সাময়িক প্রসঙ্গ
সাঃ আঃ, ৬২ বর্ষ, ৪৫ ও ৪৬ সংখ্যা, সম্পাদকীয়
অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মাদ রঈসুদ্দীন

 মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিলেন কেন্দ্রীয় জমঈয়তের অন্যতম উপদেষ্টা প্রফেসর এ. এইচ. এম. শামসুর রহমান (রহিঃ)

আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন। ওয়াস্ সলাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিহিল কারীম -ওয়া বা‘দ। মহান আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন ও মহানাবী (সাঃ)-এর উপর দরুদ পাঠের পর একজন জ্ঞান তাপস ও কলম সৈনিক ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে সম্পাদকীয় লেখার ইচ্ছা পোষণ করছি। শিরোনাম দেখেই চিনতে পেরেছেন তিনি কে। তিনি ছিলেন জমঈয়তে আহলে হাদীসের একজন বিদগ্ধ কাণ্ডারী ও দক্ষ সংগঠক এবং বহু গ্রন্থ প্রণেতা। জমঈয়তের দীর্ঘদিনের সহ-সভাপতি ও সর্বশেষ ছিলেন অন্যতম উপদেষ্টা। যিনি শিক্ষিত, মার্জিত ও জ্ঞানী-গুণীসহ আম জনতার নিকট ছিলেন অতি পরিচিত। তিনি হলেন আমাদের সকলের শ্রদ্ধাভাজন অভিভাবক প্রফেসর এ. এইচ. এম. শামসুর রহমান (রহিঃ)। বিগত ২২ আগস্ট’২১ ভোর সাড়ে পাঁচটায় খুলনা জেলায় অবস্থিত তাঁর বাসভবনে দুনিয়ার জীবনের সফর শেষ করে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন- “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”। যশোর জেলার অন্তর্গত কেশবপুরে স্থানীয় ঈদগাহ ময়দানে সহস্রাধিক মানুষের উপস্থিতিতে তাঁর সর্বশেষ জানাযা সম্পন্ন হয়। অতঃপর তাঁকে সেখানেই কবরস্থ করা হয়। চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়ে চলে গেলেন মহীরূহ্ এই ব্যক্তিত্ব। দেখা হবে না কোনো দিন তাঁর সাথে। শুনা যাবে না মিষ্টি মিষ্টি উপদেশ বাণী। পাওয়া যাবে না তাঁর আদরমাখা স্নেহ ও ভালোবাসা। হয়ে গেলাম আমরা অভিভাবকশূন্য। যা কোনোদিন পূরণ হবার মতো নয়। এমনি করে সবাইকে এ দুনিয়া থেকে একদিন চলে যেতে হবে। এমনটিই ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ, “জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর ক্বিয়ামতের দিনই তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় প্রদান করা হবে। যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং যে জান্নাতে প্রবেশ করবে সেই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়”- (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৮৫)। কি চমৎকার কথা আল্লাহর। পার্থিব জীবন ছলনাময় অথচ এ জীবনের জন্যই মানুষ পাগলপারা হয়ে ছুটছে। আমাকে অনেক সম্পদের মালিক হতে হবে। অনেক বাড়ি-গাড়ি করতে হবে। অনেক প্রভাব-প্রতিপত্তির অধিকারী হতে হবে। কিন্তু না, এ দুনিয়া তো একেবারেই ক্ষণিকের। সবকিছু ছেড়ে একদিন অবশ্যই চলে যেতে হবে। কেউ জানে না কোথায় তার মৃত্যু হবে। এমনটিই ইরশাদ করেছেন আল্লাহ, “কেউ জানে না আগামী কাল সে কি অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে তার মৃত্যু ঘটবে”- (সূরা লুক্বমা-ন ৩১ : ৩৪)। কি অমোঘ বিধান মহান আল্লাহর। যখনই কারো মৃত্যু ঘণ্টা বেজে যাবে, এক মুহূর্ত দেরি হবে না। যেমনটি আল্লাহ বলেন, “যখন তাদের সময় আসে, তখন তারা মুহূর্ত কাল বিলম্ব অথবা অগ্রগামী হতে পারে না”- (সূরা আন্ নাহ্ল ১৬ : ৬১)। এই যদি আমাদের অবস্থা হয়, তাহলে আমরা কোন দিকে ছুটছি। আমাদের তো হিসাব কষা দরকার। আমাদের ভেবেচিন্তে অগ্রসর হওয়া উচিত। সময় কিন্তু একেবারেই ফুরিয়ে যাচ্ছে। যাবতীয় আস্ফালন, অহংকার ও আমিত্ব মুহূর্তের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে বাকশক্তি ও হুংকার। কাজেই সাবধান ও সচেতন হওয়ার এখনই সময়। কাল ক্ষেপণের আর সুযোগ নেই। আখিরাতের জন্য সঞ্চয় অত্যাবশ্যক। আখিরাতের জীবনকে প্রাধান্য দেয়া একান্ত জরুরী। কেননা এ জীবনই হলো আসল জীবন। আর দুনিয়ার জীবন একেবারেই ক্ষণস্থায়ী।
পরিশেষে নাবী (সাঃ)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ বাণী শুনাচ্ছি- ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) একবার আমার দু’কাঁধ ধরে বললেন, “তুমি এ দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা পথচারীর মতো থাকো।” আর ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) বলতেন, “তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর ভোরের অপেক্ষা করো না এবং ভোরে উপনীত হলে আর সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার অবস্থায় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয় করো এবং জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো”- (বুখারী- ৬৪২৬, তিরমিযী- ২৩৩৩)। কি মহামূল্যবান উপদেশ। এ বাণীর প্রতিটি কথা আমাদের জন্য উপাদেয়। কাল বিলম্ব না করে এ বাণীর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ‘আমল করা একান্ত অপরিহার্য।
আমাদের অভিভাবকতুল্য ব্যক্তিত্বগণ এভাবে একে একে বিদায় নিচ্ছেন। তাঁদের মৃত্যুতে যে শূণ্যতা সৃষ্টি হচ্ছে তা আর পূরণ হচ্ছে না। সাপ্তাহিক আরাফাতের আগামী সংখ্যাগুলোতে আমরা তার জীবন-কর্ম নিয়ে আলোচনার প্রয়াস পাব -ইন্শা-আল্লাহ। কেননা এই মহান ব্যক্তির জীবন থেকে আমাদের অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। এছাড়া তিনি ছিলেন সাপ্তাহিক আরাফাত পত্রিকার একজন অন্যতম লেখক, পাঠক ও উপদেষ্টা। ইতোপূর্বে অনেক সংখ্যা এমন ছিলো যা তাঁর লেখা ব্যতীত প্রকাশিত হয়নি। তিনি লেখনির মাধ্যমে দ্বীন প্রচারের এক অকুতভয় সৈনিক ছিলেন। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, কলামিষ্ট, গবেষক, প্রাবন্ধিক, ইসলামী চিন্তাবিদ, ইতিহাসবিদ ও সু-সাহিত্যিক ছিলেন। এক কথায় তিনি বহুবিধ গুণের অধিকারী ছিলেন। তাঁর অবদান সর্বজন স্বীকৃত।
প্রফেসর এ. এইচ. এম. শামসুর রহমান ব্যক্তি জীবনে ছিলেন তাক্বওয়ার মূর্তপ্রতীক ও মুখলেস ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সততা, আমানতদারিতা, কর্তব্যপরায়ণতা, উদারতাসহ সকল ভালো গুণের সমাহার ঘটেছিলো তার জীবনে। দুনিয়ার জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে পরকালিন জীবনকে প্রাধান্য দেয়ার ব্যাপারে তিনি ছিলেন এক অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্তের মূর্তপ্রতীক।
সবশেষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় মহীরূহ্ ব্যক্তিত্ব প্রফেসর এ. এইচ. এম. শামসুর রহমান অফড়নব ঝুংঃবসং-এর জন্য দু‘আ করি এবং সর্বস্তরের জনতার নিকট দু‘আ চাই- আল্লাহ যেন তাঁর যাবতীয় ভুল-ত্রুটি মার্জনা করে জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ মাকাম দান করেন এবং তাঁর পরিবারবর্গকে ‘সাবরে জামিল’ অর্জন করার তাওফীক্ব দান করেন -আল্লাহুম্মা আমীন।


 সাঃ আঃ, ৬২ বর্ষ, ৪৫ ও ৪৬ সংখ্যা, সম্পাদকীয়


আপনার মন্তব্য

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত