ফেব্রুয়ারি ৭ ও ৮, ২০২৫ শুক্র ও শনিবার, ঢাকার অদূরে বাইপালের সুবিশাল জমঈয়ত ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর আন্তর্জাতিক মহাসম্মেলন-এর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে-আলহামদুলিল্লাহ। মাননীয় জমঈয়ত সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক-এর সভাপতিত্বে এ মহাসম্মেলনে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মধ্যপ্রাচ্য ও উপমহাদেশের খ্যাতিমান জমঈয়ত নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করবেন। দেশের শীর্ষ আহলে হাদীস ওলামায়ে কেরামগণও এ মহাসম্মেলনে মূল্যবান নাসিহাহ্ প্রদান করবেন ইন্ শা-আল্লাহ। আমাদের একান্ত প্রত্যাশা এই মহাসম্মেলনকে উপলক্ষ্য করে বাংলাদেশের আহলে হাদীসগণ আবারো একটি প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হবেন।
ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আদেশ দিয়েছেন, পরক্ষণেই পরস্পর বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন। অথচ আমরা অবলীলাক্রমে একদিকে যেমন মহান আল্লাহর আদেশকে অমান্য করছি, অপরদিকে নিষেধাজ্ঞার প্রতিও অবজ্ঞা প্রদর্শন করছি। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এই দু’টি মহাপাপ সংঘটিত হচ্ছে কিছু আলেম দ্বারা। কেন এই বিচ্ছিন্নতা? আমাদের ‘আক্বীদাহ্ এক, মানহায এক, ‘আমলও অভিন্ন?
মানুষ কেন ঐক্যবদ্ধ হয়? ইতিহাস স্বীকৃত যে, সাধারণত কোনো সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব যখন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন আপন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে পারস্পরিক ভুল বুঝাবুঝি অবসান ঘটিয়ে, ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধে- উঠে ঐক্যবদ্ধ হন। ঠিক এভাবে প্রায় আট দশক আগে আহলে হাদীদের অস্তিত্ব যখন সংকটাপন্ন, ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে অল ইন্ডিয়া আহলে হাদীস কনফারেন্স নামক সর্বভারতীয় আহলে হাদীস সংগঠনটি যখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল, ঠিক তখনই মুজাদ্দিদে মিল্লাত আল্লামা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহেল কাফী আল কোরায়শী (রহিমাহুল্লাহ) ঐক্যের গুরুদায়িত্ব হাতে নিয়ে এই উপমহাদেশে জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর ব্যানারে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ’র অনুসারীগণকে একত্রি করে অখণ্ড আহলে হাদীস জামা‘আত গঠন করেছিলেন। সে সময় জগৎবিখ্যাত সালাফী আলেমগণও জমঈয়তের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে প্রফেসর আল্লামা ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী (রহিমাহুল্লাহ)-এর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থেকেছেন। তখনকার আলেমগণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় যেমন জগৎশ্রেষ্ঠ ছিলেন, অনুরূপ আল্লাহভীরুতা ও আমলেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তাই নেতৃত্বের মোহ, অর্থবিত্তের উচ্চাভিলাস কিংবা আমিত্বের অহঙ্কার তাঁদেরকে স্পর্শ করেনি। অপরদিকে অর্থনৈতিক উচ্চাভিলাষ, নেতৃত্বের অভিলাষ, জবাবহিদিতার ভীতি এবংবিধ কারণে আমরা পরবর্তীতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। কেউ কেউ আবার সংগঠন সম্পর্কে অপব্যাখ্যা করে পীরের দরবারের ন্যায় দরবার প্রতিষ্ঠা করে অল্পদিনেই বিত্তবৈভব, গাড়িবাড়ি ও সহায় সম্পত্তির মালিক বনে যাচ্ছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়তো অচিরেই আহলে হাদীসদের ভুল বুঝাবুঝি দুর্বলতায় পরিণত হবে।
আলহামদু লিল্লাহ! এবারের সম্মেলনে (প্রথমদিন) জুমু‘আর খুতবাহ্ প্রদান করবেন সৌদি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টা শাইখ মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহিদ আল আরিফী। আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন পাকিস্তান মারকায-ই জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর সভাপতি ও পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সিনেটর প্রফেসর সাজেদ মীর এবং সেক্রেটারি জেনারেল ও সিনেটর শাইখ ড. হাফেয আব্দুল কারীম, কুয়েতের বর্ষীয়ান আলেমে দীন ও দাঈ শাইখ সালিম বিন সা‘আদ আততবীল, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশিষ্ট আলেম আব্দুর রহমান বিন ইবরাহীম আয যারউনী, পাকিস্তান হরকাতুল কুরআন ওয়াস সুন্নাহ’র সভাপতি হাফেয আল্লামা ইঞ্জিনিয়ার ইবতিসাম ইলাহী যহির, ইন্দোনেশিয়ার মুয়ায বিন জাবাল ইসলামিক এজুকেশন ইন্সটিটিউশন এন্ড সেন্টারের পরিচালক শাইখ জোজন জাইনুল মুরসালিন মাদানী, বাহরাইনের বিশিষ্ট আলেম শাইখ ফাইয হুসাইন আস সালাহ, নেপালের বিশিষ্ট আলেম শাইখ শামীম আহমাদ নদভী প্রমুখ।
এ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আ. ফ. ম খালিদ হোসেন। এছাড়া সম্মানিত জমঈয়ত নেতৃবৃন্দ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন ইন্ শা-আল্লাহ।
এ দেশে যারা সালাফী ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাযের অনুসারী তাঁদের অনেকেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে মহাসম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এ সম্মেলনকে ঘিরে আমাদের আশা অনেক। এবার সম্মিলিত কন্ঠে উচ্চারিত হবে, আর বিচ্ছিন্নতা নয়, নয় বিভক্তি; পূর্বের ন্যায় আবারও জমঈয়তের পতাকা তলে সমবেত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে পথ চলব ইন্শা—আল্লাহ। আন্তর্জাতিক মহাসম্মেলনে এটাই আমাদের আহ্বান।
আপনার মন্তব্য1