সাময়িক প্রসঙ্গ
চলে গেলেন জমঈয়তের পাঁচজন বিজ্ঞ অভিভাবক তাঁদেরকে যেমন পেয়েছি
শাইখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী
সম্প্রতি আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছেন এমন পাঁচজন অভিভাবক যাঁদের চারজনই আমাদের প্রাণপ্রিয় ব্যক্তিত্ব প্রফেসর আল্লামা ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী (রহিমাহুল্লা-হ) এর সংস্পর্শে থেকে বহুমুখী দক্ষতা অর্জন করে এদেশের একমাত্র তাওহীদী সংগঠন বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
অল-ইণ্ডিয়া জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর শীর্ষ ব্যক্তি হাফিয শাইখ আইনুল বারী আলিয়াবীসহ বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর চারজন ব্যক্তিত্বের মধ্যে দুই সভাপতি এবং অপর দুইজন সেক্রেটারী জেনারেল-এর দায়িত্ব সুনামের সাথে পালন করেছেন। মহান আল্লাহ’র অপার অনুগ্রহে আমিও তাঁদের সংস্পর্শে থেকে আমাদের প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের প্রতিশ্রুতি নিয়ে খিদমত আঞ্জাম দেয়ার তাওফীক লাভ করেছি। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে আমাদের মাঝ থেকে অভিভাবকসদৃশ যে পাঁচজন ব্যক্তিত্ব বিদায় নিয়েছেন, তাঁদেরকে নিয়েই স্মৃতিচারণ করবো -ইন্শা-আল্লাহ।
অধ্যাপক শাইখ মোহাম্মদ মোবারক আলী (রহিমাহুল্লা-হ)
(মৃত্যু : ২০ মে, ২০২০ ঈসায়ী)
আমাদের মাননীয় সভাপতি অধ্যাপক শাইখ মুহাম্মদ মোবারক আলী (রহিমাহুল্লা-হ) ছিলেন অত্যন্ত সাদা মনের একজন মানুষ। সাজসজ্জা, আহার-বিহার, বেশ-ভূষণ সবকিছুতেই সাদাসিধেভাবে চলা পছন্দ করতেন। আধিক্য বা বাহুল্য  অপছন্দ করতেন। শিক্ষাজীবনে ঢাকা ‘আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। আর কর্মজীবনে দীর্ঘদিন সরকারি কলেজে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অধ্যাপনা করে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর সময়ে কিছুদিন মাদরাসাতুল হাদীস নাজির বাজার, ঢাকা এর প্রিন্সিপাল পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন দেশবরেণ্য বাগ্মী। আহলুল হাদীস অধ্যুষিত প্রতিটি এলাকায় তিনি মিষ্টভাষী বাগ্মী হিসাবে বিশেষভাবে সুপরিচিত। তিনি প্রফেসর আল্লামা ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী (রহ)-এর অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন। তিনি বিভিন্ন দা‘ওয়াতি প্রোগ্রামে আল্লামা ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী (রহ)-এর সফরসঙ্গি হতেন। আবার কখনো তাঁর নির্দেশক্রমে বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতেন। সে সময় তিনি বাংলাদেশ জমঈয়তে  আহলে হাদীস-এর কেন্দ্রীয় প্রধান মুবাল্লিগ ছিলেন; সেই সুবাদে দা‘ওয়াতি কাজে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখারও সুযোগ লাভ করেন। অতঃপর পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় জমঈয়তের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। একজন বিজ্ঞ ও দেশবরেণ্য আলেম হিসাবে আমি তাকে অনেক সম্মান, শ্রদ্ধা করতাম। তিনিও আমাকে অনেক স্নেহ করতেন, ভালবসতেন। তিনি যখন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আমি তখন ফাতাওয়া ও গবেষণা বিষয়ক সেক্রেটারীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হই। সেই সুবাদে তাঁর আরো কাছাকাছি হওয়ার এবং তাঁর সাথে দা‘ওয়াতি কাজে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য লাভ করি। বয়সে বিস্তর ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও তিনি অনেক ক্ষেত্রেই আমাকে গুরুত্ব দিতেন। এমনকি মাসাআলা-মাসায়েল-এর ক্ষেত্রেও আমাকে অগ্রাধিকার দিতেন। আমিও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধশীল ছিলাম। আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতুল ফিরদাঊস নাসীব করুন -আমীন।
অধ্যাপক শাইখ মোবারক আলী (রহ)-এর সাথে দেশের বিভিন্নপ্রান্তে দাওয়াতী প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি। তাই স্বাভাবিকভাবেই আজ অনেক স্মৃতি মনে পড়ছে। তিনি যখন কেন্দ্রীয় জমঈয়তের সহ-সভাপতি আমি তখন ফাতাওয়া ও গবেষণা বিষয়ক সেক্রেটারী এবং পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সেক্রেটারী। আমার প্রতি তাঁর ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ তিনি হয়তো মনেপ্রাণে চাইতেন, আমি যেন জমঈয়তের কাজে আরো বেশি সম্পৃক্ত হই। এমন অনেক প্রোগ্রামে জনসম্মুখে এ বিষয়ে কথাও বলেছেন, হয়তো আমাকে উৎসাহিত করার জন্য। আমি তাঁর কথার মান রাখতে এখনো পর্যন্ত জমঈয়তকেই আমার ধ্যান-জ্ঞান করে সর্বোচ্চ শ্রম, মেধা ও সময় দিতে সর্বদা সচেষ্ট।
অতঃপর ২০১৬ সালে তিনি বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং আমি সেক্রেটারী জেনারেল নির্বাচিত হই। এমন অভিজ্ঞ ও বিজ্ঞ মানুষকে সভাপতি হিসেবে পেয়ে আমিও সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। তাঁর লব্ধ অভিজ্ঞা কাজে লাগিয়ে জমঈয়তকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করলাম। তিনিও আমার কাজের প্রতি আস্থা রেখে বার্ধক্যজনিত অপারগতা স্বীকার করে বলতেন, আপনাকেই সব দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা মুরুব্বিরা সবসময় পাশে থাকবো। এভাবেই দিনকে দিন আমার প্রতি তাঁর স্নেহ ও ভালোবাসা যেন বৃদ্ধি পেতে থাকলো। আমিও তাঁর প্রতি আরো বেশি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠলাম।
তিনি আমাকে সর্বদা বলতেন, কাজ করতে গেলে অনেকেই অনেক কথা বলবে, অনেকেই সমালোচনা করবে, অনেকেই পিছন থেকে টেনে ধরার চেষ্টা করবে, এসব উপেক্ষা করেই পথ চলতে হবে। আর আমি বিশ্বাস করি, আপনার মধ্যে সেই যোগ্যতা, ইলম ও দৃঢ়তা আছে। এভাবেই তিনি আমাকে কখনো প্রকাশ্যে আবার কখনো আড়ালে উৎসাহিত করেছেন। আমিও তাঁর কথায় আরো বেশি উৎসাহিত হতাম, অনুপ্রেরণা পেতাম এবং উদ্বুদ্ধ হতাম।
আমর পিতৃতুল্য হিসাবে সম্মান করতাম, ইসলামী সংগঠনের নেতা হিসাবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তার নির্দেশনা মেনে চলতাম, আনুগত্য পোষণ করতাম এবং তাঁকে আশ্বস্ত করতাম- আপনি আস্থা রাখুন, আমি আপনার সম্মতি, অনুমতি ও সিদ্ধান্ত ছাড়া কোন কাজ করবো না -ইন্শা-আল্লাহ, যাতে আমরা দু’জনে আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে পারি সেজন্য আমি সদা প্রস্তুত। কেননা, আমার দায়িত্বকে আমি আমানত মনে করি, আর সেই আমানত রক্ষায় আমি সর্বদা সতর্ক আছি।
আলহামদুলিল্লাহ! তাঁর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় আল্লাহর রহমতে অতঃপর সকলের সহযোগিতায় অল্প সময়ে বেশ কিছু কাজ আঞ্জাম দেয়ার তাওফীক লাভ করেছি। দেশে-বিদেশে সংগঠনের পরিচিতি ও পরিধি আরো বেশি বিস্তার লাভ করেছে। হারামাইন শরীফাইনের খতীব এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে জমঈয়তের কেন্দ্রীয় ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন, সৌদী ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিকমানের একাধিক সম্মেলন করা সম্ভব হয়েছে। সৌদি সরকারের বিশেষ মেহমান হিসেবে হাজ্জ-‘উমরাহ্সহ আরো বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছে।
তিনি আমাকে বলতেন, আন্তর্জাতিক ইসলামী অঙ্গণে আপনার পরিচিতি ও যোগাযোগ আছে। আপনি এ সুযোগকে জমঈয়তের স্বার্থে কাজে লাগান। আমিও তাঁকে আশ্বস্ত করে বলতাম, আপনি আমাদের নেতা, আপনি সামনে থাকবেন, আমরা কাজ করে যাবো ইনশা-আল্লাহ। তিনি কখনো কখনো বলতেন, আপনি আমাকে সব সময় সামনে রাখছেন, অথচ সব কাজ তো আপনি করছেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ভালো কাজ ক্ববূল করুন, ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন।
আমাদের প্রিয় নেতা অধ্যাপক শাইখ মুহাম্মদ মোবারক আলী (রহ)-এর নেতৃত্বে খুব সুন্দরভাবেই দিনগুলো অতিবাহিত হচ্ছিল। হঠাৎ তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাঁর সুস্থতার প্রচেষ্টায় পরিবার ও জমঈয়তের পক্ষ হতে উদ্যোগ নেয়া হলো। বিগত (২০১৯ সাল) মার্চ থেকে কখনো হাসপাতালে আবার কখনো নিজগৃহে তাঁর দিনগুলো অতিবাহিত হতে লাগলো। আমিও শত ব্যস্ততা উপেক্ষাকরে তাঁর পাশে থাকার যথাসাধ্য চেষ্টা অব্যাহত রাখলাম। এভাবে তাঁর পরিবারের সাথেও একটা সখ্যতা গড়ে উঠলো। এতো অসুস্থতার মাঝে যখনই তাঁর সাক্ষাতে উপস্থিত হয়েছি, তখনই হাসিমুখে কথা বলেছেন।
ইতোমধ্যে করোনা মহামারিতে লক-ডাউনের কারণে আমরা সবাই গৃহবন্দী জীবন যাপন শুরু করলাম। তখন ফোন করেই তাঁর খবর নেয়া শুরু করলাম। ফোনেও তিনি কথা বলতেন সুন্দরভাবে, হেসে হেসে। আমি আশ্চর্য হতাম, যে মানুষটার কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তিনি ফোনে আমার সাথে এভাবে কথা বললেন। ইচ্ছা ছিল সাক্ষাৎ করব, কিন্তু লক-ডাউন পরিস্থিতির কারণে সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে শুনলাম, অসুস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ফোন করলাম। তাঁর স্ত্রী (চাচী আম্মা রিসিভ) করে বললেন, আপনার চাচা আপনাকে বারবার স্মরণ করছে। মনে করলাম, পরিস্থিতি যাই হোক! যাবো, দেখা করবো, জানি না কখন কি হয়ে যায়। মহান আল্লাহর ইচ্ছা! দিন পার না হতেই শুনলাম, তিনি আর নেই, আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তাঁর জামাতা কমিশনার আসাদুজ্জামান মোল্লা ফোন করে বললেন, মাদানী ভাই! আব্বা তো নেই। শুনেছি তিনি আগের রাতে ঘুমাননি, সারারাত একা একাই বক্তৃতা করেছেন। সকালে বলেছেন, এরা তো সব চলে গেছে! তারা জান্নাতে আছে! আমিও জান্নাতে চলে যাব। সেদিন সন্ধ্যায় তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন- ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন।
তিনি যেমন আমাকে স্নেহ করতেন, তাঁর পরিবারের সদস্যরাও আমাকে ভালো জানতেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর জানাতেন। আমিও দায়িত্ব হিসেবে সবসময় খোঁজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা করতাম, বিশেষ করে অসুস্থ অবস্থায় বেশি বেশি খোঁজ-খবর নিতাম। কঠিন পরিস্থিতিতে বংশাল বড় মাসজিদে তাঁর জানাযা হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হলো, আমাকে জানাযার সালাত পড়ানোর জন্য। সবই মহান আল্লাহর ইচ্ছা। জানাযায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রইসুদ্দিন ও শাইখ ড. রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ জমঈয়ত ও শুব্বানের অনেকে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতুল ফিরদাঊস নসীব করুন, তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে ভালো এবং ঈমানের উপর অটল থাকার তাওফীক্ব দান করুন। সকলকে ক্ববূল করুন -আমীন। আর আমরা যেনো তার রেখে যাওয়া দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করতে পারি আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তাওফীক্ব দান করুন।
উল্লেখ্য যে, তার অসুস্থতার পর থেকে নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আযহার উদ-দীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে এবং আমাদের সকলকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করার তাওফীক দিন, সকল বিপদ হতে নিরাপদ রাখুন -আমীন।
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস আলী (রহিমাহুল্লা-হ)
(মৃত্যু : ১৫ মে, ২০২০ ঈসায়ী)
বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ প্রফেরস ড. মুহাম্মদ ইলিয়াস আলী। বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকার পরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার ইচ্ছায় গত ১৫ মে জুমু‘আর দিন সকাল ছয়টায় তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে যান। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাকে জান্নাতুল ফিরদাঊস নাসীব করুন- আমীন।
তিনি অত্যন্ত মেধাবী, শিক্ষাবিদ, ইসলামী চিন্তাবিদ এবং সহজ-সরল হাস্য-উজ্জ্বল, দীনপ্রিয় এবং অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর বাবা যেমন যোগ্য ‘আলেম ছিলেন, তিনিও তেমন ছাত্রজীবন থেকেই সর্বত্রই মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। দাখিল ‘আলিম ফাজিল ও কামিল অনুরূপভাবে এসএসসি হতে এমএ পর্যন্ত সকলস্তরে অত্যন্ত ভালো ফলাফলের কৃতিত্ব অর্জন করেন। একই সাথে মাদরাসাতুল হাদীস, নাজিরবাজার, ঢাকা থেকে উচ্চতর হাদীস কোর্স সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে স্কলারশীপ নিয়ে আমেরিকায় গমন করেন ও দেশে প্রত্যাবর্তন করে সরকারি চাকরির একপর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ব্যানবেইস-এর মহাপরিচালকের পদ অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে অলংকৃত করেন। সে সময় দেশের মাদ্রাসা, স্কুল বা কলেজগুলো তার সততার কারণে যথাযথ মূল্যায়িত হয়েছে।
তিনি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী (রহিমাহুল্লা-হ)-এর অত্যন্ত স্নেহভাজন ও আস্থাভাজন ব্যক্তি ছিলেন এবং তাঁর সাথে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করেন। তবে প্রশাসনিক গুরুদায়িত্বের কারণে সাংগঠনিকভাবে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হতে পারেননি। কিন্তু যখনই প্রশাসনিক দায়িত্ব হতে অবসর হলেন তখনই নিবেদিতভাবে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ২০১০ সালে তিনি কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন সুষ্ঠু-সুন্দরভাবে কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ-এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। এমনকি জীবনের শেষ পর্যন্ত ইউনিভার্সিটির প্রোজেক্ট প্রোফাইল প্রস্তুতসহ গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালীন জমঈয়তের নিজস্ব সম্পদ ঢাকা উত্তর যাত্রাবাড়ীতে জমঈয়ত ভবন তার মাধ্যমেই শুরু হয় এবং মূল অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়।
তিনি আমার প্রতি অত্যন্ত স্নেহপরায়ণ ছিলেন। সম্ভবত ২০০৪ সাল। তিনি আজিমপুরে সরকারি বাসভবনে বসবাস করতেন। আমি তখন মাদ্রাসা দারুস সুন্নাহ, মিরপুর, ঢাকার প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত। আজিমপুরে আহলে হাদীসদের এক হালাকায় সেদিন প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ ইলিয়াস আলী এবং অধ্যাপক শাইখ মুহাম্মদ মোবারক আলী উপস্থিত ছিলেন। সেই হালাকায় আলোচনার জন্য দু’জন বরেণ্য ব্যক্তি থাকা সত্ত্বেও আমাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তরপর্ব, তাঁরা দু’জনেই আমাকে দায়িত্ব দিলেন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করার। মূলত, তাঁরা আমাকে প্রচণ্ড স্নেহ করতেন এবং আমার উপর আস্থা রাখতেন। আমিও তাঁদের স্নেহ ও আস্থার প্রতি যথাযথ মূল্যায়নে সচেষ্ট ছিলাম।
কিছুদিন পর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইলিয়াস আলী-এর ভাই মারা গেলেন। খবর পেয়ে আমি গেলাম, আরো অনেকে গেলেন। তিনি আমাকে বললেন, জানাযা পড়ানোর জন্য। এভাবে আমার প্রতি তাঁর স্নেহের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।
২০১০ সালে তিনি যখন সভাপতি নির্বাচিত হন ঐ সেশনেই ফাতাওয়া ও গবেষণা বিষয়ক সেক্রেটারীর দায়িত্ব আমার স্কন্ধে অর্পণ করা হয় এবং শেষের দিকে ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সেক্রেটারীর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ঐ সময় তার সান্নিধ্যে থেকে সাধ্যপক্ষে সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি আমার সাথে পরামর্শ করতেন এবং কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতেন।
২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে অধ্যাপক শাইখ মোবারক আলী সভাপতি এবং আমার স্কন্ধে সেক্রেটারী জেনারেল-এর দায়িত্ব অর্পিত হয়। দায়িত্বপ্রাপ্তির পর আমরা তাঁর কাছে অনুরোধ রাখলাম, আপনার হাতে গড়া ইউনিভার্সিটির কাজে আপনাকেই সময় দিতে হবে। তিনি প্রজেক্ট ডাইরেক্টর হিসাবে কাজ করতে সম্মতি জ্ঞাপন করলেন। আমি জমঈয়তে আহলে হাদীসের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল, সেই সুবাদে ইউনিভার্সিটিরও ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারী। তাই একই টেবিলে আবারো এক সাথে তাঁর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কাজ করেছি। আমরা সাধ্যমত তাঁকে শ্রদ্ধা সম্মান ও অধিকার প্রদান করেছি। তিনিও আমাকে সর্বদা উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়ে বলতেন, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে দীনসেবক হিসাবে নির্বাচিত করেছেন। আমরাও আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাঁর কাজের উত্তম প্রতিদান ও জান্নাতুল ফেরদৌসের জন্য দু‘আ করি। তাঁর বড় ছেলে মুন্তাসির আহমাদ এর অনুরোধে জানাযায় আমার ইমামতি করার সুযোগ হয়। বংশাল বড় জামে মাসজিদে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক ও শাইখ ড. রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ অনেকে। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন, তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে ভালো এবং ঈমানের উপর অটল থাকার তাওফীক্ব দান করুন -আমীন।
শাইখ মোহাম্মদ যিল্লুল বাসেত (রহিমাহুল্লা-হ)
(মৃত্যু : ৩০ মার্চ, ২০২০ ঈসায়ী)
শাইখ মোহাম্মদ যিল্লুল বাসেত (রহিমাহুল্লা-হ) জমঈয়ত উপদেষ্টা ও সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল। তিনি বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা ভুগছিলেন, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাঊস নাসীব করুন।
একজন বিজ্ঞ ‘আলেম এবং অত্যন্ত ভদ্র ও সরলপ্রকৃতির ব্যক্তিত্ব শাইখ যিল্লুল বাসেত প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী (রহিমাহুল্লা-হ)-এর অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ঢাকা সরকারি ‘আলিয়া মাদ্রাসা ও মাদরাসাতুল হাদীস, নাজিরবাজার, ঢাকা থেকে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেন। বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর সেক্রেটারী জেনারেল হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সেই সময়ে আমি মাদীনাহ্ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নরত। যার ফলে সেভাবে তাঁর সাথে সম্পৃক্ত হতে পারিনি। অধ্যয়ন শেষে দেশে ফেরার পর বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন কাজে তাঁর সাথে যোগাযোগ হত। তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন এবং আমার সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করতেন। বিশেষ করে আরবী বলা এবং ফাতাওয়া-গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও আমাকে প্রাধান্য দিতেন। অনেক সময় তিনি আমার সাথে আরবী ভাষায় কথা বলা পছন্দ করতেন। কেন্দ্রীয় জমঈয়তের সাথে আমার প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা এবং দায়িত্বপ্রাপ্তির পর থেকেই তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েন; আর সে কারণেই তাঁর সাথে দাওয়াহ কিংবা সাংগঠনিক সফরে অংশগ্রহণের সুযোগ তেমন একটা হয়নি; তবে মাঝে মধ্যে বংশালে কিছু প্রোগ্রামেও অংশগ্রহণের সুযোগ হয়েছে। তিনি এদেশের আহলে হাদীসদের জন্য যে খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিশেষ করে টঙ্গী আহলে হাদীস জামাআতের জন্য তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। বলা যেতে পারে তার একক নেতৃত্বে বেশ কিছু ভাইয়ের সহযোগিতায় এবং ঢাকার বেরাইদবাসীর অংশগ্রহণে টঙ্গী বাজারে আহলে হাদীস মাসজিদ ও মাদ্রাসা কমপ্লেক্স গড়ে ওঠে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ইসলামের সেবক হিসেবে কাজ করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তার অবদানকে ক্ববূল করুন, জান্নাতুল ফিরদাঊস নাসীব করুন, তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে ভালো এবং ঈমানের উপর অটল থাকার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!
উল্লেখ্য যে, মহামারি করোনা আতঙ্কে যখন আমাদের দেশসহ বিশ্ব প্রকম্পিত ঠিক সে মুহূর্তে এই সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম শাইখ যিল্লুল বাসেত (রহ)-এর প্রথম জানাযা টঙ্গী বাজার স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। ভয়াবহ করোনার আতঙ্কিত পরিবেশেও প্রচুর মুসল্লী জানাযায় অংশগ্রহণ করেন। তাঁর কনিষ্ঠ ছেলে মাহমূদুল বাসেত এর অনুরোধে আমার জানাযা সালাত পড়ানোর সুযোগ হয়। জানাযায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আহমাদুল্লাহ ত্রিশালী, অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক ও শাইখ ড. রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ অনেকে।
অধ্যাপক মীর আব্দুল ওয়াহহাব লাবীব (রহিমাহুল্লা-হ)
(মৃত্যু : ৩০ আগস্ট, ২০১৯ ঈসায়ী)
অধ্যাপক মীর আব্দুল ওয়াহহাব লাবীব (রহিমাহুল্লা-হ) ছিলেন নম্রতা ও ভদ্রতার এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। তিনি প্রফেসর আল্লামা ড. মুাহাম্মদ আব্দুল বারী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মামাতো ভাই ও তাঁর অত্যন্ত স্নেহভাজ। তাঁর বাবা মাওলানা মীর আব্দুস সালাম (রহ) একজন সুপ্রসিদ্ধ বিজ্ঞ ‘আলেম ছিলেন। পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাাহিকতায় তিনি বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর সাথে সম্পৃক্ত হন। বিশেষ করে কর্মজীবনের সূচনালগ্নে গাইবান্ধা জেলা জমঈয়তে আহলে হাদীস তার মাধ্যমেই তাঁর সাংগঠনিক জীবন শুরু। কর্মজীবন পরিক্রমায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ আব্দুল বারী (রহিমাহুল্লা-হ) অধীনে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয় যোগদান করেন এবং একই সাথে কেন্দ্রীয় জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর সাথে সম্পৃক্ত হন। এক পর্যায়ে তিনি বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর মুখপত্র সাপ্তাহিক আরাফাত-এর সম্পাদকের পদ অলংকৃত করেন। অতঃপর ২০১০ সাল হতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল এবং একই সাথে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ-এর ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারীর দায়িত্বও পালন করেন।
অধ্যাপক লাবীব-এর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের কথা এই ক্ষুদ্র পরিসরে তুলে ধরা কখনোই সম্ভব নয়। তিনি যখন কেন্দ্রীয় জমঈয়তের সেক্রেটারী জেনারেল-এর দায়িত্বে ছিলেন, তখন আমি ফাতাওয়া ও গবেষণা বিষয়ক সেক্রেটারীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হই এবং ঐ সেশনেই ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সেক্রেটারী দায়িত্ব আসে আমার স্কন্ধে। তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর ছিল, তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন, আমিও তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতাম। ১৯৯৭ সালে মাদ্রাসা মুহাম্মাদিয়া আরাবীয়ায়, ঢাকায় যখন আমি দাওরা হাদীস শেষবর্ষের শিক্ষার্থী তখন তিনি আমাকে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ কাজে সম্পৃক্ত করেছিলেন-
প্রতমত: তিনি বগুড়া জেলায় নিজ গ্রামে একটি বড় ঈদের জামা‘আতে তাঁর বাবা মাওলানা মীর আব্দুস সালাম (রহ)-এর মৃত্যুর পর থেকেই ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা সালাত পড়াতেন। কারণবশতঃ ১৯৯৭ সালে তিনি ঈদের জামাআতে যেতে না পারলে, আমাকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে সেখানে ঈদের সালাত পড়ানোর দায়িত্ব প্রদান করেন। এটি ছিল আমার প্রতি তাঁর স্নেহমাখা ভালোবাসার এক অনন্য নিদর্শন। কেননা আমি বয়সে তরুণ হওয়া সত্ত্বেও আমাকে এক গুরুদায়িত্ব দিয়ে তিনি সম্মানিত করেছিলেন- আল-হামদুলিল্লাহ। আমিও তাঁর মান রাখতে সাধ্যমত আমার অর্জিত ইলম অনুসারে প্রকৃত হক্ব আদায়ে সচেষ্ট ছিলাম। অবশ্য পরবর্তীতে তিনি আমাকে তাঁর স্বভাবসুলভ সরলতায় বলেছিলেন, যে আমার জামাআতের মুসল্লীবৃন্দ তোমার আলোচনায় পরিতৃপ্ত ও সন্তুষ্ট। -ফালিল্লাহিল হামদ।
দ্বিতীয়ত: তাঁর বাবা মাওলানা মীর আব্দুস সালাম (রহ) সংকলিত কুরআনুল কারীম-এর অনুবাদ ও তাফসীরের পাণ্ডুলিপি দেখার জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি তাও সুষ্ঠুভাবে স্বীয় যোগ্যতা অনুযায়ী পালন করার চেষ্টা করেছি এবং যথাসময়ে তাঁর কাছে তা হস্তান্তর করেছি। এছাড়াও ইসলামের বিভিন্ন দিক, মাসআলা-মাসায়েল এবং দাওয়াহ ও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে তিনি আমার সাথে অত্যন্ত খোলামনে পরামর্শ করতেন। আমিও সর্বদা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম।
তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন এবং আমার প্রতি আস্থা রাখতেন। বিশেষ করে ২০১০ সাল হতে একান্ত ও বিবিড়ভাবে তাঁর পাশে থেকে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এ সময় তাঁর স্নেহের পরশ আমাকে আরো বেশি আপ্লুত করেছে। তিনি আমাকে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক নির্দেশনা দিতেন, সেই সুযোগে আমিও উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করতাম। বিশেষ করে ফাতাওয়া বিভাগের দায়িত্বে থাকার কারণে, এমনকি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি শরঈ মাসআলা-মাসায়েল নিয়েও তিনি আমার সাথে পরামর্শ ও মূল্যায়ন করতেন।
মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্টতর হলো। সেই সুবাদে তাঁর পরিবারের সদস্যগণও আমাকে চিনতেন। তার নেতৃত্বে তাদের পারিবারিক তাফসিরুল কুরআন-এর আয়োজন হত। সেখানেও আমাকে একাধিকবার আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি যখন অসুস্থ ছিলেন, এমনকি মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও তাঁর সাথে আমার ফোনালাপ হয়েছিল; আমি বলেছিলাম, কাছাকাছি সময়ে আপনার সাথে দেখা করতে আসবো। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছা, হঠাৎ তিনি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আল্লাহ তা‘আলা তার সকল উত্তম অবদানকে ক্ববূল করুন, তাঁর ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করুন এবং জান্নাতুল ফিরদাঊস দান করুন -আমীন।
উল্লেখ্য যে, পারিবারিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাকে জানানো হলো, ঢাকার আল আমীন জামে মাসজিদে মাইয়্যেতের প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হবে, আর সে জানাযায় আমাকে ইমামতি করতে হবে। মহান আল্লাহ’র ইচ্ছায় বহু আলেম-উলামার উপস্থিতিতে তাঁর জানাযায় ইমামতি করার সুযোগ পেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি । আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নেক আমলসমূহ ক্ববূল করুন -আমীন।
অধ্যাপক হাফেয শাইখ আইনুল বারী (রহিমাহুল্লা-হ)
(মৃত্যু : ১৫ মে, ২০২০ ঈসায়ী)
ছোটবেলায় বাংলা ভাষায় আহলে হাদীসদের গবেষণামূলক যাঁর বই-পুস্তক বেশি পেতাম, তিনি হলেন হাফেয শাইখ আইনুল বারী (রহিমাহুল্লা-হ)। তাঁর সুপরিচিত ও প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আইনি তুহফা সালাতে মুস্তফা” বইটি পড়লে বুঝা যায়, তিনি কত বড় মাপের ‘আলেম ছিলেন। তিনি অল-ইন্ডিয়া ও পশ্চিমবঙ্গ জমঈয়তের যেমন দায়িত্বশীল ছিলেন, তেমনিভাবে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের প্রতি বাংলাভাষাভাষী হওয়ার কারণে তাঁর বিশেষ আন্তরিকতা ছিল। প্রফেসর আল্লামা ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী (রহ)-এর সাথে সুসম্পর্ক ছিল। জমঈয়তের আমন্ত্রণে তিনি একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছেন। সরাসরি তার সাথে কথা বলার বক্তব্য শুনার সুযোগ হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। অসুস্থাবস্থায়ও বিভিন্নজনের মাধ্যমে তিনি আমার খোঁজ-খবর নিয়েছেন। ইচ্ছা ছিল জমঈয়তের কেন্দ্রীয় কনফারেন্সে তাঁকে আমন্ত্রণ জানাবো। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা ছিল ভিন্ন। যেদিন বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইলিয়াস আলী (১৫ মে সকাল ৬টা) ইন্তেকাল করেন, ঐ দিন সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন অধ্যাপক হাফেয শাইখ আইনুল বারী (রহিমাহুল্লা-হ) আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অবদানকে ক্ববূল করুন এবং তাকে জান্নাতুল ফিরদাঊস নাসীব করুন -আমীন।

++


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 5:43:02 সূর্যাস্ত : 6:09:54

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত