সাময়িক প্রসঙ্গ
সুদৃঢ় ঈমান ও তার প্রতিফল
আবূ সা‘আদ আব্দুল মোমেন বিন আব্দুস্ সামাদ

আল্লাহ তা‘আলার বাণী
﴿إِنَّ ٱلَّذِيْنَ قَالُوْا۟ رَبُّنَا ٱللهُ ثُمَّ ٱسْتَقَٰمُوْا۟ تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُوْا۟ وَلَا تَحْزَنُوْا۟ وَأَبْشِرُوْا۟ بِٱلْجَنَّةِ ٱلَّتِىْ كُنتُمْ تُوْعَدُوْنَ ۝ نَحْنُ أَوْلِيَآؤُكُمْ فِىْ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا وَفِىْ ٱلْءَاخِرَةِ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَشْتَهِىٓ أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْنَ ۝ نُزُلًا مِّنْ غَفُوْرٍ رَّحِيْمٍ﴾
সরল বঙ্গানুবাদ
“নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের রব (পালনকর্তা) আল্লাহ, অতঃপর তাতেই সুদৃঢ় থাকে, তাদের কাছে ফেরেশ্তা অবতীর্ণ হয় এবং বলে- তোমরা ভয় করো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শুনো। ইহকালে ও পরকালে আমরা তোমাদের বন্ধু। তোমাদের জন্য সেখানে রয়েছে যা তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমরা দাবি করো।
এটি ক্ষমাশীল দয়াময়ের পক্ষ থেকে সাদর আপ্যায়ন।[১]
শাব্দিক ব্যখ্যা
(১) إِنَّ নিশ্চয়, (২) ٱلَّذِيْنَ যারা, (৩) قَالُوا۟ তারা বলে, (৪) رَبُّنَا ٱللهُ আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, (৫) ثُمَّ অতঃপর, (৬) ٱسْتَقَٰمُوْا۟ তারা সুদৃঢ় থাকে, (৭) تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ তাদের কাছে অবতরণ করে, (৮) ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ ফেরেশ্তা, (৯) أَلَّا تَخَافُوْا তারা যেন ভয় না করে, (১০) وَلَا تَحْزَنُوْا۟ এবং চিন্তা না করে, (১১) وَأَبْشِرُوْا۟ এবং সুসংবাদ দাও, (১২) بِٱلْجَنَّةِ জান্নাতের, (১৩) ٱلَّتِىْ যার, (১৪) كُنْتُمْ তোমারা ছিলে, (১৫) تُوْعَدُوْنَ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। (১৬) نَحْنُ আমরা, (১৭) أَوْلِيَآؤُكُمْ তোমাদের বন্ধু, (১৮) فِىْ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا দুনিয়ার জীবনে, (১৯) وَفِىْ ٱلْءَاخِرَةِ এবং পরকালে, (২০) وَلَكُمْ এবং তোমাদের জন্য, (২১) فِيْهَا সেখানে রয়েছে, (২২) مَا تَشْتَهِىٓ أَنفُسُكُمْ তোমাদের মন যা চায়, (২৩) وَلَكُمْ এবং তোমাদের জন্য, (২৪) فِيْهَا সেখানে রয়েছে, (২৫) مَا تَدَّعُوْنَ যা তোমরা দাবি করো, (২৬) نُزُلًا সাদর আপ্যায়ন, (২৭) مِّنْ থেকে বা হইতে, (২৮) غَفُوْرٍ ক্ষমাশীল, (২৯) رَّحِيْمٍ পরমদয়ালু।
শানে নূযুল
নবী করিম (সা.)-এর প্রাচীনতম জীবনীকার মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক বিখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মাদ ইবনু কা‘ব আল-কারযীর বরাত দিয়ে এই কাহিনী উদ্ধৃত করেছেন যে, একদিন কিছু সংখ্যক কুরাইশ নেতা মসজিদে হারামের মধ্যে আসর জমিয়ে বসেছিল এবং মসজিদের অন্য এক কোণে রাসূলুল্লাহ (সা.) একাকী বসেছিলেন। এটা এমন এক সময়ের ঘটনা যখন হামযাহ্ (রাযি.) ঈমান এনেছিলেন এবং কুরাইশরা প্রতিনিয়ত মুসলমানদের সাংগঠনিক উন্নতি দেখে অস্থির হয়ে উঠছিল। এই সময়ে ‘উত্ববাহ্ ইবনু রাবী’আ (আবূ সুফিয়ানের শ্বশুর) কুরাইশ নেতাদের বললেন, ভাইসব! আপনারা যদি ভালো মনে করেন তাহলে আমি গিয়ে মুহাম্মাদের (সা.) সাথে আলাপ করতে এবং তাঁর কাছে কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করতে পারি। তিনি হয়তো তার কোনোটি মেনে নিতে পারেন এবং আমাদের কাছেও তা গ্রহণ যোগ্য হতে পারে। আর এভাবে তিনি আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। উপস্থিত সবাই তার সাথে একমত হলো এবং ‘উত্ববাহ্ উঠে নবী (সা.)-এর কছে গিয়ে বসলো। নবী (সা.) তার দিকে ফিরে বসলে সে বললো : ভাতিজা, বংশ ও গোত্রের বিচারে তোমার ক্বওমের মধ্যে তোমার যে মর্যাদা তা তুমি অবগত আছ। কিন্তু তুমি তোমার ক্বওমকে এক মুসিবতের মধ্যে নিক্ষেপ করেছ। তুমি ক্বওমের ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছ। গোটা ক্বওমকে নির্বোধ প্রতিপন্ন করেছ। ক্বওমের ধর্ম ও তাদের উপাস্যদের সমালোচনা করেছো এবং এমন কথা বলতে শুরু করেছ যার সারবস্তু হলো- আমাদের সকলের বাপ-দাদা কাফের ছিল। এখন আমার কথা একটু মনোযোগ দিয়ে শুনো। আমি তোমার কাছে কিছু প্রস্তাব রাখছি, প্রস্তাবগুলো গভীরভাবে চিন্তা করে দেখো। “হয়তো তার কোনোটি তুমি গ্রহণ করতে পার।” রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন- আবুল ওয়ালীদ! আপনি বলুন, আমি শুনবো। সে বললো- ভাতিজা, তুমি যে কাজ শুরু করেছে তা দিয়ে সম্পদ অর্জন যদি তোমার উদ্দেশ্য হয় তাহলে আমরা সবাই মিলে তোমাকে এতো সম্পদ দেব যে, তুমি আমাদের মধ্যে সবার চেয়ে সম্পদশালী হয়ে যাবে। এভাবে তুমি যদি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব কামনা করে থাকো তাহলে আমরা তোমাকে আমাদের নেতা বানিয়ে নিচ্ছি, তোমাকে ছাড়া কোনো বিষয়ে ফায়সালা করবো না। যদি তুমি বাদশাহী চাও তাহলে আমরা তোমাকে আমাদের বাদশাহ বানিয়ে নিচ্ছি। আর যদি তোমার ওপর কোনো জিন্ প্রভাব বিস্তার করে থাকে, যাকে তুমি নিজে তাড়াতে সক্ষম নও, তাহলে আমরা ভালো ভালো চিকিৎসক ডেকে নিজের খরচে তোমার চিকিৎসা করিয়ে দেই। ‘উত্ববাহ্ এসব কথা বলছিল আর নবী (সা.) চুপচাপ তার কথা শুনছিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আবুল ওয়ালীদ, আপনি কি আপনার সব কথা বলেছেন? সে বললো- হ্যাঁ। তিনি বললেন- তাহলে এখন আমার কথা শুনুন। এরপর তিনি “বিস্মিল্লা-হির রহ্মা-নির রাহীম পড়ে এই সূরা (হা-মীম, আস্ সাজদাহ্) তিলাওয়াত করতে শুরু করলেন। ‘উত্ববাহ্ তার দুই হাত পেছনের দিকে মাটিতে হেলান দিয়ে গভীর মনোযোগের সাথে শুনতে থাকলো। সিজদার আয়াত (৩৮ নং আয়াত) পর্যন্ত তিলাওয়াাত করে তিনি সিজদাহ্ করলেন এবং মাথা তুলে বললেন, হে আবুল ওয়ালীদ! আমার জবাবও আপনি পেয়ে গেলেন। এখন যা ইচ্ছা করেন।” ‘উত্ববাহ্ উঠে কুরাইশ নেতাদের আসরের দিকে অগ্রসর হলে লোকজন দূর থেকে তাকে দেখেই বলল, মহান আল্লাহ‌র শপথ! ‘উত্ববার চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। যে চেহারা নিয়ে সে গিয়েছিল এটা সেই চেহারা নয়। সে এসে বসলে লোকজন তাকে জিজ্ঞেস করলো, কি শুনে এলে। সে বললো- “আল্লাহর কসম! আমি এমন কথা শুনেছি যা এর আগে কখনো শুনিনি। আল্লাহ‌র কসম! এটা না কবিতা, না যাদু, না গণনা বিদ্যা। হে কুরাইশ নেতৃবৃন্দ! আমার কথা শুনো এবং তাঁকে তাঁর কাজ করতে দাও। আমার বিশ্বাস, এ বাণী সফল হবেই। মনে করো আরবের লোকেরা যদি তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে তাহলে নিজের ভাইয়ের গায়ে হাত তোলা থেকে তোমরা রক্ষা পেয়ে যাবে এবং অন্যরাই তাঁকে পরাভূত করবে। পক্ষান্তরে সে যদি আরবদের বিরুদ্ধে বিজয় হয় তাহলে তাঁর রাজত্ব তোমাদেরই রাজত্ব এবং তাঁর সম্মান ও মর্যাদা তোমাদেরই সম্মান ও মর্যাদা।” তার এই কথা শুনামাত্র কুরাইশ নেতারা বলে উঠলো, “ওয়ালীদের বাপ, শেষ পর্যন্ত তোমার ওপর তার যাদুর প্রভাব পড়লো”, ‘উত্ববাহ্ বললো- “আমি আমার মতামত তোমাদের সামনে পেশ করলাম। এখন তোমাদের যা ইচ্ছা করো।”[২]
নাযিলের সময়কাল
নির্ভরযোগ্য রিওয়ায়াত অনুসারে এই সূরাটি মক্কায় হামযাহ্ (রাযি.)-এর ঈমান আনার পর এবং ‘উমার (রাযি.)-এর ঈমান আনার পূর্বে নাযিল হয়।
আলোচ্য বিষয়
সূরার শুরু থেকে এ পর্যন্ত কুরআন, রিসালাত ও একাত্ববাদ (তাওহীদ) অস্বীকারকারীদের সম্বোধন করা হয়েছে। মহান আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনাবলী তাদের সৃষ্টির সামনে উপস্থিত করে তাওহীদের দাওয়াত ও অস্বীকারকারীদের পরিণাম এবং পরকালের আযাব তথা জাহান্নামের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। আলোচ্য আয়াতত্রয়ে পরিপূর্ণ মু’মিনের অবস্থা, ইহকালে ও পরকালে তাদের সম্মান। তাদের জন্য বিশেষ আলোচনা উল্লেখ করা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর
﴿إِنَّ ٱلَّذِيْنَ قَالُوْا۟ رَبُّنَا ٱللهُ﴾
“নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ।”
অর্থাৎ- যারা আল্লাহকেই প্রতিপালক হিসেবে মেনে নেয়। এক্ষেত্রে তার সাথে কাউকে কোনোরূপ শরীক করে না। এমন নয় যে, তারা প্রতিপালক হিসেবে আল্লাহকে মানবে আর উপাসনা করবে অন্য কারো। তারপর তারা এমন হবে যে, ثُمَّ ٱسْتَقَٰمُوْا۟, অর্থাৎ- কঠিন থেকে কঠিনতর অবস্থাতেও তারা ঈমান ও তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং তা থেকে তারা কখনো বিমুখ হয় না। কেউ কেউ এখানে এই ‘ইস্তিকামাত’-এর অর্থ করেছেন- ইখলাস। অর্থাৎ- বিশুদ্ধচিত্তে কেবল এক মহান আল্লাহরই ‘ইবাদত ও আনুগত্য করা। যেমন- হাদীসে এসেছে- এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে বলল, আমাকে এমন কথা বলে দিন যে, আপনার পর যেন আমার অন্য কারো জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন না হয়। তখন রাসূল (সা.) তাকে বললেন-
قُلْ آمَنْتُ بِاللهِ ثُمَّ اسْتَقِمْ.
অর্থ : তুমি বলো- আমি মহান আল্লাহর উপর ঈমান আনলাম। অতঃপর তারই উপর অবিচল থাকো।[৩]
আবূ বকর সিদ্দিক (রাযি.) বলেন, اسْتَقَامَتْ শব্দের অর্থ- ঈমান ও তাওহীদের উপর কায়েম থাকা এবং কখনো তা পরিত্যাগ না করা। ‘উসমান (রাযি.)-এর অর্থ করেছেন- খাঁটি ‘আমল করা।[৪]
‘উমার (রাযি.) বলেন, আল্লাহ তা‘আলার যাবতীয় বিধি তথা আদেশ ও নিষেধের উপর অবিচল থাকা এবং তা থেকে শৃগালের ন্যায় এদিক-ওদিক পলায়নের পথ বের না করার নাম- اَسْتَقَامَتْ।[৫] ‘আলী (রাযি.) ও রাইসুল মুফাস্সিরীন ইবনু আব্বাস (রাযি.) বলেন, اَسْتَقَامَتْ হলো- র্ফয কর্মসমূহ আদায় করা। হাসান বসরী (রহ্.) বলেন- যাবতীয় কাজে মহান আল্লাহর আনুগত্য করা এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার নাম- اَسْتَقَامَتْ।[৬] মহান আল্লাহর উপর ঈমান এনে তাঁকে প্রতিপালক হিসেবে স্বীকার করে যারা এর উপর ‘ইস্তিকামাত’ করতে পারবে। তাদের জন্য মহান আল্লাহর ঘোষণা-
﴿تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُوْا۟ وَلَا تَحْزَنُوْا۟ وَأَبْشِرُوْا۟ بِٱلْجَنَّةِ ٱلَّتِىْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ﴾
অর্থাৎ- তাদেরকে নির্ভয় ও নিশ্চিন্ত করতে এবং জান্নাতের সুসংবাদ দিতে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা তাদের কাছে ফেরেশ্তা পাঠাবেন। ফেরেশ্তা তাদের কাছে কখন অবতরণ করবে এ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। অনেকে মনে করেন, মৃত্যুর সময় তাদের কাছে ফেরেশ্তা অবতরণ করেন। কেউ কেউ আবার বলেন, ফেরেশ্তারা এ সুসংবাদ তিন সময়ে দেন; মৃত্যুর সময়ে, কবরে এবং কবর থেকে উঠানোর সময়ে। ফেরেশ্তাগণ যে সুসংবাদ দেন তা হলো- ভয় পেওনা, দুশ্চিন্তা করো না, অর্থাৎ- আখিরাতে যে সকল অবস্থার সম্মুখীন হবে তার ব্যাপারে কোনো আশঙ্কা করো না এবং দুনিয়াতে ধন-মাল ও সন্তান-সন্ততি যে ছেড়ে এসেছ সে ব্যাপারেও কোনো দুঃখ করো না। এবং তোমরা আজ জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো। যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি (দুনিয়াতে) তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল। এবার ফেরেশ্তাগণ তাদেরকে বলবে,
﴿نَحْنُ أَوْلِيَآؤُكُمْ فِىْ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا وَفِىْ ٱلْءَاخِرَةِ﴾
অর্থাৎ- আমরা দুনিয়া এবং আখিরাতে তোমাদের বন্ধু হয়ে তোমাদের সাথে আছি। এ কথায় এখানে একটি অতিরিক্ত সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, এটি মহান আল্লাহর উক্তি। অর্থাৎ- দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের বন্ধু হয়ে স্বয়ং মহান আল্লাহই আছেন। তারপর তাদেরকে আরো বলা হবে,
﴿وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَشْتَهِىٓ أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْنَ﴾
অর্থাৎ- তোমরা জান্নাতে তোমাদের মনে যা চাইবে তাই পাবে এবং তোমরা যা দাবি করেবে সেখানে তাই দেওয়া হবে। হাদীসে এসেছে, রাসূল সা. বলেছেন, মু’মিন ব্যক্তি যদি জান্নাতে সন্তানের আকাঙ্খা করে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী গর্ভধারণ করবে ও সন্তান প্রসব করবে এবং সন্তানটি হবে বয়সে যুবক। তার ইচ্ছা অনুযায়ী মুহূর্তের মধ্যেই এসব হয়ে যাবে।[৭]
মোটকথা, তোমাদের প্রতিটি বাসনাই জান্নাতে পূর্ণ হবে তোমরা চাও বা না চাও। এবার- نُزُلًا مِّنْ غَفُوْرٍ رَّحِيْمٍ অর্থাৎ- ক্ষমাশীল পরম দয়াময়ের পক্ষ থেকে আপ্যায়নের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এমন অনেক নিয়ামতও সেখানে পাবে যার আকাঙ্খাও তোমাদের অন্তরে সৃষ্টি হবে না। যেমন- মেহমানের সামনে এমন অনেক খাদ্য মেজবান উপস্থাপন করে, যা মেহমান কল্পনাও করেনি।
উপসংহার
উপযুক্ত আয়াতত্রয়ে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা পূর্ণ মু’মিনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য (সুদৃঢ় ঈমান) ও এর প্রতিফল (ফেরেশ্তা প্রেরণ, সুসংবাদ প্রদান ও জান্নাতের বিশেষ নিয়ামত) বর্ণনা করেছেন। একজন মু’মিন যদি লা-শরীক তাওহীদের উপর ঈমান আনার পর, তার উপর সুদৃঢ় থাকতে পারে এবং আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলার যাবতীয় হুকুম-আহকাম জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারে। তাহলে মৃত্যুতেও তার কোনো ভয় বা দুঃশ্চিন্তা নেই। কেননা, সে তো দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করেছে। তার কাছেই তো জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে ফেরেশ্তাগণ অবতরণ করবে। আর সে সফলতার সর্বোচ্চ চূড়া জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে মু’মিনের এই বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যম-িত হয়ে ফেরেশ্তা কর্তৃক সুসংবাদসহ জান্নাতে প্রবেশ করার তাওফীক্ব দানে ধন্য করুন -আমীন।


[১] সূরা হা-মীম, আস্ সাজদাহ্ : ৩০-৩২।
[২] ইবনু হিশাম- ১ম খ-, পৃষ্ঠা নং- ৩১৩-৩১৪।
[৩] সহীহ মুসলিম- কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ- ১৩ : ইসলামের বৈশিষ্ট্যসমূহ, হাদীস নং- ৬৪ (আন্তর্জাতিক নম্বর-৩৮)।
[৪] তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন।
[৫] তাফসীরে মাযহারী।
[৬] তাফসীরে আবূল আলিয়া।
[৭] জামে‘ আত্ তিরমিযী- অধ্যায়- ৩৬ : জান্নাতের বিবরণ, পরিচ্ছেদ- ২৩ : অতি সাধারণ জান্নাতীর মর্যাদা প্রসঙ্গে, হা. ২৫৬৩।



আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:26:03 সূর্যাস্ত : 5:11:29

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত