সাময়িক প্রসঙ্গ
করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত ও বিপন্ন মানবতার সেবা সময়ের দাবী
অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মাদ রঈসুদ্দীন
পৃথিবীব্যাপী চলছে মহামারী করোনা ভাইরাস। যার প্রাদুর্ভাবে সবাই চরমভাবে আতঙ্কগ্রস্ত। বাংলাদেশে প্রতিদিন কেবল মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এখন আর কোথাও তেমনটি লক-ডাউন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। অফিস-আদালত, বাজার-ঘাট, কল-কারখানা সবই প্রায় উন্মুক্ত। তবে দেশের সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ রয়েছে। জানি না কবে খুলবে। তবে ঈদুল আযহার পর খুলে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাকীটা আল্লাহই ভাল জানেন।
সম্প্রতি বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ ডুবিতে পয়ত্রিশজন মানুষের করুণ মৃত্যু হয়েছে -সংবাদটি শুনে শরীর শিউরে উঠছে। মানুষের মৃত্যু এত কাছে, যা কারো জানা ছিল না। লঞ্চটি একেবারে ঘাটেই চলে এসেছিল। কিছুক্ষণ পরই যাত্রী সাধারণ যার যার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই কী ঘটে গেল, সবই আল্লাহর ইচ্ছা। এভাবেই আচমকা আমাদেরকে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হওয়া বা লোভ-মোহে নিমজ্জিত হওয়ার মধ্যে কোনোই মঙ্গল নেই। এ জীবন বাস্তবিকভাবেই ক্ষণস্থায়ী জীবন। আর পরকালীন জীবনই হলো আসল জীবন। মানুষ বড়ই দুর্ভাগা- আসল জীবনকে গুরুত্ব না দিয়ে ক্ষণস্থায়ী জীবনকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ দুনিয়া দুনিয়া করেই ভাই ভাইয়ের সাথে, বাপ ছেলের সাথে, বন্ধু বন্ধুর সাথে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হচ্ছে, যা কি-না মু’মিনের চরিত্র হতে পারে না। যাক, যে কথা বলছিলাম- করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ চাকুরী হারিয়েছে, কারো চাকুরী আছে বটে, কিন্তু বেতন নেই। অনেক ব্যবসায়ী চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর খেটে খাওয়া মানুষের অবস্থা তো চরম শোচনীয়। বর্তমানে ঢাকা শহরে ভিক্ষুকের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। যাদের ভিক্ষার পেশা ছিল না, তারাও আজ এ অবস্থায় ভিক্ষুক বনে গেছে। কি করবে, সংসার তো চালাতে হবে। ছেলে-মেয়েদের মুখে তো দু’মুঠো ভাত দিতে হবে। রাস্তা-ঘাটে গাড়ী পার্কিং করলে গাড়ীর চতুর্দিকে ভিক্ষুক এসে উপস্থিত- আমাকে সাহায্য করুন। ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে আছি কয়েকদিন। কী করুণ পরিণতি!
আমাদের সমাজের বিত্তশালীদের একটুও কি টনক নড়বে না? এখনো কি অভাবীদের সাহায্য করার সময় হয়নি? অথচ আল্লাহ তা‘আলা কুর’আনুল কারীমে ঘোষণা করেছেন : “আর তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক্ব।” (সূরা আয্ যা-রিয়া-ত : ১৯)
ধনীদের সম্পদে অবশ্যই গরীবদের একটি হক্ব রয়েছে। এ হক্ব তো হক্বদারদের নিকট পৌঁছে দেয়া অপরিহার্য। তা না হলে পরকালে অবশ্যই তাকে জবাবদিহি করতে হবে। এছাড়া আল্লাহ তা‘আলা তো আরো স্পষ্ট করে ইরশাদ করেছেন : “আর যে রিয্ক আমি তোমাদের দিয়েছি তা থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় করো তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে।”[১]
সুতরাং অভাবীদের অভাব মোচনের জন্য দেশের সম্পদশালী ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার এখনই সময়। দানের হাতকে সম্প্রসারিত করা একান্ত প্রয়োজন।
অপরদিকে করোনা ভাইরাসের পাশাপাশি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।
নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় এরই মধ্যে দেশের প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি জেলার নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে সুনামগঞ্জের রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে। আর ঐ রাস্তা দিয়ে গাড়ীর পরিবর্তে নৌকা দিয়ে মানুষ চলাচল করছে। এছাড়া বৃহত্তর রংপুরের অনেকগুলো জেলায় বন্য পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। হঠাৎ বন্যার কারণে লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
এহেন পরিস্থিতিতে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকলকে দুঃস্থ-অভাবী ও অনাথদের তথা আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসা একান্ত অপরিহার্য। কেননা মানুষের অভাব-অভিযোগ ও বিপদাপদ দূরীভূত করার প্রতিদান বিশাল। এ প্রসঙ্গে মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘোষণা করেন : “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূর্ণ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের কোনো এক বিপদ দূর করে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার বহু বিপদের একটি বিপদ দূর করে দিবেন।”[২]
অতএব মানবতার সেবায় অগ্রগামী হওয়া মানে নিজের জন্যই কল্যাণ বয়ে আনা। আর যারা এ কাজে অকাতরে নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করবে সে তার পুরাপুরি প্রতিদান পাবে। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে। তিনি তার বিনিময় প্রদান করবেন।”[৩]
অপর হাদীসে মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেন, “দাতার হাত গ্রহীতার হাত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।”[৪]
কাজেই আমাদেরকে মহান আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয়ে দান কর্মে ভূমিকা রাখতে হবে। সর্বদা কৃপনতা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কেননা এর পরিণতি ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই নয়। যেমনটি মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের জন্য বাণী প্রদান করেছেন। “প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশ্তা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার বিনিময় প্রদান করুন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করুন।”[৫]
কী চমৎকার অমীয়বাণী!
এরপরও আমরা কৃপনতা করব। মোটেও নয়। এ ধরণের ধ্বংসের কাজে পা বাড়ানো উচিত নয়; বরং দানের হাতকে সম্প্রসারিত করা খুবই প্রয়োজন।
পরিশেষে পাঠক-পাঠিকা, ভাই-বোনসহ তাওহীদপন্থী আম-জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান- আসুন! গর্ব-অহংকার ও অহমিকা পরিহার করে সহায়-সম্বলহীন ও নিঃস্ব-অভাবীদের পাশে দাঁড়াই এবং তাদের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হই। সাথে সাথে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের বায়তুল মালে নিজেদের দান-সাদাক্বাহ্ করে দা‘ওয়াতী কাজে শরীক হই। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সহায় হোন! -আমীন।

[১] সূরা আল মুনাফিকূন : ১০।
[২] সহীহুল বুখারী- হাঃ ২৪৪২; সহীহ মুসলিম- হাঃ ২৫৮০।
[৩] সূরা সাবা : ৩৯।
[৪] সহীহুল বুখারী- হাঃ ১৪২৭।
[৫] মুসলিম- হাঃ ৯৯৬, আবূ দাঊদ- হাঃ ৯৯৬।


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 5:43:02 সূর্যাস্ত : 6:09:54

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত