“...আর কিছু অতি লোভী ও মূল্যবোধহীন বিকৃত স্বভাবের মানুষ বিভিন্ন পণ্য, মাস্ক, জীবাণুনাশক জিনিস গুদামজাত করছে, এমনকি এগুলোর ন্যায্য মূল্য নিয়েও ছিনিমিনি খেলছে!...”
খতীব : শাইখ ড. সালাহ আল বুদাইর
১২ জুন- ২০২০ শুক্রবার প্রদত্ত খুতবার বঙ্গানুবাদ
।।। প্রথম খুৎবাহ্ ।।।
হে মুসলিমগণ! ‘অনুধাবন শক্তি’ হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বস্তু যা ব্যতীত নিরাপত্তা লাভ করা যায় না, এতেই নিরাপত্তা রয়েছে। যে ব্যক্তি এটাকে গুরুত্ব দেয় ও তদানুযায়ী চলে সেই নিরাপত্তা লাভ করে।
‘অনুধাবন শক্তি’ বলতে- সূক্ষ্মভাবে কোনো কিছু মুখস্ত করা ও পরিপূর্ণভাবে তা হৃদয়াঙ্গম করাকে বুঝায়। ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওয়াহী নাযিলের বিষয়ে বলেন : “কোনো কোনো সময় তা ঘন্টা বাজার মতো আমার কাছে আসে। আর এটিই আমার উপর সবচেয়ে কষ্টদায়ক হয়। তা শেষ হতেই ফেরেশ্তা যা বলেন তা আমি পূর্ণ মুখস্ত করে নেই।”[১]
ক্বাতাদাহ্ (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন : “আমি কান দিয়ে যা কিছু শুনেছি তা সাথে সাথে হৃদয়াঙ্গমও করেছি।”
‘অনুধাবন করা’ বলতে- উপদেশ প্রদানকারীর বক্তব্য, সম্বোধন ও তার উদ্দেশ্যকে আয়ত্ব করা ও বুঝতে পারা এবং তা গ্রহণ করে তদানুযায়ী কাজ করাকে বুঝায়। অন্যথা তা অনুধাবন ও আয়ত্ব করা বুঝায় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
“আমরা এটা করেছিলাম তোমাদের শিক্ষার জন্য এবং এজন্যে যে, যাতে শ্রুতিধর কান এটাকে সংরক্ষণ করে।”
আর শ্রুতিধর কানের কাজ হলো যা কিছু সংরক্ষণ করা জরুরী তা চর্চা, প্রচার ও গবেষণা করার মাধ্যমে সেটাকে মুখস্ত ও আয়ত্ব করা এবং সেটার উপর ‘আমল না করে বিনষ্ট না করা।
অনুধাবনকারী তো সে-ই যে আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছে এবং কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে যা কিছু শুনেছে তা দ্বারা উপকৃত হয়েছে। উক্ত আয়াতে আল্লাহ ﴿أذن واعية﴾ বলেছেন যা অনির্দিষ্টবাচক, তিনি ﴿آذان واعية﴾ বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করেননি। কেউ কেউ বলেন : কেননা এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, বুঝমান ও অনুধাবনকারীর সংখ্যা কমই হয়।
জায়িদ ইবনু সাবেত (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : “আল্লাহ তা‘আলা সেই ব্যক্তিকে উজ্জ্বলতা দান করুন, যে আমার কথা শুনেছে, মুখস্ত করেছে ও ধারণ করে রেখেছে। অতঃপর যারা তা শুনেনি তাদের কাছে পৌঁছিয়েছে। কেননা কতক জ্ঞান বহনকারী রয়েছে যে নিজে জ্ঞানী নয়। আর কতক জ্ঞান বহনকারী ব্যক্তি তার চেয়ে বড় জ্ঞানীর কাছে তা পৌঁছিয়ে থাকে।”[২]
রামাহুরমুযী (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন : “উক্ত হাদীসে রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুই ধরনের ব্যক্তির মাঝে পার্থক্য বর্ণনা করলেন; যে সুন্নাতকে পৌঁছে দেয় আর যে ব্যক্তি তা সংরক্ষণ করে। সেই সাথে ‘কতক জ্ঞান বহনকারী রয়েছে যে নিজে জ্ঞানী নয়। আর কতক জ্ঞান বহনকারী ব্যক্তি তার চেয়ে বড় জ্ঞানীর কাছে তা পৌঁছিয়ে থাকে।’ এই উক্তি থেকে সংরক্ষণকারী জ্ঞানী ব্যক্তির ফযীলাত বেশী তাও বুঝা যায়।”
হে মুসলমানগণ! মানুষের অন্তর ও বোধশক্তি হচ্ছে এমন পাত্র যা তার জ্ঞান, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, চিন্তা চেতনা ও অনুভূতিকে ধারণ করে রাখে। তাই আপনি আপনার পাত্রে তা-ই রাখুন যা আপনার ধর্মবিশ্বাস, বিবেক-বুদ্ধি ও আচরণকে ত্রুটিমুক্ত রাখবে।
কবির ভাষায় :
সৎকর্মগুলো রয়ে যাবে, যদিও দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হয়... আর মন্দকর্মগুলো, তুমি যা ধারণ করেছ তার নিকৃষ্টতম বস্তু।
আমাদের মহান রব আল্লাহ তা‘আলা দাম্ভিক কাফিরদের ব্যাপারে বলেন : “আর তারা যা পোষণ করে আল্লাহ তা সবিশেষ অবগত।” অর্থাৎ- তারা রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও মু’মিনদের ব্যাপারে যে হিংসা ও শত্রুতা পোষণ করে সে বিষয়ে তিনি সম্যক অবগত।
‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহু) বলেন : “অন্তরসমূহ হচ্ছে পাত্রের ন্যায়, তোমরা তাকে কুরআন দিয়ে পরিপূর্ণ করো, অন্য কিছু দিয়ে নয়। প্রত্যেকের অন্তরে যা আছে তা বাহিরে উদ্ভাসিত হয় এবং তার হৃদয়ে যা আছে তা মুখে প্রকাশ পায়।”
হে মুসলিমগণ! ব্যক্তি পূর্ণ অনুধাবন শক্তি অর্জন করতে পারে জ্ঞানার্জন, পাঠ ও অধ্যয়নের মাধ্যমে। আর তা সুদৃঢ় হবে বিদ্ধানদের সহচর্য লাভের মাধ্যমে, যারা অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ ও ঘাত-প্রতিঘাতে পরীক্ষিত।
বলা হয় যে, “অতীত বিষয়ের সংবাদদাতা হিসেবে তা-ই যথেষ্ট যা তার কিঞ্চিত এখনও বিদ্যমান। আর জ্ঞানবানদের জন্য উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণের জন্য তা-ই যথেষ্ট যা তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।”
জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করা, অভিজ্ঞতা অর্জন, দক্ষতা, বয়স ও অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে অনুধাবন ও আয়ত্ব ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু)-কে বলা হলো, আপনি কীভাবে এই জ্ঞান অর্জন করলেন? জবাবে তিনি বলেন : ‘বেশি বেশি জিজ্ঞাসা করা, হৃদয়াঙ্গম করা এবং অন্তকরণ দিয়ে আগ্রহভরে বুঝ গ্রহণের মাধ্যমে।’
আর বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ ব্যক্তির সাথে পরামর্শ এবং তাদের পর্যবেক্ষণে থাকার ফলে অনুধাবন শক্তি বৃদ্ধি পায় ও ত্রুটিমুক্ত হয়।
কবি বলেন :
“নিশ্চয়ই বুদ্ধিমান ব্যক্তি তার বিষয়াদি এলোমেলো হলে... বিচক্ষণ ও পরামর্শকের স্বরণাপন্ন হয়।
আর মূর্খ-নির্বোধ ব্যক্তি তার নিজের যুক্তিতে অটল থাকে... তুমি দেখবে, সে তাতে বিপদের সম্মুখীন হবে।”
অনুধাবন ও আয়ত্ব শক্তি হচ্ছে গুদাম ঘরের ন্যায়, যার কালেকশন বাড়ে ও কমে। বলা হয় যে, আত্মনিয়োগে প্রতিভা বাড়ে, আর অনুশীলন ব্যক্তিকে উৎকর্ষতার শিখরে পৌঁছায়।
বোধশক্তিসম্পন্ন সচেতন ব্যক্তি দায়িত্ববান হয়, কোনো কিছুর পরিণতি প্রকাশ হবার পূর্বেই আন্দাজ করতে পারেন, বস্তুকে সমতুল্য বস্তু দ্বারা পরিমাপ করেন এবং অন্যদের থেকে শিক্ষা নেন ও ক্ষতিকারক বস্তু থেকে সতর্ক থাকেন।
দূরদর্শীতাসম্পন্ন ব্যক্তি এমন যিনি সঠিক সিদ্ধান্তের আলোকে ফলাফল বুঝতে পারেন।
হুযাইফাহ্ ইবনু ইয়ামান (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) বলেন : “লোকজন রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন, আর আমি তাঁকে অকল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম; এই ভয়ে যেনো আমি ঐসবের মধ্যে পড়ে না যাই।”[৩]
বোধশক্তিসম্পন্ন সচেতন ব্যক্তি এমন কাজ ও বস্তু পরিহার করেন যাতে ব্যর্থতা ও লোকসান রয়েছে, তিনি তা থেকে নিজেকে আড়ালে রাখেন যাতে নিজের দোষ ও কলঙ্ক তৈরি হয় অথবা অন্যের ক্ষতি হয়। যা মানুষ ঘৃণা করে তা থেকে তিনি বেঁচে থাকেন, অপছন্দনীয় বস্তু হতে নিজেকে সরিয়ে রাখেন এবং যা অনুচিত তা থেকে সুরক্ষিত থাকেন। ফলে তার থেকে সৌন্দর্য্য অবারিত হতে থাকে এবং মুক্তা ঝরতে থাকে।
হে মুসলমানবৃন্দ! বোধশক্তির অভাব এমন একটি আপদ যা অজ্ঞতা, তুচ্ছতা, উদ্দেশ্যহীনতা, মনযোগের অভাব ও বেপরোয়ার কাণ্ডের উপর প্রতিষ্ঠিত। এটা বিপদজনক যে, বিচক্ষণ ব্যক্তিকে উপেক্ষা করে ক্ষমতাবলে সিদ্ধান্ত নেয়া।
ব্যক্তি কিভাবে বাস্তবতাকে অস্বীকার করে, মিথ্যাকে মেনে নেয়, বোধগম্য বিষয়কে পরিত্যাগ করে, নিরূপণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, ভাল মন্দের পার্থক্য গুলিয়ে ফেলে, হস্তলিপি ও নকশা সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়? একতা ও বিচ্ছিন্নতা, ঐকান্তিক ও বিদ্রূপ, সৌন্দর্য্য ও কুৎসিত সম্পর্কে অজ্ঞ হয়? কীভাবে সে পরিণাম চিন্তা করে না, বিপদ আঁচ করে না এবং সতর্কতাবলম্বন করে না? বরং প্রবৃত্তির অনুসরণ করে পরিণাম না ভেবে শুধু বিলাসিতায় আত্মতৃপ্তি খুঁজে বেড়িয়েছে! সে কীভাবে হিতাকাঙ্খীর ডাকে সাড়া দিবে অথবা তার কথার পরোয়া করবে?
হে মুসলিমগণ! জ্ঞানার্জনে লেগে থাকুন, বুঝার চেষ্টা করুন, দূরদর্শিতা অর্জনে তৎপর হোন এবং অনুধাবনের বর্ম পরিধান করুন।
বড়ই পরিতাপ তার জন্য যে বিচক্ষণতার মর্ম জানে, কিন্তু তদানুযায়ী চলে না।
আমাদেরকে পীড়া দেয় যখন দেখি যে, করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়ে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সতর্কতামূলক নির্দেশনা, এ সংক্রান্ত লিফলেট, দিক-নির্দেশনামূলক গাইডলাইন ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাশুনার পরেও কিছু মানুষ বধিরের ন্যায় না শুনার আচরণ করছেন এবং কোনো পরোয়া করছেন না; বরং অমান্য ও হিংসাত্মক আচরণ করেই চলেছেন। নিজের উপর, পিতা-মাতা, সন্তানাদি ও পরিবারের উপর বিপদ ডেকে আনছেন। নিজ গৃহে এই সংক্রমণ ব্যাধিকে এনে দ্বার উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন আর মানুষকে সুরক্ষা গ্রহণে বাধা দিচ্ছেন এবং বলে বেড়াচ্ছেন যে, এই করোনা ব্যাধি মিথ্যা ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়! তারা হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ও আক্রান্তদের আহাজারি ও বিভিষীকাময় তিক্ত অভিজ্ঞতাকে না দেখার ভান করছেন! এই মহামারীর বিস্তার রোধে ও নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশের সর্বাত্মক প্রচেষ্টাকেও তারা পরোয়া করছেন না! অতএব এমন বিভ্রান্তিকর চিন্তা ও উক্তি পরিহার করুন, সচেতনতায় ফিরে আসুন, যে গুজব ছড়িয়েছেন ও বক্তব্য দিয়েছেন তা থেকে বাস্তবতায় ফিরে আসুন এবং এজন্য মহান আল্লাহকে ভয় করুন। যা জানেন না তা নিয়ে কানাঘুষা বন্ধ করুন। অজ্ঞতা দিয়ে জ্ঞানকে, দৃঢ় বিশ্বাসকে ধারণা দিয়ে এবং বাস্তবতাকে কল্পনা ও মিথ্যা দিয়ে মোকাবেলা করবেন না, যা ভিত্তিহীন ও দলীলবিহীন; বরং নিজেদেরকে সুদৃঢ় করুন ও পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করুন।
أقول ما تسمعون واستغفر الله فاستغفروه، إنه كان للأوابين غفورا.
।।। দ্বিতীয় খুৎবাহ্।।।
হে মুসলিমগণ! করোনা কেন্দ্রিক দুর্যোগ, দুর্দিন ও দুর্ঘটনাসমূহ আমাদের এই প্রজন্মের নারী-পুরুষের অনুধাবন শক্তি ও বিবেক প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তাকে প্রকাশ করে দিয়েছে। আমরা কত ভণ্ড-প্রতারক দেখেছি যারা তাদের নিকৃষ্ট আকাঙ্খা ও হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এই দুর্যোগ মুহূর্তকে বেছে নিয়েছে। সেই ব্যক্তিই তো নিঃস্ব মিথ্যা দাবিদার যার চিকিৎসা বিদ্যা নেই অথবা এমন যোগ্যতাও নেই যে তা দ্বারা সে সূক্ষ্মভাবে গবেষণা করবে, নেই এমন কোনো যন্ত্রপাতি যা দ্বারা পরীক্ষা করবে; অথচ সে করোনার ঔষধ আবিষ্কারের দাবি করছে! ডাক্তার দাবিদার পরগাছা প্রতারক ব্যক্তি ভাইরাসের চিকিৎসার জনপ্রিয় রেসিপি প্রকাশ করছে, যেখানে বিশ্বের গবেষণা কেন্দ্রগুলো অপারগ! আর কিছু অতি লোভী ও মূল্যবোধহীন বিকৃত স্বভাবের মানুষ বিভিন্ন পণ্য, মাস্ক, জীবাণুনাশক জিনিস গুদামজাত করছে, এমনকি এগুলোর ন্যায্য মূল্য নিয়েও ছিনিমিনি খেলছে! তাছাড়া কতক প্রতারক চক্রান্তকারী ব্যক্তি নিম্নমানের ঔষধ পত্র ও জীবাণুনাশক তৈরি করছে যা মূলতঃ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। অপরদিকে কতক বিভ্রান্ত শিক্ষানবিশ রয়েছে যারা দুর্যোগকালে ও বর্তমান করোনা সংক্রান্ত সংকটকালে মানুষ কীভাবে নামায আদায় করবে, ‘ইবাদত পালন করবে ইত্যাদি বিষয়ে ফাতাওয়া ও ইজদিহাদের দুঃসাহস দেখাচ্ছে, অথচ সে ফাতাওয়া ও ইজতিহাদ কোনোটারই যোগ্যতা রাখে না!
জনৈক কবি বলেন :
“তুমি নির্বোধকে দেখবে যে, সে মহৎ কাজ থেকে বিচ্যুত থাকে, আর মূর্খতার দিকেই সে আকৃষ্ট থাকে।”
আর ওই ধরনের মিথ্যা দাবি ও গুজবে তারাই নির্ভর করে যাদের অনুধাবন ও আয়ত্ব ক্ষমতা দুর্বল, সঠিক বিবেকের অভাব!
অতএব হে মুসলমানগণ! আপনারা মহান আল্লাহকে ভয় করুন। অন্যায়, নোংরা ও নিন্দনীয় কাজ থেকে নিজেদেরকে নিবৃত রাখুন। কুরআন তো আপনাদের সামনেই রয়েছে; তা হিকমত, বিধি-বিধান, নীতিমালা, উপদেশ ও শিষ্টাচারে পরিপূর্ণ; আর এগুলোই সকল জ্ঞান ও বুঝের মূল চালিকাশক্তি এবং কাঙ্খিত সম্মানের পথ। অতএব তা উপলব্ধি করুন ও প্রচার করুন। ওয়াহীর জ্ঞান ও অনুধাবন শক্তির সমন্বয়ে বিবেক ও চিন্তায় পূর্ণতা আসে, যাবতীয় সংশয় দূরীভূত হয় এবং অন্ধকার ভেদ করে আলো উদ্ভাসিত হয়।
আপনারা উদাসীনতা পরিহার করে অন্তরকে জাগ্রত করুন, অপরাধ ও পাপের কারণে তওবাহ্ করুন; অপরাধের কারণেই বালা-মুসিবত নেমে আসে, আর তাওবার ফলে তা উঠিয়ে নেয়া হয়। আপনারা দু‘আর মাধ্যমে মহান আল্লাহর রহমত কামনা করুন; কেননা যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়, সে অন্যদের থেকে স্বাবলম্বী হয়। আর যে তাঁর আশ্রয় গ্রহণ করে সে সম্মান ও সুরক্ষা পায়। আর বিষণ্নতার পরেই আনন্দ ও নির্মলতা আসে, বৃষ্টির পরেই রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করে। আর সূর্য অস্ত গিয়ে উদিত হয়, তৃণলতা শুকিয়ে যাবার পর আবারও সজিবতায় ফিরে আসে। দুঃখ ও বিষণ্নতার পরেই সুখ ও আলো আসে। তাই আপনারা বেশি বেশি মিনতি প্রকাশ ও দু‘আ করুন, আশা ব্যক্ত করুন।
কবির ভাষায় :
ওহে মহান সত্তা; যার কাছে আশ্রয় চাওয়া হয় ও আশাবাদী আশা করে যে... মহামারী উঠিয়ে নিবেন, তাইতো সে আপনার শরণাপন্ন।
আপনি সাহায্য করলে সকল বিপদ দূরীভত হবে... আপনি প্রবাহিত করলে যাবতীয় কল্যাণ নাযিল হবে।
আপনি দয়া করলে সকল কষ্ট লাঘব হবে... আপনি আরোগ্য দান করলে যাবতীয় রোগ-ব্যাধি দূর হবে।
আপনি যমিনকে যদি অনাবৃষ্টি দিয়ে দুর্ভিক্ষ কবলিত করেন... তবে কে আমাদেরকে মুষলধারে বৃষ্টি দিয়ে দয়া করবে?
যদি মহামারী ব্যাধি আমাদের গৃহে হাঁটু গেড়ে বসে... তবে তা থেকে আমাদেরকে দ্রুত উদ্ধারকারী পরম দয়ালু কে?
তিনি যদি ক্ষমা করেন, তবে তো তিনি দয়ালু, উদার... আর যদি তিনি ফয়সালা দেন, তবে তো তিনি প্রজ্ঞাময়, ইনসাফকারী।
وصلوا وسلموا على أحمد الهادي شفيع الورى طرّا.
সম্পাদনায় : আব্দুল মতিন
শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক- জমঈয়ত শুব্বানে আহলে আহলে হাদীস বাংলাদেশ ও যুগ্ম-পরিচালক, শুব্বান রিসার্চ সেন্টার।
[১] সহীহুল বুখারী।
[২] সুনান আত্ তিরমিযী।
[৩] সহীহ মুসলিম।
আপনার মন্তব্য1