বাপ-দাদার ধর্ম ও অধিকাংশের দোহাই- এ দু’টি ইসলামের দলীল বা মানদ- হতে পারে না। বরং অধিকাংশ মানুষ করে এবং বাপ-দাদার ধর্মের দোহায় প্রদানের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বার বার সতর্ক করা হয়েছে বাপ-দাদার ধর্ম টিকিয়ে রাখার জন্য আবূ জাহ্ল কাফির হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। অথচ আমাদের সমাজে এখনো বাপ-দাদার অজুহাত দেয়া হয়।
আবূ ত্বালিবের মৃত্যুর সময় এই আবূ জাহল-ই বলেছিল, কালিমাহ পড়ে বাপ-দাদার মুখে চুনকালি দিও না; আর বাপ-দাদার ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে গিয়ে আবূ ত্বালিব ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করতে পারেনি।
আবূ জাহল জানতো যে, কুরআন মহান আল্লাহর বাণী। বাপ-দাদার মুখে চুনকালি পড়বে ভেবে সত্য মেনে নিতে পারেনি। আর এজন্য নিকৃষ্ট কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। এখনো কিছু লোক আছে ইসলামের ব্যাপারে বাপ-দাদার দোহাই দেন।
অথচ অন্য কিছুতে বাপ-দাদার দোহাই দেন না কেন?
বাপ-দাদারা লুঙ্গি পরেছিল, আপনি টাইট পেন্ট পরেন কেন্? সুটকোর্ট পরেন কেন? বাপ-দাদারা অশিক্ষিত ছিলেন তাহলে আপনি কেন শিক্ষিত হচ্ছেন? বাপ-দাদা ছনের বা টিনের ঘরে থাকতেন তাহলে আপনি কেন দালান-ঘর বানান? নিজের বিবেকের কাছে একবার প্রশ্ন রাখুন!
এ কথা সর্বদা আমাদের মনে রাখতে হবে, বাপ-দাদার রসম-রেওয়াজে ধর্ম চলে না, ধর্ম বিধান সুস্পষ্ট এবং দলীল প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত।
আরো একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, বাপ-দাদার হিসাব বাপ-দাদারা দিবেন, আপনার হিসাব বাপ-দাদারা জিজ্ঞাসীত হবেন না। আপনার হিসাব আপনাকেই দিতে হবে।
এরপরও যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় আসলে প্রকৃতপক্ষে এরাই আবূ জাহলের উত্তরসূরী।
কিছু নমুনা দেখুন- (১) বাপ-দাদারা কি এতদিন ভুল করে আসছেন! (২) অধিকাংশ মানুষই কি ভুল করে আসছে! (৩) এত বড় বড় ‘আলেম তো এভাবেই ‘আমল করে আসছেন! তারা কি ভুল করে গেছেন! মূলতঃ এই তিনটি অজুহাতে মানুষ কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর দা‘ওয়াতকে পরিত্যাগ করে।
অধিকাংশ এটি কোনো দলীল নয়, দলীল হলো কুরআন ও সহীহ হাদীস।
আল্লাহ তা‘আলা ভালো করেই জানতেন ভবিষ্যতে এমন প্রশ্ন আসবে তাই নিদর্শন রেখে অজুহাত বন্ধ করে দিয়েছেন।
অধিকাংশদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কি
বলেছেন → ↓
“অধিকাংশ মানুষ প্রকৃত ব্যাপার সম্পর্কে অবগত নয়।”[১]
“অধিকাংশই নির্বোধ।”[২]
“অধিকাংশ লোকই অবগত নয়।”[৩]
“অধিকাংশই অজ্ঞ।”[৪]
“অধিকাংশই জানে না।”[৫]
“তুমি যতই প্রবল আগ্রহ ভরেই চাও না কেনো, মানুষদের অধিকাংশই ঈমান আনবে না।”[৬]
“আমি তোমার নিকট সুস্পষ্ট আয়াত নাজিল করেছি, ফাসিকরা ছাড়া অন্য কেউ তা অস্বীকার করে না; বরং তাদের অধিকাংশই ঈমান রাখে না।”[৭]
“আমি তো তোমাদের কাছে সত্য নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই ছিলে সত্য অপছন্দকারী।”[৮]
“তাদের অধিকাংশকেই আমি প্রতিশ্রুতি পালনকারী পাইনি; বরং অধিকাংশকে ফাসিকই পেয়েছি।”[৯]
★ “তুমি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের অনুসরণ করো তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে ফেলবে, তারা কেবল আন্দাজ-অনুমানের অনুসরণ করে চলে; তারা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই করে না।”[১০]
★ “তাদের অধিকাংশই কেবল ধারনার অনুসরণ করে; সত্যের মোকাবেলায় ধারনা কোনো কাজে আসে না।”[১১]
★ “অধিকাংশ মানুষ আল্লাহকে বিশ্বাস করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে।”[১২]
“আমি কি তোমাদের জানাব কাদের নিকট শয়ত্বানরা অবতীর্ণ হয়? তারা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি চরম মিথ্যুক ও পাপীর নিকট। ওরা কান পেতে থাকে আর তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী।”[১৩]
★ “তারা তাদের পিতৃ-পুরুষদের বিপথগামী পেয়েছিল। অতঃপর তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে ছুটে চলেছিল। এদের আগের লোকদের অধিকাংশই গুমরাহ হয়ে গিয়েছিল।”[১৪]
বাপ-দাদার কথা আসবে আল্লাহ তা‘আলা জানতেন, তাই আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
“তাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তোমরা তার অনুসরণ করো, তখন তারা বলে; বরং আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছি, তারই অনুসরণ করব। শয়ত্বান যদি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে দা‘ওয়াত দেয়, তবুও কি?”[১৫]
যখন তাদেরকে বলা হয়, “আল্লাহ তা‘আলা যা পাঠিয়েছেন, তা অনুসরণ করো।” তারা বলে, “না, না, আমাদের বাপ-দাদাদের যা করতে দেখেছি, আমরাও তা-ই করবো।” কী! যেখানে কিনা ওদের বাপ-দাদারা বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহার করতো না এবং তারা সঠিক পথ পাওয়ারও চেষ্টা করেনি?[১৬]
যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং রাসূলের দিকে এসো, তখন তারা বলে, আমাদের জন্যে তাই যথেষ্ট, যার উপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে পেয়েছি। যদি তাদের বাপ-দাদারা কোনো জ্ঞান না রাখে এবং হিদায়েত প্রাপ্ত না হয় তবুও কি তারা তাই করবে?[১৭]
সুতরাং হে আমার মুসলিম ভাই! আসুন, আমরা অধিকাংশ বা বাপ-দাদার থেকে পেয়েছি অজুহাত বাদ দিয়ে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর অনুসরণ করি।
[১] সূরা ইউসুফ : ৬৮।
[২] সূরা আল মায়িদাহ্ : ১০৩।
[৩] সূরা আল আন‘আম : ৩৭।
[৪] সূরা আল আন‘আম : ১১১।
[৫] সূরা আল আ‘রাফ : ১৩১।
[৬] সূরা ইউসুফ : ১০৩।
[৭] সূরা আল বাক্বারাহ্ : ৯৯-১০০।
[৮] সূরা আয্ যুখরুফ : ৭৮।
[৯] সূরা আল আ‘রাফ : ১০২।
[১০] সূরা আল আন‘আম : ১১৬।
[১১] সূরা ইউসুফ : ৩৬।
[১২] সূরা ইউসুফ : ১০৬।
[১৩] সূরা আশ্ শু‘আরা- : ২২১-২২৩।
[১৪] সূরা আস্ সাফ্ফাত : ৬৯-৭১।
[১৫] সূরা লুক্বমা-ন : ২১।
[১৬] সূরা আল বাক্বারাহ্ : ১৭০।
[১৭] সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ১০৪।
আপনার মন্তব্য