হাদীসুর রাসূল
পরিমিত ও পরিশীলিত ধারাবাহিক ‘আমলই উত্তম
শাইখ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ المُثَنَّى، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ هِشَامٍ، قَالَ : أَخْبَرَنِىْ أَبِىْ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ دَخَلَ عَلَيْهَا وَعِنْدَهَا امْرَأَةٌ، قَالَ : ্রمَنْ هَذِهِ؟গ্ধ قَالَتْ : فُلَانَةُ، تَذْكُرُ مِنْ صَلَاتِهَا، قَالَ : ্রمَهْ، عَلَيْكُمْ بِمَا تُطِيقُوْنَ، فَوَاللهِ لَا يَمَلُّ اللهُ حَتّٰى تَمَلُّوْاগ্ধ وَكَانَ أَحَبَّ الدِّيْنِ إِلَيْهِ مَادَامَ عَلَيْهِ صَاحِبُهُ.
বাংলায় অনুবাদ : ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহা) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর নিকট আগমন করলেন। তখন তাঁর কাছে একজন মহিলা বসা ছিল। তিনি (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন : মহিলাটি কে? ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহা) বলেন : এ হচ্ছে অমুক মহিলা। তিনি তার সালাত সম্পর্কে আলোচনা করলেন। নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : থামো, সামর্থ্য অনুযায়ী সব কাজ করা তোমাদের উপর করণীয়। আল্লাহর শপথ! তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়লেও আল্লাহ তা‘আলা ক্লান্ত হন না। আর মহান আল্লাহর নিকট উত্তম দীনী কাজ তাই যার ‘আমলকারী সে কাজ নিয়মিত করে।[১]
হাদীসের রাবী পরিচিতি : ইয়াহইয়া হলেন সা‘ঈদ ইবনু কাত্তানের পুত্র। হিশাম হলেন ‘উরওয়া ইবনু যুবায়র (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহু)-এর পুত্র।[২]
হাদীসের রাবীগণ সকলেই সিকাহ।
হাদীসের মূল ব্যাখ্যা : মু’মিন ব্যক্তির ঈমানের প্রকাশ ঘটে ‘আমলে সালেহ্’র মাধ্যমে। ‘আমল হলো তার দীন। তবে এই ‘আমলে বাড়াবাড়ি ও সীমাতিক্রম করা আদৌ উচিত নয়। এই বিষয়টি আলোচ্য হাদীসের মূল প্রতিপাদ্য।
ব্যাখ্যাসমূহ-
্রمَنْ هَذِهِ؟গ্ধ قَالَتْ : فُلَانَةُ، تَذْكُرُ مِنْ صَلَاتِهَا.
“মহিলাটি কে? ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন : এ হচ্ছে অমুক মহিলা। তিনি তাঁর সলাত সম্পর্কে আলোচনা করলেন।” আগন্তুক মহিলার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানতে চাইলেন। তার আগমন ও উপস্থিতি গীবাত বা অন্য কোনো নিরর্থক কারণে কি-না- যাতে পাপের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিংবা ফাসাদমূলক কি-না- যাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ ঘটতে পারে। অথবা কোনো ভাল উদ্দেশ্যেও হতে পারে। এটিই ছিল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মহিলাটি সম্পর্কে প্রশ্ন করার কারণ।[৩]
‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহা) জানালেন, এই মহিলা অত্যধিক সালাত আদায় করে থাকেন। হাওলা নাম্নী মহিলাটি ছিলেন উম্মুল মু’মিনীন খাদীজাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহা)-এর বানী আসাদ গোত্রের। তিনি নির্ঘুম থেকে রাতে অত্যধিক সলাত আদায় করতেন।[৪]
قَالَ : ্রمَهْ، عَلَيْكُمْ بِمَا تُطِيقُوْنَ.
“নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : থামো, সামর্থ্য অনুযায়ী সব কাজ করা তোমাদের উপর করণীয়।” (নাহুবীদদের নিকট ্রمَهْগ্ধ শব্দটি ্রاسم فعلগ্ধ যার অর্থ চুপ করো।) একথা বলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মহিলাটিকে অতিরিক্ত আমল থেকে ফেরাতে চেয়েছেন, যার মাধ্যমে সে নিজের উপর কঠিন বোঝা চাপিয়ে নিয়েছে।[৫]
কারণ তাতে অচিরেই সে দুর্বল হয়ে পড়বে। ফলে সে তার এই ‘আমলের ধারা অব্যাহত রাখতে পারবে না। ‘ইবাদাতের উদগ্র আকাক্সক্ষায় ঈসায়ী রুহবানগণ বৈরাগ্যবাদকে গ্রহণ করলেও তা আল্লাহ তা‘আলা চাননি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَرَهْبَانِيَّةً ابْتَدَعُوْهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ إِلَّا ابْتِغَاءَ رِضْوَانِ اللهِ فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا﴾
“আর বৈরাগ্যবাদ তারা নিজেরা আবিষ্কার করে নিয়েছে। আমি এটি তাদের উপর অর্পণ করিনি। তথাপিও তা তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উদ্ভাবন করে নিয়েছে। পরিশেষে তা তারা যথাযথভাবে প্রতিপালন করেনি।”[৬]
فَوَاللهِ لَا يَمَلُّ اللهُ حَتّٰى تَمَلُّوْا.
“আল্লাহর শপথ! তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়লেও আল্লাহ তা‘আলা ক্লান্ত হন না।”
এখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দীনী কাজের প্রকৃত রূপ তুলে ধরে তাতে উৎসাহ দান এবং পরিত্যাজ্য বিষয়ে নিরুৎসাহ প্রদানকল্পে তাঁর বক্তব্যকে জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে আল্লাহর শপথ করেছেন।[৭]
তোমরা যে পরিমাণে মহান আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে তোমাদেরকে সে পরিমাণ সওয়াব আল্লাহ তা‘আলা দান করবেন। আল্লাহ তা‘আলা সওয়াব দানে ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ‘ইবাদতে ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে ‘আমল ছেড়ে দাও। আসলে আমরা ক্লান্তি, বিরক্তি এবং অবসন্নতা বোধ করলেও আল্লাহ তা‘আলা এসবের ঊর্ধ্বে।
‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আম্র ইবনে আল ‘আস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহু) অব্যাহতভাবে সিয়াম রাখতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে অবকাশ গ্রহণ ও সহজসাধ্য ‘আমল করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি কিছুটা অবকাশ নিলেন এবং একদিন পর একদিন সিয়াম রাখার ‘আমলকে গ্রহণ করেন- যা ছিল দাঊদ (‘আলাইহিস্ সালাম)-এর সিয়াম। বৃদ্ধাবস্থায় ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আম্র ইবনে আল ‘আস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহু)-এর জন্য এই ‘আমল অব্যাহত রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়লে তিনি বলেন :
্রيَا لَيْتَنِىْ قَبِلْتُ رُخْصَةَ النَّبِيِّ ﷺগ্ধ.
“যদি আমি নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ‘অবকাশ’ সুযোগটাকে গ্রহণ করতাম।[৮]
وَكَانَ أَحَبَّ الدِّيْنِ إِلَيْهِ مَادَامَ عَلَيْهِ صَاحِبُهُ.
“মহান আল্লাহর নিকট উত্তম দীনী কাজ তাই যার ‘আমলকারী সে কাজ নিয়মিত করে।”
একনিষ্ঠতা, বিনয়, একাগ্রতা ও পরম অনুরাগ নিয়ে অল্প হলেও নিয়মিত মহান আল্লাহর ‘ইবাদাত দুর্বলতা, শৈথিল্য ও অস্বস্তির সাথে অধিক ‘আমল করার চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ। মহান আল্লাহর ‘ইবাদতে ক্ষ্যান্ত দেয়া কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। মৃত্যু অবধি মহান আল্লাহর ‘ইবাদতে লেগে থাকা একান্ত বাঞ্ছণীয়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন :
﴿وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتّٰى يَأْتِيَكَ الْيَقِيْنُ﴾
“তোমার মৃত্যু আসা পর্যন্ত তোমার রবের ‘ইবাদত করো।”[৯]
‘বিশেষ দিন বা মাস কিংবা মৌসুমী ‘ইবাদতকে ধারণ করে নিয়মিত ‘ইবাদতে ছেদ ঘটালে সমুদয় কৃত ‘ইবাদত বিনষ্ট হতে বাধ্য।
হাদীসের শিক্ষা :
১. নিজ পরিবারের বিষয়ে সদা বিশেষ সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
২. ‘আমল স্বল্প হলেও নিয়মিত করা উচিত।
৩. বিনয় ও একাগ্রতাপূর্ণ ‘ইবাদতই মহান আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়, যদিও তা অল্প হয়।
৪. মৃত্যু আসা পর্যন্ত ‘ইবাদতে লেগে থাকা প্রতিটি মু’মিনের একান্ত করণীয়।
৫. ‘ইবাদতে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখা উচিত। বাড়াবাড়ি ও শৈথিল্য কাম্য নয়।
বাংলায় অনুবাদ : ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহা) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর নিকট আগমন করলেন। তখন তাঁর কাছে একজন মহিলা বসা ছিল। তিনি (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন : মহিলাটি কে? ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহা) বলেন : এ হচ্ছে অমুক মহিলা। তিনি তার সালাত সম্পর্কে আলোচনা করলেন। নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : থামো, সামর্থ্য অনুযায়ী সব কাজ করা তোমাদের উপর করণীয়। আল্লাহর শপথ! তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়লেও আল্লাহ তা‘আলা ক্লান্ত হন না। আর মহান আল্লাহর নিকট উত্তম দীনী কাজ তাই যার ‘আমলকারী সে কাজ নিয়মিত করে।[১]
হাদীসের রাবী পরিচিতি : ইয়াহইয়া হলেন সা‘ঈদ ইবনু কাত্তানের পুত্র। হিশাম হলেন ‘উরওয়া ইবনু যুবায়র (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহু)-এর পুত্র।[২]
হাদীসের রাবীগণ সকলেই সিকাহ।
হাদীসের মূল ব্যাখ্যা : মু’মিন ব্যক্তির ঈমানের প্রকাশ ঘটে ‘আমলে সালেহ্’র মাধ্যমে। ‘আমল হলো তার দীন। তবে এই ‘আমলে বাড়াবাড়ি ও সীমাতিক্রম করা আদৌ উচিত নয়। এই বিষয়টি আলোচ্য হাদীসের মূল প্রতিপাদ্য।
ব্যাখ্যাসমূহ-
্রمَنْ هَذِهِ؟গ্ধ قَالَتْ : فُلَانَةُ، تَذْكُرُ مِنْ صَلَاتِهَا.
“মহিলাটি কে? ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন : এ হচ্ছে অমুক মহিলা। তিনি তাঁর সলাত সম্পর্কে আলোচনা করলেন।” আগন্তুক মহিলার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানতে চাইলেন। তার আগমন ও উপস্থিতি গীবাত বা অন্য কোনো নিরর্থক কারণে কি-না- যাতে পাপের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিংবা ফাসাদমূলক কি-না- যাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ ঘটতে পারে। অথবা কোনো ভাল উদ্দেশ্যেও হতে পারে। এটিই ছিল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মহিলাটি সম্পর্কে প্রশ্ন করার কারণ।[৩]
‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহা) জানালেন, এই মহিলা অত্যধিক সালাত আদায় করে থাকেন। হাওলা নাম্নী মহিলাটি ছিলেন উম্মুল মু’মিনীন খাদীজাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহা)-এর বানী আসাদ গোত্রের। তিনি নির্ঘুম থেকে রাতে অত্যধিক সলাত আদায় করতেন।[৪]
قَالَ : ্রمَهْ، عَلَيْكُمْ بِمَا تُطِيقُوْنَ.
“নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : থামো, সামর্থ্য অনুযায়ী সব কাজ করা তোমাদের উপর করণীয়।” (নাহুবীদদের নিকট ্রمَهْগ্ধ শব্দটি ্রاسم فعلগ্ধ যার অর্থ চুপ করো।) একথা বলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মহিলাটিকে অতিরিক্ত আমল থেকে ফেরাতে চেয়েছেন, যার মাধ্যমে সে নিজের উপর কঠিন বোঝা চাপিয়ে নিয়েছে।[৫]
কারণ তাতে অচিরেই সে দুর্বল হয়ে পড়বে। ফলে সে তার এই ‘আমলের ধারা অব্যাহত রাখতে পারবে না। ‘ইবাদাতের উদগ্র আকাক্সক্ষায় ঈসায়ী রুহবানগণ বৈরাগ্যবাদকে গ্রহণ করলেও তা আল্লাহ তা‘আলা চাননি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَرَهْبَانِيَّةً ابْتَدَعُوْهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ إِلَّا ابْتِغَاءَ رِضْوَانِ اللهِ فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا﴾
“আর বৈরাগ্যবাদ তারা নিজেরা আবিষ্কার করে নিয়েছে। আমি এটি তাদের উপর অর্পণ করিনি। তথাপিও তা তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উদ্ভাবন করে নিয়েছে। পরিশেষে তা তারা যথাযথভাবে প্রতিপালন করেনি।”[৬]
فَوَاللهِ لَا يَمَلُّ اللهُ حَتّٰى تَمَلُّوْا.
“আল্লাহর শপথ! তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়লেও আল্লাহ তা‘আলা ক্লান্ত হন না।”
এখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দীনী কাজের প্রকৃত রূপ তুলে ধরে তাতে উৎসাহ দান এবং পরিত্যাজ্য বিষয়ে নিরুৎসাহ প্রদানকল্পে তাঁর বক্তব্যকে জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে আল্লাহর শপথ করেছেন।[৭]
তোমরা যে পরিমাণে মহান আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে তোমাদেরকে সে পরিমাণ সওয়াব আল্লাহ তা‘আলা দান করবেন। আল্লাহ তা‘আলা সওয়াব দানে ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ‘ইবাদতে ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে ‘আমল ছেড়ে দাও। আসলে আমরা ক্লান্তি, বিরক্তি এবং অবসন্নতা বোধ করলেও আল্লাহ তা‘আলা এসবের ঊর্ধ্বে।
‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আম্র ইবনে আল ‘আস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহু) অব্যাহতভাবে সিয়াম রাখতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে অবকাশ গ্রহণ ও সহজসাধ্য ‘আমল করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি কিছুটা অবকাশ নিলেন এবং একদিন পর একদিন সিয়াম রাখার ‘আমলকে গ্রহণ করেন- যা ছিল দাঊদ (‘আলাইহিস্ সালাম)-এর সিয়াম। বৃদ্ধাবস্থায় ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আম্র ইবনে আল ‘আস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহু)-এর জন্য এই ‘আমল অব্যাহত রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়লে তিনি বলেন :
্রيَا لَيْتَنِىْ قَبِلْتُ رُخْصَةَ النَّبِيِّ ﷺগ্ধ.
“যদি আমি নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ‘অবকাশ’ সুযোগটাকে গ্রহণ করতাম।[৮]
وَكَانَ أَحَبَّ الدِّيْنِ إِلَيْهِ مَادَامَ عَلَيْهِ صَاحِبُهُ.
“মহান আল্লাহর নিকট উত্তম দীনী কাজ তাই যার ‘আমলকারী সে কাজ নিয়মিত করে।”
একনিষ্ঠতা, বিনয়, একাগ্রতা ও পরম অনুরাগ নিয়ে অল্প হলেও নিয়মিত মহান আল্লাহর ‘ইবাদাত দুর্বলতা, শৈথিল্য ও অস্বস্তির সাথে অধিক ‘আমল করার চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ। মহান আল্লাহর ‘ইবাদতে ক্ষ্যান্ত দেয়া কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। মৃত্যু অবধি মহান আল্লাহর ‘ইবাদতে লেগে থাকা একান্ত বাঞ্ছণীয়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন :
﴿وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتّٰى يَأْتِيَكَ الْيَقِيْنُ﴾
“তোমার মৃত্যু আসা পর্যন্ত তোমার রবের ‘ইবাদত করো।”[৯]
‘বিশেষ দিন বা মাস কিংবা মৌসুমী ‘ইবাদতকে ধারণ করে নিয়মিত ‘ইবাদতে ছেদ ঘটালে সমুদয় কৃত ‘ইবাদত বিনষ্ট হতে বাধ্য।
হাদীসের শিক্ষা :
১. নিজ পরিবারের বিষয়ে সদা বিশেষ সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
২. ‘আমল স্বল্প হলেও নিয়মিত করা উচিত।
৩. বিনয় ও একাগ্রতাপূর্ণ ‘ইবাদতই মহান আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়, যদিও তা অল্প হয়।
৪. মৃত্যু আসা পর্যন্ত ‘ইবাদতে লেগে থাকা প্রতিটি মু’মিনের একান্ত করণীয়।
৫. ‘ইবাদতে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখা উচিত। বাড়াবাড়ি ও শৈথিল্য কাম্য নয়।
[১] সহীহুল বুখারী- হা. ৪৩, মুসনাদ আহমাদ- হা. ২৪২৪৫।
[২] ফাতহুল বারী ফি শারহিল বুখারী- ১/১২২ পৃ:।
[৩] শারহু রিয়াযিস সালিহীন- আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীন- পৃ: ২৫৩।
[৪] ফাতহুল বারী ফি শারহিল বুখারী- ১/১২২ পৃ:।
[৫] শারহু রিয়াযিস সালিহীন- আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমিন, পৃ: ২৫৩।
[৬] সূরা আল হাদীদ, আয়াত নং- ২৭।
[৭] ফাতহুল বারী ফি শারহিল বুখারী- ১/১২৪ পৃ:।
[৮] সহীহুল বুখারী- হা. ১৯৭৫, মুসনাদ আহমাদ- হা. ৬৪৭৭।
[৯] সূরা আল হিজর, আয়াত নং-৯৯।
ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:26:03
সূর্যাস্ত : 5:11:29
আপনার মন্তব্য1