সাময়িক প্রসঙ্গ
শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ইমমাতি করতে পারবেন কি?
আরাফাত ডেস্ক
শারীরিক প্রতিবন্ধী বা বিকলাঙ্গ যেমন অন্ধ কিংবা খোঁড়া যা সামান্য কিংবা অধিক পরিমাণে বিকল এমন ইমামের পিছনে সলাত আদায় করা যাবে কি-না এ সম্পর্কে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। আরাফাত পাঠকদের খিদমতে এ বিষয়ে আলোকপাত হলো-
ইমামতির শর্ত কি কি এবং কে ইমামতির সর্বাধিক হক্বদার এ স¤পর্কে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে উপর্যুক্ত বিষয়গুলোর স্থান দেয়া হয়নি; বরং আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ﴾
অর্থাৎ- “তোমাদের মধ্যে সেই সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ যে তোমাদের মধ্যে বেশি আল্লাহভীরু।”[১]
সুতরাং অন্ধ কিংবা খোঁড়া ব্যক্তির ইমামতি করতে কোনো বাধা নেই। তবে কোনো কোনো ইমামের মতে তা মাকরূহ তথা অপছন্দনীয়। যেমন- হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফিকহের কিতাব “রদ্দুল মুখতার” গ্রন্থে যাদের ইমামতি মাকরূহ-এর আলোচনায় বলা হয়েছে-
ومفلوج وأبرص شاع برصه. قال : وكذلك أعرج يقوم ببعض قدمه، فالاقتداء بغيره أولى.
পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী এবং কুষ্ঠ রোগী যার কুষ্ঠ প্রকাশমান। অনুরূপ খোঁড়া ব্যক্তি যিনি পায়ের কিছু অংশ দ্বারা দাঁড়াতে সক্ষম তাদের ছাড়া অন্যদের ইমামতি উত্তম।
সৌদী আরবের প্রখ্যাত ‘আলেম আল্লামা শাইখ সলেহ আল মুনাজ্জিদ “সওয়াল ও জাওয়াব”-এর ১৭১২৮৭ নম্বর ফাতাওয়ায় এ প্রসঙ্গে বলেন : ‘খোঁড়া ব্যক্তি যদি অন্যদের তুলনায় বেশি বিশুদ্ধভাবে কুর‘আন তিলাওয়াত করতে পারে সে অবস্থায় উক্ত খোঁড়া ব্যক্তিই ইমামতির বেশি হক্বদার হবেন। কেননা নাবী ﷺ ইরশাদ করেন :
يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللهِ.
অর্থাৎ- সমাজের ইমামতি ঐ ব্যক্তিই করবে যে তাদের মধ্যে সর্বাধিক বিশুদ্ধভাবে মহান আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করতে সক্ষম এবং যার মুখস্থও বেশি।[২]
আর তার যে শারীরিক ত্রুটি আছে তাতে ইমামতিতে কোনো বাধার সৃষ্টি করবে না। কেননা সে তো কোনো ওয়াজিব তরক করেনি।[৩]
তাফসীর কুরতুবীর প্রথম খ-ের ৩৪৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- ‘অন্ধ, খোঁড়া, কোনো অঙ্গহীন এবং কোনো পরাধীন তথা দাস ব্যক্তির ইমামতিতে কোনো সমস্যা নেই যদি তিনি সলাতের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হন।
সৌদী আরবের প্রখ্যাত ‘আলিম আল্লামা ‘আবদুল্লাহ আল ফাউযান বলেন : ইবনুল মুনযির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন : অন্ধ এবং দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তির ইমামতিতে কোনো পার্থক্য নেই।[৪]
এ প্রসঙ্গে সুনান আবূ দাঊদে বর্ণিত হয়েছে-
أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ : اسْتَخْلَفَ ابْنَ أُمِّ مَكْتُوْمٍ يَؤُمُّ النَّاسَ وَهُوَ أَعْمَى.
অর্থাৎ- নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু উম্মু মাকতূম (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে মাদীনার গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন, যিনি মাদীনবাসীর ইমামতি করতেন অথচ তিনি ছিলেন অন্ধ।[৫] আল্লামা শাইখ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। তাছাড়া সহীহুল বুখারী’র ৪২৫ নং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে,
أَنَّ عِتْبَانَ بْنَ مَالِكٍ... أَتَى رَسُوْلَ اللهِ ﷺ، فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ قَدْ أَنْكَرْتُ بَصَرِىْ، وَأَنَا أُصَلِّىْ لِقَوْمِى...
অর্থাৎ- বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ‘ইতবান ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং তিনি তাঁর গোত্রের লোকেদের ইমামতি করতেন। তিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন যে, আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছি এবং আমি আমার গোত্রের লোকেদের ইমামতি করি। বৃষ্টি বাদলের দিন আমি মাসজিদ পর্যন্ত যেতে পারি না। সুতরাং আপনি আমার গৃহের এক কোণে সলাত পড়ার অনুমতি দিন, আমি সেই স্থানটিকে মুসল্লা হিসেবে গ্রহণ করব।
পরিশেষে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার আবেদন গ্রহণ করেন।
সুতরাং কুর‘আন ও সুন্নাহর অলোকে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, অন্ধ, খোঁড়া প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের ইমামতিতে কোনোই বাধা নেই। যদি তিনি কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী ইমামের যোগ্য হন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের কুর‘আন-সুন্নাহ মুতাবিক চলার তাওফীক্ব দান করুন -আল্লাহুম্মা আমীন।

[১] সূরা আল হুজুরা-ত ৪৯ : ১৩।
[২] সহীহ মুসলিম- হাঃ ২৩৭৩।
[৩] ফাতাওয়া সা‘দিয়াহ- ১৬৭।
[৪] মানহুল আল্লাম- শারাহ বুলূগুল মারাম- ৩/২৬২।
[৫] মুসনাদ আহমাদ, সুনান আবূ দাঊদ- হাঃ ৫০৩।


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত