[১ম পর্ব]
ভূমিকা : আল-হাদীস হলো ইসলামী শরী‘আতের দ্বিতীয় উৎস, যা আল-কুর’আনুল কারীমের ব্যাখ্যা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বাণী, কর্ম ও মৌনসম্মতিকে হাদীস বলা হয়। অনুরূপভাবে সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ীগণের কথা ও মৌনসম্মতিকে হাদীস বলা হয়। আল-হাদীসের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। আল কুর’আনের বাস্তব চিত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পুরো জীবনে ফুটে উঠেছে। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ীগণের যুগের কাফেরসহ ইসলাম পরিপন্থি কিছু অসাধু ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থ হাসিল ও ইসলামের ক্ষতিস্বাধন করার জন্য মূল হাদীসের অনুরূপ কিছু বানোয়াট হাদীস রচনা করে। মাওযূ‘ হাদীসের ভিত্তিতে ‘আমল আল্লাহ তা‘আলার নিকট গৃহীত হয় না। কারণ মাওযূ‘ হাদীস মানব রচিত। এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে যুগে যুগে ইসলামের একনিষ্ঠ খাদিম ও বিদগ্ধ হাদীসবেত্তাগণ যাচাই-বাছাই করার জন্য এমন এক প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেন, যা বিশ্বের ইতিহাসে অত্যাশ্চর্য্য বিষয় হিসাবে পরিগণিত হয়ে আছে। তাঁদের মধ্যে ইমাম ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লা-হ) ছিলেন অন্যতম। তিনি কিতাবুল মাওযূ‘আত মিনাল আহাদীসিল মারফূ‘আত গ্রন্থ রচনা করে বিশ্ববাসীকে মাওযূ‘ হাদীস সম্পর্কে সতর্কবাণী প্রদান করেন। ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লা-হ)-এর পূর্বে ও পরে অনেকেই মাওযূ‘ হাদীস সম্পর্কে গ্রন্থ রচনা করেন। আলোচ্য প্রবন্ধে মাওযূ‘ হাদীসের উৎপত্তি ও বিস্তার [ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লা-হ)-এর যুগ পর্যন্ত] বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
জাল হাদীসের পরিচয় : জাল শব্দটি বাংলা। এর আরবী আল-মাওযূ‘ (الموضوع)। শব্দটি বাংলা অভিধানে কৃত্রিম, মেকি, মিথ্যা, ছদ্মবেশী, কপট, নকল ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন- বলা হয়- জাল টাকা, জাল দলীল, জাল ঔষধ। মূলতঃ কাউকে ঠকানোর জন্য কৃত্রিম বা নকল বস্তু প্রস্তুত করা ইত্যাদি।[১]
অনুরূপভাবে ইংরেজীতে শব্দটি Disguised, Faked, Conceal ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়।
হাদীসের ক্ষেত্রেও শব্দটি একই অর্থ বহন করে। অর্থাৎ- মিথ্যা হাদীস, যা প্রকৃতার্থে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাদীস নয়। মিথ্যা হাদীস রচনা করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নামে চালিয়ে দেয়া। মুহাদ্দিসীনে কিরামের পরিভাষায় এটি আল-মাওযূ‘ (الموضوع) নামে অভিহিত।
موضوع শব্দটি কর্মবাচক (اسم مفعول)। এটি وضع – يضع থেকে উদ্ভূত। শব্দটির আভিধানিক অর্থ অপমান করা[২]। যেমন- اذلالا وتحقيرا وَضَعَهُ يَضْعُهُ وَضْعًا وضع وَضْعًا। প্রহার করা অর্থে যেমন- বলা হয়- وضع عنه اى ضربه, এছাড়াও মিথ্যা বলা, অপবাদ দেয়া, রচনা করা, নামানো বা ভূপাতিত করা, বাচ্চা প্রসব করা, ঘাটতি সৃষ্টি করা, মিলিয়ে দেয়া, মিথ্যা ঘটনা, স্থাপন করা[৩] প্রভৃতি জাল অর্থে ব্যবহৃত হয়।
ইবনু মানযূর আল-ইফরীকী (রাহিঃ) বলেন,[৪] وضع الشيى وَضْعًا -‘কোনো জিনিস তৈরি করা’। আয-যুবাইদী বলেন, ‘মাওযূ‘ হাদীস হলো- যা বানোয়াটভাবে রচিত’।[৫]
আল-মাওযূ‘ (الموضوع)-এর পারিভাষিক অর্থ : কিতাবুল মাওযূ‘আত মিনাল আহাদীসিল মারফূ‘আত গ্রন্থের মুহাক্কিক ড. নূরুদ্দীন ইবনু শুক্রী ইবনু ‘আলী বলেন, ‘ঐ মিথ্যা কথা যা রচনা করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নামে হাদীস বলে চালিয়ে দেয়া হয় তাই বানোয়াট হাদীস।’[৬]
‘আব্দুল করীম মুরাদ ও ‘আব্দুল মুহসীন আল-‘আব্বাস বলেন,
هو المختلق المكذوب على رسوْل الله ﷺ.
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নামে তৈরিকৃত মিথ্যা হাদীসকে মাওযূ‘ হাদীস বলে।[৭]
ড. মাহমূদ আত্-ত্বাহ্হান বলেন,[৮]
هو الكذب المختلق المصنوع المنسوب إلى رسول الله ﷺ.
‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দিকে সম্পর্কিত বানোয়াট মিথ্যা হাদীসকে মাওযূ‘ হাদীস বলে।’
হাফিয ইবনুস্ সলাহ (রাহিমাহুল্লা-হ) ও ইমাম নাববী (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন,[৯]
الموضوع : هو المختلق المصنوع.
‘মিথ্যা রটনাকে মাওযূ‘ হাদীস বলে।’
বদরুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনু সালামাহ্ আল-মারিদীনী (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন,[১০]
ما صح انه مكذوب.
‘যে হাদীস মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে তাই মাওযূ‘।’
ইমাম জালালুদ্দীন আস-সুয়ূতী (রাহিমাহুল্লা-হ) (মৃত- ৯১১ হি.) বলেন,[১১]
المكذوب ومختلق المصنوع هو الموضوع.
মনগড়া ও ‘মাওযূ‘ হাদীস হলো মিথ্যা হাদীস। আর এটিকে المختلق المصنوع (তৈরীকৃত হাদীস) বলা হয়, যা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক তা সবই মাওযূ‘।’
শাইখ জামালুদ্দীন (রাহিমাহুল্লা-হ) আল-কাসিমী বলেন,[১২]
المختلق المصنوع الكذب هو : موضوع.
‘মিথ্যাভাবে তৈরীকৃত হাদীস হলো মাওযূ‘ হাদীস।’
হাফিয আস্-সাখাভী (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নামে মিথ্যা হাদীস রচনা করাই হলো মাওযূ‘।’[১৩]
আল্লামা শাইখ তাহির আল-জাযায়িরী (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে মিথ্যা হাদীস রচনা করা, হোক তা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তা মাওযূ‘।’[১৪]
ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ (রাহিমাহুল্লা-হ) (মৃত- ৭২৮ হি.) মাওযূ‘ হাদীসের দু’টি সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
প্রথমতঃ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নামে মিথ্যা হাদীস রচনা করা।
দ্বিতীয়তঃ অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুলবশতঃ মিথ্যা হাদীস রচনা করা।[১৫] অর্থাৎ- উভয় প্রকার হাদীসই মাওযূ‘।
উপর্যুক্ত মতামতগুলোর আলোকে বলা যায়, যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) করেননি, বলেননি বা অনুমোদন দেননি এমন কথা ও কাজকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নামে চালিয়ে দেয়াকে মাওযূ‘ হাদীস বলে।
موضوع হাদীসের উৎপত্তি : জাল হাদীস রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জীবিত থাকাকালীন রচিত হয়নি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ইন্তিকালের ৪০ হিজরীর পরে ইসলামের বিশ্ববিজয়ী সুদৃঢ় ‘ইমারতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফাটল ধরলে গৌরাবধন্য ইসলামী খিলাফত দুঃখজনকভাবে বিভিন্ন দল উপ-দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। জন্ম নেয় খারিজী, শী‘আহ্, রাফিযী, মু‘তাযিলাহ, মুরজিয়াহ, ক্বাদারিয়াহ, জাবারিয়াহ প্রভৃতি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের। লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক দল তাদের স্ব স্ব মতাদর্শকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। এমনকি নিজেদের পক্ষে এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার হীন উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নামে মিথ্যা হাদীস রচনা করতেও তাদের হৃদয় সামান্যতম প্রকম্পিত হয়নি। আবূ বক্র (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু), ‘উমার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু), ‘উসমান (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) ও ‘আলী (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু)-এর নামে মিথ্যা হাদীস রচনা করতেও তাদের হৃদয় বাধাপ্রাপ্ত হয়নি। ‘উসমান (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু)-এর খিলাফতের শেষ দিকে এবং ‘আলী (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু)-এর শসনামলে মুসলিমদের মধ্যে যে সমস্ত রাজনৈতিক কোন্দল ও বিরোধের অভ্যুদয় ঘটেছিল মূলতঃ সেটিই ছিল জাল হাদীস রচনার প্রধানতম কারণ। এছাড়াও তৎকালীন সময়ে অনেকে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য, কেউ বিভিন্ন জাতি, গোত্র, ভাষা ইত্যাদির প্রশংসায়, কেউ কিচ্ছা-কাহিনীর মাধ্যামে, আবার কেউ আমীর-‘উমারাদের প্রিয়ভাজন হওয়ার জন্য সর্বোপরি অর্থ উপার্জন বা মোটা অংকের উপঢৌকন করায়ত্ত করার প্রত্যাশায়ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পবিত্র হাদীসকে কালিমালিপ্ত করেছে।[১৬]
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ইন্তিকালের পরে বিভিন্ন ধরনের ফিত্নার উদ্ভব হয়। মূলতঃ কিছু মুনাফিক্ব যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সময় জীবিত ছিল তাদের একান্ত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে মাওযূ‘ হাদীস রচনা করতে পারেনি। জাল হাদীস রচনা করা চরম ভয়াবহতার কাজ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,[১৭]
من كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.
‘যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যা হাদীস রচনা করল সে যেনো তার স্থান জাহান্নামে করে নিলো।’
এজন্যই আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবিত থাকাকালীন কেউ মাওযূ‘ হাদীস রচনা করতে সাহস পায়নি।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় সাহাবীগণের জীবনী থেকে যে ইতিহাস পাওয়া যায়, তাতে দেখা যায় তারা ছিলেন অত্যন্ত আল্লাহভীরু। এছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি অবিস্মণীয় ভালোবাসা ও বিশ্বাস তাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি মিথ্যা হাদীস রচনা করা থেকে বিরত রেখেছিল। উপরন্তু তারাই সাধারণ মানুষকে ইসলামের শাশ্বত বিধি-বিধানের প্রতি আহ্বান জানান। তারা এত বেশি তাক্বওয়াবান ছিলেন যে, যদি কোনো আমীর বা খলীফার ভুল তাদের দৃষ্টিগোচর হত তাহলে তারা সাথে সাথে তার প্রতিবাদ করতেন। প্রতিবাদ করতে তারা সামান্য দ্বিধাবোধ করেননি, ভয় করেননি, কোনো নিন্দা, মৃত্যু বা ক্ষতির চিন্তাও করেননি।
ইতিহাস, সীরাত ও জীবনচরিত আলোচনা করলে দেখা যায়, হিজরতের ৪০ বছর পর সুন্নাতের মধ্যে বিভিন্নভাবে বিভাজন প্রসিদ্ধি লাভ করে। ফিতনার প্রচার-প্রসার বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়। ‘আলী ও মু‘আবিয়াহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু)’র দ্বন্দ্বের কারণে মুসলিমরা রাজনৈতিক দলে বিভক্ত হয় এবং উদ্ভব হয় বিভিন্ন ধর্মতাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের। এ সমস্ত সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি চরিতার্থ করার জন্য জাল বা মিথ্যা হাদীস বানানোর আশ্রয় নেয়। এমনকি প্রত্যেকেই স্ব-স্ব রাজনৈতিক মতাদর্শের পক্ষে জাল হাদীস বানাতে আরম্ভ করে।
জাল হাদীস রচনাকারীরা প্রথমে যে গুপ্ত পথ রচনা করেছিল তা হলো বিভিন্ন ব্যক্তির ফযীলত সম্পর্কে মিথ্যা হাদীস রচনা করা। যেমন- মু‘আবিয়াহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু)-এর সমর্থকরা তাঁর সমর্থনে মিথ্যা হাদীস রচনা করে। অনুরূপভাবে ‘আলী (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু)-এর সমর্থকরা বিশেষ করে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার পর জোরালোভাবে মিথ্যা হাদীস রচনা করতে থাকে। এমনকি তারা তাঁদের ইমাম, দল ও উপদলের শীর্ষস্থানীয় লোকদের ফযীলত সম্পর্কে বহু জাল হাদীস রচনা করে। এ কাজ শী‘আহ্ দ্বারাই সর্বপ্রথম সূত্রপাত হয়।[১৮]
ইবনু ‘আব্দিল হাদীদ (রাহিমাহুল্লা-হ) (মৃ. ৬৫০ হি.) বলেন,[১৯]
اعلم أن أصل الكذب في احاديث الفضائل جاء من جهة الشيعة.
‘তোমরা জেনে রেখো ফযীলত সম্পর্কে যত মিথ্যা হাদীস রচিত হয়েছে এর মূলে হলো শী‘আরা।’
অধিকাংশ জাল হাদীস ইরাকের কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি দ্বারা রচিত হয়। হাদীসের ইমামগণও এর প্রতি ইংগিত করেছেন। যেমন- ইমাম যুহুরী (রাহিমাহুল্লা-হ) (মৃত : ১২৪ হি.) বলেন,[২০]
يخرج الحديث من عندنا شبرا فيرجع الينا من العراق ذراعا.
‘আমাদের নিকট থেকে হাদীস বের হয়ে যেত একবিঘত আর ইরাক থেকে আমাদের নিকট ফিরে আসত এক হাত হয়ে।’
ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লা-হ) (মৃত- ১৭৯ হি.) বলেন,[২১]
يسمي العراق دار الضرب.
‘ইরাক হলো জাল হাদীসের টাকশাল।’
টাকশালে যেমন টাকা বানিয়ে জনসাধরণের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়, তেমনি ইরাকে জাল হাদীস রচনা করে তা জনসাধরণের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ﴾
“তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে রাসূলের মধ্যে।”[২২]
আয়াতে বর্ণিত ‘উসওয়ায়ে হাসানা’ তথা উত্তম আদর্শ যা স্বর্ণাক্ষরে সন্নিবেশিত আছে হাদীসের মধ্যে। সে কারণেই তাঁর জীবদ্দশা থেকে শুরু করে গ্রন্থাকারে সংকলিত হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেকটি স্তরেই হাদীস সংরক্ষণের জন্য সকল প্রকার নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাদীস যেনো সংমিশ্রণমুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে বিন্দুমাত্রও ত্রুটি করা হয়নি, কিন্তু এতদসত্ত্বেও হাদীসের এ দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় দুষ্টপ্রকৃতির একশ্রেণির অসাধু লোক নিজেদের কথাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাদীস নামে চালিয়ে দেওয়ার সর্বাত্মক অপচেষ্টা চালিয়েছে। ‘ইলমুল হাদীসের পরিভাষায় এ ধরনের তৈরিকৃত হাদীসকে মাওযূ‘ হাদীস বলা হয়।
মাওযূ‘ হাদীসের সূচনাকাল সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ বিভিন্ন অভিমত পোষণ করলেও এ বিষয়ে প্রায় সকলেই একমত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় সাহাবীগণের মধ্যে কেউ কখনো তাঁর নামে মাওযূ‘ হাদীস তৈরী করেনি; বরং অনেক সাহাবী অসাবধানতাবশতঃ মিথ্যার অনুপ্রবেশের আশংকায় তাঁর থেকে বিশুদ্ধ হাদীস বর্ণনা করতেও ভয় করতেন।[২৩] এর অন্যতম কারণ ছিল হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাবধান বাণী-
من كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.
‘যে ব্যক্তি আমার নামে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে মিথ্যারোপ করে, সে যেন তার স্থান জাহান্নামে স্থির করে নেয়।’[২৪]
মাওযূ‘ হাদীস রচনার এ ভয়াবহ পরিণতির কথা শুনে সাহাবীগণ এতই ভীত হয়ে পড়েছিলেন যে, ভুলক্রমে কোথাও মিথ্যারোপিত হওয়ার ভয়ে কতিপয় সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নামে সহজে কোন কথাই বলতে চাইতেন না। ড. মুস্তাফা আস-সুবা‘ঈ বলেন, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে তাদের জান ও মাল দ্বারা সাহায্য করেছেন। ইসলামের জন্য তারা বিসর্জন দিয়েছেন দেশ ও আত্মীয়-স্বজন। তাঁদের দেহ-মনে মিশে আছে আল্লাহভীতি ও তাঁর প্রতি ভালোবাসা। যাদের মর্যাদা এই, তাদের ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে এ কল্পনা বড়ই দুঃসাধ্য যে, তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নামে মিথ্যা হাদীস রচনা করতেন। সাহাবীগণের ইতিহাস আমাদেরকে এ সন্ধান দেয় যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় হোক আর তাঁর ইন্তিকালের পরেই হোক, তাঁরা সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন মহান আল্লাহর পক্ষ হতে এক দৃষ্টান্তহীন তাক্বওয়ার উপর। যা তাদেরকে রোধ করে রাখত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নামে কোনো প্রকার মিথ্যা রচনা থেকে।[২৫]
শুধু তাই নয়, শরী‘আতের আহকামের প্রতি, সর্বোপরি শরী‘আত সংরক্ষণ ও মানুষের নিকট তা যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা ছিলেন বিশেষভাবে অনুরাগী ও সর্বাত্মক দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন।
শরী‘আতকে তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট থেকে যেভাবে গ্রহণ করতেন, অবিকল তা অন্যের নিকটে পৌঁছে দিতেন। এজন্য যে কোনো প্রকারের ত্যাগ স্বীকারেও তাঁরা সর্বদা প্রস্তুত থাকতেন। যখন তাঁরা দেখতে পেতেন যে, কোনো আমীর, খলীফা বা ব্যক্তি মহান আল্লাহর দ্বীন থেকে সামান্যতম বিচ্যুত হয়েছে তখনই তাঁরা তার প্রতিবাদে দাঁড়িয়ে যেতেন। ফলে অনাকাক্সিক্ষতভাবে যিনি ভুল করতেন সাথে সাথেই তিনি তা থেকে সংশোধনের সুযোগ লাভে ধন্য হতেন। ফলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় জাল হাদীসের সূচনা না হওয়ার বিষয়টি আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জীবদ্দশায় মাওযূ‘ হাদীস রচিত না হওয়া সম্পর্কে কয়েকটি ঘটনা না বললেই নয়। যেমন- দ্বিতীয় খলীফা ‘উমার ফারুক (রাযিঃ) একদিন জনতার উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় বলেন, হে লোক সকল! তোমরা স্ত্রীলোকদের মোহরানা নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। যদি তা (অধিক মোহরানা নির্ধারণ) সম্মানজনক হত তাহলে তোমাদের মধ্যে তা করার জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-ই ছিলেন উত্তম ব্যক্তি। তখন জনৈকা মহিলা দাঁড়িয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, ‘হে ‘উমার! আপনি থামুন, আল্লাহ আমাদেরকে যা প্রদান করতে চান আপনি কি তা থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করতে চাচ্ছেন? অথচ আল্লাহ বলেন,
﴿وَإِنْ أَرَدْتُمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنْطَارًا فَلَا تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا﴾
“তোমরা যদি এক স্ত্রীর পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করার ইচ্ছা করেই থাকো, তবে তাকে এক স্তুপ সম্পদ দিয়ে থাকলেও তা হতে কিছুই ফিরিয়ে নিবে না।’[২৬]
তখন ‘উমার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) এ কথা বলে স্বীয় সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এসে বললেন,
إمرأة أصابت ورجل أخطا. ‘একজন স্ত্রীলোক ঠিক বলেছে এবং একজন পুরুষ ভুল করেছে।’[২৭]
ইসলামের প্রথম খলীফা আবূ বক্র (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) যখন স্বধর্মত্যাগী ও যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন, তখন ‘উমার ফারুক (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) তাঁর বিরোধিতা করে বলেছিলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتّٰى يَقُوْلُوْا : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، فَمَنْ قَالَ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، فَقَدْ عَصَمَ مِنِّيْ نَفْسَهُ وَمَالَهُ، إِلَّا بِحَقِّها وَحِسَابُهُ عَلٰى اللهِ.
‘আমি আদিষ্ট হয়েছি লোকদের সাথে যুদ্ধ করতে যতক্ষণ না তারা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলে। অতঃপর যে ব্যক্তি ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, সে আমার থেকে তার জান ও মাল রক্ষা করল, তবে তার (কালিমার) হক্ব ব্যতীত। আর তার হিসাব (ফায়সালা) মহান আল্লাহর উপর।’[২৮]
তখন আবূ বক্র (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি إِلَّا بِحَقِّها বলনেনি? আর এ হক্বের মধ্যেই তো যাকাত রয়েছে। উল্লেখ্য যে, ‘উমার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু)-ই হলেন ঐ ব্যক্তি, যিনি সর্বপ্রথম আবূ বক্র (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু)-কে খলীফা বলে স্বীকার এবং তার নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেছিলেন। সেদিন তিনি অকপটে আবূ বক্র (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু)-এর মাহাত্ম ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করেছিলেন। এত গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ থাকা সত্ত্বেও তিনি যা হক্ব মনে করেছিলেন তা নিঃসংকোচে উপস্থাপন করতে দ্বিধাবোধ করেননি।[২৯]
‘উমার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) একবার জনৈকা গর্ভবতী ব্যভিচারিণীকে পাথর নিক্ষেপে হত্যার (রজম) নির্দেশ দিলে ‘আলী (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) সাথে সাথে তার প্রতিবাদ করেন। তিনি আমীরুল মু’মিনীনের উদ্দেশ্যে বলেন,
لئن جعل الله لك عليها سبيلا فإنه لم يجعل لك على ما فى بطنها سبيلا.
‘যদিও আল্লাহ তা‘আলা তাকে রজম করার একটা পথ আপনার জন্য করে দিয়েছেন; কিন্তু তিনি তো তার গর্ভের সন্তানের জন্য এ রকম কোন পথ দেননি।’
নিজের ভুল বুঝতে পেরে তৎক্ষণাৎ ‘উমার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) তাঁর নির্দেশ রহিত করে বলেন,
لولا على لهلك عمر.
‘আলী না হলে ‘উমার ধ্বংস হয়ে যেত।’[৩০]
উপরিউক্ত পর্যালোচনা ও সাহাবী জীবনের অন্যতম প্রসিদ্ধ ঘটনাবলি দ্বারা এ কথা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয় যে, সাহাবীগণ হক্ব ও সত্যের ব্যাপারে নির্ভীক ও সাহসী ছিলেন। সত্যের জন্য তাঁরা জীবন বিলিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করতেন না। কাজেই তারা যে দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে মিথ্যা রচনা করবেন তা অদৌ কল্পনা করা যায় না। এ প্রসঙ্গে আনাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন,[৩১]
والله ما كنا نكذب ولا كنا ندرى ما الكذب.
‘আল্লাহর কসম! আমরা কখনো মিথ্যা বলতাম না এবং মিথ্যা কি তাও জানতাম না।’
বারা‘ ইবনু ‘আযিব (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট থেকে যা শ্রবণ করেছি তা সবই তোমাদের নিকটে বর্ণনা করিনি। তাঁর নিকট থেকে আমরা যতটুকু শ্রবণ করার তা শ্রবণ করেছি। তা থেকে আমাদের সাথীগণ অর্থাৎ- সাহাবীগণ আমাদের নিকটে তা বর্ণনা করছেন সে ব্যাপারে মিথ্যা বর্ণনা করেননি।[৩২] [চলবে]
[১] শৈলেন্দ্র বিশ্বাস ও অন্যান্য, সংসদ বাঙ্গালা অভিধান (কলিকাতা :
সাহিত্য সংসদ, ৪র্থ সংস্করণ, নবম মুদ্রণ, ১৯৯১ খ্রি.), পৃ. ২৬২; বাং
একাডেমি সংক্ষিপ্ত বাং অভিধান (ঢাকা : বাংলা একাডেমি, দ্বিতীয় সংস্করণ,
১৯৯৬ খ্রি.)।
[২] মু‘জামুল কালিমাত মুতারাদিফাত আল-‘আরাবিয়্যাহ (ঢাকা : ইসলামিয়া কুতুবখানা, তা. বি.), পৃ. ১২৯।
[৩]
‘উমার ইবনু আহমাদ আয-যামাখশারী, আসাসুল বালাগাহ, ২য় খণ্ড (বৈরূত : দারুল
কুতুবুল ইলমিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪১৯ হি./১৯৯৮ খ্রি.), পৃ. ৩৪১; মুজামুল
কালিমাতি মুতারাদিফাত আল আরাবিয়্যাহ, ঢাকা, ইসলামিয়া কুতুবখানা।
[৪] ইবনু মানযূর আল-ইফ্রীকী, লিসানুল ‘আরাব, ৯ম খণ্ড (কায়রো : দারুল হাদীস, ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি.), পৃ. ৩৩০।
[৫] আয-যুবায়দী, তাজুল ‘উরুস, ১০ খণ্ড (দারু ইয়াহ্ইয়াইত তুরাছিল ‘আরাবী, তা.বি), পৃ. ৩৯৩।
[৬] ইবনুল জাওযী, কিতাবুল মাওযূ‘আত মিনাল আহাদীসিল মারফূ‘আত, ১ম খণ্ড (রিয়াদ : দারু ইযওয়াইস সালাফি, ১৪১৯ হি./১৯৯৭ খ্রি.), পৃ. ৪৯।
[৭] মিন আত্বইয়াবিল মিনাহ ফী ‘ইলমিল মুসত্বালাহ, সৌদি আরব, (মদীনা ইসঃ বিশ্ববিদ্যালয় : ১৪১১ হি.), পৃ. ৩১।
[৮] ড. মাহমূদ আত-ত্বাহ্হান, তায়সীরু মুসত্বালাহিল হাদীস (দিল্লী : কুতুবখানা ইশাআতুল ইসলাম, তা.বি.), পৃ. ৮৯।
[৯]
ইবনুস সালাহ, মুক্বাদ্দামাহ ইবনুস সালাহ ফী ‘উলূমিল হাদীস (বৈরূত : দারুল
কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৩৯৮ হি./১৯৭৮ খ্রি.), পৃ. ৪৭; জালালুদ্দীন
আস-সুয়ূত্বী, তাদরীবুর রাবী ফী শারহি তাক্বরীবিন নববী, তাহক্বীক্ব :
‘আব্দুল ওয়াহহাব ‘আব্দুল লতীফ, ১ম খণ্ড (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ,
৩য় সংস্করণ ১৪০৯ হি./১৯৮৯ খ্রি), পৃ.২৭৪।
[১০] আল-ওয়ায‘উ ফিল হাদীস, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০৮।
[১১]
ইব্নুল জাওযী, কিতাবুল মাওযূ‘আত মিনাল আহাদীসিল মারফূ‘আত, ১ম খণ্ড, পৃ.
৪৯; মুহাম্মাদ ইবনু হুসায়ন আল-‘ইরাকী, শারহুল আলফিয়াতুল ইরাকী (বৈরূত :
দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ), পৃ. ১২০, তাদরীবুর রাবী, ১ম খণ্ড (কায়রো : আল
মাকতাবাতুত তাওফীকিয়্যাহ, মিসর, ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.), পৃ. ২০৫।
[১২]
মুহাম্মাদ জামালুদ্দীন আল-কাসিমী, কাওয়ায়িদুত তাহদীস, ১ম খণ্ড (কায়রো :
‘ঈসা আল-বাবী আল-হালাবী, ১৯৯১ খ্রি.). পৃ. ২৭; হাফিজ ইবনু আল-কাসীর,
আল-বাইসুল হাদীস, পৃ. ৪২ (পাকিস্তান : দারুল ফিকর, মাদানী কুতুবখানা, ১৪০৬
হি./১৯৮৬ খ্রি.), পৃ. ৪২।
[১৩] গায়াহ ফি শারহিল হিদায়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮।
[১৪] আল-যাযাইর ত্বাহির ইবনু সালিহ, তাওজীহুন নুযূর, ২য় খণ্ড (কায়রো : তা.বি), পৃ. ৫৭৪।
[১৫]
ড. ‘উমার ইবনু হাসান ‘উসমান আল-ফালাতাহ, আল-ওয়ায‘উ ফিল হাদীস, ১ম খণ্ড
(বৈরূত : মাকতাবাতুল গাযালী; মুআস্সাসাতু মানাহিলিল ‘ইরফান, ১৪০১ হি./ ১৯৮১
খি.), পৃ. ১০৮।
[১৬] ড. মুস্তাফা আস-সুবা‘ঈ, আস-সুন্নাহ ওয়া মাকানাতুহা
ফিত-তাশরী‘ইল ইসলামী (বৈরূত : আল-মাকতাবাতুল ইসলামী, ৪র্থ সংস্করণ, ১৪০৫
হি./১৯৮৫ খ্রি,), পৃ. ৭৫।
[১৭] মুহাম্মাদ ইবনু ইসমা‘ঈল আল-বুখারী,
সহীহুল বুখারী, ২য় খণ্ড (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, তা.বি.), হাদীস
নং ৩৪৬১, পৃ. ৫০০।
[১৮] ড. আকরাম-আল ‘উমরী, বুহুসুন ফী তারীখিস সুন্নাহ
আল-মুশাররাফাহ (মদীনা মুনাওয়ারাহ : মাকতাবাতুল ‘উলূম ওয়াল-হাকাম, ৪র্থ
সংস্করণ, ১৪০৫ হি./১৯৮৪ খি.), পৃ. ২১; মুকাদ্দিমাতু ইবনুস্-সলাহ, পৃ. ৩৮;
ফাতহুল মুগীস, ১ম খণ্ড (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১৪১৭ হি./১৯৯৬
খ্রি.), পৃ. ১২৫; ড. মুস্তাফা আস-সুবা‘ঈ, আস্-সুন্নাহ ওয়া মাকানাতুহা
ফিত-তাশরী‘ইল ইসলামী, পৃ. ৭৬-৭৯।
[১৯] পূর্বোক্ত, পৃ. ৭৬।
[২০] পূর্বোক্ত, পৃ. ৭৯।
[২১] পূর্বোক্ত, পৃ. ৭৯।
[২২] সূরা আল আহ্যা-ব, ৩৩/২১।
[২৩] শামীম আরা চৌধুরী, হাদীস বিজ্ঞান (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২০০১ খ্রি), পৃ. ১৮৯।
[২৪] উদ্ধৃত হাদীসটি বিভিন্ন হাদীছ গ্রন্থে সামান্য পরিবর্তনসহ নিম্নোক্তভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
১। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আম্ র (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণিত হাদীসটি নিম্নরূপ-
أَنَّ
النَّبِيَّ ﷺ، قَالَ : ্রبَلِّغُوا عَنِّيْ وَلَوْ آيَةً، وَحَدِّثُوْا
عَنْ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ وَلَا حَرَجَ، وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ
مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِগ্ধ.
-সহীহুল বুখারী- ২য় খণ্ড, হাঃ ৩৪৬১, পৃ. ৫০০।
এ সম্পর্কে আবূ সা‘ঈদ আল-খুদরী (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণিত হাদীসটি নিম্নরূপ-
قَالَ
رَسُوْلَ اللهِ ﷺ : "لَا تَكْتُبُوْا عَنِّيْ، وَمَنْ كَتَبَ عَنِّيْ
غَيْرَ الْقُرْآنِ فَلْيَمْحُهُ، وَحَدِّثُوْا، وَلَا حَرَجَ، وَمَنْ
كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ".
-দ্র.
মুসলিম ইবনু হাজ্জাজ আল-কুশায়রী, মুসলিম, ১৮শ খণ্ড (বৈরূত : দারুল
মা‘রিফাহ, ৩য় সংস্করণ, ১৪১১৭ হি./১৯৯৬ খ্রি.), পৃ. ৩২৯, মুসলিম- মাঃ শাঃ,
৭২/৩০০৪।
‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি নিম্নরূপ-
عَنِ
النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ : ্রاتَّقُوْا الحَدِيْثَ عَنِّيْ إِلَّا عَلِمْتُمْ،
فَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ
النَّارِগ্ধ.
-দ্র. মুহাম্মাদ ইবনু ‘ঈসা আত-তিরমিযী, জা‘মিউত-তিরমিযী,
৫ম খণ্ড (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১ম প্রকাশ, ১৪০৮ হি./১৯৮৭
খ্রি.), হাঃ ২৯৫১, পৃ. ১৮৩, সুনান আত্ তিরমিযী- মাঃ শাঃ, হাঃ ২৯৫১, য‘ঈফ।
আপর একটি সূত্রে সহীহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, ৫নং হাদীসটি নিম্নরূপভাবে বর্ণিত-
إن كذبا على ليس ككذب على أحد وَمَنْ كَذَبَ على مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ.
[২৫] আস-সুন্নাহ ওয়া মাকানাতুহা ফিত-তাশরী‘ইল ইসলামী, পৃ. ৭৬।
[২৬] সূরা আন্ নিসা, ৪ : ২০।
[২৭]
আস-সুন্নাহ ওয়া মাকানাতুহা, পৃ. ৭৬; উল্লেখ্য যে, ‘উমার (রাযিঃ)-এর
খুৎবাহ্টি ইমাম আহমাদ (রাহিঃ) (মৃ. ২৪১ হি.) তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা
করেছেন। সুনান গ্রন্থ প্রণেতাগণ মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রাহিঃ) (মৃ. ১১০
হি.)-এর সূত্রে আবুল উযাফা আস-সুলামী থেকে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। দ্র.
আস-সুন্নাহ ওয়া মাকানাতুহা, টীকা- ৩, পৃ. ৭৬।
[২৮] সহীহুল বুখারী, ৪র্থ খণ্ড, হাঃ ৬৯২৪; পৃ. ৩৭২-৩৭৩, সহীহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, হাদীস নং- ১২৪, পৃ. ১৫০।
[২৯] আস-সুন্নাহ ওয়া মাকানাতুহা, পৃ. ৭৬-৭৭।
[৩০] পূর্বোক্ত, পৃ. ৭৭।
[৩১] আস-সুন্নাহ ওয়া মাকানাতুহা, পৃ. ৭৮; বুহুসুন ফী তারীখিস সুন্নাহ আল-মুশাররাফাহ, পৃ. ২১-২২।
[৩২] আরবী ভাষ্য :
ما كل نحدثكم عن رَسُوْلَ الله ﷺ سمعناه منه ما سمعناه منه ما حدثنا أصحابنا نحن لا نكذب.
দ্র. বুহুসুন ফী তারীখিস সুন্নাহ আল-মুশাররাফাহ, পৃ. ২১।
আপনার মন্তব্য