সাময়িক প্রসঙ্গ
সত্তর হাজার মানুষ যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে
গিয়াসুদ্দীন বিন আব্দুল মালেক
‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমার কাছে (স্বপ্নে অথবা মি'রাজে) উম্মাতদের উপস্থাপন করা হলো। একজন নাবীকে আমি একটি ছোট দলসহ দেখলাম, একজন নাবীকে একজন-দুই জন লোকসহ আরেক নাবীকে দেখলাম যে, তাঁর সাথে কেউ নেই। হঠাৎ করে আমাকে একটি বিরাট দল দেখানো হলো। আমি ভাবলাম, এরা আমার উম্মাত। আমাকে বলা হলো, এরা মূসা ('আঃ) ও তাঁর উম্মাত। তবে আপনি ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখুন। আমি দেখলাম, সেখানে বিরাট একটি দল। আবার আমাকে আকাশের অপর দিকে তাকিয়ে দেখতে বলা হলো। আমি দেখলাম, সেখানেও বিরাট দল। তারপর আমাকে বলা হলো, এসব আপনার উম্মাত। আর তাদের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবে ও বিনা শাস্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেখান থেকে উঠে তাঁর হুজরায় গেলেন। এই সময় সাহাবীরা যারা বিনা হিসেবে ও বিনা শাস্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করবেন ঐসব লোকের ব্যাপারে আলোচনা করছিলেন। কেউ বলল, তারা বোধ হয় ঐসব লোক যারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সান্নিধ্য লাভ করেছেন। কেউ বলল, তারা ইসলামে জন্মগ্রহণকারী, আল্লাহর সাথে যারা র্শিক করেননি। এভাবে সাহাবীরা বিভিন্ন অভিমত প্রকাশ করছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বের হয়ে এসে বললেন। কোনো ব্যাপারে তোমরা আলোচনা করছো? বিষয়টি সম্পর্কে তারা তাঁকে জানালেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তারা হচ্ছে-
১. দাগ কেটে রোগের চিকিৎসা করায় না, ২. অন্যের কাছে রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁক করে দিতে বলে না, ৩. কোনো জিনিসকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করে না, ৪. বরং তারা কেবল মহান আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখে।
উক্কাশা ইবনু মিহ্সান (রাযিঃ) দাঁড়িয়ে বলল, আল্লাহর কাছে আপনি দু‘আ করুন। তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত। তারপর আরেকজন উঠে বলল, মহান আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন যাতে তিনি আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন- উক্কাশা তোমার অগ্রবর্তী হয়ে গেছে।[১]
হাদীসের শিক্ষা :
(ক) রাসূল (সাঃ)-এর উম্মাতের মাঝে ৭০ হাজার লোক থাকবে, তারা কোনো হিসাব-নিকাশ ছাড়াই সরাসরি জান্নাতে যাবে। তাঁর মানে এই না যে, এই উম্মাতের মাঝে মোট ৭০ হাজার লোক জান্নাতে যাবে। এই ৭০ হাজার লোক ঈমান, তাক্বওয়া এবং তাওয়াক্কুল-এর দিক থেকে এতো ঊর্ধেব যে, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্যে এই বিশেষ মর্যাদা -তারা কোনো বিচার বা প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া ছাড়াই সরাসরি জান্নাতে যাবে।
(খ) ৭০ হাজার লোক যারা কোনো হিসাব-নিকাশ ছাড়াই সরাসরি জান্নাতে যাবে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাদের ৪টি প্রধান গুণ উল্লেখ করেছেন-
১. দাগ কেটে রোগের চিকিৎসা না করানো : তৎকালীন যুগে আরবদের মাঝে কিছু রোগের জন্যে একটা চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু ছিলো, আর তা হচ্ছে- লোহা দিয়ে পুড়িয়ে ক্ষত বা ব্যথার স্থানে দাগ দেওয়া। রাসূল (সাঃ) এই চিকিৎসাটাকে অপছন্দ করেছেন এবং দেখা যায় কিছু হাদীসে তিনি সেটা করতে নিষেধ করেছেন। যাই হোক, যারা সৌভাগ্যবান ৭০ হাজার লোকের অন্তর্ভুক্ত হবে তারা এ কাজটা করবে না।
২. অন্যের কাছে ঝাড়ফুঁক করে দিতে বলবে না : ‘রুকইয়াহ্’ বা শরী‘আতসম্মত ঝাড়ফুঁক অন্যের কাছ থেকে নেওয়া জায়িয আছে। তবে অন্যকে রুকইয়াহ্ করে দিতে বলার অর্থ হচ্ছে একজন ব্যক্তির উপরে নির্ভর করা। এজন্যে এই কাজটা জায়িয হলেও, উত্তম হচ্ছে মহান আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে নিজের রুকইয়াহ্ নিজে করার মতো ঈমান ও তাওয়্যাক্কুল গড়ে তোলা।
৩. কোনো জিনিসকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে না করা : ‘যে কোনো ধরণের কুলক্ষণ মানা বা বিশ্বাস করা র্শিক’। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “কুলক্ষণ বা অশুভ লক্ষণ মানা র্শিক।” একথা নাবীজী তিনবার উচ্চারণ করেন।[২]
৪. ‘তাওয়াক্কুল’ অর্থাৎ- কেবল মহান আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা। যা প্রতিটি মুসলিমেরই নিজের ঈমান সুন্দর ও মজবুত করার জন্যে জরুরী। হাদীসে এসেছে-
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যখন তুমি কিছু চাইবে, তখন শুধুমাত্র মহান আল্লাহর কাছেই চাইবে; যখন সাহায্য চাইবে শুধুমাত্র মহান আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে।”[৩] #

[১] রিয়াদুস সালেহীন- ৭৫, বুখারী- ৫৭০৫, তিরমিযী- ২৪৪৬।
[২] সুনান আবূ দাঊদ, মিশকা-তুল মাসা-বীহ্- হাঃ ৪৫৮৪।
[৩] সুনান আত্ তিরমিযী- হাঃ ২৫১৬।


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত