সাময়িক প্রসঙ্গ
পবিত্র হজ্জ : সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতার এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত
মোহাম্মদ আব্দুল জলিল খান




হজ্জ ইসলামী পূণর্জাগরণের অন্যতম মাধ্যম। হজ্জ উদ্বেলিত লক্ষ লক্ষ হৃদয়ের এক সুপ্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শাশ্বত মধুর বাণী :

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ "

“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট হাজির, তোমার দ্বারে উপস্থিত, তোমার কোনো অংশীদার নেই, তোমার নিকট উপস্থিত। সর্ব প্রকার প্রশংসা এবং নিয়ামতের সামগ্রী সবই তোমার। সর্বত্র তোমার রাজত্ব, তোমার কোনো অংশীদার নেই।”[১]

রামাযান মাস যেমন সমগ্র মুসলিম জাহানে তাক্বওয়া পরহেযগারীর একটি অন্যতম দৃষ্টান্ত, ঠিক তেমনি হজ্জও মুসলিম দুনিয়ায় ইসলামী যিন্দেগী ও জাগরণের এক মহা মূল্যবান মুহূর্ত। যা ইসলামী শরিয়ত প্রণেতা কর্তৃক নির্দেশিত ইলাহী ব্যবস্থাপনা। মানবদেহে হৃৎপি-ের যে অবস্থান এবং গুরুত্ব, ঠিক তেমনি সমগ্র দুনিয়ায় কা’বা ঘরের অবস্থান। এ যেন এক সেতুবন্ধন। সারা দুনিয়ার মুসলিম একই সারিতে, একই পোশাকে, একই শব্দ উচ্চারণে, একই কিবলা কা’বায়, এক মহান উদ্দেশ্যে সমাগত। পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশ হতে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নামে, এই হারামাইনে শরীফাইনে। একজন মানুষ যতই বিত্তবান ও প্রসারিত বিত্তের ও দীর্ঘ হায়াতের অধিকারী হোকনা কেন, সে কি পারে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের সাথে মোলাকাত করতে? কোনো আহ্বান করে দিলো এই দুর্লভ সুযোগ, অভাবিত অথচ আকাক্সিক্ষত সান্নিধ্য? পাহাড়, পর্বত, মরু, প্রান্তর, সাগর, মহাসাগর পাড়ি দিয়ে ছুটে এলো একই আদম সন্তান সেই আদি পিতা-মাতার মিলন কেন্দ্র, উপস্থিত হলো আদর্শের পিতা ইব্রাহীম ('আ.)-এর পুণ্য স্মৃতিময় অবিস্মরণীয় কীর্তিবহুল উপত্যকায়। জাগতিক কোনো আকর্ষণ পথরোধ করতে পারেনি আদম সন্তানের সেই পিতা ইব্রাহীম ('আ.)-এর আহ্বানে সাড়া দানে। আজ পৃথিবীর মানুষ কত পথ, কত বিশ্বাস ও ‘আক্বিদায় বিভক্ত? রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে বিভক্তি হওয়া সত্ত্বেও ঐ সার্বজনীন শাশ্বত উদাত্ত আহ্বানকে পথরোধ করতে পারেনি।

পাপ-পংকিল জীবনকে পরিশীলিত ও পরিচ্ছন্ন উজ্জ্বল সাদা কাপড়ের মতো করার দুর্বার আকাক্সক্ষায়, জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি, শ্রেষ্ঠ পানি পান, শ্রেষ্ঠ দৃশ্য অবলোকন, জীবনের শ্রেষ্ঠ কুরবাণী উৎসর্গ, শ্রেষ্ঠ হৃদয় মনকে একীভূত করে অঝর নয়নে গুনাহখাতা মাফ করার উদাত্ত আহ্বান হে প্রভু! তুমি ক্ষমা করে দাও তোমার বান্দাকে। কি অপূর্ব দৃশ্য! কে পারে ঐ অনুভূতির জোয়ার সৃষ্টি করতে? কে পারে ঐ সাবলীল হৃদয় নিংড়ানো তপ্ত অশ্রু ঝরিয়ে গন্তদেশ প্লাবিত করতে? লক্ষ লক্ষ মানুষের বিশাল গণজমায়েত কিন্তু আশ্চর্য! নেই বিশৃঙ্খলা, দ্বন্দ-কলহ এবং স্বার্থপরতা সকলেই যেন আপন মায়ের সহোদর। সবাই যেন মহান আল্লাহর আমন্ত্রিত মেহমান। তাই তো আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ إِخْوَةٌ﴾

অর্থাৎ- “প্রত্যেক মুসলমান সহোদর ভাই।”[২]

এখানে কোনো বর্ণ বৈষম্য নেই, সাদা-কালো, ধনী-গরিব, রাজা-বাদশাহ সকলেই আপনজনের মতো পায়ে পা, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাবাকে কিবলা নির্ধারণ করে সালাত আদায়ের যে দৃশ্য, তা কতইনা সুন্দর। কা’বা শরীফে আছে মাকামে ইব্রাহীম যা পবিত্র কা’বার দরজা থেকে উত্তর পূর্বদিকে অবস্থিত। ইব্রাহীম ('আ.)-এর পদচিহ্ন শক্ত পাথরের উপরে স্পষ্ট ছাপ অদ্যাবধি দৃশ্যমান যা কাঁচের মধ্যে। এখানে তাওয়াফ শেষে দু’রাকআত সালাত আদায় করতে হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿وَاتَّخِذُوْا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيْمَ مُصَلًّى﴾

“তোমরা মাকামে ইব্রাহীমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো।”[৩]

আরো আছে হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর যা মহান আল্লাহর কুদরতের এক অপূর্ব নিদর্শন। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর কসম! কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাকে উঠাবেন, তখন তার দু’টি চোখ থাকবে, যা দ্বারা তা দেখবে এবং তার একটি জিহ্বা হবে, যা দ্বারা সে কথা বলবে এবং যে তাকে ঈমানের সাথে চুম্বন করেছে তার জন্য সাক্ষ্য দিবে।[৪]

ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, “হাজরে আসওয়াদ যখন জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয়, তখন দুধ অপেক্ষা অধিক সাদা ছিল। পরে আদম সন্তানের পাপ তাকে কালো করে দিয়েছে।”[৫]

আছে সাফা ও মারওয়া যা মা হাজেরার ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত। হাজীদেরকে সাতবার এ দু’পাহাড়ের মাঝে দৌঁড়াতে হয়। এটাকে সাঈ‘ বলে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللهِ﴾

“নিশ্চয়ই সাফা এবং মারওয়া পাহাড় আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম।”[৬]

আরো আছে জমজমের পানি যা কা’বার দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থিত। বর্তমানে এটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কেননা এই কূপের পানি দিয়ে ভক্তির আবেগে অনেকে গোসল করত, কাপড় পরিষ্কার করত এমনকি এ স্থানে সালাত, মুনাজাত করত যা স্পষ্ট বিদআত। ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন : “ভূপৃষ্ঠের সেরা পানি হলো জমজমের পানি। এর মধ্যে আছে পুষ্টিকর খাদ্য এবং রোগ হতে আরোগ্য।”[৭]

অন্য হাদীসে রাসূল (সা.) বলেন, “জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হবে, সে উদ্দেশ্যই পূরণ হবে।”[৮]

এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ মু’জিযা বা অফুরন্ত রাহমত। যার মূল উৎস মুখে পাইপ দিয়ে পানি উত্তোলিত হয় এবং সমস্ত হারাম শরীফে লক্ষ লক্ষ হাজী সাহেবগণসহ মক্কা নগরীর সাধারণ মানুষ জমজমের পানি পান করে এবং বিভিন্ন হোটেলে এ পানি সরবরাহ করা হয়। এছাড়া মসজিদে নববী মদীনা, মসজিদে কুবা এমনকি পৃথিবীর সমস্ত হাজীরা ফেরার পথে এ পানি নিয়ে আসে। যার কোনো কমতি নেই, এর থেকে বড় মু’জিযাহ্ বা অলৌকিকত্ব আর কি হতে পারে? কা’বা থেকে উত্তর পূর্বদিকে মাত্র ২ কি.মি. অদূরে আছে গারে হিরা। যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলার মহা অনুগ্রহ ও নিয়ামত এবং মানব জাতির জন্য শ্রেষ্ঠতম তুহফা নিয়ে জিবরাঈল আমীন ('আ.) যমীনে এলেন যে স্থানে সে স্থানটি যমীন থেকে প্রায় পৌনে এক মাইল উঁচুতে একটি পাহাড়ের গুহায়। দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানুষ মুহাম্মদ (সা.) গভীর রাতে পবিত্র রামাযান মাসে লাইলাতুল কদ্রে একাকী প্রভুর ধ্যানে মগ্ন ঠিক এ সময় এক শুভ মুহূর্তে বার্তা নিয়ে তাঁকে বলা হলো ‘ইক্রা’ অর্থাৎ- পড়ো তোমার প্রভুর নামে। এটাই হলো প্রথম আসমানী ওয়াহী। আমরা কয়েকজন সঙ্গী মিলে হেরা গুহায় উঠেছি। বড় কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ এবং দুর্গম পথ। তারপর আছে বানরের আক্রমণ।

ভাবতে অবাক লাগে কিভাবে মা খাদিজাহ্ (রাযী.) এই দুর্গম পাহাড় অতিক্রম করে প্রিয় নবীর খোঁজ-খবর নিতেন? মক্কার সর্ববৃহৎ কবরস্থান জান্নাতুল মালা যা মসজিদুল হারামের উত্তর দিকে পাহাড়ের পাদদেশে সমতল ভূমিতে অবস্থিত। এখানেই উম্মুল মু’মিনীন খাদিজাতুল কুবরা (রাযী.)-এর কবরস্থল। বাতনে মুহাসসার আরাফাত থেকে মিনায় প্রত্যাবর্তনকালে আরাফাত ও মিনার মধ্যবর্তী স্থান। এই মুজদালিফায় রাতে অবস্থান করতে হয় কিন্তু ওয়াদীয়ে মুহাসসার ব্যতীত। এটা মুজদালিফার দক্ষিণে বেশ একটু দূরে। এখানে কেউ অবস্থান করে না, কারণ মহান কা’বা ধ্বংসকারী আবরাহার হস্তী বাহিনীকে এখানে নিশ্চিহ্ন করে দেন। চলন্ত গাড়ী এখান থেকে দ্রুত চলে যায় গযবের স্থান স্মরণ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَأْكُوْلٍ﴾

অর্থাৎ- “তাদেরকে ভক্ষিত ভূষির মতো করে দেন।”[৯]

আরো দেখলাম জেদ্দা লোহিত সাগরের উপকূলে ভাসমান মসজিদ মসজিদে রহমত। আমরা এখানে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম। সুন্নাত তরিক্বায় সালাত, আযান হলো দু’রাকআত সালাত একটু পরে ইমাম সাহেব কাতার ঘুরে ঘুরে দেখলেন, কাতার সোজা হয়েছে কি না, পায়ে পা, কাঁধে কাঁধ মিলেছে কি-না, তারপর সালাত শুরু করলেন। এখানে আছে কেসাস মসজিদ তার পাশে আছে বিশাল চত্বর। এখানে ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুযায়ী সবার সামনে শিরচ্ছেদ করা হয়। গারে সাওর যা মক্কা হতে ৫ মাইল দূরে মক্কা ইয়েমেনের যাত্রা পথে। এই প্রসিদ্ধ পাহাড়ের গুহায় মদীনায় হিজরতকালে নবী (সা.) আবূ বক্র (রাযি.)-কে সাথে নিয়ে তিন রাত অবস্থান করেন কুরাইশদের হত্যার কবল থেকে আত্মরক্ষার জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿إِلَّا تَنْصُرُوْهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِيْ الْغَارِ إِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِهِ لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللهَ مَعَنَا﴾

“যদি তোমরা তাঁকে (রাসূলুল্লাহ সা.-কে) সাহায্য না করো তবে আল্লাহ (তাঁর সাহায্য করবেন যেমন তিনি) তাঁর সাহায্য করেছিলেন সেই সময়ে যখন কাফিররা তাঁকে দেশান্তর করে দিয়েছিল, তিনি দু’জনের মধ্যে দ্বিতীয় ব্যক্তি (রাসূল সা.) সেই সময় উভয়ে গুহায় ছিলেন যখন তিনি স্বীয় সাথীকে (আবূ বক্র [রাযি.]-কে) বলেছিলেন তুমি চিন্তিত হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ (তাঁর সাহায্য) আমাদের সাথে রয়েছেন।”[১০]

আরাফাতের বর্ণনা : ৯ই জিলহজ্জ তারিখে সূর্য উঠার পর মিনা থেকে আরাফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হবে। আরাফাতে ৯ই জিলহজ্জ সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করাকেই হজ্জ বলে। এখানে জোহর ও ‘আসর সালাত এক আযানে দুই ইকামাতে জমা ও কসর করতে হবে। অর্থাৎ- আযানের পর ইক্বামত দিয়ে জোহর দুই রাকআত পড়ে সালাম ফিরাতে হবে। তারপর ইক্বামত দিয়ে ‘আসর দুই রাকআত পড়তে হবে।[১১]

ইমাম বা খতীব সাহেব মসজিদে নামেরা থেকে লক্ষাধিক জনতার উদ্দেশ্যে হৃদয়স্পর্শী খুৎবাহ্ দেন যা শুনতে হবে। হাজী সাহেবরা পাপরাশি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য অশ্রু বিগলিত কণ্ঠে মহান আল্লাহর কাছে দু‘আ করে থাকেন।

‘আয়িশাহ্ (রাযী.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফাত দিবসের চেয়ে এমন কোনো দিবস নেই যখন আল্লাহ তা‘আলা এত অধিক সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন। সেদিন তিনি নিকটবর্তী হন। অতঃপর তাদেরকে নিয়ে ফেরেশ্তাদের সামনে গর্ব করেন এবং বলেন, এরা কি চায়? রাযীন স্বীয় জামে গ্রন্থে আরো বেশি বর্ণনা করেছেন, সাক্ষী থাকো হে আমার ফেরেশ্তারা! আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম।”[১২]

এখানে উঁচু-নীচু, মধ্যবিত্ত, ধনাঢ্য, পদমর্যাদা কোনো পার্থক্য নেই। দু’খ- সাদা কাপড় পরে ইহরাম বেঁধে লাব্বাইক ধ্বনি বলে একত্রিত হয়ে থাকা সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সর্ববৃহৎ গণজমায়েত। মদীনার প্রসিদ্ধ স্থানসমূহ- মসজিদে নববী যা মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কিরামের হাতে গড়া সেই প্রসিদ্ধ মসজিদ। আসহাবে সুফ্ফা বা নিঃস্ব দারিদ্র্য মুহাজির মক্কী সাহাবায়ে কিরাম সেখানে থাকতেন। মহানবী (সা.) নির্মিত সেই খেজুর পাতা ও খেজুর গাছের তৈরী মসজিদ আর নেই। নয়নাভিরাম মূল্যবান পাথর স্বর্ণ, রৌপ্য খচিত সুদৃশ্য ইমারত ২০/২৫ লক্ষ মুসল্লী নর-নারী পৃথকভাবে দৈনিক সালাত আদায় করতে পারেন। ওযূ, গোসল, প্রস্রাব, পায়খানা সবই মাটির নীচের তলায়। এত সুন্দর ব্যবস্থাপনা যে, লক্ষাধিক মানুষ টয়লেট ব্যবহার করতে কোনো সমস্যা নেই এবং কোনো দুর্গন্ধ নেই, সার্বক্ষণিক পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য কর্মচারী নিয়োজিত।

মসজিদের পাশে আছে মহানবী (সা.)-এর কবর, তার পাশে আবূ বক্র (রাযি.), তারপর ‘উমার ফারুক (রাযি.)-এর কবর একই লাইনে পাশাপাশি। রিয়াজুল জান্নাত এ স্থানটি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মিম্বর ও কবরের মধ্যবর্তী স্থান। যেমন- হাদীসে এসেছে- আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেছেন :

্রمَا بَيْنَ بَيْتِيْ وَمِنْبَرِيْ رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ، وَمِنْبَرِيْ عَلٰى حَوْضِيْ.

“আমার বাড়ী ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগানসমূহের মধ্যে একটি বাগান। আর আমার মিম্বর আমার হাউজের (কাওসার) উপর।”[১৩]

বাকীউল গারকাদ যা মসজিদে নববীর অদূরে দক্ষিণ পূর্বদিকে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্রাচীর বেষ্টিত। এখানে ফাতিমাহ্ (রাযী.), ‘উসমান (রাযি.)-সহ অগণিত সাহাবায়ে কিরামের কবর। এখানে কবরের কোনো চিহ্ন লক্ষ্য করা যায় না, আছে শুধু এক টুকরা পাথর। উহুদের রক্তাক্ত যুদ্ধের ময়দান যা মদীনার মসজিদে নববীর ৪ কি.মি. উত্তরে, যার দৈর্ঘ্য ৯ কি.মি. এবং প্রস্থ ৩ কি.মি., যা মদীনার সবচেয়ে বড় পাহাড়। এ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.) দারুণভাবে আহত হন ও তাঁর সামনের ৪টি দাঁত ভেঙ্গে যায়। তিনি রক্তাক্ত হয়ে অচেতন হয়ে পড়ে গেলে তার মৃত্যু হয়েছে বলে চারিদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চাচা হামযাহ্ (রাযি.)-সহ ৭০ জন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেন। নবী করীম (সা.) তাঁর মুখম-লে প্রবাহিত রক্ত পরিস্কার করছিলেন আর বলছিলেন, সেই কওম কি করে সফল হতে পারবে, যারা নিজেদের নবীর চেহারা যখমী করে দিয়েছে। তাঁর দাঁত ভেঙ্গে দিয়েছে। অথচ তিনি তাদেরকে আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীনের পথে দাওয়াত দিয়েছেন। নবী করীম (সা.)-এর এ কথা বলার পর আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন এই আয়াত নাযিল করেন[১৪]-

﴿لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ أَوْ يَتُوْبَ عَلَيْهِمْ أَوْ يُعَذِّبَهُمْ فَإِنَّهُمْ ظَالِمُوْنَ﴾

“একার্যে তোমার কোনোই কর্তৃত্ব নেই যে, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করেন অথবা শাস্তি প্রদান করেন; পরন্ত নিশ্চয়ই তারা অত্যাচারী।”[১৫]

খন্দক বা আহযাবের যুদ্ধ ক্ষেত্র মদীনা নগরীর উত্তর দিকে ৫৫৪৪ মিটার দৈর্ঘ এবং ৪.৬২ মিটার প্রস্থ এবং ৩.২৩ মিটার গভীর করে পরিখা খনন করা মক্কার কাফেরদের সশস্ত্র যুদ্ধের মুকাবিলা করার জন্য সালমান ফারসী (রাযি.)-এর পরামর্শে, এ পরিখা খনন ছিল মুহাম্মদ (সা.)-এর সমর কৌশলের অন্যতম দৃষ্টান্ত। মসজিদে কুবা ছিল ইসলামের প্রথম মসজিদ যা মদীনা শহর থেকে ২ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। নবুয়তের ১৪ হিজরী, ৮ রবিউল আউয়াল ৬২২ সাল ২৩ সেপ্টেম্বর মুহাম্মদ (সা.) আবূ বক্র (রাযি.)-কে সাথে নিয়ে মক্কা হতে হিজরাত করে ‘আমর ইবনু আউফ গোত্রের কুলসুম ইবনু আল হাদমের বাড়ীতে সর্বপ্রথম আতিথ্য গ্রহণ করেন। এখানে সোম, মঙ্গল, বুধ এবং বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অবস্থান করে ঐতিহাসিক কুবা মসজিদ নির্মাণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿لَمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَنْ تَقُوْمَ فِيْهِ﴾

“অবশ্য যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হতেই তাক্বওয়ার উপর স্থাপিত হয়েছে তা এর উপযোগী যে, তুমি তাতে (সালাতের জন্য) দাঁড়াবে।”[১৬]

“কেউ ওযূ করে উক্ত মসজিদে গিয়ে দুই রাকআত সালাত আদায় করলে একটি ‘উমরাহ্’ করার সমান সওয়াব পাওয়া যায়।”[১৭]

মসজিদে আল-কিবলাতাইন একই মসজিদে একই সালাতে প্রথমে জেরুজালেম বাইতুল মুকাদ্দিস এবং পরে মক্কার দিকে কিবলা পরিবর্তন করার কারণে মদীনা নগরের মসজিদ আল-কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। হিজরতের দ্বিতীয় বছরে আরবী রজব মাসের মাঝামাঝি সময়ে কিবলা পরিবর্তনের এ ঘটনা ঘটে। আল্লাহ তা‘আলা আয়াত নাযিল করেন-

﴿قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِيْ السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا﴾

“নিশ্চয়ই আমি আকাশের দিকে তোমার মুখম-ল উত্তোলন অবলোকন করছি। তাই আমি তোমাকে ঐ কিবলামুখীই করবো যা তুমি কামনা করছো।”[১৮]

মদীনা হতে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে জুলহুলাইফা যারা মদীনা অথবা মদীনায় যিয়ারত করে যারা পুনরায় মক্কায় যাবেন হজ্জের জন্য এই স্থানটি তাদের ইহ্রাম পরা ও তালবীয়া পাঠের স্থান। এখানে একটি বড় মসজিদ ও খেজুর বাগান আছে। মদীনা আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে বাংলাদেশের শতাধিক ছাত্র অধ্যয়নরত। মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশের ছাত্র প্রতিনিধি মুহাম্মদ যাকারিয়ার প্রাইভেট গাড়ীতে চড়ে সমস্ত ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে দেখেছি কি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ! এখান থেকে বাংলাদেশী ছাত্ররা উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে কুরআন ও সহীহ ‘আক্বীদার দাওয়াতের মহান দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও বিশ্বজনীন মানবতার দৃষ্টান্ত : হজ্জ সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও বিশ্বজনীন মানবতা বিকাশের অন্যতম একটি মাধ্যম। হজ্জের উদ্দেশ্যে নিজের ঘর-সংসার, সাংসারিক জাগতিক সকল কাজ এবং আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সব কিছুর মায়া পরিত্যাগ করে মহান আল্লাহর মেহমান হিসাবে সফরে বের হতে হয়। সারা জীবন ব্যাপী কষ্টার্জিত অর্থে যে নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তোলা হয়, আনন্দ, ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা, স্ত্রী-পুত্র-কন্যাসহ নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে যে নিবিড় মায়াময় সম্পর্কের সৃষ্টি হয়, একমাত্র মহান আল্লাহর মহব্বতে সে সবকিছুর বন্ধন ছিন্ন করে ‘লাব্বাইক’ অর্থাৎ- আমি আমার মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে বেরিয়ে পড়েছি, উচ্চারণ করে দীর্ঘ পথের ক্লান্তি, সফরের সীমাহীন তাকলীফ সহ্য করে মহান আল্লাহর ঘরে উপনীত হতে হয়। এভাবে হজ্জ সম্পন্ন করে যখন কেউ ঘরে ফিরে আসে, তখন তার অবস্থা সদ্যজাত মা’সুম শিশুর মতো হয়ে যায়। সাহাবী আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : “আমি শুনেছি, নবী (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ্জ সম্পাদন করবে এবং কোনোরূপ অশ্লীলতা ও অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে না, সে ঐ দিনের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে যেদিন তার মা তাকে জন্ম দান করেছে।[১৯]

দুনিয়ার লোভ-লালসা, স্বার্থপরতা, পঙ্কিলতা তাকে স্পর্শ করতে পারে না। এভাবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে হজ্জের দ্বারা যে চারিত্রিক উৎকর্ষ ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধিত হয়, তা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাতের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এর কার্যকর ভূমিকা সত্যিই বাস্তবিক। ইহ্রাম বেঁধে ‘লাব্বাইক’ বলে যখন হারাম শরীফের চতুর্দিক থেকে মানুষ ছুটে আসে এবং বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করতে থাকে, তখন ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র সকল ভেদাভেদ লোপ পায়। যে মহান স্রষ্টা আসমান-যমীন, জিন্-ইনসান তথা সমস্ত জগৎ ও মাখলুকাতের স্রষ্টা, যিনি আমাদের ইহ্-পরকালের একমাত্র প্রভু, তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে সেখানে হাযির হওয়ার পর দুনিয়ায় প্রচলিত মানুষের মনগড়া কৃত্রিম ভেদাভেদের কথা কখনও মনে স্থান পায় না। এমন অকৃত্রিম মানবতার বিকাশ কোনোভাবেই কল্পনা করা যায় না।
মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রস্থল : পবিত্র কা’বা সারা বিশ্বের কেন্দ্র ভূমি, যেখানে পৃথিবীর সকল রাষ্ট্র-গোত্র, ভাষা-বর্ণ নির্বিশেষে সমবেত তাওহীদী জনতার সবলকন্ঠে সুুস্পষ্ট ঘোষণা, স্রষ্টার সমীপে বান্দার এই যে বিশ্বজনীন আবেগ উচ্ছ্বসিত উচ্চারিত কন্ঠ; এর ফলে মানব জাতির এক ও নির্বিশেষ ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সত্তার সর্বজনীন প্রকাশ।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِيْ بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِيْنَ﴾

“মানব জাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয় তা তো বাক্কায় (মক্কার অপর নাম বাক্কা); এটা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী।”[২০]

এখানে সুস্পষ্টভাবে মানবজাতির সর্বপ্রথম ‘ইবাদত গৃহ হিসাবে কা’বা ঘরকে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামের এ আন্তর্জাতিকতা ও বিশ্বজনীনতার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে মিল্লাতে মুসলিমার প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিগণ একত্রিত হয়ে মিল্লাতের সকল সমস্যা, উন্নতি-অগ্রগতি আলোচনা-পর্যালোচনা করবে এবং পরবর্তীতে পারস্পরিক সহযোগিতা ও পরামর্শের ভিত্তিতে ইসলামকে আদর্শ হিসাবে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করা। তাই হজ্জ শুধু ব্যক্তিগত ‘ইবাদত ও সাধারণ মুসলিমের আন্তর্জাতিক বার্ষিক সম্মেলনই নয়; বরং বিশ্ব মুসলিমের নেতৃস্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গেরও এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন যা বিশ্বসম্মেলন।

সৌদি সরকারের মানবসেবা : সৌদি সরকার যে পবিত্র হারামাইন শরীফাইনের খাদেম তা ঐতিহাসিক সূত্রে প্রমাণিত। রাসূল (সা.)-এর চাচা আব্দুল মুত্তালিব তাঁর পুত্র ‘আব্বাস হাজীদের পানি পান করানো এবং হাজীদের মেহমানদারীর দায়িত্ব পালন করতেন। সেই সেবার ইতিহাস-ঐতিহ্যের চিত্র আজ হারামাইনে পরিচালিত হয়। মরুভূমির দেশ অনুর্বর উত্তপ্ত আবহাওয়ার দেশ, নদ-নদী, খাল-বিল, গাছপালা, বিরান দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের থাকা যাতায়াত, স্বাস্থ্য এবং পানীয় জলের যে অপূর্ব সমাহার তা আমাদের অবাক করে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের লোক বিশেষ করে পুলিশ, আনসার ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক দল সবাই হাজীদের সেবায় ব্যস্ত। কা’বা চত্বরে সাধারণ মানুষ হাজীদের সেবার জন্য কেউ খেজুরের প্যাকেট বিভিন্ন প্রকার ফলের জুস, লাবান বা দুধের পট, চা, কফি, যমযমের পানি গ্লাসে করে ক্লান্তি দূর করার জন্য হাজীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। কা’বার পাশে হোটেল-রেস্তোরা থেকে প্যাকেট বিরানী, পাউরুটি, কোমল পানীয়, আপেল, কলা, মালটাসহ বিভিন্ন প্রকার খাবার হাজীদের ডেকে ডেকে বিতরণ করছে এবং এ কাজ করে তারা প্রচণ্ড আনন্দবোধ করেন। রাস্তাঘাট সব পরিচ্ছন্ন কোথাও কোনো ময়লা আবর্জনা নেই। সার্বক্ষণিক পড়ে থাকা ময়লা নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলার জন্য শতাধিক কর্মচারী কর্মরত। মশা, মাছি, কীট-পতঙ্গ মুক্ত কোথাও কুকুর, শিয়াল সচরাচর দেখা যায় না।

হজ্জের সময় আরাফাত, মুজদালিফা, মিনায় ও জামরাতুল আকাবায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা হাজীদের সম্মানে ‘লাব্বাইক ও আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিচ্ছে, কেউ পানি ছিটাচ্ছে। মুরুব্বীদের মাথায় ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছে। আবার পুলিশকে দেখলাম পাখা দিয়ে হাজীদের বাতাস করছে। সৌদি সরকার ও সৌদিবাসীর অকৃত্রিম সহানুভূতি ও মানব প্রেমের দৃষ্টান্ত সমগ্র মুসলিমকে ধর্মীয় উদ্দীপনায় অনুপ্রাণিত করবে, ইন্শা-আল্লাহ। মক্কা-মদীনার বাজার পবিত্র হজ্জ মৌসুমে দিন-রাত সব সময় প্রায় খোলা থাকে। তবে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, যখনি সালাতের সময় আযান হবে সাথে সাথে দ্রুত দোকান বন্ধ করে মসজিদের দিকে ছুটে যায়। কবর পূজা, নযর নেয়াজ, মাজারে কুলখানি, ইসালে সওয়াব সৌদি সমাজমুক্ত। মাসাধিককাল পবিত্র কা’বা এবং কিছুদিন মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করলেন প্রাণ ভরে হৃদয় খুলে এই সালাতের সময়গুলো প্রত্যেকে দেখলেন সরাসরি প্রত্যক্ষ করলেন কিন্তু আপনি যদি মাযহাবী হন তাহলে জেদ্দা থেকে বিমানে উঠবার সাথে সাথেই ঐ কা’বা শরীফ আর মসজিদে নববীর আদায়কৃত সালাতের সময় ফেলে রেখে আসলেন। ঐ সময় আর সাথে করে দেশে আনলেন না।

আপনি যদি এক মাস ওখানে থাকেন তবে ৩০ দ্ধ ৫ = ১৫০-এর মধ্যে জুম’আ এগুলোর সময়সূচী ঐ নবীর দেশেই ফেলে আসলেন। আপনার ভাগ্যে ঐ মূল্যবান সালাতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্ধারিত সময় দেশে এনে তা ‘আমল করার সৌভাগ্য হলো না। তাহলে কি হারামাইন শরীফাইনের ঐ সালাত সন্দেহযুক্ত? যদি তাই হয় তাহলে লক্ষাধিক টাকা খরচ করে কা’বা ঘরে যে প্রায় ১৫০ ওয়াক্ত সালাত আদায় করলেন তার পরিণতি বা কি হবে? এখন চিন্তা করুন আপনি কি ভাগ্যবান না দুর্ভাগা? আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

﴿إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَوْقُوْتًا﴾

“নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মু’মিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।”[২১]

ঐ দুই মসজিদসহ মক্কা-মদীনার সমস্ত মসজিদে সূরা আল ফাতিহাহ্ পাঠের পর এক সাথে জোরে আমীন প্রতিধ্বনিত হয়। মাগরিবের আজান ও ইকামাতের মধ্যে দু’রাকআত সুন্নাত সালাত পড়ার ‘আমলটা পবিত্র কা’বা শরীফে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে কমবেশি আদায় করে থাকেন। আযান ও ইকামাতের শব্দগুলো জোড় এবং বেজোড় এটাও শুনেছেন। কিন্তু আফসোস! সঙ্গে আনতে পারলেন না। অথচ আনলেন জায়নামায, তসবীহ-টুপি, রুমাল, গহনা, কার্পেট, কম্বল, খেজুর, যম্যমের পানি আরও কতকিছু। তাই সবার উচিত মাযহাবী সংকীর্ণতা পরিহার করে খোলা মনে সহীহ হাদীসের অনুসরণ করা। তাহলে লক্ষগুণ সওয়াবের সালাত যথাযথভাবে আদায় হবে ইন্শা-আল্লাহ।


[১] সহীহুল বুখারী- হা. ১৫৪৯; সহীহ মুসলিম- হা. ১৯/১১৮৪।
[২] সূরা আল হুজুরা-ত : ১০।
[৩] সূরা আল বাক্বারাহ্ : ১২৫।
[৪] জামে‘ আত্ তিরমিযী- হা. ৯৬১, সনদ সহীহ।
[৫] জামে‘ আত্ তিরমিযী- হা. ৭৮৮, সনদ সহীহ।
[৬] সূরা আল বাক্বারাহ্ : ১৫৮।
[৭] তাবারানী কাবীর- ১১১৬৭, সনদ সহীদ; ইরওয়াউল গালীল- ১১২৩।
[৮] সুনান আন্ নাসায়ী- হা. ২৯৬৪।
[৯] সূরা আল ফীল : ৫।
[১০] সূরা আত্ তাওবাহ্ : ৪০।
[১১] সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম, মুসান্নাফ ‘আব্দুর রায্যাক।
[১২] ইমাম মুসলিম, সুনান আন্ নাসায়ী, সুনান ইবনু মাজাহ্।
[১৩] বুখারী- হা. ১৮৮৮; মুসলিম- হা. ৩৪৩৬; আহমাদ- হা. ৭২২২।
[১৪] সহীহ মুসলিম- ২য় খণ্ড, ১০৮ পৃ.।
[১৫] সূরা আ-লি ‘ইমরান : ১২৮।
[১৬] সূরা আত্ তাওবাহ্ : ১০৮।
[১৭] সুনান ইবনু মাজাহ্- হা. ১৪১২, সনদ সহীহ।
[১৮] সূরা আল বাক্বারাহ্ : ১৪৪।
[১৯] সহীহুল বুখারী- হা. ১৫২১; সহীহ মুসলিম- হা. ৮৩।
[২০] সূরা আ-লি ‘ইমরান : ৯৬।
[২১] সূরা আন্ নিসা : ১০৩।


আপনার মন্তব্য

ঢাকায় সূর্যোদয় : 5:43:02 সূর্যাস্ত : 6:09:54

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত