﴿مَثَلُ الَّذِيْنَ يُنفِقُوْنَ أَمْوَالَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِيْ كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ﴾
অর্থ : “যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মতো, যা থেকে ৭টি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ‘ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।”[১]
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿إِنَّ الْمُصَّدِّقِيْنَ وَالْمُصَّدِّقَاتِ وَأَقْرَضُوْا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضَاعَفُ لَهُمْ وَلَهُمْ أَجْرٌ كَرِيْمٌ﴾
অর্থ : “নিশ্চয় দানশীল ব্যক্তি ও দানশীলা নারী যারা আল্লাহকে উত্তমরূপে ধার দেয়, তাদেরকে দেয়া হবে বহুগুণ এবং তাদের জন্যে রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।”[২]
আল্লাহ তা‘আলা দান-সাদাক্বাহ্কে শরী‘আত সম্মত করে তার সওয়াব অর্জনে উদ্বুদ্ধ করেছেন। দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে সাদাক্বাহ্ শরী‘আত সম্মত করা হয়েছে- ১। মুসলিমদের চাহিদা ও ঘাটতি পূরণ করা এবং ২। ইসলামকে সাহায্য ও শক্তিশালী করা।
সাদাক্বাহ্ মহান আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক ফযীলাতপূর্ণ প্রিয় ১টি ‘আমল। এর প্রমাণ হলো নিম্নোক্ত হাদীস :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ، فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ أَيُّ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ؟ وَأَيُّ الْأَعْمَالِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ؟ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : ্রأَحَبُّ النَّاسِ إِلَى اللهِ أَنْفَعَهُمْ لِلنَّاسِ، وَأَحَبُّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللهِ سُرُوْرٍ تُدْخِلُهُ عَلٰى مُسْلِمٍ، أَوْ تَكْشِفُ عَنْهُ كُرْبَةً، أَوْ تَقْضِيْ عَنْهُ دِيْنًا، أَوْ تُطْرَدُ عَنْهُ جُوْعًا.
অর্থ : ইবনু ‘উমার থেকে বর্ণিত। একদা ১ ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকটে এসে বললেন : হে আল্লাহর রাসূল! মহান আল্লাহর নিকটে কোন ব্যক্তি ও কোন ‘আমলটি সবচেয়ে উত্তম? তখন রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : মহান আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি সে যে মানুষের অধিক উপকার করে। মহান আল্লাহর নিকটে প্রিয় ‘আমল হলো : কোনো মুসলিমকে আনন্দ দেওয়া। তার কোনো কষ্ট দূর করা বা তার ঋণ পরিশোধ করা অথবা তার ক্ষুধা নিবারণ করা।[৩]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ وَهُوَ عَلٰى الْمِنْبَرِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ وَذَكَرَ الصَّدَقَةَ وَالتَّعَفُّفَ وَالْمَسْأَلَةَ الْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنْ الْيَدِ السُّفْلَى فَالْيَدُ الْعُلْيَا هِيَ الْمُنْفِقَةُ وَالسُّفْلَى هِيَ السَّائِلَةُ.
অর্থ : ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) থেকে বর্ণিত। মিম্বারের উপরে সাদাক্বাহ্-আত্মসংযমতা ও চাওয়ার বিষয় উল্লেখ করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : নিচের হাতের চেয়ে উপরের হাত উত্তম। উপরের হাত দানকারী আর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : নিচের হাত ভিক্ষাকারী।[৪]
عَنْ جَابِرٍ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : "خَيْرُ النَّاسِ مَنْ نَفَعَ النَّاسَ".
অর্থ : জাবির (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন : পরোপকারী ব্যক্তিই উত্তম ব্যক্তি।[৫]
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
أَهْلَ الْمَعْرُوْفِ فِيْ الدُّنْيَا هُمْ أَهْلُ الْمَعْرُوْفِ فِيْ الْآخِرَةِ.
অর্থ : দুনিয়াতে অন্যের প্রতি ভাল আচরণকারীরাই পরকালে ভাল আচরণ পাবেন।[৬]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ إِنَّ فِيْ الْجَنَّةِ غُرْفَةً يُرَى ظَاهِرُهَا مِنْ بَاطِنِهَا وَبَاطِنُهَا مِنْ ظَاهِرِهَا فَقَالَ أَبُوْ مُوْسٰى الْأَشْعَرِيُّ لِمَنْ هِيَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ لِمَنْ أَلَانَ الْكَلَامَ وَأَطْعَمَ الطَّعَامَ وَبَاتَ لِلّٰهِ قَائِمًا وَالنَّاسُ نِيَامٌ.
অর্থ : ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আম্র (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হুমা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : জান্নাতে কিছু ঘর রয়েছে যার ভিতর থেকে বাহির ও বাহির থেকে ভিতর দেখা যাবে। তখন আবূ মূসা আশ্‘আরী (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) বললেন : সেই ঘরগুলো কাদের জন্য হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)!? তিনি বললেন : সেটা আল্লাহ তা‘আলা প্রস্তুত রেখেছেন ঐ সকল ব্যক্তিদের জন্য যারা নম্র ভাষায় কথা বলে, গরীব মিসকীনকে খাবার দেয়, নিয়মিত সিয়াম পালন করে এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন তারা সলাত আদায় করে।[৭]
দান-সাদাক্বাহ্ ও পরোপকারী সম্পূর্ণ ভূপাতিত হন না, কোনো সময় সে ভূপাতিত হলেও ঠেস দেওয়ার মতো জিনিষ পেয়ে যায়। কারণ দান-সাদাক্বাহ্ বিপদাপদ ও বালা-মুসীবাত দূর করে। দানের কারণেই অনেক সমস্যা ও অসূখ-বিসূখ ভাল হয়ে যায়। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
صنائع الْمَعْرُوفِ يَقِي مَصَارِعَ السُّوءِ والآفات والهلكات.
অর্থ : ভাল কাজ খারাপ মৃত্যু, বালা-মুসীবাত ও ধ্বংস থেকে রক্ষা করে।[৮]
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ : "وَفِعْلُ الْمَعْرُوْفِ يَقِيْ مَصَارِعَ السُّوْءِ".
অর্থ : আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : মা‘রফূ সূত্রে ভাল কাজ মন্দ মৃত্যু থেকে বাঁচায়।[৯]
রাফে ইবনু খাদীজ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
"الصَّدَقَةَ، تسد سَبْعِيْنَ بَابًا مِنَ السُّوْءِ".
অর্থ : সাদাক্বাহ্ মন্দের ৭০টি দরজা বন্ধ করে দেয়।[১০]
عن رافع بن خديج مرفوعًا : والله تعالى يربي الصدقات، ويضاعف لأصحابها المثوبات، ويعلي الدرجات.
অর্থ : আল্লাহ তা‘আলা সাদাক্বাহ্কৃত বস্তুকে বৃদ্ধি করতে থাকেন, দানকারীদেরকে বহুগুন সওয়াব দিয়ে তাঁদের মর্যাদা উঁচু করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿إِنَّ الْمُصَّدِّقِيْنَ وَالْمُصَّدِّقَاتِ وَأَقْرَضُوْا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضَاعَفُ لَهُمْ وَلَهُمْ أَجْرٌ كَرِيْمٌ﴾
অর্থ : “নিশ্চয় দানশীল ব্যক্তি ও দানশীলা নারী, যারা আল্লাহকে উত্তমরূপে ধার দেয়, তাদেরকে দেয়া হবে বহুগুণ এবং তাদের জন্যে রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।”[১১]
﴿مَنْ ذَا الَّذِيْ يُقْرِضُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيْرَةً وَاللهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ﴾
অর্থ : “এমন কে আছে যে, আল্লাহকে র্কায দেবে, উত্তম র্কায; অতঃপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ-বহুগুণ বৃদ্ধি করে দিবেন। আল্লাহই সংকোচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন এবং তাঁরই নিকট তোমরা সবাই ফিরে যাবে।”[১২]
﴿مَثَلُ الَّذِيْنَ يُنفِقُوْنَ أَمْوَالَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِيْ كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ﴾
অর্থ : “যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মতো, যা থেকে ৭টি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ‘ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।”[১৩]
সাদাক্বার ফযীলাত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
্রمَا تَصَدَّقَ أَحَدٌ بِصَدَقَةٍ مِنْ طَيِّبٍ، وَلَا يَقْبَلُ اللهُ إِلَّا الطَّيِّبَ، إِلَّا أَخَذَهَا الرَّحْمٰنُ بِيَمِيْنِهِ، وَإِنْ كَانَتْ تَمْرَةً، فَتَرْبُوْ فِيْ كَفِّ الرَّحْمٰنِ حَتّٰى تَكُوْنَ أَعْظَمَ مِنَ الْجَبَلِ، كَمَا يُرَبِّيْ أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ أَوْ فَصِيْلَهُগ্ধ.
অর্থ : যখন কেউ কোনো হালাল ও বৈধ সম্পদ থেকে সাদাক্বাহ্ করে, আর আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র বস্তু ব্যতীত কবুল করেন না, তখন আল্লাহ তা‘আলা সেটাকে নিজের ডান থেকে গ্রহণ করেন, যদি তা ১টি খেজুরও হয়। অতঃপর তা দয়াময় মহান আল্লাহর হাতের তালুতে বাড়তে থাকে। এমনকি তা পাহাড় থেকেও বড় হয়ে যায়। যেমন তোমাদের কেউ তার গো-বৎসকে লালন-পালন করে।[১৪]
সাদাক্বাহ্ গুনাহ মোচন, মন্দ কাজ মুছে দেওয়া এবং ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذٰلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِيْنَ﴾
অর্থ : “নিশ্চয় ভাল কাজ মন্দ কাজকে মুছে দেয়, উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এটা নসীহত।”[১৫]
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
تَصَّدَقَةُ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ، فَإِنَّهَا تَسُدُّ مِنَ الْجَائِعِ، وتُطْفِئُ الخَطِيْئَةَ كَمَا يُطْفِئُ المَاءُ النَّارَ.
অর্থ : ১টি খেজুর হলেও দান করো, কারণ তা ক্ষুধা নিবারণ করে এবং ভুলকে সেইভাবে মুছে দেয় যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।[১৬]
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
"وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيْئَةَ، كَمَا يُذْهِبُ الجليد على الصفا".
অর্থ : সাদাক্বাহ্ সেইভাবে ভুল মুছে দেয় যেভাবে স্বচ্ছ জিনিষের উপর দিয়ে বরফ অতিবাহিত হয়।
দান সাদাক্বাহ্ সম্পদকেও বালা-মুসীবাত ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে সেখানে বরকত নিয়ে আসে : আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿قُلْ إِنَّ رَبِّيْ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ لَهُ وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ﴾
অর্থ : “বলুন, আমার পালনকর্তা তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা রিয্ক বাড়িয়ে দেন এবং সীমিত পরিমাণে দেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় করো, তিনি তার বিনিময় দেন। তিনি উত্তম রিয্কদাতা।”[১৭]
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
ما فتح رجل بَابَ عَطِيَّةٍ بِصَدَقَةٍ أَوْ صِلَةٍ إِلَّا زَادَ اللهُ بِهَا كَثْرَةً.
অর্থ : কোনো ব্যক্তি যদি দান বা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার দরজা উন্মুক্ত করে তবে আল্লাহ তা‘আলা তার সব কিছুতে বরকত দান করবেন।[১৮]
অপর হাদীসে রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
"مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ العِبَادُ فِيْهِ، إِلَّا مَلَكَانِ يَنْزِلَانِ، فَيَقُوْلُ أَحَدُهُمَا : اَللّٰهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَيَقُوْلُ الآخَرُ : اَللّٰهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا".
অর্থ : বান্দাদের সকাল করা প্রত্যেক দিনে দু’জন করে ফেরেশ্তা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়াতে অবতরণ করেন। তাদের ১ জন বলেন : হে আল্লাহ! দানকারীর সম্পদ বাড়িয়ে দাও, অন্যজন বলেন : হে আল্লাহ! বখীলের সম্পদ যেনো অবশিষ্ট্য না থাকে।[১৯]
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
্রمَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍগ্ধ.
অর্থ : দান-সাদাক্বার দরুন সম্পদে কোনো ঘাটতি হয় না।[২০]
নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
"ثَلَاثٌ أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ، وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيْثًا فَاحْفَظُوْهُ"، "فَأَمَّا الثَّلَاثُ الَّتِيْ أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ : فَإِنَّهُ مَا نَقَّصَ مَالَ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٌ.
অর্থ : ৩টি বিষয়ের উপর আমি শপথ করে আমি তোমাদেরকে ১টি হাদীস বলছি, তোমরা তা মুখস্থ করে নাও। যে ৩টি বিষয়ের উপর আমি শপথ করছি তার ১টি হলো- দান-সাদাক্বার দরুন কোনো বান্দার সম্পদে ঘাটতি হয় না।[২১]
মহান আল্লাহর রাস্তা ও কল্যাণকর কাজে দান-সাদাক্বাহ্ করলে বান্দা মহান আল্লাহর ‘আযাব ও শাস্তি থেকে রক্ষা পায় : রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةً عَنْ النَّبِيّ ﷺ قَالَ "إِنَّ الْمَيِّت إِذَا وُضِعَ فِيْ قَبْره إِنَّهُ لَيَسْمَع خَفْق نِعَالهمْ حِيْن يُوَلُّوْنَ عَنْهُ. فَإِنْ كَانَ مُؤْمِنًا كَانَتْ الصَّلَاة عِنْد رَأْسه، وَكَانَ الصِّيَام عَنْ يَمِيْنه، وَكَانَتْ الزَّكَاة عَنْ شِمَاله، وَكَانَ فِعْل الْخَيْرَات مِنْ الصَّدَقَة وَالصِّلَة وَالْمَعْرُوْف وَالْإِحْسَان إِلَى النَّاس عِنْد رِجْلَيْهِ. فَيُؤْتَى مِنْ قِبَل رَأْسه فَتَقُوْل الصَّلَاة : مَا قِبَلِيْ مَدْخَل. ثُمَّ يُؤْتَى عَنْ يَمِيْنه، فَيَقُوْل الصِّيَام : مَا قِبَلِيْ مَدْخَل. ثُمَّ يُؤْتَى عَنْ يَسَاره فَتَقُوْل الزَّكَاة. مَا قِبَلِيْ مَدْخَل، ثُمَّ يُؤْتَى مِنْ قِبَل رِجْلَيْهِ فَيَقُوْل فِعْل الْخَيْرَات مِنْ الصَّدَقَة وَالصِّلَة وَالْمَعْرُوْف وَالْإِحْسَان إِلَى النَّاس : مَا قِبَلِيْ مَدْخَل. (تهذيب سنن أبي داود وإيضاح مشكلاته- ২/ ৪৩৫)
অর্থ : আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন : মৃত ব্যক্তিকে কবরে রেখে আসার সময় সে তাকে মাটি দিয়ে ফেরত যাওয়া লোকদের জুতার শব্দ শুনতে পায়। মৃত ব্যক্তি যদি মু’মিন হয়ে তাকে তবে সলাত তার মাথার কাছে থাকে, সিয়াম তার ডান দিকে থাকে, যাকাত তার বাম দিকে থাকে, দান-সাদাক্বাহ্-আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা, ভাল কাজ, মানুষের প্রতি দয়া ইত্যাদি ‘আমল তার পায়ের কাছে অবস্থান নেয়। তার মাথার দিক থেকে আসলে সলাত বলবে- আমার এ দিক দিয়ে প্রবেশের যায়গা নেই। তার ডান দিকে আসা হলে সিয়াম বলবে- আমার এ দিক দিয়েও প্রবেশ পথ বন্ধ, বাম দিক দিয়ে আসা হলে যাকাত বলবে- আমার দিক থেকেও প্রবেশ পথ বন্ধ। অতঃপর তার পায়ের দিক থেকে আসা হলে দান-সাদাক্বাহ্-আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাসহ নানাবিধ ভাল কাজগুলো বলবে- আমাদের এ দিক দিয়েও প্রবেশের যায়গা নেই।[২২]
আদী ইবনু হাতিম (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
اتَّقُوْا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ.
অর্থ : খেজুরের অর্ধেকাংশ দিয়ে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চেষ্টা করো।[২৩] অপর বর্ণনাতে এসেছে-
فَمَنْ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَتَّقِيَ النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ فَلْيَفْعَلْ.
অর্থ : তোমাদের কেউ অর্ধেক খেজুর দিয়ে জাহান্নাম থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে পারলে সে যেনো তাই করে।[২৪]
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :
اجْعَلُوْا بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ النَّارِ حِجَابًا، وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ.
অর্থ : অর্ধেক খেজুর দিয়ে হলেও নিজেদের ও জাহান্নামের মাঝে আড় তৈরী করো।[২৫]
‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা)-কে রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছিলেন :
يَا عَائِشَةُ اسْتَتِرِي مِنْ النَّارِ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ فَإِنَّهَا تَسُدُّ مِنْ الْجَائِعِ مَسَدَّهَا مِنْ الشَّبْعَانِ.
অর্থ : অর্ধেক খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচার চেষ্টা করো, কারণ অর্ধেক খেজুরই ক্ষুধার্তের কাছে পেট পুরে খাবারের মতো।[২৬]
দান-সাদাক্বাহ্ মানুষকে মহান আল্লাহর আনুগত্য ও নৈকট্যশীল কাজে ব্যস্ত রাখে। আর এটাই তার ফযীলতের জন্য যথেষ্ঠ। কতক পূর্ববর্তী পরহেযগার ব্যক্তি বলেন :
قال بعض السلف : "إن من ثواب الحسنة الحسنة بعدها، وإن من جزاء السيئة السيئة بعدها." والصدقة من أعظم الحسنات وأجلِّها. وكفى بذلك فضلًا.
অর্থ : নেক কাজের অন্যতম সওয়াব হলো- ভাল কাজের পরে ভাল কাজ সম্পাদন করা। আর মন্দ কাজের প্রতিফল হলো- ১ মন্দ কাজ অপর মন্দ কাজে জড়িয়ে দেয়। দান-সাদাক্বাহ্ সর্বাধিক বড় নেকির কাজের অন্তর্ভূক্ত। আর এটাই তার ফযীলাতের জন্য যথেষ্ঠ।
পবিত্র রামাযান নেকী অর্জনের এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরী করে দেয়। এ মাসে দান করলে অধিক সওয়াব হয়। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
أَفْضَلُ الصَّدَقَةِ صَدَقَةٌ فِيْ رَمَضَانَ.
অর্থ : রামাযান মাসের দান-সাদাক্বাহ্ সর্বাধিক উত্তম।[২৭]
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সকল মানুষের চেয়ে বেশী দানশীল ছিলেন। আর রামাযান মাস আসলে তিনি সবচেয়ে অধিক দান করতেন।
অতএব, আমাদের প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অনুসরণ করুন। সকল সময়ে বিশেষতঃ রামাযান মাসে গরীব মুসলিমদের খোঁজ নেওয়া উচিৎ। বিশেষভাবে নিকটত্মীয়দের মাঝে কোনো গরীব থাকলে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে যাবতীয় কল্যাণকর কাজে বিশেষতঃ দান-সাদাক্বার ক্ষেত্রে প্রতিযোগীতা করার তাওফীক্ব দান করুন -আমীন।
[১] সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ : ২৬১।
[২] সূরাহ্ আল হাদীদ : ১৮।
[৩] মু’জামুল আওসাত্ব- হাঃ ৬০২৬।
[৪] সহীহুল বুখারী- হাঃ ১৩৩৯।
[৫] শু‘আবুল ঈমান- হাঃ ৭৬৫৮, মাঃ শাঃ, হাঃ ৭২৫২।
[৬] শু‘আবুল ঈমান- মাঃ শাঃ, হাঃ ৮৬৩৬।
[৭] মুসনাদে আহমাদ- হাঃ ৬৩২৬।
[৮] শু‘আবুল ঈমান- মাঃ শাঃ, হাঃ ৩১৬৮।
[৯] শু‘আবুল ঈমান- মাঃ শাঃ, হাঃ ৩১৬৮।
[১০] শু‘আবুল ঈমান- মাঃ শাঃ, হাঃ ২৫২৮।
[১১] সূরাহ্ আল হাদীদ : ১৮।
[১২] সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ : ২৪৫।
[১৩] সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ : ২৬১।
[১৪] সহীহ মুসলিম- হাঃ ৬৩/১০১৪।
[১৫] সূরাহ্ আল হূদ : ১১৪।
[১৬] আত্ তিরমযী- হাঃ ৬১৪, সহীহ; আহমাদ- হাঃ ২৪৫০১।
[১৭] সূরাহ্ সাবা- : ৩৯।
[১৮] মিসকা-তুল মাসা-বীহ- ৮/৩১৮৬।
[১৯] সহীহুল বুখারী- হাঃ ১৪৪২; সহীহ মুসলিম- হাঃ ৫৭/১০১০।
[২০] মুসলিম- হাঃ ৬৯/২৫৮৮; আত্ তিরমিযী- ২০২৯, সহীহ।
[২১] আহমাদ- হাঃ ১৮০৩১; মিশকা-তুল মাসা-বীহ- হাঃ ৫২৮৭।
[২২] তাহ্যীব আবূ দাঊদ ওয়া ই-যাহু মুশকিলা-তিহী, মাওয়ারিদুয যমআ-ন ইলা-যাওয়া ইদি ইবনু হিব্বান- হাঃ ৭৮১।
[২৩] সহীহুল বুখারী- হাঃ ১৩২৮, মাঃ শাঃ, হাঃ ১৪১৭।
[২৪] সুনান ইবনু মাজাহ্- হাঃ ১৮১।
[২৫] সহীহুল জামে‘- হাঃ ১৫৩, সিলসিলাহ্ সহীহাহ্- হাঃ ৮৯৭।
[২৬] মুসনাদে আহমাদ- হাঃ ২৩৩৬১।
[২৭] আত্ তিরমিযী- ৬৬৩, য‘ঈফ; শু‘আবুল ঈমান- হাঃ ৩৩৫৮।
আপনার মন্তব্য1