সাময়িক প্রসঙ্গ
সভ্যতার মানদণ্ডে নারীর পোশাক
অধ্যাপক মো. আবুল খায়ের

সভ্যতার বিকাশে পোশাক মানব জীবনের একটি অপরিহার্য ও সার্বক্ষণিক বিষয়। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত সার্বক্ষণিক মানব দেহকে আবৃত করে রাখে এই পোশাক। পোশাকের মধ্যেই মানুষের রুচির এবং ব্যক্তিত্বের ছাপ ফুটে ওঠে। অনুরূপ পোশাক ও মানুষের অভ্যন্তরীণ গুণাবলী, ব্যক্তিত্ব ও রুচির উপর প্রভাব বিস্তার করে। আর এ কারণেই যে জাতি বা সম্প্রদায় পোশাক বিহীন অবস্থায় জীবন যাপন করে তাদেরকে আমরা সাধারণত অসভ্য জাতি বা সম্প্রদায় বলে আখ্যায়িত করে থাকি। এ জন্যই পোশাককে মানব সভ্যতার একটি মূল বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ পোশাকের ব্যবহারের উপরই একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব, রুচি, সৌন্দর্য অনুমান করা যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই পোশাকের উৎপত্তি কে এবং কখন করেছেন? এ প্রসঙ্গে ইসলাম ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশী গ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন :
﴿يَا بَنِيْ آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِيْ سَوْآتِكُمْ وَرِيْشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذٰلِكَ خَيْرٌ ذٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ﴾
অর্থ : “হে বানী আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার ও বেশভূষার জন্য আর তাক্বওয়ার পোশাক, এটাই সর্বোত্তম। এ সব আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।”[১]
আয়াতটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন পোশাক দান করছেন শুধু মানুষের লজ্জাস্থান ঢাকার জন্য নয়। মানুষের সৌন্দর্য বিকাশের জন্যও এটি দান করেছেন। আর এই দুইটার থেকে সর্বোত্তম পোশাক সম্পর্কেও আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, সেটি হচ্ছে- “তাক্বওয়ার পোশাক”। অবশ্য বর্তমানে আমরা সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য পোশাককে বেশি ব্যবহার করছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য যে পদ্ধতিতে পোশাক ব্যবহার করতে বলেছেন সেভাবে না করে তার উল্টোটাই করছি। যার ফলে সমাজে দেখা যাচ্ছে, ধর্ষণ-অত্যাচার ও এসিড নিক্ষেপের মতো ঘটনা। যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
এখন দেখা যাক ইসলামী শরিয়তে পোশাক ব্যবহারের নীতিমালা কী? ইসলামী শরিয়তে প্রথম ও প্রধান নীতিটির কথা উপরোক্ত আয়াতেই উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো- লজ্জাস্থানের বা দেহের গোপন অংশসমূহ আবৃত করে রাখা। এটিই পোশাক ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য। শরিয়তের নির্দেশ অনুযায়ী প্রথমত পুরুষের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্য মানুষের দৃষ্টি থেকে আবৃত করে রাখা র্ফয। অন্য দিকে নারীর দেহ আবৃত করে রাখার জন্য ৪টি পর্যায় রয়েছে- (১) স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো পর্দা নেই, নেই কোনো পোশাকের বিধান। (২) একজন মুসলিম মহিলার জন্য অন্য মুসলিম মহিলার সামনে নাভী হতে হাঁটু পর্যন্ত আবৃত করে রাখা র্ফয। (৩) যাদের সাথে চিরতরে বিবাহ নিষিদ্ধ বা হারাম অর্থাৎ- মাহরাম, তাদের সামনে একজন মুসলিম নারী নিজেকে আবৃত রাখবেন, তবে মুখ, মাথা, গলা, বাজু, পা আবৃত না করে সামনে যেতে পারবেন। (৪) একমাত্র মাহরাম ছাড়া যতই নিকটতম আত্মীয় হোক না কেন, সকলের সামনে নিজেকে আবৃত রাখবে।[২] এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন স্পষ্টভাবেই বলেছেন :
﴿وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ وَلَا يُبْدِيْنَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلٰى جُيُوْبِهِنَّ وَلَا يُبْدِيْنَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِيْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِيْ أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِيْنَ غَيْرِ أُوْلِيْ الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِيْنَ لَمْ يَظْهَرُوْا عَلٰى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِيْنَ مِنْ زِيْنَتِهِنَّ وَتُوْبُوْا إِلَى اللهِ جَمِيْعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
অর্থ : “আর মু’মিন নারীদেরকে বলো; তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিম্নগামী (সংযত) করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে; তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তাদের ঘাড় ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে, তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনামুক্ত নিষ্কাম পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো নিকট তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না ফেলে। হে মু’মিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।”[৩]
অনুরূপ পুরুষদের সম্পর্কেও আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿قُلْ لِلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ ذٰلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا يَصْنَعُوْنَ﴾
অর্থ : “মু’মিন পুরুষদেরকে বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিম্নগামী করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে; এটাই তাদের জন্য উত্তম, তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সাম্যক অবহিত।”[৪]
এ সকল আয়াত এবং এ বিষয়ক অসংখ্য হাদীসের ভিত্তিতে মুসলিম উম্মাহ একমত যে, মাহরাম ছাড়া সকল আত্মীয়-অনাত্মীয় পুরুষদের সামনে একজন নারীর পুরো দেহ আবৃত করে রাখা ফরয। কেবল মাহরামদের সামনে নারী তার মুখ, মাথা, গলা, বাজু এবং পা অনাবৃত রেখে যেতে পারবেন। আর মাহরাম ছাড়া সকলের সামনে মাথা, মাথার চুল, গলা, কান, ঘাড়, কনুই, কোমর ইত্যাদিসহ নিজের দেহ পুরোপুরি ঢেকে রাখা প্রতিটি মুসলিম নারীর জন্য ফরয। অনেকে মনে করেন যে, পর্দা নিজের কাছে বা নিজের মনে, পর্দার জন্য বিশেষ কোনো বিধান বা পোশাক নেই, আবার কেউ মনে করেন যে, পর্দা করা ভালো, কিন্তু বেপর্দায় চলাফেরা করা কঠিন কোনো অপরাধ নয়। এমন ধারণা মহান আল্লাহর নির্দেশকে অস্বীকার করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
এখন দেখা যাক মেয়েদের সুন্নতী পোশাক কেমন? প্রকৃতপক্ষে মেয়েদের সুন্নতী পোশাক সম্পর্কে আমরা বড়োই বেখেয়াল। মেয়েরা যে শাড়ি পরেন এটি মূলত ভারত এবং বাংলাদেশের একটি সংস্কৃতি। প্রকৃতপক্ষে শাড়ীতে পর্দা রক্ষা করা কঠিন ব্যাপার। মহিলা সাহাবীগণ ও উম্মল মু’মিনীনগণ সর্বদা ঘরের মধ্যেও তিনটি পোশাক পরিধান করতেন- (১) ফুলহাতা পায়ের পাতা আবৃত করা ম্যাক্সি বা কামিস। (২) ইযার বা সায়া এবং (৩) বড়ো চাদরের মতো ওড়না। বাইরে বেরুলে এগুলোর উপর বড়ো চাদর বা জিলবাব পরতেন। এগুলোই মুসলিম মহিলার সুন্নতী পোশাক। এরূপ পোশাক পরিধান করলে মুসলিম মহিলারা সহজেই পর্দার র্ফয আদায় করতে পারেন।[৫] আর এ বিষয়ে আরো গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের মু’মিন নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন :
﴿يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيْبِهِنَّ ذٰلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَحِيْمًا﴾
অর্থ : “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের (চাদরের) কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়, এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।”[৬]
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা পর্দার নির্দেশের সাথে সাথে পর্দার কারণও উল্লেখ করেছেন। পর্দানশিন মেয়েদেরকে সহজেই ভদ্র, নম্র ও শালীন বলে চেনা যায়, ফলে সাধারণভাবে তারা বখাটে বা অসৎ ছেলেদের ইভটিজিং-এর হাত হতে রক্ষা পায়। আমাদের সমাজসহ যে কোনো সমাজে অগণিত ধর্ষণ, অত্যাচার ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই- যে সকল মেয়েরা পর্দার মধ্যে বেড়ে উঠেন সাধারণত তারা বখাটে ছেলেদের দ্বারা বাজে কথা, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ ইত্যাদির অত্যাচার থেকে নিরাপদে থাকেন। মনে হয় কঠিন হৃদয় বখাটেও কোনো পর্দানশিন মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতে সংকোচ বোধ করে। কারণ তাদের ঐ কঠিন হৃদয়ের নিভৃত এক কোণে পর্দানশিন মেয়ের প্রতি একটুখানি সম্মানবোধ থাকে। তাহলে প্রশ্ন জাগে, কেন আমরা আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশ অমান্য করব? শালীন পোশাকে শরীর আবৃত করে থাকলে তো লাভ ছাড়া কোনো ক্ষতি হয় না; বরং সমাজে, পরিবারে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং মহান আল্লাহর রহমত, দয়া, কল্যাণ ও বরকত লাভ হয়। অনেকে হয়ত মনে করেন শালীন পোশাক স্বাধীনতার পরিপন্থি। কিন্তু কখনও নয়; বরং শালীন পোশাক মেয়েদের জন্য মানসিক তৃপ্তি, প্রশান্তি ও আনন্দদায়ক। কারণ তারা নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে পারেন। এই শালীন পোশাকে মহিলারা রাসূল (সা.) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগে ধর্মীয় পারিবারিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন। সুতরাং কোনো কাজের ক্ষেত্রে শালীন পোশাক পরিধান প্রতিবন্ধক নয়। শুধু মনের ব্যাপার। বর্তমানে ইউরোপ, জাপান, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায়সহ পাশ্চাত্য দেশসমূহে শত শত অমুসলিম যুবতী ইসলাম গ্রহণ করে বোরকা বা স্কাফ পরিধান করে পুরো দেহ আবৃত করে চলাফেরা করেন। তারা সকলেই বলেছেন, ইসলামী পোশাকই নারী প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অশালীন পোশাকে রয়েছে মানসিক অস্থিরতা ও অশান্তি। এ জন্য ইসলামী পোশাকে একজন নারী যে মানসিক তৃপ্তি, প্রশান্তি ও আনন্দ লাভ করে তা অতুলনীয়।
অবশ্য এ ব্যাপারে আমাদের একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, শালীন পোশাকে একজন মুসলিম মহিলাকে আবৃত করে রাখা যেমন ফরয, তেমনি এ ব্যাপারে শরিয়তের মধ্যে তাকে পরিচালিত করা তার স্বামী এবং পিতার জন্যও র্ফযে আইন। সমাজের মধ্যে এমন মানুষ দেখা যায় যে, নিজে দাড়ি রেখেছেন এবং মাথায় টুপিও পরেন, অথচ তার নিজের স্ত্রী অথবা কন্যা মাথা, চুল বা দেহের অন্যান্য অংশ অনাবৃত্ত করে চলাফেরা করে। যেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে আমাদেরকে অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। নতুবা সমাজে, পরিবারে আমরা এর কোনো সুফল দেখতে পাবো না।
অতঃপর ইসলামী পোশাকের অন্যতম আর একটি দিক হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য। রাসূল (সা.) মু’মিনদেরকে পোশাক পরিচ্ছদ পরিচ্ছন্ন রাখতে এর সৌন্দর্য রক্ষা করে চলতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেছেন : “আল্লাহ তা‘আলা সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।”[৭]
এ ব্যাপারে আমাদেরকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যে, পরিচ্ছন্নতা এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে যেয়ে যেন কোনো অহংকার মনে উদ্রেক না হয়। এ ক্ষেত্রে আর একটি বিষয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, যেটি হচ্ছে পুরুষদের পায়ের গোড়ালি অনাবৃত করে রাখতে হবে। অর্থাৎ- পুরুষদের জন্য পোশাককে অবশ্যই পায়ের গোড়ালির উপরে পরতে হবে। অন্যদিকে মেয়েদের গোড়ালি অবশ্যই আবৃত করে রাখবে র্ফয। অথচ আমরা এর উল্টোটা করতে বেশি আগ্রহী। এ ব্যাপারে বহু হাদীস আছে। যেমন- যে ব্যক্তি পায়ের গোড়ালির নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে আল্লাহ তা‘আলা তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে দেখবেন না।[৮]
সম্মানীত পাঠক মণ্ডলী! রাসূল (সা.) পোশাকের ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। যে মহিলা পুরুষের পোশাক বা পুরুষালী স্টাইলে পোশাক পরে এবং যে পুরুষ নারীর পোশাক বা মেয়েলি স্টাইলে পোশাক পরে তারা অভিশপ্ত এবং আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে বিতাড়িত বলে বারংবার বলেছেন।
অনেক ধার্মিক পিতা-মাতা তাদের ছেলে-মেয়েদের শরিয়ত সমর্থিত পোশাক না পরিয়ে ইসলামী মূল্যবোধের পরিপন্থি পোশাক পরিয়ে থাকেন। যেমন- আঁটসাঁট পোশাক, অমুসলিম মহিলা বা পুরুষদের পোশাক। সতর আবৃত করে না এরূপ পোশাক, ছবি অংকিত পোশাক ইত্যাদি। তাদের ধারণা এরা ছোট মানুষ, তাদের কোনো পাপ হবে না। কিন্তু তাদের তো অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
সর্বোপরি প্রত্যেকের জন্য পোশাক বাধ্যতামূলক। বর্তমানে পোশাকবিহীন কোনো মানুষ দেখা যায় না। সে জন্য পোশাক যখন পরতেই হয় তখন রাসূল (সা.) এবং সাহাবীগণের অনুকরণে পোশাক পরলে আমাদের অসুবিধা কোথায়? বরং পরলে রাসূল (সা.)-এর প্রতি মহাব্বত, ভালোবাসা এবং আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। সে জন্য বিভিন্ন যুক্তিতে সুন্নাতকে না এড়িয়ে শরিয়ত সমর্থিত পোশাক পরে আখিরাতের জীবনে লাভবান হতে চেষ্টা করি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে শরিয়ত মোতাবেক পোশাক পরার তাওফীক্ব দান করুন -আমীন।


[১] সূরা আল আ’রাফ : ২৬।
[২] খুৎবাতুল ইসলাম- ১৮৩ পৃ.।
[৩] সূরা আন্ নূর : ৩১।
[৪] সূরা আন্ নূর : ৩০।
[৫] খুৎবাতুল ইসলাম- পৃ. ১৮৫।
[৬] সূরা আল আহযা-ব : ৫৯।
[৭] সহীহ মুসলিম- হা. ১/৯৩।
[৮] সুনান আবূ দাঊদ- হা. ৪০৮৭; জামে‘ আত্ তিরমিযী- হা. ১৬১১।


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত