সাময়িক প্রসঙ্গ
ফিরকা নাজিয়া বা মুক্তিপ্রাপ্ত দল অদ্বিতীয় ও অবিভাজ্য
মাস্টার মহব্বত উল্লাহ্

মহান আল্লাহর অমীয় বাণী :
﴿وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ﴾
“যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আনুগত্য করে, তাদেরকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।”[১]
মহান আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, অন্যান্য নাবীদের উম্মাতরা ৭১ ও ৭২ ফিরকায়ে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মাত ৭৩ ফিরকায় বিভক্ত হবে। এদের মধ্যে ৭২ ফিরকা জাহান্নামী হবে। আর একটি ফিরকা তথা দল জান্নাতি হবে। সাহাবা (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হুমা) জিজ্ঞাসা করলেন, কোনো ফিরকাটি জান্নাতি হবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি ও আমার সাহাবারা যে নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত আছি, সেই নীতি অর্থাৎ- মহান আল্লাহর কুরআন ও আমার সুন্নাহ অর্থাৎ- সহীহ হাদীসের উপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তারাই জান্নাতী ফিরকাহ হবে। এই জান্নাতীদেরকে ফিরকায়ে নাজিয়াহ বা নাজাতপ্রাপ্ত ফিরকাহ বলা হয়। আহলে হাদীসরাই সেই ফিরকায়ে নাজিয়ার অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করেন।
নাজিয়াহ ফিরকার অন্তর্ভুক্ত হতে হলে মহান আল্লাহর প্রত্যেকটি আদেশ-নিষেধ যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পূর্ণ আনুগত্য করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন :
﴿وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيْعًا وَلَا تَفَرَّقُوْا ﴾
“হে মু’মিনগণ! তোমরা সকলে মিলে একত্রে আল্লাহর রজ্জুকে মজবুত করে ধারণ করো, সাবধান! তোমরা বিবাদ-বিসম্বাদ করে দলে দলে বিভক্ত হয়ো না।”[২]
অর্থাৎ- নাজি ফিরকা দাবি করলে আহলে হাদীস জামা‘আতকে দলে দলে বিভক্ত করা যাবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوْا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوْا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ﴾
“হে মু’মিনগণ! জেনে রাখো- মু’মিনরা পরস্পর সহোদর ভাইতুল্য; অতএব, তোমরা নিজেদের মধ্যে আত্মসংশোধনের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব সুদৃঢ় ও মজবুত করো।”[৩]
অতএব, নিজেদের মধ্যে কলহ-বিবাদ করে দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেলে মহান আল্লাহর নির্দেশ অবমাননা করা হয়। যা স্পষ্টতঃ ফিরকায়ে নাজিয়ার জন্য হারাম। অতএব, সকল বিরোধ মীমাংসা করে এক জামা‘আত বদ্ধ হওয়া একান্ত অপরিহার্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর পবিত্র ক্বালামে ঘোষণা করেন :
﴿إِنَّ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعًا لَسْتَ مِنْهُمْ فِيْ شَيْءٍ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ﴾
“নিশ্চয়ই যারা বিবাদ-বিসম্বাদ করে, আল্লাহর দ্বীনকে টুকরো টুকরো করে ভাগ করে নিয়েছে; হে রাসূল! তাদের সঙ্গে আপনার কোনোই সম্পর্ক নেই।”[৪]
অতএব, নাজি ফিরকার মধ্যে দলে দলে বিভক্ত হওয়াকে আল্লাহ তা‘আলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। যারা দলে দলে বিভক্ত হয়ে যায়, সেই সব বিভক্ত দলের সাথে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কোনোই সম্পর্ক নেই বলে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন :
﴿وَأَطِيْعُوْا اللهَ وَرَسُوْلَهُ وَلَا تَنَازَعُوْا فَتَفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ وَاصْبِرُوْا إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ﴾
“হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পুরাপুরি আনুগত্য করো এবং নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ বা বিবাদ-বিসম্বাদ সৃষ্টি করো না; যদি করো, তাহলে তোমাদের আত্মার শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তোমরা প্রাণহীন অকেজো হয়ে পড়বে। অতএব, ধৈর্য্য ধারণ করো। আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সঙ্গে আছেন।”[৫] আল্লাহ তা‘আলা আবারও বলেছেন :
﴿وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِيْنًا﴾
“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে সকল নির্দেশ দিয়েছেন কোনো মু’মিন পুরুষ বা মু’মিনা নারীর সে বিষয়ে বিপরীত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো অধিকার নেই।”[৬]
অর্থাৎ- বিবাদ-বিসম্বাদ সৃষ্টি করে দলে দলে বিভক্ত হওয়াকে আল্লাহ তা‘আলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহর এই নির্দেশ অবমাননা করা হারাম।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ وَالَّذِيْنَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلٰى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ﴾
“আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীরা কাফিরদের প্রতি অতীব কঠোর। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রহমতে ভরপুর।”[৭]
কাজেই] নাজি ফিরকার মু’মিনরা নিজেদের মধ্যে কঠোর বা নিষ্ঠুর হতে পারবে না। রহমতে ভরপুর হতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “নাজি ফিরকার মু’মিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক একটি মজবুত প্রাসাদের অনুরূপ, যার এক অংশ অপর অংশকে দৃঢ় করে।”[৮]
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন, “হে নাজি ফিরকার মু’মিনগণ! তোমরা ততক্ষণ মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা পরস্পর পরস্পরের মধ্যে মুহব্বতের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।”[৯]
কাজেই, নাজি ফিরকার মু’মিনগণের মধ্যে হানাহানি থাকবে না। এটাই আল্লাহ ও রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নির্দেশ।


[১] সূরা ফাত্হ ৪৮ : ১৭।
[২] সূরা আ-লি ‘ইমরান : ১০৩।
[৩] সূরা আল হুজুরা-ত : ১০।
[৪] সূরা আল আন‘আম : ১৫৯।
[৫] সূরা আল আনফাল : ৪৬।
[৬] সূরা আল আহ্যা-ব : ৩৬।
[৭] সূরা ফাতহ্ : ২৯।
[৮] সহীহুল বুখারী; সহীহ মুসলিম।
[৯] সহীহ মুসলিম।


আপনার মন্তব্য

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত