সাময়িক প্রসঙ্গ
ফাতাওয়া ও মাসায়িল
ফাতাওয়া বোর্ড, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস

জিজ্ঞাসা (০১) : নবুওয়াত পাওয়ার পূর্বে নবী (সা.) কোন্ ধর্মের অনুসরণ করতেন এবং তাঁর পিতামাতা কোন্ ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। নবী (সা.)-এর পিতামাতা কি মুশরিক ছিলেন?
মিরাজ হাসান, গাইবান্ধা।

জবাব : নবী সা. নবুওয়াত লাভের পূর্বে ইব্রাহীম 'আ.-এর দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং সকলপ্রকার শির্ক মুক্ত ছিলেন। তার পিতামাতার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়, কিন্তু তা ভিত্তিহীন, সঠিক নয়; বরং হাদীসে এসেছে-
“আনাস রাযি. বলেন একদা এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন যে, আমার পিতা মৃত্যুর পর কোথায়? হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! তিনি বললেন, তোমার পিতা জাহান্নামে। অতঃপর লোকটি চলে যেতে লাগলে নবী সা. তাকে ডেকে বললেন, নিশ্চয়ই আমার পিতা এবং তোমার পিতা উভয়ে জাহান্নামে”- (সহীহ মুসলিম- হা. ২০৩)। এতে প্রমাণিত হয় নবী সা.-এর পিতা মুশরিক ছিলেন।
সাহাবী আবূ হুরাইরাহ্ রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, আমি আমার রবের কাছে আমার মাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে অনুমতি দেননি। (সহীম মুসলিম- হা. ৯৭৬)
আওনুল মা’বূদ গ্রন্থকার বলেন, আল্লাহ তা‘আলা অনুমতি দেননি কারণ তিনি কাফির ছিলেন, কাফিরের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা বৈধ নয়।
“ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ রহ্. বলেন, আল্লাহ তা‘আলা নবী সা.-এর পিতামাতাকে জীবিত করেছেন, অতঃপর তারা ইসলাম গ্রহণ করে আবার মৃত্যুবরণ করেন” -এ বর্ণনা কোনো মুহাদ্দিস সহীহ বলেননি; বরং সকল বিদ্বানগণ এ বর্ণনাকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলেছেন- (মাজমূ ফাতাওয়া- ৪/৩২৫-৩২৭ পৃ:)। অতএব স্পষ্ট হয় যে, নবী সা.-এর পিতামাতা মুসলিম ছিলেন না; বরং মুশরিক ও অমুসলিম ছিলেন। -ওয়াল্লাহু আলাম।


জিজ্ঞাসা (০২) : আমরা কি কুরআন ও সহীহ হাদীসের মাধ্যমে যাবতীয় মাসআলার সমাধান পেয়ে যাব, নাকি ইজমা-কিয়াসের প্রয়োজনীয়তা আছে -এ বিষয়ে সঠিক জবাব আশা করছি

ইমামুল হক, গুরুদাসপুর, নাটোর।

জবাব : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ
“কুরআনে কোনো কিছু ছেড়ে দেইনি।” (সূরা আল আন‘আম : ৩৮) রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,
্রأَلَا إِنِّي أُوتِيتُ الْكِتَابَ، وَمِثْلَهُ مَعَهُ
“জেনে রেখো আমাকে কুরআনের সাথে অনুরূপ (হাদীস) দেওয়া হয়েছে”- (সুনান আবূ দাঊদ- হা. ৪৬০৪, সহীহ)। অতএব কুরআন ও সহীহ হাদীস দিয়েই ইসলাম পরিপূর্ণ। এমতাবস্থায় কুরআন ও হাদীস ব্যতীত ইজমা ও ক্বিয়াসের সতন্ত্রভাবে অনুসরণের সুযোগ নেই। তবে কখনো প্রয়োজন হলে তা অবশ্যই কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে হতে হবে, নচেত তা অবলম্বনের কোনো সুযোগ নেই। -ওয়াল্লাহু আ’লাম।


জিজ্ঞাসা (০৩) : জনৈক ওয়ায়েজিন বলেছেন, হিন্দুদের টাকায় কাবাঘর নির্মাণ করা হয়েছে- সে অর্থে হিন্দুদের টাকা দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে। আমার প্রশ্ন হলো- যারা এ জাতীয় বিভ্রান্তিমূলক ফিতনা ছড়ায়, তাদের ওয়াজ শোনা যাবে কি?
নূর ইসলাম, গেণ্ডারিয়া, ঢাকা।

জবাব : কোনো বক্তার বক্তব্য যদি কুরআন সুন্নাহ পরিপন্থী হয় তাহলে তা অবশ্যই বর্জনীয়। কারণ তিনি নিজেও পথভ্রষ্ট এবং অন্যকেও পথভ্রষ্ট করছেন। এমন বক্তা ও আলেম হতে রাসূলুল্লাহ সা. সর্তক করেছেন। আর যদি কোনো বক্তার বক্তব্য অধিকাংশই কুরআন সুন্নাহর আলোকে, কিন্তু কিছু ভুলও থাকে। এমতাবস্থায় কখনও কারো অন্ধ অনুসরণ চলবে না, কুরআন সুন্নাহর আলোকেই শুধু সঠিক কথা গ্রহণ হবে, অন্য কথা বর্জনীয় হবে। -ওয়াল্লাহু আ’লাম।


জিজ্ঞাসা (০৪) : হাদীস দ্বারা কুরআনের কোনো আয়াত মানসুখ হয়েছে কী? দু’একটি প্রেক্ষাপট জানিয়ে বাধিত করবেন।

আবু ইসহাক, মোল্লাহাট, বাগেরহাট।

জবাব : হাদীস দ্বারা কুরআনের আয়াত মানসুখ হবে কিনা এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে সহীহ হাদীস দ্বারা কুরআনের বিধান সীমাবদ্ধ বা আংশিক রহিত হয়ে থাকে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ -এ আয়াত দ্বারা সকল সন্তান ওয়ারিস হওয়া সাব্যস্ত হয়। কিন্তু হাদীস দ্বারা নবী-রাসূলের সন্তান ও অমুসলিম ব্যক্তির সন্তান ওয়ারিস হওয়া নিষিদ্ধ হয়। নবী সা. বলেন, ্রإِنَّمَا معثى الأَنْبِيَاءِ لانورث “আমরা নবীরা কাউকে সম্পদের ওয়ারিস বানাই না।” অন্য হাদীসে বলেন, ্রلَا يَرِثُ المُسْلِمُ الكَافِرَ “মুসলিম ব্যক্তি কাফিরের ওয়ারিস হবে না।” অর্থাৎ- কুরআনের উক্ত আয়াতের বিধান অনুযায়ী নবীদের সন্তানেরা, অনুরূপ অমুসলিম ব্যক্তির মুসলিম সন্তান ওয়ারিস হয়। কিন্তু হাদীসে সে বিধান নিষিদ্ধ হয়ে যায়। -ওয়াল্লাহু আ’লাম।


জিজ্ঞাসা (০৫) : নবী (সা.) মি’রাজে গমনকালে সাত আসমানে সাতজন নবীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। এ থেকে কী বুঝা যায় না, নবীগণ আসমানে জীবিত আছেন। এ বিষয়ে দলীলভিত্তিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
পপি আক্তার, শিবগঞ্জ, বগুড়া।

জবাব : কুরআন ও সহীহ হাদীস আমাদের নিশ্চিত করেছে যে, ‘ঈসা 'আ. ব্যতীত পূর্ববর্তী সকল নবী মৃত্যুবরণ করেছেন। অপরপক্ষে আমাদের নবী সা. মি’রাজে অন্যান্য নবীদের সাথে সাক্ষাত করলেও তাঁরা জীবিত না মৃত, এমন কোনো স্পষ্ট বা অস্পস্ট বর্ণনা দেননি। সুতরাং তাঁরা জীবিত না মৃত-এ মর্মে কোনো নতুন সংশয়ের সুযোগ নেই। -ওয়াল্লাহু আ’লাম।

জিজ্ঞাসা (০৬) : আমি রাগের মাথায় বলেছি, তোমার রান্না খাওয়া আজ থেকে আমার জন্য হারাম। পরবর্তীতে রাগ-অভিমান দূর হওয়ার পর তার হাতের রান্না খাচ্ছি। এখন আমি কি হারাম খাচ্ছি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
কুমিল্লা।

জবাব : “তোমার রান্না খাওয়া আজ থেকে আমার জন্য হারাম” এটি ইঙ্গিতসূচক কথা, এর দ্বারা তালাক উদ্দেশ্য করলে এক তালাক হয়ে যাবে। অথবা জিহার উদ্দেশ্য করলে জিহার হবে, ফলে স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক করার পূর্বে জিহারের কাফ্ফারা দিতে হবে। অথবা শপথ উদ্দেশ্য করলে শপথ হয়ে যাবে, ফলে শপথ ভঙ্গের কারণে শপথের কাফ্ফারা দিতে হবে। অতএব প্রশ্ন অসম্পন্ন থাকায় কোনো নির্ভরযোগ্য আলেমের কাছে বিষয়টি জেনে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হলো।


জিজ্ঞাসা (০৭) : রাসূল (সা.) কি কখনো ‘ইশার র্ফয সালাতের পর এক রাকআত বিতর সালাত পড়েছেন? না-কি দুই দুই রাকআত করে নফল পড়ার পর এক রাকআত বিতর পড়ে সালাতকে বিজোড় করেছেন? দলিলভিত্তিক সমাধান দিলে উপকৃত হব।
আকরামুজ্জামান, পিরোজপুর।

জবাব : রাসূলুল্লাহ সা. সাধারণত শেষ রাতে বিতর সালাত পড়তেন। আর তা নয়, সাত, পাঁচ, তিন ও এক রাকআত হতো। তবে বেশি ভাগ তিন বা এক রাকআত বিতর দিয়ে রাতের সালাত সম্পন্ন করতেন। ‘ইশার সালাতের পর তিনি এক রাকআত বিতর পড়েছেন এমন আমলের প্রমাণ পাওয়া না গেলেও তাঁর বক্তব্যে প্রমাণ পাওয়া যায় যে,
عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ্রالْوِتْرُ حَقٌّ، فَمَنْ شَاءَ فَلْيُوتِرْ بِخَمْسٍ، وَمَنْ شَاءَ فَلْيُوتِرْ بِثَلَاثٍ، وَمَنْ شَاءَ فَلْيُوتِرْ بِوَاحِدَةٍগ্ধ
সাহাবী আবূ আইয়্যূব রাযি. বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, বিতর সালাত হক্ব, অতঃপর যে চায় পাঁচ রাকআত পডুক, অথবা যে চায় তিন রাকআত পড়–ক, অতবা যে চায় এক রাকআত বিতর পড়–ক। (সহীহ আবূ দাঊদ- হা. ১২৭৮; সুনান ইবনু মাজাহ্- হা. ১১৯০)
সুতরাং ‘ইশার র্ফয সালাতের পর এক রাকআত বিতর সালাত পড়া বৈধ হবে। -ওয়াল্লাহু আ’লাম।


জিজ্ঞাসা (০৮) : আমরা সাধারণ মানুষ কোনো না কোনোভাবে তাকলীদ করছি। আমরা যারা যে আলেমের ভক্ত, তার কথাকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। কিন্তু এ কথা বলাবাহুল্য যে, সালাফী কিংবা মাযহাবী সকল আলেমের অনুসারীরা খুলুসিয়াত নিয়েই জান্নাতের আশায় তাদের অনুসরণ করে। তবে কি উভয় অনুসারীদের কিয়ামতের দিন একই মানদণ্ডে বিচার করা হবে?
আব্দুল আহাদ, রংপুর।

জবাব : সালাফী আর ভিন্নপন্থী সকল সাধারণ মানুষের কর্তব্য, শরিয়তের বিধান না জানলে নির্ভরযোগ্য ও কুরআন সুন্নাহর জ্ঞানে জ্ঞানী ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিয়ে ইসলাম মেনে চলবে। কখনই কারো অন্ধ অনুসরণের সুযোগ নেই। কোনো ব্যক্তি ভ্রান্ত পথে রয়েছে একথা জানার পরেও তার অনুসরণ করলে উভয়ের গন্তব্যই জাহান্নামে হবে। বিশেষ করে আল্লাহ ও রাসূলের অনুসরণ বর্জন করে ভ্রান্ত আলেমের অন্ধ অনুসারী হলে পরিণতি অতি ভয়াভহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمْ فِي النَّارِ يَقُولُونَ يَا لَيْتَنَا أَطَعْنَا اللَّهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولَا ۝ وَقَالُوا رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا ۝ رَبَّنَا آتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا
“আগুনে যেদিন তাদের মুখ উপুড় করে দেয়া হবে সেদিন তারা বলবে- হায়! আমরা যদি আল্লাহকে মানতাম ও রাসূলকে মানতাম। আর তারা বলবে- হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা আমাদের নেতাদেরকে ও আমাদের প্রধানদেরকে মান্য করতাম। তারাই আমাদেরকে গুমরাহ করেছিল। হে আমাদের পালনকর্তা! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দাও আর তাদেরকে মহা অভিশাপে অভিশাপ দাও।” (সূরা আল আহ্যাব : ৬৬-৬৮)
অপরপক্ষে যারা কুরআন সুন্নাহ তথা আল্লাহ ও রাসূলের অনুসরণের আলোকে কোনো হক্বপন্থী সালাফী আলেমের অনুসরণ করবে তারা হবে সফলকাম ও বিজয়ী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ۝ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ
“মু’মিনদেরকে যখন তাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ডাকা হয়, তখন মু’মিনদের জওয়াব তো এই হয় যে, তারা বলে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম, আর তারাই সফলকাম। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর অবাধ্যতা পরিহার করে চলে তারাই কৃতকার্য।” (সূরা আন্ নূর : ৫১-৫২)
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সঠিক পথ ও পরিণতি বেছে নেওয়ার তাওফীক দান করুন -আমীন।


জিজ্ঞাসা (০৯) : আমি একটি সমাজের প্রতিনিধি। স্থানীয় জনগণ বিভিন্ন সময়ে কোনো উদ্দেশ্য বা স্বার্থ ছাড়াই আমাকে বিভিন্ন উপহার দিয়ে থাকেন। হয়তো জনপ্রতিনিধি না হলে এ উপহার পেতাম না। এখন আমার প্রশ্ন হলো- এ উপহার গ্রহণ করা আমার জন্য যায়েজ হবে কি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

জবাব : সাধারণত উপহার গ্রহণ করা বৈধ। তবে দায়িত্বশীল ব্যক্তি উপহার প্রদান কারীর প্রতি দুর্বল হয়ে অবিচার করে ফেলতে পারে। তখন তা ঘুষে পরিণত হবে। যা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বিপর্যয় নিয়ে আসবে। বিশেষ করে নবী সা. দায়িত্বশীল ব্যক্তির জন্য এরূপ হাদীয়া গ্রহণ করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন- (সহীহুল বুখারী- হা. ৯২৫)। অতএব এরূপ উপহার গ্রহণ হতে বিরত থাকা উচিত। -ওয়াল্লাহু আ’লাম।


জিজ্ঞাসা (১০) : আমার স্বামী যে বেতন পায়, তা দিয়ে আমাদের সংসার চলছে না। বরং প্রতি মাসে ঋণগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছি। এমতাবস্থায় স্ত্রী হিসেবে আমি কি কোনো চাকরি করতে পারব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

জবাব : আপনার স্বামীর উপার্জন যদি সংসার চালানো সম্ভব না হয় তাহলে তার অনুমতি সাপেক্ষে শরিয়তের সীমারেখা ঠিক রেখে জীবিকা নির্বাহের জন্য চাকুরী করতে পারেন। -ওয়াল্লাহু আ’লাম।



জিজ্ঞাসা (১১) : রাসূল (সা.) জান্নাতি দলের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমি এবং আমার সাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত।’ এ থেকে কি প্রতীয়মান হয় না যে, সাহাবীগণের সুন্নতও আমাদের জন্য অনুসরণীয়?
নাজমুল হাসান, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

জবাব : হ্যাঁ, এ হাদীস ছাড়াও আরো অনেক হাদীসে এবং অনেক আয়াতেও সাহাবী’র অনুসরণের গুরুত্ব প্রমাণিত হয়। তবে সাহাবীর বক্তব্য ইসলামের দলিল হবে কি-না এ বিষয়ে কিছু মতামত থাকলেও নিম্ন শর্ত সাপেক্ষে সাহাবীর বক্তব্য দলিল হবে- প্রথম শর্ত সাহাবীর বক্তব্য সহীহসূত্রে প্রমাণিত হতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত সাহাবীর বক্তব্য কুরআন ও সুন্নাহ এর সাথে সাংঘর্ষিক হবে না। তৃতীয় শর্ত সাহাবীর বক্তব্যের বিরোধী অন্যকোনো সাহাবীর বক্তব্য থাকবে না। এ সকল শর্ত সাপেক্ষে সাহাবীর বক্তব্য শরিয়তের দলিল হিসেবে গণ্য হবে। নচেত না- (বিস্তারিত দ্র. মাজমূ ফাতাওয়া- ইবনু তাইমিয়্যাহ, ১৪/২০ পৃ.)। ওয়াল্লাহু আ’লাম।



জিজ্ঞাসা (১২) : পিতা আদম ও মা হাওয়া (আ) যখন পৃথিবীতে আসেন, তখন তাঁরা কি ধরনের পোশাক পরিধান করেছেন।
আয়েশা সিদ্দিকা, আশুলিয়া, ঢাকা।

জবাব : আদম ও হাওয়া 'আ. জান্নাতে থাকা অবস্থায় পোষাক পরিহিত ছিলেন। কিন্তু নিষিদ্ধ কাজে জড়িত হওয়ায় জান্নাতি পোষাক সরে যায়। ফলে তারা গাছের পাতা দিয়ে দেহ আবৃত করা শুরু করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
فَدَلَّاهُمَا بِغُرُورٍ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَةَ بَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَرَقِ الْجَنَّةِ
“এভাবে সে ধোঁকা দিয়ে তাদের অধঃপতন ঘটিয়ে দিলো। যখন তারা গাছের ফলের স্বাদ নিলো, তখন তাদের গোপনীয় স্থান পরস্পরের নিকট প্রকাশিত হয়ে গেল, তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে ঢাকতে লাগল। তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে ডেকে বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এ গাছের কাছে যেতে নিষেধ করিনি আর বলিনি- শায়ত্বন হচ্ছে তোমাদের উভয়ের প্রকাশ্য দুশমন?’” (সূরা আল আ’রাফ : ২২)
এ অবস্থায় তারা পৃথিবীতে অবতরণ করেন। অতএব সে সময় গাছের পাতা ছাড়া ভিন্ন কোনো পোষাক ছিল এমনটি প্রমাণিত হয়নি। -ওয়াল্লাহু আ’লাম।


জিজ্ঞাসা (১৩) : আমি ঋতুবতী থাকা অবস্থায়ও মনে মনে কুরআন তিলাওয়াত করি। এভাবে তিলাওয়াত করা আমার জন্য বৈধ হবে কি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

উত্তর : ঋতুবতী থাকা অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াতের বিধান সম্পর্কে ভিন্ন মতামত রয়েছে, কেউ নিষিদ্ধ বলেছেন। কিন্তু এ মর্মে সহীহ ও স্পষ্ট কোনো দলিল না থাকায় অপর পক্ষ বৈধ বলেছেন। ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ (রহ্.) বৈধ মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং বলেন যে, যেহেতু ঋতুবতী মহিলার কুরআন তিলাওয়াত নিষিদ্ধ সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ও সহীহ প্রমাণ নেই, অতএব এ অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত বৈধ- (মাজমূ ফাতাওয়া- ২১/৪৬০ পৃ.)। অতএব মনে মনে কুরআন তিলাওয়াত এমনকি দেখে তিলাওয়াত করাও বৈধ। তবে হাত দিয়ে স্পর্শ না করে। -ওয়াল্লাহু আ’লাম।


জিজ্ঞাসা (১৪) : হালাল পশুর কৃত্রিম প্রজননে যদি হারাম পশুর বীজ ব্যবহার করা হয়, তবে কী তা হালাল বলে গণ্য হবে, নাকি হারাম হবে?
ইঞ্জি. সুলতান আহমদ, হালিশহর, চট্টগ্রাম।

জবাব : হারাম হবে। কারণ যে পশু হালাল নয় তার বীজও হারাম। -ওয়াল্লাহু আ’লাম।


জিজ্ঞাসা (১৫) : টুপি এবং পাগড়ি সম্বন্ধে কোনো হাদীস বর্ণিত হয়েছে কি? এ সম্পর্কিত হাদীস থাকলে জানিয়ে বাধিত করবেন।
রমজান আলী, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম।

জবাব : টুপি ও পাগড়ি পরিধানের নির্দেশসূচক হাদীস পাওয়া যায় না। তবে পরিধানে বৈধতার হাদীস পাওয়া যায়। যেমন- ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ পোষাকের বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সা. বলেন :
্রلاَ يَلْبَسُ القُمُصَ، وَلاَ العَمَائِمَ، وَلاَ السَّرَاوِيلاَتِ، وَلاَ البَرَانِسَ،...গ্ধ
ইহরাম অবস্থায় জামা, পাগড়ী, পায়জামা ও টুপি বিশিষ্ট জামা... পরিধান করবে না। (সহীহুল বুখারী- ১৫৪৩) হাদীসের অর্থ হলো- এ পোষাকগুলো মানুষ সাধারণ অবস্থায় ব্যবহার করে, কিন্তু ইহরাম অবস্থায় ব্যবহার করা যাবে না। অনুরূপ সুনান আবূ দাঊদ-এর ৯৪৮ নং হাদীসে শুধু টুপির বর্ণনা এসছে। -ওয়াল্লাহু আ’লাম।


জিজ্ঞাসা (১৬) : বাতরুমের মধ্যে নগ্ন হয়ে গোসল করা যাবে কি? নগ্ন অবস্থায় ওযু করার পর, কাপড় পরলে ওযু আদায় হবে কী?
মো. নাসরুল্লাহ, মহেশপুর, ঝিনাইদহ।

জবাব : বাথরুম যদি সম্পূর্ণভাবে মানুষের দৃষ্টির আড়ালে হয় তাহলে বিবস্ত্র অবস্থায় গোসল করা যাবে। তবে উত্তম হলো বিবস্ত্র না হওয়া। আর বিবস্ত্র অবস্থায় ওযূ করে কাপড় পড়লে ওযূ হয়ে যাবে, যদি ওযূ ভঙ্গের কোনো কারণ না ঘটে। যেমন- কোনো আরাল ছাড়াই লজ্জাস্থানে হাত স্পর্শ হলে ওযূ নষ্ট হয়ে যায়। এরূপ কোনো সমস্যা না হলে তা ওযূর জন্য যথেষ্ট হবে। কারণ ওযূর জন্য সতর ঢাকা কোনো শর্ত নয়। -ওয়াল্লাহু আ’লাম।


জিজ্ঞাসা (১৭) : আমাদের এক ভাই বলেছেন, কুরআন আল্লাহর কালাম, অতএব কুরআন হাতে নিয়ে শপথ করা যাবে। আমার প্রশ্ন, তিনি কি সঠিক বলেছেন?
মিজানুর রহমান, জলঢাকা, নীলফামারী।

জবাব : হ্যাঁ, তিনি সঠিক বলেছেন। কারণ আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর নাম ও পবিত্র গুণাবলীর মাধ্যমে কসম খাওয়া বৈধ। কুরআন যেহেতু আল্লাহর ক্বালাম এ দৃষ্টিতে কুরআনের মাধ্যমে শপথ করা যাবে। -ওয়াল্লাহু আ’লাম।


জিজ্ঞাসা (১৮) : জনৈক আলেম বলেছেন, রাসূল (সা.)-এর যুগে মানুষকে কষ্ট দিয়ে উচ্চ আওয়াজে গভীর রাত পর্যন্ত বয়ানের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না, অতএব তা বিদআত। এ ব্যাপারে শরয়ী সমাধান কী?
ইঞ্জি মশিউর রহমান, উত্তরা, ঢাকা।

উত্তর : আমাদের সমাজে অনেক কিছুতেই সীমালঙ্ঘন করা হয়। তন্মধ্যে এ জাতীয় গভীর রাত পর্যন্ত মাহফিলসমূহ। গভীর রাত পর্যন্ত উঁচু আওয়াজে এক দিকে ঘুমন্ত মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়, অপরদিকে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকার কারণে অনেকের ফজরের সালাত নষ্ট হয়। ইত্যাদি কারণে এ জাতীয় মাহফিলে ইসলামের তেমন কল্যাণ সাধিত হয় না। তাই গভীর রাতে মাহফিল বর্জন করা উচিত। -ওয়াল্লাহু আ’লাম।


জিজ্ঞাসা ও জবাব-ফাতাওয়া বোর্ড, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত