খতীব : শাইখ ড. হুসাইন আলুশ-শাইখ
সম্পাদনায় : আব্দুল মতিন
শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক- জমঈয়ত শুব্বানে আহলে আহলে হাদীস বাংলাদেশ ও যুগ্ম-পরিচালক, শুব্বান রিসার্চ সেন্টার।
২৬ জুন- ২০২০ শুক্রবার প্রদত্ত খুতবার বঙ্গানুবাদ
।।। প্রথম খুৎবাহ্ ।।।
الحمد لله أولا وآخرا، ظاهرا وباطنا، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له في الآخرة والأولى. وأشهد أن سيدنا ونبينا محمدا عبده ورسوله، اللهم صل وسلم وبارك عليه وعلى أصحابه الأوفياء، أما بعد :
আল্লাহর বান্দাগণ! মানুষের জন্য দুনিয়াতে সবচেয়ে বড় নি‘আমত হলো শারীরিক সুস্থতা। দুনিয়াতে অন্য যে কোনো নি‘আমত, তা যত বড় হোক না কেনো, তার বরাবর হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সুস্থতা ও রোগমুক্তি দিয়েছেন বিধায়, এটার কদর ও স্বাদ তারাই জানে যারা রোগ যন্ত্রণার তিক্ততা আস্বাদন করেছে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকেই সুস্থ রাখুন। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “এমন দু’টি নি‘আমত আছে যে ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ ধোঁকায় নিপতিত : সুস্থতা ও অবসর সময়।”[১]
মুসলিম ভাইয়েরা! প্রকৃতপক্ষে সৌভাগ্যবান সেই লোক যে কোনো নি‘আমত লাভ করে তার হক্ব আদায় করেছে এবং যথাযথ মূল্যায়ন করেছে। হে মুসলিম! আল্লাহ তা‘আলার ‘ইবাদত ও আনুগত্যমূলক কাজের মাধ্যমে সুস্থতার নি‘আমতের শুকরিয়া আদায় করা আবশ্যক। সে ক্ষেত্রে র্ফয/ওয়াজিব আদায় করা, নির্দেশিত বিষয়ে যত্নশীল হওয়া, যাবতীয় অন্যায়-অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা এবং নফল ‘আমল ও সৎকাজে অগ্রসর হতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “আর তোমরা তীব্র গতিতে চলো নিজেদের রবের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমানসমূহ ও যামীনের সমান, তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাক্বীদের জন্য।”[২]
আর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “সাতটি জিনিস প্রকাশ হওয়ার পূর্বেই তোমরা ভাল কাজের দিকে অগ্রসর হও : তোমরা কি অপেক্ষা করছ এমন দারিদ্র্যতার যা অমনোযোগী (অক্ষম) করে দেয়, অথবা এমন প্রাচুর্যের যা ধর্মদ্রোহী বানিয়ে ফেলে, অথবা এমন রোগ-ব্যাধির যা শারীরিক সামর্থ্যকে ধ্বংস করে দেয়, অথবা এমন বৃদ্ধাবস্থার যা জ্ঞান-বুদ্ধিকে বিনষ্ট করে দেয়, অথবা এমন মৃত্যুর যা আচমকা সংঘটিত হয়, অথবা দাজ্জালের যা অপেক্ষমান অনুপস্থিত বিষয়ের মধ্যে নিকৃষ্টতর, অথবা ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার যা অত্যন্ত বিভীষিকাময় ও তিক্তকর।”[৩]
হে মুসলিম ভাইয়েরা! যদি কোনো মুসলিম ইখলা-স ও নিষ্ঠার সাথে মহান আল্লাহর ‘ইবাদত পালন করে, তবে সে সর্বাবস্থায় মহাকল্যাণ ও প্রতিদানের উপর রয়েছে। এমতাবস্থায় যে ব্যক্তি রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ধৈর্য্য ধারণ করে ও সওয়াবের প্রত্যাশা করে, সে ব্যক্তির সম্মান বৃদ্ধি পায় ও গুনাহ মোচন করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “আর আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির দ্বারা। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্য্যশীলদেরকে।* যারা তাদের ওপর বিপদ আসলে বলে, আমরা তো মহান আল্লাহরই। আর নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।* এরাই তারা যাদের প্রতি তাদের রবের কাছ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ এবং রহমত বর্ষিত হয়, আর তারাই সৎপথে পরিচালিত।”[৪]
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “যে কোনো মুসলিমের উপর কোনো কষ্ট বা রোগ-ব্যাধি হলে আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহগুলো ঝরিয়ে দেন, যেমনভাবে গাছ তার পাতাগুলো ঝরিয়ে দেয়।”[৫]
অপর হাদীসে এসেছে যে, একদা রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উম্মু সায়েব (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা)-এর কাছে গেলেন এবং বললেন : হে উম্মু সায়েব! তোমার কী হয়েছে, তুমি কাঁদছ কেন? ” তিনি বললেন : ভীষণ জ্বর, একে আল্লাহ তা‘আলা বর্ধিত না করুন। তখন তিনি (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : “তুমি জ্বরকে গালমন্দ করো না, কেননা জ্বর আদম সন্তানের পাপ মোচন করে দেয়, যেভাবে হাঁপর লোহার মরীচিকা দূরীভূত করে দেয়।”[৬]
আল্লাহ তা‘আলার বিশাল নি‘আমতের অন্যতম যে, তিনি অসুস্থ বান্দাদের সেই পরিমাণে প্রতিদান দেন যা সে সুস্থাবস্থায় ‘আমল করে পেত। যেমন- হাদীসে এসেছে- রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : “যখন বান্দা অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য ওই পরিমাণ সওয়াব লিপিবদ্ধ করেন যা সে সুস্থাবস্থায় ‘আমল করত।”[৭]
যিনি রোগ-ব্যাধিতে ভুগছেন তিনি জেনে রাখুন যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার অতি নিকটেই রয়েছেন। অতএব, তাঁর কাছে আশ্রয় চান; তাঁর কাছেই নিরাপত্তা ও সুস্থতা প্রার্থনা করুন, সেই সাথে সুচিকিৎসা গ্রহণ করুন; এটাই প্রকৃত তাওয়াক্কুলের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহই আপনার বিপদ দূর করবেন এবং রোগ মুক্তি দিবেন। কুরআনে এসেছে- নাবী ইব্রা-হীম (‘আলাইহিস্ সালাম) বলেন : “আর আমি যখন অসুস্থ হই, তখন তিনিই (আল্লাহ তা‘আলা) আমাকে সুস্থ করে তুলেন।”[৮] মহান আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের ব্যাপারে পূর্ণ বিশ্বাস রাখুন, তিনিই আরোগ্যদাতা, সবকিছুর ব্যাবস্থাপক। তিনি বলেন : “কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি আছে।* অবশ্যই কষ্টের সাথে স্বস্তি আছে।”[৯]
।।। দ্বিতীয় খুৎবাহ্।।।
الحمد لله وحده، والصلاة والسلام على النبي محمد، وعليه أفضل الصلاة والتسليم، أما بعد :
হে মুসলমানগণ! মানুষ যতই শক্তিমান ও ক্ষমতাধর হোক না কেনো, জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসর হোক না কেনো; দুর্বলতা ও অক্ষমতা তাদের মাঝে থাকবেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “আর তোমাদেরকে জ্ঞান হতে অল্পই দেয়া হয়েছে।”[১০] তিনি আরো বলেন : “আর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দুর্বল করে।”[১১] সকল দিক বিবেচনায় পূর্ণ শক্তিমত্তা ও পরাক্রমশীলতা একমাত্র মহান আল্লাহর গুণ, যিনি প্রবল, পরাক্রান্ত ও সবকিছুর প্রকৃত মালিক। তিনিই সকল কিছু পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন। সকল কিছু তাঁর দ্বারা নির্ধারিত, পরিমিত এবং তাঁরই ইচ্ছাধীন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “হে মানবসকল! তোমরা তো আল্লাহর মুখাপেক্ষী, কিন্তু আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রশংসনীয়।” অতএব আমরা যেনো তাঁরই ‘ইবাদত ও আনুগত্যে মনযোগী হই, তাঁর কাছেই মিনতি করি এবং তাঁর সান্নিধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “হে মু’মিনগণ! তোমরা সকলেই আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করো, যেনো তোমরা সফলকাম হতে পারো।”[১২]
[১] সহীহুল বুখারী।
[২] সূরা আ-লি ‘ইমরান : ১৩৩।
[৩] আত্ তিরমিযী- ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
[৪] সূরা আল বাক্বারাহ্ : ১৫৫-১৫৭।
[৫] সহীহ মুসলিম।
[৬] সহীহ মুসলিম।
[৭] সহীহুল বুখারী।
[৮] সূরা আশ্ শূরা- : ৮০।
[৯] সূরা আলাম নাশরাহ : ৫-৬।
[১০] সূরা ইস্রা : ৮৫।
[১১] সূরা আন্ নিসা : ২৮।
[১২] সূরা আন্ নূর : ৩১।
আপনার মন্তব্য1