বিশেষ নিবন্ধ
বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী প্রফেসর ড. মোহম্মাদ ইলিয়াস আলী
প্রফেসর ড. আ. ব. ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী
ভূমিকা : প্রফেসর ড. মাওলানা মোহম্মাদ ইলিয়াস আলী শিক্ষা জগতে ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ছিলেন একাধারে বিশিষ্ট গবেষক, বহুভাষাবিদ, ইসলামী চিন্তাবিদ, ইসলামী শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বয়ক, জাতীয় ও আন্তÍর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষাবিদ, অনলবর্ষী বাগ্মী অন্য দিকে সৎ ও যোগ্য প্রশাসক এবং সৃজনশীল লেখক। একই ব্যক্তির মাঝে এতগুলো গুণের সমাহার আসলেই আশ্চর্যের বিষয়। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে ইসলাম, শিক্ষা এবং জ্ঞানের ক্ষেত্রে যতটুকু যোগ্যতা দিয়েছিলেন তিনি তার সবটুকু অক্ষরে অক্ষরে দেশ জাতি এবং মুসলিম উম্মার জন্য ব্যয় করতে এতটুকুন কুণ্ঠা বোধ করেননি।
জন্ম : প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ ইলিয়াস আলী ঈসায়ী ১৯৪৯ সালের ০১ সেপ্টেম্বর তারিখে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলাধীন দেবীনগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
পারিবারিক পরিচিতি : প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ ইলিয়াস আলী’র পিতা মাওলানা আব্বাস আলী এবং মাতার নাম জয়গুন নেসা। তাঁর পিতা মাদ্রাসা দারুল হাদীস, বেলডাঙ্গা, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, এলাহাবাদ, দিল্লীর রাহমানিয়ায় শিক্ষা গ্রহণ করে বিশিষ্ট আরবী ব্যাকরণবিদ ও ‘আলেম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। আরবী ব্যাকরণে পারদর্শিতার কারণে তাঁকে আবূ মারফে ও উম্মুন নুহা উপাধি দেয়া হয়। তিনি একজন উঁচু স্তরের ‘আলেম, দয়ালু, ধর্মীয় শিক্ষা গুরু, বাগ্মী, তেজস্বী বক্তা ও পরহেজগার ব্যক্তি ছিলেন। লেখা-পড়া শেষ করে তিনি বেলডাঙ্গা দারুল হাদীস ইসলামিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি দ্বীনি ইসলামের নিবেদিত কর্মী ও দ্বীনি শিক্ষায় আত্মউৎসর্গীকৃত প্রাণ ছিলেন। শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে। সারাটি জীবন তিনি গবেষণা কাজে ব্যয় করেন।
দাম্পত্য জীবন : প্রফেসর ইলিয়াস আলী বিয়ে করেন নবাবগঞ্জের বিশিষ্ট বক্তা মাওলানা দুররুল হুদা আইউবীর মেয়েকে। তাঁর মোট ছেলে ৫ জন। তারা হলেন-
১. মুনতাসির রহমান, কামিল, এস.এস.সি. (গণিত)।
২. মোখলেছুর রহমান, এম.এ.জি. (কৃষি)।
৩. মুস্তাফিজুর রহমান, এম.এ. (রাষ্ট্র বিজ্ঞান)।
৪. মশিউর রহমান, কামিল, এম.বি.এ. (ফাইন্যান্স)।
৫. মুস্তাইন বিল্লাহ, বি.এস.সি।
শিক্ষা জীবন : মামা বিদগ্ধ মাওলানা রাফআতুল্লাহ-এর নিকটে ইলিয়াস আলী’র ইসলামী শিক্ষার হাতে খড়ি। এরপর স্থানীয় দেবীনগর মডেল প্রাইমারী স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হন। তিনি অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে প্রাইমারী শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ছোট কালে তাঁর বাসনা ছিল পিতার শিক্ষকের কাছে পড়বেন। পিতা হজ্জে গিয়ে সৌদি আরবে তিন মাস অবস্থান করেন। এ সুযোগে তিনি পিতার শিক্ষক মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গা দারুল হাদীস ইসলামিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওঃ আব্দুর রউফ-এর নিকট যান। তিনি ছিলেন তীক্ষ্ম মেধা ও প্রতিভার অধিকারী। তাই তিন মাসে তিনি জংগে সরফ সম্পূর্র্ণ মুখস্ত করে ফেলেন। পিতা হজ্জ থেকে ফিরলে তিনি ও তাঁর দাদা শিক্ষক মাওঃ আব্দুর রউফকে সংগে নিয়ে বাড়ি ফিরেন। পিতা তাঁকে স্বাভাবিক নিয়মে সরফ পড়ার ব্যাপারে চাপ দিলে তিনি বলেন, আমার সরফ পড়া শেষ, ফলে পিতা রেগে যান, অবশ্য পরে সব কিছু অবগত হন এবং ছেলের পরীক্ষা নিবেন বলে ঠিক করেন। পুরো ৩.৫ ঘন্টা ধরে সরফের উপর তাকে প্রায় ২০০টি প্রশ্ন করেন ও শিশু আলী তার সন্তোষজনক জবাব দেন। এতে পিতা খুশি হন। সেই মূহুর্তে তাঁর দাদা শিক্ষক মাওঃ আঃ রউফ তার পিতা আব্বাস আলী’র উদ্দেশ্যে একটি মন্তব্য করেন। আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে আর কিছু না দিলেও এমন একজন সন্তান দিয়েছেন। সেখানে দুই বছর পড়াশুনা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দেবীনগর সালাফিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে এখানে ১৯৫৯-৬০ সাল পর্যন্ত হিদায়াতুন নাহু ও কাফিয়া পাঠ সমাপ্ত করেন।
‘আলীয়া মাদ্রাসা শিক্ষা : তাঁর আলিয়া মাদ্রাসার দাখিল পড়ার জন্য চাঁপাইনবাবঞ্জ জেলাধীন নামো শংকরবাটিস্থ মাদ্রাসা-ই-হেফজুল উলুম ফায়েজা খানম কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এখান থেকে ১৯৬১ সালের ১ম বিভাগে ১৩তম স্থান অর্জন করে দাখিল পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে চাঁপাইনবাবঞ্জ জেলার দারুল হাদীস মাদ্রাসা থেকে দারসে হাদীস পড়েন। এরপর ঢাকার মাদ্রাসাতুল হাদীস থেকে দারসে হাদীস শেষ করেন। ১৯৬২-৬৩ সাল ২ বছর তিনি নবাবগঞ্জ দারুল হাদীস মাদরাসা থেকে মিশকাত ও জালালাইন পাঠ সমাপ্ত করেন। ইতি মধ্যে ১৯৬২ সালে তিনি হরিমোহন সরকারী হাইস্কুল থেকে ৮ শ্রেণীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাঁর একই মাদ্রাসা হতে ১৯৭৩ সালে ১ম বিভাগে ডিস্টিংশনসহ মেধা তালিকায় ২০তম স্থান দখল করে ‘আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা হতে ১৯৭৫ সালে ১ম বিভাগে ডিস্টিংশনসহ মেধা তালিকায় ৯ম স্থান অর্জন করে ফাজিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাঁর ঢাকার সুপ্রসিদ্ধ মাদ্রাসা-ই-আলিয়া হতে ১৯৭৭ সালে ১ম শ্রেণিতে ডিস্টিংশনসহ মেধা তালিকায় ৯ম স্থান দখল করে কামিল (তাফসির) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে কামিল (মুহাদ্দিস) পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন।
সাধারণ শিক্ষার সূচনা : তিনি হরিমোহন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের চেম্বারে উপস্থিত হয়ে অষ্টম শ্রেণির ক সেকশনে ভর্তি হওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছা, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও ইস্পাত কঠিন মনোবলের কাছে হার মেনে প্রধান শিক্ষক তাঁকে ৮ম শ্রেণিতে ভর্তির অনুমতি প্রদান করেন। তিনি ৮ম শ্রেণির “ক” শাখার প্রথম বেঞ্চে বসেন। ১ম ক্লাশটি ছিল গণিতের। শিক্ষক অ্যালজেবার অঙ্ক কষতে দিলে অঙ্ক না পারায় তাঁকে পরের দিন থেকে ক্লাশে না আসার জন্য কড়া হুশিয়ার করে দেন। তিনি দমে না গিয়ে সারারাত জেগে সব সমাধান করে গণিত ক্লাশে উপস্থিত হন। শিক্ষক জটিল থেকে জটিলতর অঙ্ক কষতে দিয়ে না আটকাতে পেরে এক পর্যায়ে শিক্ষক ক্লাশ থেকে বের হয়ে যান। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক ঐ গণিত শিক্ষক, ঐ ক্লাশের ফাস্ট বয়-সহ অন্যান্য ছাত্র ও তাঁকে তাঁর চেম্বারে ডেকে পাঠান এবং বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে ছাত্রকে অপদস্ত করে ক্লাশ থেকে বের করে দেয়ার বিষয়টি গণিত শিক্ষক তাঁর ভুল হয়ে গেছে মর্মে স্বীকার করেন এবং ভুলের মাসুল হিসেবে তাঁর স্কুলের মাসিক বেতনসহ নতুন এক সেট বই কিনে দেন এবং এ ছেলে স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করবে বলে উচ্চাশ প্রকাশ করেন। তাঁর মেধা, যোগ্যতা ও পরিশ্রমের ফসল হিসেবে ক্লাশে ফার্স্ট হন।
এসএসসি ও এইচ এস সি : তিনি সারদাহ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন এবং সেখান থেকে তিনি ১৯৬৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় ১ম বিভাগে পাশ করে ১৮৭৩ সালে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান হতে ১৯৬৭ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
স্নাতক (অনার্স) ও স্নাতকোত্তর : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৭০ সালে পরিসংখ্যান বিষয়ে ২য় শ্রেণিতে বি এস-সি (অনার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭২ সালে পরিসংখ্যান বিষয়ে ২য় শ্রেণিতে এম এস-সি (অনার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন।
পিএইচ ডি ডিগ্রি অর্জন : তিনি ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক হতে পিএইচ ডি অর্জন করেন। তাঁর অভিসন্দনের বিষয় ছিল ‘Problems and Prospects of Madrasah Education in Bangladesh’।
অন্যান্য ডিগ্রি ও দক্ষতা অর্জন : তাঁর জাতিসংঘের UNDP-এর স্কলারশীপে ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়-এর ইন্টারন্যাশন্যাল স্ট্যাটিসটিক্যাল প্রোগ্রাম সেন্টার (ISPC) থেকে স্যাম্পল সার্ভে মেথোড বিষয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৮৫ সালে নিউ দিল্লীস্থ অল ইন্ডিয়া ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (AIMA) পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি (বিএড)ও অর্জন করেন।
আর্ন্তজাতিক সেমিনার কনফারেন্সে যোগদান : তিনি কাওমী অলীয়া এবং বিজ্ঞান এ তিন ধারায় সমন্বিত এক বিশেষ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। তিনি বিশ্বের ইসলাম, শিক্ষা এবং আধুনিক বিজ্ঞানের উপর যে কোন বিষয়ের সেমিনারে যোগদান করেন। একাধিক ভাষা ইংরেজী, আরবী, উর্দূ, হিন্দি ও ফার্সীতে সমান পারদর্শী হওয়ায় তিনি সব ভাষাতেই অনর্গল বক্তব্য দিতে পারতেন। পয়গাম টিভির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি সুদাইসীর আমন্ত্রণে সৌদী আরবে শিক্ষা বিষয়ক সেমিনারে গমন করেন। তিনি চাকরি জীবনে ন্যূনতম ১০টি দেশে বহু বিষয়ে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। তিনি যেসব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি হতে এগ্রিকালচারাল স্ট্যাটিসটিক্স বিষয়ে ফিল্ড ট্রেনিং; ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ইসলামাবাদে আয়োজিত লিটেরেসি প্রোগ্রাম বিষয়ক সেমিনারে অংশগ্রহণ; ইউনেস্কো কর্তৃক ব্যংককে আয়োজিত ১৯৮৪ সালে এডুকেশন সিম্যুলেশন মডেল এবং ১৯৮৬ সালে এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (EMIS) শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ; থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (AIT) হতে ১৯৮৯ সালে এডুকেশন প্লানিং, মনিটরিং এন্ড ইভ্যালুয়েশন শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ; নেপালের কাঠমাণ্ডু-এর ইন্সটিটিউট ফর টেকনিক্যাল ইন্সটিউটশন (TITI) হতে ২০০০ সালে প্রজেক্ট প্লানিং ইমপ্লিমেন্টেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট শীর্ষক এক মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ; শ্রীলংকার কলম্বো-তে ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (EMIS) শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স অংশগ্রহণ; ইউএসএইড-এর আর্থিক সহায়তায় কানাডায় ১৯৮২ সালে অনুষ্ঠিত ম্যানেজমেন্ট এন্ড কমিউনিকেশন অব ইনফরমেশন শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স অংশগ্রহণ প্রভৃতি।
দেশী সেমিনার ও সিম্পোজিশনে অংশগ্রহণ : তাঁর চাকরি জীবনে দেশে বহু বিষয়ে প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনার ও সিম্পোজিশনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি যেসব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়-এর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) কর্তৃক আয়েজিত এবং FAO-এর অর্থায়নে পরিচালিত এগ্রিকালচার সার্ভে এন্ড সেন্সাস বিষয়ক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ; জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (NAEM)-এ গভর্নমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রুল্স এন্ড অ্যাকাউন্টস রুল্স শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স অংশগ্রহণ; ইসলামিক এডুকেশন সায়েন্টিফিক এন্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ISESCO)ও ওয়ার্ল্ড ইসলামিক কল সোসাইটি কর্তৃক আয়োজিত ইসলামিক এডুকেশনফর গার্লস এন্ড উইমেন বিষয়ক প্রশিক্ষণে রিসোর্স পারসন হিসেবে অংশগ্রহণ; UNESCO-এর অর্থায়নে BANBEIS আয়োজিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রেজিওনাল ডেপুটি ডাইরেক্টর, ডিস্ট্রিক্ট এডুকেশন অফিসার পর্যায়ের কর্মকর্তাগণের স্ট্যাটিসটিক্যাল ক্যাপাসিটি বিল্ডিং বিষয়ক প্রশিক্ষণে রিসোর্স পারসন হিসেবে অংশগ্রহণ। এছাড়াও তিনি কম্পিউটার, কম্পিউটারের বিভিন্ন প্যাকেজ প্রোগ্রাম ও ইন্টারনেট বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯১ সালে কম্পিউটার এন্ড ইট্স অ্যাপ্লিকেশন্স, ১৯৯৪ সালে লোটাস ১-২-৩, এমএসওয়ার্ড, ওয়ার্ড পারফেক্ট, ওয়ার্ড প্রসেসিং, ১৯৯৯ সালে ডাটাবেইজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (DBMS) ও এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (EMIS), ২০০০ সালে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS), ২০০১ সালে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ওয়েবসাইট, ই-মেইল শীর্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
রিসোর্স পারসন ও গেস্ট স্পিকার : তিনি চাকরি জীবনে বহু প্রশিক্ষণে রিসোর্স পারসন ও গেস্ট স্পিকার হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (NAEM) ও বাংলাদেশ প্রশাসন ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউট (BIAM) কর্তৃক আয়োজিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের এডুকেশনাল স্ট্যাস্টিক্স এন্ড ইন্ডিকেটরস, এডুকেশনাল প্লানিং, ম্যানেজমেন্ট, মনিটরিং, ইভ্যালুয়েশন এন্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে নিয়মিত রিসোর্স পারসন ও গেস্ট স্পিকার হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ মাদ্রাসা টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (MMTTI)-এ মাদ্রাসা শিক্ষকদের EMIS ও ICT (ইনফরমেশন কমিউনিকেশন টেকনোলজি) বিষয়ে নিয়মিত রিসোর্স পারসন ও গেস্ট স্পিকার হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি কলেজ ও মাদ্রাসায় নিয়োজিত কম্পিউটার শিক্ষকদের কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। তিনি বিভিন্ন সার্ভে ও মাস্টার্স ট্রেইনার্সদের সার্ভে মেথোডোলজি এন্ড ফিল্ড অপারেশন্স সম্পর্কে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্ট প্লানিং প্রিপ্যারেশন, অ্যাকশন প্ল্যান, মনিটরিং ডিভাইসেস এন্ড ইভালুয়েশন প্রসেস বিষয়ক প্রশিক্ষণে গেস্ট স্পিকার হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি সার্ভে প্লানিং, ডিজাইনিং, ডাটা কালেকশন, এডিটিং, এস্টিমেটিং, প্রসেসিং এন্ড রিপোর্ট রাইটিং বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্লাশ নিয়ে থাকেন।
বিভিন্ন শিক্ষা কমিশন ও কমিটিতে অবদান : সরকার গঠিত বিভিন্ন শিক্ষা বিষয়ক কমিশন ও কমিটিতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কমিটি ও সাব-কমিটিতে মেম্বার-সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রফেসর ড. মোঃ মনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশন, ২০০৩ গঠিত সাব-কমিটির মেম্বার-সেক্রেটারি হিসেবে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রফেসর ড. এম এ বারী মাদ্রাসা রিফোর্মস শিক্ষা কমিশনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও তিনি ন্যাশনাল কারিকুলাম এন্ড টেক্সটবুক বোর্ড (NCTB) এবং বাংলাদেশ মাদ্রাসা এডুকেশন বোর্ড (BTEB) গঠিত কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট, অ্যাসেসমেন্ট এন্ড ইভালুয়েশন প্রসেস বিষয়ক বিশেষত সেকেন্ডারি লেভেলে ৬ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন কমিটিতে তাঁর কার্যকর ভূমিকা অতুলনীয়। এতদ্ব্যতীত ফাজিল ও কামিল-কে সাধারণ শিক্ষার যথাক্রমে ব্যাচেলর এবং পোস্ট গ্রাজুয়েশন সমপর্যায়ে উন্নীতকরণ বিষয়ক UGC গঠিত মাদ্রাসা ইক্যুয়িভ্যালেন্স কমিটিতে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকা প্রশংসনীয়। তাঁর স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার পোস্ট পাইমারি লেভেলের শিক্ষকদের সরকারের আর্থিক সহযোগিতা ‘মান্থলি পে অর্ডার (MPO)’ সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির মেম্বার-সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন।
সরকারি চাকরিজীবন : তিনি ১৯৭৩ সালে আমেরিকান এ্যমবাসীতে ২ মাস চাকুরীর মাধ্যমে কর্মজীবন সূত্রপাত করেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে চাকুরী করেন। তারপর B.ID.S-এ ১ মাস চাকুরী করেন। তিনি প্রথমে রাজশাহী সিটি কলেজের পরিসংখ্যান বিষয়ের লেকচারার হিসেবে জুন ১৯৭৩ থেকে অক্টোবর ০৩, ১৯৭৪ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি Bangladesh Institute of Development Studies (BIDS)-এ রিসার্চ এসোসিয়েট হিসেবে অক্টোবর ০৪, ১৯৭৪ থেকে ০২ এপ্রিল, ১৯৭৫ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি Bangladesh Agricultural Research Institute (BARI)-এ সায়েন্টিফিক অফিসার/পরিসংখ্যান বিষয়ের লেকচারার হিসেবে অক্টোবর ০৩, ১৯৭৫ থেকে ০২ মে, ১৯৭৭ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। অতঃপর তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রিসার্চ অফিসার হিসেবে ০২ মে, ১৯৭৭ থেকে ৩০ মার্চ ১৯৭৯ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন Bangladesh Bureau of Statistics (BBS)-এর Sampling Survey Wing-এ Statistical Officer হিসেবে ৩০ মার্চ ১৯৭৯ হতে ২৪ এপ্রিল, ১৯৮৩ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। অতঃপর তিনি Bangladesh Bureau of Educational Information and Statistics (BANBEIS)-এ Specialist (Statistics) হিসেবে ২৪ এপ্রিল, ১৯৮৩ তারিখ হতে দায়িত্ব পালন করেন। এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি জীবনের দীর্ঘসময় অতিবাহিত হয়। পরবর্তীতে তিনি একই প্রতিষ্ঠানের Statistics Division-এর Chief হিসেবে ২৪ এপ্রিল ১৯৯৫ তারিখ হতে এবং এই প্রতিষ্ঠানে প্রধান হিসেবে ডিরেক্টর পদে ৩০ জুলাই ২০০৩ তারিখ হতে সরকারি চাকরির অবসর গ্রহণের তারিখ অর্থাৎ- ৩০ আগস্ট ২০০৭ তারিখ পর্যন্ত কর্মকুশলতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করে গেছেন।
ভাষা জ্ঞান : তিনি একাধিক ভাষা ইংরেজী, আরবী, উর্দূ, হিন্দি, ও ফার্সীতে সমান পারদর্শী। তিনি সব ভাষাতেই অনর্গল বক্তব্য দিতে পারতেন।
বিদেশ ভ্রমণ : তিনি মোট ৩২টি দেশে ভ্রমণ করেন। যেমন- আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, মেক্সিকো, মিশর, নাইজেরীয়া, সুদান, ভারত, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, মালদ্বীপ, শ্রিলংকা, বার্মা, ফিলিপাইন, অষ্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, কলম্বো, সৌদি আরব ইত্যাদি।
শিক্ষকতা পেশায় যোগদান : সরকারি চাকরী হতে অবসর গ্রহণের পরদিন হতে তাঁর পুনরায় মহান পেশা শিক্ষকতায় ফিরে আসেন। এবার তিনি দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁর বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি-এ অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে ০১ জুলাই, ২০০৭ তারিখে যোগদান করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন প্রফেসর হিসেবে।
জমঈয়তে ভূমিকা : তিনি ২০১০ সালে জমঈয়তের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি জমঈয়তের কর্মকা-কে শক্তিশালী ও সুসংহত করতে রাত-দিন পরিশ্রম করেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-
যাত্রাবাড়ীতে জমঈয়তের নিজস্ব কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চার তলা ভবন নির্মাণ।
১. মাসিক তর্জমানুল হাদীস পুনঃপ্রকাশ।
২. সাপ্তাহিক আরাফাতের মান উন্নয়ন।
৩. আহলে হাদীস শিক্ষাবোর্ড গঠন।
৪. জমঈয়তের অন লাইন কার্যক্রম চালু।
৫. দেশে-বিদেশে জমঈয়তের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করা।
৬. জমঈয়তের সংবিধান যুগোপযুগী করণ।
৭. জমঈয়ত প্রস্তাবিত ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজী-এর কাজ ত্বরান্বিত করণ।
৮. এর সিলেবাসের খসড়া সম্পন্ন।
রচনা : তিনি সাহিত্যকর্ম ও সম্পাদনায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি মৌলিক গ্রন্থ রচনার পাশাপাশি কতিপয় গুরুত্ব গ্রন্থ অনুবাদ করেন। মৌলিক গ্রন্থ হিসেবে ২০০১ সালে প্রকাশিত ‘যুগে যুগে শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষার উত্তরণ’ বিদগ্ধ পাঠক সমাজে সমাদৃত। এছাড়াও রচনা করেন জঈয়তে আহলে হাদীসের দীর্ঘদিনের অন্যতম সুযোগ্য সভাপতি তাঁর ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী যা প্রকাশনা পর্যায়ে রয়েছে। তাঁর সহীহুল বুখারী’র বঙ্গানুবাদে উপদেষ্টা কমিটিরও অন্যতম সদস্য। তাঁর সম্পাদিত ‘শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্ববাসী মুসলিমদের কাছে ঋণী’ বইটিও পাঠকপ্রিয়।
আমার দেখা ড. ইলিয়াস আলী : মানবিক গুণাবলীর যা প্রায় সবগুলোই ছিল তাঁর মধ্যে। তিনি সব সময় হাসিখুশি থাকতেন। ছিলেন মেহমান নাওয়াজ। তিনি একজন কাজ পাগল মানুষ ছিলেন। তাঁর সাথে আমার পরিচয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন। তিনি তখন ব্যানব্যাইসের ডাইরেক্টর। আমি জহুরুল হলে থাকতাম বর্ধিতাংশ পশ্চিম ব্লকে। রাস্তার এপার-ওপার ২/৩ মিনিটের রাস্তা। কাজে-অকাজে ওদিক দিয়ে যাতায়াতের সময় একটু ঢু মেরে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে চা পানি খেয়ে চলে আসতাম। এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নিয়েও অনেকবার দেখা করেছি তার সাথে। সম্ভাব্য সকল কাজে তিনি সহযোগিতার হস্ত সম্প্রসারিত করতেন অকাতরে। কোন রাগ করা বা পরে এসো এমনটি কখনো বলতে তাঁকে দেখিনি। কুষ্টিয়ায় একটি কলেজের সাথে জড়িত ছিলাম ১৪ বছর। কলেজের মূল অফিস ছিল আমার বাসা ১০ বছরাধিক সময়। ঐ সময়টায় তাঁর কাছে অনেক সহযোগীতা পেয়েছি। কলেজের অধ্যক্ষসহ এক রামাযানে তাঁর বাসায় ইফতারও করেছি।
তিনি যতদিন জমঈয়তের প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তার সাথে আমার সব সময় যোগাযোগ ছিল। খসড়া সিলেবাস প্রণয়নে অনেকবার তিনি আমার পরামর্শ গ্রহণ করতেন। ঢাকায় যে কোনো কাজে আসলেই ফোন দিতাম অফিসে আছেন কি না। আমি গিয়ে দেখতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে ব্যস্ত। সাইফুল এসেছ বসো। এ বিষয়টি কি বল তো? তুমি এ বিষয়গুলো পাঠিয়ে দিবে। তুমি কিন্তু এই এই কমিটিতে আছো। কাজ করতে হবে। তিনি যতক্ষণ অফিসে থাকতেন আমিও তাঁকে সঙ্গ দিতাম। তিনি একজন অনলবর্ষী বাগ্মীও ছিলেন। টাঙ্গাইলের বল্লা কনফারেন্সে একবার তাঁর সাথে বক্তব্য রাখার সুযোগ হয়েছিল আমার। অল্লাহ তা‘আলা তার সকল নেক ‘আমল কবুল করুন -আমীন।
জন্ম : প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ ইলিয়াস আলী ঈসায়ী ১৯৪৯ সালের ০১ সেপ্টেম্বর তারিখে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলাধীন দেবীনগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
পারিবারিক পরিচিতি : প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ ইলিয়াস আলী’র পিতা মাওলানা আব্বাস আলী এবং মাতার নাম জয়গুন নেসা। তাঁর পিতা মাদ্রাসা দারুল হাদীস, বেলডাঙ্গা, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, এলাহাবাদ, দিল্লীর রাহমানিয়ায় শিক্ষা গ্রহণ করে বিশিষ্ট আরবী ব্যাকরণবিদ ও ‘আলেম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। আরবী ব্যাকরণে পারদর্শিতার কারণে তাঁকে আবূ মারফে ও উম্মুন নুহা উপাধি দেয়া হয়। তিনি একজন উঁচু স্তরের ‘আলেম, দয়ালু, ধর্মীয় শিক্ষা গুরু, বাগ্মী, তেজস্বী বক্তা ও পরহেজগার ব্যক্তি ছিলেন। লেখা-পড়া শেষ করে তিনি বেলডাঙ্গা দারুল হাদীস ইসলামিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি দ্বীনি ইসলামের নিবেদিত কর্মী ও দ্বীনি শিক্ষায় আত্মউৎসর্গীকৃত প্রাণ ছিলেন। শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে। সারাটি জীবন তিনি গবেষণা কাজে ব্যয় করেন।
দাম্পত্য জীবন : প্রফেসর ইলিয়াস আলী বিয়ে করেন নবাবগঞ্জের বিশিষ্ট বক্তা মাওলানা দুররুল হুদা আইউবীর মেয়েকে। তাঁর মোট ছেলে ৫ জন। তারা হলেন-
১. মুনতাসির রহমান, কামিল, এস.এস.সি. (গণিত)।
২. মোখলেছুর রহমান, এম.এ.জি. (কৃষি)।
৩. মুস্তাফিজুর রহমান, এম.এ. (রাষ্ট্র বিজ্ঞান)।
৪. মশিউর রহমান, কামিল, এম.বি.এ. (ফাইন্যান্স)।
৫. মুস্তাইন বিল্লাহ, বি.এস.সি।
শিক্ষা জীবন : মামা বিদগ্ধ মাওলানা রাফআতুল্লাহ-এর নিকটে ইলিয়াস আলী’র ইসলামী শিক্ষার হাতে খড়ি। এরপর স্থানীয় দেবীনগর মডেল প্রাইমারী স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হন। তিনি অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে প্রাইমারী শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ছোট কালে তাঁর বাসনা ছিল পিতার শিক্ষকের কাছে পড়বেন। পিতা হজ্জে গিয়ে সৌদি আরবে তিন মাস অবস্থান করেন। এ সুযোগে তিনি পিতার শিক্ষক মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গা দারুল হাদীস ইসলামিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওঃ আব্দুর রউফ-এর নিকট যান। তিনি ছিলেন তীক্ষ্ম মেধা ও প্রতিভার অধিকারী। তাই তিন মাসে তিনি জংগে সরফ সম্পূর্র্ণ মুখস্ত করে ফেলেন। পিতা হজ্জ থেকে ফিরলে তিনি ও তাঁর দাদা শিক্ষক মাওঃ আব্দুর রউফকে সংগে নিয়ে বাড়ি ফিরেন। পিতা তাঁকে স্বাভাবিক নিয়মে সরফ পড়ার ব্যাপারে চাপ দিলে তিনি বলেন, আমার সরফ পড়া শেষ, ফলে পিতা রেগে যান, অবশ্য পরে সব কিছু অবগত হন এবং ছেলের পরীক্ষা নিবেন বলে ঠিক করেন। পুরো ৩.৫ ঘন্টা ধরে সরফের উপর তাকে প্রায় ২০০টি প্রশ্ন করেন ও শিশু আলী তার সন্তোষজনক জবাব দেন। এতে পিতা খুশি হন। সেই মূহুর্তে তাঁর দাদা শিক্ষক মাওঃ আঃ রউফ তার পিতা আব্বাস আলী’র উদ্দেশ্যে একটি মন্তব্য করেন। আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে আর কিছু না দিলেও এমন একজন সন্তান দিয়েছেন। সেখানে দুই বছর পড়াশুনা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দেবীনগর সালাফিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে এখানে ১৯৫৯-৬০ সাল পর্যন্ত হিদায়াতুন নাহু ও কাফিয়া পাঠ সমাপ্ত করেন।
‘আলীয়া মাদ্রাসা শিক্ষা : তাঁর আলিয়া মাদ্রাসার দাখিল পড়ার জন্য চাঁপাইনবাবঞ্জ জেলাধীন নামো শংকরবাটিস্থ মাদ্রাসা-ই-হেফজুল উলুম ফায়েজা খানম কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এখান থেকে ১৯৬১ সালের ১ম বিভাগে ১৩তম স্থান অর্জন করে দাখিল পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে চাঁপাইনবাবঞ্জ জেলার দারুল হাদীস মাদ্রাসা থেকে দারসে হাদীস পড়েন। এরপর ঢাকার মাদ্রাসাতুল হাদীস থেকে দারসে হাদীস শেষ করেন। ১৯৬২-৬৩ সাল ২ বছর তিনি নবাবগঞ্জ দারুল হাদীস মাদরাসা থেকে মিশকাত ও জালালাইন পাঠ সমাপ্ত করেন। ইতি মধ্যে ১৯৬২ সালে তিনি হরিমোহন সরকারী হাইস্কুল থেকে ৮ শ্রেণীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাঁর একই মাদ্রাসা হতে ১৯৭৩ সালে ১ম বিভাগে ডিস্টিংশনসহ মেধা তালিকায় ২০তম স্থান দখল করে ‘আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা হতে ১৯৭৫ সালে ১ম বিভাগে ডিস্টিংশনসহ মেধা তালিকায় ৯ম স্থান অর্জন করে ফাজিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাঁর ঢাকার সুপ্রসিদ্ধ মাদ্রাসা-ই-আলিয়া হতে ১৯৭৭ সালে ১ম শ্রেণিতে ডিস্টিংশনসহ মেধা তালিকায় ৯ম স্থান দখল করে কামিল (তাফসির) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে কামিল (মুহাদ্দিস) পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন।
সাধারণ শিক্ষার সূচনা : তিনি হরিমোহন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের চেম্বারে উপস্থিত হয়ে অষ্টম শ্রেণির ক সেকশনে ভর্তি হওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছা, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও ইস্পাত কঠিন মনোবলের কাছে হার মেনে প্রধান শিক্ষক তাঁকে ৮ম শ্রেণিতে ভর্তির অনুমতি প্রদান করেন। তিনি ৮ম শ্রেণির “ক” শাখার প্রথম বেঞ্চে বসেন। ১ম ক্লাশটি ছিল গণিতের। শিক্ষক অ্যালজেবার অঙ্ক কষতে দিলে অঙ্ক না পারায় তাঁকে পরের দিন থেকে ক্লাশে না আসার জন্য কড়া হুশিয়ার করে দেন। তিনি দমে না গিয়ে সারারাত জেগে সব সমাধান করে গণিত ক্লাশে উপস্থিত হন। শিক্ষক জটিল থেকে জটিলতর অঙ্ক কষতে দিয়ে না আটকাতে পেরে এক পর্যায়ে শিক্ষক ক্লাশ থেকে বের হয়ে যান। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক ঐ গণিত শিক্ষক, ঐ ক্লাশের ফাস্ট বয়-সহ অন্যান্য ছাত্র ও তাঁকে তাঁর চেম্বারে ডেকে পাঠান এবং বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে ছাত্রকে অপদস্ত করে ক্লাশ থেকে বের করে দেয়ার বিষয়টি গণিত শিক্ষক তাঁর ভুল হয়ে গেছে মর্মে স্বীকার করেন এবং ভুলের মাসুল হিসেবে তাঁর স্কুলের মাসিক বেতনসহ নতুন এক সেট বই কিনে দেন এবং এ ছেলে স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করবে বলে উচ্চাশ প্রকাশ করেন। তাঁর মেধা, যোগ্যতা ও পরিশ্রমের ফসল হিসেবে ক্লাশে ফার্স্ট হন।
এসএসসি ও এইচ এস সি : তিনি সারদাহ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন এবং সেখান থেকে তিনি ১৯৬৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় ১ম বিভাগে পাশ করে ১৮৭৩ সালে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান হতে ১৯৬৭ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
স্নাতক (অনার্স) ও স্নাতকোত্তর : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৭০ সালে পরিসংখ্যান বিষয়ে ২য় শ্রেণিতে বি এস-সি (অনার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭২ সালে পরিসংখ্যান বিষয়ে ২য় শ্রেণিতে এম এস-সি (অনার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন।
পিএইচ ডি ডিগ্রি অর্জন : তিনি ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক হতে পিএইচ ডি অর্জন করেন। তাঁর অভিসন্দনের বিষয় ছিল ‘Problems and Prospects of Madrasah Education in Bangladesh’।
অন্যান্য ডিগ্রি ও দক্ষতা অর্জন : তাঁর জাতিসংঘের UNDP-এর স্কলারশীপে ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়-এর ইন্টারন্যাশন্যাল স্ট্যাটিসটিক্যাল প্রোগ্রাম সেন্টার (ISPC) থেকে স্যাম্পল সার্ভে মেথোড বিষয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৮৫ সালে নিউ দিল্লীস্থ অল ইন্ডিয়া ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (AIMA) পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি (বিএড)ও অর্জন করেন।
আর্ন্তজাতিক সেমিনার কনফারেন্সে যোগদান : তিনি কাওমী অলীয়া এবং বিজ্ঞান এ তিন ধারায় সমন্বিত এক বিশেষ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। তিনি বিশ্বের ইসলাম, শিক্ষা এবং আধুনিক বিজ্ঞানের উপর যে কোন বিষয়ের সেমিনারে যোগদান করেন। একাধিক ভাষা ইংরেজী, আরবী, উর্দূ, হিন্দি ও ফার্সীতে সমান পারদর্শী হওয়ায় তিনি সব ভাষাতেই অনর্গল বক্তব্য দিতে পারতেন। পয়গাম টিভির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি সুদাইসীর আমন্ত্রণে সৌদী আরবে শিক্ষা বিষয়ক সেমিনারে গমন করেন। তিনি চাকরি জীবনে ন্যূনতম ১০টি দেশে বহু বিষয়ে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। তিনি যেসব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি হতে এগ্রিকালচারাল স্ট্যাটিসটিক্স বিষয়ে ফিল্ড ট্রেনিং; ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ইসলামাবাদে আয়োজিত লিটেরেসি প্রোগ্রাম বিষয়ক সেমিনারে অংশগ্রহণ; ইউনেস্কো কর্তৃক ব্যংককে আয়োজিত ১৯৮৪ সালে এডুকেশন সিম্যুলেশন মডেল এবং ১৯৮৬ সালে এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (EMIS) শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ; থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (AIT) হতে ১৯৮৯ সালে এডুকেশন প্লানিং, মনিটরিং এন্ড ইভ্যালুয়েশন শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ; নেপালের কাঠমাণ্ডু-এর ইন্সটিটিউট ফর টেকনিক্যাল ইন্সটিউটশন (TITI) হতে ২০০০ সালে প্রজেক্ট প্লানিং ইমপ্লিমেন্টেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট শীর্ষক এক মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ; শ্রীলংকার কলম্বো-তে ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (EMIS) শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স অংশগ্রহণ; ইউএসএইড-এর আর্থিক সহায়তায় কানাডায় ১৯৮২ সালে অনুষ্ঠিত ম্যানেজমেন্ট এন্ড কমিউনিকেশন অব ইনফরমেশন শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স অংশগ্রহণ প্রভৃতি।
দেশী সেমিনার ও সিম্পোজিশনে অংশগ্রহণ : তাঁর চাকরি জীবনে দেশে বহু বিষয়ে প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনার ও সিম্পোজিশনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি যেসব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়-এর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) কর্তৃক আয়েজিত এবং FAO-এর অর্থায়নে পরিচালিত এগ্রিকালচার সার্ভে এন্ড সেন্সাস বিষয়ক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ; জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (NAEM)-এ গভর্নমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রুল্স এন্ড অ্যাকাউন্টস রুল্স শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স অংশগ্রহণ; ইসলামিক এডুকেশন সায়েন্টিফিক এন্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ISESCO)ও ওয়ার্ল্ড ইসলামিক কল সোসাইটি কর্তৃক আয়োজিত ইসলামিক এডুকেশনফর গার্লস এন্ড উইমেন বিষয়ক প্রশিক্ষণে রিসোর্স পারসন হিসেবে অংশগ্রহণ; UNESCO-এর অর্থায়নে BANBEIS আয়োজিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রেজিওনাল ডেপুটি ডাইরেক্টর, ডিস্ট্রিক্ট এডুকেশন অফিসার পর্যায়ের কর্মকর্তাগণের স্ট্যাটিসটিক্যাল ক্যাপাসিটি বিল্ডিং বিষয়ক প্রশিক্ষণে রিসোর্স পারসন হিসেবে অংশগ্রহণ। এছাড়াও তিনি কম্পিউটার, কম্পিউটারের বিভিন্ন প্যাকেজ প্রোগ্রাম ও ইন্টারনেট বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯১ সালে কম্পিউটার এন্ড ইট্স অ্যাপ্লিকেশন্স, ১৯৯৪ সালে লোটাস ১-২-৩, এমএসওয়ার্ড, ওয়ার্ড পারফেক্ট, ওয়ার্ড প্রসেসিং, ১৯৯৯ সালে ডাটাবেইজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (DBMS) ও এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (EMIS), ২০০০ সালে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS), ২০০১ সালে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ওয়েবসাইট, ই-মেইল শীর্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
রিসোর্স পারসন ও গেস্ট স্পিকার : তিনি চাকরি জীবনে বহু প্রশিক্ষণে রিসোর্স পারসন ও গেস্ট স্পিকার হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (NAEM) ও বাংলাদেশ প্রশাসন ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউট (BIAM) কর্তৃক আয়োজিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের এডুকেশনাল স্ট্যাস্টিক্স এন্ড ইন্ডিকেটরস, এডুকেশনাল প্লানিং, ম্যানেজমেন্ট, মনিটরিং, ইভ্যালুয়েশন এন্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে নিয়মিত রিসোর্স পারসন ও গেস্ট স্পিকার হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ মাদ্রাসা টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (MMTTI)-এ মাদ্রাসা শিক্ষকদের EMIS ও ICT (ইনফরমেশন কমিউনিকেশন টেকনোলজি) বিষয়ে নিয়মিত রিসোর্স পারসন ও গেস্ট স্পিকার হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি কলেজ ও মাদ্রাসায় নিয়োজিত কম্পিউটার শিক্ষকদের কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। তিনি বিভিন্ন সার্ভে ও মাস্টার্স ট্রেইনার্সদের সার্ভে মেথোডোলজি এন্ড ফিল্ড অপারেশন্স সম্পর্কে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্ট প্লানিং প্রিপ্যারেশন, অ্যাকশন প্ল্যান, মনিটরিং ডিভাইসেস এন্ড ইভালুয়েশন প্রসেস বিষয়ক প্রশিক্ষণে গেস্ট স্পিকার হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি সার্ভে প্লানিং, ডিজাইনিং, ডাটা কালেকশন, এডিটিং, এস্টিমেটিং, প্রসেসিং এন্ড রিপোর্ট রাইটিং বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্লাশ নিয়ে থাকেন।
বিভিন্ন শিক্ষা কমিশন ও কমিটিতে অবদান : সরকার গঠিত বিভিন্ন শিক্ষা বিষয়ক কমিশন ও কমিটিতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কমিটি ও সাব-কমিটিতে মেম্বার-সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রফেসর ড. মোঃ মনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশন, ২০০৩ গঠিত সাব-কমিটির মেম্বার-সেক্রেটারি হিসেবে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রফেসর ড. এম এ বারী মাদ্রাসা রিফোর্মস শিক্ষা কমিশনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও তিনি ন্যাশনাল কারিকুলাম এন্ড টেক্সটবুক বোর্ড (NCTB) এবং বাংলাদেশ মাদ্রাসা এডুকেশন বোর্ড (BTEB) গঠিত কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট, অ্যাসেসমেন্ট এন্ড ইভালুয়েশন প্রসেস বিষয়ক বিশেষত সেকেন্ডারি লেভেলে ৬ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন কমিটিতে তাঁর কার্যকর ভূমিকা অতুলনীয়। এতদ্ব্যতীত ফাজিল ও কামিল-কে সাধারণ শিক্ষার যথাক্রমে ব্যাচেলর এবং পোস্ট গ্রাজুয়েশন সমপর্যায়ে উন্নীতকরণ বিষয়ক UGC গঠিত মাদ্রাসা ইক্যুয়িভ্যালেন্স কমিটিতে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকা প্রশংসনীয়। তাঁর স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার পোস্ট পাইমারি লেভেলের শিক্ষকদের সরকারের আর্থিক সহযোগিতা ‘মান্থলি পে অর্ডার (MPO)’ সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির মেম্বার-সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন।
সরকারি চাকরিজীবন : তিনি ১৯৭৩ সালে আমেরিকান এ্যমবাসীতে ২ মাস চাকুরীর মাধ্যমে কর্মজীবন সূত্রপাত করেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে চাকুরী করেন। তারপর B.ID.S-এ ১ মাস চাকুরী করেন। তিনি প্রথমে রাজশাহী সিটি কলেজের পরিসংখ্যান বিষয়ের লেকচারার হিসেবে জুন ১৯৭৩ থেকে অক্টোবর ০৩, ১৯৭৪ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি Bangladesh Institute of Development Studies (BIDS)-এ রিসার্চ এসোসিয়েট হিসেবে অক্টোবর ০৪, ১৯৭৪ থেকে ০২ এপ্রিল, ১৯৭৫ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি Bangladesh Agricultural Research Institute (BARI)-এ সায়েন্টিফিক অফিসার/পরিসংখ্যান বিষয়ের লেকচারার হিসেবে অক্টোবর ০৩, ১৯৭৫ থেকে ০২ মে, ১৯৭৭ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। অতঃপর তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রিসার্চ অফিসার হিসেবে ০২ মে, ১৯৭৭ থেকে ৩০ মার্চ ১৯৭৯ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন Bangladesh Bureau of Statistics (BBS)-এর Sampling Survey Wing-এ Statistical Officer হিসেবে ৩০ মার্চ ১৯৭৯ হতে ২৪ এপ্রিল, ১৯৮৩ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। অতঃপর তিনি Bangladesh Bureau of Educational Information and Statistics (BANBEIS)-এ Specialist (Statistics) হিসেবে ২৪ এপ্রিল, ১৯৮৩ তারিখ হতে দায়িত্ব পালন করেন। এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি জীবনের দীর্ঘসময় অতিবাহিত হয়। পরবর্তীতে তিনি একই প্রতিষ্ঠানের Statistics Division-এর Chief হিসেবে ২৪ এপ্রিল ১৯৯৫ তারিখ হতে এবং এই প্রতিষ্ঠানে প্রধান হিসেবে ডিরেক্টর পদে ৩০ জুলাই ২০০৩ তারিখ হতে সরকারি চাকরির অবসর গ্রহণের তারিখ অর্থাৎ- ৩০ আগস্ট ২০০৭ তারিখ পর্যন্ত কর্মকুশলতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করে গেছেন।
ভাষা জ্ঞান : তিনি একাধিক ভাষা ইংরেজী, আরবী, উর্দূ, হিন্দি, ও ফার্সীতে সমান পারদর্শী। তিনি সব ভাষাতেই অনর্গল বক্তব্য দিতে পারতেন।
বিদেশ ভ্রমণ : তিনি মোট ৩২টি দেশে ভ্রমণ করেন। যেমন- আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, মেক্সিকো, মিশর, নাইজেরীয়া, সুদান, ভারত, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, মালদ্বীপ, শ্রিলংকা, বার্মা, ফিলিপাইন, অষ্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, কলম্বো, সৌদি আরব ইত্যাদি।
শিক্ষকতা পেশায় যোগদান : সরকারি চাকরী হতে অবসর গ্রহণের পরদিন হতে তাঁর পুনরায় মহান পেশা শিক্ষকতায় ফিরে আসেন। এবার তিনি দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁর বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি-এ অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে ০১ জুলাই, ২০০৭ তারিখে যোগদান করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন প্রফেসর হিসেবে।
জমঈয়তে ভূমিকা : তিনি ২০১০ সালে জমঈয়তের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি জমঈয়তের কর্মকা-কে শক্তিশালী ও সুসংহত করতে রাত-দিন পরিশ্রম করেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-
যাত্রাবাড়ীতে জমঈয়তের নিজস্ব কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চার তলা ভবন নির্মাণ।
১. মাসিক তর্জমানুল হাদীস পুনঃপ্রকাশ।
২. সাপ্তাহিক আরাফাতের মান উন্নয়ন।
৩. আহলে হাদীস শিক্ষাবোর্ড গঠন।
৪. জমঈয়তের অন লাইন কার্যক্রম চালু।
৫. দেশে-বিদেশে জমঈয়তের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করা।
৬. জমঈয়তের সংবিধান যুগোপযুগী করণ।
৭. জমঈয়ত প্রস্তাবিত ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজী-এর কাজ ত্বরান্বিত করণ।
৮. এর সিলেবাসের খসড়া সম্পন্ন।
রচনা : তিনি সাহিত্যকর্ম ও সম্পাদনায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি মৌলিক গ্রন্থ রচনার পাশাপাশি কতিপয় গুরুত্ব গ্রন্থ অনুবাদ করেন। মৌলিক গ্রন্থ হিসেবে ২০০১ সালে প্রকাশিত ‘যুগে যুগে শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষার উত্তরণ’ বিদগ্ধ পাঠক সমাজে সমাদৃত। এছাড়াও রচনা করেন জঈয়তে আহলে হাদীসের দীর্ঘদিনের অন্যতম সুযোগ্য সভাপতি তাঁর ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী যা প্রকাশনা পর্যায়ে রয়েছে। তাঁর সহীহুল বুখারী’র বঙ্গানুবাদে উপদেষ্টা কমিটিরও অন্যতম সদস্য। তাঁর সম্পাদিত ‘শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্ববাসী মুসলিমদের কাছে ঋণী’ বইটিও পাঠকপ্রিয়।
আমার দেখা ড. ইলিয়াস আলী : মানবিক গুণাবলীর যা প্রায় সবগুলোই ছিল তাঁর মধ্যে। তিনি সব সময় হাসিখুশি থাকতেন। ছিলেন মেহমান নাওয়াজ। তিনি একজন কাজ পাগল মানুষ ছিলেন। তাঁর সাথে আমার পরিচয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন। তিনি তখন ব্যানব্যাইসের ডাইরেক্টর। আমি জহুরুল হলে থাকতাম বর্ধিতাংশ পশ্চিম ব্লকে। রাস্তার এপার-ওপার ২/৩ মিনিটের রাস্তা। কাজে-অকাজে ওদিক দিয়ে যাতায়াতের সময় একটু ঢু মেরে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে চা পানি খেয়ে চলে আসতাম। এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নিয়েও অনেকবার দেখা করেছি তার সাথে। সম্ভাব্য সকল কাজে তিনি সহযোগিতার হস্ত সম্প্রসারিত করতেন অকাতরে। কোন রাগ করা বা পরে এসো এমনটি কখনো বলতে তাঁকে দেখিনি। কুষ্টিয়ায় একটি কলেজের সাথে জড়িত ছিলাম ১৪ বছর। কলেজের মূল অফিস ছিল আমার বাসা ১০ বছরাধিক সময়। ঐ সময়টায় তাঁর কাছে অনেক সহযোগীতা পেয়েছি। কলেজের অধ্যক্ষসহ এক রামাযানে তাঁর বাসায় ইফতারও করেছি।
তিনি যতদিন জমঈয়তের প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তার সাথে আমার সব সময় যোগাযোগ ছিল। খসড়া সিলেবাস প্রণয়নে অনেকবার তিনি আমার পরামর্শ গ্রহণ করতেন। ঢাকায় যে কোনো কাজে আসলেই ফোন দিতাম অফিসে আছেন কি না। আমি গিয়ে দেখতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে ব্যস্ত। সাইফুল এসেছ বসো। এ বিষয়টি কি বল তো? তুমি এ বিষয়গুলো পাঠিয়ে দিবে। তুমি কিন্তু এই এই কমিটিতে আছো। কাজ করতে হবে। তিনি যতক্ষণ অফিসে থাকতেন আমিও তাঁকে সঙ্গ দিতাম। তিনি একজন অনলবর্ষী বাগ্মীও ছিলেন। টাঙ্গাইলের বল্লা কনফারেন্সে একবার তাঁর সাথে বক্তব্য রাখার সুযোগ হয়েছিল আমার। অল্লাহ তা‘আলা তার সকল নেক ‘আমল কবুল করুন -আমীন।
++
ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45
সূর্যাস্ত : 5:11:51
আপনার মন্তব্য1