বিশেষ নিবন্ধ
রমাযানুল মুবারক যা জানা আবশ্যক
আবু ফাইয়ায মুহাম্মদ গোলাম রহমান
ইসলামের মৌলিক বুনিয়াদ পাঁচটি- যার অন্যতম সিয়াম বা রোযা। হিজরী বর্ষের নবম মাস রমাযান। অগণিত নি‘আমত, অপরিমেয় রহমত এবং অফুরন্ত বরকত এ মাসকে আবৃত করে রেখেছে। রামাযানুল মুবারকে মাসব্যাপী সওম (রোযা) পালন করা হয়েছে- প্রাপ্তবয়স্ক ও বিবেকসম্পন্ন নারী-পুরুষ, স্বাধীন-পরাধীন নির্বিশেষে সকলের উপর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلٰى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ﴾
“হে ঈমানদারগণ! তোমারদের উপর (রামাযান মাসে) সিয়াম ফযর করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্বসূরীদের উপর র্ফয করা হয়েছিল, যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো।”[১]
তবে যে ব্যক্তি ওযরগ্রস্ত (যেমন- মুসাফির, রোগগ্রস্ত এবং ঋতুবতী ও সন্তান প্রসবের কারণে রক্তস্রাব হচ্ছে এমন নারী) তিনি পরবর্তীতে কাযা সিয়াম পালন করবেন। আর যারা সওম পালনে একবারেই অক্ষম, যেমন- স্থায়ী রোগগ্রস্ত বা অতিশয় বৃদ্ধ, তারা সওম পালনের পরিবর্তে ফিদিয়াস্বরূপ একজন দরিদ্রকে খাদ্যদান করবেন।
আর সক্ষম ব্যক্তিবর্গ সুবহি সাদিক-এর পূর্বমুহূর্ত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে বিরত থেকে মাসব্যাপী সিয়াম পালন করবেন, যা প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরয করা হয়েছে।
আল কুরআন ও সহীহ হাদীসে এ মাসের প্রভূত কল্যাণ বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং মুসলিম জীবনে এ মাসের গুরুত্ব অপরিসীম।
সওম সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ মাসায়িল নিম্নে প্রদত্ত হলো-
* ২৯ শা‘বান চাঁদ না দেখা গেলে রমাযানের সওম শুরু করা যাবে কী?
* ২৯ শা‘বান চাঁদ না দেখা গেলে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর নির্দেশ অনুযায়ী শা‘বান মাসকে ত্রিশদিন পূর্ণ করতে হবে। সন্দেহের মধ্যে থেকে সওম শুরু করা যাবে না। কেননা সন্দেহ-সংশয়-এর বশবর্তী হয়ে সওম পালন শুরু করলে অবশ্যই গুনাহগার হতে হবে। সাহাবী আম্মার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন :
্রمَنْ صَامَ يَوْمَ الشَّكِّ فَقَدْ عَصَى أَبَا القَاسِمِ ﷺগ্ধ.
“যে সন্দেহপূর্ণ দিনে সওম পালন করল, সে আবূল কাসেম [নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর উপনাম]-এর নাফরমানী করল।”[২] আর যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে নাফরমানী করলো, সে প্রকারান্তরে রাসূলকেই অস্বীকার করলো।[৩]
* সিয়াম (রোযা) পালনের জন্য নিয়্যাত করা কি আবশ্যক এবং কীভারে নিয়্যাত করতে হবে?
* প্রতিটি ‘ইবাদতের ন্যায় সওম পালনের জন্যও নিয়্যাত করা আবশ্যক। কেননা, “প্রতিটি কাজ নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল।” অতএব, নিয়্যাত ব্যতিরেকে সওম পালন করলে তা হবে উপবাসের নামান্তর। তবে নিয়্যাতের জন্য কোন শব্দমালা নেই; বরং তা মনের সংকল্প। কেননা নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ও তার সাহাবীগণ নিয়্যাতের কোন অংশ মুখে উচ্চারণ করতেন না।[৪]
অতএব ফজর (সুবহি সাদিক) উদিত হওয়ার পূর্বেই ফরয সিয়াম পালনে জন্য মনের দৃঢ় সংকল্প আবশ্যক। আর এ নিয়্যাতে থাকতে হবে স্বচ্ছতা ও ইখলাসের পূর্ণতা। হাফসাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন :
مَنْ لَمْ يُبَيِّتِ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلَا صِيَامَ لَهُ.
যে ব্যক্তি ফজরের আগে সাওম পালনের জন্য নিয়্যাত করেনি, তার সিয়াম নেই।[৫] আরো বর্ণিত হয়েছে-
مَنْ لَمْ يُجْمِعِ الصِّيَامَ قَبْلَ طُلُوْعِ الْفَجْرِ، فَلَا يَصُوْمُ.
যে ব্যক্তি ফজর উদয়ের পূর্বেই সওমের নিয়্যাত করে না, তার জন্য সিয়াম নেই।[৬] অর্থাৎ- র্ফয সিয়ামের জন্য রাতেই নিয়্যাত করতে হবে।
অবশ্য নফল সিয়ামের জন্য দিনের যে কোন সময় নিয়্যাত করা জায়িয এবং নফল সিয়াম পালনকারী ওযর ছাড়াই সাওম ভঙ্গ করতে পারবে।[৭] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
* আমাদের সন্তানরা কত বছর বয়স থেকে ফরয সিয়াম (রোযা) পালন করবে?
* সওম র্ফয হওয়ার অন্যতম শর্ত প্রাপ্তবয়স্ক (বালেগ) হওয়া। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন :
"رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ : عَنِ النَّائِمِ حَتّٰى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتّٰى يَحْتَلِمَ، وَعَنِ الْمَجْنُوْنِ حَتّٰى يَعْقِلَ".
“তিন শ্রেণীর মানুষ হতে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে- ক) ঘুমন্ত ব্যক্তি- যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, খ) শিশু বা অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক- যতক্ষণ না সে প্রাপ্তবয়ষ্ক (বালেগ) হয় এবং গ) পাগল-উন্মাদ- যতক্ষণ না তার জ্ঞান ফেরে।”[৮] এ তিন অবস্থায় থাকাকালীন মানুষের কোন গুনাহ লিপিবদ্ধ করা হয় না।
তবে অতি আদর-সোহাগ দেখিয়ে শিশুদেরকে সওম থেকে বিরত রাখা সমীচীন নয়; বরং ভবিষ্যতের প্রস্তুতিস্বরূপ তাদের বয়স ও সামর্থ্য অনুপাতে সওম পালনের জন্য উৎসাহিত ও নির্দেশ দেয়া উচিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে মায়েরা তাদের শিশু সন্তানদেরকে সওম পালনে উৎসাহিত করাতেন। হাদীসে এসেছে-
عَنِ الرُّبَيِّعِ بِنْتِ مُعَوِّذٍ، قَالَتْ : ... وَنُصَوِّمُ صِبْيَانَنَا، وَنَجْعَلُ لَهُمُ اللُّعْبَةَ مِنَ العِهْنِ، فَإِذَا بَكَى أَحَدُهُمْ عَلٰى الطَّعَامِ أَعْطَيْنَاهُ ذَاكَ حَتّٰى يَكُوْنَ عِنْدَ الإِفْطَارِ.
মহিলা সাহাবী রুবাইয়া‘ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) বলেন, আমরা আমাদের শিশুদের সওম পালন করাতাম এবং তাদের জন্য পশম/লোম দিয়ে তৈরি খেলনা রাখতাম, যখন তাদের কেউ (ক্ষুধায়) কেঁদে উঠত, তখন তাকে সেই খেলনাটি দিতাম, যতক্ষণ না ইফতারের সময় হয়।”[৯] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া তারাবীহ শব্দটি কি হাদীসের পরিভাষা না-কি প্রচলিত?
@ তারাবীহ “التراويح বহুবচন, একবচনে ترويحة যার অর্থ হলো একবার বিশ্রাম গ্রহণ করা। রামাযানের রাতে যে ক্বিয়ামের (সালাতে দণ্ডায়মান হওয়ার) বিধান রয়েছে তা দুই দুই রাকা‘আত করে আদায় করতে হয়। আর সালাত আদায়ের সময় চার রাকা‘আত পর পর একটু বিশ্রাম গ্রহণ করা হয়, যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) করেছেন। এ কারণেই রামাযানের রাতের সালাতকে “সালাতুত তারাবীহ” বলা হয়। তবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) হতে কোন হাদীসে সরাসরি ‘তারাবীহ’ শব্দটি পাওয়া যায় না, মূলতঃ অর্থের দিক থেকে মুহাদ্দিসগণ এ সালাতের নামকরণ করেছেন ‘সালাতুত্ তারাবীহ’।[১০]
আল ক্বামুস-এ রয়েছে- প্রতি চার রাকআতের পর বিশ্রামের কারণে রমাযানের ক্বিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে ‘তারাবীহ্’। ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) রাতে চার রাক্‘আত (ক্বিয়ামুল লাইল) সালাত আদায়ের পর বিশ্রাম নিতেন।[১১] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া বিশুদ্ধ মতানুযায়ী তারাবীহ সালাত-এর রাকা‘আত সংখ্যা কত?
@ তারাবীহ্ সালাতের রাকা‘আক সংখ্যা কত? তা জানার আগে যে বিষয়টি জানা দরকার তা হলো- তারাবীহ্, ক্বিয়ামে রমাযান, ক্বিয়ামুল লাইল, তাহাজ্জুদ এ সবই একই সালাতের ভিন্ন ভিন্ন নাম।
এখন অনেকের মনে এ প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহাজ্জুদ সালাত গভীর রাতে আদায় করতে হয়, আর তারাবীহ্ ‘ইশা’র সালাতের পর আদায় করতে হয়, তাহলে উভয় সালাত এক হয় কীভাবে?
সহজ সমাধান হলো- উভয় সালাত ভিন্ন ভিন্ন হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) অবশ্যই ‘ইশা’র পর তারাবীহ, অতঃপর গভীর রাতে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতেন। কিন্তু সহীহ হাদীস তো দূরের কথা একটি য‘ঈফ হাদীস দ্বারাও সাব্যস্ত হয়নি যে, রামাযানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) প্রথমে তারাবীহ ও পরে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করেছেন।
উল্লিখিত আলোচনার পর তারাবীহ্ সালাতের রাক‘আত সংখ্যা নির্ধারণ করতে একটি সহীহ হাদীস-ই যথেষ্ট হবে-
আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত। তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা)-কে জিজ্ঞেস করলেন, নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর রাতের সালাত কিরূপ ছিল? তিনি বললেন,
্রمَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَزِيْدُ فِىْ رَمَضَانَ وَلَا فِىْ غَيْرِهِ عَلٰى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلِّىْ أَرْبَعًا، فَلَا تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُوْلِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّىْ أَرْبَعًا، فَلَا تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُوْلِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّىْ ثَلَاثًاগ্ধ.
“রামাযান মাসে ও রামাযান ছাড়া তিনি রাতের সালাত এগার রাক‘আতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে তিনি চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, সে চার রাক‘আতের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য ছিল প্রশ্নাতীত। এরপর চার রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন, তার সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্যও ছিল প্রশ্নাতীত। এরপর তিন রাকা‘আত (বিতর) সালাত আদায় করতেন।”[১২]
এমনকি ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু)-ও ১১ রাকা‘আত তারাবীহ্ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যা সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত।
مَالِكٌ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يُوْسُفَ، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيْدَ؛ أَنَّهُ قَالَ : أَمَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيْمًا الدَّيْرِيَّ. أَنْ يَقُوْمَا لِلنَّاسِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً. قَالَ : وَقَدْ كَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ بِالْمِئِيْنَ، حَتّٰى كُنَّا نَعْتَمِدُ عَلٰى الْعِصِيِّ مِنْ طُوْلِ الْقِيَامِ. وَمَا كُنَّا نَنْصَرِفُ إِلَّا فِىْ فُرُوْعِ الْفَجْرِ.
“ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লা-হ) মুহাম্মদ বিন ইউসুফের সূত্রে সায়িব ইবনু ইয়াযিদ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) উবাই ইবনু কা‘ব এবং তামীমদারী (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হুম)-কে নির্দেশ দিয়েছেন, মুসল্লীদেরকে নিয়ে ১১ রাক‘আত (তারাবীহ) সালাত পড়তে।”[১৩]
অন্যত্র বণিত হয়েছে- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, রাতের সালাত দুই-দুই রাকা‘আত করে, অতঃপর যখন ফজর হওয়ার আশঙ্কা করবে, তখন এক রাক‘আত বিত্র পড়ে নেবে।[১৪]
এ হাদীস দ্বারা তারাবীহ্ বা ক্বিয়ামুল লাইল-এর রাক‘আত সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়নি; বরং পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে যে, দুই রাক‘আত পর পর সালাম ফিরাতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া সাহারী খাওয়া কি আবশ্যক? সাহারী খাওয়ার সময়সীমা এবং আহাররত অবস্থায় ফজরের আযান শুরু হলে করণীয় কী?
@ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা সাহারী খাও, কেননা সাহারীতে বরকত আছে।[১৫]
অতএব, ইচ্ছাকৃত সাহারী খাওয়া থেকে বিরত থাকার অর্থ হচ্ছে নিজেকে বরকত থেকে বঞ্চিত করা। উন্মাদ ছাড়া কেউ কি নিজেকে বরকত থেকে বঞ্চিত করবে?
তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে সাহারী খাওয়া সম্ভব না হলেও র্ফয সওম পালন করতে হবে।
সাহারী খাওয়ার শেষ সময় সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত। তবে কখনো যদি সাহারী খাওয়া অবস্থায় সুবহে সাদিক উদিতও হয় এবং মুয়ায্যিনের কণ্ঠে আযান ধ্বনিত হয়, সে ক্ষেত্রে করণীয়, প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাবার খাওয়া সম্পন্ন করা। কেননা নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন :
্রإِذَا سَمِعَ أَحَدُكُمُ النِّدَاءَ وَالْإِنَاءُ عَلَى يَدِهِ، فَلَا يَضَعْهُ حَتّٰى يَقْضِيَ حَاجَتَهُ مِنْهُগ্ধ.
“যখন তোমাদের কেউ এ অবস্থায় (ফজরের) আযান শুনবে, যখন তার হাতে (খাবারের) পাত্র আছে; তখন সে যেনো তা না রাখে, যতক্ষণ না তার প্রয়োজন পূরণ হয়।”[১৬]
আর এ হুকুমটি ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য, যিনি সুবহে সাদীক্ব কখন হবে তা জানেন না।
সতর্কতা : এ ক্ষেত্রে নিয়্যাতের স্বচ্ছতা ও আল্লাহভীতি অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। সুযোগের সদ্ব্যবহার কাম্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া ইফতার গ্রহণের সঠিক সময় কোন্টি?
@ ইফতারের সময় নিয়ে অনেকেই দ্বিধান্বিত। কেউ মনে করেন, মাগরিবের আযানের সাথে, আবার কেউ মনে করেন সূর্যাস্তের সাথে সাথে, আবার অনেকেই ঘড়ির কাঁটা মেপে ইফতার গ্রহণ করেন। অথচ এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবীদের ‘আমল হলো, তাঁরা সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার গ্রহণ করতেন। মূলতঃ ইফতারের সম্পর্ক সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ثُمَّ أَتِمُّوْا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ﴾
“আর রাতের আগমন পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো (অর্থাৎ- সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার গ্রহণ করো)।”[১৭]
আর শরী‘আতের পরিভাষায় রাত বলা হয়- সূর্য পশ্চিমাকাশে অদৃশ্য হওয়া থেকে ফজর পর্যন্ত (সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত নয়)।[১৮]
সাইয়্যিদিনা ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন :
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : ্রإِذَا أَقْبَلَ اللَّيْلُ مِنْ هَا هُنَا، وَأَدْبَرَ النَّهَارُ مِنْ هَا هُنَا، وَغَرَبَتِ الشَّمْسُ فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ.
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন রাত এ দিক থেকে ঘনিয়ে আসে, আর দিন এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন সাওম পালনকারী ইফতার করবে।[১৯]
দ্রুত ইফতার করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) উৎসাহিত করেছেন :
্রلَا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوْا الفِطْرَগ্ধ.
“মানুষ সর্বদা কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতদিন তারা (সূর্যাস্তের সাথে সাথে) দ্রুত ইফতার করবে।”[২০]
স্মর্তব্য যে, বর্তমান প্রযুক্তির যুগে সূর্যাস্তের সঠিক সময় নিরূপণ করা কঠিন কিছু নয়। সুতরাং এ নিয়ে দ্বিধান্বিত হওয়ার কিছু নেই। আবার সেকেন্ড মেপে ইফতার করার মতো বাড়াবড়িও কাম্য নয়, কেননা একই জেলার দুইপ্রান্তের সূর্যাস্তের মধ্যে সেকেন্ডের পার্থক্য বিদ্যমান। অতএব, এসব ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার উপর তাওয়াক্কুল এবং খুলুসিয়াতের আবশ্যকতা বেশি প্রয়োজন। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া বাহারী ইফতারের নামে অপচয় বা অতিভোজনের বৈধতা কতটুকু?
@ সাহারী খাওয়ার মধ্য দিয়ে সিয়াম শুরু এবং ইফতার করার মধ্য দিয়ে সওমের পূর্ণতা ঘটে; যা নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারী সাহাবায়ে কিরাম (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হুম)-এর ‘আমল দ্বারা বিশুদ্ধসূত্রে প্রমাণিত। আর ইফতার গ্রহণের পর হতে সাহারীর পূর্বপর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা খানাপিনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সকলপ্রকার অপচয়রোধে কঠোর নির্দেশনা বিদ্যমান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْن﴾
“আর তোমরা খাও এবং পান করো, আর অপচয় করো না, নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।”[২১]
আমাদের সমাজের কোথাও কোথাও ইফতারের নামে বাহুল্য ব্যয় ও অপচয় করা হয়। এটি নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। ইসলাম তা কখনও সমর্থন করে না। আমাদের মাঝে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, রামাযানে অতিভোজন বা খাদ্যে বাহুল্য ব্যয় করলে, পরকালে হিসাব দিতে হবে না, কথাটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া অসুস্থ ব্যক্তি কীভাবে সওম পালন করবে?
@ মানুষের অসুস্থ অবস্থাকে তিনভাগে বিভক্ত করা যায়। যেমন-
(ক) সাধারণ অসুস্থতা, অর্থাৎ- যে অবস্থায় সওম পালন করলে শরীরের উপর মারাত্মক কোন প্রভাব পড়বে না, তবে সামান্য কষ্ট বৃদ্ধি পাবে- এমন অবস্থায় সওম পালন আবশ্যক। আর যৌক্তিকভাবে বলা যায় যে, সওম পালনে কমবেশি কষ্ট হবেই।
(খ) মারাত্মক অসুস্থতা, যে অবস্থায় কোনোক্রমেই সওম পালন সম্ভব নয়; তবে ভবিষ্যতে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে; এ ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে সওম আদায় করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيْضًا أَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ﴾
“অতঃপর তোমাদের মাঝে যে অসুস্থ অথবা সফরে আছে সে পরবর্তী দিনে তা পূরণ করবে।”[২২]
(গ) এমন অসুস্থতা, যা থেকে সুস্থতার সম্ভাবনা ক্ষীণ কিংবা সুস্থ হওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নেই- এ ক্ষেত্রে বয়োবৃদ্ধগণ অগ্রগণ্য। আর এ ব্যাপারে শরঈ ফায়সালা হলো, প্রতিটি সওমের বিনিময়ে প্রতিদিন একজন মিসকিনকে খাওয়াতে হবে অথবা ঐ পরিমাণ খাদ্য প্রদান করতে হবে। সাহাবী ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন :
্রرُخِّصَ لِلشَّيْخِ الْكَبِيْرِ أَنْ يُفْطِرَ وَيُطْعِمَ عَنْ كُلِّ يَوْمٍ مِسْكِيْنًا وَلَا قَضَاءَ عَلَيْهِগ্ধ.
“বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিকে অনুমতি দেয়া হয়েছে যে, সে ইফতার করবে (অর্থাৎ- সওম ত্যাগ করবে) এবং প্রতিদিনের (সওমের) পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খানা খাওয়াবে, (এক্ষেত্রে) তার উপর কোন কাযা (সওম) নেই।”[২৩] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া সওম পালনে অক্ষম ব্যক্তি কি পরিমাণ ফিদিয়া প্রদান করবেন এবং ফিদিয়ার হক্বদার কারা?
@ অশীতিপর বৃদ্ধ, যিনি সওম পালনে সম্পূর্ণ অক্ষম অথবা এমন অসুস্থতা, যা থেকে সুস্থতা লাভের কোন সম্ভাবনাই নেই- এমন ব্যক্তি একজন দরিদ্র-অভাবীকে (প্রচলিত প্রধান খাদ্য) খাওয়াবেন অথবা কোন দরিদ্রকে অর্ধ সা‘ (অর্থাৎ- প্রতিটি সওমের জন্য ১.২৫ কেজি চাউল) খাদ্যদ্রব্য প্রদান করবেন।[২৪]
উল্লেখ্য যে, বয়সের ভারে যার বিবেক-বুদ্ধি এমন লোপ পেয়েছে যে, তার ভালোমন্দ যাচাই করার কোন ক্ষমতা নেই এমন ব্যক্তিকে সালাত-সিয়াম ইত্যাদি 'ইবাদত থেকে ইসলাম অব্যাহতি প্রদান করেছে। সুতরাং তাঁর উপর ফিদিয়ার হুকুমও প্রযোজ্য নয়। কারণ মুকাল্লাফ (তথা শর‘ঈ দায়িত্বপ্রাপ্ত) হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া।
নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তিন ব্যক্তির উপর থেকে (দায়িত্বের) কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে- (১) ঘুমন্ত ব্যক্তি- জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত, (২) শিশু- বালিগ হওয়া পর্যন্ত এবং (৩) পাগল- বিবেকবুদ্ধি ফিরে পাওয়া পর্যন্ত।[২৫]
কে হক্বদার? যদি অমুসলিম দেশে বসবাসকারী কারো উপর সওমের ফিদিয়া ওয়াজিব হয় এবং সে দেশে ফিদিয়া গ্রহণের হক্বদার কোন মুসলিম পাওয়া যায়, তবে তাদেরকে ফিদিয়ার খাদ্য খাওয়াবে। আর যদি সে দেশে এ রকম কাউকে পাওয়া না যায় তাহলে অন্য মুসলিম দেশে দান করবে; যে দেশের মুসলিমদের এ খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে।[২৬] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া সওম কাযা অবস্থায় মৃত্যু ঘটলে জীবিতগণ কীভাবে তা আদায় করবে?
@ অসুস্থ অবস্থায় সওম কাযা রেখে মৃত্যু ঘটলে উত্তরাধিকারীদের করণীয় হলো-
প্রথমতঃ মৃতের কাযা সওম পূরণে ফিদিয়া প্রদান করবেন। অর্থাৎ- মৃতের প্রতিদিনের ছুটে যাওয়া কাযা সওমের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খানা খাওয়াবে।”[২৭]
দ্বিতীয়তঃ মা ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ، قَالَ : ্রمَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صِيَامٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُগ্ধ.
“রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সাওম (কাযা) রেখে মারা যায়, তার ওয়ারিস বা অভিভাবক সেই (কাযা) সাওম (মাইয়্যিতের পক্ষ থেকে) পূর্ণ করবে।”[২৮] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া ইচ্ছাকৃত সওম ভঙ্গ করলে কাফ্ফারা প্রদান করতে হবে কী :
@ সহবাস ব্যতীত সওম ভঙ্গ হওয়ার অন্যান্য কারণ ইচ্ছাকৃত সংঘটিত হওয়ার মাধ্যমে সওম ভঙ্গ হলে, বিশুদ্ধ মতানুযায়ী তার কোন কাফ্ফারা আদায় করতে হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে ওয়াজিব হলো তাওবাহ্ করা এবং সেই দিনের সওমের কাযা পূরণ করা।
আর সহবাসের মাধ্যমে সওম ভঙ্গ করেল প্রথমতঃ তাওবাহ্ করতে হবে, অতঃপর সেই দিনের সওমে কাযা পূরণের পাশাপাশি কাফ্ফারাও আদায় করতে হবে। আর এ সওমের কাফফারা হলো, একজন মু’মিন ক্রীতদাস আযাদ করা। যদি তা না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে লাগাতর দু’মাস সিয়াম পালন করা। আর তাও সম্ভব না হলে ষাটজন মিসকীনকে খাদ্য দান করা। এ ক্ষেত্রে ষাটজন দরিদ্রকে একসঙ্গে অথবা সুবিধামতো কয়েক ভাগে বিভক্ত করেও খাদ্য প্রদান করা যাবে।[২৯]
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তা‘আলার আদেশ আসার পূর্ব পর্যন্ত গোটা রামাযান মাসে স্ত্রীসম্ভোগ বৈধ ছিল না; অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বান্দার প্রতি দয়াপরবশ হয়ে রামাযানের রাতে স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ করেছেন।[৩০]
আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া মহিলাদের ঋতুস্রাব ও সন্তান প্রসবের পর স্রাব অবস্থায় সওমের বিধান কী? ওষুধ সেবনের মাধ্যমে স্রাব বন্ধ করা যাবে কী?
@ নারীদের জন্য এ শর‘ঈ বিধান প্রদান করা হয়েছে যে, ঋতুস্রাব বা সন্তান প্রসবোত্তর রক্তস্রাব অবস্থায় নারীগণ সওম পালন করবে না, যতক্ষণ না তা থেকে পবিত্রতা লাভ করবে। এমনকি সূর্যাস্তের পূর্বমুহূর্তেও রক্তস্রাব শুরু হলে সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো, রমাযান পরবর্তী দিনসমূহে কাযা সওমগুলো পূর্ণ করবে, যা স্রাবের সময় ছুটে গিয়েছিল। আর তা পরবর্তী রমাযান আসার আগেই সময়-সুযোগ করে পূরণ করতে হবে। কেননা, তা আল্লাহ তা‘আলার ঋণ, আর সওম পালনের মাধ্যমে সে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
উল্লেখ্য যে, ছুটে যাওয়া সওমগুলো বিরতিহীন অথবা বিরতিসহ উভয় পদ্ধতিতে আদায় করা যাবে। ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) বলেন :
্রكَانَ يَكُوْنُ عَلَيَّ الصَّوْمُ مِنْ رَمَضَانَ، فَمَا أَسْتَطِيْعُ أَنْ أَقْضِىَ إِلَّا فِىْ شَعْبَانَগ্ধ.
“রামাযানের কিছু সওম আমার উপর রয়ে যায়। সেগুলো (পরবর্তী বছরের) শা‘বান মাস ব্যতীত আমার পক্ষে কাযা করা সম্ভব হতো না।”[৩১] আল্লাহ অধিক অবগত।
আরো উল্লেখ্য যে, ফজর শুরু হওয়ার পূর্বে পবিত্র হলে ঐদিন থেকেই সওম পালন করতে হবে। এমনকি দিনের বেলায় হরিদ্রাবর্ণের স্রাব দেখা গেলেও সওম পূর্ণতা পাবে -ইন্শা-আল্লাহ। এ মর্মে বিশুদ্ধ সনদে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, উম্মু ‘আত্বিয়াহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) বলেন, মাসিক স্রাব হতে পবিত্র হওয়ার পর নির্গত হওয়া হরিদ্রাবর্ণের স্রাবকে আমরা কিছুই মনে করতাম না।[৩২]
অনেক সময় ঋতুবতী নারীগণ ঔষধ ব্যবহার করে স্রাব বন্ধ রাখেন। এ বিষয়ে উত্তম হচ্ছে তার স্বাভাবিক ঋতুস্রাব অব্যাহত রাখা এবং আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তার উপর সন্তুষ্ট থেকে হায়েয-রোধকারী কোন কিছু ব্যবহার না-করা এবং পরবর্তীতে কাযা সওম পালন করা। উম্মুল মু’মিন এবং সালাফে সালিহীন নারীগণ এভাবেই ‘আমল করতেন।[৩৩]
আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া প্রচণ্ড গরমে কঠোর পরিশ্রমকারীদের জন্য সিয়াম পালনে কোন ছাড় আছে কী?
@ প্রথমতঃ মনে রাখতে হবে যে, রাসূলের যুগেও অনেক সাহাবী কঠোর পরিশ্রম করে সওম পালন করেছেন, সুতরাং পরিশ্রমের অযুহাতে সওম ছেড়ে দেয়ার কোনই সুযোগ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيْضًا أَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ﴾
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস (রামাযান) পাবে সে যেনো সিয়াম পালন করে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ বা সফর অবস্থায় থাকবে সে পরবর্তীতে (কাযা) সিয়াম পূরণ করবে।”[৩৪]
যদি কঠোর পরিশ্রম ওযর হিসেবে গণ্য হত, তবে কুরআন-সুন্নাহ’য় অবশ্যই এ সম্পর্কিত আদেশ-নিষেধ থাকতো। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সকল বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞাত।
অতএব, রামাযানের সিয়াম পালনে শিথীলতা প্রদর্শন করা কোনভাবেই বৈধ নয়। কঠিন পরিশ্রমের কারণে সিয়াম পালন কষ্টসাধ্য হলে প্রয়োজনে পরিশ্রম কমিয়ে দিতে হবে। কেননা, একজন মু’মিন স্বীয় রিয্কের জন্য রায্যাক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা উপরই ভরসা করবে।
বিধায়, কাজের ওযর দেখিয়ে রামাযানের সিয়াম ভঙ্গ করা শরী‘আতের দৃষ্টিতে জায়িয নয়; বরং হারাম।[৩৫]
আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মা’য়ের জন্য সওম পালন কি বাধ্যতামূলক?
@ এ সম্পর্কিত প্রসিদ্ধ মত হলো-
প্রথমত: গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মা’য়ের পক্ষে সওম পালন কঠিন ও কষ্টসাধ্য হলে প্রতিটি সওমের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে। এ সম্পর্কিত হাদীস-
"إِنَّ اللهَ تَعَالَى وَضَعَ عَنِ المُسَافِرِ الصَّوْمَ، وَشَطْرَ الصَّلَاةِ، وَعَنِ الحَامِلِ أَوِ المُرْضِعِ الصَّوْمَ أَوِ الصِّيَامَ".
নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মুসাফির হতে সওমকে উঠিয়ে নিয়েছেন আর (চার রাক‘আত বিশিষ্ট ফরয) সালাত অর্ধেক করেছেন এবং গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী হতে সওম (উঠিয়ে নিয়েছেন)।[৩৬]
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন, “গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী নারী যদি আশঙ্কা করে যে, সওম পালন করলে সন্তানের ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তারা ইফতার করবে, অর্থাৎ- সওম ছেড়ে দিবে এবং ছুটে যাওয়া প্রতিটি সওমের বিনিময়ে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে।”[৩৭]
দ্বিতীয়ত: গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মা’য়ের জন্য সওম পালন কঠিন ও কষ্টসাধ্য হলে পরবর্তী সময়ে সওম কাযা করবে, কেননা এ অবস্থায় তারা অসুস্থ ব্যক্তির মধ্যে গণ্য হবে। অতএব অসুস্থ ব্যক্তির বিধান তাদের উপর প্রযোজ্য হবে অর্থাৎ- পরবর্তীতে সওম পূর্ণ করবে। এ মতকে সমর্থন করেছেন আল্লামা শাইখ বিন বায (রহিমাহুল্লা-হ)।[৩৮] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া সওম পালনকারীর জন্য কোন্টি আগে- সাহারী, না-কি ফরয গোসল?
@ স্বপ্নদোষ কিংবা স্ত্রী সহবাসজনিত কারণে গোসল র্ফয হয়েছে, কিন্তু র্ফয গোসল করতে গেলে সাহারীর সময় শেষ হয়ে যাবে- এ অবস্থায় করণীয় হলো- প্রথমে সাহারী খাওয়া, অতঃপর গোসল করে ফজরের সালাত আদায় করা। কেননা সাহারী খাওয়ার জন্য নাপাকী হতে পবিত্রতা লাভ শর্ত নয়, তবে সময়-সুযোগ থাকলে গোসল করে নেয়া উত্তম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) স্ত্রী সহবাসজনিত কারণে গোসল র্ফয হওয়া সত্ত্বেও (ফরয) গোসল না করেই সাহারী খেয়েছেন, তারপর গোসল করে (ফযর) সলাত আদায় করেছেন। ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) বলেন :
عَائِشَةَ (رَضِيَ اللهُ عَنْهَا) قَالَتْ : ্রأَشْهَدُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ إِنْ كَانَ لَيُصْبِحُ جُنُبًا مِنْ جِمَاعٍ غَيْرِ احْتِلَامٍ، ثُمَّ يَصُوْمُهُগ্ধ.
“আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই তিনি স্বপ্নদোষ নয়, বরং সহবাসজনিত কারণে নাপাক অবস্থায় সকাল করতেন, অতঃপর সওম পালন করতেন।”[৩৯] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া প্রাকৃতিক নিয়মে স্বপ্নদোষ হলে সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে কী?
@ সওমরত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে তাতে সওমের কোন ক্ষতি হবে না; কারণ, তা মানুষের ইচ্ছাধীন নয়; বরং ঘুমন্ত অবস্থায় সংঘটিত হয়। আর নিদ্রাবস্থায় সংঘটিত বিষয় থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। অতএব ঘুম হতে জাগ্রত হয়ে সালাত আদায়ের পূূর্বে ফরয গোসল সম্পন্ন করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا﴾
“আল্লাহ কোন ব্যক্তির উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু আরোপ করেন না।”[৪০]
সওম পালনকারী যদি হস্তমৈথুন করে বীর্যপাত ঘটায়, তবে তার সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে। এজন্য তাকে তার কৃতপাপের জন্য তাওবাহ্ করতে হবে এবং সেদিনের সিয়ামের কাযা পূরণ করতে হবে; তবে তাকে কাফ্ফারা দিতে হবে না। কেননা শুধু সহবাসজনিত কারণে রোযা ভঙ্গ হলে কাফ্ফারা প্রদান করতে হয়।[৪১]
আর যদি হস্তমৈথুনের মাধ্যমে বীর্যপাত না ঘটে, তবে সওম ভঙ্গ হবে না।[৪২] আল্লাহ তা‘আলা অধিক জ্ঞাত।
া সওম অবস্থায় টুথপেস্ট বা টুথপাউডার ব্যবহার করা যাবে কী?
@ মুখের অভ্যন্তরভাগ ও দাঁত পরিষ্কার করতে টুথপেস্ট বা মাজন ব্যবহার করলে সওমের কোন ক্ষতি হবে না; বরং এটা কাঁচা ডালদ্বারা মিসওয়াক করার সদৃশ। কেননা, কাঁচা মিসওয়াক দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলে তার স্বাদ অনুভূত হলেও সওমের যেমন ক্ষতি হয় না। টুথপেস্ট বা মাজনের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য। তবে সতর্ক থাকতে হবে, যেনো তা পেটে না পৌঁছায়।[৪৩]
তবে শাইখ সালেহ্ আল উসাইমীন (রহিমাহুল্লা-হ) বলেছেন, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সন্দেহ সৃষ্টিকারী কোনকিছু ব্যবহার না করাই উত্তম।[৪৪] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া বমি কিংবা রক্তক্ষরণজনিত কারণে সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে কী?
@ প্রথমত: আমাদের অনেকের ধারণা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত মুখভর্তি বমি হলে সওম ভেঙে যাবে! চাই তা কম হোক বা বেশি হোক। কিন্তু প্রকৃত বিধান হলো, স্বাভাবিক নিয়মে বমি হলে সওম নষ্ট হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত বমি করলে তাকে সেই দিনের সওম কাযা করতে হবে। নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
্রمَنْ ذَرَعَهُ القَيْءُ، فَلَيْسَ عَلَيْهِ قَضَاءٌ، وَمَنْ اسْتَقَاءَ عَمْدًا فَلْيَقْضِগ্ধ.
“যার (স্বাভাবিক নিয়মে) বমি হয়ে যায় তার উপর (সওম) কাযা নেই। কিন্তু যে ইচ্ছাকৃত বমি করে সে যেন সওম কাযা করে।”[৪৫]
দ্বিতীয়ত: সিঙ্গা লাগানো কিংবা অন্য কোন কারণে রক্তক্ষরণ হলে সওম ভঙ্গ হবে না। তবে শিঙ্গা লাগানো কিংবা কোন নিরুপায় রোগীকে একান্ত প্রয়োজনে রক্ত প্রদানের কারণে অতিশয় দুর্বল ও সওম পালনে অক্ষম হয়ে পড়লে, তিনি সেদিনের সওম ভঙ্গ করে পরবর্তীতে কাযা সওম পালন করবেন।[৪৬]
তবে শরীরের কোন স্থান থেকে সাধারণ যে কোন রক্তক্ষরণে সওম ভঙ্গ হবে না।[৪৭] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া সওম পালনকালে চোখ, কান, নাকে ড্রপ ব্যবহার, এবং ইনহেলর বা ইনজেকশন নেয়া যাবে কী?
@ এ ক্ষেত্রে একটি মূলনীতি মনে রাখতে হবে, তা হলো- খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ বা প্রবেশ করালে সওম ভঙ্গ। যা খাদ্য-পানীয়’র অন্তর্ভুক্ত নয় তা ব্যবহারে সওম ভঙ্গ হবে না।
অসুস্থতার দরুন সওম অবস্থায় কখনো কখনো চোখ, কান কিংবা নাকে ড্রপ ব্যবহার অথবা ইনজেকশন গ্রহণ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে শরঈ বিধান হলো, চোখ, কান ও নাকে ড্রপ ব্যবহার করলে সওম ভঙ্গ হবে না, কেননা তা খাদ্য বা পনীয়’র অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) সওম অবস্থায় নাকে মাত্রাতিরিক্ত পানি টানতে নিষেধ করেছেন।
্রوَبَالِغْ فِىْ الِاسْتِنْشَاقِ إِلَّا أَنْ تَكُوْنَ صَائِمًاগ্ধ.
“এবং বেশি করে নাকে পানি টান। কিন্তু যদি সওম পালনকারী হও তাহলে (মাত্রাতিরিক্ত) টানবে না।”[৪৮]
উল্লিখিত নীতিমালার আলোকেই সওম অবস্থায় খাদ্য-পানীয় বা পুষ্টি জাতীয় কোন ইনজেকশন গ্রহণ করা যাবে না। তবে যে সকল ইনজেকশন কেবল মেডিসিন, তা বিশেষ প্রয়োজনে নেয়া যাবে।[৪৯] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া ফিতরা প্রদানের নির্দিষ্ট কোন সময় আছে; না-কি যে কোন সময় তা প্রদান করা যাবে?
@ ফিতরা আদায় করার উত্তম সময় হচ্ছে ঈদুল ফিত্র-এর দিনে ঈদের সালাতের উদ্দেশে বের হওয়ার পূর্বক্ষণে। অর্থাৎ- ফিতরা আদায় করে ঈদের সালাতের উদ্দেশে গমন করা। ইবনু ‘উমার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণিত; নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) যাকাতুল ফিত্র আদায় করার আদেশ দেন ঈদের সালাতের উদ্দেশে বের হওয়ার পূর্বে।[৫০]
তবে ফিতরা দেয়ার সময় শুরু হয় রমাযানের শেষ দিন সূর্য ডুবার সাথে সাথে।[৫১]
ঈদের এক-দুই দিন পূর্বেও ফিত্রা আদায় করা যেতে পারে, কারণ সাহাবীদের (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হুম) মধ্যে অনেকেই ঈদের এক অথবা দুই দিন পূর্বে ফিতরা আদায় করতেন।[৫২]
উল্লিখিত নিয়মে ফিত্রা আদায় করার শর‘ঈ বিধান বিদ্যমান। তবে ঈদের সালাতের পরে ফিতরা প্রদান করলে তা সাধারণ দান হিসাবে গণ্য হবে। আর এক্ষেত্রে সে ফিত্রা প্রদানের বিশেষ ফযীলত ও মর্যাদা হতে বঞ্চিত হবে।[৫৩] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া ফিতরার জন্য নিসাব শর্ত কী, ফিতরার বস্তু ও সঠিক পরিমাপ কতটুকু?
@ প্রথমত: যাকাতুল ফিত্র-এর জন্য নিসাব বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া শর্ত নয়। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার জন্য কোন নিসাব নির্ধারণ করেননি। বরং তিনি (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, স্বাধীন-পরাধীন, ছোট-বড় সকলে উপর যাকাতুল ফিত্র ফরয করেছেন।[৫৪]
দ্বিতীয়ত: কোন বস্তু দ্বারা কি পরিমাণ ফিতরা আদায় করতে হবে, এ মর্মে প্রসিদ্ধ সাহাবী আবূ সা‘ঈদ খুদ্রী (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বর্ণিত হাদীস বিদ্যমান। তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে এক সা‘ খাদ্য অথবা এক সা‘ খেজুর অথবা এক সা‘ যব অথবা এক সা‘ কিস্মিস্ অথবা এক সা‘ পনীর দ্বারা ফিতরা আদায় করতাম।[৫৫]
ইবনু ‘উমার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ফিত্রাস্বরূপ এক সা‘ খেজুর কিংবা এক সা‘ যব র্ফয করেছেন- স্বাধীন-পরাধীন (দাস), পুরুষ-নারী, ছোট-বড় সকল মুসলিমের প্রতি। আর তা ঈদের সালাতে গমনের পূর্বে আদায় করতে আদেশ করেছেন।[৫৬]
উল্লিখিত হাদীসত্রয় থেকে প্রতীয়মান হয়-
ক) প্রধান খাদ্যবস্তু (যেমন- আমাদের দেশে চাউল) অথবা খেজুর, যব, কিশমিশ বা পনীর দ্বারা ফিত্রা আদায় করতে হবে।
খ) ঈদের সালাতে গমনের পূর্বেই জনপ্রতি এক সা‘ পরিমাণ খাদ্যবস্তু প্রকৃত হক্বদারের নিকট পৌঁছে দিতে হবে- যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবীদের (রাযিয়াল্লা-হু আন্ হুম) ‘আমল।
এখন প্রশ্ন হলো- সা‘ পরিমাপ? মদীনা‘র সা‘-এর বাংলাদেশী পরিমাপ হলো, ২.৫ কেজি সমপরিমাণ চাউল অথবা একজন সাধারণ পূর্ণ বয়স্ক মানুষের উভয় হাত একত্রিকরণ করে চার অঞ্জলি সমপরিমাণ।[৫৭]
এ বিষয়ে সরাসরি হাদীস-এর উপর ‘আমল করলেই ফিতনা এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে -ইন্শা-আল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া ফিতরা গ্রহণের প্রকৃত হক্বদার কারা?
@ কে বা কারা ফিত্রা গ্রহণের হক্বদার এ বিষয়ে ইসলামী বিদ্বানগণের দু’প্রকার মত বিদ্যমান।
প্রথমত: সূরা আত্ তাওবায় আট শ্রেণির হক্বদারের কথা বর্ণিত হয়েছে- যারা যাকাত-সাদাক্বাহ্ গ্রহণের হক্বদার। যথা- ১) ফকীর, ২) মিসকীন, ৩) যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারি, ৪) ইসলামে প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা এমন অমুসলিমকে, ৫) দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে, ৬) ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্যে, মহান আল্লাহর রাস্তায় এবং ৮) মুসাফিরদের সাহায্যার্থে।[৫৮]
দলীল : ফিত্রাকে নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) যাকাত ও সাদাক্বাহ্ বলেছেন, তাই যে খাতসমূহ সাদাক্বাহ্ বা যাকাত প্রদানের জন্য প্রযোজ্য, তা ফিতরার জন্যও প্রযোজ্য হবে।
দ্বিতীয়তঃ সাদাকাতুল ফিত্র বা ফিতরা পাওয়ার হক্বদার কেবল ফকীর ও মিসকিন; সূরা আত্ তাওবায় বর্ণিত অন্য ছয় শ্রেণি ফিতরার হক্বদার নয়।
দলীল : ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ফিতরের যাকাত (ফিতরা) ফরয করেছেন সওম পালনকারীদের অশ্লীলতা ও অহেতুক কথা-বার্তা হতে পবিত্র করার জন্য এবং মিসক্বীনদের আহার স্বরূপ ...।[৫৯]
এ মতকে সমর্থন করেছেন ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্, ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যুম, ইমাম শাওকানী, আল্লামা আযীমাবাদী, ইবনু উসাইমীন প্রমুখ।[৬০]
ফিত্রা প্রাপ্তির হক্বদার সম্পর্কিত দ্বিতীয় মতটি অধিক বিশুদ্ধ; কেননা এ মতের পক্ষে স্পষ্ট দলীল বিদ্যমান। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া ফিতরা কি নিজ দায়িত্বে, না-কি সমষ্টিগতভাবে বিতরণ করতে হবে?
@ ফিতরা বিতরণ পদ্ধতি নিয়ে দু’ধরনের প্রথা চালু আছে-
প্রথমত: নিজ দায়িত্বে বিতরণ করা। উত্তম ব্যবস্থা হচ্ছে নিজ দায়িত্বে হক্বদারের নিকট পৌঁছে দেয়া।[৬১]
কেননা, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ঈদের সালাতের উদ্দেশে বের হওয়ার পূর্বে ফিত্রা আদায় করার যে আদেশ দিয়েছেন, তা প্রত্যেকের জন্য স্বতন্ত্র আদেশ। এজন্য সাহাবী ইবনু ‘উমার স্বীয় ফিতরা নিজ দায়িত্বে এক-দুই দিন পূর্বেই বিতরণ করতেন।[৬২] জমাকরণের কথা বলা হয়নি।
দ্বিতীয়তঃ মাসজিদ বা কোন সংস্থায় জমা করে বিতরণ করা। নির্ভরযোগ্য কোন সংস্থা, মহল্লা/গ্রাম প্রধান বা ইমামকেও নিজ ফিতরা বণ্টনের প্রতিনিধি করা জায়েয।[৬৩] এ ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে ও নির্ধারিত সময়ে ফিতরা বণ্টনের দায়িত্ব অর্পিত হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির উপর।
আর ফিতরাদাতা যদি সংস্থাকে অর্থ দেয় এই উদ্দেশ্যে যে, উক্ত সংস্থা সেই অর্থ দ্বারা খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করে তা ফকীর-মিসকীনদের মাঝে বিতরণ করবে, এ ক্ষেত্রে সংস্থা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হবে, যথাসময়ে তা প্রদান করা। কেননা, সংস্থার জন্য বৈধ নয় যে, সে তার মূল্য বের করবে।[৬৪] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া লাইলাতুল ক্বদর-এর রাতগুলো কীভাবে অতিবাহিত করতে হবে?
@ একজন মুসলিম লাইলাতুল ক্বদ্র-এর রাত সেভাবেই অতিবাহিত করবেন, যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবা আজমাঈন অতিবাহিত করেছেন।
প্রথমতঃ লাইলাতুল ক্বদরকে (২৬ রামাযানের দিবাগত রাত) ২৭ রমাযানের রাতে সীমাবদ্ধ না রেখে এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করতে হবে। ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন :
تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِىْ الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ.
রামাযান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে (২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯-এর রাত) লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করো।[৬৫]
অন্যত্র আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন :
্রأُرِيْتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ، ثُمَّ أَيْقَظَنِيْ بَعْضُ أَهْلِيْ، فَنُسِّيتُهَا فَالْتَمِسُوْهَا فِيْ الْعَشْرِ الْغَوَابِرِগ্ধ.
স্বপ্নে আমাকে লাইলাতুল ক্বদ্র দেখানো হলো। কিন্তু আমার এক স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়ায় আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব, তোমরা তা রামাযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান করো।[৬৬]
উল্লিখিত হাদীসের আলোকে রমাযানের শেষ দশকের রাতগুলোতে লাইলাতুল ক্বদ্র অনুসন্ধান করতে হবে। তবে ধারাবাহিক দশ রাত জাগরণ করা সম্ভব না হলেও, অবশ্যই শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করতে হবে; অন্যথায় হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম মহিমান্বিত রাতটির সৌভাগ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না।
দ্বিতীয়ত: অনেকে আবার মাসজিদে জমায়েত হয়ে কোনো ওয়েজিনকে ডেকে ওয়াজ-মাহফিলের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে এ রাত উদযাপন করেন। কখনো আবার মাসজিদে আলোকসজ্জা ও খানাপিনার আয়োজন করাও হয়। এসব রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবীদের যুগে ছিল না। অতএব তা বর্জনীয়।
লাইলাতুল ক্বদর রাতে করণীয় হলো- ক্বিয়ামুল লাইল বিন¤্রচিত্তে ধীরস্থিরভাবে আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, তাফসীর, হাদীস ও দীনী ‘ইল্ম চর্চা করা এবং বেশি বেশি তাসবীহ্-তাহ্লীল, যিক্র-আযকার ও ইস্তিগফার করা এবং সর্বোপরি বেশি বেশি এ দু‘আ পাঠ করা-
اَللهمّ إنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيْمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ.
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা আফূউন কারীমুন তুহিব্বুল আফ্ওয়া ফা’ফু আন্নী।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করা পছন্দ করেন। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।[৬৭] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া ই‘তিকাফ-এর সময়সীমা, সূচনা, সমাপ্তি এবং আবশ্যকতার বিধান কী?
@ একজন মুসলিম সম্পূর্ণ দুনিয়াবিমুখ হয়ে, রামাযানের শেষ দশকে স্বীয় প্রভুর সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশে বিশেষভাবে ধ্যানমগ্ন হন- যাকে শরী‘আতের পরিভাষায় ই‘তিকাফ বলে। এ জন্য মুসলিম জীবনে ই‘তিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রত্যেক মহল্লায় বা মাসজিদে কমপক্ষে একজনকে হলেও ই‘তিকাফে বসতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। কেননা ই‘তিকাফ পালন করা সুন্নাত- অতএব, তা মানুষের ইচ্ছাধীন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) রামাযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন।[৬৮]
ই‘তিকাফ-এর জন্য মাসজিদে প্রবেশ করতে হবে ২০ রামাযান সূর্যাস্তের পূর্বে। এটিই ইমাম চতুষ্টয়সহ জমহুর ‘আলেম-এর মত। কেননা, সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীসদ্বারা সাব্যস্ত “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) শেষ দশ রাত ই‘তিকাফ করতেন।”
যেহেতু ২০ রামাযান সূর্যাস্তের সাথে সাথে রামাযানের শেষ দশক শুরু হয়ে যায়, বিধায় এদিন সূর্যাস্তের পূর্বেই ই‘তিকাফের উদ্দেশে মাসজিদে প্রবেশ করতে হবে।
তবে ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ই‘তিকাফ করার ইচ্ছাপোষণ করলে ফজর সালাত আদায় করেই স্বীয় ই‘তিকাফের স্থানে প্রবেশ করতেন।[৬৯]
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দীসগণ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তবে শাইখ সালেহ আল উসাইমীন বলেন, “ই‘তিকাফ শুরু হবে ২১ তারিখ রাত থেকে।”[৭০]
আর রামাযান শেষ হলে অর্থাৎ- ঈদের নতুন চাঁদ উদিত হলেই ই‘তিকাফ শেষ হবে।[৭১]
তবে যদি কেউ ফজর সালাত পড়ে বের হতে চায়, তাও করতে পারবে, সালাফদের এমনও ‘আমল পাওয়া যায়।[৭২]
ঈদের রাতে ‘ইবাদত ও জাগরণের যে ফযীলত বর্ণনা করা হয়- এ মর্মে বর্ণিত হাদীসসমূহ হয় জাল, নয়তো দুর্বল যা ‘আমলযোগ্য নয়; বরং বিদ‘আত।[৭৩] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া মহিলাদের ই‘তিকাফের জন্যও কি মাসজিদ আবশ্যক?
@ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) মাসজিদেই ই‘তিকাফ করেছেন এবং তাঁর সহধর্মিনীগণ ই‘তিকাফ করতে চাইলে মাসজিদে পর্দাবৃত্ত স্থান নির্ধারণ করতে নির্দেশ দিতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِىْ الْمَسَاجِدِ﴾
“আর তোমরা মাসজিদসমূহে ই‘তিকাফ অবস্থায় তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সহবাস করো না।”[৭৪]
মহিলারা নিজগৃহে ই‘তিকাফ করবে- মর্মে কোনো বর্ণনা নেই। যারা বলেন, এটা তাদের অনুমান যা সুন্নাহ পরিপন্থী; বরং সহীহ সূত্রে ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) থেকে বর্ণিত হয়েছে।
্রوَلَا اِعْتِكَافَ إِلَّا فِىْ مَسْجِدٍ جَامِعٍগ্ধ.
“ই‘তিকাফ কেবল জামি‘ মাসজিদে হতে হবে।”[৭৫]
এ হাদীসদ্বারা পুরুষদেরকে নির্দিষ্ট করা হয়নি। সুতরাং এ নির্দেশ নারী-পুরুষ সকলের জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া ই‘তিকাফরত ব্যক্তির সাথে মাহরাম মহিলারা সাক্ষাত করতে পারবে কী?
@ অনেকেরই এমন ধারণা যে, ই’তিকাফরত ব্যক্তি সাথে তার স্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে না। অথচ নাবীপত্নী সাফিয়্যাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) বলেন :
عَنْ صَفِيَّةَ بِنْتِ حُيَيٍّ، قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مُعْتَكِفًا فَأَتَيْتُهُ أَزُوْرُهُ لَيْلًا، فَحَدَّثْتُهُ.
“রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ই’তিকাফরত ছিলেন। রাতের বেলায় আমি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য আসলাম। অতঃপর কথা-বার্তা বললাম।”[৭৬]
আরো বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ : ্রكَانَ النَّبِيُّ ﷺ، إِذَا اعْتَكَفَ، يُدْنِىْ إِلَيَّ رَأْسَهُ فَأُرَجِّلُهُ.
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ই’তিকাফকালে মাসজিদ হতে মাথা বের করে দিতেন আর তাঁর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) চিরুনি করে দিতেন।[৭৭]
তবে ই‘তিকাফরত ব্যক্তি স্ত্রী সহবাস করতে পারবে না। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِىْ الْمَسَاجِدِ﴾
“আর মাসজিদে ই‘তিকাফ অবস্থায় তাদের সাথে সহবাস করো না।”[৭৮]
আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া রামাযান মাসে শয়ত্বানদের শেকলবন্দি করা হয়, তবে এ মাসেও মানুষ কেন পাপকর্মে লিপ্ত হয়?
@ অনেকের মনে যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খায় তা হলো- রামাযান মাসে তো শয়ত্বানদেরকে শিকলবন্দি করা হয়, তবে এ মাসেও মানুষ কেন পাপ কাজ করে? এ সম্পর্কিত হাদীসগুলোর একটি হলো-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ إِذَا كَانَتْ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ صُفِّدَتْ الشَّيَاطِيْنُ وَمَرَدَةُ الْجِنِّ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ وَفُتِحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ وَنَادَى مُنَادٍ يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ وَلِلّٰهِ عُتَقَاءُ مِنْ النَّارِ وَذٰلِكَ فِيْ كُلِّ لَيْلَةٍ.
হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন রামযান মাসের প্রথম রজনির আগমন ঘটে, তখন শয়ত্বান ও অবাধ্য জিন্দের শেকল দিয়ে বেধে ফেলা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, যার একটি দরজাও খোলা থাকে না; জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, যার একটি দরজাও বন্ধ থাকে না এবং একজন আহ্বানকারী আহ্বান করে- হে সৎকর্মশীল! অগ্রসর হও, হে অসৎকর্মপরায়ণ! থেমে যাও। আল্লাহ তা‘আলা (রামাযানের) প্রতিটি রাতে অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন।[৭৯]
উল্লিখিত হাদীসে শয়ত্বানদেরকে শেকলবন্দি করার কথা ব্যক্ত হয়ে, তারপরও তারা কিভাবে কুমন্ত্রণা দিয়ে মানুষকে অসৎ কর্মের প্রতি উৎসাহিত করে?
প্রথমতঃ সুনান আন্ নাসায়ী’র বর্ণনায় এসেছে-
وَتُغَلُّ فِيْهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِيْنِ.
“রামাযান মাসে অবাধ্য ও উগ্র শয়ত্বানদেরকে বন্দি করা হয়।”[৮০]
অর্থাৎ- শয়ত্বানদের মাঝেও শ্রেণিবিন্যায় রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কুমন্ত্রণাদানে অধিক পারদর্শী, উগ্র ও অবাধ্য, কেউ অপেক্ষকৃত কম পারদর্শী, আবার কেউ শিক্ষানবিশ। তবে প্রত্যেক শয়ত্বানই কমবেশি অবাধ্য, উগ্র এবং কুমন্ত্রণাদাতা। রামাযান মাসে কুমন্ত্রণাদানে অধিক পারদর্শী, উগ্র ও অবাধ্যতার দিক থেকে সিনিয়র শয়ত্বানদেরকে বন্দি করা হয়; ফলে রামাযানে পাপের পরিমাণ কমে যায়, মানুষ অধিক আল্লাহুমুখী হয়ে ‘ইবাদত-বন্দেগী, দান-সাদাক্বাহ্ প্রভৃতি নেকীর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। অপরপক্ষে ছোট শয়ত্বানগুলো বড় শয়ত্বানগুলোন স্থলাভিষিক্ত হয়ে মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে।
দ্বিতীয়তঃ রামাযানে শয়ত্বানদেরকে বন্দি রাখা হয় এর অর্থ এই নয় যে, রামাযানে কোন পাপাচার সংঘটিত হবে না। কারণ মানুষ কেবল শয়ত্বানের কুমন্ত্রণায় পাপ করে না বরং পাপাচার সংঘটিত হওয়ার পেছনে শয়ত্বান ছাড়াও আরও কিছু কারণ আছে। যেমন- (ক) রিপুর কামনা-বাসনা ও কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় পাপ করে, (খ) মানুষরূপী শয়ত্বানের খপ্পরে পড়ে পাপকার্যে লিপ্ত হয় এবং (গ) বদ অভ্যাসের বশবর্তী হয়েও পাপ করে।
অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলা যখন ইবলিসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, প্রথম মানব আদম (‘আলাইহিস্ সালাম)-কে সাজদাহ্ করো- তখন সে কোন শয়ত্বানের প্ররোচনায় আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ অমান্য করে অবাধ্য সীমালঙ্ঘন করেছিল? না, কোনো শয়ত্বান নয়; বরং তার কু-প্রবৃত্তিই তাকে অহংকারী ও অবাধ্য করে তুলেছিল, তাই সে সীমালঙ্ঘন করে অভিশপ্ত শয়ত্বানে পরিণত হলো।
এ জন্যই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) রামাযান মাসে সওম পালনকারীদেরকে কুপ্রবৃত্তি, কুঅভ্যাস প্রভৃতি ‘কু’ নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
فَإِنَّه” لِىْ وَأَنَا أَجْزِىْ بِه#، يَدَعُ شَهْوَتَه وَطَعَامَه مِنْ أَجْلِىْ.
সওম আমার জন্যে পালন করা হয় এবং আমিই এর প্রতিদান দিব। কারণ সওম পালনকারী ব্যক্তি স্বীয় প্রবত্তির তাড়না ও আহার-বিহার শুধু আমার জন্যই পরিহার করে।
আরও বলা হয়েছে-
إِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يَصْخَبْ، فَإِنْ سَابَّه أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَه فَلْيَقُلْ : إِنِّىْ امْرُؤٌ صَائِمٌ.
তোমাদের মধ্যে যে সওম পালন করবে, সে যেনো অশ্লীল কথাবার্তা না বলে আর শোরগোল বা উচ্চবাচ্য না করে। তাকে কেউ যদি গালি দেয় বা কটু কথা বলে অথবা তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তখন সে যেনো বলে, ‘আমি আমি সওম পালন করছি।[৮১]
সুতরাং শয়ত্বানকে শেকলবন্দি করা হলেও উপরোক্ত একাধিক কারণে মানুষ পাপাচার করে থাকে। এরপরও শয়ত্বানদের শেকলবন্দি প্রতিফলন ঘটে মুসলিম সমাজে। লক্ষণীয় যে, তখন মানুষ অধিক পরিমাণে সৎকর্মের দিকে ধাবিত হয়, অনেক পাপিষ্ঠ ব্যক্তি পাপ-পঙ্কিলতা ছেড়ে মাসজিদমুখী হয়, অনেকেই নতুন করে সালাত-সিয়ামের প্রতি আকৃষ্ট হয়, কুরআন তিলাওয়াত, দান-সাদাক্বাহ্, যিকর-আযকার এবং মহিলাদের মাঝে পর্দার অনুশীলন ইত্যাদি সৎকর্মে চর্চা বৃদ্ধি পায়; আর প্রকাশ্য পাপাচার অনেকাংশে হ্রাস পায়। এসবই শয়ত্বানদেরকে শৃঙ্খলিত করার বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
(সম্পাদনা : শাইখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী, সেক্রেটারী জেনারেল- বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস।)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلٰى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ﴾
“হে ঈমানদারগণ! তোমারদের উপর (রামাযান মাসে) সিয়াম ফযর করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্বসূরীদের উপর র্ফয করা হয়েছিল, যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো।”[১]
তবে যে ব্যক্তি ওযরগ্রস্ত (যেমন- মুসাফির, রোগগ্রস্ত এবং ঋতুবতী ও সন্তান প্রসবের কারণে রক্তস্রাব হচ্ছে এমন নারী) তিনি পরবর্তীতে কাযা সিয়াম পালন করবেন। আর যারা সওম পালনে একবারেই অক্ষম, যেমন- স্থায়ী রোগগ্রস্ত বা অতিশয় বৃদ্ধ, তারা সওম পালনের পরিবর্তে ফিদিয়াস্বরূপ একজন দরিদ্রকে খাদ্যদান করবেন।
আর সক্ষম ব্যক্তিবর্গ সুবহি সাদিক-এর পূর্বমুহূর্ত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে বিরত থেকে মাসব্যাপী সিয়াম পালন করবেন, যা প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরয করা হয়েছে।
আল কুরআন ও সহীহ হাদীসে এ মাসের প্রভূত কল্যাণ বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং মুসলিম জীবনে এ মাসের গুরুত্ব অপরিসীম।
সওম সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ মাসায়িল নিম্নে প্রদত্ত হলো-
* ২৯ শা‘বান চাঁদ না দেখা গেলে রমাযানের সওম শুরু করা যাবে কী?
* ২৯ শা‘বান চাঁদ না দেখা গেলে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর নির্দেশ অনুযায়ী শা‘বান মাসকে ত্রিশদিন পূর্ণ করতে হবে। সন্দেহের মধ্যে থেকে সওম শুরু করা যাবে না। কেননা সন্দেহ-সংশয়-এর বশবর্তী হয়ে সওম পালন শুরু করলে অবশ্যই গুনাহগার হতে হবে। সাহাবী আম্মার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন :
্রمَنْ صَامَ يَوْمَ الشَّكِّ فَقَدْ عَصَى أَبَا القَاسِمِ ﷺগ্ধ.
“যে সন্দেহপূর্ণ দিনে সওম পালন করল, সে আবূল কাসেম [নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর উপনাম]-এর নাফরমানী করল।”[২] আর যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে নাফরমানী করলো, সে প্রকারান্তরে রাসূলকেই অস্বীকার করলো।[৩]
* সিয়াম (রোযা) পালনের জন্য নিয়্যাত করা কি আবশ্যক এবং কীভারে নিয়্যাত করতে হবে?
* প্রতিটি ‘ইবাদতের ন্যায় সওম পালনের জন্যও নিয়্যাত করা আবশ্যক। কেননা, “প্রতিটি কাজ নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল।” অতএব, নিয়্যাত ব্যতিরেকে সওম পালন করলে তা হবে উপবাসের নামান্তর। তবে নিয়্যাতের জন্য কোন শব্দমালা নেই; বরং তা মনের সংকল্প। কেননা নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ও তার সাহাবীগণ নিয়্যাতের কোন অংশ মুখে উচ্চারণ করতেন না।[৪]
অতএব ফজর (সুবহি সাদিক) উদিত হওয়ার পূর্বেই ফরয সিয়াম পালনে জন্য মনের দৃঢ় সংকল্প আবশ্যক। আর এ নিয়্যাতে থাকতে হবে স্বচ্ছতা ও ইখলাসের পূর্ণতা। হাফসাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন :
مَنْ لَمْ يُبَيِّتِ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلَا صِيَامَ لَهُ.
যে ব্যক্তি ফজরের আগে সাওম পালনের জন্য নিয়্যাত করেনি, তার সিয়াম নেই।[৫] আরো বর্ণিত হয়েছে-
مَنْ لَمْ يُجْمِعِ الصِّيَامَ قَبْلَ طُلُوْعِ الْفَجْرِ، فَلَا يَصُوْمُ.
যে ব্যক্তি ফজর উদয়ের পূর্বেই সওমের নিয়্যাত করে না, তার জন্য সিয়াম নেই।[৬] অর্থাৎ- র্ফয সিয়ামের জন্য রাতেই নিয়্যাত করতে হবে।
অবশ্য নফল সিয়ামের জন্য দিনের যে কোন সময় নিয়্যাত করা জায়িয এবং নফল সিয়াম পালনকারী ওযর ছাড়াই সাওম ভঙ্গ করতে পারবে।[৭] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
* আমাদের সন্তানরা কত বছর বয়স থেকে ফরয সিয়াম (রোযা) পালন করবে?
* সওম র্ফয হওয়ার অন্যতম শর্ত প্রাপ্তবয়স্ক (বালেগ) হওয়া। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন :
"رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ : عَنِ النَّائِمِ حَتّٰى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتّٰى يَحْتَلِمَ، وَعَنِ الْمَجْنُوْنِ حَتّٰى يَعْقِلَ".
“তিন শ্রেণীর মানুষ হতে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে- ক) ঘুমন্ত ব্যক্তি- যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, খ) শিশু বা অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক- যতক্ষণ না সে প্রাপ্তবয়ষ্ক (বালেগ) হয় এবং গ) পাগল-উন্মাদ- যতক্ষণ না তার জ্ঞান ফেরে।”[৮] এ তিন অবস্থায় থাকাকালীন মানুষের কোন গুনাহ লিপিবদ্ধ করা হয় না।
তবে অতি আদর-সোহাগ দেখিয়ে শিশুদেরকে সওম থেকে বিরত রাখা সমীচীন নয়; বরং ভবিষ্যতের প্রস্তুতিস্বরূপ তাদের বয়স ও সামর্থ্য অনুপাতে সওম পালনের জন্য উৎসাহিত ও নির্দেশ দেয়া উচিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে মায়েরা তাদের শিশু সন্তানদেরকে সওম পালনে উৎসাহিত করাতেন। হাদীসে এসেছে-
عَنِ الرُّبَيِّعِ بِنْتِ مُعَوِّذٍ، قَالَتْ : ... وَنُصَوِّمُ صِبْيَانَنَا، وَنَجْعَلُ لَهُمُ اللُّعْبَةَ مِنَ العِهْنِ، فَإِذَا بَكَى أَحَدُهُمْ عَلٰى الطَّعَامِ أَعْطَيْنَاهُ ذَاكَ حَتّٰى يَكُوْنَ عِنْدَ الإِفْطَارِ.
মহিলা সাহাবী রুবাইয়া‘ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) বলেন, আমরা আমাদের শিশুদের সওম পালন করাতাম এবং তাদের জন্য পশম/লোম দিয়ে তৈরি খেলনা রাখতাম, যখন তাদের কেউ (ক্ষুধায়) কেঁদে উঠত, তখন তাকে সেই খেলনাটি দিতাম, যতক্ষণ না ইফতারের সময় হয়।”[৯] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া তারাবীহ শব্দটি কি হাদীসের পরিভাষা না-কি প্রচলিত?
@ তারাবীহ “التراويح বহুবচন, একবচনে ترويحة যার অর্থ হলো একবার বিশ্রাম গ্রহণ করা। রামাযানের রাতে যে ক্বিয়ামের (সালাতে দণ্ডায়মান হওয়ার) বিধান রয়েছে তা দুই দুই রাকা‘আত করে আদায় করতে হয়। আর সালাত আদায়ের সময় চার রাকা‘আত পর পর একটু বিশ্রাম গ্রহণ করা হয়, যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) করেছেন। এ কারণেই রামাযানের রাতের সালাতকে “সালাতুত তারাবীহ” বলা হয়। তবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) হতে কোন হাদীসে সরাসরি ‘তারাবীহ’ শব্দটি পাওয়া যায় না, মূলতঃ অর্থের দিক থেকে মুহাদ্দিসগণ এ সালাতের নামকরণ করেছেন ‘সালাতুত্ তারাবীহ’।[১০]
আল ক্বামুস-এ রয়েছে- প্রতি চার রাকআতের পর বিশ্রামের কারণে রমাযানের ক্বিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে ‘তারাবীহ্’। ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) রাতে চার রাক্‘আত (ক্বিয়ামুল লাইল) সালাত আদায়ের পর বিশ্রাম নিতেন।[১১] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া বিশুদ্ধ মতানুযায়ী তারাবীহ সালাত-এর রাকা‘আত সংখ্যা কত?
@ তারাবীহ্ সালাতের রাকা‘আক সংখ্যা কত? তা জানার আগে যে বিষয়টি জানা দরকার তা হলো- তারাবীহ্, ক্বিয়ামে রমাযান, ক্বিয়ামুল লাইল, তাহাজ্জুদ এ সবই একই সালাতের ভিন্ন ভিন্ন নাম।
এখন অনেকের মনে এ প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহাজ্জুদ সালাত গভীর রাতে আদায় করতে হয়, আর তারাবীহ্ ‘ইশা’র সালাতের পর আদায় করতে হয়, তাহলে উভয় সালাত এক হয় কীভাবে?
সহজ সমাধান হলো- উভয় সালাত ভিন্ন ভিন্ন হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) অবশ্যই ‘ইশা’র পর তারাবীহ, অতঃপর গভীর রাতে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতেন। কিন্তু সহীহ হাদীস তো দূরের কথা একটি য‘ঈফ হাদীস দ্বারাও সাব্যস্ত হয়নি যে, রামাযানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) প্রথমে তারাবীহ ও পরে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করেছেন।
উল্লিখিত আলোচনার পর তারাবীহ্ সালাতের রাক‘আত সংখ্যা নির্ধারণ করতে একটি সহীহ হাদীস-ই যথেষ্ট হবে-
আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত। তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা)-কে জিজ্ঞেস করলেন, নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর রাতের সালাত কিরূপ ছিল? তিনি বললেন,
্রمَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَزِيْدُ فِىْ رَمَضَانَ وَلَا فِىْ غَيْرِهِ عَلٰى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلِّىْ أَرْبَعًا، فَلَا تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُوْلِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّىْ أَرْبَعًا، فَلَا تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُوْلِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّىْ ثَلَاثًاগ্ধ.
“রামাযান মাসে ও রামাযান ছাড়া তিনি রাতের সালাত এগার রাক‘আতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে তিনি চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, সে চার রাক‘আতের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য ছিল প্রশ্নাতীত। এরপর চার রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন, তার সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্যও ছিল প্রশ্নাতীত। এরপর তিন রাকা‘আত (বিতর) সালাত আদায় করতেন।”[১২]
এমনকি ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু)-ও ১১ রাকা‘আত তারাবীহ্ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যা সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত।
مَالِكٌ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يُوْسُفَ، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيْدَ؛ أَنَّهُ قَالَ : أَمَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيْمًا الدَّيْرِيَّ. أَنْ يَقُوْمَا لِلنَّاسِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً. قَالَ : وَقَدْ كَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ بِالْمِئِيْنَ، حَتّٰى كُنَّا نَعْتَمِدُ عَلٰى الْعِصِيِّ مِنْ طُوْلِ الْقِيَامِ. وَمَا كُنَّا نَنْصَرِفُ إِلَّا فِىْ فُرُوْعِ الْفَجْرِ.
“ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লা-হ) মুহাম্মদ বিন ইউসুফের সূত্রে সায়িব ইবনু ইয়াযিদ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) উবাই ইবনু কা‘ব এবং তামীমদারী (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হুম)-কে নির্দেশ দিয়েছেন, মুসল্লীদেরকে নিয়ে ১১ রাক‘আত (তারাবীহ) সালাত পড়তে।”[১৩]
অন্যত্র বণিত হয়েছে- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, রাতের সালাত দুই-দুই রাকা‘আত করে, অতঃপর যখন ফজর হওয়ার আশঙ্কা করবে, তখন এক রাক‘আত বিত্র পড়ে নেবে।[১৪]
এ হাদীস দ্বারা তারাবীহ্ বা ক্বিয়ামুল লাইল-এর রাক‘আত সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়নি; বরং পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে যে, দুই রাক‘আত পর পর সালাম ফিরাতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া সাহারী খাওয়া কি আবশ্যক? সাহারী খাওয়ার সময়সীমা এবং আহাররত অবস্থায় ফজরের আযান শুরু হলে করণীয় কী?
@ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা সাহারী খাও, কেননা সাহারীতে বরকত আছে।[১৫]
অতএব, ইচ্ছাকৃত সাহারী খাওয়া থেকে বিরত থাকার অর্থ হচ্ছে নিজেকে বরকত থেকে বঞ্চিত করা। উন্মাদ ছাড়া কেউ কি নিজেকে বরকত থেকে বঞ্চিত করবে?
তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে সাহারী খাওয়া সম্ভব না হলেও র্ফয সওম পালন করতে হবে।
সাহারী খাওয়ার শেষ সময় সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত। তবে কখনো যদি সাহারী খাওয়া অবস্থায় সুবহে সাদিক উদিতও হয় এবং মুয়ায্যিনের কণ্ঠে আযান ধ্বনিত হয়, সে ক্ষেত্রে করণীয়, প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাবার খাওয়া সম্পন্ন করা। কেননা নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন :
্রإِذَا سَمِعَ أَحَدُكُمُ النِّدَاءَ وَالْإِنَاءُ عَلَى يَدِهِ، فَلَا يَضَعْهُ حَتّٰى يَقْضِيَ حَاجَتَهُ مِنْهُগ্ধ.
“যখন তোমাদের কেউ এ অবস্থায় (ফজরের) আযান শুনবে, যখন তার হাতে (খাবারের) পাত্র আছে; তখন সে যেনো তা না রাখে, যতক্ষণ না তার প্রয়োজন পূরণ হয়।”[১৬]
আর এ হুকুমটি ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য, যিনি সুবহে সাদীক্ব কখন হবে তা জানেন না।
সতর্কতা : এ ক্ষেত্রে নিয়্যাতের স্বচ্ছতা ও আল্লাহভীতি অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। সুযোগের সদ্ব্যবহার কাম্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া ইফতার গ্রহণের সঠিক সময় কোন্টি?
@ ইফতারের সময় নিয়ে অনেকেই দ্বিধান্বিত। কেউ মনে করেন, মাগরিবের আযানের সাথে, আবার কেউ মনে করেন সূর্যাস্তের সাথে সাথে, আবার অনেকেই ঘড়ির কাঁটা মেপে ইফতার গ্রহণ করেন। অথচ এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবীদের ‘আমল হলো, তাঁরা সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার গ্রহণ করতেন। মূলতঃ ইফতারের সম্পর্ক সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ثُمَّ أَتِمُّوْا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ﴾
“আর রাতের আগমন পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো (অর্থাৎ- সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার গ্রহণ করো)।”[১৭]
আর শরী‘আতের পরিভাষায় রাত বলা হয়- সূর্য পশ্চিমাকাশে অদৃশ্য হওয়া থেকে ফজর পর্যন্ত (সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত নয়)।[১৮]
সাইয়্যিদিনা ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন :
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : ্রإِذَا أَقْبَلَ اللَّيْلُ مِنْ هَا هُنَا، وَأَدْبَرَ النَّهَارُ مِنْ هَا هُنَا، وَغَرَبَتِ الشَّمْسُ فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ.
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন রাত এ দিক থেকে ঘনিয়ে আসে, আর দিন এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন সাওম পালনকারী ইফতার করবে।[১৯]
দ্রুত ইফতার করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) উৎসাহিত করেছেন :
্রلَا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوْا الفِطْرَগ্ধ.
“মানুষ সর্বদা কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতদিন তারা (সূর্যাস্তের সাথে সাথে) দ্রুত ইফতার করবে।”[২০]
স্মর্তব্য যে, বর্তমান প্রযুক্তির যুগে সূর্যাস্তের সঠিক সময় নিরূপণ করা কঠিন কিছু নয়। সুতরাং এ নিয়ে দ্বিধান্বিত হওয়ার কিছু নেই। আবার সেকেন্ড মেপে ইফতার করার মতো বাড়াবড়িও কাম্য নয়, কেননা একই জেলার দুইপ্রান্তের সূর্যাস্তের মধ্যে সেকেন্ডের পার্থক্য বিদ্যমান। অতএব, এসব ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার উপর তাওয়াক্কুল এবং খুলুসিয়াতের আবশ্যকতা বেশি প্রয়োজন। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া বাহারী ইফতারের নামে অপচয় বা অতিভোজনের বৈধতা কতটুকু?
@ সাহারী খাওয়ার মধ্য দিয়ে সিয়াম শুরু এবং ইফতার করার মধ্য দিয়ে সওমের পূর্ণতা ঘটে; যা নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারী সাহাবায়ে কিরাম (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হুম)-এর ‘আমল দ্বারা বিশুদ্ধসূত্রে প্রমাণিত। আর ইফতার গ্রহণের পর হতে সাহারীর পূর্বপর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা খানাপিনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সকলপ্রকার অপচয়রোধে কঠোর নির্দেশনা বিদ্যমান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْن﴾
“আর তোমরা খাও এবং পান করো, আর অপচয় করো না, নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।”[২১]
আমাদের সমাজের কোথাও কোথাও ইফতারের নামে বাহুল্য ব্যয় ও অপচয় করা হয়। এটি নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। ইসলাম তা কখনও সমর্থন করে না। আমাদের মাঝে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, রামাযানে অতিভোজন বা খাদ্যে বাহুল্য ব্যয় করলে, পরকালে হিসাব দিতে হবে না, কথাটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া অসুস্থ ব্যক্তি কীভাবে সওম পালন করবে?
@ মানুষের অসুস্থ অবস্থাকে তিনভাগে বিভক্ত করা যায়। যেমন-
(ক) সাধারণ অসুস্থতা, অর্থাৎ- যে অবস্থায় সওম পালন করলে শরীরের উপর মারাত্মক কোন প্রভাব পড়বে না, তবে সামান্য কষ্ট বৃদ্ধি পাবে- এমন অবস্থায় সওম পালন আবশ্যক। আর যৌক্তিকভাবে বলা যায় যে, সওম পালনে কমবেশি কষ্ট হবেই।
(খ) মারাত্মক অসুস্থতা, যে অবস্থায় কোনোক্রমেই সওম পালন সম্ভব নয়; তবে ভবিষ্যতে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে; এ ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে সওম আদায় করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيْضًا أَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ﴾
“অতঃপর তোমাদের মাঝে যে অসুস্থ অথবা সফরে আছে সে পরবর্তী দিনে তা পূরণ করবে।”[২২]
(গ) এমন অসুস্থতা, যা থেকে সুস্থতার সম্ভাবনা ক্ষীণ কিংবা সুস্থ হওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নেই- এ ক্ষেত্রে বয়োবৃদ্ধগণ অগ্রগণ্য। আর এ ব্যাপারে শরঈ ফায়সালা হলো, প্রতিটি সওমের বিনিময়ে প্রতিদিন একজন মিসকিনকে খাওয়াতে হবে অথবা ঐ পরিমাণ খাদ্য প্রদান করতে হবে। সাহাবী ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন :
্রرُخِّصَ لِلشَّيْخِ الْكَبِيْرِ أَنْ يُفْطِرَ وَيُطْعِمَ عَنْ كُلِّ يَوْمٍ مِسْكِيْنًا وَلَا قَضَاءَ عَلَيْهِগ্ধ.
“বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিকে অনুমতি দেয়া হয়েছে যে, সে ইফতার করবে (অর্থাৎ- সওম ত্যাগ করবে) এবং প্রতিদিনের (সওমের) পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খানা খাওয়াবে, (এক্ষেত্রে) তার উপর কোন কাযা (সওম) নেই।”[২৩] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া সওম পালনে অক্ষম ব্যক্তি কি পরিমাণ ফিদিয়া প্রদান করবেন এবং ফিদিয়ার হক্বদার কারা?
@ অশীতিপর বৃদ্ধ, যিনি সওম পালনে সম্পূর্ণ অক্ষম অথবা এমন অসুস্থতা, যা থেকে সুস্থতা লাভের কোন সম্ভাবনাই নেই- এমন ব্যক্তি একজন দরিদ্র-অভাবীকে (প্রচলিত প্রধান খাদ্য) খাওয়াবেন অথবা কোন দরিদ্রকে অর্ধ সা‘ (অর্থাৎ- প্রতিটি সওমের জন্য ১.২৫ কেজি চাউল) খাদ্যদ্রব্য প্রদান করবেন।[২৪]
উল্লেখ্য যে, বয়সের ভারে যার বিবেক-বুদ্ধি এমন লোপ পেয়েছে যে, তার ভালোমন্দ যাচাই করার কোন ক্ষমতা নেই এমন ব্যক্তিকে সালাত-সিয়াম ইত্যাদি 'ইবাদত থেকে ইসলাম অব্যাহতি প্রদান করেছে। সুতরাং তাঁর উপর ফিদিয়ার হুকুমও প্রযোজ্য নয়। কারণ মুকাল্লাফ (তথা শর‘ঈ দায়িত্বপ্রাপ্ত) হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া।
নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তিন ব্যক্তির উপর থেকে (দায়িত্বের) কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে- (১) ঘুমন্ত ব্যক্তি- জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত, (২) শিশু- বালিগ হওয়া পর্যন্ত এবং (৩) পাগল- বিবেকবুদ্ধি ফিরে পাওয়া পর্যন্ত।[২৫]
কে হক্বদার? যদি অমুসলিম দেশে বসবাসকারী কারো উপর সওমের ফিদিয়া ওয়াজিব হয় এবং সে দেশে ফিদিয়া গ্রহণের হক্বদার কোন মুসলিম পাওয়া যায়, তবে তাদেরকে ফিদিয়ার খাদ্য খাওয়াবে। আর যদি সে দেশে এ রকম কাউকে পাওয়া না যায় তাহলে অন্য মুসলিম দেশে দান করবে; যে দেশের মুসলিমদের এ খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে।[২৬] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া সওম কাযা অবস্থায় মৃত্যু ঘটলে জীবিতগণ কীভাবে তা আদায় করবে?
@ অসুস্থ অবস্থায় সওম কাযা রেখে মৃত্যু ঘটলে উত্তরাধিকারীদের করণীয় হলো-
প্রথমতঃ মৃতের কাযা সওম পূরণে ফিদিয়া প্রদান করবেন। অর্থাৎ- মৃতের প্রতিদিনের ছুটে যাওয়া কাযা সওমের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খানা খাওয়াবে।”[২৭]
দ্বিতীয়তঃ মা ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ، قَالَ : ্রمَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صِيَامٌ صَامَ عَنْهُ وَلِيُّهُগ্ধ.
“রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সাওম (কাযা) রেখে মারা যায়, তার ওয়ারিস বা অভিভাবক সেই (কাযা) সাওম (মাইয়্যিতের পক্ষ থেকে) পূর্ণ করবে।”[২৮] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া ইচ্ছাকৃত সওম ভঙ্গ করলে কাফ্ফারা প্রদান করতে হবে কী :
@ সহবাস ব্যতীত সওম ভঙ্গ হওয়ার অন্যান্য কারণ ইচ্ছাকৃত সংঘটিত হওয়ার মাধ্যমে সওম ভঙ্গ হলে, বিশুদ্ধ মতানুযায়ী তার কোন কাফ্ফারা আদায় করতে হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে ওয়াজিব হলো তাওবাহ্ করা এবং সেই দিনের সওমের কাযা পূরণ করা।
আর সহবাসের মাধ্যমে সওম ভঙ্গ করেল প্রথমতঃ তাওবাহ্ করতে হবে, অতঃপর সেই দিনের সওমে কাযা পূরণের পাশাপাশি কাফ্ফারাও আদায় করতে হবে। আর এ সওমের কাফফারা হলো, একজন মু’মিন ক্রীতদাস আযাদ করা। যদি তা না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে লাগাতর দু’মাস সিয়াম পালন করা। আর তাও সম্ভব না হলে ষাটজন মিসকীনকে খাদ্য দান করা। এ ক্ষেত্রে ষাটজন দরিদ্রকে একসঙ্গে অথবা সুবিধামতো কয়েক ভাগে বিভক্ত করেও খাদ্য প্রদান করা যাবে।[২৯]
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তা‘আলার আদেশ আসার পূর্ব পর্যন্ত গোটা রামাযান মাসে স্ত্রীসম্ভোগ বৈধ ছিল না; অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বান্দার প্রতি দয়াপরবশ হয়ে রামাযানের রাতে স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ করেছেন।[৩০]
আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া মহিলাদের ঋতুস্রাব ও সন্তান প্রসবের পর স্রাব অবস্থায় সওমের বিধান কী? ওষুধ সেবনের মাধ্যমে স্রাব বন্ধ করা যাবে কী?
@ নারীদের জন্য এ শর‘ঈ বিধান প্রদান করা হয়েছে যে, ঋতুস্রাব বা সন্তান প্রসবোত্তর রক্তস্রাব অবস্থায় নারীগণ সওম পালন করবে না, যতক্ষণ না তা থেকে পবিত্রতা লাভ করবে। এমনকি সূর্যাস্তের পূর্বমুহূর্তেও রক্তস্রাব শুরু হলে সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো, রমাযান পরবর্তী দিনসমূহে কাযা সওমগুলো পূর্ণ করবে, যা স্রাবের সময় ছুটে গিয়েছিল। আর তা পরবর্তী রমাযান আসার আগেই সময়-সুযোগ করে পূরণ করতে হবে। কেননা, তা আল্লাহ তা‘আলার ঋণ, আর সওম পালনের মাধ্যমে সে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
উল্লেখ্য যে, ছুটে যাওয়া সওমগুলো বিরতিহীন অথবা বিরতিসহ উভয় পদ্ধতিতে আদায় করা যাবে। ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) বলেন :
্রكَانَ يَكُوْنُ عَلَيَّ الصَّوْمُ مِنْ رَمَضَانَ، فَمَا أَسْتَطِيْعُ أَنْ أَقْضِىَ إِلَّا فِىْ شَعْبَانَগ্ধ.
“রামাযানের কিছু সওম আমার উপর রয়ে যায়। সেগুলো (পরবর্তী বছরের) শা‘বান মাস ব্যতীত আমার পক্ষে কাযা করা সম্ভব হতো না।”[৩১] আল্লাহ অধিক অবগত।
আরো উল্লেখ্য যে, ফজর শুরু হওয়ার পূর্বে পবিত্র হলে ঐদিন থেকেই সওম পালন করতে হবে। এমনকি দিনের বেলায় হরিদ্রাবর্ণের স্রাব দেখা গেলেও সওম পূর্ণতা পাবে -ইন্শা-আল্লাহ। এ মর্মে বিশুদ্ধ সনদে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, উম্মু ‘আত্বিয়াহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) বলেন, মাসিক স্রাব হতে পবিত্র হওয়ার পর নির্গত হওয়া হরিদ্রাবর্ণের স্রাবকে আমরা কিছুই মনে করতাম না।[৩২]
অনেক সময় ঋতুবতী নারীগণ ঔষধ ব্যবহার করে স্রাব বন্ধ রাখেন। এ বিষয়ে উত্তম হচ্ছে তার স্বাভাবিক ঋতুস্রাব অব্যাহত রাখা এবং আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তার উপর সন্তুষ্ট থেকে হায়েয-রোধকারী কোন কিছু ব্যবহার না-করা এবং পরবর্তীতে কাযা সওম পালন করা। উম্মুল মু’মিন এবং সালাফে সালিহীন নারীগণ এভাবেই ‘আমল করতেন।[৩৩]
আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া প্রচণ্ড গরমে কঠোর পরিশ্রমকারীদের জন্য সিয়াম পালনে কোন ছাড় আছে কী?
@ প্রথমতঃ মনে রাখতে হবে যে, রাসূলের যুগেও অনেক সাহাবী কঠোর পরিশ্রম করে সওম পালন করেছেন, সুতরাং পরিশ্রমের অযুহাতে সওম ছেড়ে দেয়ার কোনই সুযোগ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيْضًا أَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ﴾
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস (রামাযান) পাবে সে যেনো সিয়াম পালন করে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ বা সফর অবস্থায় থাকবে সে পরবর্তীতে (কাযা) সিয়াম পূরণ করবে।”[৩৪]
যদি কঠোর পরিশ্রম ওযর হিসেবে গণ্য হত, তবে কুরআন-সুন্নাহ’য় অবশ্যই এ সম্পর্কিত আদেশ-নিষেধ থাকতো। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সকল বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞাত।
অতএব, রামাযানের সিয়াম পালনে শিথীলতা প্রদর্শন করা কোনভাবেই বৈধ নয়। কঠিন পরিশ্রমের কারণে সিয়াম পালন কষ্টসাধ্য হলে প্রয়োজনে পরিশ্রম কমিয়ে দিতে হবে। কেননা, একজন মু’মিন স্বীয় রিয্কের জন্য রায্যাক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা উপরই ভরসা করবে।
বিধায়, কাজের ওযর দেখিয়ে রামাযানের সিয়াম ভঙ্গ করা শরী‘আতের দৃষ্টিতে জায়িয নয়; বরং হারাম।[৩৫]
আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মা’য়ের জন্য সওম পালন কি বাধ্যতামূলক?
@ এ সম্পর্কিত প্রসিদ্ধ মত হলো-
প্রথমত: গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মা’য়ের পক্ষে সওম পালন কঠিন ও কষ্টসাধ্য হলে প্রতিটি সওমের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে। এ সম্পর্কিত হাদীস-
"إِنَّ اللهَ تَعَالَى وَضَعَ عَنِ المُسَافِرِ الصَّوْمَ، وَشَطْرَ الصَّلَاةِ، وَعَنِ الحَامِلِ أَوِ المُرْضِعِ الصَّوْمَ أَوِ الصِّيَامَ".
নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মুসাফির হতে সওমকে উঠিয়ে নিয়েছেন আর (চার রাক‘আত বিশিষ্ট ফরয) সালাত অর্ধেক করেছেন এবং গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী হতে সওম (উঠিয়ে নিয়েছেন)।[৩৬]
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন, “গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী নারী যদি আশঙ্কা করে যে, সওম পালন করলে সন্তানের ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তারা ইফতার করবে, অর্থাৎ- সওম ছেড়ে দিবে এবং ছুটে যাওয়া প্রতিটি সওমের বিনিময়ে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে।”[৩৭]
দ্বিতীয়ত: গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মা’য়ের জন্য সওম পালন কঠিন ও কষ্টসাধ্য হলে পরবর্তী সময়ে সওম কাযা করবে, কেননা এ অবস্থায় তারা অসুস্থ ব্যক্তির মধ্যে গণ্য হবে। অতএব অসুস্থ ব্যক্তির বিধান তাদের উপর প্রযোজ্য হবে অর্থাৎ- পরবর্তীতে সওম পূর্ণ করবে। এ মতকে সমর্থন করেছেন আল্লামা শাইখ বিন বায (রহিমাহুল্লা-হ)।[৩৮] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া সওম পালনকারীর জন্য কোন্টি আগে- সাহারী, না-কি ফরয গোসল?
@ স্বপ্নদোষ কিংবা স্ত্রী সহবাসজনিত কারণে গোসল র্ফয হয়েছে, কিন্তু র্ফয গোসল করতে গেলে সাহারীর সময় শেষ হয়ে যাবে- এ অবস্থায় করণীয় হলো- প্রথমে সাহারী খাওয়া, অতঃপর গোসল করে ফজরের সালাত আদায় করা। কেননা সাহারী খাওয়ার জন্য নাপাকী হতে পবিত্রতা লাভ শর্ত নয়, তবে সময়-সুযোগ থাকলে গোসল করে নেয়া উত্তম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) স্ত্রী সহবাসজনিত কারণে গোসল র্ফয হওয়া সত্ত্বেও (ফরয) গোসল না করেই সাহারী খেয়েছেন, তারপর গোসল করে (ফযর) সলাত আদায় করেছেন। ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) বলেন :
عَائِشَةَ (رَضِيَ اللهُ عَنْهَا) قَالَتْ : ্রأَشْهَدُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ إِنْ كَانَ لَيُصْبِحُ جُنُبًا مِنْ جِمَاعٍ غَيْرِ احْتِلَامٍ، ثُمَّ يَصُوْمُهُগ্ধ.
“আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই তিনি স্বপ্নদোষ নয়, বরং সহবাসজনিত কারণে নাপাক অবস্থায় সকাল করতেন, অতঃপর সওম পালন করতেন।”[৩৯] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া প্রাকৃতিক নিয়মে স্বপ্নদোষ হলে সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে কী?
@ সওমরত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে তাতে সওমের কোন ক্ষতি হবে না; কারণ, তা মানুষের ইচ্ছাধীন নয়; বরং ঘুমন্ত অবস্থায় সংঘটিত হয়। আর নিদ্রাবস্থায় সংঘটিত বিষয় থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। অতএব ঘুম হতে জাগ্রত হয়ে সালাত আদায়ের পূূর্বে ফরয গোসল সম্পন্ন করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا﴾
“আল্লাহ কোন ব্যক্তির উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু আরোপ করেন না।”[৪০]
সওম পালনকারী যদি হস্তমৈথুন করে বীর্যপাত ঘটায়, তবে তার সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে। এজন্য তাকে তার কৃতপাপের জন্য তাওবাহ্ করতে হবে এবং সেদিনের সিয়ামের কাযা পূরণ করতে হবে; তবে তাকে কাফ্ফারা দিতে হবে না। কেননা শুধু সহবাসজনিত কারণে রোযা ভঙ্গ হলে কাফ্ফারা প্রদান করতে হয়।[৪১]
আর যদি হস্তমৈথুনের মাধ্যমে বীর্যপাত না ঘটে, তবে সওম ভঙ্গ হবে না।[৪২] আল্লাহ তা‘আলা অধিক জ্ঞাত।
া সওম অবস্থায় টুথপেস্ট বা টুথপাউডার ব্যবহার করা যাবে কী?
@ মুখের অভ্যন্তরভাগ ও দাঁত পরিষ্কার করতে টুথপেস্ট বা মাজন ব্যবহার করলে সওমের কোন ক্ষতি হবে না; বরং এটা কাঁচা ডালদ্বারা মিসওয়াক করার সদৃশ। কেননা, কাঁচা মিসওয়াক দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলে তার স্বাদ অনুভূত হলেও সওমের যেমন ক্ষতি হয় না। টুথপেস্ট বা মাজনের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য। তবে সতর্ক থাকতে হবে, যেনো তা পেটে না পৌঁছায়।[৪৩]
তবে শাইখ সালেহ্ আল উসাইমীন (রহিমাহুল্লা-হ) বলেছেন, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সন্দেহ সৃষ্টিকারী কোনকিছু ব্যবহার না করাই উত্তম।[৪৪] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া বমি কিংবা রক্তক্ষরণজনিত কারণে সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে কী?
@ প্রথমত: আমাদের অনেকের ধারণা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত মুখভর্তি বমি হলে সওম ভেঙে যাবে! চাই তা কম হোক বা বেশি হোক। কিন্তু প্রকৃত বিধান হলো, স্বাভাবিক নিয়মে বমি হলে সওম নষ্ট হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত বমি করলে তাকে সেই দিনের সওম কাযা করতে হবে। নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
্রمَنْ ذَرَعَهُ القَيْءُ، فَلَيْسَ عَلَيْهِ قَضَاءٌ، وَمَنْ اسْتَقَاءَ عَمْدًا فَلْيَقْضِগ্ধ.
“যার (স্বাভাবিক নিয়মে) বমি হয়ে যায় তার উপর (সওম) কাযা নেই। কিন্তু যে ইচ্ছাকৃত বমি করে সে যেন সওম কাযা করে।”[৪৫]
দ্বিতীয়ত: সিঙ্গা লাগানো কিংবা অন্য কোন কারণে রক্তক্ষরণ হলে সওম ভঙ্গ হবে না। তবে শিঙ্গা লাগানো কিংবা কোন নিরুপায় রোগীকে একান্ত প্রয়োজনে রক্ত প্রদানের কারণে অতিশয় দুর্বল ও সওম পালনে অক্ষম হয়ে পড়লে, তিনি সেদিনের সওম ভঙ্গ করে পরবর্তীতে কাযা সওম পালন করবেন।[৪৬]
তবে শরীরের কোন স্থান থেকে সাধারণ যে কোন রক্তক্ষরণে সওম ভঙ্গ হবে না।[৪৭] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া সওম পালনকালে চোখ, কান, নাকে ড্রপ ব্যবহার, এবং ইনহেলর বা ইনজেকশন নেয়া যাবে কী?
@ এ ক্ষেত্রে একটি মূলনীতি মনে রাখতে হবে, তা হলো- খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ বা প্রবেশ করালে সওম ভঙ্গ। যা খাদ্য-পানীয়’র অন্তর্ভুক্ত নয় তা ব্যবহারে সওম ভঙ্গ হবে না।
অসুস্থতার দরুন সওম অবস্থায় কখনো কখনো চোখ, কান কিংবা নাকে ড্রপ ব্যবহার অথবা ইনজেকশন গ্রহণ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে শরঈ বিধান হলো, চোখ, কান ও নাকে ড্রপ ব্যবহার করলে সওম ভঙ্গ হবে না, কেননা তা খাদ্য বা পনীয়’র অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) সওম অবস্থায় নাকে মাত্রাতিরিক্ত পানি টানতে নিষেধ করেছেন।
্রوَبَالِغْ فِىْ الِاسْتِنْشَاقِ إِلَّا أَنْ تَكُوْنَ صَائِمًاগ্ধ.
“এবং বেশি করে নাকে পানি টান। কিন্তু যদি সওম পালনকারী হও তাহলে (মাত্রাতিরিক্ত) টানবে না।”[৪৮]
উল্লিখিত নীতিমালার আলোকেই সওম অবস্থায় খাদ্য-পানীয় বা পুষ্টি জাতীয় কোন ইনজেকশন গ্রহণ করা যাবে না। তবে যে সকল ইনজেকশন কেবল মেডিসিন, তা বিশেষ প্রয়োজনে নেয়া যাবে।[৪৯] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া ফিতরা প্রদানের নির্দিষ্ট কোন সময় আছে; না-কি যে কোন সময় তা প্রদান করা যাবে?
@ ফিতরা আদায় করার উত্তম সময় হচ্ছে ঈদুল ফিত্র-এর দিনে ঈদের সালাতের উদ্দেশে বের হওয়ার পূর্বক্ষণে। অর্থাৎ- ফিতরা আদায় করে ঈদের সালাতের উদ্দেশে গমন করা। ইবনু ‘উমার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণিত; নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) যাকাতুল ফিত্র আদায় করার আদেশ দেন ঈদের সালাতের উদ্দেশে বের হওয়ার পূর্বে।[৫০]
তবে ফিতরা দেয়ার সময় শুরু হয় রমাযানের শেষ দিন সূর্য ডুবার সাথে সাথে।[৫১]
ঈদের এক-দুই দিন পূর্বেও ফিত্রা আদায় করা যেতে পারে, কারণ সাহাবীদের (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হুম) মধ্যে অনেকেই ঈদের এক অথবা দুই দিন পূর্বে ফিতরা আদায় করতেন।[৫২]
উল্লিখিত নিয়মে ফিত্রা আদায় করার শর‘ঈ বিধান বিদ্যমান। তবে ঈদের সালাতের পরে ফিতরা প্রদান করলে তা সাধারণ দান হিসাবে গণ্য হবে। আর এক্ষেত্রে সে ফিত্রা প্রদানের বিশেষ ফযীলত ও মর্যাদা হতে বঞ্চিত হবে।[৫৩] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া ফিতরার জন্য নিসাব শর্ত কী, ফিতরার বস্তু ও সঠিক পরিমাপ কতটুকু?
@ প্রথমত: যাকাতুল ফিত্র-এর জন্য নিসাব বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া শর্ত নয়। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার জন্য কোন নিসাব নির্ধারণ করেননি। বরং তিনি (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, স্বাধীন-পরাধীন, ছোট-বড় সকলে উপর যাকাতুল ফিত্র ফরয করেছেন।[৫৪]
দ্বিতীয়ত: কোন বস্তু দ্বারা কি পরিমাণ ফিতরা আদায় করতে হবে, এ মর্মে প্রসিদ্ধ সাহাবী আবূ সা‘ঈদ খুদ্রী (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বর্ণিত হাদীস বিদ্যমান। তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে এক সা‘ খাদ্য অথবা এক সা‘ খেজুর অথবা এক সা‘ যব অথবা এক সা‘ কিস্মিস্ অথবা এক সা‘ পনীর দ্বারা ফিতরা আদায় করতাম।[৫৫]
ইবনু ‘উমার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ফিত্রাস্বরূপ এক সা‘ খেজুর কিংবা এক সা‘ যব র্ফয করেছেন- স্বাধীন-পরাধীন (দাস), পুরুষ-নারী, ছোট-বড় সকল মুসলিমের প্রতি। আর তা ঈদের সালাতে গমনের পূর্বে আদায় করতে আদেশ করেছেন।[৫৬]
উল্লিখিত হাদীসত্রয় থেকে প্রতীয়মান হয়-
ক) প্রধান খাদ্যবস্তু (যেমন- আমাদের দেশে চাউল) অথবা খেজুর, যব, কিশমিশ বা পনীর দ্বারা ফিত্রা আদায় করতে হবে।
খ) ঈদের সালাতে গমনের পূর্বেই জনপ্রতি এক সা‘ পরিমাণ খাদ্যবস্তু প্রকৃত হক্বদারের নিকট পৌঁছে দিতে হবে- যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবীদের (রাযিয়াল্লা-হু আন্ হুম) ‘আমল।
এখন প্রশ্ন হলো- সা‘ পরিমাপ? মদীনা‘র সা‘-এর বাংলাদেশী পরিমাপ হলো, ২.৫ কেজি সমপরিমাণ চাউল অথবা একজন সাধারণ পূর্ণ বয়স্ক মানুষের উভয় হাত একত্রিকরণ করে চার অঞ্জলি সমপরিমাণ।[৫৭]
এ বিষয়ে সরাসরি হাদীস-এর উপর ‘আমল করলেই ফিতনা এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে -ইন্শা-আল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া ফিতরা গ্রহণের প্রকৃত হক্বদার কারা?
@ কে বা কারা ফিত্রা গ্রহণের হক্বদার এ বিষয়ে ইসলামী বিদ্বানগণের দু’প্রকার মত বিদ্যমান।
প্রথমত: সূরা আত্ তাওবায় আট শ্রেণির হক্বদারের কথা বর্ণিত হয়েছে- যারা যাকাত-সাদাক্বাহ্ গ্রহণের হক্বদার। যথা- ১) ফকীর, ২) মিসকীন, ৩) যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারি, ৪) ইসলামে প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা এমন অমুসলিমকে, ৫) দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে, ৬) ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্যে, মহান আল্লাহর রাস্তায় এবং ৮) মুসাফিরদের সাহায্যার্থে।[৫৮]
দলীল : ফিত্রাকে নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) যাকাত ও সাদাক্বাহ্ বলেছেন, তাই যে খাতসমূহ সাদাক্বাহ্ বা যাকাত প্রদানের জন্য প্রযোজ্য, তা ফিতরার জন্যও প্রযোজ্য হবে।
দ্বিতীয়তঃ সাদাকাতুল ফিত্র বা ফিতরা পাওয়ার হক্বদার কেবল ফকীর ও মিসকিন; সূরা আত্ তাওবায় বর্ণিত অন্য ছয় শ্রেণি ফিতরার হক্বদার নয়।
দলীল : ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ফিতরের যাকাত (ফিতরা) ফরয করেছেন সওম পালনকারীদের অশ্লীলতা ও অহেতুক কথা-বার্তা হতে পবিত্র করার জন্য এবং মিসক্বীনদের আহার স্বরূপ ...।[৫৯]
এ মতকে সমর্থন করেছেন ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্, ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যুম, ইমাম শাওকানী, আল্লামা আযীমাবাদী, ইবনু উসাইমীন প্রমুখ।[৬০]
ফিত্রা প্রাপ্তির হক্বদার সম্পর্কিত দ্বিতীয় মতটি অধিক বিশুদ্ধ; কেননা এ মতের পক্ষে স্পষ্ট দলীল বিদ্যমান। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া ফিতরা কি নিজ দায়িত্বে, না-কি সমষ্টিগতভাবে বিতরণ করতে হবে?
@ ফিতরা বিতরণ পদ্ধতি নিয়ে দু’ধরনের প্রথা চালু আছে-
প্রথমত: নিজ দায়িত্বে বিতরণ করা। উত্তম ব্যবস্থা হচ্ছে নিজ দায়িত্বে হক্বদারের নিকট পৌঁছে দেয়া।[৬১]
কেননা, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ঈদের সালাতের উদ্দেশে বের হওয়ার পূর্বে ফিত্রা আদায় করার যে আদেশ দিয়েছেন, তা প্রত্যেকের জন্য স্বতন্ত্র আদেশ। এজন্য সাহাবী ইবনু ‘উমার স্বীয় ফিতরা নিজ দায়িত্বে এক-দুই দিন পূর্বেই বিতরণ করতেন।[৬২] জমাকরণের কথা বলা হয়নি।
দ্বিতীয়তঃ মাসজিদ বা কোন সংস্থায় জমা করে বিতরণ করা। নির্ভরযোগ্য কোন সংস্থা, মহল্লা/গ্রাম প্রধান বা ইমামকেও নিজ ফিতরা বণ্টনের প্রতিনিধি করা জায়েয।[৬৩] এ ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে ও নির্ধারিত সময়ে ফিতরা বণ্টনের দায়িত্ব অর্পিত হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির উপর।
আর ফিতরাদাতা যদি সংস্থাকে অর্থ দেয় এই উদ্দেশ্যে যে, উক্ত সংস্থা সেই অর্থ দ্বারা খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করে তা ফকীর-মিসকীনদের মাঝে বিতরণ করবে, এ ক্ষেত্রে সংস্থা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হবে, যথাসময়ে তা প্রদান করা। কেননা, সংস্থার জন্য বৈধ নয় যে, সে তার মূল্য বের করবে।[৬৪] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া লাইলাতুল ক্বদর-এর রাতগুলো কীভাবে অতিবাহিত করতে হবে?
@ একজন মুসলিম লাইলাতুল ক্বদ্র-এর রাত সেভাবেই অতিবাহিত করবেন, যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবা আজমাঈন অতিবাহিত করেছেন।
প্রথমতঃ লাইলাতুল ক্বদরকে (২৬ রামাযানের দিবাগত রাত) ২৭ রমাযানের রাতে সীমাবদ্ধ না রেখে এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করতে হবে। ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন :
تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِىْ الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ.
রামাযান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে (২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯-এর রাত) লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করো।[৬৫]
অন্যত্র আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন :
্রأُرِيْتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ، ثُمَّ أَيْقَظَنِيْ بَعْضُ أَهْلِيْ، فَنُسِّيتُهَا فَالْتَمِسُوْهَا فِيْ الْعَشْرِ الْغَوَابِرِগ্ধ.
স্বপ্নে আমাকে লাইলাতুল ক্বদ্র দেখানো হলো। কিন্তু আমার এক স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়ায় আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব, তোমরা তা রামাযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান করো।[৬৬]
উল্লিখিত হাদীসের আলোকে রমাযানের শেষ দশকের রাতগুলোতে লাইলাতুল ক্বদ্র অনুসন্ধান করতে হবে। তবে ধারাবাহিক দশ রাত জাগরণ করা সম্ভব না হলেও, অবশ্যই শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করতে হবে; অন্যথায় হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম মহিমান্বিত রাতটির সৌভাগ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না।
দ্বিতীয়ত: অনেকে আবার মাসজিদে জমায়েত হয়ে কোনো ওয়েজিনকে ডেকে ওয়াজ-মাহফিলের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে এ রাত উদযাপন করেন। কখনো আবার মাসজিদে আলোকসজ্জা ও খানাপিনার আয়োজন করাও হয়। এসব রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবীদের যুগে ছিল না। অতএব তা বর্জনীয়।
লাইলাতুল ক্বদর রাতে করণীয় হলো- ক্বিয়ামুল লাইল বিন¤্রচিত্তে ধীরস্থিরভাবে আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, তাফসীর, হাদীস ও দীনী ‘ইল্ম চর্চা করা এবং বেশি বেশি তাসবীহ্-তাহ্লীল, যিক্র-আযকার ও ইস্তিগফার করা এবং সর্বোপরি বেশি বেশি এ দু‘আ পাঠ করা-
اَللهمّ إنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيْمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ.
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা আফূউন কারীমুন তুহিব্বুল আফ্ওয়া ফা’ফু আন্নী।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করা পছন্দ করেন। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।[৬৭] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া ই‘তিকাফ-এর সময়সীমা, সূচনা, সমাপ্তি এবং আবশ্যকতার বিধান কী?
@ একজন মুসলিম সম্পূর্ণ দুনিয়াবিমুখ হয়ে, রামাযানের শেষ দশকে স্বীয় প্রভুর সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশে বিশেষভাবে ধ্যানমগ্ন হন- যাকে শরী‘আতের পরিভাষায় ই‘তিকাফ বলে। এ জন্য মুসলিম জীবনে ই‘তিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রত্যেক মহল্লায় বা মাসজিদে কমপক্ষে একজনকে হলেও ই‘তিকাফে বসতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। কেননা ই‘তিকাফ পালন করা সুন্নাত- অতএব, তা মানুষের ইচ্ছাধীন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) রামাযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন।[৬৮]
ই‘তিকাফ-এর জন্য মাসজিদে প্রবেশ করতে হবে ২০ রামাযান সূর্যাস্তের পূর্বে। এটিই ইমাম চতুষ্টয়সহ জমহুর ‘আলেম-এর মত। কেননা, সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীসদ্বারা সাব্যস্ত “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) শেষ দশ রাত ই‘তিকাফ করতেন।”
যেহেতু ২০ রামাযান সূর্যাস্তের সাথে সাথে রামাযানের শেষ দশক শুরু হয়ে যায়, বিধায় এদিন সূর্যাস্তের পূর্বেই ই‘তিকাফের উদ্দেশে মাসজিদে প্রবেশ করতে হবে।
তবে ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ই‘তিকাফ করার ইচ্ছাপোষণ করলে ফজর সালাত আদায় করেই স্বীয় ই‘তিকাফের স্থানে প্রবেশ করতেন।[৬৯]
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দীসগণ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তবে শাইখ সালেহ আল উসাইমীন বলেন, “ই‘তিকাফ শুরু হবে ২১ তারিখ রাত থেকে।”[৭০]
আর রামাযান শেষ হলে অর্থাৎ- ঈদের নতুন চাঁদ উদিত হলেই ই‘তিকাফ শেষ হবে।[৭১]
তবে যদি কেউ ফজর সালাত পড়ে বের হতে চায়, তাও করতে পারবে, সালাফদের এমনও ‘আমল পাওয়া যায়।[৭২]
ঈদের রাতে ‘ইবাদত ও জাগরণের যে ফযীলত বর্ণনা করা হয়- এ মর্মে বর্ণিত হাদীসসমূহ হয় জাল, নয়তো দুর্বল যা ‘আমলযোগ্য নয়; বরং বিদ‘আত।[৭৩] আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া মহিলাদের ই‘তিকাফের জন্যও কি মাসজিদ আবশ্যক?
@ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) মাসজিদেই ই‘তিকাফ করেছেন এবং তাঁর সহধর্মিনীগণ ই‘তিকাফ করতে চাইলে মাসজিদে পর্দাবৃত্ত স্থান নির্ধারণ করতে নির্দেশ দিতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِىْ الْمَسَاجِدِ﴾
“আর তোমরা মাসজিদসমূহে ই‘তিকাফ অবস্থায় তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সহবাস করো না।”[৭৪]
মহিলারা নিজগৃহে ই‘তিকাফ করবে- মর্মে কোনো বর্ণনা নেই। যারা বলেন, এটা তাদের অনুমান যা সুন্নাহ পরিপন্থী; বরং সহীহ সূত্রে ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) থেকে বর্ণিত হয়েছে।
্রوَلَا اِعْتِكَافَ إِلَّا فِىْ مَسْجِدٍ جَامِعٍগ্ধ.
“ই‘তিকাফ কেবল জামি‘ মাসজিদে হতে হবে।”[৭৫]
এ হাদীসদ্বারা পুরুষদেরকে নির্দিষ্ট করা হয়নি। সুতরাং এ নির্দেশ নারী-পুরুষ সকলের জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া ই‘তিকাফরত ব্যক্তির সাথে মাহরাম মহিলারা সাক্ষাত করতে পারবে কী?
@ অনেকেরই এমন ধারণা যে, ই’তিকাফরত ব্যক্তি সাথে তার স্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে না। অথচ নাবীপত্নী সাফিয়্যাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) বলেন :
عَنْ صَفِيَّةَ بِنْتِ حُيَيٍّ، قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مُعْتَكِفًا فَأَتَيْتُهُ أَزُوْرُهُ لَيْلًا، فَحَدَّثْتُهُ.
“রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ই’তিকাফরত ছিলেন। রাতের বেলায় আমি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য আসলাম। অতঃপর কথা-বার্তা বললাম।”[৭৬]
আরো বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ : ্রكَانَ النَّبِيُّ ﷺ، إِذَا اعْتَكَفَ، يُدْنِىْ إِلَيَّ رَأْسَهُ فَأُرَجِّلُهُ.
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ই’তিকাফকালে মাসজিদ হতে মাথা বের করে দিতেন আর তাঁর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হা) চিরুনি করে দিতেন।[৭৭]
তবে ই‘তিকাফরত ব্যক্তি স্ত্রী সহবাস করতে পারবে না। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَلَا تُبَاشِرُوْهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُوْنَ فِىْ الْمَسَاجِدِ﴾
“আর মাসজিদে ই‘তিকাফ অবস্থায় তাদের সাথে সহবাস করো না।”[৭৮]
আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
া রামাযান মাসে শয়ত্বানদের শেকলবন্দি করা হয়, তবে এ মাসেও মানুষ কেন পাপকর্মে লিপ্ত হয়?
@ অনেকের মনে যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খায় তা হলো- রামাযান মাসে তো শয়ত্বানদেরকে শিকলবন্দি করা হয়, তবে এ মাসেও মানুষ কেন পাপ কাজ করে? এ সম্পর্কিত হাদীসগুলোর একটি হলো-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ إِذَا كَانَتْ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ صُفِّدَتْ الشَّيَاطِيْنُ وَمَرَدَةُ الْجِنِّ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ وَفُتِحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ وَنَادَى مُنَادٍ يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ وَلِلّٰهِ عُتَقَاءُ مِنْ النَّارِ وَذٰلِكَ فِيْ كُلِّ لَيْلَةٍ.
হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন রামযান মাসের প্রথম রজনির আগমন ঘটে, তখন শয়ত্বান ও অবাধ্য জিন্দের শেকল দিয়ে বেধে ফেলা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, যার একটি দরজাও খোলা থাকে না; জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, যার একটি দরজাও বন্ধ থাকে না এবং একজন আহ্বানকারী আহ্বান করে- হে সৎকর্মশীল! অগ্রসর হও, হে অসৎকর্মপরায়ণ! থেমে যাও। আল্লাহ তা‘আলা (রামাযানের) প্রতিটি রাতে অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন।[৭৯]
উল্লিখিত হাদীসে শয়ত্বানদেরকে শেকলবন্দি করার কথা ব্যক্ত হয়ে, তারপরও তারা কিভাবে কুমন্ত্রণা দিয়ে মানুষকে অসৎ কর্মের প্রতি উৎসাহিত করে?
প্রথমতঃ সুনান আন্ নাসায়ী’র বর্ণনায় এসেছে-
وَتُغَلُّ فِيْهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِيْنِ.
“রামাযান মাসে অবাধ্য ও উগ্র শয়ত্বানদেরকে বন্দি করা হয়।”[৮০]
অর্থাৎ- শয়ত্বানদের মাঝেও শ্রেণিবিন্যায় রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কুমন্ত্রণাদানে অধিক পারদর্শী, উগ্র ও অবাধ্য, কেউ অপেক্ষকৃত কম পারদর্শী, আবার কেউ শিক্ষানবিশ। তবে প্রত্যেক শয়ত্বানই কমবেশি অবাধ্য, উগ্র এবং কুমন্ত্রণাদাতা। রামাযান মাসে কুমন্ত্রণাদানে অধিক পারদর্শী, উগ্র ও অবাধ্যতার দিক থেকে সিনিয়র শয়ত্বানদেরকে বন্দি করা হয়; ফলে রামাযানে পাপের পরিমাণ কমে যায়, মানুষ অধিক আল্লাহুমুখী হয়ে ‘ইবাদত-বন্দেগী, দান-সাদাক্বাহ্ প্রভৃতি নেকীর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। অপরপক্ষে ছোট শয়ত্বানগুলো বড় শয়ত্বানগুলোন স্থলাভিষিক্ত হয়ে মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে।
দ্বিতীয়তঃ রামাযানে শয়ত্বানদেরকে বন্দি রাখা হয় এর অর্থ এই নয় যে, রামাযানে কোন পাপাচার সংঘটিত হবে না। কারণ মানুষ কেবল শয়ত্বানের কুমন্ত্রণায় পাপ করে না বরং পাপাচার সংঘটিত হওয়ার পেছনে শয়ত্বান ছাড়াও আরও কিছু কারণ আছে। যেমন- (ক) রিপুর কামনা-বাসনা ও কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় পাপ করে, (খ) মানুষরূপী শয়ত্বানের খপ্পরে পড়ে পাপকার্যে লিপ্ত হয় এবং (গ) বদ অভ্যাসের বশবর্তী হয়েও পাপ করে।
অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলা যখন ইবলিসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, প্রথম মানব আদম (‘আলাইহিস্ সালাম)-কে সাজদাহ্ করো- তখন সে কোন শয়ত্বানের প্ররোচনায় আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ অমান্য করে অবাধ্য সীমালঙ্ঘন করেছিল? না, কোনো শয়ত্বান নয়; বরং তার কু-প্রবৃত্তিই তাকে অহংকারী ও অবাধ্য করে তুলেছিল, তাই সে সীমালঙ্ঘন করে অভিশপ্ত শয়ত্বানে পরিণত হলো।
এ জন্যই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) রামাযান মাসে সওম পালনকারীদেরকে কুপ্রবৃত্তি, কুঅভ্যাস প্রভৃতি ‘কু’ নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
فَإِنَّه” لِىْ وَأَنَا أَجْزِىْ بِه#، يَدَعُ شَهْوَتَه وَطَعَامَه مِنْ أَجْلِىْ.
সওম আমার জন্যে পালন করা হয় এবং আমিই এর প্রতিদান দিব। কারণ সওম পালনকারী ব্যক্তি স্বীয় প্রবত্তির তাড়না ও আহার-বিহার শুধু আমার জন্যই পরিহার করে।
আরও বলা হয়েছে-
إِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يَصْخَبْ، فَإِنْ سَابَّه أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَه فَلْيَقُلْ : إِنِّىْ امْرُؤٌ صَائِمٌ.
তোমাদের মধ্যে যে সওম পালন করবে, সে যেনো অশ্লীল কথাবার্তা না বলে আর শোরগোল বা উচ্চবাচ্য না করে। তাকে কেউ যদি গালি দেয় বা কটু কথা বলে অথবা তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তখন সে যেনো বলে, ‘আমি আমি সওম পালন করছি।[৮১]
সুতরাং শয়ত্বানকে শেকলবন্দি করা হলেও উপরোক্ত একাধিক কারণে মানুষ পাপাচার করে থাকে। এরপরও শয়ত্বানদের শেকলবন্দি প্রতিফলন ঘটে মুসলিম সমাজে। লক্ষণীয় যে, তখন মানুষ অধিক পরিমাণে সৎকর্মের দিকে ধাবিত হয়, অনেক পাপিষ্ঠ ব্যক্তি পাপ-পঙ্কিলতা ছেড়ে মাসজিদমুখী হয়, অনেকেই নতুন করে সালাত-সিয়ামের প্রতি আকৃষ্ট হয়, কুরআন তিলাওয়াত, দান-সাদাক্বাহ্, যিকর-আযকার এবং মহিলাদের মাঝে পর্দার অনুশীলন ইত্যাদি সৎকর্মে চর্চা বৃদ্ধি পায়; আর প্রকাশ্য পাপাচার অনেকাংশে হ্রাস পায়। এসবই শয়ত্বানদেরকে শৃঙ্খলিত করার বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক জ্ঞাত।
(সম্পাদনা : শাইখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী, সেক্রেটারী জেনারেল- বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস।)
[১] সূরা আল বাক্বারাহ্- ০২/১৮৩।
[২] সহীহুল বুখারী- ২/৬৭৩, ৩/২৭।
[৩] সহীহুল বুখারী- হা. ৭২৮০।
[৪] আল আমরু বিল ইত্তিবা ওয়ান নাহ্য়ু ‘আনিল ইবতিদা‘- ১/৩১ পৃষ্ঠা (মা.শা.)।
[৫] সুনান নাসাঈ- হা/২৩৩১; সুনান আবূ দাউদ- হা/২৪৫৪।
[৬] সুনান নাসাঈ- ২৩৩৩; ইবনু খুযাইমা- ১৯৩৩ (সহীহ)।
[৭] সহীহ মুসলিম- হা/১১৫৪।
[৮] আবূ দাঊদ- হা. ৪৪০৩, আত্ তিরমিযী- হা. ১৪২৩, আন্ নাসায়ী- হা. ৩৪৩২, ইবনু মাজাহ্- হা. ২০৪১, আলবানী সহীহ, মিশকাত- হা. ৩২৮৭/১৪, তাহ্ক্বীক্ব।
[৯] বুখারী- হা. ১৯৬০, সহীহ মুসলিম- হা. ১৩৬/১১৩৬।
[১০] ফতহুল বারী- ৪/৩১৭ পৃ.।
[১১] বায়হাক্বী- ২/৪৯৭; তাহ্ক্বীক্ব মিশকাত- ২/১৯২ পৃ.।
[১২] সহীহুল বুখারী- হা: ১৮৮৫, ১১৪৭, মুসলিম- হা: ১৫৭৫।
[১৩] মু‘আত্তা- হা: ২৫১, সুনানুল কুবরা বাইহাক্বী- হা: ৪৮০০, সনদ সহীহ, আল মাসাবীহ- ইমাম সুয়ূতি, পৃ: ২৭।
[১৪] সহীহুল বুখারী- হা/৪৭২; সহীহ মুসলিম- হা/৭৪৯।
[১৫] সুনান নাসাঈ- ২১৫৫।
[১৬] সুনান আবূ দাঊদ- হা. ২৩৫০, আলবানী : সহীহ।
[১৭] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৮৭।
[১৮] আর-মু’জামুল ওয়াসিত- ৮৫০, "الليل" শব্দ দৃষ্টব্য।
[১৯] সহীহুল বুখারী- হা/১৯৫৪; সহীহ মুসলিম- হা ১১০০।
[২০] সহীহুল বুখারী- হা. ১৯৫৭, সহীহ মুসলিম- হা. ৪৮/১০৯৮।
[২১] সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৩১।
[২২] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৮৪।
[২৩] হাকিম- হা. ১৬০৭, দারাকুত্নী- ২/২০৬, হা. ৩, ৬, আলবানী : সনদ সহীহ, ইরওয়াউল গালীল- ৪/১৯।
[২৪] মাজমূ ফাতাওয়া ইবনু বায (১৫/২০৩)।
[২৫] আবূ দাউদ- ৪৪০৩; তিরমিযী- ১৪২৩, নাসাঈ- ৩৪৩২।
[২৬] মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনু উসাইমীন- ফাতাওয়াস্ সিয়াম (১১২)।
[২৭] হাকিম- হা. ১৬০৭, দারাকুত্নী- ২/২০৬, হা. ৩, ৬, আলবানী : সনদ সহীহ, ইরওয়াউল গালীল- ৪/১৯।
[২৮] সহীহুল বুখারী- হা: ১৯৫২, সহীহ মুসলিম- হা: ১১১৬।
[২৯] ফাতাওয়া আল লাজ্নাদ্ দায়িমাহ- (৯/২২১)।
[৩০] সূরা আল বাক্বারাহ- ০২/১৮৭।
[৩১] বুখারী- হা. ১৯৫০, মুসলিম- হা. ১৫১/১১৪৬।
[৩২] সহীহুল বুখারী- ১/৮৪, সুনান আবূ দাঊদ- হা: ৩০৭, সুনান আন্ নাসায়ী- হা: ৩৬৮, সুনান ইবনু মাজাহ্- হা: ৬৪৭।
[৩৩] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়াসমগ্র (১০/১৫১)।
[৩৪] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৮৫।
[৩৫] ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম, মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমিন- পৃ: ৪৫৪।
[৩৬] তিরমিযী- হা. ৭১৫, হাসান সহীহ, আবূ দাঊদ- হা. ২৪০৮, হাসান সহীহ, আন্ নাসায়ী- হা. ২২৬৯, সহীহ, ইবনু মাজাহ্- হা. ১৬৬৭, আলবানী হাদীসটিকে হাসান সহীহ, বলেছেন।
[৩৭] আবূ দাঊদ- ২৩১৮, হাসান সহীহ, বায়হাক্বী- হা. ৭৮৬৬, আলবানী : সহীহ, মুখ্তাসারু ইরওয়াউল- হা. ৯১৩।
[৩৮] তুহ্ফাতুল ইখওয়ান- ১৭১।
[৩৯] বুখারী- ১৯৩১, মুসলিম- ১১০৯, ইবনু মাজাহ্- ১৭০৪।
[৪০] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৮৬।
[৪১] ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম পৃষ্ঠা- ৪৭৮।
[৪২] আল-শারহুল মুমতি- ৬/৩৮৮।
[৪৩] শাইখ বিন বায-এর ফাতাওয়া থেকে, তুহফাতুল ইখওয়ান- ১৭৫।
[৪৪] কিতাব আদ্-দা‘ওয়াহ লি-শাইখ ওসাইমী- ২/১৬৮ পৃ:।
[৪৫] তিরমিযী- ৭২০, আলবানী : সহীহ, আবূ দাঊদ- হা. ২৩৮০।
[৪৬] সহীহুল বুখারী- হা/১৮৩৮।
[৪৭] স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র- (১০/২৬৪)।
[৪৮] আবূ দাঊদ- ১৪২, আত্ তিরমিযী- ৭৮৮, আন্ নাসায়ী- ৮৭, ইবনু মাজাহ্- ৪০৭, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, মিশকাত- ৪০৫/১৫। সংগৃহীত শাইখ বিন বায-এর ফাতাওয়া থেকে, তুহফাতুল ইখওয়ান- ১/১৭৫, হা. ১৪।
[৪৯] শাইখ বিন বায-এর ফাতাওয়া থেকে, তুহফাতুল ইখওয়ান- ১/১৭৪।
[৫০] সহীহুল বুখারী- হা/১৫০৯।
[৫১] সাউদী ফাতাওয়া কমিটি- ৯/৩৭৩।
[৫২] সহীহুল বুখারী- হা/১৫১১।
[৫৩] আবূ দাঊদ- অধ্যায় যাকাত,অনুচ্ছেদ- ফিতরের যাকাত।
[৫৪] সহীহুল বুখারী- হা. ১৫০৩, সহীহ মুসলিম- হা. ৯৮৪, সুনান আবূ দাঊদ- হা. ১৬১১, সুনান আত্ তিরমিযী- হা. ৬৭৫, সুনান আন্ নাসায়ী- হা. ২৫০৪ ও ইবনু মাজাহ্- হা. ১৪২৫।
[৫৫] সহীহুল বুখারী- হা. ১৫০৮; সহীহ মুসলিম-২২৮১।
[৫৬] সহীহুল বুখারী- হা/১৫০৩; সহীহ মুসলিম- হা/২২৭৫।
[৫৭] ফাতাওয়া ও মাসায়িল- আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল কুরায়শী (রহিমাহুল্লা-হ)।
[৫৮] সূরা আত্ তাওবাহ্- ৯/৬০।
[৫৯] আবূ দাউদ, যাকাতুল ফিতর- ১৬০৬ (হাসান), ইরওয়াউল গালীল- ৮৪৩।
[৬০] দেখুন : মাজমু‘উ ফাতাওয়া- ২৫/৭৩, যাদুল মা‘আদ- ২/২২, নায়লুল আউত্বার- ৩-৪/৬৫৭, আওনুল মা‘বূদ- ৫-৬/৩, শারহুল মুমতি- ৬/১৮৪।
[৬১] ফাতাওয়া লাজনা দায়িমাহ্- ৯/৩৮৯।
[৬২] সহীহুল বুখারী- ১৫১১।
[৬৩] ফাতাওয়া লাজনা দায়িমাহ্- ৯/৩৮৯।
[৬৪] ফাতাওয়া লাজনা দায়িমাহ্- ৯/৩৭৭।
[৬৫] সহীহুল বুখারী- ২০২০ ও ২০১৭; সহীহ মুসলিম- ১১৬৯।
[৬৬] সহীহ মুসলিম- হাঃ ২১২/১১৬৬।
[৬৭] সহীহুত তিরমিযী- হা/৩৫১৩।
[৬৮] সহীহুল বুখারী- হা/২০২৫; সহীহ মুসলিম- হা/১১৭১।
[৬৯] সহীহুল বুখারী- হা/২০৪১ ও সহীহ মুসলিম- হা/১১৭৩।
[৭০] ফাতাওয়াস সিয়াম- পৃ. ৫০১।
[৭১] ফাতাওয়া লাজনা দায়িমাহ- ১০/৪১১; ফাতাওয়াস সিয়াম- পৃ. ৫০১।
[৭২] কিতাবুল মাজমু- ৬/৩২৩।
[৭৩] সিলসিলা য‘ঈফাহ্- হা: ৫২০, ২১৫২২ ফাতওয়া, লাজনাহ দায়িমাহ- ফাতওয়া নং- ১১০২৯।
[৭৪] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৮৭।
[৭৫] সুনান আবূ দাঊদ- হা: ২৪৭৩।
[৭৬] সহীহুল বুখারী- হা. ৩২৮১, সহীহ মুসলিম- হা. ২৪/২১৭৫।
[৭৭] সহীহ মুসলিম- হা. ৬/২৯৭।
[৭৮] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৮৭।
[৭৯] সহীহুল বুখারী- ১৮৯৮, ১৮৯৯, ৩২৭৭, মুসলিম- ১০৭৯।
[৮০] সুনান আন্ নাসায়ী- হাঃ ২১০৬, সহীহ।
[৮১] সহীহুল বুখারী- হা/১৯০৪; সহীহ মুসলিম- হা/১১৫১।
[২] সহীহুল বুখারী- ২/৬৭৩, ৩/২৭।
[৩] সহীহুল বুখারী- হা. ৭২৮০।
[৪] আল আমরু বিল ইত্তিবা ওয়ান নাহ্য়ু ‘আনিল ইবতিদা‘- ১/৩১ পৃষ্ঠা (মা.শা.)।
[৫] সুনান নাসাঈ- হা/২৩৩১; সুনান আবূ দাউদ- হা/২৪৫৪।
[৬] সুনান নাসাঈ- ২৩৩৩; ইবনু খুযাইমা- ১৯৩৩ (সহীহ)।
[৭] সহীহ মুসলিম- হা/১১৫৪।
[৮] আবূ দাঊদ- হা. ৪৪০৩, আত্ তিরমিযী- হা. ১৪২৩, আন্ নাসায়ী- হা. ৩৪৩২, ইবনু মাজাহ্- হা. ২০৪১, আলবানী সহীহ, মিশকাত- হা. ৩২৮৭/১৪, তাহ্ক্বীক্ব।
[৯] বুখারী- হা. ১৯৬০, সহীহ মুসলিম- হা. ১৩৬/১১৩৬।
[১০] ফতহুল বারী- ৪/৩১৭ পৃ.।
[১১] বায়হাক্বী- ২/৪৯৭; তাহ্ক্বীক্ব মিশকাত- ২/১৯২ পৃ.।
[১২] সহীহুল বুখারী- হা: ১৮৮৫, ১১৪৭, মুসলিম- হা: ১৫৭৫।
[১৩] মু‘আত্তা- হা: ২৫১, সুনানুল কুবরা বাইহাক্বী- হা: ৪৮০০, সনদ সহীহ, আল মাসাবীহ- ইমাম সুয়ূতি, পৃ: ২৭।
[১৪] সহীহুল বুখারী- হা/৪৭২; সহীহ মুসলিম- হা/৭৪৯।
[১৫] সুনান নাসাঈ- ২১৫৫।
[১৬] সুনান আবূ দাঊদ- হা. ২৩৫০, আলবানী : সহীহ।
[১৭] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৮৭।
[১৮] আর-মু’জামুল ওয়াসিত- ৮৫০, "الليل" শব্দ দৃষ্টব্য।
[১৯] সহীহুল বুখারী- হা/১৯৫৪; সহীহ মুসলিম- হা ১১০০।
[২০] সহীহুল বুখারী- হা. ১৯৫৭, সহীহ মুসলিম- হা. ৪৮/১০৯৮।
[২১] সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৩১।
[২২] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৮৪।
[২৩] হাকিম- হা. ১৬০৭, দারাকুত্নী- ২/২০৬, হা. ৩, ৬, আলবানী : সনদ সহীহ, ইরওয়াউল গালীল- ৪/১৯।
[২৪] মাজমূ ফাতাওয়া ইবনু বায (১৫/২০৩)।
[২৫] আবূ দাউদ- ৪৪০৩; তিরমিযী- ১৪২৩, নাসাঈ- ৩৪৩২।
[২৬] মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনু উসাইমীন- ফাতাওয়াস্ সিয়াম (১১২)।
[২৭] হাকিম- হা. ১৬০৭, দারাকুত্নী- ২/২০৬, হা. ৩, ৬, আলবানী : সনদ সহীহ, ইরওয়াউল গালীল- ৪/১৯।
[২৮] সহীহুল বুখারী- হা: ১৯৫২, সহীহ মুসলিম- হা: ১১১৬।
[২৯] ফাতাওয়া আল লাজ্নাদ্ দায়িমাহ- (৯/২২১)।
[৩০] সূরা আল বাক্বারাহ- ০২/১৮৭।
[৩১] বুখারী- হা. ১৯৫০, মুসলিম- হা. ১৫১/১১৪৬।
[৩২] সহীহুল বুখারী- ১/৮৪, সুনান আবূ দাঊদ- হা: ৩০৭, সুনান আন্ নাসায়ী- হা: ৩৬৮, সুনান ইবনু মাজাহ্- হা: ৬৪৭।
[৩৩] স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়াসমগ্র (১০/১৫১)।
[৩৪] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৮৫।
[৩৫] ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম, মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমিন- পৃ: ৪৫৪।
[৩৬] তিরমিযী- হা. ৭১৫, হাসান সহীহ, আবূ দাঊদ- হা. ২৪০৮, হাসান সহীহ, আন্ নাসায়ী- হা. ২২৬৯, সহীহ, ইবনু মাজাহ্- হা. ১৬৬৭, আলবানী হাদীসটিকে হাসান সহীহ, বলেছেন।
[৩৭] আবূ দাঊদ- ২৩১৮, হাসান সহীহ, বায়হাক্বী- হা. ৭৮৬৬, আলবানী : সহীহ, মুখ্তাসারু ইরওয়াউল- হা. ৯১৩।
[৩৮] তুহ্ফাতুল ইখওয়ান- ১৭১।
[৩৯] বুখারী- ১৯৩১, মুসলিম- ১১০৯, ইবনু মাজাহ্- ১৭০৪।
[৪০] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৮৬।
[৪১] ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম পৃষ্ঠা- ৪৭৮।
[৪২] আল-শারহুল মুমতি- ৬/৩৮৮।
[৪৩] শাইখ বিন বায-এর ফাতাওয়া থেকে, তুহফাতুল ইখওয়ান- ১৭৫।
[৪৪] কিতাব আদ্-দা‘ওয়াহ লি-শাইখ ওসাইমী- ২/১৬৮ পৃ:।
[৪৫] তিরমিযী- ৭২০, আলবানী : সহীহ, আবূ দাঊদ- হা. ২৩৮০।
[৪৬] সহীহুল বুখারী- হা/১৮৩৮।
[৪৭] স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র- (১০/২৬৪)।
[৪৮] আবূ দাঊদ- ১৪২, আত্ তিরমিযী- ৭৮৮, আন্ নাসায়ী- ৮৭, ইবনু মাজাহ্- ৪০৭, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, মিশকাত- ৪০৫/১৫। সংগৃহীত শাইখ বিন বায-এর ফাতাওয়া থেকে, তুহফাতুল ইখওয়ান- ১/১৭৫, হা. ১৪।
[৪৯] শাইখ বিন বায-এর ফাতাওয়া থেকে, তুহফাতুল ইখওয়ান- ১/১৭৪।
[৫০] সহীহুল বুখারী- হা/১৫০৯।
[৫১] সাউদী ফাতাওয়া কমিটি- ৯/৩৭৩।
[৫২] সহীহুল বুখারী- হা/১৫১১।
[৫৩] আবূ দাঊদ- অধ্যায় যাকাত,অনুচ্ছেদ- ফিতরের যাকাত।
[৫৪] সহীহুল বুখারী- হা. ১৫০৩, সহীহ মুসলিম- হা. ৯৮৪, সুনান আবূ দাঊদ- হা. ১৬১১, সুনান আত্ তিরমিযী- হা. ৬৭৫, সুনান আন্ নাসায়ী- হা. ২৫০৪ ও ইবনু মাজাহ্- হা. ১৪২৫।
[৫৫] সহীহুল বুখারী- হা. ১৫০৮; সহীহ মুসলিম-২২৮১।
[৫৬] সহীহুল বুখারী- হা/১৫০৩; সহীহ মুসলিম- হা/২২৭৫।
[৫৭] ফাতাওয়া ও মাসায়িল- আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল কুরায়শী (রহিমাহুল্লা-হ)।
[৫৮] সূরা আত্ তাওবাহ্- ৯/৬০।
[৫৯] আবূ দাউদ, যাকাতুল ফিতর- ১৬০৬ (হাসান), ইরওয়াউল গালীল- ৮৪৩।
[৬০] দেখুন : মাজমু‘উ ফাতাওয়া- ২৫/৭৩, যাদুল মা‘আদ- ২/২২, নায়লুল আউত্বার- ৩-৪/৬৫৭, আওনুল মা‘বূদ- ৫-৬/৩, শারহুল মুমতি- ৬/১৮৪।
[৬১] ফাতাওয়া লাজনা দায়িমাহ্- ৯/৩৮৯।
[৬২] সহীহুল বুখারী- ১৫১১।
[৬৩] ফাতাওয়া লাজনা দায়িমাহ্- ৯/৩৮৯।
[৬৪] ফাতাওয়া লাজনা দায়িমাহ্- ৯/৩৭৭।
[৬৫] সহীহুল বুখারী- ২০২০ ও ২০১৭; সহীহ মুসলিম- ১১৬৯।
[৬৬] সহীহ মুসলিম- হাঃ ২১২/১১৬৬।
[৬৭] সহীহুত তিরমিযী- হা/৩৫১৩।
[৬৮] সহীহুল বুখারী- হা/২০২৫; সহীহ মুসলিম- হা/১১৭১।
[৬৯] সহীহুল বুখারী- হা/২০৪১ ও সহীহ মুসলিম- হা/১১৭৩।
[৭০] ফাতাওয়াস সিয়াম- পৃ. ৫০১।
[৭১] ফাতাওয়া লাজনা দায়িমাহ- ১০/৪১১; ফাতাওয়াস সিয়াম- পৃ. ৫০১।
[৭২] কিতাবুল মাজমু- ৬/৩২৩।
[৭৩] সিলসিলা য‘ঈফাহ্- হা: ৫২০, ২১৫২২ ফাতওয়া, লাজনাহ দায়িমাহ- ফাতওয়া নং- ১১০২৯।
[৭৪] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৮৭।
[৭৫] সুনান আবূ দাঊদ- হা: ২৪৭৩।
[৭৬] সহীহুল বুখারী- হা. ৩২৮১, সহীহ মুসলিম- হা. ২৪/২১৭৫।
[৭৭] সহীহ মুসলিম- হা. ৬/২৯৭।
[৭৮] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৮৭।
[৭৯] সহীহুল বুখারী- ১৮৯৮, ১৮৯৯, ৩২৭৭, মুসলিম- ১০৭৯।
[৮০] সুনান আন্ নাসায়ী- হাঃ ২১০৬, সহীহ।
[৮১] সহীহুল বুখারী- হা/১৯০৪; সহীহ মুসলিম- হা/১১৫১।
ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:06:38
সূর্যাস্ত : 6:08:21
আপনার মন্তব্য1