সাময়িক প্রসঙ্গ
আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমতা ও আমাদের শিক্ষা
হারুনুর রশীদ ত্রিশালী
প্রথম খুৎবাহ্
إن الحمد لله، نحمده ونستعينه ونستغفره، ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا، من يهده الله فلا مضلّ له، ومن يضلل فلا هادي له، وأشهد ألا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأشهد أن محمدا عبده ورسوله، صلى الله عليه وعلى آله وسلم.
অতঃপর নিশ্চয়ই মহাসত্য বাণী হচ্ছে- মহান আল্লাহর কিতাব, আর উত্তম পথ হচ্ছে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর পথ, বিদ‘আত হচ্ছে সর্বনিকৃষ্ট কাজ, দ্বীনের মাঝে প্রত্যেক নতুন কিছুই বিদ‘আত; আর প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।
হে মানব জাতি! জেনে রাখুন যে, আপনাদের প্রতিপালক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ, যিনি ছাড়া সত্য কোনো মা‘বূদ নেই; তাঁর দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী, তিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে যথাযথ অনুপাতে পরিমিত করেছেন, তিনি সমস্ত কিছুর বিস্তারিত হিসাব রাখেন এবং যথাযথভাবে পরিচালনা করেন।
তিনি নিজ ইচ্ছামত যে কোনো কিছু দিয়ে, যে কোনো কারণে, যে কাউকেই অনুগ্রহ করেন। তিনি তাঁর অদৃশ্য ক্ষমতা ও সূক্ষ্ম জ্ঞান দ্বারা সৃষ্টির অন্তর্নিহিত বিষয় উদঘাটনে ও স্বীয় হুকুম বাস্তবায়নে সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক অবহিত।
তিনি যাবতীয় বস্তুর উপর সূক্ষ্ম দৃষ্টিপাত করে সেগুলোকে আয়ত্ব করেন, একেবারে গোপন ও গুনগুন শব্দও যথাযথভাবে শ্রবণ করেন, তিনি স্বীয় জ্ঞান দ্বারা ক্ষুদ্র ও সূক্ষ্ম চিন্তাকেও নির্ণয় করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “তিনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, তাঁর সন্তান হবে কিভাবে? তাঁর তো কোনো সঙ্গিনী নেই। আর তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক বস্তু তিনিই তো আল্লাহ, তোমাদের রব; তিনি ছাড়া কোনো সম্বন্ধে তিনি সবিশেষ অবগত। সত্য ইলাহ নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা; কাজেই তোমরা তাঁর ‘ইবাদত করো; তিনি দৃষ্টিসমূহ তাঁকে আয়ত্ব করতে পারে না, অথচ তিনি সকল সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক। দৃষ্টিকে আয়ত্ব করেন এবং তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।”
তিনি আরো বলেন : “আর তোমরা তোমাদের কথা গোপনেই বলো অথবা প্রকাশ্যে বলো, তিনি তো  যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি অন্তরসমূহে যা আছে তা সম্পর্কে সম্যক অবগত। জানেন না? অথচ তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।”
আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “আর আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা, যা তোমাদের গৃহে পাঠ করা হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখবে; নিশ্চয় আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।”
তিনি তাঁর সূক্ষ্ম কৌশলে আকাশের মেঘমালা হতে বৃষ্টি দিয়ে তৃণবিহীন মরুর বুকে পানির ব্যবস্থা করেন; এভাবে তিনি শস্যবীজকে সিক্ত করেন, শেকড়ে পানি পৌঁছিয়ে পরিতৃপ্তি দেন এবং বাগানে স্বচ্ছ পানি প্রবাহিত করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “তুমি কি দেখো না যে, আল্লাহ পানি বর্ষণ করেন আকাশ হতে; যাতে সবুজ শ্যামল হয়ে উঠে যমীন? নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।”
তিনি তাঁর সৃষ্টিকুলের উপর অনুগ্রহ করে- “চোখে দেখা যায় না এমন” অপর সূক্ষ্ম সৃষ্টির মাধ্যমে এমন কৌশল বাস্তবায়ন করেছেন যে, এর ফলে প্রধান প্রধান বসতিপূর্ণ নগরী জনশুন্য হয়ে পড়েছে, সুঠাম দেহ দূর্বল হয়ে পড়েছে, অসংখ্য সমাগমকে বিক্ষিপ্ত করেছে, অঢেল সম্পদ ক্ষয় হয়েছে, অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে লাঞ্চিত করেছে, সুস্থকে রোগী বানিয়েছে, প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির পদস্খলন ঘটিয়েছে! অথচ সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গ রয়েছে, সমর্থনপুষ্ট বাহিনী রয়েছে, অনেক ধার্মিক ও তাপস ব্যক্তিও রয়েছে, রয়েছে অনেক অন্যায়কারী ও ঝগড়াটে মানুষ।
এটা অনুপ্রবেশ করেছে ব্যস্ত শহরের মানুষজনের মাঝে, আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে; নেই কোনো গুনগুন আওয়াজ নেই কোনো ছোঁয়া, অথচ যার গতকালও সেটার অস্তিত্ব ছিল না।
এটা বন্ধুদেরকে শত্রুর আচরণরূপে আক্রমন করেছে; ফলে সুসম্পর্ক থাকা সত্বেও বিচ্ছিন্ন, কাছে থেকেও দূরে, প্রিয়দের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, তারা পরস্পরের দিকে এমনভাবে তাকায় যেমন কোনো তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি পানির ফোয়ারার দিকে আর অনাবৃষ্টিতে পতিত ব্যক্তি বৃষ্টির প্রত্যাশায় মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকে।
এটা শুধুই আমাদের কৃতকর্মের ফল এবং আমাদের থেকে কিছু উঠিয়ে নেওয়ার কারণে। অতএব কেউ যেনো মনে না করে যে, শত্রু বিজয়ী হয়েছে! বরং হিফাযতকারী আল্লাহ তা‘আলা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন; যেনো তারা বিনয়ী হয়! যেনো তারা সৎপথে ফিরে আসে! যেনো তারা উপদেশ গ্রহণ করে!
অন্তরে মরীচিকা জমাট বেঁধেছে, তার প্রতি অদৃশ্যের জ্ঞানী সদয় হয়েছেন। তা যতই শক্ত হোক না কেনো, দুর্বল হয়, আর তা যতই কোমল হোক না কেনো, কঠোরও হয় ... যেনো আল্লাহ মু’মিনদেরকে পরিশোধন করতে পারেন এবং কাফিরদেরকে নিশ্চিহৃ করতে পারেন, আর মুনাফিক্বদেরকে প্রকাশ করে দিতে পারেন এবং অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ নিতে পারেন।
অনুরূপভাবে মু’মিন সম্প্রদায়ের অন্তর প্রশান্তি করবেন এবং তাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যককে শহীদরূপে গ্রহণ করবেন; নিশ্চয় আমার রব যা ইচ্ছা তা নিপুণতার সাথে করেন, নিশ্চয় তিনিই সর্বজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
দ্বিতীয় খুতবাহ্
الحمد لله وكفى، وصلاةً وسلاما على النبي المصطفى، وآله وصحبه أولي البر والوفا، ومن اتبع بإحسان واقتفى.
অতঃপর আপনারা যথাযথভাবে মহান আল্লাহকে ভয় করুন; যে মহান আল্লাহকে ভয় করে চলে তিনি তার জন্য (উত্তরণের) পথ তৈরি করে দেন এবং তাকে এমনভাবে রিয্ক দিবেন যা তার কল্পণাতীত। আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ইচ্ছে পূরণ করবেনই; অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন সুনির্দিষ্ট মাত্রা। আর যে মহান আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন। আর যে মহান আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করে তিনি তার পাপসমূহ মোচন করে দেন এবং তাকে দিবেন মহাপুরস্কার।
হে মানবজাতি! আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত কোমল; তিনি তাঁর দয়ায় দুর্বল সৃষ্টিকেও গোপন রিয্ক দেন যদিও তা প্রতাপশালীরা অপছন্দ করে। তিনি তাঁর দুর্বল বান্দাদের প্রতি সদয় হন যদিও প্রভাবশালীরা অসম্মতি জ্ঞাপন করে। তিনি যাকে ইচ্ছে রিয্ক দেন, তিনিই শক্তিধর, পরাক্রমশালী। তিনি অতি পবিত্র... তাঁর সৃষ্টিজীবকে তিনি অসংখ্য নি‘আমত দিয়েছেন, বান্দাদের অল্প ‘ইবাদতও তিনি গ্রহণ করেন।
যে পরিমান মেহেবানী করবেন সে অনুপাতেই দয়া ও দান পাবেন। তিনিই আপনার ডাকে সাড়া দেন, তাঁর দিকে ফিরে এলে আপনাকে আশ্রয় দেন, তাঁকে ভালবাসলে আপনাকে কাছে টেনে নেন, তাঁর আনুগত্য করলে তিনিই আপনার জন্য যথেষ্ট, আর তাঁর অবাধ্য হলে তিনি আপনাকে ক্ষমা করেন, তাঁর থেকে বিমূখ হলেও তিনি আপনাকে আহ্বান করেন আর তাঁর দিকে অগ্রসর হলে তিনি আপনাকে হিদায়াত করেন।
আপনি সৎকর্ম করলে তিনি আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিবেন, ত্রুটি করলে আপনাকে ক্ষমা করবেন। যে তাঁর জন্য নমনীয় হয় তিনি তাকে সম্মানিত করেন, আর যে তাঁর মুখাপেক্ষী হয় তাকে তিনি স্বচ্ছল করেন। তিনি প্রিয়দের কাছে কোনো মাধ্যম কামনা করেন না; বরং তাঁর নির্দেশসমূহ সাধ্যের মধ্যে, নিষেধসমূহ শিষ্টাচারমূলক, তাঁর দানসমূহ কল্যাণকর, যা থেকে বঞ্চিত করেন তা গচ্ছিত রাখেন। তাঁর অনুগ্রহের সমন্বয়ক হচ্ছে সদয় আচরণ ও নিকটবর্তী হওয়া; কেননা তিনিই নিকটবর্তী, ডাকে সাড়া প্রদানকারী।
আর যে ব্যক্তি তার অন্তরে যা আছে সে সম্বন্ধে সূক্ষ্মদর্শী আল্লাহকে সাক্ষী রাখে তবে তাঁর অন্তরের কঠোরতা দূরীভূত হবে। আর সবচেয়ে বড় দয়া ও সহানুভূতি হচ্ছে- ‘ইবাদত পালনে সাহায্য করেছেন, তাকদীরের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ ও আত্মসমর্পণ, তাওবাহ্ ও বিনয়তা, নতিস্বীকার ও ঈমান আনার সুযোগ দিয়েছেন।
সর্বোপরি, হে আল্লাহর বান্দাগণ! আপনারা নিজ নিজ বাড়িতে ক্বিবলামুখী করে নামাযের জায়াগা বানিয়ে নামায আদায় করুন, আর মহান আল্লাহর আনুগত্যমূলক কাজে নেতৃবর্গের আদেশ মেনে চলুন।
দরূদ ও সালাম পাঠ করুন শ্রেষ্ঠ নাবী ও ওলী, আমাদের নেতা উম্মী নাবী মুহাম্মাদ-এর উপর। যিনি তাকে মনোনয়ন করেছেন তিনি বলেন : “নিশ্চয় আল্লাহ নাবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নাবীর জন্য দু‘আ-ইস্তিগফার করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নাবীর উপর দরুদ পাঠ করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।”
[খতীব : শাইখ আহমাদ বিন তালিব হাফিযাহুল্লাহ, সম্পাদনায় : আব্দুল মতিন (শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক, জমঈয়ত শুব্বানে আহলে আহলে হাদীস বাংলাদেশ ও যুগ্ম-পরিচালক, শুব্বান রিসার্চ সেন্টার।), ২০ মার্চ- ২০২০ শুক্রবার প্রদত্ত খুতবার বঙ্গানুবাদ]

++

আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 5:43:02 সূর্যাস্ত : 6:09:54

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত