সাময়িক প্রসঙ্গ
বিশেষ মাসায়িল
আরাফাত ডেস্ক

Revenge of Nature বা প্রকৃতির প্রতিশোধ কথাটা কি ইসলাম সম্মত?

“রাসূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা গ্রহণ করো, আর যা কিছু নিষেধ করেছেন তা বর্জন করো।” (সূরা আল হাশ্র ৫৯ : ৭)
আরাফাত ডেস্ক : জবাবহমব ড়ভ হধঃঁৎব (রিভেঞ্জ অব ন্যাচার)। অর্থ ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’। কেউ যখন আমাদের প্রতি যুল্ম বা অন্যায় করে, তখনই সাধারণত বলা হয়ে থাকে, ‘আমরা তাকে ক্ষমা করলেও প্রকৃতি কখনোই তাকে ক্ষমা করবে না’। মানুষ তার মন্দ কাজের শাস্তি কোনো না কোনোভাবে পেয়েই যায়। আগে হোক কিংবা পরে; শাস্তি সে পাবেই। মানুষ ভুলে গেলেও প্রকৃতি কিছুই ভুলে না এবং ক্ষমাও করে না। এটাকেই ‘রিভেঞ্জ অব ন্যাচার’ বা প্রকৃতির প্রতিশোধ।
বর্তমানে করোনা ভাইরাসকে ‘রিভেঞ্জ অব ন্যাচার’ বলা হচ্ছে। বড় বড় প্রকৃতিক দুযোর্গকেও ‘রিভেঞ্জ অব ন্যাচার’ বলা হয়ে থাকে।
একজন বিশুদ্ধ ‘আক্বীদার মুসলিম ‘আক্বীদাহ্-বিশ্বাস পোষণ করতে পারে না। কেননা এমন কথা বা বিশ্বাস শরী‘আতসম্মত নয়; বরং তা মুসলিমের ঈমান-‘আক্বীদাহ্ পরিপন্থী। প্রকৃতি কখনই প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধপরায়ণ হয় না। সে কারও কোনো উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না, মহান আল্লাহর হুকুম ব্যতিরেকে। কারণ আমরা যাকে প্রকৃতি বলছি, সেও সুমহান স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি এবং তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন। এ বিশ্বচরাচরে যা কিছু আছে সকল কিছুর উপর একচ্ছত্র ক্ষমতাবান আল্লাহ তা‘আলা। তিনি সবকিছুই পরিচালনা করেন ও সবই তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ﴾
“জেনে নাও, সৃষ্টি এবং নির্দেশনা (নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা) কেবল তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন।”[১]
তিনি আরও বলেন :
﴿اَللهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ ۖ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيْلٌ﴾
“আল্লাহই সব কিছুর স্রষ্টা আর তিনি সবকিছুর উপরে পূর্ণ ক্ষমতাবান।”[২]
তিনি আরও বলেন :
﴿يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ﴾
“তিনি আসমান থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন।”[৩]
সুতরাং নেচার বা প্রকৃতি মানুষের অন্যায়-অপকর্মের শাস্তিস্বরূপ প্রতিশোধ পরায়ণ হতে পারে না। কারণ তার সে ক্ষমতা নেই। অতএব, এ কথা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও ইসলামী ‘আক্বীদাহ্-বিশ্বাস পরিপন্থী।
সঠিক ইসলামী বিশ্বাস : এ ক্ষেত্রে সঠিক ইসলামী ‘আক্বীদাহ্-বিশ্বাস হলো-
ক) মানুষ যদি কারও উপর অন্যায় বা যুল্ম করে আর অন্যায়ের শিকার বা মাজলুম ব্যক্তি যদি মহান আল্লাহর নিকট বদদু‘আ করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তা কবুল করে নেন। ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তা‘আলা তাকে শাস্তি দিবেন- দুনিয়াতে অথবা আখিরাতে। তবে অন্যায়কারী ব্যক্তি যদি মাজলুম ব্যক্তির নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে অথবা সে তাকে ক্ষমা করে দেয়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলাও তাকে ক্ষমা করে দেন।
খ) অনুরূপভাবে মানুষ যদি আল্লাহ তা‘আলার নাফরমানী করে, পাপাচারে লিপ্ত হয়, অন্যায়-অপকর্ম করে তাহলে অনেক সময় ক্ষমা করে দেন আবার অনেক সময় তার কৃতকর্মের শাস্তি দেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْ عَن كَثِيْرٍ﴾
“তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক পাপ ক্ষমা করে দেন।”[৪]
ইসলামের দৃষ্টিতে, এ পৃথিবীতে যত বিপদ ও বিপর্যয় সৃষ্টি হয় তার মূল কারণ মানুষের সীমালঙ্ঘন এবং অন্যায় কৃতকর্ম। তাই আল্লাহ তা‘আলা মাঝেমধ্যে সৃষ্টির মধ্যে তার শক্তিমত্তার প্রকাশ ঘটান; যেন তাঁর অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী মানুষ সচেতন হয় এবং তাওবাহ্-ইস্তিগফার করে হিদায়াতের পথে ফিরে আসে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ظَهَرَ الْفَسَادُ فِيْ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْ النَّاسِ لِيُذِيْقَهُم بَعْضَ الَّذِيْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ﴾
“স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।”[৫]
অর্থাৎ- মানুষের অন্যায়-অপকর্ম, অনাচার, যুল্ম-নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা, সীমালঙ্ঘন ইত্যাদি কারণে পৃথিবীতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে জটিল-কঠিন রোগের প্রাদুর্ভাব, খরা-দুর্ভিক্ষ, মহামারী ও বড় বড় বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। আর যখন এগুলো আসে তখন কেবল মন্দ লোক ও অপরাধীদেরকে পাকড়াও করে না; বরং সর্বস্তরের মানুষ তা দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং ধ্বংসযজ্ঞের সম্মুখীন হয়।
সুতরাং এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বমানবতার জন্য অপরিহার্য হচ্ছে, সকল পাপ-পঙ্কিলতা এবং সীমালংঘনমূলক কর্মকা- থেকে ফিরে এসে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আত্মসমর্পণ করা। 
মোটকথা, মানুষের জীবনে ভালো-মন্দ যা কিছু ঘটুক না কেন, তার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ মহান আল্লাহর হাতে এবং তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন। নেচার কখনো স্বপ্রণোদিত হয়ে মানুষের ক্ষতি করে না বা করতে পারে না এবং কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধও নিতে পারে না।
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে এমন কথা বলা কুফ্রী ও নাস্তিকতার অন্তর্ভুক্ত। তবে আল্লাহ তা‘আলা প্রতি পূর্ণবিশ্বাস রেখে এবং মহান আল্লাহকে সকলকিছুর সৃষ্টিকর্তা, পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করার পর কেউ যদি এমন কথা বলে, তাহলেও তা কুফুরি না হলেও পরিহার করা একান্ত উচিৎ; কেননা, নাস্তিকরা উদ্দেশ্য-প্রণোদিত হয়েই এমন কথার প্রচলন ঘটিয়েছে এবং তা প্রচার করে থাকে। তাই নাস্তিকদের কথার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এমন কথা সর্বৈব বর্জনীয়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সকলপ্রকার অকল্যাণ থেকে হিফাযত করুন -আমীন।



টীকাসমূহ-
[১] সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৫৪।
[২] সূরা আয্ যুমার ৩৯ : ৬২।
[৩] সূরা আস্ সাজদাহ্ ৩২ : ৫।
[৪] সূরা আশ্ শু‘আরা- ২৬ : ৩০।
[৫] সূরা র্আ রূম ৩০ : ৪১।



আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত