সম্পাদকীয়
পৃথিবীব্যাপী করোনা ভাইরাস : আমাদের জন্য শিক্ষণীয়
অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মাদ রঈসুদ্দীন
দুনিয়াব্যাপী করোনা ভাইরাসের মহামারিতে প্রায় চার লক্ষ পঁচাত্তর হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। সরকারী হিসাব মতে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে সর্বমোট মৃত্যু বরণ করেছে পনেরশত পঁয়তাল্লিশ মানুষ। আর আক্রান্ত হয়েছে লক্ষাধিক। এর বাইরেও প্রচুর লোকের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্তও হয়েছে আরো অনেকে। জানি না এর ইতি কখন হবে। মহান আল্লাহই ভাল জানেন। দুনিয়াব্যাপী এর আলোচনাই এখন তুঙ্গে। কিভাবে এ ভাইরাস থেকে বাঁচা যায়। লক ডাউন, স্বাস্থ্যবিধি পালন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও হাত ধোয়া কর্মসূচী এর কোনোটাতেই তেমন উপকার পাওয়া যাচ্ছে না। মৃত্যুর মিছিল এবং আক্রান্তের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে কেবল বেড়েই চলছে। কেউ বলতে পারছে না এর শেষ কখন হবে। সারা পৃথিবীর মানুষ মৃত্যুর ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এই বুঝি আক্রান্ত হয়ে গেলাম করোনা ভাইরাসে। আসলে মু’মিনদের জন্য বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। মু’মিন কখনো মৃত্যুকে ভয় করতে পারে না। কেননা মু’মিনের মৃত্যুর পরের জীবন হলো অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ও আনন্দদায়ক।
যে কোনো মহামারিতে মৃত্যু কাফিরদের জন্য মহান আল্লাহর গযব। আর মু’মিনের জন্য রহমতস্বরূপ। যেমনটি বলেছেন মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। কাজেই সর্বাবস্থায় মু’মিনদের জন্য মহান আল্লাহর উপর ভরসা রাখা উচিত এবং যে কোনো মুসীবতে দীনের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকা একান্ত অপরিহার্য। কেননা মু’মিনগণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তারা সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার উপর তাওয়াক্কুল করে এবং বিপদাপদে সবর করে।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণ কি? এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের চিন্তা-ফিকির করা প্রয়োজন। কেনো এ মহামারি আসলো, এ জন্য দায়ী কে?
আমরা যদি এ মর্মে মহান আল্লাহর বাণীর দিকে লক্ষ্য করি তাহলে কিন্তু বিষয়টি আমাদের নিকট স্পষ্ট হয়ে উঠবে। যেমন- আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, “মানুষের কৃত-কর্মের কারণে জলে-স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা অসৎ পথ থেকে ফিরে আসে”[১]। এ আয়াত থেকে বুঝা গেল মানুষের কৃতকর্মের কারণে পৃথিবীতে বিপর্যয় আসে। ইতোপূর্বেও বহুবার এসেছিল। অনেক জাতি ও সম্প্রদায়কে আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্যায়, অপরাধের কারণে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
যেমন- আদ ও সামূদ জাতি এবং ক্বাওমে লূত; যাদের অপরাধ ছিল সীমাহীন। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পাকড়াও করে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আরো ধ্বংস করেছেন ফিরআঊন ও তার সম্প্রদায়কে। যারা বানী ইসরা-ঈলদের প্রতি চরম যুল্ম ও নির্যাতন করেছিল।
সুতরাং আল্লাহ তা'আলা মাঝেমধ্যে যে বিপদাপদ দিয়ে থাকেন, তা কেবল সাবধান, সতর্ক হওয়ার জন্য। যাতে করে মানব সমাজ কৃত অন্যায় থেকে ফিরে আসে এবং মহান আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। তাই জ্ঞানবান ব্যক্তিবর্গ তা উপলব্ধ করে অন্যায় ও অশ্লীল কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে।
আরেকটি বিষয় এখানে স্পষ্ট যে, বিপর্যয় বা মহামারী দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই; বরং সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে এবং অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অধৈর্য হওয়া যাবে না। কেননা এসবই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে কাফিরদের জন্য শাস্তি আর মু’মিন-মুসলিমদের জন্য রহমতস্বরূপ।
কাজেই মু’মিনদের কর্তব্য হলো বিপদাপদ ও বালা-মুসীবতে যৈর্য ধারণ করা। আর যারা ধৈর্য ধারণ করবে তাদের জন্য সু-খবর রয়েছে। যেমনটি আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, “তোমাদেরকে ভয় ও ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি এসবের কোনো কিছুর দ্বারা নিশ্চয়ই পরীক্ষা করব। ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান করো। নিশ্চয়ই যারা বিপদকালে বলে থাকে, আমরা আল্লাহ তা‘আলার জন্যই। আর আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। এদের প্রতি রয়েছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ ও করুণা। আর এরাই হিদায়াতপ্রাপ্ত”[২]।
অতএব, করোনা ভাইরাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। শিক্ষাসমূহ নিম্নরূপ :
১. করোনা ভাইরাস মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার জন্য মহান আল্লাহর নিকটই সাহায্য চাইতে হবে।
২. যাবতীয় কুফ্র-শিরক ও বিদ‘আত এবং যুল্ম-নির্যাতন পরিহার করতে হবে। অন্যায়-অশ্লীল কর্মকাণ্ডসহ সকল পর্যায়ের নৈতিকতা বিরোধী ও কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী কার্যাবলী থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে হবে। আর সকল অবস্থায় তাওহীদ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকতে হবে।
৩. মহান আল্লাহর নির্দেশ ও মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আদেশ-উপদেশ জীবনের সকল পর্যায়ে বাস্তবায়নের আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
৪. সবাইকে নিজেদের কৃত অন্যায়ের জন্য মহান আল্লাহর নিকট অনুতপ্ত হৃদয়ে ইখলাসের সাথে তাওবাহ্ করতে হবে। আর এ তাওবাহ্ অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। অর্থাৎ- যাতে করে পুনরায় অন্যায় ও অপকর্মের দিকে প্রত্যাবর্তিত না হয়।
৫. “ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে নিষেধ” এ নীতি অবলম্বন করে নিজেকে এ কাজের প্রতীক হতে হবে। তবেই আল্লাহর নিকট সফলতা লাভ করা যাবে -ইন্শা-আল্লাহ।
৬. সর্বোপরি উপর্যুক্ত শিক্ষাগুলো নিজেদের জীবনে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একাগ্রচিত্তে আল্লাহ তা‘আলার নিকট কায়মনোবাক্যে দু‘আ ও ইস্তিগফার করতে হবে।
পরিশেষে আরাফাত পাঠক-পাঠিকা, ভাই-বোনদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান- আসুন! সকল প্রকার গুনাহ ও পাপরাশী থেকে খালিস নিয়তে তাওবাহ্ করে আল্লাহমুখী হই। আর যাবতীয় বিপদাপদ ও বালা-মুসীবত থেকে মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। বিশেষ করে মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একমাত্র মহান আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করি। কেননা তিনিই একমাত্র রোগব্যাধি থেকে শেফা দানকারী। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সহায় হোন -আমীন। ###
যে কোনো মহামারিতে মৃত্যু কাফিরদের জন্য মহান আল্লাহর গযব। আর মু’মিনের জন্য রহমতস্বরূপ। যেমনটি বলেছেন মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। কাজেই সর্বাবস্থায় মু’মিনদের জন্য মহান আল্লাহর উপর ভরসা রাখা উচিত এবং যে কোনো মুসীবতে দীনের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকা একান্ত অপরিহার্য। কেননা মু’মিনগণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তারা সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার উপর তাওয়াক্কুল করে এবং বিপদাপদে সবর করে।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণ কি? এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের চিন্তা-ফিকির করা প্রয়োজন। কেনো এ মহামারি আসলো, এ জন্য দায়ী কে?
আমরা যদি এ মর্মে মহান আল্লাহর বাণীর দিকে লক্ষ্য করি তাহলে কিন্তু বিষয়টি আমাদের নিকট স্পষ্ট হয়ে উঠবে। যেমন- আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, “মানুষের কৃত-কর্মের কারণে জলে-স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা অসৎ পথ থেকে ফিরে আসে”[১]। এ আয়াত থেকে বুঝা গেল মানুষের কৃতকর্মের কারণে পৃথিবীতে বিপর্যয় আসে। ইতোপূর্বেও বহুবার এসেছিল। অনেক জাতি ও সম্প্রদায়কে আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্যায়, অপরাধের কারণে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
যেমন- আদ ও সামূদ জাতি এবং ক্বাওমে লূত; যাদের অপরাধ ছিল সীমাহীন। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পাকড়াও করে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। আরো ধ্বংস করেছেন ফিরআঊন ও তার সম্প্রদায়কে। যারা বানী ইসরা-ঈলদের প্রতি চরম যুল্ম ও নির্যাতন করেছিল।
সুতরাং আল্লাহ তা'আলা মাঝেমধ্যে যে বিপদাপদ দিয়ে থাকেন, তা কেবল সাবধান, সতর্ক হওয়ার জন্য। যাতে করে মানব সমাজ কৃত অন্যায় থেকে ফিরে আসে এবং মহান আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। তাই জ্ঞানবান ব্যক্তিবর্গ তা উপলব্ধ করে অন্যায় ও অশ্লীল কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে।
আরেকটি বিষয় এখানে স্পষ্ট যে, বিপর্যয় বা মহামারী দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই; বরং সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে এবং অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অধৈর্য হওয়া যাবে না। কেননা এসবই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে কাফিরদের জন্য শাস্তি আর মু’মিন-মুসলিমদের জন্য রহমতস্বরূপ।
কাজেই মু’মিনদের কর্তব্য হলো বিপদাপদ ও বালা-মুসীবতে যৈর্য ধারণ করা। আর যারা ধৈর্য ধারণ করবে তাদের জন্য সু-খবর রয়েছে। যেমনটি আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, “তোমাদেরকে ভয় ও ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি এসবের কোনো কিছুর দ্বারা নিশ্চয়ই পরীক্ষা করব। ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান করো। নিশ্চয়ই যারা বিপদকালে বলে থাকে, আমরা আল্লাহ তা‘আলার জন্যই। আর আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। এদের প্রতি রয়েছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ ও করুণা। আর এরাই হিদায়াতপ্রাপ্ত”[২]।
অতএব, করোনা ভাইরাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। শিক্ষাসমূহ নিম্নরূপ :
১. করোনা ভাইরাস মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার জন্য মহান আল্লাহর নিকটই সাহায্য চাইতে হবে।
২. যাবতীয় কুফ্র-শিরক ও বিদ‘আত এবং যুল্ম-নির্যাতন পরিহার করতে হবে। অন্যায়-অশ্লীল কর্মকাণ্ডসহ সকল পর্যায়ের নৈতিকতা বিরোধী ও কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী কার্যাবলী থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে হবে। আর সকল অবস্থায় তাওহীদ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকতে হবে।
৩. মহান আল্লাহর নির্দেশ ও মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আদেশ-উপদেশ জীবনের সকল পর্যায়ে বাস্তবায়নের আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
৪. সবাইকে নিজেদের কৃত অন্যায়ের জন্য মহান আল্লাহর নিকট অনুতপ্ত হৃদয়ে ইখলাসের সাথে তাওবাহ্ করতে হবে। আর এ তাওবাহ্ অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। অর্থাৎ- যাতে করে পুনরায় অন্যায় ও অপকর্মের দিকে প্রত্যাবর্তিত না হয়।
৫. “ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে নিষেধ” এ নীতি অবলম্বন করে নিজেকে এ কাজের প্রতীক হতে হবে। তবেই আল্লাহর নিকট সফলতা লাভ করা যাবে -ইন্শা-আল্লাহ।
৬. সর্বোপরি উপর্যুক্ত শিক্ষাগুলো নিজেদের জীবনে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একাগ্রচিত্তে আল্লাহ তা‘আলার নিকট কায়মনোবাক্যে দু‘আ ও ইস্তিগফার করতে হবে।
পরিশেষে আরাফাত পাঠক-পাঠিকা, ভাই-বোনদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান- আসুন! সকল প্রকার গুনাহ ও পাপরাশী থেকে খালিস নিয়তে তাওবাহ্ করে আল্লাহমুখী হই। আর যাবতীয় বিপদাপদ ও বালা-মুসীবত থেকে মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। বিশেষ করে মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একমাত্র মহান আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করি। কেননা তিনিই একমাত্র রোগব্যাধি থেকে শেফা দানকারী। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সহায় হোন -আমীন। ###
[১] সূরা আর রূম : ৪১।
[২] আল বাক্বারাহ্ : ১৫৫-১৫৭।
ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45
সূর্যাস্ত : 5:11:51
আপনার মন্তব্য1