সাময়িক প্রসঙ্গ
জিজ্ঞাসা ও জবাব
ফাতাওয়া বোর্ড, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : আর তোমরা দীনের মধ্যে নতুন সংযোজন করা হতে সাবধান থেকো। নিশ্চয়ই (দীনের মধ্যে) প্রত্যেক নতুন সংযোজন বিদ্‘আত, প্রত্যেকটি বিদ্‘আতই ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম। (সুনান আন্ নাসায়ী- হাঃ ১৫৭৮, সহীহ)
প্রশ্ন (০১) : শীতকালে গৃহে কিংবা সফরে আমি সর্বদা মোযা পরিধান করে থাকি। অনুগ্রহপূর্বক মোযার উপর মাসেহ করার শর্ত-পদ্ধতি ইত্যাদি জানিয়ে কৃতার্থ করবেন।
মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
পঞ্চগড়, বাংলাদেশ।
জবাব : এক. মোযার ওপর মাসাহ করার শর্ত হলো- প্রথমে ওযূ করে মোযা পরিধান করতে হবে।[১] অতঃপর মোযা পরিধান অবস্থায় ওযূ ভেঙ্গে গেলে কেবল তখনই মোযার ওপর মাসেহ করা যাবে।
দুই. রাসূল (সাঃ) ও সাহাবীগণ চামড়ার তৈরি মোযা এবং সুতি ও পশমী মোটা মোযার ওপর মাসাহ করতেন।[২]
তিন. রাসূল (সাঃ) মুসাফিরের জন্যে তিনদিন-তিনরাত এবং নিজগৃহে বসবাসকারী মুকীমের জন্যে একদিন-একরাত (২৪ ঘণ্টা) মাসাহ করার সময়-সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।[৩]
পদ্ধতি : দুই হাত পানিতে ভিজিয়ে ডান হাতকে পায়ের সম্মুখভাগে অর্থাৎ- আঙুলের ওপর এবং বাম হাতের আঙুলগুলো পায়ের পিছনে গোঁড়ালির ওপর রাখতে হবে; অতঃপর উভয় হাত টেনে পায়ের গিঁটের ওপর অর্থাৎ- ওযূতে যে পরিমাণ ধোয়া হয় ততদূর টেনে নিয়ে আসতে হবে। উভয় পা একবার মাসাহ করতে হবে।[৪]
জ্ঞাতব্য : গোসল র্ফয হলে কিংবা মোযা খোলা অবস্থায় ওযূ বা তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ ঘটলে অথবা মুসাফির বা মুকীম অবস্থার মাসাহের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ওযূ বা তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ ঘটলে মোযা খুলে পবিত্রতা অর্জনপূর্বক পুনরায় ওযূ করে মোযা পরিধান করবে। -আল্লাহু আ‘লাম।
প্রশ্ন (০২) : আমি আমার পিতার কাছে কোনো পরামর্শ চাইলে তিনি সৎ পরামর্শ দেন এবং সাথে এ কথাও বলেন যে, ইস্তিখারা করে আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য কামনা করো। আমি কীভাবে ইস্তিখারা করবো?
সাকলাইন মোস্তাক
দক্ষিণ বনশ্রী, ঢাকা।
জবাব : নিঃসন্দেহে আপনার পিতা একজন আদর্শ পিতা। তিনি সঠিক কথাই বলেন। এখন জেনে নিন ইস্তিখারা সম্পর্কিত বিধান।
ইমাম ইবনু কাইয়্যিম (রহঃ) সাহাবী সা‘দ ইব্নু আবী ওয়াক্কাস (রাযিঃ) হতে মুসনাদ আহমাদ-এর বরাত উল্লেখ করে বলেছেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, বানী আদমের সৌভাগ্যের প্রতীক হচ্ছে তার কাজে আল্লাহ তা‘আলার নিকট তার ভাল-মন্দের পরামর্শ চাওয়া এবং তার নির্ধারিত অদৃষ্টের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা; আর ইস্তিখারা পরিত্যাগ করা তার দুর্ভাগ্যের প্রতীক এবং তার ভাগ্যে লিখিত অদৃষ্টের প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়াও তার হতভাগ্যতার কারণ।[৫]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইব্নু তাইমিয়াহ্ (রহঃ) বলতেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট ইস্তিখারা করার পর এবং তাঁর বান্দাগণের সাথে পরামর্শ করতঃ কাজ করে সে লজ্জিত হয় না।[৬]
কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করার আগে ইস্তিখারা করা ও আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করা উচিত। রাসূল (সাঃ) বলেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজে ইচ্ছা করবে, তখন সে যেন র্ফয সালাত ছাড়া দুই রাক‘আত (নফল) সালাত আদায় করে; অতঃপর নিম্নের দু‘আটি পাঠ করে।[৭]
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَعِيْنُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ، اَللّٰهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ - أَوْ قَالَ : فِيْ عَاجِلِ أَمْرِيْ وَآجِلِهِ - فَاقْدِرْهُ لِيْ، وَيَسِّرْهُ لِيْ، ثُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْهِ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ شَرٌّ لِيْ فِيْ دِيْنِيْ، وَمَعَاشِيْ، وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ - أَوْ قَالَ : فِيْ عَاجِلِ أَمْرِيْ وَآجِلِهِ-، فَاصْرِفْهُ عَنِّيْ، وَاصْرِفْنِيْ عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِيْ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ أَرْضِنِيْ بِهِ.
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্তাখীরুকা বি ‘ইলমিকা, ওয়া আস্তাকদিরুকা বি কুদরাতিকা, ওয়া আস আলুকা মিন ফাযলিকাল ‘আযীম, ফা ইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তা‘লামু ওয়ালা আ‘লামু, ওয়া আন্তা ‘আল্লা-মুল গুয়ূব। আল্লা-হুম্মা ইন্ কুন্তা তা‘লামু আন্না হা-যাল আমরা খাইরুল্ লী ফী দীনী ওয়া মা‘আ-শী ওয়া ‘আ-কিবাতি আমরী ‘আ-জিলিহী ওয়া আ-জিলিহি ফাকর্দুহু লী, ওয়া ইয়াস্সিরহু লী, সুম্মা বা-রিক লী ফীহি। ওয়া ইন কুনতা তা‘লামু আন্না হা-যাল আমরা শাররুল্ লী ফী দীনী ওয়া মা‘আ-শী ওয়া ‘আ-কিবাতি আমরী ‘আ-জিলি ওয়া আ-জিলিহী। ফাসরিফ্হু ‘আন্নী ওয়াসরিফ্নী ‘আনহু, ওয়াকদু লিয়াল খাইরা হাইসু কা-না, সুম্মা আরযিনী বিহী।
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি তোমার ‘ইল্মের ওয়াসীলায় তোমার কাছে উত্তম বিষয়টি জানতে চাই, আর তোমার সাহায্য চাই তোমারই কুদরতের ওয়াসীলায়, আর তোমারই কাছে তোমার অনুগ্রহ চাই। নিশ্চয়ই তুমি কর্মক্ষম, আর আমি অক্ষম। তুমি জ্ঞাত, আর আমি অজ্ঞাত। নিশ্চয়ই গায়িবের সমস্ত কিছুই তোমার জানা আছে। হে আল্লাহ! যদি তুমি মনে করো, এ কাজ (হা-যাল আমরা স্থলে নিজের প্রয়োজনের কথা স্মরণ করতে হবে) আমার জন্য উত্তম দীন ও দুনিয়ার জন্য এবং পরবর্তী জীবনের জন্য তাহলে সে কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও। অতঃপর আমার এই কাজে বরকত দান করো। আর যদি মনে কর, এ কাজ (হা-যাল আমরা স্থলে কাজ স্মরণ করতে হবে) আমার জন্য ক্ষতিকর আমার দীন, দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য, তাহলে তাকে আমার নিকট হতে দূরে সরিয়ে রাখ এবং আমাকেও তা হতে দূরে রাখো। আর যে কাজে কল্যাণ রয়েছে আমাকে দিয়ে তা সম্পন্ন করাও। অতঃপর আমার ওপর রাজী খুশী হয়ে যাও।[৮]
মনে রাখবেন, এ দু‘আটি পড়ার সময় হা-যাল আমরা শব্দের পরিবর্তে নির্দিষ্ট কাজটির উচ্চারণ করতে হবে, যার জন্যে ইস্তিখারা করা হচ্ছে। ইস্তিখারার সালাত দিন-রাত যে কোনো সময় পড়া যায়। তবে ‘ইশার সালাতান্তে অর্থাৎ- ঘুমানোর পূর্বে পড়া উত্তম এবং তারপর কথা বলা উচিত নয়। -আল্লাহু আ‘লাম।
প্রশ্ন (০৩) : আমাদের চারপাশে হিন্দু-মুসলিম, আত্মীয়-অনাত্মীয় পরিবারের বসবাস। এখন আমার প্রশ্ন হলো- প্রতিবেশি হিসেবে কারা অগ্রগণ্য?                                                  মুহাম্মদ ইবরাহীম
মাজেদ সরদার রোড, মুসলিম কলোনী, ঢাকা।
জবাব : প্রতিবেশি তিন প্রকার- এক. এমন প্রতিবেশি যে নিকটাত্মীয়, মুসলিম ও প্রতিবেশী। এ ক্ষেত্রে তার জন্যে রয়েছে তিনটি হক্ব বা অধিকার। অর্থাৎ- নিকটাত্মীয়ের অধিকার, মুসলিমের হক্ব বা অধিকার এবং প্রতিবেশির অধিকার।
দুই. এমন প্রতিবেশি যে মুসলিম ও প্রতিবেশি তবে তিনি নিকটাত্মীয় নন। এ ব্যক্তির রয়েছে দুটি অধিকার, অর্থাৎ- মুসলিম হওয়ার অধিকার ও প্রতিবেশির অধিকার।
তিন. এমন প্রতিবেশী যার ১টি অধিকার রয়েছে। তিনি হলেন শুধু প্রতিবেশী। অর্থাৎ- তিনি অমুসলিম প্রতিবেশী এবং তার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কও নেই। এ ব্যক্তির রয়েছে শুধু প্রতিবেশির অধিকার। অমুসলিম প্রতিবেশির সাথে সদাচরণ করতে হবে, তাদেরকে কষ্ট দেয়া যাবে না। তবে তাদের সাথে ঐরূপ সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না, যার ফলে বিলম্বে হলেও মুসলিমের পরিবারের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।[৯] -আল্লাহু আ‘লাম।
প্রশ্ন (০৪) : একজন অন্যজনকে সাধারণতঃ বলে থাকে যে, অমুকের সাথে দেখা হলে আমার সালাম দিবেন। বা ফোনে ও বলে থাকে অমুক কে আমার সালাম দিয়েন। এভাবে কি সালাম দেয়া ঠিক? কেননা এভাবে তো আসসালামুয়ালাইকুম পূর্ণভাবে বলা হয় না। শুধু সালাম বলা হয়?
মুহম্মদ আল আমীন
বাঘারপাড়া, যশোর।
জবাব : এভাবে সালাম পাঠানো জায়েয। যেমন- হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
فَاقْرَأْ عَلَيْهَا السَّلَامَ مِنْ رَبِّهَا وَمِنِّيْ.
হে নাবী! আপনি খাদিজাহ্কে তার রবের পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম দিন।”[১০]
জিবরা-ঈলের পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মাধ্যমে ‘আয়িশাহ্ (রাযীঃ)-কেও এভাবে সালাম দেয়ার কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন :
্রيَا عَائِشَةُ هَذَا جِبْرِيْلُ يَقْرَأُ عَلَيْكِ السَّلَامَগ্ধ.
হে ‘আয়িশাহ্! এই যে জিবারা-ঈল তোমাকে সালাম জানাচ্ছেন।”[১১]
তাই ইন্শা-আল্লাহ এভাবে একজনের পক্ষ থেকে আরেকজনের নিকট সালাম পাঠাতে কোনো সমস্যা নেই। -আল্লাহু আ‘লাম।
প্রশ্ন (০৫) : জানাযা সালাতে ইমাম কোথায় দাঁড়াবে? আমরা দেখতে পাই এ বিষয়ে দুই রকম নিয়ম চালু আছে, কিন্তু হাদীস দ্বারা কোন্ নিয়মটি সাব্যস্ত হয়? জানিয়ে বাধিত করবেন।
আবুল মানসুর
মোহনগঞ্জ, নেত্রকোণা।
জবাব : ইমাম দাঁড়ানোর দুইটি নিয়ম বলতে কি কি, তা উল্লেখ করেননি। যদি এর দ্বারা উদ্দেশ্যে হয় পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে বুক বরাবর দাঁড়ানো, তাহলে সেটি সহীহ নয়। পক্ষান্তরে সহীহ হলো ইমাম সাহেব পুরুষ মাইয়্যেতের মাথা বরাবর এবং মহিলা মাইয়্যেতের কোমর বরাবর দাঁড়াবেন। সাহাবী কা‘ব-এর মায়ের জানাযা সালাত আদায়কালে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর মাঝামাঝি অর্থাৎ- কোমর বরাবর দাঁড়িয়েছিলেন।[১২]
অপর বর্ণনায় এসেছে আবূ হামযাহ্ গালিব বলেন :
قَالَ : صَلَّيْتُ مَعَ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَلٰى جَنَازَةِ رَجُلٍ، فَقَامَ حِيَالَ رَأْسِهِ، ثُمَّ جَاءُوْا بِجَنَازَةِ امْرَأَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ، فَقَالُوْا : يَا أَبَا حَمْزَةَ صَلِّ عَلَيْهَا، فَقَامَ حِيَالَ وَسَطِ السَّرِيْرِ، فَقَالَ لَهُ العَلَاءُ بْنُ زِيَادٍ : هَكَذَا رَأَيْتَ النَّبِيَّ ﷺ قَامَ عَلٰى الجَنَازَةِ مُقَامَكَ مِنْهَا وَمِنَ الرَّجُلِ مُقَامَكَ مِنْهُ؟ قَالَ : ্রنَعَمْগ্ধ.
আমি আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ)-কে একজন পুরুষের জানাযার সালাত পড়াতে দেখলাম। তিনি লোকটির মাথা বরাবর দাঁড়ালেন। অতঃপর অপর এক মহিলার জানাযা নিয়ে আসা হলো। লোকেরা বললেন : হে আবূ হামযাহ্ [আনাস (রাযিঃ)] আপনি এ মহিলার সালাত আদায় করুন। অতঃপর তিনি তার কোমর বরাবর দাঁড়ালেন। ‘আলা ইবনু যিয়াদ বললেন : হে আবূ হামযাহ্! আপনি কি রাসূল (সাঃ)-কে পুরুষের মাথা বরাবর এবং মহিলার কোমর বরাবর দাঁড়াতে দেখেছেন? তিনি বললেন : হ্যাঁ।[১৩] -আল্লাহু আ‘লাম।
প্রশ্ন (০৬) : আমি একজন যুবক। আমি ছাত্র। লেখাপড়া শেষ করে চাকুরী নিয়ে বিবাহ করা ছাড়া কোন উপাই দেখি না। কিন্তু আমার যৌবনের চাহিদা আমাকে অনেক সময় ব্যাকুল করে তোলে। এই অবস্থায় আমার করণীয় কী?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
জবাব : আপনার উপর করণীয় হলো- বিবাহের সামর্থ অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত ধৈর্যের পথ অবলম্বন করা। বিবাহের সামর্থ অর্জন হলে বিবাহ করা। অন্যথায় আপনার করণীয় কি তা নিম্নের হাদীসের আলোকে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করছেন,
্রيَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ البَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ، فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌগ্ধ.
“হে যুবকেরা! তোমাদের যার বিবাহ করার সামর্থ্য রয়েছে সে যেন বিবাহ করে। এটি দৃষ্টিকে অধিক অবনমিতকারী ও লজ্জাস্থানের সুরক্ষাকারী, আর যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে না সে যেন সিয়াম পালন করে, এটি তার জন্য খাসী হওয়া।”[১৪]
আপনার বর্তমান অবস্থায় চারিত্রিক নিষ্কলুষতা অটুট রাখতে সর্ব প্রথম আপনার চোখকে হিফাযত করতে হবে। হারাম দৃষ্টি থেকে নিজেকে হিফাযত করতে পারলে পাপের উদ্রেক ও প্ররোচনা দানকারী অনেক উপাদান থেকে আপনি বাঁচতে পারবেন। সেই সাথে নিয়মিত নফল সিয়ামসমূহ পালন করতে পারেন। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন সেই নসীহতই আমাদের করেছেন নিম্নের আয়াতে। যেমন- তিনি বলেন :
﴿قُلْ لِلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ ذٰلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا يَصْنَعُوْنَ﴾
“মু’মিনদের বলে দিন, তারা যেন তাদের চোখগুলোকে অবনমিত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এটি তাদের জন্য অধিক পবিত্রার মাধ্যম, তারা যা করে আল্লাহ তা সম্যক অবগত।”[১৫]
বাস্তবে নারীদের দিকে কিংবা ছবি, ভিডিও ইত্যাদি দেখার ক্ষেত্রে যে সকল নারীর দিকে তাকানো বৈধ নয় সেসব নারী থেকে চোখকে হিফাযত রাখতে হবে।
আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছে নিজের ধৈর্য ও পবিত্রতার জন্য তাওফীক্ব চাইবেন। দীনী কর্মকাণ্ডে নিজেকে ব্যপৃত রাখবেন। কুরআন ও হাদীস অধ্যয়ন করবেন। সাহাবাগণসহ নেক্কার মুসলিমগণের জীবনী অধ্যয়ন করবেন এবং সর্বদা ভাল লোকদের সঙ্গী হবেন। -আল্লাহু আ‘লাম।
প্রশ্ন (০৭) : একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, যিনার সন্তান জান্নাতে যাবে না। এখন আমার প্রশ্ন হলো, স্বীয় নেক ‘আমলের জন্য “যারজ সন্তান কি জান্নাতে যাবে না” দয়া করে জানাবেন।
রায়হান কবীর
ঈশ্বরদী, পাবনা।
জবাব : “যারজ সন্তান জান্নাতে যাবে না” কথাটা সত্য নয়। মা ‘আয়িশাহ্ (রাযীঃ) বলেন :
مَا عَلَيْهِ مِنْ وِزْرِ أَبَوَيْهِ شَيْءٌ، قَالَ اللهُ تَعَالٰى ﴿لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى﴾.
“বাবা-মার পাপের বোঝা তার উপর বর্তাবে না। কেননা আল্লাহ বলেন : “একের বোঝা অপরে বহন করবে না”[১৬]।[১৭] তবে যে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, নাবী কারীম (সাঃ) বলেন :
لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَاقٌّ، وَلَا مَنَّانٌ، وَلَا مُدْمِنُ خَمْرٍ وَلَا وَلَدُ زِنْيَةٍ.
“পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, দান করে খোঁটা দানকারী, মদ্য পানকারী এবং যিনার সন্তান জান্নাতে যাবে না।”[১৮]
এখানে “যিনার সন্তান” বলে যিনাকারীকে বুঝানো হয়েছে। কেননা যিনা তার মজ্জাগত স্বভাবে পরিণত হওয়ায় যেন সে ‘যিনার সন্তান’ হয়েছে। যেমন- আরবীতে ‘পথিক’-কে (اِبْنُ السَّبِيْلِ) ‘পথের সন্তান’ বলা হয়। কেননা সে পথে চলতে চলতে যেন সে পথেরই সন্তান হয়ে গেল। অনুরূপভাবে দুনিয়া প্রেমিকদের আরবীতে (اِبْنُ الدُّنْيَا) বা ‘দুনিয়ার সন্তান’ বলা হয়ে থাকে। যেহেতু দুনিয়া তার মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে।[১৯]
এ ব্যাখ্যা গ্রহণ করা না হলে উপরোল্লিখিত আয়াত ও হাদীসের মাঝে দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হবে, যা আল্লাহর বিধানে অসম্ভব ও অকল্পনীয়। আল্লাহ তা‘আলা অধিক অবগত।
প্রশ্ন (০৮) : একদা আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছে যে, পুরুষরা হাতে বা নখে মেহেদি লাগাতে পারবে না। এ সম্পর্কিত শরঈ বিধান জানিয়ে কৃতার্থ করবেন।
শহিদুল্লাহ সাদ
কুর্মিটোলা, ঢাকা।
জবাব : সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে পুরুষদের হাতে বা নখে মেহেদী ব্যবহার বৈধ নয়। তবে ঔষধ হিসেবে উপকারাধী তা বৈধ রয়েছে। পুরুষ ব্যক্তি দাড়ি বা চুলে মেহেদী রং ব্যবহার করতে পারে। স্বাভাবিক সৌন্দর্য সৃষ্টি উদ্দেশ্যে এবং বিবাহ, কদর রজনী ইত্যাদিতে পুরুষ ব্যক্তির হাতে, নখে মেহেদী ব্যবহার বৈধ নয়।
মহিলাদের ক্ষেত্রেই হাতে বা নখে রঙানো বৈধ। মহানাবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেন,
্রلَوْ كُنْتِ امْرَأَةً لَغَيَّرْتِ أَظْفَارَكِগ্ধ يَعْنِىْ بِالْحِنَّاءِগ্ধ.
“তুমি নারী হলে তোমার নখে রাঙাতে (মেহেদী দ্বারা)।”[২০]
হাদীসের ব্যাখ্যা “আওনুল মা‘বূদ”-এ বলা হয়েছে- “যদি তুমি তোমার নারী বৈশিষ্ট অক্ষুণ্ন রাখতে যত্মশীল হতে, তবে তোমার হাত রাঙাতে।”[২১]
তাই নারী বৈশিষ্টের এই সৌন্দর্য ধারণ করা পুরুষদের জন্য জায়িয নয়। ইবনু মাস‘ঊদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে-
্রلَعَنَ اللهُ الْمُتَشَبِّهِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ والمتشبِّهات من النِّسَاء بِالرِّجَالِগ্ধ.
আল্লাহ সেসব পুরুষদের প্রতি লা‘নাত করেছেন যারা মহিলাদের বেশ ধারণ করে। আর ঐসব মহিলাদের প্রতি লা‘নাত করেন যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে।[২২] -আল্লাহু আ‘লাম।
প্রশ্ন (০৯) : বিকাশের এজেন্ট বা কাস্টমার কেয়ারে চাকরি করা কিংবা বিকাশে টাকা লেনদেন করা কি জায়িয হবে কী?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
জবাব : প্রথমতঃ আমাদেরকে বিকাশ সম্বন্ধে জানতে হবে। বিকাশ (Bkash) মূলতঃ ব্র্যাক ব্যাংকের উদ্যোগে পরিচালিত মোবাইল ফোনভিত্তিক অর্থ আদান-প্রদানমূলক একটি পরিসেবা।
এ কথা সুবিদিত যে, ব্র্যাক ব্যাংক একটি সূদভিত্তিক ব্যাংক। সুতরাং তার উদ্যোগে পরিচালিত বিকাশে সুদ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বিকাশের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট বলা হয়েছে- “আপনি বিকাশ একাউন্টে টাকা জমিয়ে বছরে ৪% পর্যন্ত ইন্টারেস্ট পেতে পারেন। আর এ কথা অজানা নয় যে, ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ ভয়ানক হারাম, ধ্বংসাত্মক কাবীরাহ গুনাহ এবং অভিশাপ যোগ্য কাজ হিসেবে পরিগণিত। আর আল্লাহ সুদকে হারাম ঘোষণা করেছেন।[২৩] আর মুসলিমে জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত-
لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ.
সুদ গ্রহীতা, সুদ দাতা, সুদের লেখক এবং সাক্ষীদ্বয়কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, তারা সকলেই সমান (গুনাহগার)।[২৪]
সুতরাং ব্র্যাকের বিকাশ শাখায় এজেন্ট হিসেবে কাজ করা বা এর কাস্টমার কেয়ারে চাকরি করা সুদি ব্যাংকের অধীনে চাকরি করারই নামান্তর। এটা যেমন হারাম তেমনি তার প্রচার-প্রসার করা, বিজ্ঞাপন দেয়া, এ জন্য ঘর ভাড়া দেয়া, বিকাশ অ্যাপ রেফার করে বা বিকাশ অ্যাপে বার্ড নামক গেইম খেলে টাকা কামানো ইত্যাদি সবই হারাম। কারণ এগুলোর মাধ্যমে তাদের সুদি কার্যক্রমকে সমৃদ্ধ ও ব্যাপ্তিতে সহায়তা করা হয়। আর আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহায়তা করতে নিষেধ করেছেন।[২৫] তবে বিকল্প উপায় না থাকলে জরুরি প্রয়োজনে বিকাশের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করা যাবে। -আল্লাহু আ‘লাম।

[১] বুখারী- ২০৬; মুসলিম- ২৩২; ফিকহুস সুন্নাহ- ১৫৩ পৃঃ।
[২] সুনান আবূ দাঊদ- হা. ১৫৯; জামি‘ আত্ তিরমিযী- ৯৯।
[৩] সহীহ্ মুসলিম- হা. ২৭৬; তাহ্ক্বীক্ব মিশকাত- ৩০৯ পৃঃ।
[৪] আবী শায়বাহ্- ১/১৮৫ ও ১৮৭ পৃঃ, বুলূগুল আমীন- ৩/৭০ পৃঃ।
[৫]. মুসনাদ আহমাদ- হা. ১৪৪৪।
[৬]. আলওয়া বিলুস সাইয়িব- ১৬৪ পৃঃ।
[৭]. সহীহুল বুখারী- হা. ১১৬২; মিশকাত- হা. ১৩২৩।
[৮] সুনান নাসায়ী- হা. ৩২৫৩।
[৯]. আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব- ১/২৬৭ পৃঃ, মাঃ শাঃ।
[১০] সহীহুল বুখারী- হাঃ ৩৮২০, মানকিবুল আনসার, খাদীজাহ্ (রাযীঃ)-এর সাথে রাসূল (সাঃ)-এর বিবাহ ও তার মর্যাদা।
[১১] সহীহুল বুখারী- ৩২১৭, ৬২৪৯ ও সহীহ মুসলিম।
[১২] সহীহ মুসলিম- হা: ৮৭/৯৬৪।
[১৩] আবূ দাঊদ- ৩১৯৪; আত্ তিরমিযী- হা: ১০৩৪, সহীহ।
[১৪] সহীহুল বুখারী- হা: ১৯০৫, ৫০৬৫।
[১৫] সূরা আন্ নূর ২৪ : ৩০।
[১৬] সূরা আল আন‘আম ৬ : ১৬৪।
[১৭] মুসান্নাফ আব্দুর রায্যাক- হা: ১৩৮৬০, আলবানী ইসনাদ হাসান, সিল্সিলাহ সহীহাহ্- ২১৮৬।
[১৮] আহমাদ- ৬৮৯২, দারিমী- ২০৯৩, ইবনু হিব্বান- ৩৩৮৩, আলবানী হাদীসটি হাসান-এর পর্যায়ের, সহীহাহ- ৬৭৩।
[১৯] সিল্সিলাহ সহীহাহ্- ২/২৮৩।
[২০] আবূ দাঊদ- ৪১৬৬, হাসান; আন্ নাসায়ী- ৫০৮৯, হাসান।
[২১] আওনুল মা‘বূদ- হা: ৪১৬৬-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
[২২] সহীহুল বুখারী, মিশকা-তুল মাসা-বীহ- হা: ৪৪২৯।
[২৩] সূরা আল বাক্বারাহ্- ২৭৫।
[২৪] সহীহ মুসলিম।
[২৫] সূরা আল মায়িদাহ্- ২।


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 5:43:02 সূর্যাস্ত : 6:09:54

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত