হান্বল (রহ.)-কে যখন বলা হলো যে, লোকেরা তো বলছে যে, ‘উমার ইবনু ‘আব্দুল ‘আযীয টাকা দিয়ে ফিত্রা চালু করেছেন, তখন তিনি বলেন : তারা রাসূল (সা.)-এর কথা বাদ দিচ্ছে এবং বলছে অমুক এটা বলেছে, অমুক এটা বলেছে। মোটকথা, রাসূল (সা.)-এর সুন্নাতের মোকাবেলায় হাসান বসরী কিংবা ‘উমার ইবনু ‘আব্দিল ‘আযীয বা অন্য কারো কথা গ্রহণযোগ্য নয়।

জিজ্ঞাসা (০২) : একজন নারীর জন্য যদি তার মায়ের আপন মামা ও চাচা মাহরাম হয়, তাহলে কী তার সৎ মায়ের আপন মামা ও চাচা এবং সৎ মায়ের আপন ভাই (আমার সৎ মামা) কী মাহরাম হবে?

মো. বাপ্পী মিয়া, গোপালগঞ্জ।

জবাব : আপনার সৎ মায়ের মামার সাথে আপনার রক্তের সম্পর্ক না থাকায় সে আপনার মাহরাম নয়। অতএব তার সাথে শরিয়তের পর্দার বিধান মেনে চলা আবশ্যক।

জিজ্ঞাসা (০৩) : জামে‘ আত্ তিরমিযী’র ১১০১ নং হাদীসে আছে- ওলী ছাড়া বিবাহ বাতিল। আবার জামে‘ আত্ তিরমিযী’র ১১৮৪ নং হাদীসে আছে- তিনটি জিনিস ঠাট্টাচ্ছ্বলে বলল ও সত্য, তার মধ্যে বিবাহ একটা। এখন একজন নারী যদি তার বান্ধবীকে ঠাট্টা করে বলে ‘আমি তোমাকে বিবাহ করলাম’ আর সে যদি ঠাট্টা করে বলে ‘আমি কবুল করলাম’। এরপর তারা আলাদা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে লাগল। এখন শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি কি বিয়ে বলে গণ্য হবে, না বিয়েই সংঘটিত হয়নি? ওই মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিতে কি তাদের মধ্যে তালাকের প্রয়োজন হবে?

সিয়াম, বেরাইদ, ঢাকা।

জবাব : আপনার প্রশ্নটি সঠিক হয়নি। কারণ, আপনি প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন যে, একজন নারী যদি তার বান্ধবীকে ঠাট্টা করে বলে ‘আমি তোমাকে বিবাহ করলাম’ আর সে যদি ঠাট্টা করে বলে ‘আমি কবুল করলাম’। এটা জানা কথা যে, কোনো নারী তার বান্ধবীকে বিবাহ করতে পারে না। বিবাহ হয়ে থাকে পুরুষ এবং নারীর মধ্যে; নারীতে নারীতে এবং পুরুষে পুরুষে বিবাহ করা ইসলামী শরিয়তের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সম্ভবত আপনি বলতে চেয়েছিলেন, একজন পুরুষ যদি তার বান্ধবীকে ঠাট্টা করে কথাটি বলে। যদি এ রকম হয়, তাহলেও বৈধ বিবাহ সম্পন্ন হবে না। কারণ, মেয়ের ওয়ালী ছাড়া বিবাহ সহীহ হয় না। অতএব জামে‘ আত্ তিরমিযী’র হাদীসের অর্থ হচ্ছে কোনো মেয়ের শরিয়ত সম্মত অভিভাবক যদি কোনো পুরুষকে হাসি-ঠাট্টা করে বলে, আমি আমার অমুক মেয়ে অথবা বোনকে তোমার সাথে বিবাহ দিলাম এবং উদ্দিষ্ট পুরুষ যদি বলে আমি কবুল করলাম, তাহলে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে। বিয়ে যেহেতু সম্পন্ন হয়ে যাবে, তাই এর যাবতীয় হুকুম-আহকামও কার্যকর হবে।

জিজ্ঞাসা (০৪) : আমাদের এলাকায় প্রতি বছর হাট-বাজারের মুসলিম অমুসলিম দোকানদারদের নিকট থেকে চাঁদা আদায় করে মাহফিল বা ওয়াজ অনুষ্ঠান করা হয়, সে ওয়াজ মাহফিলে সকলের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, ওয়াজিনকে ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় হাজার হাজার টাকা দেওয়া হয়, এর যৌক্তিক কোনো দলিল আছে কি? দয়া করে জানাবেন।

মো. ফকরুল ইসলাম, মাহিলাড়া, গৌরনদী, বরিশাল।

জবাব : হাট-বাজারের দোকানদারগণ যদি কোনো প্রকার চাপাচাপি ও জবরদস্তি ছাড়াই খুশিমনে ওয়াজ মাহফিলের জন্য টাকা-পয়সা দান করে, তাহলে সেই টাকা দিয়ে ওয়াজ মাহফিল করা জায়িয আছে। কিন্তু যদি জানা যায় যে, মাহফিল বা বাজার কর্তৃপক্ষ দোকানদারদের মনে কষ্ট দিয়ে টাকা আদায় করে থাকে, তাহলে সেটা বৈধ হবে না। এ রকম ওয়াজ মাহফিলের মধ্যে কোনো বরকতও হবে না। সেই সঙ্গে এ জাতীয় মাহফিলে যেসব বক্তা ওয়াজ করেন, তাদের উচিত কর্তৃপক্ষকে নসীহত করা এবং এ জাতীয় মাহফিল থেকে অর্থ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা।

জিজ্ঞাসা (০৫) : নানা শ্বশুর, দাদা শ্বশুর, চাচা শ্বশুর ও মামা শ্বশুর উনারা কী মাহরাম?

মো. বাপ্পী আহমেদ, গোপালগঞ্জ।

জবাব : কোনো মহিলার স্বামীর পিতা যেমন তার জন্য মাহরাম, অনুরূপ স্বামীর দাদা বা নানাও তার জন্য মাহরাম। কিন্তু স্বামীর চাচা কিংবা মামা অর্থাৎ- মহিলার চাচা শ্বশুর কিংবা মামা শ্বশুর মহিলার জন্য মাহরাম নয়। অতএব মহিলাগণ স্বামীর চাচা কিংবা মামার সামনে শরিয়তের পর্দার বিধান মেনে চলবে।

জিজ্ঞাসা (০৬) : মো. ইয়াহইয়া নাম কি ভালো? নামের সঠিক বানান কি?

মো. ইয়াহইয়া, মাধবকাটি, সাতক্ষীরা।

জবাব : ছেলে সন্তানের ইয়াহইয়া নাম রাখাতে কোনো অসুবিধা নেই। ইয়াহইয়া ('আ.) ছিলেন বানী ইসরাঈলের একজন মর্যাদাবান নবী। তিনি ছিলেন যাকারিয়া ('আ.)-এর পুত্র। নবীদের নামে ছেলে সন্তানদের নাম রাখা খুবই উত্তম। ইয়াহইয়া নামটি আপনি বাংলা উচ্চারণের মাধ্যমে যেভাবে লিখেছেন, সেটাই সঠিক মনে করি। আরবীতে লিখলে এভাবে হবে, يحى।

জিজ্ঞাসা (০৭) : আমি বিয়ের আগে ও পরে অনেক গুনাহ করেছি। কিন্তু ৮ বছর আগে আমি আমার স্ত্রীর কাছে স্বীকার করেছি, তার কাছে ক্ষমা চেয়েছি এবং মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে সংসার জীবন সুন্দরভাবে পালন করছি। এখন আমাদের বৈবাহিক জীবনের ১০ বছর। আমার স্ত্রীর সাথে মাঝে মধ্যে ছোটখাটো বিষয়টি ঝগড়া হলে বা আমার গুনাহর কথা মনে পড়লে আমার সাথে খুবই খারাপ আচরণ করে এবং আমাকে সন্দেহ করে। আমি তাকে থামানোর চেষ্টা করি। আরো সে রেগে আমাকে যা তা কথা শুনাতে থাকে। তখন আমিও ধৈর্য্য হারা হয়ে ঝগড়া করি। কারণ আমি আমার সংসার জীবন সুন্দর করে পালন করে আসছি ও ভবিষ্যতেও যাতে আমাদের সুখের সময়ে দিন কাটে সেইদিকে লক্ষ্য করি। এতে আমার করণীয় কি? আমি আমার স্ত্রীকে কিভাবে বুঝাবো? সুন্দর পরামর্শের আশা করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, গোলদিঘি, কক্সবাজার।

জবাব : আপনি যেহেতু বিয়ের আগে ও পরে মহান আল্লাহর হক্ব সম্পর্কিত গুনাহ করেছেন, তাই আপনার উপর আবশ্যক ছিল কেবল মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং অপরাধ গোপন রাখা। আপনি যেহেতু মহান আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করেছেন এবং ক্ষমা চেয়েছেন ও সৎভাবে জীবন যাপন করেছেন, তাই আপনি আপনার স্ত্রীর কাছে অপরাধ স্বীকার করে ও ক্ষমা চেয়ে ভুল করেছেন এবং একটি অপ্রয়োজনীয় কাজ করেছেন। আর ভুলটি যেহেতু করেই ফেলেছেন, তাই এখন আপনার কলাকৌশল ও সুন্দর আচার-ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার স্ত্রীকে বুঝনোর চেষ্টা করুন। আর তার সাথে যতদূর সম্ভব ঝগড়াঝাটি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। -আল্লাহ সহায়।

জিজ্ঞাসা (০৮) : মসজিদে ‘আসরের সালাতের জামা‘আত হচ্ছে, কিন্তু আমি যোহরের সালাত আদায় করিনি। এমতাবস্থায় আমি যোহরের নিয়ত করে ঐ জামা‘আতে শরিক হব, এভাবেই আমার জানা। আমার প্রশ্ন হলো- মসজিদে ‘ইশার জামা‘আত শুরু হয়েছে, কিন্তু আমার মাগরিব এখনো আদায় হয়নি। এখন কি আমি মাগরিবের নিয়তে ‘ইশার জামা‘আতে শরিক হবো? নাকি ‘ইশা পড়ার পর মাগরিব পড়ব?

আবু বকর, শার্শা, যশোর।

জবাব : আলেমদের প্রাধান্যপ্রাপ্ত মতে, আপনি মাগরিবের নিয়তেই ‘ইশার ইমামের পিছনে দাঁড়াবেন। আপনি যদি সালাতের প্রথম থেকেই দাঁড়াতে পারেন, তাহলে ‘ইশার সালাতের ইমাম যখন চতুর্থ রাকআতের জন্য দাঁড়াবে, তখন আপনি ইমামের সাথে না দাঁড়িয়ে তাশাহুদ, দুরূদ ইত্যাদি পড়ে মাগরিবের সালাতের সালাম ফিরাবেন। অতঃপর আপনি ‘ইশার বাকী সালাতে ইমামের সাথে যোগ দিবেন এবং ‘ইশার সালাত ইমামের সাথে যতটুকু পাবেন, ততটুকুই পড়বেন। অতঃপর ইমামের সালামের পরে ‘ইশার বাকী সালাত পূর্ণ করবেন। আল্লামা মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন এ মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।

আল্লামা বিন বায (রহ.)’র মতে, আপনার তিন রাকআত হলে তাশাহহুদ ইত্যাদি পড়ে বসে থাকবেন। অতঃপর সবার সাথে সালাম ফিরাবেন। অতঃপর আপনি একাকী ‘ইশার সালাত আদায় করবেন। কারো কারো মতে আপনি ‘ইশার ইমামের পিছনে ‘ইশার সালাতের নিয়তেই দাঁড়াবেন। অতঃপর ‘ইশার জামা‘আত শেষ হয়ে গেলে আপনি একাকী মাগরিবের সালাত আদায় করবেন। প্রাধান্য মত : এ ক্ষেত্রে প্রথম মতটিই অধিক গ্রহণযোগ্য মনে করছি। মহান আল্লাহই সর্বাধিক অবগত রয়েছেন। (ফাতাওয়া বিন বায- ফাতাওয়া নং- ১৮৯/১২ এবংلقاءات الباب المفتوح ৩/৪২৫)

জিজ্ঞাসা (০৯) : আমরা জানি যে, ওযূর র্ফয ৪টি। কিন্তু কুলি করা, নাকে পানি দেয়া কান মাসেহ করা এগুলো কি সুন্নত। এগুলোর কোনো একটি বাদ পড়লে ওযূ সম্পন্ন হবে কি?

দীন ইসলাম, ঠাকুরগাঁও।

জবাব : ওযূতে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া নিয়ে আলেমদের মতভেদ রয়েছে। কারো মতে এটা সুন্নাত আবার কারো মতে ওয়াজিব। তবে আলেমদের বিশুদ্ধ মতে ওযূতে মুখম-ল ধৌত করার সময় কুলি না করলে ও নাকে পানি না দিলে ওযূ হবে না। কেননা আল্লাহ ওযূতে মুখম-ল ধৌত করার আদেশ দিয়েছেন। কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া মুখম-ল ধৌত করার অন্তর্ভুক্ত। (শারহুল মুমতি- ১/১১৯)

জিজ্ঞাসা (১০) : ঈদুল আযহায় কুরবানী করার হুকুম কি? দয়া করে জানাবেন।

ফরহাদ, পাকশি, পাবনা।

জবাব : সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর ঈদুল আযহায় কুরবানী করা সুন্নাত; ওয়াজিব নয়। হানাফী মাযহাবেই কেবল কুরবানী করা ওয়াজিব হওয়ার ফাতাওয়া রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহ.) ছাড়া আর কোনো ইমাম কুরবানী করা ওয়াজিব বলেননি। তাই আমরা বলবো যে, সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর কুরবানী করা সুন্নাত ও উত্তম। কেননা নবী (সা.) প্রত্যেক বছরই মদীনাতে কুরবানী করেছেন।

জিজ্ঞাসা (১১) : ইদানিং আমরা কিছু কিছু আলেমের কাছ থেকে শুনতে পাচ্ছি যে, ভাগে কুরবানী দেওয়াটা সফরের সাথে খাস। বিষয়টি নিয়ে আমি বিড়ম্বনায় আছি। দয়া করে জানাবেন তাদের বক্তব্য ঠিক কি না? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

জবাব : একথা সর্বজনবিদিত যে, একাকী কুরবানী দেয়াই উত্তম। তবে উট ও গরুতে শরীক হওয়া নবী (সা.)-এর একাধিক বিশুদ্ধ হাদীস ও সালাফে সালেহীনের বাণী দ্বারা সুপ্রমাণিত। নিম্নে এ সম্পর্কে নবী (সা.)-এর কতিপয় হাদীস ও সালাফে সালেহীনের বাণী পেশ করা হলো-

(১) ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হলো। তখন আমরা গরুতে সাতজন ও উটে দশজন করে শরীক হলাম। (জামে‘ আত্ তিরমিযী- হা. ১৫০১)

(২) জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে ‘উমরাহ্ দ্বারা উপকৃত হতাম। তখন আমরা একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে যবেহ করতাম, এভাবে আমরা তাতে শরীক হতাম। (সহীহ মুসলিম- হা. ১৩১৮)

(৩) জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমরা হুদায়বিয়ার বছর উট সাতজনের পক্ষ থেকে এবং গরুও সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছিলাম। (সহীহ মুসলিম- হা. ১৩১৮)

উপরোক্ত হাদীসগুলোকে দলিল হিসাবে উল্লেখ করে কেউ কেউ বলে থাকেন যে, কুরবানীতে শরীক হওয়া সফরের সাথে খাস। কারণ উপরের হাদীসগুলোতে সফরের কথা এসেছে। আলেমগণের মতে, উক্ত বর্ণনাগুলোতে সফরের কথা থাকলেও সেখানে একথা আসেনি যে, উক্ত শরীক কুরবানী সফরের সাথেই খাস ও মুকীম অবস্থায় চলবে না।
কারণ-
(১) মুহাদ্দিসীনে কিরামের অনেকেই উক্ত হাদীসগুলো সাধারণভাবে কুরবানীর অধ্যায়ে এনেছেন। কিন্তু তাঁরা বিষয়টিকে সফরের সাথে খাস করেননি। এ থেকেও বুঝা যায় যে, তারা ঐসব হাদীসকে এমনি সফর বা হজ্জের সফরের সাথে খাস হওয়া মনে করেননি।

(২) হাদীসের ব্যাখ্যাকারগণও এসব হাদীসকে সফরের সাথে খাস করেননি। আল্লামা আযীমাবাদী, শাইখ আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, শাইখ ওবায়দুল্লাহ রহমানী তাঁরা কেউ-ই উক্ত কুরবানীতে শরীক স¤পর্কিত হাদীসগুলোকে সফরের সাথে খাস করেননি।

(৩) সফরের সাথে শরীক কুরবানীকে খাস করলে যত কিছু নবী (সা.) ও সাহাবা কিরাম কর্তৃক সফরে ঘটেছে তার সবগুলোকেই ঐ সফরের সাথে খাস করা দরকার। আর এ অবস্থায় শরিয়তের বহু মাসায়েল ‘আমল থেকে বাদ পড়ে যাবে।

(৪) কুরবানীতে শরীক হওয়া যে সফরের সাথে খাস নয়, তার প্রমাণে আরো অনেক হাদীস ও সাহাবীদের উক্তি রয়েছে। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কুরবানীর ক্ষেত্রে একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট। (সহীহুল জামে‘ আস্ সগীর- হা. ২৮৯০)

(৫) ইমাম নববী (রহ.) বলেন, একটি কুরবানীর গরুতে অথবা উটে সাত পরিবারের সাতজন কিংবা একই পরিবারের সাতজনের অংশ গ্রহণ করা বৈধ। এটাই ইমাম শাফে‘য়ী, আহমাদ এবং অধিকাংশ আলেমের মত। এক্ষেত্রে গোশ্তওয়ালার নিয়ত বাকি অংশীদারদের নিয়তের উপর প্রভাবহীন। (বিস্তারিত : আল-মাজমু- ৮/৩৭২)

ভাগে কুরবানী দেয়ার ব্যাপারে সউদী স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা হলে কমিটির সদস্যগণ এই জবাব প্রদান করেছেন : কুরবানীতে একটি গরু বা একটি উট সাতজনের পক্ষ হতে যথেষ্ট। এই সাতজন লোক একই পরিবারভুক্ত হোক অথবা আলাদা আলাদা সাত পরিবারের লোক হোক। চাই এই সদস্যদের মধ্যে আত্মীয়তার স¤পর্ক থাকুক আর নাই থাকুক। কেননা নবী (সা.) সাহাবীদেরকে একাধিক লোক মিলে উট বা গরু কুরবানী দেয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তাদের মাঝে আত্মীয়তার স¤পর্ক থাকতে হবে কি না এমন কোনো কথা বলেননি।

জিজ্ঞাসা (১২) : ঘরে হিরা বা ডাইমন্ডের অলংকার থাকলে তার মূল্যমান অনুযায়ী যাকাত দিতে হবে কি?

আব্দুল করীম, নাটোর।

জবাব : অধিকাংশ আলেমের মতে ডাইমন্ড, হিরা, মনি-মুক্তা ইত্যাদি মূল্যবান পাথরের তৈরি অলংকারে কোনো যাকাত নেই। বিশেষ করে যখন এগুলো ব্যবহার করার জন্য সংগ্রহ করা হবে। তবে যারা এগুলোর ব্যবসা করে, তাদের এসব পণ্যের মূল্য যদি নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে এবং এগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে তা থেকে ২.৫০% যাকাত দিতে হবে। (দেখুন : ফাতাওয়ায় যাকাত- পৃ. ৯৭; আল-মুদাও-ওয়ানা- ১/৩৪১)

জিজ্ঞাসা (১৩) : মহান আল্লাহর কাছে দু‘আ করার নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি আছে কি? দয়া করে জানাবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

জবাব : জ্বী ভাই, মহান আল্লাহর কাছে দু‘আ করার অনেকগুলো আদব ও পদ্ধতি রয়েছে। এগুলো রক্ষা করে দু‘আ করলে দু‘আ কবুলের প্রবল আশা করা যায়। যথা-

(১) দু‘আর শুরুতে মহান আল্লাহর প্রশংসা করবে, তাঁর গুণাবলী বর্ণনা করবে এবং নবী (সা.)-এর উপর দুরূদ পাঠ করবে। এমনিভাবে দু‘আ শেষেও সূচনার মতোই মহান আল্লাহর প্রশংসা করবে, তাঁর গুণাবলী বর্ণনা করবে এবং নবী (সা.)-এর উপর দুরূদ পাঠ করবে।

(২) দৃঢ়তার সাথে দু‘আ করবে এবং মহান আল্লাহর কাছে দু‘আ কবুলের দৃঢ় আশা রাখবে।

(৩) এক দু‘আ বার বার করবে এবং তাড়াহুড়া করবে না।

(৪) স্বাচ্ছন্দ্য-অস্বাচ্ছন্দ্য উভয় অবস্থায় দু‘আ করবে।

(৫) নীচু আওয়াজে দু‘আ করবে এবং নিরব ও উঁচু আওয়াজের মাঝামাঝি আওয়াজে দু‘আ করবে।

(৬) পাপ স্বীকার করে তা থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।

(৭) বিনয়-নম্রতা, দু‘আ কবুলের আশা-আকাক্সক্ষা এবং অন্তরে ভয় নিয়ে দু‘আ করবে।

(৮) বান্দার হক্ব নষ্ট করে থাকলে, তা ফেরত দিয়ে দু‘আ করবে।

(৯) কিবলামুখী হয়ে দু‘আ করবে।

(১০) দুই হাত উত্তোলন করে দু‘আ করবে।

(১১) সম্ভব হলে দু‘আ করার পূর্বে ওযূ করবে।

(১২) প্রথমে নিজের জন্য দু‘আ করবে। অতঃপর অন্যের জন্য এই বলে দু‘আ করবে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এবং অমুককে ক্ষমা করো।

(১৩) আল্লাহ তা‘আলার অতি সুন্দর নামসমূহ, সুউচ্চ গুণাবলী এবং দু‘আকারী যেসব সৎ ‘আমল করেছে তার ওয়াসীলা দিয়ে দু‘আ করবে। জীবিত উপস্থিত কোনো সৎ লোকের দু‘আর ওয়াসীলা দিয়েও দু‘আ করতে পারে।

(১৪) দু‘আকারীর পানাহার ও পোশাক-পরিচ্ছদ হালাল রুজি থেকে হতে হবে।

জিজ্ঞাসা (১৪) : বিয়ের ওয়ালীমাহ্ করার উত্তম সময় কোন্টি? কতদিন পর্যন্ত ওয়ালীমাহ্ করা যেতে পারে? দয়া করে জানাবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

জবাব : বিয়ের আনুষ্ঠানিতা সম্পন্ন হওয়ার পর ওয়ালীমাহ্ করার সময় শুরু হয়। বাসর করার আগে অথবা পরে ওয়ালীমার আয়োজন করা যেতে পারে। কেননা নবী (সা.) ওয়ালীমার সময় নির্ধারণ করে দেননি। তাই এতে সময়গত প্রশস্ততা রয়েছে। তবে বাসর করার পর ওয়ালীমাহ্ করাই উত্তম। কেননা নবী (সা.) যাইনাব বিনতু জাহাশের সাথে বাসর করার পর ওয়ালীমাহ্ করেছেন। (দেখুন : সহীহুল বুখারী- হা. ৪৭৯৩; সহীহ মুসলিম- হা. ১৪২৮)

হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, ওয়ালীমার সময় নিয়ে সালাফগণ মতভেদ করেছেন। এটা কি বিবাহের আক্দ-এর সময় না কি আক্দ-এর পর, না কি বাসর করার পর, না-কি আক্দ-এর সময় থেকে বাসর করার সময় পর্যন্ত? (দেখুন : ফাতহুল বারী- ৯/২৩০)

আর ওয়ালীমাহ্ করার সময়সীমা সম্পর্কে কথা হচ্ছে, মাত্র একদিন ওয়ালীমাহ্ করা সুন্নাত। তবে কেউ যদি একদিনের চেয়ে বেশি করতে চায়, তাতে কোনো অসুবিধা নেই।

ইমাম শাওকানী (রহ.) বলেন, মালেকী মাযহাবের আলেমদের মতে সাতদিন পর্যন্ত ওয়ালীমাহ্ করা মুস্তাহাব। ইমাম বুখারী (রহ.) এই মতের প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন। এই মর্মে তিনি সহীহুল বুখারীতে একটি অধ্যায় রচনা করতে গিয়ে বলেন,

بَابُ حَقِّ إِجَابَةِ الوَلِيمَةِ وَالدَّعْوَةِ، وَمَنْ أَوْلَمَ سَبْعَةَ أَيَّامٍ وَنَحْوَهُ.

“ওয়ালীমাহ্ ও দাওয়াত কবুল করা সম্পর্কে এবং যে ব্যক্তি সাতদিন বা এর কম বেশি সময় ওয়ালীমাহ্ করলো”- (সহীহুল বুখারী- ৭/২৪)। তবে এতে অপচয় করা বৈধ নয়।

জিজ্ঞাসা (১৫) : কোনো মুক্তাদী যদি ইমামকে রুকূ‘ অবস্থায় পায় এবং তাতে ইমামের সাথে সালাতে প্রবেশ করে সে কি সেই রাকআত পুনরায় পড়বে না কি রুকূ‘ পাওয়া গেলেই রাকআত গণ্য হয়ে যাবে? দয়া করে দলীলসহ জানাবেন?

আরিফ, উত্তরা, ঢাকা।

জবাব : কোনো লোক যদি মসজিদে গিয়ে ইমামকে রুকূ‘ অবস্থায় পায়, তাহলে সে ইমামের সাথে রুকূ‘তে যোগদান করবে। তার এই রুকূ‘টাকে রাকআত হিসেবে গণ্য হবে কি না, এই ব্যাপারে আলেমদের দু’টি প্রসিদ্ধ মত রয়েছে। অধিকাংশ ফিকহবিদের মতে, এটাই তার জন্য রাকআত হিসেবে গণ্য হবে। ইমামের সালামের পর তাকে এই রাকআতটি আর পড়তে হবে না। ইমাম শাওকানী (রহ.)-এর মতে এটাকে রাকআত গণ্য করা যাবে না; বরং এই রাকআতটি পুনরায় পড়তে হবে। আল্লামা বিন বায (রহ.) বলেন, রুকূ‘ পাওয়া গেলে রাকআত পাওয়াটাই আমার নিকট প্রাধান্যযোগ্য। কেননা সহীহুল বুখারীতে আবূ বক্র (রাযি.) থেকে এ বিষয়ে মারফূ‘ হাদীস রয়েছে। আবূ বক্র একদা রাসূল (সা.)-এর সাথে রুকূ‘তে শরীক হয়ে সালাত সমাপ্ত করলেন। তিনি তাকে সেই রাকআত পুনরায় পড়ার আদেশ দেননি- (দেখুন : সহীহুল বুখারী- হা. ৭৮৩)। সেই রাকআত যদি পুনরায় পড়া আবশ্যক হতো, তাহলে রাসূল (উবংপৎরঢ়ঃরড়হ: ঝষ%২০খ) অবশ্যই তাকে তা পুনরায় পড়ার আদেশ দিতেন।
উল্লেখ্য যে, অকিাংশ আলেমের মতের পক্ষে আবূ দাঊদ, ইবনু খুযাইমাহ্, দারাকুতনী এবং বায়হাক্বীতেও আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) থেকে মারফূ‘ হাদীস রয়েছে। রাসূল (সা.) বলেন,

্রإِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ وَنَحْنُ سُجُوْدٌ فَاسْجُدُوْا، وَلَا تَعُدُّوْهَا شَيْئًا، وَمَنْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ، فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ.

“তোমরা যখন সালাতে এসে আমাদেরকে সিজদায় পাবে, তখন তোমরা সিজদা করবে, তবে এটাকে তোমরা রাকআত গণ্য করবে না। আর যে ব্যক্তি রাকআত (রুকূ‘) পেয়ে যাবে, সে সালাত পেয়ে যাবে।” (আবূ দাঊদ- ৮৯৩, হাসান)

অত্র হাদীসে যদিও রাকআত পাওয়ার কথা এসেছে, কিন্তু রাকআত অর্থ হবে রুকূ‘। কেননা যখন রাকআত শব্দটি সিজদার পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়, তখন এর দ্বারা রুকূ‘ উদ্দেশ্য হয়। আর ইবনু খুজাইমাহ্তে সুস্পষ্ট করেই উল্লেখ আছে যে,

্রقَبْلَ أَنْ يُقِيْمَ الْإِمَامُ صُلْبَهُ.

অর্থাৎ- ইমাম সাহেব পিঠ সোজা করার আগে যদি কেউ ইমামের সাথে যোগদান করতে পারে, তাহলে সে রাকআত পেয়ে যাবে” (ইবনু খুযাইমাহ্- ১৫৯৫)। অতএব এ বিষয়ে জমহুর (অধিকাংশ) আলেমের মতটিই প্রাধাণ্যযোগ্য।

জিজ্ঞাসা (১৬) : মুসলিমদের জন্য ঘরে অবস্থান করে রেডিও-টিভির প্রচারিত নামাযের ইক্তেদা করা কি জায়িয?

ফাতেমা, গাইবান্ধা।

জবাব : টেলিভিশন ও রেডিওর মাধ্যমে প্রচারিত নামাযে ইমামের অনুসরণ করা মুসলিমদের জন্য জায়িয নয়। কেননা জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের জন্য মুসলিমদের একস্থানে সমবেত হওয়া উদ্দেশ্য। অতএব জামা‘আত একস্থানে হওয়া জরুরি এবং কাতারগুলো পরস্পর মিলিত হওয়া আবশ্যক। সুতরাং রেডিও-টিভির মাধ্যমে নামায আদায় করা জায়িয হবে না। কেননা তা দ্বারা জামা‘আতের উদ্দেশ্য হাসিল হয় না। অতএব মহিলা বা অন্য কারো জন্য রেডিও বা টেলিভিশনের অনুসরণ করে নামায আদায় করা জায়িয নয়। আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে তাওফীক্ব দিন -আমীন।

জিজ্ঞাসা (১৭) : আমি শুনেছি মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে সূরা ইয়া-সীন পাঠ করলে তার জান বের হওয়া সহজ হয়। এই মর্মে বর্ণিত হাদীস সহীহ কি না দয়া করে জানাবেন।

নুরে আলম, চট্টগ্রাম।

জবাব : সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী (সা.) মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কালেমা লা- ইলাহা ইল্লাল্লা-হ-এর তালকীন দিতে বলেছেন। অর্থাৎ- সম্ভব হলে তাকে জোর না করে নরমভাবে এটা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। যাতে সে নিজে মৃত্যুর সময় এটা পাঠ করতে পারে। এছাড়া অন্য কিছু পাঠ করানোর কথা সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়নি। আর সূরা ইয়া-সীন পাঠ করার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস সহীহ নয়। ইমাম আলবানী (রহ.) এটাকে য‘ঈফ বলেছেন। (দেখুন : মিশকা-তুল মাসা-বীহ- তাহ্ক্বীক্ব : আলবানী, হা. ১৬২২)

জিজ্ঞাসা (১৮) : একই শহরে বা গ্রামে একাধিক ঈদের নামায অনুষ্ঠিত করার হুকুম কি?

মুসা আব্দুল্লাহ, মালদ্বীপ প্রবাসী।

জবাব : প্রয়োজন সাপেক্ষে একই শহরে একাধিক ঈদের জামা‘আত হতে অসুবিধা নেই। যেমন- প্রয়োজন দেখা দিলে জুমু‘আর নামায একাধিক স্থানে অনুষ্ঠিত করা যায়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“দ্বীনের মাঝে আল্লাহ তোমাদের জন্য কোনো অসুবিধা রাখেননি।” (সূরা আল হাজ্জ : ৭৮)

আমরা যদি একাধিক স্থানে নামায অনুষ্ঠিত করা না জায়িয বলি তাহলে কিছু মানুষ জুমু‘আহ্ ও ঈদের নামায থেকে বঞ্চিত হবে। প্রয়োজনবশত একাধিক স্থানে ঈদের নামায চালু করার উদাহরণ হলো যেমন শহর প্রশস্ত। তাই শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে লোকদের সমবেত হওয়া কষ্টকর। কিন্তু এ ধরনের কোনো অসুবিধা না থাকলে একাধিক স্থানের বদলে একস্থানেই জুমু‘আহ্ বা ঈদের নামাযের আয়োজন করতে হবে।

জিজ্ঞাসা (১৯) : ঈদের নামাযের পূর্বে ইমাম সাহেব মাইকের মাধ্যমে তাকবীর দেন। মুসল্লি­রাও তার সাথে দলবদ্ধভাবে তাকবীর প্রদান করে। এর হুকুম কী?

ফজলে রাব্বি, সাভার, ঢাকা।

জবাব : প্রশ্নকারী তাকবীর পাঠ করার যে পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন, তা নবী (সা.) বা তাঁর সাহাবায়ে কিরাম থেকে বর্ণিত হয়নি। সুন্নাত হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে নিজে আলাদাভাবে তাকবীর পাঠ করবে।


সাপ্তাহিক আরাফাত
বর্ষ : ৬৪, সংখ্যা : ৩৩-৩৪
الفتاوى و المسائل * ফাতাওয়া ও মাসায়িল
জিজ্ঞাসা ও জবাব
ফাতাওয়া বোর্ড, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস। 


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 5:57:40 সূর্যাস্ত : 5:30:17

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত