- নৈতিক শিক্ষা সময়ের অপরিহার্য দাবী:
বিজ্ঞানের মাধ্যমে পৃথিবী চরম উৎকর্ষতা লাভ করলেও হাল আমলের মানুষ চরম আধ্যাত্মিক সংকটে দিগ্ভ্রান্ত ও হতভম্ব। উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, মানসিক অস্তিরতা এবং নিরাপত্তাহীনতা যেন আমাদের পিছু ছাড়ছে না। প্রশান্তি, চিত্তের স্থিরতা, উৎপাতশূন্যতা এবং নিরাপত্তা যেন ধীরে ধীরে নির্বাসিত হচ্ছে। কেন এ নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হলো?
মহানবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “প্রতিটি শিশু ফিতরাত অর্থাৎ- স্বভাবধর্মের উপর জন্মগ্রহণ করে, এরপর তার বাবা-মায়ের কারণে সে ইয়াহূদী বা নাসারা (খ্রিষ্টান) হয়ে থাকে।” মহানবী (সা.)-এর বাণী থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, বাবা-মায়ের ভুল প্রতিপালনে সন্তান বিপথগামী-পথভ্রষ্ট এবং লক্ষ্যচ্যুত হয়ে থাকে। অথচ বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছিল, সন্তান একদিন সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে, জগতজোড়া খ্যাতি লাভ করবে, সর্বপোরি মা-বাবার মুখ হবে আলোকিত-দীপ্তিমান। কিন্তু সংক্রামক ব্যাধির ন্যায় তাদের প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির বিস্তর ব্যবধান দিন দিন যেন বেড়েই চলছে।
আজকাল প্রায় সকল অভিভাবকের অভিযোগ- ছেলেমেয়েরা বড্ড বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বাবা-মা, অভিভাবক, শিক্ষক এবং গুরুজনদের কথা শুনতে চায় না। যা ইচ্ছে তা-ই করে। তাদের চলাফেরা অবাধ, তাদের আচরণ অনভিপ্রেত, তাদের ইচ্ছা অনিয়ন্ত্রিত, তাদের আকাক্সক্ষা অনিয়মিত, তাদের কার্যকলাপ অসংযত- এমন হাজারো অভিযোগ।
এই অসংযত, অনিয়মিত, অনভিপ্রেত ও অনিয়ন্ত্রিত অবস্থার জন্য নৈরাশ, নৈরাজ্য এবং হতাশা আজ সর্বত্র। বাবা-মা দিশেহারা। সমাজ ক্ষত-বিক্ষত। পিতামাতা এবং সমাজের জন্য এটা আজ প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দূরারোগ্য ব্যাধিতে ইউরোপ-আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের দেশসমূহ যেমন আক্রান্ত, আরব-মধ্যপ্রাচ্যসহ আমাদের দেশ তথা সারা বিশ্ব সংক্রামিত। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তনের কি কোনো উপায় নেই?
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে আজ সর্বব্যাপী চলছে গবেষণা। নেপোলিয়ান আত্মউপলব্ধিবোধ থেকে বলেছিলেন- “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব।” ইংরেজ শিক্ষাবিদ Stanly Hall যথার্থই বলেছেন যে, শিক্ষার্থীদের কেবল রুজি-রোজগারের পন্থা শিখালে হবে না; বরং নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে, তবেই তারা মানবীয় গুণসম্পন্ন সুশিক্ষিত মানুষ হবে। তিনি বলেছেন : If you teach them the three `R`s, i.e. Reading, Writing and Arithmetic and don’t teach them the forth `R`s, i.e. Religion, they are sure to become the fifth `R`s, i.e. Rascal. শিক্ষার্থীদের কেবল পঠন, লিখন ও গণিত শিখানো হলো কিন্তু ধর্মের জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হলো না, তবে তো তারা (রাসকেল) দুষ্টাশয় হয়ে পড়বেই।
নৈতিক শিক্ষা দানের মৌলিক হাতিয়ার ধর্ম। মানুষের মাঝে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে ধর্মীয় অনুশাসনের বিকল্প নেই। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মাধ্যমে একজন মানুষ পাপ-পঙ্কিলতা মুক্ত পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করতে পারে। ধর্ম মানুষকে সত্যের পথে পরিচালিত করে, সমাজের মানুষের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে এবং ধর্মীয় বিধান প্রতিপালনের মাধ্যমে মানুষ ধৈর্যশীল হয়ে ওঠে। আর ধৈর্যশীলতা আদম সন্তানকে সাফল্যের পথে পরিচালিত করে।
সুতরাং আমরা আমাদের সন্তানদেরকে নৈতিক তথা ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করে আগামীর পৃথিবীর সম্পদে পরিণত করব, আর এই সন্তানই হবে আমাদের পরকালীন মুক্তির পাথেয় -ইন্শা-আল্লাহ। নতুন শিক্ষাবর্ষের সূচনায় নৈতিক শিক্ষার বিষয়ে সঠিক ভাবনা ও তা কার্যকর করার উন্মেষ ঘটুক- এ হোক আমাদের প্রত্যয়দৃঢ় অঙ্গীকার।
৬৪ বর্ষ ॥ ১৫-১৬ সংখ্যা, ০৯ ডিসেম্বর- ২০২৩ ঈ., ১৫ জমাদিউস্ সানি- ১৪৪৪ হি.
আপনার মন্তব্য