সাময়িক প্রসঙ্গ
ইসলামে ঐক্যের ভিত্তি?
শাইখ মুহাম্মাদ হারুন হুসাইন

ঐক্য ও ইত্তিফাক মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম। এই ঐক্যবদ্ধতা হতে পারে জাতিসত্তা, স্বভাব প্রকৃতি, চিন্তা-চেতনা এবং সভ্যতা সংস্কৃতির ঐক্য। ইখতিলাফ বা মতানৈক্য হলো ঐতিহ্যগত দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত।

সে কারণ আল্লাহ তা‘আলা যখনই অতীত উম্মতের মাঝে মতানৈক্যের মহড়া দেখেছেন, তখনই তাদেরকে ঐক্য ও সংহতির মধুময় মিলনে জমায়েত করার জন্য আসমানী হিদায়াত দিয়ে নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। মহা মহিয়ান আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

“সকল মানুষ একই জাতিসত্তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নবীদের পাঠালেন সু-সংবাদ দাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে। আর তাদের সাথে অবতীর্ণ করলেন সত্য কিতাব, যাতে মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন। বস্তুতঃ কিতাবের ব্যাপারে অন্য কেউ মতভেদ করেনি, কিন্তু পরিষ্কার নির্দেশ এসে যাবার পর নিজেদের পারস্পরিক জেদবশতঃ তারাই মতভেদ করেছে যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদের হিদায়াত দান করেছেন সেই সত্য বিষয়ে, যে ব্যাপারে তারা মতভেদে লিপ্ত হয়েছিল, আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা সরল-সুদৃঢ় পথ দেখান।”

মূলত এই আয়াতে একতা বলতে ‘আক্বীদাহ্বি-শ্বাস, ধ্যান ধারণা ও মতাদর্শের একতাই উদ্দেশ্য। সে কারণে আল্লাহ তা‘আলা বিভ্রান্ত বিচ্ছিন্ন জাতিসমূহকে ওয়াহীভিত্তিক পুনঃ একতাবদ্ধ করার জন্য নবী ও রাসূল পাঠিয়েছিলেন। সুতরাং আয়াতটির অর্থ দাঁড়ায়- এমন এক সময় ছিল, যখন প্রতিটি মানুষ একই মত ও আদর্শ এবং একই ধর্মে অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর তা ছিল তাওহীদ ও ঈমানের ঐকমত্য।

অতঃপর মতের পার্থক্য ও উদ্দেশ্যের ভিন্নতার দরুণ মতানৈক্য শুরু হয়। দীর্ঘ দিন পর ‘আমল বিশ্বাসের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি হতে থাকে, এমনকি সত্য ও মিথ্যার মধ্যেও সংমিশ্রণ শুরু হয়। এভাবে যখনই মানুষ সৎ পথ থেকে দূরে সরে গেছে, তখনই হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তা‘আলা কোনো না কোনো নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং কিতাব নাযিল করেছেন, যেন তাঁর অনুসরণ করা হয়।

একটু বিচক্ষণতার সাথে বিচার করলে আমাদের ক্ষুদ্র বিবেকে ধরা পড়বে যে, ঐতিহ্যগত ঐক্য হতে দলে দলে ও বিভিন্ন মতে বিভক্ত হওয়ার প্রধান কারণ পারস্পরিক জেদ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“অতঃপর তারা জ্ঞান লাভ করার পর শুধু পারস্পরিক জেদের বশবর্তী হয়ে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।”

ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যে ব্যক্তি নবুওয়াতী বিধান হতে বেরিয়ে পড়ল, সে শির্ক এর ন্যায় অনুরূপ পাপে পতিত হলো। মূলত আদম সন্তানদের মাঝে শির্ক ছিল না; বরং আদম (আ.) ও তাঁর এ সমস্ত সন্তানেরা যারা তাঁর দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, তারা নবুওয়াতের অনুসরণের কারণে তাওহীদের উপরই সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

“আর সমস্ত মানুষ একই উম্মতভুক্ত ছিল, পরে পৃথক হয়ে গেছে।”

‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রা.) বলেন,

আদম ও নূহ্ (আ.)-এর মাঝে ব্যবধান ছিল দশ শতাব্দীর। তারা সকলেই ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। অতঃপর নবীদের শরীয়ত অনুসরণ ছেড়ে দেওয়ার কারণে তারা শির্ক-এ পতিত হলো।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, ঐক্যই মানুষের ঐতিহ্য, স্বভাব জাত ধর্ম। আর বিভক্তি পরবর্তীতে সৃষ্ট ঘৃণ্য কর্মধারার নাম। যা আল্লাহ তা‘আলা কখনোই পছন্দ করেননি। সে কারণে তিনি নবী ও রাসূল পাঠিয়ে তাদেরকে ঐক্য ও জমায়েত হতে নির্দেশ দিয়েছেন। আফসোস! মহান আল্লাহর অমোঘ বিধান ছেড়ে দিয়ে আজ মুসলিমরা শত দলে বিভক্ত। শুধু তাই নয়, দল ও উপদলের এই ঘৃণ্য ধারা অব্যাহত রেখেছে। মহান আল্লাহই ভালো জানেন এর পরিণতি গিয়ে কোথায় দাঁড়াবে? 



weeklyarafat


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত