সাময়িক প্রসঙ্গ
গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোই ‘আমলের উপযুক্ত সময়
হারুনুর রশীদ ত্রিশালী
প্রথম খুতবাহ্
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله رب الأرض والسماوات، بيده الخيرات وهو الذي يغفر السيئات، ويصرف السوء والمكروهات، أحمد ربي وأشكره على نعمه وآلائه التي لا يحصيها إلا هو، ما علمنا منها وما لم نعلم، فهو ذو الفضل والحسنات. وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، مجيب الدعوات، وأشهد أن نبينا وسيدنا محمدا عبده ورسوله الداعي إلى الجنات والمؤيد بالمعجزات، اللهم صل وسلم وبارك على عبدك ورسولك محمد وعلى آله وصحبه السابقين إلى الأعمال الصالحات؛ أما بعد :
অতঃপর, আপনারা মহান আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করুন; তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে নৈকট্য লাভ করে এবং হারাম পরিহার করে তাঁর ক্রোধ ও শাস্তি থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে।
হে মুসলিম জাতি! আল্লাহ তা‘আলা আপনাদের উপর এই বরকতময় রামাযান মাসে অগণিত বরকত ও কল্যাণ প্রবাহিত করে দিয়েছেন, বিভিন্ন রকম সৎকাজের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন, হারাম ও মাকরূহ কাজ থেকে হিফাযত করেছেন। আর মৃত্যুর পর আপনাদের জন্য আপনাদের রব যে প্রতিদান রেখেছেন তাতে মু’মিন বান্দারা আনন্দিত হয় এবং তা পাবার জন্য প্রতিযোগীরা ভাল কাজে প্রতিযোগিতা করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“বলুন, ‘এটা আল্লাহর অনুগ্রহে ও তাঁর দয়ায়; কাজেই এতে তারা যেনো আনন্দিত হয়।’ তারা যা পুঞ্জীভূত করে তার চেয়ে এটা উত্তম।”
অতএব আপনারা একের পর এক সৎকাজ সম্পাদন করুন। বিশেষ করে রামাযানের শেষাংশে আরো বেশি ভাল কাজের প্রচেষ্টা করুন এবং সৎ ‘আমলকে বিনষ্টকারী বা তার সওয়াবকে হ্রাসকারী অন্যায় ও পাপকর্ম থেকে দূরে থাকুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “হে ঈমানদাগণ! তোমরা আল্লাহর অনুসরণ করো এবং রাসূলের অনুসরণ করো। আর তোমরা তোমাদের ‘আমলকে বিনষ্ট করো না।”
আমাদের রব পরম করুণাময় ও দয়ালু। তিনি আমাদের জন্য সৎকর্ম ও কল্যাণমূলক কাজের যাবতীয় দ্বার উম্মুক্ত করে দিয়েছেন; যেনো আমরা জীবনে অধিক পরিমাণে পুণ্য অর্জন করতে পারি। আপনি তো জানেন না, কোন ‘আমলটি ক্ববূল হবে এবং বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে বিপদ ও ভয় হতে রক্ষা করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “হে মু’মিনগণ! তোমরা রুকূ‘ করো, সাজদাহ্ করো এবং তোমাদের রবের ‘ইবাদত করো ও সৎকাজ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।”
আবূ যার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বলেন, “তুমি কোনো ভাল কাজকে তুচ্ছ মনে করো না, এমনকি সেটা তোমার কোনো মুসলিম ভাইয়ের সাথে হাসিমুুখে সাক্ষাৎ করা হোক না কেন।”[১]
যে ব্যক্তি সফলতা, উৎকর্ষতা ও চিরসুখের স্থায়ী জীবন পেতে চায় সে যেনো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে এবং বরকতপূর্ণ রাত্রিগুলোতে সৎ ‘আমলসমূহ সম্পাদন করে। কেননা যা গত হয়ে গেছে তা কখনো ফিরে আসবে না, আর গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোই হচ্ছে ‘আমল সম্পদান করার সময়। আর কল্যাণমূলক কাজ সম্পাদনই প্রত্যাশিত।
আবূ হুরাইরাহ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) হতে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : “সাতটি জিনিস প্রকাশ হওয়ার পূর্বেই তোমরা ভাল কাজের দিকে অগ্রসর হও- তোমরা কি অপেক্ষা করছো এমন দারিদ্রতার যা অমনোযোগী (অক্ষম) করে দেয়, অথবা এমন প্রাচুর্যের যা ধর্মদ্রোহী বানিয়ে ফেলে, অথবা এমন রোগ-ব্যাধির যা শারীরিক সামর্থ্যকে ধ্বংস করে দেয়, অথবা এমন বৃদ্ধাবস্থার যা জ্ঞান বুদ্ধিকে বিনষ্ট করে দেয়, অথবা এমন মৃত্যুর যা আচমকা সংঘটিত হয়, অথবা দাজ্জালের যা অপেক্ষমান অনুপস্থিত বিষয়ের মধ্যে নিকৃষ্টতর, অথবা ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার যা অত্যন্ত বিভীষিকাময় ও তিক্তকর।”[২]
হে মুসলমানগণ! আপনারা এখন এই বরকতপূর্ণ মৌসুমের শেষ দশকে অবস্থান করছেন। আর ‘আমলের ভাল-মন্দ নির্ভর করে তার শেষ অবস্থার উপর, ‘লাইলাতুল ক্বদর’ও এই দশকেই ভ্রাম্যমান থাকে। এর রাত্রিগুলো জেগে ‘ইবাদত করার তাওফীক্ব যে ব্যক্তি পায় তার পূর্বের গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হয়।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) হতে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি ‘লাইলাতুল ক্বদরে’ ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ‘ইবাদত করে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।”[৩]
প্রত্যেক মুসলিমই এ রজনীর বরকত ও কল্যাণ লাভ করতে পারে। এ রাতের ‘ইবাদত ‘লাইলাতুল ক্বদর’ বিহীন হাজার মাসের ‘ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এটা শুধু এই উম্মাতের জন্যই নির্দিষ্ট। তা মহান আল্লাহরই অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছে তিনি এটা দান করেন, আর আল্লাহ তা‘আলা মহা অনুগ্রহের অধিকারী।
হে মুসলিম জাতি! উম্মাতের উপর হতে বিপদ উঠিয়ে নেওয়ার জন্য আপনারা মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দু‘আ করুন। কেননা এই সম্মানিত মাসে আল্লাহ তা‘আলা আপনাদের দু‘আ ক্ববূল হওয়ার প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। মহান আল্লাহর কাছে আপনাদের উত্তম ‘আমলের অসিলা গ্রহণ করুন, কেননা তা দু‘আ কবুলের অন্যতম মাধ্যম। দয়াময় মহান আল্লাহর কাছে অনুনয় বিনয় প্রকাশ করুন যেনো তিনি বিশেষ করে এই দেশ থেকে এবং সাধারণভাবে সকল মুসলিম দেশ হতে এই মহামারীকে উঠিয়ে নেন। সেই সাথে তিনি যেনো সকল বান্দাদের উপর থেকে এটাকে উঠিয়ে নেন। কেননা মহান রব সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। পক্ষান্তরে মানবজাতি দুর্বল ও অক্ষম; তারা নিজেদেরই কোনো উপকার বা ক্ষতি সাধন করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অতিশয় দুর্বল করে।” তিনি আরো বলেন,
“তোমরা বিনিতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাকো; নিশ্চয় তিনি সীমালংঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। আর জমিনে শান্তি স্থাপনের পর তোমরা সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। আর আল্লাহকে ভয় ও আশার সাথে ডাক। নিশ্চয় আল্লাহর অনুগ্রহ মুহসিনদের খুব নিকটে।”
بارك الله لي ولكم في القرآن العظيم...
দ্বিতীয় খুতবাহ্
الحمد لله رب العالمين، الرحمن الرحيم، العزيز الحكيم، أحمد ربي وأشكره على ما أفاض علينا من النعم ودفع عنا من المصائب والنقم، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له العلي العظيم، وأشهد أن نبينا وسيدنا محمدا عبده ورسوله ذو الخلق الكريم، اللهم صل وسلم وبارك على عبدك ورسولك محمد وعلى آله وصحبه الناصرين لهذا الدين القويم؛ أما بعد :
আপনারা মহান আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করুন এবং ইসলামের রুজ্জুকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরুন।
হে মুসলমানগণ! আপনাদের রব আপনাদেরকে তাঁর এই বাণীর মাধ্যমে আহবান করে বলছেন : “হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করো- বিশুদ্ধ তাওবাহ্; সম্ভবতঃ তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেদিন আল্লাহ লাঞ্চিত করবেন না নাবীকে এবং তার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে।”
তিনি আরো বলেন, “হে মু’মিনগণ! তোমরা সকলেই আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।”
এই কঠিন সময়ে তাওবার সুযোগ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা আপনাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন।
আনাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) হতে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দার তাওবার কারণে তোমাদের ঐ লোকের চেয়েও বেশি খুশী হন, যে ব্যক্তি কোনো মরুভূমিতে তার বাহন (উট) হারিয়ে ফেলে, খুঁজে না পেয়ে গাছের নীচে ঘুমিয়ে পড়ে। অতঃপর ঘুম থেকে জেগে তার উটকে সামনে দ-ায়মান পেয়ে তার লাগাম ধরে খুশিতে আত্মহারা হয়ে বেখায়ালবশতঃ বলে ফেলে : হে আল্লাহ! আপনি আমার বান্দা, আর আমি আপনার রব!”[৪]
তাওবার পরিপন্থি কাজ করে তাওবাহ্ বিনষ্ট করবেন না। কুরআনের মাসে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করুন; এটাই আত্মার খাদ্য। এর মাধ্যমে প্রত্যেকের হৃদয় এই মাসেই বেশি উপকৃত হয়; এই কুরআন গুরুত্বপূর্ণ যিক্র, সরল পথ প্রদর্শক ও মানুষের মাঝে বিবাদমান বিষয়ে সঠিক ফয়সালা দাতা।
আল্লাহর বান্দাগণ! “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নাবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশ্তাগণ নাবীর জন্য দু‘আ-ইস্তিগফার করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নাবীর উপর দরুদ পাঠ করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।”
(খতীব : শাইখ ড. আলী বিন আব্দুর রহমান হুযাইফী। ১৫ মে- ২০২০ শুক্রবার প্রদত্ত খুতবার বঙ্গানুবাদ।)

[১] সহীহ মুসলিম।
[২] আত্ তিরমিযী। ইমাম আত্ তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
[৩] সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
[৪] সহীহ মুসলিম।


আপনার মন্তব্য

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত