সাময়িক প্রসঙ্গ
সৌন্দর্যের শীর্ষে মালয়েশিয়ার পুত্রা মাসজিদ
এম. জি. রহমান
মালয়েশিয়ার পুত্রজায়া ছিমছাম পরিচ্ছন্ন সাজানো-গোছানো একটি শহর। কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরেই এর অবস্থান। যানজটমুক্ত সুপরিকল্পিত এ শহরটি পৃথিবীর অন্যতম প্রধান আধুনিক ও শৈল্পিক-স্থাপত্যশিল্পের পরিপাটি নগরী হিসেবে খ্যাত; যার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে অনিন্দসুন্দর পুত্রা মাসজিদ। এটি পুত্রাজায়ার প্রধান মাসজিদ। মনোমুগ্ধকর নির্মাণশৈলীতে তৈরি মাসজিদটির ভেতর-বাহির সর্বত্র অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত; যা সকলকে মুগ্ধ করে। মাসজিদের সৌন্দর্য স্মৃতিপটে আঁকা ছবির মতো সাজানো, তাই বরাবর উঠে আসে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মাসজিদের তালিকার শীর্ষে। নির্মাণগত দিক দিয়ে মাসজিদটি যেমন সুন্দর, তেমনি একে পৃথকভাবে সৌন্দর্য দান করেছে এর অবস্থানগত দিক। মাসজিদটি কুয়ালালামপুরের পুত্রাজায়া লেকের মধ্যে অবস্থিত। প্রবেশপ্রান্ত স্থলভাগের সঙ্গে যুক্ত। মাসজিদের কয়েক গজ দূরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি কার্যালয়; তাই স্বাভাবিকভাবেই এর চারদিক অপরূপ শোভামণ্ডিত। মাসজিদের সামনে বিশাল গোলচত্বরটিও মানবসৃষ্ট লেকবেষ্টিত। মাসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লেগেছিল মাত্র দুই বছর।
নজরকাড়া এই মাসজিদ নির্মাণে খরচ হয়েছে ২৫০ মিলিয়ন মালয়েশিয়ান রিংগিত, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫২০ কোটি টাকা। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি কার্যালয়ের পাশে লেকবেষ্টিত পুত্রা মাসজিদটি দৃষ্টি কাড়ে পর্যটকদের। রাতের বেলায় মাসজিদের রংবেরঙের বাতিগুলোর ছায়া এই লেককে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। তখন এ এলাকা হয়ে ওঠে স্বপ্নপুরীর মতো সুন্দর। মাসজিদের সামনের দিকে একটি বৃহৎ বর্গক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে মালয়েশিয়ার রাজ্যগুলোর পতাকা উড়ানো হয়।
মাসজিদটি রয়েছে নজরকাড়া ৯টি গোলাপি গম্বুজ; যার মধ্যে সর্ববৃহৎ গম্বুজটির উচ্চতা ১৬০ ফুট। মাসজিদের পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ মিনার; যার উচ্চতা ৩৮১ ফুট; বাগদাদের শেখ ওমর মাসজিদের আদলে এ মিনারটি নির্মিত। মাসজিদে ব্যবহৃত গোলাপি রঙের গ্রানাইটগুলো মাসজিদের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
মাসজিদের ডিজাইনের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ান, পারসিয়ান ও আরব-ইসলামিক স্থাপত্য নকশাগুলোকে সমন্বয় করা হয়েছে। মাসজিদটির মূল প্রবেশদ্বার মুসলিম পারস্যের পাবলিক বিল্ডিং গেটগুলোর অনুরূপ বানানো হয়েছে। তবে কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে স্থানীয় কারুকাজ শিল্প ও দেশীয় উপকরণ। গোটা মাসজিদ কমপ্লেক্সের ডিজাইন করা হয়েছে তিনটি ভাগে। মুসল্লিদের সালাত আদায়ের জন্য রয়েছে মূল মাসজিদ। আছে বিশাল উঠান, যাকে তাদের ভাষায় ‘সাহান’ বলা হয়; মুসল্লিরা সাহানে জড়ো হয়ে বসতে পারেন। একসাথে পাঁচ হাজার লোক বসতে পারেন শাহানের ওপর। আর আছে রিডিং ও ফাংশন রুম; যেগুলো ভাগ করা হয়েছে অডিটরিয়াম, ডাইনিং রুম ও লাইব্রেরি হিসেবে। এই মাসজিদে একসঙ্গে ১৫ হাজার মুসল্লী সালাত আদায় করতে পারেন।
পৃথিবীর অন্যতম আধুনিক মাসজিদ গণ্য করা হয় পুত্রা মাসজিদকে। মাসজিদের সামনে সুসজ্জিত ফুলের বাগান, বৃক্ষরাজি যা সহজেই মুগ্ধ করে দর্শকদের। পুত্রাজায়ার নামকরণ করা হয়েছে মালয়েশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী টুঙ্কু আবদুর রহমান পুত্রা’র নামানুসারে। পুত্রার সঙ্গে যোগ করা হয়েছে ‘জায়া’, যার অর্থ হলো ‘উৎকৃষ্টতা’।
সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মাসজিদটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সালাতের সময় মুসলিম ব্যতীত অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য প্রবেশের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হয়। তবে দর্শনার্থী মহিলাদের জন্য গেইটের পাশে লকারে এপ্রোন ও হিজাব রয়েছে। মাসজিদে প্রায়শই দেখা মেলে মালয়েশিয়ানদের জাতীয় পোশাক পরিহিত মুসল্লিদের। পুরুষরা বাজু মালায়ুর ওপর পেটের সামনে এবং পেছনে ঝকমকে সামপিং আর মাথায় সংকু (টুপি) ব্যবহার করে। তাদের এ পোশাক দেখতে রাজকীয় পোশাকের মতোই লাগে।[১]

[১] সূত্র : কালেরকন্ঠ, নয়াদিগন্ত ও অন-লাইন পত্রিকাসমূহ।

আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 5:43:02 সূর্যাস্ত : 6:09:54

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত