সাময়িক প্রসঙ্গ
কুরআনিক সমাজের ১০টি চিত্র
তানযীল আহমাদ
জাহিলিয়াতের তমসায় আচ্ছন্ন তৎকালীন আরব জাহান দিন দিন ধ্বংসের অতল গহ্বরের দিকে মৃত্যুপানে এগিয়ে যাচ্ছিল। সে মৃত্যু জাহিলি, আঁধারে ঘেরা, দুর্দমনীয়। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ সর্বত্রই বিরাজ করছিল আশান্তি আর কলহ। গোত্রদ্বন্দ্ব, জ্যাতাভিমান, নিথর প্রস্তরমূর্তির পূজা অর্চনা তাদেরকে বানিয়েছিল নির্জীব, প্রাণহীন। তপ্ত উষর মরূর মতোই রুক্ষ্ম, প্রাণসংহারী। বিশ্বমঞ্চে তাদের পরিচয় ছিল উট ছাগলের রাখাল আর মরুচারী কাফেলার স্বর্বস্ব লুণ্ঠনকারী ডাকাতরূপে। আরব বেদুঈনদের অবারিত পথচলা, মরুভূমি ছিল তাদের জীবন-মরণের সাথী, সুতরাং সেখানে তাদেরই একচ্ছত্র আধিপত্য। সে সমাজে কুরাইশ গোত্রের কিছুটা দাপট ছিল কাবাগৃহের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালনের কারণে। সে সমাজে ন্যায়, সাম্য ও অধিকারীর অধিকার প্রদান ছিল গোত্রপতিদের ইচ্ছাধীন। স্বচ্ছ বিশ্বাস, সঠিক কর্মপন্থা, সুদৃঢ় নৈতিকতা, দেশ গঠনের সদিচ্ছা, অর্থনৈতিক মুক্তির মহাপরিকল্পনা মোঁকথা একটি পরিশীলিত, মার্জিত, উন্নত রুচিবোধসম্পন্ন, পৃথিবীর মানচিত্রে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করার কোনো রোডম্যাপ তাদের ছিল না। এ তো গেল বৈষয়িক উন্নতির কথা। পরজগতের জবাবদিহিতার জন্যও তারা ছিল পুরোপুরি অপ্রস্তুত; বরং অবিশ্বাসী। অনেক ক্ষেত্রে বিরোধী, বিদ্রোহী। জাযিরাতুল আরবের সে সমাজ ছিল একটি শক্তভিত্তিসম্পন্ন বিশ্বাস, সঠিক কর্মপন্থা ও নৈতিকতার ক্ষুত পিপাসায় কাতর। সে পিপাসা নিবারণে মরূর কোনো সরোবর বা পর্বত নির্ঝরণীর প্রয়োজন ছিল না। প্রয়োজন ছিল একটি আলোকপ্রভার, একটি রোশনীর- যা তাদের ঘুণে ধরা নৈতিকতাকে পরিশোধন করে উজ্জল আলোয় উদ্ভাসিত করবে। বিশ্বমঞ্চে তাদের নতুনভাবে পরিচিত করে দেবে। তারা আর অনুগামী নয়; বরং পুরো বিশ্ববাসী তাদের অনুগামী শুধু নয় তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান মনে করবে। তারাই হবে পৃথিবীর মোস্ট পপুলার সেলিব্রেটি।
এ ছিল সময়ের দাবী, পরিবেশের চাহিদা, যুগের অপেক্ষা। বিশ্বনিয়ন্তা আল্লাহ তা‘আলা সে চাহিদা পূরণ করলেন। ধূসর মরূর বুক সিক্ত করতে প্রেরণ করলেন একজন মহামানব, একজন নাবী, রাসূল- মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। তার আগমনে ধরা হলো কলুষমুক্ত, কম্পিত হলো মাটি মৃত্তিকা, পুলকিত হলো বিশ্ব। নতুন সাজে সাজল ধরণী। আরবী দরিয়া আর লোহিত দরিয়ায় উঠল খুশির জোয়ার। আরব, ইয়ামান, ইরান, তুরান, তুর্কি জাতির রক্তে জ্বলে উঠল আগুন। সে আগুনে পুড়ে ছাই হলো আল্লাহদ্রোহী শক্তি। জ্বলে উঠল তাওহীদের দ্বীপশিখা, দূরীভূত হলো তাগুতের যুলুমাত। নজরুলে ভাষায়-
উরজ য়্যামেন নজদ হেজাজ তাহামা ইরাক শাম,
মেসের ওমান তিহারান- স্মরি কাহার বিরাঁ নাম।
পড়ে (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলা তার প্রিয় নাবীকে সাথে দিলেন একটি গাইডবুক, মিরাকল বুক- দি হলি কুরআন। যে কুরআনের মায়াবি স্পর্শে ঘুমন্ত সিংহ শাবক জাগ্রত হলো, পরিচয়হীন বানী আদম নিজেদের চিনতে পারল, অধিকারহারারা তাদের প্রাপ্য বুঝে পেল, তৃষার্ত মরূচারী মুসাফির আবে হায়াতের সন্ধান পেল। জমাঁ অন্ধকারে দিকহারা নাবিক পেল লাইটহাউজের দেখা। ব্যক্তি পেল তার ব্যক্তিত্ব, সমাজ পেল সামাজিকতা, পরিবার পেল পারিবারিক শৃঙ্খলা। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে উঠল ধরা। ইলাহী খুশবুতে জগত হলো মাতোয়ারা। ধরণীর প্রতিটি বস্তু কণিকায়, প্রতিটি পত্র পল্লবে ছোঁয়া লাগল রহমতের।
“ওমা আরসালনাকা ইল্লা রহমাতাল্লিল আলামীন”-এর বাস্তবায়ন শুরু হলো সর্বত্র। জাহিলিয়াতের কুহেলিকা ভেদ করে শুরু হলো তাওহীদের পতাকাবাহীদের দুর্গম পথচলা। আল কুরআন সেই সমাজ পরিবর্তনের মহাযুগসন্ধিক্ষণের চিত্রায়ন করেছে এভাবে-
১. গোমরাহীর অন্ধকার থেকে হিদায়েতের আলোর জগতে প্রবেশ করল মানবজাতি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قَدْ جَآءَكُم مِّنَ اللهِ نُوْرٌ وَكِتٰبٌ مُّبِيْنٌ يَهْدِى بِهِ اللهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوٰنَهُۥ سُبُلَ السَّلٰمِ وَيُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمٰتِ إِلَى النُّوْرِ بِإِذْنِهِۦ وَيَهْدِيْهِمْ إِلٰى صِرٰطٍ مُّسْتَقِيْمٍ﴾
“তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসে গেছে এক জ্যোতি এবং আমি একখানি সত্য দিশারী কিতাব, যার মাধ্যমে আল্লাহ‌ তাঁর সন্তোষকামী লোকদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তার পথপ্রদর্শন করেন এবং নিজ ইচ্ছাক্রমে তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের দিকে নিয়ে আসেন এবং সরল-সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করেন।”[১]
২. মহাগ্রন্থ আল কুরআন এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করল যে, যারা ছিল অন্যের সম্পদ হরণকারী তারা হলো পরোপকারী। যারা ছিল আত্মপূজারী তারাই হলো আর্তমানবতাবাদী। কুরআন বলছে-
﴿وَيُؤْثِرُوْنَ عَلٰىٓ أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ ۚ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِۦ فَأُوْلٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ﴾
“আর তারা যত অভাবগ্রস্তই হোক না কেনো নিজেদের চেয়ে অন্যদের অগ্রাধিকার দান করে। মূলতঃ যেসব লোককে তার মনের সংকীর্ণতা থেকে রক্ষা করা হয়েছে তারাই সফলকাম।”[২]
৩. জাহিলী সমাজের যে মানুষেরা ছিল পরস্পর শত্রুভাবাপন্ন, করআনিক সমাজে তারাই হলো অন্তরঙ্গ বন্ধু। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۚوَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَآءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوْبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِۦٓ إِخْوٰنًا وَكُنتُمْ عَلٰى شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا﴾
“আল্লাহ‌ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা স্মরণ রেখো। তোমরা ছিলে পরস্পরের শত্রু। তিনি তোমাদের হৃদয়গুলো জুড়ে দিয়েছেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহ ও মেহেরবানীতে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছো। তোমরা একটি অগ্নিকুণ্ডের কিনারে দাঁড়িয়ে ছিলে। আল্লাহ‌ সেখান থেকে তোমাদের বাঁচিয়ে নিয়েছেন।”[৩]
৪. যেই জাহিলী সমাজে বিত্ত বৈভব, শক্তিমত্তা আর বংশীয় কারণে নির্ণিত হত সামাজিক মর্যাদা, কুরআনিক সমাজে মর্যাদার সেসব মাপকাঠি হলো বিলুপ্ত। মর্যাদার মাপকাঠি একমাত্র পরহেজগারীতা হলো প্রতিষ্ঠিত। কুরআন বলছে-
﴿يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنٰكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثٰى وَجَعَلْنٰكُمْ شُعُوبًا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللهِ أَتْقٰىكُمْ ۚ إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ﴾
“হে মানবজাতি! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করে দিয়েছি যাতে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পার। তোমাদের মধ্যে যে অধিক পরহেজগার সে-ই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদার অধিকারী। নিশ্চয়ই আল্লাহ‌ মহাজ্ঞানী ও সবকিছু সম্পর্কে অবহিত।”[৪]
৫. যে সমাজের লোকদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল অর্থ বিত্ত, ভোগ বিলাস। কুরআনিক সমাজে সেই লোকদের লক্ষ্য হলো মহান আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ رِجَالٌ صَدَقُوْا مَا عٰهَدُوْا اللهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُم مَّن قَضٰى نَحْبَهُۥ وَمِنْهُم مَّن يَنْتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوْا تَبْدِيْلًا﴾
“ঈমানদারদের মধ্যে এমন লোক আছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে দেখালো। তাদের কেউ নিজের নজরানা পূর্ণ করেছে এবং কেউ সময় আসার প্রতীক্ষায় আছে। তারা তাদের নীতি পরিবর্তন করেনি।”[৫]
৬. যে সমাজের লোকেরা গান-বাজনা, মদ, নারীসহ সকল অপরাধে লিপ্ত ছিল, কুরআনিক সমাজে সে লোকেরাই হলো আল্লাহওয়ালা ‘ইবাদতগুজার। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مُّحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ ۚ وَالَّذِيْنَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلٰى الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ ۖ تَرٰىهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُوْنَ فَضْلًا مِّنَ اللهِ وَرِضْوٰنًا ۖ سِيْمَاهُمْ فِىْ وُجُوْهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُوْدِ ۚ ذٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِىْ التَّوْرٰىةِ ۚ وَمَثَلُهُمْ فِى الْإِنجِيْلِ﴾
“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। আর যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফিরদের বিরুদ্ধে আপোষহীন এবং নিজেরা পরস্পর দয়া পরবশ। তোমরা যখনই দেখবে তখন তাদেরকে রুকূ‘ ও সাজদাহ্ এবং আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি কামনায় তৎপর পাবে। তাদের চেহারায় সাজদার চিহ্ন বর্তমান যা দিয়ে তাদেরকে আলাদা চিনে নেয়া যায়। তাদের এ পরিচয় তাওরাতে দেয়া হয়েছে। আর ইনযীলে তাদের উপমা পেশ করা হয়েছে।”[৬]
৭. যে সমাজের লোকেরা মিথ্যা, শঠতা এবং মিথ্যাসাক্ষীর থোরাই কেয়ার করত না, কুরআনিক সমাজে সেই লোকেরাই হলো সত্যের পতাকাবাহী। সত্যের লড়াকু। আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিচ্ছেন :
﴿يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ ءَامَنُوْا كُوْنُوْا قَوّٰمِيْنَ بِالْقِسْطِ شُهَدَآءَ لِلّٰهِ وَلَوْ عَلٰىٓ أَنفُسِكُمْ أَوِ الْوٰلِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِيْنَ ۚ إِنْ يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيْرًا فَاللهُ أَوْلٰى بِهِمَا ۖ فَلَا تَتَّبِعُوْا الْهَوٰىٓ أَن تَعْدِلُوْا ۚ وَإِنْ تَلْوُۥٓا أَوْ تُعْرِضُوْا فَإِنَّ اللهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرًا﴾
“হে ঈমানদারগণ! ইনসাফের পতাকাবাহী ও আল্লাহর সাক্ষী হয়ে যাও, তোমাদের ইনসাফ ও সাক্ষ্য তোমাদের নিজেদের ব্যক্তিসত্তার অথবা তোমাদের বাপ-মা ও আত্মীয়-স্বজনদের বিরুদ্ধে গেলেও। উভয় পক্ষ ধনী বা অভাবী যাই হোক না কেন আল্লাহ‌ তাদের চাইতে অনেক বেশী কল্যাণকামী। কাজেই নিজেদের কামনার বশবর্তী হয়ে ইনসাফ থেকে বিরত থেক না। আর যদি তোমরা পেঁচালো কথা বলো অথবা সত্যতাকে পাশ কাটিয়ে চলো, তাহলে জেনে রাখো, তোমরা যা কিছু করছো আল্লাহ‌ তার খবর রাখেন।”[৭]
৮. জাহিলি যুগের সে সমাজের মানুষের ছিল না পরকালে বিশ্বাস, আখিরাতের জবাবদিহিতার কোনো চিন্তা, ফলে দুনিয়ার ব্যবসায়-বাণিজ্য তাদের রেখেছিল ব্যতিব্যস্ত। কিন্তু কুরআনিক সমাজে তারাই হলো মহান আল্লাহর যিক্রে মশগুল, পরকালের জবাবদিহিতার জন্য শশব্যস্ত। কুরআন সে সমাদের লোকেদের চিত্র এঁকেছে এভাবে-
﴿رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجٰرَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَن ذِكْرِ اللهِ وَإِقَامِ الصَّلٰوةِ وَإِيْتَآءِ الزَّكٰوةِ ۙ يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْأَبْصٰرُ﴾
“যারা ব্যবসায় ও বেচাকেনার ব্যস্ততার মধ্যেও আল্লাহর স্মরণ এবং নামায কায়েম ও যাকাত আদায় করা থেকে গাফিল হয়ে যায় না। তারা সেদিনকে ভয় করতে থাকে যেদিন হৃদয় বিপর্যস্ত ও দৃষ্টি পাথর হয়ে যাবার উপক্রম হবে।”[৮]
৯. জাহিলী সমাজে নারীদের নিগৃহের কথা কারো অবিদিত নয়। তাদের সম্পত্তিতে থাকত না কোনো অধিকার, দাম্পত্য জীবনে ছিল না কোনো উপযুক্ত ব্যবহার পাবার সামান্য আশাঁকু। কুরআনিক সমাজে নারীদের যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান করা হলো। উত্তরাধীকার সম্পত্তি, সামাজিক ও পারিবারিক অধিকার এমনভাবে দেয়া হলো যা এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোনো ধর্ম, মতবাদ, দল গোষ্ঠী দিতে পারেনি। কুরআন নির্দেশ দিচ্ছে-
﴿يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ ءَامَنُوْا لَا يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَرِثُوْا النِّسَآءَ كَرْهًا ۖ وَلَا تَعْضُلُوْهُنَّ لِتَذْهَبُوْا بِبَعْضِ مَآ ءَاتَيْتُمُوْهُنَّ إِلَّآ أَنْ يَأْتِيْنَ بِفٰحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ ۚ وَعَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ ۚ فَإِنْ كَرِهْتُمُوْهُنَّ فَعَسٰىٓ أَن تَكْرَهُوْا شَيْـًٔا وَيَجْعَلَ اللهُ فِيْهِ خَيْرًا كَثِيْرًا﴾
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হয়ে বসা মোটেই হালাল নয়। আর তোমরা যে মোহরানা তাদেরকে দিয়েছো তার কিছু অংশ তাদেরকে কষ্ট দিয়ে আত্মসাৎ করাও তোমাদের জন্য হালাল নয়। তবে তারা যদি কোন সুস্পষ্ট চরত্রহীনতার কাজে লিপ্ত হয় (তাহলে অবশ্য তোমরা তাদেরকে কষ্ট দেবার অধিকারী হবে) তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন করো। যদি তারা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় হয়, তাহলে হতে পারে একটা জিনিস তোমরা পছন্দ করো না কিন্তু আল্লাহ‌ তার মধ্যে অনেক কল্যাণ রেখেছেন।”[৯]
১০. আমরা যে সমাদের চিত্র আঁকি, যে ইসলামী পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কথা ভাবি তা তো কেবল কুরআনই পারবে। আমরা চাই জমিনে মহান আল্লাহর সার্বভৌমত্বের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, চাই নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা একটি পৃথিবী। এ তো কুরআন দেখিয়ে দিয়েছে বহু আগে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَعَدَ اللهُ الَّذِيْنَ ءَامَنُوْا مِنكُمْ وَعَمِلُوْا الصّٰلِحٰتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِىْ الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِيْنَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِيْنَهُمُ الَّذِى ارْتَضٰى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّنۢ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا ۚ يَعْبُدُوْنَنِى لَا يُشْرِكُوْنَ بِى شَيْـًٔا ۚ وَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذٰلِكَ فَأُوْلٰٓئِكَ هُمُ الْفٰسِقُوْنَ﴾
“আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে ও সৎকাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দান করেছিলেন, তাদের জন্য তাদের দ্বীনকে মজবুত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন, যাকে আল্লাহ তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের (বর্তমান) ভয়-ভীতির অবস্থাকে নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা শুধু আমার বন্দেগী করুক এবং আমার সাথে কাউকে যেনো শরীক না করে। আর যারা এরপর কুফ্রী করবে তারাই ফাসেক।”[১০]
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সকলকে কুরআনের আলোয় আলোকিত করুন। কুরআনের পথে পরিচালিত করুন। পৃথিবীতে কুরআনিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা দু’চোখে দেখার তাওফীক্ব দিন -আমীন।

[১] সূরা আল মায়িদাহ্ : ৫/১৫, ১৬।
[২] সূরা আল হাশর : ৫৯/৯।
[৩] সূরা আ-লি ‘ইমরান : ৩/১০৩।
[৪] সূরা আল হুজুরা-ত : ৪৯/১৩।
[৫] সূরা আল আহ্যা-ব : ৩৩/২৩।
[৬] সূরা আল ফাত্হ : ৪৮/২৯।
[৭] সূরা আন্ নিসা : ৪/ ১৩৫।
[৮] সূরা আন্ নূর : ২৪/৩৭।
[৯] সূরা আন্ নিসা : ৪/ ১৯।
[১০] সূরা আন্ নূর : ২৪/৫৫।


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত